গরম পৃথিবীতে আমরা

পাগল মন এর ছবি
লিখেছেন পাগল মন [অতিথি] (তারিখ: শনি, ১৩/১১/২০১০ - ৬:৩৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজ থেকে পঞ্চাশ- একশ বছর পরে কি হবে সেটা কি আমরা বলতে পারি? সহজ কথায় এর উত্তর হবে না, পারি না। কিন্তু যদি বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি তাহলে আমরা একটা ধারণা করতে পারি যে কি হতে পারে। কলেজে থাকতে “ওয়াটার ওয়ার্ল্ড” ছবিটা দেখেছিলাম। ছবিটা বেশ ভালো। সেখানে পৃথিবীর বেশিরভাগ অংশ ডুবে গেছে, অল্প কিছু মানুষ বেঁচে আছে, কিন্তু তারাও নিজেদের মধ্যে মারামারি কাটাকাটি করছে বেঁচে থাকার জন্য। মুভিটা সাই-ফাই মুভি, যখন দেখেছিলাম তখন চিন্তাও করিনি যে এরকম পরিস্থিতি পৃথিবীতে কখনো হতে পারে। কিন্তু আমাদের স্বেচ্ছাচারীতা হয়তো ভবিষ্যতে পৃথিবীতে এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। ক্রমবর্ধনশীল ফসিল ফুয়েলের ব্যবহার আমাদেরকে সেরকম পরিস্থিতির দিকেই ঠেলে দিচ্ছে। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ কখনোই ৩০০ পিপিএমের বেশি হয়নি কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত ফসিল ফুয়েলের ব্যবহার আর বনাঞ্চল ধবংসের কারণে বর্তমানে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৩৮৯ পিপিএম (২০০৯ এ) এবং বছরে ২ পিপিএমের বেশি হারে এর পরিমাণ বাড়ছে। আর বায়ুমন্ডলে এর পরিমাণ বাড়লে পৃথিবী বেশি পরিমাণে তাপ ধরে রাখতে পারবে যার ফলে বেশি বাষ্পীভবন হবে যা জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়াবে যেটা আবার মুখ্য গ্রীনহাউস গ্যাস। পুরো প্রক্রিয়াটাই বৃত্তাকার চক্রের মত, যা ধীরে ধীরে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়াবে। জলবায়ু বিজ্ঞানীদের প্রজেকশন অনুযায়ী পৃথিবীর তাপমাত্রা ১৯৯০ সালের চেয়ে ১.৪-৫.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস আর রেনেসা-পূর্ব যুগের চেয়ে ৬.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস বাড়তে পারে আগামী একশ বছরে।

এই তাপমাত্রা বাড়লে পৃথিবীতে কি ধরণের পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে তা বিভিন্ন ভূতত্ত্ববিদ, গ্লেসিলজিস্টস (glaciologist), ওশেনোগ্রাফারস (oceanographers), জলবায়ু বিজ্ঞানী, পালিওক্লাইম্যাটোলজিস্টস (paleoclimatologists) এবং বিভিন্ন সাইন্টেফিক পেপার ঘেটে স্বনামধন্য সাংবাদিক, অভিযানকারী এবং লেখক মার্ক লাইনাস (Mark Lynus) তার বিখ্যাত বই “Six Degrees- Our Future on a Hotter Planet” বইটিতে তুলে ধরেছেন। আমি তারই একটা সারসংক্ষেপ দিচ্ছি যেটা আবার আরেকটি বিখ্যাত বই “The Climate Challenge- 101 Solutions to Global Warming by Guy Dauncy” এর ভূমিকার একটা চ্যাপ্টার।
আমি এখানে চেষ্টা করেছি সহজভাবে অনুবাদ করার কিন্তু আমার অনুবাদের অক্ষমতা হয়তো অনেক ক্ষেত্রেই আমার প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করেছে।

১ ডিগ্রী তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে,
• ডাস্ট বোওলের (Dust Bowl) সময়কার অবস্থার সৃষ্টি হবে মিডওয়েস্ট আমেরিকার বেশিরভাগ অংশে। ডাস্ট বোওল অবস্থা হচ্ছে মারাত্মক খরা যা ত্রিশের দশকে আমেরিকা এবং কানাডার প্রেইরি অঞ্চলে দেখা দিয়েছিল।
• ভূগর্ভস্থ চিরহিমায়িত বরফ (Permafrost melt) গলে কানাডা, আলাস্কা ও সাইবেরিয়ার অনেক বাড়িঘর ডুবে যাবে।
• পৃথিবী জুড়ে থাকা মাউন্টেইন গ্লেসিয়ার ক্রমাগত গলতে থাকবে।
• দাবানল বেড়ে যাবে, বিশেষকরে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে।
• খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, মহামারী ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে যাবে।

এই পরিমাণ তাপমাত্রা বৃদ্ধি এড়ানোর কোন উপায় নেই।

১-২ ডিগ্রী তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে,
• ২০০৩ সালের ইউরোপিয়ান গ্রীস্মকালীন তাপদাহের (যাতে প্রায় ৩৫,০০০ মানুষ মারা গিয়েছিল) মত দূর্যোগ খুব স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
• তাপমাত্রা যদি ১.২ ডিগ্রী বাড়ে তাহলে গ্রীনল্যান্ডের বরফগলার হার এমন অবস্থায় পৌছাবে যা থামানো যাবে না, এই গলিত বরফ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৬ মিটার পর্যন্ত বাড়াতে পারে।
• আর্ক্টিক গ্রীস্মকালে প্রায় বরফশুন্য থাকবে।
• হিমালয়ের সব বরফ গলে যাবে যার ফলে প্রায় ৫০ কোটি মানুষের খাবার পানির সরবরাহ হুমকির মুখে পরবে।
• এক-তৃতীয়াংশ ডাঙার প্রাণী এবং উদ্ভিদ বিলুপ্ত হয়ে যাবে কেননা উচ্চ তাপমাত্রার কারণে তাদের বাসস্থান ধ্বংস হয়ে যাবে।
• বেশিরভাগ কোরাল রীফ বিলুপ্ত হয়ে যাবে ক্রমাগত ক্ষয়ে যাওয়ার জন্য।

যদি বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন ২০১৫ সালের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থায় পৌছায় এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ৮০% কমে যায় তাহলে ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি এড়ানো যেতে পারে।

২-৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে,
• আমাজন রেইনফরেস্ট একটা “টিপিং পয়েন্ট” এ পৌছে যাবে যা ভয়াবহ দাবানল ও প্রচন্ড খরার সৃষ্টি করবে এবং একসময় রেইনফরেস্ট মরুভূমিতে পরিণত হবে।
• লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্লাইমেট রিফিউজি হয়ে যাবে দক্ষিন আফ্রিকা এবং ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে মরুভূমি ছড়িয়ে পড়ার জন্য।
• কৃষিখাত এবং খাদ্য উৎপাদনে চরম বিপর্যয় নেমে আসবে উচ্চ তাপমাত্রা আর প্রচন্ড খরার কারনে।
• সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হবে যা উপকূলীয় শহরগুলোকে ধ্বংস করবে।
• সমুদ্রের পানিতে দ্রবীভূত কার্বন ডাই অক্সাইড পানিকে এসিডিক করবে যা কোরাল রীফের ক্ষয়ে যাওয়ার হার বাড়াবে এবং মেরিন খাদ্যচক্রকে বাধাগ্রস্থ করবে।
• সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তেই থাকবে। ৩০ লক্ষ বছর আগে যখন তাপমাত্রা বর্তমানের চেয়ে ৩ ডিগ্রী বেশি ছিল তখন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এখনকার তুলনায় ২৫ মিটার বেশি ছিল।

যদি বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন ২০২০ সালের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থায় পৌছায় এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ৬০% কমে যায় তাহলে ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি এড়ানো যেতে পারে।

৩-৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে,
• উপকূলীয় এলাকা থেকে লক্ষ লক্ষ লোক অন্যত্র সরে যাবে।
• বিশ্ব অর্থনীতি খাদ্য সংকট আর প্রচুর পরিমাণে ক্লাইমেট রিফিউজির ভারে ধুকতে থাকবে।
• চীনের খাদ্য উৎপাদন চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
• আফ্রিকায় খাবারের জন্য হাহাকার পরে যাবে।
• দক্ষিন ব্রিটেনে গ্রীস্মকালীন তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রী ছাড়িয়ে যাবে।
• অর্ধেকের বেশি পৃথিবীর উদ্ভিদ এবং প্রানীকুল বিলুপ্ত হয়ে যাবে, ডাইনোসর যুগের পরে যা ভয়াবহতম অবস্থা।
আর্ক্টিক পার্মাফ্রস্ট সব প্রায় গলিত অবস্থায় পৌছে যাবে যা বিশাল পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন করবে।
• তাপমাত্রা বৃদ্ধি বন্ধ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে কেননা উচ্চ তাপমাত্রায় মাটি এবং বনাঞ্চল কার্বন ডাই অক্সাইড ধরে রাখতে পারে না।

যদি বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থায় পৌছায় এবং ২০৫০ সালের মধ্যে স্থিতাবস্থায় চলে যায় তাহলে ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি এড়ানো যাবে।

৪-৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে,
• গ্রীনল্যান্ড এবং আর্ক্টকের বরফ দ্রুত গলার কারনে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আরো দুই মিটার বাড়বে।
পশ্চিম আর্ক্টিকের প্রকান্ড বরফশিলাগুলো ভেঙে পরবে যা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আরো বাড়াবে।
• রেইনফরেস্ট ছোট হতে থাকবে মরুকরণের জন্য।
• আর্ক্টিক প্রায় সারা বছরই বরফশুন্য থাকবে।
• সভ্যতা কিছু সীমিত এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পরবে। “সার্ভাইভাল ফর দি ফিটেস্ট” নীতির পুনরাগমন ঘটবে।

৫ ডিগ্রী তাপমাত্রা বৃদ্ধি এড়ানো যাবে যদি ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন স্থিতাবস্থায় চলে যায়।

৫-৬ ডিগ্রী তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে,
• পৃথিবীর তাপমাত্রা ৬৫-১৪৪ মিলিয়ন বছর আগেকার ক্রিটাসিয়াস সময়ের মত হয়ে যাবে।
• দ্রুত তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারনে বেশিরভাগ প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে পৃথিবী থেকে।
• শতবর্ষ ধরে ক্রমাগত বরফ গলার কারনে পৃথিবীর সমস্ত বরফ গলে যাবে যা নীচু দেশগুলোকে ডুবিয়ে দিবে।
• উচ্চ তাপমাত্রার কারনে কমমাত্রায় অক্সিজেন পানিতে দ্রবীভূত হতে পারবে ফলে অবায়বীয় অবস্থার সৃষ্টি হবে। এতে করে বিপুল সংখ্যক পানির উদ্ভিদ এবং প্রানী প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে পড়বে।
• ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়, খরা, বন্যা এবং আরো ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগ জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলবে।
• মানবতা ধ্বংস হয়ে যাবে, খাদ্য উৎপাদন কেবল উপমেরু অঞ্চলে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে।
৬ ডিগ্রী তাপমাত্রা বাড়লে এটা আর কমানোর প্রয়োজনই পরবে না।

পাগল মন


মন্তব্য

দুর্দান্ত এর ছবি

তথ্যবহুল লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।
অবশ্যই বিশ্বগোলকের উষ্ণায়ন নিয়ে বিতর্কের প্রয়োজন আছে। বিতর্ক বলছি একারনে যে ঠিক কি গতিতে এই উষ্ণতা বৃদ্ধির বিরূপ ফলগুলো মানুষ ও পরিবেশের ক্ষতি সাধন করবে সেই বিষয়ের তথ্যগুলো আপনি কাকে জিজ্ঞেস করছেন, সেই ভিত্তিতে বিভিন্ন হয়।
সন্দেহ নেই, যারা এই উষ্ণায়নের জন্য দায়ী, তারা এই জন্য মতবাদকে একটি হুজুগ বলে প্রমান করতে তাদের সেরা চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু কপ১৫ এর আগে এই মতবাদের পক্ষের লোকেদের গলায় যতটা জোর ছিল, আজকে এসে সেই জোরটা বোধহয় আর নেই। এর অনেকগুলো কারনের মধ্যে এই বিষয়টা নিয়ে রাজনীতি বা বানিজ্য করার প্রবনতাকে দায়ী করা যায়। বিশ্বমন্দার আগে যারা এই আলোচনার পুরোভাগে ছিলেন, তাদের সামনে আরো নগদ ও জটিল সমস্যা চলে আসাটাও একটা নিয়ামক।

তবে ইদানিং বৈজ্ঞানিকদের মধ্যেও উষ্ণায়ন বিষয়ক উপাত্ত ও পদ্ধতি নিয়ে যে নানারকম নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে, যেমন আইপিসিস'র প্রতিবেদনের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ সনদের ত্রুটিগুলো এই বিষয়টাকে আরো ঘোলাটে করেছে।

এবার বিতর্কের মোড় আরো নতুন দিক পাবার উপায় সহজ হয়েছে। আমেরিকার সাম্প্রতিক নির্বাচনে জিতে যাওয়া টি-পার্টির লোকজন, যাদের ঘিরে দুনিয়ার তাবত একটিভিজমের টাকা ঘোরে, তাদের অনেকেই উষ্ণায়ন-নাস্তিক। এর আগপর্যন্ত ওই জায়গাটা ছিল উষ্ণায়ন-আস্তিকদের দখলে, যে অবস্থান ও ফান্ডিং এর সুপ্রভাব উষ্ণায়ন একটিভিজমকে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছে। সুতরাং এই পালাবদলের দিনে যদি হঠাত ৭০ দশকের বিশ্ব-ঠান্ডায়ন মতবাদ নিয়ে বইগুলোকে ভাঙ্গারির দোকান থেকে ঝেঁরেপুছে আবার বাজারে ছাড়া হয়, তাহলে অবাক হবেন না।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমেরিকার ক্ষমতার পালাবদলে আমিও অন্যান্যদের মত হতাশ। সেদিন আমেরিকার রিনিউএ্যাবল এনার্জি নিয়ে এক টেলিকনফারেন্সেও আমেরিকানরা এটা নিয়ে কথা বলছিল তবে ওরা আশাবাদী যে এই রিনিউএ্যাবল এনার্জির এত বিশাল একটা জব মার্কেট তৈরি করার ক্ষমতা আছে যে এটাকে হয়তো আগের মত এত নেগ্লেক্ট করতে পারবে না।

আর আইপিপিসিসির ওই প্রতিবেদনটা আমি পড়েছিলাম। হুমম, এটা হয়তো কিছুটা মিস্লিডিং কিন্তু আল্টিমেটলি জলবায়ু পরিবর্তনকে অস্বীকার করার উপায় নেই। আজ হোক কাল হোক এদিকে সবার দৃষ্টি দিতেই হবে। এখন আমাদের আশা করতে হবে যাতে তারা খুব বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই এদিকে দৃষ্টি দেয় এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেয়।

পাগল মন

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

হক্‌ কথা। কথাটা কে বললেন সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব-ঠাণ্ডায়ণের ফর্মুলাও কিন্তু আলেম সমাজের একাংশ দিয়েছিলেন। আরো বহু আলেম তাদের সমর্থণে "অ্যারোসল তত্ত্ব", "বার্ষিক গতি মন্থরায়ণ" ইত্যাদি অকাট্য সব যুক্তি-প্রমাণ হাজির করেছিলেন। বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ নিয়েও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমনটা চলছে। এখানেও আরো অকাট্য সব যুক্তি-প্রমাণ হাজির হচ্ছে।

গবেষণার ফলাফল গবেষণার অর্থায়ণের উৎসের উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। এসব দেখলে ছাত্রজীবনে ল্যাবে ফলাফল মেলানোর জন্য করা back calculation-এর কথা মনে হয়।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

গবেষণার ফলাফল গবেষণার অর্থায়ণের উৎসের উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল।

তা আর বলতে। আমি ফরেস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের একটা হাইড্রোলজিক মডেলিং অ্যাপ্লিকেশনের কোর্স করেছিলাম, সেখানে দেখেছিলাম যে সরকারী অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণাগুলোতে উপসংহারে বলা হয়েছে যে, জল্বায় পরিবর্তন/লগিং ছোট অথবা মাঝারি মাত্রার বন্যার উপরে প্রভাব বিস্তার করতে পারে কিন্তু বড় মাত্রার বন্যায় কোন এফেক্ট করে না যেটা আসলে খুবই ভুল। শুধু তাই না এসব আবার "ন্যাচার" বা "সাইন্স" এর মত জার্নালে পাবলিশও হয়েছে।
যে যেমন ফলাফল চায়, রিসার্চের রেজাল্টও আসলে সেরকমই হয়।
ছাত্রজীবনে ল্যাবে ফলাফল মেলানোর জন্য করা back calculation-এর কথা মনে হয়

নটরডেমে ল্যাবে যা করতাম সেটা আসলে এত খারাপ ছিল না তাহলে কি বলেন? চোখ টিপি

পাগল মন

দ্রোহী এর ছবি

বেশ তথ্যবহুল লেখা। চলুক

এ প্রসঙ্গে হিমুর লেখা বাংলাদেশ কি ডুববে? ও সিরাতের লেখা ডুবন্ত বাংলাদেশ - কারণ, প্রভাব, সমাধান পোস্ট দুটোর আলোচনাগুলো দেখতে পারেন।


কাকস্য পরিবেদনা

অতিথি লেখক এর ছবি

পোস্ট দু'টো পড়লাম। বেশ ভাল্লাগছে কিন্তু আমার কিছু বিষয় নিয়ে দ্বিমত আছে।
পরে কোন একসময় বলব সেসব।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

পাগল মন

কৌস্তুভ এর ছবি

ভাল পোস্ট।

২০৫০-এ ৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়তে দেওয়া যাবে না... নাহলে সচল পড়ব কি করে!

অতিথি লেখক এর ছবি

মালদ্বীপে সাগরের তলায় সংসদ অধিবেশন বসেছিল। আমরাও নাহয় তখন পানির নীচে থাকা শুরু করবো। "লাইফ আনডার ওয়াটার" মনে হয় খারাপ হবে না। দেঁতো হাসি

পাগল মন

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

মনে হচ্ছে কপালে খারাবি আছে। অসাধারণ লেখা। তারা দিছি।

অতিথি লেখক এর ছবি

খারাবি তো আছেই তয় সেটারে কিছুটা হলেও চেঞ্জ করার সামর্থ্য আমাদের আছে। খালি এট্টু ভালোভাবে ট্রাই করতে হবে।
তারার জইন্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

পাগল মন

তানভীর এর ছবি

তথ্যবহুল লেখা চলুক

পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ কখনোই ৩০০ পিপিএমের বেশি হয়নি

এটা অবশ্য আধুনিক পৃথিবীর কথা। প্রাগৈতিহাসিক যুগে পৃথিবী যখন অনেক উত্তপ্ত ছিলো এবং মানুষের অস্তিত্ব ছিলো না, তখন বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ অনেক বেশি ছিলো, সর্বোচ্চ প্রায় ৪০০০ পিপিএমের মতো (চিত্র দেখুন)। 'জলবায়ু পরিবর্তন' তাই এই বুড়ো পৃথিবীর জন্য নতুন কিছু নয়। মানুষ এর সাথে খাপ খাওয়াতে পারবে কিনা সেটাই শুধু কথা।

auto

অতিথি লেখক এর ছবি

তানভীর ভাই,
আধুনিক পৃথিবী বলতে নিশ্চয়ই মানবজাতির আবির্ভাবকে বুঝিয়েছেন? তার মানে মানুষ কখনো এর আগে ৩০ পিপিএমের বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড দেখেনি, তাই না?
আর কতটুকু খাপ খাওয়াতে পারবে সেটা আসলে সময়ই বলে দেবে, কিন্তু আমরা যদি যেভাবে চলছি সেভাবেই চলতে থাকি তাহলে আর খাপ খাওয়ানোর দরকারই পরবে বলে মনে হয় না।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

পাগল মন

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দারুণ লেখা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ নজরুল ভাই।

পাগল মন

অতিথি লেখক এর ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারে প্রথম সারিতে। বর্তমান ধারণা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে সমুদ্রজলসীমার উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে ৮ সে.মি থেকে ৩০ সে.মি পর্যন্ত, আর ২১০০ সালের মধ্যে বৃদ্ধি পাবে ৩০ সে.মি থেকে ১১০ সে.মি (১.১ মিটার) পর্যন্ত। বঙ্গোপসাগরের পানি ১ মিটার উঁচু হওয়া মানে বাংলাদেশের ১২% থেকে ১৮% ভূমি তলিয়ে যাওয়া। বাংলাদেশ এখনই বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতির দেশ। এতখানি ভূমি চলে গেলে অবস্থাটা কোথায় গিয়ে ঠেকবে?

তবে শুধু ভূমি হারানোর ভয়ই শেষ কথা নয়! যে হারে বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ছে তাতে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আরও ভয়াবহ আকারে, আরও প্রলয়ঙ্করী রূপ নিয়ে আঘাত হানবে উপকূলে। সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে নদীর পানি ঠিকমতো নিস্কাশিত হতে পারবে না, ফলে মৌসুমী বন্যা আরও বিস্তৃত, গভীরতর এবং প্রলম্বিত হয়ে উঠবে। নদী-নালার পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাবে। মূলত আমাদের কৃষি সম্ভাবনার অবক্ষয়ই তাই আসল বিপদ।

সত্যি কী নির্মম এই ভাগ্যের পরিহাস! কৃষিনির্ভর সমাজ এবং গরিব দেশ হিসেবে বাংলাদেশের খুব অল্পই অবদান আছে এর পেছনে। তবু এদেশের লোককেই সবচেয়ে বেশি মূল্য দিতে হবে এর জন্য! ডাচরা দিব্যি সমুদ্রপৃষ্ঠের চেয়ে নিচে বাস করছে। কিন্তু আমাদের মতো অনুন্নত, গরিব দেশের পক্ষে কি তা আদৌ সম্ভব হবে?

কুটুমবাড়ি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ কুটুমবাড়ি, আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য।

পাগল মন

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

চমৎকার লাগলো!

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

পাগল মন

স্বাধীন এর ছবি

লেখাটি চোখ এড়িয়ে গিয়েছিলো। মিনার মাহমুদের সৌজন্যে লেখাটি পড়া হলো। অনুবাদ বেশ ভালো হয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে পড়তে হবে। তাপমাত্রা বাড়লে কি হবে অনুমান করা সহজ। কিন্তু তাপমাত্র আসলেই বাড়বা কিনা, বা সেটা কমানো সম্ভব কিনা আদৌ এই ব্যাপারে গবেষণার ফলাফল আমাদের জানালে আরো খুশি হবো। বিশেষ করে এই বারের কানকুনে জলবায়ু সম্মেলন নিয়ে এখনো কোন লেখা আসেনি। এটা নিয়ে একটি লেখা লিখতে পারো।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।