ট্রানজিট নিয়ে সাম্প্রতিক ভাবনা...

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ২৪/০৪/২০১১ - ২:৪০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজকের দৈনিক পত্রিকাগুলোতে ট্রানজিট নিয়ে বেশ কিছু খবর এসেছে। খবরগুলোতে অনেক তথ্য উপাত্য এসেছে। সেগুলো থেকে অন্তত এটুকু বোঝা যায় যে সবপক্ষই এই ব্যাপারটাতে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখে। আমি নিজে এই ব্যাপারটা খুবই জটিল বলে ভাবি। অনেক ধরণের হিসাব নিকাশ জড়িত এর ভেতরে। যার সবগুলো জানা বা বোঝা আমার পক্ষে সম্ভব কিনা জানি না। আর তাই আমি সাধারণত ট্রানজিটের প্রশ্নে কোন বিশেষ পক্ষে যেতে পারি না।

তবে প্রকাশিত খবরের কিছু কিছু আমাকে উদ্বিগ্ন করছে। আমি দেখছি ট্রানজিট নিয়ে আলোচনাতে সজকপথ, রেলপথ এবং জলপথের তিনটিই বিবেচনাতে আছে। সেটাই হয়তো বাণিজ্য বাড়াতে সাহায্য করবে। কিন্তু আমি বাণিজ্য নিয়ে ভাবছি না। ভাবছি সময় এবং পরিবেশ নিয়ে। পাঁচ-ছয় বছর আগেও আমি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে গিয়েছি সাড়ে পাঁচ ঘন্টা বা তার কাছাকাছি সময়ে। ঢাকা থেকে খুলনা যেতাম সাত ঘন্টায়। কখনো কখনো একটু বেশি সময় লাগতো। হয়তো এক ঘন্টা যোগ হতো তাতে। '৯৭/৯৮ সালের দিকে একবার আরিচা ঘাট পার হতে গিয়ে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পায়ে হেটেছিলাম। তাতেও ঢাকা থেকে ঝিনাইদহে পৌছাতে সময় লেগেছিল সাথে সাত ঘন্টা। এতদিনে আমাদের রাস্তার প্রশস্ততা বেড়েছে কিছুটা হলেও। কিছু কিছু জায়গাতে বেশ কিছু বাই-পাস তৈরী করা হয়েছে। এখন বেশিরভাগ হাইওয়ে গাড়ি আর শহরের ভেতরে ঢোকে না। অন্তত দিনের বেলাতে। গাড়ির বহরে এরমধ্যে যোগ হয়েছে আরো দ্রুতগামী গাড়ি। তারপরও এইসব গন্তব্যগুলোতে যেতে আমাদের সময় কিন্তু আরো বেশিই লাগছে আজকের দিনে। কয়েকদিন আগেই আমার এক বন্ধু চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এসেছে ১৪ ঘন্টায়। এখন চট্টগ্রাম থেকে ৯/১০ ঘন্টাতে ঢাকা আসতে পারলে আমরা বেশ খুশি হয়ে যায়।

রাস্তা বাড়ার পরও আমাদের এই বাড়তি সময় লাগার কারণ হল আমাদের যোগাযোগের প্রয়োজনও বেড়েছে ব্যাপকভাবে। ফলে গাড়িও বেড়েছে প্রচুর। ফলে রাস্তার উপরে চাপ বেড়েছে অনেক। আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই এখন আমাদের রাস্তা বাড়ানোর দরকার হয়ে পড়েছে। সেটা শহরের ভেতরে বাইরে সবখানেই। কিন্তু তার জন্য দরকার ব্যাপক বিনিয়োগ। আর রাস্তা তৈরীতে আমাদের দেশে সাধারণত সরকারই বিনিয়োগ করে থাকে। তাই আমরা সাধারণ মানুষেরা এবং অবশ্যই বিনিয়োগকারিরাও তাকিয়ে আছি সরকারের দিকেই।

সরকার কিছু কাজও করছে। বেশ কিছু বড়বড় সেতু হয়েছে আমাদের। আরো কিছু হচ্ছে বা হওয়ার কথাবার্তা চলছে। তার জন্য বিবেচনাতে নিতে হচ্ছে বিস্তৃত পরিমাণ ফসলি জমি। এই ফসলি জমির রূপান্তরটাই আমাকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে।

আমি একটু পুরোনো কথা মনে করতে চাই এই সময়। উনিশ শতকের শেষের দিকে ব্রিটিশরা আমাদের দেশে রেল যোগাযোগ চালু করেছিল। এই রেল যোগাযোগের রুট ছিল মোটামুটি পূর্ব থেকে পশ্চিমের দিকে। কারণ তাদের টার্গেট ছিল কাচামাল যোগাড় করে কলকাতা বন্দরে নিয়ে যাওয়া। আর আমাদের এতদিনের প্রধান যোগাযোগের মাধ্যম ছিল যে নৌ-পথ সেটা মোটামুটিভাবে উত্তর থেকে দক্ষিণের দিকে প্রবাহিত। ফলে উনিশ শতকের শেষের দিকে এবং বিংশ শতকের প্রথম দিকে এই দুই ধরণের যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যে বেশ একটা টানাপোড়েন শুরু হয়। রেল নতুন প্রযুক্তি। সেটার গোড়াপত্তন যেমন হওয়া দরকার তেমনি দরকার নদীর পানি-প্রবাহ ঠিক রাখা। তা না হলে প্রভাব পড়তে পারে ফসলের উৎপাদনে।

ইতিহাস থেকে আমি যতটুকু জানি সেটা করা সম্ভব হয়নি। হয়তো সেটা করার ইচ্ছাও ছিলনা করো। ফলে এই সময়ে আমাদের দেশে ফসলের উৎপাদন কমতে শুরু করে ভয়াবহ ভাবে। তার পরিণতিতে ১৯৪৩ সালে আমাদেরকে যেতে হয়েছিল ব্যাপক দুর্ভিক্ষের ভেতর দিয়ে। বাঙালির স্বাস্থ্য ১৮৯০ থেকে ১৯৪৩ পর্যন্ত যে ব্যাপাক ক্ষয়ের ভেতর দিয়ে গেছে সেটা আমরা আজো ফিরে পাইনি। ১৯৪৩ এর পর আবার যে কিছুটা ফিরে আসতে শুরু করে তার কারণ এই না যে আমার খাদ্য উৎপাদন আবার বাড়তে থাকে ব্যাপক ভাবে। এর কারণ আমাদের মানুষের সংখ্যা কমে যাওয়া। উৎপাদিত খাদ্যের পরিমাণ আগের মতই ছিল প্রায়।

১৯৪৮ এর পর আমাদের দেশে শুরু হয় সড়ক পথের নির্মাণযজ্ঞ। সেটা এখনো চলছে। সড়ক পথেই আমরা এখন আমাদের বেশির ভাগ যাতায়াত সারি। খুব সম্ভবত আশির দশক থেকেই আমাদের দেশে সড়কপথের পরিমাণ ব্যাপকতর হতে শুরু করে। সেই সড়ক পরিকল্পনাতেও যে পানি-প্রবাহের ব্যাপারটা ছিল না সেটা আমরা টের পেয়েছে হাড়ে হাড়ে। কয়েকটি ব্যাপক বন্যা থেকে। বন্যা আমাদের দেশে হতই। তাতে পলি পড়ত। আর তার ফলে ফসলের উৎপাদন বাড়ত বলেই জানতাম। কিন্তু রেল চালুর পর থেকে আমরা পরিচিত হই জলাবদ্ধতার সাথে। সড়ক ব্যবস্থার বিকাশের পর এই জলাবদ্ধতার ভয়াবহতা বেড়েছে বিপুল ভাবে। তার ফলে প্রায় প্রতিবছরই আমাদেরকে বিপুল ফসলহানীর শিকার হতে হয়।

এর ভেতরে আমাদের চাষাবাদেও বেশ কিছু উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে। তাই উৎপাদনও বেড়েছে। তারপরও যে আমরা ব্রিটিশ আমলে ১৯০০ সালের আগে পর্যন্ত চাল রপ্তানি করতাম তা এখনো আমাদেরকে আমদানি করতে হয়। আর এই আমদানির ব্যাপারটাতে কিছুদিন আগেই আমাদের খুব কঠিন একটা শিক্ষা হয়ে যাওয়ার কথা। এইতো বছর ২/৩ আগেই। বিভিন্ন করণেই আমাদের উৎপাদন হয়েছে কম। সারা পৃথিবীতেই তাই। আমাদের হাতে টাকা থাকার পরও আমরা কিন্তু চাল কিনতে পারিনি। ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডের অনেকেই তখন চাল বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছিল। আমার পাশের বাড়ির মানুষটিও যে তারজন্য প্রয়োজনীয় চাল কিনতে পারছেন না সেটা আমি দেখেছি। এবং কিছুই করতে পারিনি। তখন রাষ্ট্র বলেছে তার হাতে টাকা আছে কিন্তু বিশ্ববাজারে চাল নেই। আর আমি দেখেছি বাজারে চালের দামের উর্ধ্বগতি।

ফিরে আসি ট্রানজিটের প্রশ্নে। প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা ভাবা হচ্ছে। তাতে সড়কের পরিমাণ এবং মান বাড়বে। বাড়বে বন্দরের অবকাঠামো। বাড়বে রেল পথ। কিন্তু ফসলি জমি যে কমে যাবে সেটা কেন কেউ বলছে না? বিনিয়োগ করা টাকা কত দিনে উঠে আসবে সেই হিসাব আছে। কিন্তু কি পরিমাণ জমি চাষাবাদ থেকে বাদ পড়বে সেটার কোন হিসাব দেখছি না। ফসলের উৎপাদন কতটুকু কমবে সেটা কি কেউ হিসাব করছে? সেটা পুশিয়ে নেয়া হবে কিভাবে সেটা কি আমরা জানতে চাইতে পারি না?

ট্রানজিট নিয়ে যারা আলোচনাতে বসছেন তাদের ভেতরে আমি কোন ইতিহাসবিদ দেখছি না। দেখছি না কোন আরবান বা রুরাল প্লানারের নাম। পরিবেশ-বিশেষজ্ঞের চিহ্নই নেই সেখানে। শুধু একটা কথার উল্লেখ দেখছি। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞার কথা। আমি মনে করি না এত গুরুতর একটা বিষয়ে এইটুকু উল্লেখই যথেষ্ট। আপনাদের কি মনে হয় ?

রাজীব রহমান

ছবি: 
24/08/2007 - 2:03am

মন্তব্য

হিমু এর ছবি

চলুক

সচলায়তনে স্বাগতম, নিয়মিত লিখু্ন।

অতিথি লেখকঃ অতীত এর ছবি

চলুক চলুক চলুক

মুস্তাফিজ এর ছবি

স্বাগতম।

ট্রানজিট ব্যাপারটায় খারাপ কিছু দেখিনা। যেকোন স্থাপনার প্রয়োজনেই জমি দরকার। ফসলী জমি না ট্রানজিট লাভজনক সেটার তুলনামূলক চিত্র কোথাও পাওয়া গেলে ভালো হতো।

...........................
Every Picture Tells a Story

 শুভাশীষ মনি এর ছবি

চলুক

হিমু এর ছবি

ভারতকে পণ্য পরিবহনের জন্য নদীপথ ব্যবহারে চাপ দিলে উজানে বাঁধ বসিয়ে নদীর নাব্যতা নাশের ব্যাপারটাকে কিছুটা হলেও চেক দেয়া সম্ভব হতো। গঙ্গা, তিস্তা আর বরাকের পানি ভাগাভাগি নিয়ে কিছু জটিলতা কাটানো যেতো, যদি পদ্মা, তিস্তা আর মেঘনা হয়ে ভারতীয় পণ্যবাহী জাহাজ যাতায়াতে বাধ্য হতো।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এই ইস্যুতে লেখার জন্য ধন্যবাদ।

পোয়েট অব এ ডিমাইজ এর ছবি

কিন্তু কি পরিমাণ জমি চাষাবাদ থেকে বাদ পড়বে সেটার কোন হিসাব দেখছি না। ফসলের উৎপাদন কতটুকু কমবে সেটা কি কেউ হিসাব করছে? সেটা পুশিয়ে নেয়া হবে কিভাবে সেটা কি আমরা জানতে চাইতে পারি না?

আমরা জানতে চাই!!

অনেক কিছুই এদেশে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে যায় না। থাকে না চুলচেড়া বিশ্লেষণ- তুলনামূলক উপাত্ত। মন খারাপ

gias এর ছবি

আপনি যে বলেছেন ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের কথা সেটার মূল কারণ ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ । আপনি কেন এই বিষয়টি এড়িয়ে গেলেন বুঝতে পারছি না ।

হিমু এর ছবি

চলুক

তাছাড়া, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় উৎপাদনের অভাবে কি দুর্ভিক্ষ ঘটেছিলো? আমি জানতাম জাপানিরা যাতে বার্মা ফ্রন্ট অতিক্রম করে এসে কোনো রেশন না পায়, সে জন্য পূর্ববঙ্গ থেকে খাদ্যশস্য সরিয়ে নিয়েছিলো বৃটিশ সরকার [বাঙালনামা, তপন রায়চৌধুরী]।

পোস্টলেখকের কাছ থেকে রেফারেন্সসহ যুক্তি আশা করছি।

কুটুমবাড়ি [অতিথি] এর ছবি

আমি জানতাম ওই বছর (১৯৪৩ সাল) খরার কারণে শস্য উৎপাদন কম হয়েছিল। তার ওপর ব্রিটিশরাজ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লিপ্ত মিত্রবাহিনীর জন্য বাজারের সব খাদ্যদ্রব্য কিনে নিতে শুরু করে। এর ফলে বাংলায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, এবং মারা যায় ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ। একটা ব্যাপার নিশ্চিত করেই বলা যায়, শুধু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। যা-ই হোক, পোস্টলেখকের কাছ থেকে বিস্তারিত জানার জন্য অপেক্ষায় রইলাম।

রাজীব  রহমান এর ছবি

হিমু, আপনার আইডিয়াটা মজার। তবে ব্যাপারটা বোধহয় শেষ পর্যন্ত সম্ভব হবে না। বেশির ভাগ নদীর উপরে আমরা এরই ভেতরে সেতু বানিয়ে ভেলেছি। আর তাদের উচ্চতা খুব একটা বেশি না। ফলে তার নিচ দিয়ে মঝারি আকারের বড় জাহাজগুলো বোধহয় যাতায়াত করতে পারবে না... মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

হিমু এর ছবি

কিছু কনটেইনারবাহী বার্জও যেতে পারবে না বলছেন? একটা বার্জ তো একটা ট্রাকের চেয়ে বেশি মাল পরিবহন করতে পারে। আর নদীপথে দূরত্ব যেহেতু সড়কপথের চেয়ে কম, ট্রাক আর বার্জে পরিবহন সময়ও কাছাকাছিই হওয়ার কথা। ট্র্যানজিট/ট্র্যান্সশিপমেন্টের স্বার্থকে নদীর স্বার্থের সাথে সমন্বিত করা গেলে কিন্তু আমাদেরই লাভ।

মাহবুব রানা এর ছবি

সাধারন বিবেচনায় ট্রানজিটের পক্ষেই আমার মত। তবে সম্ভাবনা যেমন আছে, অনেক আশংকাও জড়িয়ে আছে এর সাথে। আলোচনার টেবিলে সব পক্ষই চাইবে সব সিদ্ধান্ত নিজের দিকে নিয়ে আসতে, কজেই বাংলাদেশকে যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে সব ইস্যুতে সচেতন থেকেই আলোচনার টেবিলে দর কষাকষি করতে হবে।

আর ফসলি জমি কমে যাওয়া নিয়ে আপনার যে আশংকা তার যৌক্তিকতা অবশ্যই আছ, তবে জমি কমে যাওয়ার ব্যাপারটা কিন্তু এখনও ঘটছে। একবার কুমিল্লায় বাড়ি করার জন্য ধানক্ষেত ভরাট করতে দেখে খুব কষ্ট লেগেছিলো। এরকম কিন্তু সারাদেশেই দেখতে পাবেন। জানিনা কৃষি জমির এরকম পরিবর্তন রোধে কোনো আইন আছে কি-না। জাতীয় কৃষিনীতি ২০১০ এর যে খসড়া এইমাত্র পড়লাম, তাতে বলা হয়েছে প্রতি বছর ১% হারে কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। কিন্তু বেশ অবাক হলাম নীতির পুরোটা পড়ে, প্রতিবছর জমির এই কমে যাওয়া প্রতিরোধে কোনো পদক্ষেপের কথা জানতে পারলাম না ১৯ পৃষ্ঠার এই খসড়ায়। অথচ ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এজন্য যে কৃষিজমির এই পরিবর্তন ইরিভার্সিবল, একবার কেউ বাড়িঘর করে ফেললে সেই জমি আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব না।

বটমলাইন হচ্ছে, শুধু ট্রানজিটের ক্ষেত্রে না, কৃষিভূমির অন্যকোনো ব্যবহার কোনোভাবেই গ্রহনযোগ্য না।

কালামিয়া এর ছবি

চলুক
দারুন। ইতিহাস নিয়ে কখনও ভেবে দেখি নাই। এই বিষয়ে আলোকপাত করার জন্য ধন্যবাদ।
চলুক

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

কিন্তু ফসলি জমি যে কমে যাবে সেটা কেন কেউ বলছে না? বিনিয়োগ করা টাকা কত দিনে উঠে আসবে সেই হিসাব আছে। কিন্তু কি পরিমাণ জমি চাষাবাদ থেকে বাদ পড়বে সেটার কোন হিসাব দেখছি না। ফসলের উৎপাদন কতটুকু কমবে সেটা কি কেউ হিসাব করছে? সেটা পুশিয়ে নেয়া হবে কিভাবে সেটা কি আমরা জানতে চাইতে পারি না?

গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। আমরাও জানতে চাই।

বোকাসোকা এর ছবি

উনিশ শতকের শেষের দিকে ব্রিটিশরা আমাদের দেশে রেল যোগাযোগ চালু করেছিল। এই রেল যোগাযোগের রুট ছিল মোটামুটি পূর্ব থেকে পশ্চিমের দিকে।

একটু খটকা লাগছে বেপারটা নিয়ে!
কারণ রেল মূলত পূর্ব এবং পশ্চিম জোনে ভাগ করা ছিল (এখনো আছে) কিন্তু সে আমল এবং এ আমলের মূল রেলপথগুলো ছিল উত্তর (uttor, লেখা যাচ্ছে না!) থেকে দক্ষিনের দিকে। এবং পশ্চিম জোনের রেল পূর্ব জোনে যেতে পারত না। পশ্চিম জোন ছিল পুরোটাই ব্রডগেজ লাইন, (দিনাজপুর, আখাউড়া, ঈশ্বরদি, রাজশাহী, পাকশি, খুলনা ইত‍্যাদি এইদিকে) এর সাথে যোগাযোগ ছিল পশ্চিম বঙ্গের। পূর্ব জোন মিটারগেজ এবং ন‍্যারোগেজ লাইনে তৈরি ছিল, এখনো মূলত তাই, (ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট এগুলো) এর সােথ যুক্ত ছিল আসাম। কিন্তু পুব থেকে পশ্চিেম রেলে কখনই সরাসরি যোগাযোগ ছিলনা বলে আমি জানি।

একমাত্র ডুয়ালগেজ লাইন ইদানিং কালে চালু হয়েছে যেটা দিয়ে সরাসরি পুব থেকে পশ্চিমে আসা যায় েসটা হল কমলাপুর থেকে রাজশাহী পর্যন্ত, যমুনা সেতুর উপর দিয়ে লাইনটা। (যেটা রাজশাহী থেকে চাপাই নাবাবগন্জ এর রহনপুর হয়ে কোলকাতা যাবে, লাইনটা আগে থেকেই ছিল, শুধু ব্রডগেজে ভাঙ্গাচোরা অবস্থায়, শেখ হাসিনা কয়েকদিন আগে এটার সংস্কার এবং পরিবর্ধণ কাজের উদ্বধন করলেন।)
উকি'র এই লিংক এর মাপটা বড় করে দেখুন, এখনো পূর্ব থেকে পশ্চিমের একমাত্র যোগাযোগ দেখানো আছে যমুনা সেতুর উপর দিয়ে।

হাসিব এর ছবি

কৃষিজমির প্রতি এতোটা মায়া করাটা কী দীর্ঘমেয়াদে ফিযিবল? এরকম জনবহুল দেশে কৃষিজমি কমবে এটাই নিয়তি। এবং মানুষজনকে কৃষি থেকে সরিয়ে আরো বেশি উৎপাদনশীল কোন ক্ষেত্রে কাজ দিতে হবে এরকমটিই লক্ষ্য হওয়া উচিত।

রাজীব  রহমান এর ছবি

মাহবুব রানা, রিপোর্টটা কি আমি পেতে পারি?

১৯৪৩ এর দুর্ভিক্ষের ব্যাপারে অনেকেই অনেক মন্তব্য করছেন। আপনাদের বেশির ভাগের আসেই দ্বিমত করাটা কঠিন। কারণ আপনাদের বেশির ভাগ তথ্যই সঠিক। তবে আমার জানা মতে শুধু এক বছরের কম উৎপাদনের জন্য মানুষ সংকটে পড়তে পারে, কিন্তু তাতে এত লক্ষ মানুষ মরে যায় না। সেবছর পুরো ভারতের উৎপাদন কিন্তু কম হয়নি। বাংলার ফসলের উৎপাদন ১৮৯০ থেকেই কমা শুরু করেছিল। ১৯৪০ এ গিয়ে সেটা ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। এই ফসলের উৎপাদন কমার প্রধান কারণ হিসেবে পাওয়া যায় পানি-প্রবাহের চরিত্র পরিবর্তন এবং বাংলাদেশের নদীতে কচুরিপানার আবির্ভাব। প্রথমটার কারণ প্রধানত রেল পথ এবং নির্মানাধীন অসংখ সেতু। আমাদের নদীতে কচুরীপানার ব্যাপারটাও বাইরে থেকে আসা। স্পেসিফিক সাল এবং কার হাত ধরে সেটা এসেছিল সেটা মনে করতে পারছি না বলে দুঃখিত। আসলে নিজে ইতিহাসের লোক নই বলে ঘটনা বাইরের স্পেসিফিকেশন খুব একটা মনে রাখতে পারি না। তবে ব্যাপারগুলো সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর বিভিন্ন লেখা থেকেই মূলত পেয়েছি।

বোকাসোকা, আপনি নদীপথ এবং রেলপথ একসাথে কোন ম্যাপে দেখুন। আপনার জন্য একটা তথ্য দিচ্ছি, হার্ডিং ব্রিজ যখন বানানো হয় তখন সেখানে যে পাইলিং করা হয় সেটা ছিল তখনকার সময়ের সবচেয়ে গভীর পাইলিং। আর নদীর অবস্থানের কারণেই রেল লাইনগুলো যতটা সম্ভব উত্তর দক্ষিণ করা ছাড়া উপায় ছিল না। কিন্তু টার্গেট ছিল উৎপাদিত পণ্য কলকাতা বন্দরে নিয়ে যাওয়া।

হাসিব, আপনার সাথে আমি হয়তো ২০০৮ পর্যন্ত একমত হতাম। কারণ স্বাভাবিকভাবেই শ্রম উদ্বৃত্ত দিয়ে যদি প্রয়োজনীয় খাদ্য কিনে নেয়া যায় তাহলে আমাদের জন্য সেটা ভাল হওয়ার কথা। কিন্তু ২০০৮ এ আমি বুঝেছি পুজিবাদি এই ধারণা কতটা প্রতারক।

আর সবমিলিয়ে আমি শুধু দুইটা দিক নিয়ে বলেছি। আমাদের রাস্তাতে গাড়ির সংখ্যা বাড়লে আমাদের যাতায়াতের সময় বেড়ে যেতে পারে- সেটা নিয়ে আমি চিন্তিত। আর ফসলি জমি এমনিতেই বিভিন্ন কারণে কমে যাচ্ছে। তাতে আরো বড় একটা কারণ যোগ হতে যাচ্ছে। সেটা নিয়ে আলোচনা দেখছি না। তাই আরো চিন্তিত হয়ে পড়ছি।

হিমু এর ছবি

ঐ সময়ে কি চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করা হতো না? কারণ মেঘনার পূর্বপারের শস্য তো অনায়াসে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাহাজে করে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া যেতো। আসামের চা একটা বড় পণ্য ছিলো, সেটা কি কলকাতা থেকে শিপ করা হতো, নাকি চট্টগ্রাম থেকে?

মাহবুব রানা এর ছবি

এইখানে দেখেন

হাসিব এর ছবি

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরি দুর্ভিক্ষের গবেষণায় খুব ভালো কোন সোর্স নন। আপনি অমর্ত্য সেনের Poverty and Famines. An Essay on Entitlement and Deprivation বইটা পড়ে দেখতে পারেন। অমর্ত্য সেনের মতে সম্পদের বন্টন ছিলো সমস্যা। প্রাচুর্য নয়। উইকিতে ঐ বইটার কিছু লাইন পেলাম /

Amartya Sen holds the view that there was no overall shortage of rice in Bengal in 1943: availability was actually slightly higher than in 1941, when there was no famine. It was partly this which conditioned the sluggish official response to the disaster, as there had been no serious crop failures and hence the famine was unexpected. Its root causes, Sen argues, lay in rumours of shortage which caused hoarding, and rapid price inflation caused by war-time demands which made rice stocks an excellent investment (prices had already doubled over the previous year). In Sen's interpretation, while landowning peasants who actually grew rice and those employed in defence-related industries in urban areas and at the docks saw their wages rise, this led to a disastrous shift in the exchange entitlements of groups such as landless labourers, fishermen, barbers, paddy huskers and other groups who found the real value of their wages had been slashed by two-thirds since 1940. Quite simply, although Bengal had enough rice and other grains to feed itself, millions of people were suddenly too poor to buy it.

আর ১৯৯৮এর পরে কী হইলো? পুঁজিবাদি পৃথিবীতে বাংলাদেশ কী তাহলে চিরকাল কম পয়সার কৃষিতে নিজেদের নিয়োজিত রাখবে বলছেন?

দুর্দান্ত এর ছবি

ট্রানসিটের ব্যাপারে আমার মতামত হ্যাঁ বোধক। হাল জমানায় উতপাদনখাতের মত অবকাঠামো, উতপাদন সয়াহায়ক ও সরবরাহ- (সাপ্লাই-চেইন আরকি!) এর ব্যাবস্থাপনা একটি বড় জাতীয় সম্পদ। ইউরোপের উদাহরন এখানে সরাসরি প্রাসঙ্গিক নয়, তবুও আমি হল্যান্ড/বেলজিয়াম/ডেনমার্কের কথা বলতে পারি, যারা তাদের ভৌগলিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায় করে নিয়েছে। আজকে বাংলাদেশ-ভারত যা করছে, ইতিহাসে ইউরোপের জার্মানী/ফ্রান্স এর মত বড় দেশগুলোর সাথে এই ছোট-নাজুক প্রতিবেশীগুলোর অবস্থান খুব বেশী ভিন্ন ছিলনা। এশিয়ায় সিঙ্গাপুরের কথাও একই ভাবে বলা যায়, যে দেশটি শুধু ভৌগলিক অবস্থান ও অবকাঠামোর উপর ভিত্তি করে কত এগিয়ে গেছে।

কিন্তু 'পাইকারি দরে' ও শুধুমাত্র টাকার বিনিময়ে ভারতকে ট্রান্সিট দেয়াকে আমি সমর্থন করিনা। শুধু থোক টাকার বিনিময়ে ট্রান্সিট দিয়ে দিলে ভারতসরকারের হাতে সেই টাকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সুযোগ থেকে যায়। কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র ঘিরে ভারতের আচরন থেকে আমাদের শিক্ষা নিতেই হবে। আবার সেই টাকার ব্যাবহারের সোল এজেন্সি ভারতসরকারের সাথে সুসম্পর্কওয়ালা পার্টির হাতে থেকে যায়।

টাকার বদলে আমরা ভারতের ভেতর দিয়ে চীনে-সার্ক দেশগুলোতে ট্রান্সিট চাইতে পারি, আমরা ভারতের গ্যাসপাইপলাইন, লোহা, কয়লা ও চুনাপাথরে ভাগবসানোর অবাধ অধিকার চাইতে পারি, আমরা ভারতের সাথে ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট বিহীন শ্রমপ্রবাহ চাইতে পারি। আমরা ভারতের সাথে একটি দ্বিপাক্ষিক মুক্ত-পণ্যবাজার তৈরীর কথা ভাবতে পারি।

এর মধ্যে শ্রমপ্রবাহ আমাদের জন্য একটি বড় সুবিধা দিতে পারে। ভারত জনবহুল হলেও পূর্বভারতে শ্রমিকের অভাব আছে। ঢাকা শহরের বহুজাতিক ও ভারতীয় প্রচুর প্রতিষ্ঠানের পদস্থ ও কারিগরি 'শ্রমিকের' একটি বড় অংশই ভারতীয়। গুলশান বারিধারার দুর্গাপূজা কমিটির সদস্যদের পরিচয় তলিয়ে দেখুন, বুঝবেন আমি কি বলছি। তাদের সবাই ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কাজ করছেন কিনা, আমি জানিনা। বাংলাদেশ থেকে ঠিক কতজন সেরকম পদস্থ ও কারিগরি শ্রমিক ভারতের ওয়ার্ক পারমিট পায় সেটা জানিনা, কিন্তু বাংলাদেশে জন্ম এমন ব্রিটিশ বা জার্মান নাগরিকের কলালে যে ভারতীয় ওয়ার্ক পারমিটে নেই, সেটা আমি উদাহরন দিয়ে বুঝিয়ে বলতে পারি। ভারত বাংলাদেশের একটি বড় শ্রম বাজার হতে পারে। ভারতের পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চল - যেখানে ভারতের উদ্বৃত্ত শ্রমিক রয়েছে, তাদের চাইতে ভাষা ও সংস্কৃতিগত নিকটতায় বাংলাদেশী শ্রমিক পূর্বভারতে বেশী গ্রহণযোগ্য। তদুপরি ভিসা তুলে দিলে সীমানার অশান্তিগুলোর বেসামরিক সমাধান খোঁজার ওপর চাপ বাড়বে। মুক্তবাজার তৈরী করতে পারলে আমাদের নিচু উদপাদন খরচ ভারতের বাজারে আমাদেরই অধিপত্য দেবে।

প্রশ্ন হতে পারে, ভারত কেন বাংলাদেশকে এইসব সুবিধা দেবে? এর কারন বাংলাদেশ ভারতকে ট্রান্সিট না দিলে (১) ভারতার তার পূর্বাঞ্চলকে পুরোপুরি চীনা প্রভাবমুক্ত করতে পাবে না (২) পূর্বভারতীয় কাঁচামাল আর পশ্চিম ভারতের ভোগ্যপণ্য একে অন্যে কাছে পৌছানোর খরচ আওতার বাইরেই থেকে যাবে। এই দুটো ভারতের সরকারি ও বেসরকারি মহলের কাছে শস্তা সমস্যা হবার কথা নয়। আরো কারন থাকতে পারে। বাংলাদেশকে এইসব সুবিধা দিতে গেলে ভারতের আভ্যন্তরীন বড় কোন বাধা অতিক্রম করতে হবে না। প্রাদেশিক পর্যায়ে একমাত্র বাংলাদেশে সাথে সীমানা আছে এমন আর অন্য কোন রাজ্য থেকে এতে প্রতিবাদ আসার কথা নয়, কারন যে শ্রমের সুবিধা তারা এখন অবৈধভাবে পাচ্ছে, তখন তা খরচের পরিবর্তন ছাড়াই বৈধতা পাবে। খবরের কাগজ যা দেখি, একমাত্র পশ্চিমবঙ্গ ও পশ্চিমভারতীয় সাম্প্রদায়িক মহল থেকেই বাংলাদেশী শ্রমিক আতঙ্কসংবাদ পাওয়া যায়।

সুতরাং নগদ পয়সার গরমে গলে আমাদের ট্রান্সিটকে শস্তায় বেচে দেয়া উচিত হবেনা। যে পরিমান নগদ টাকার কথা শুনেছি, সেটা দেশে পরিবহন খাতকে বেসরকারি করন করে দেশের ভেতর থেকেই তুলে নেয়া সম্ভব, তার জন্য দেশের বাইরে হাত পাততে হয়না। রইল কৃষি জমি কমে আসার কথা। সেটা ট্রান্সিট দিলেও কমবে, না দিলেও কমবে। যে লাউ সেই কদু।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

পোস্ট ও আলোচনা ইন্টারেস্টিং লাগল। লেখককে ধন্যবাদ।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

রাজীব  রহমান এর ছবি

http://www.as.wvu.edu/history/Faculty/Tauger/Bengal%20enlarged.pdf

হাসিব, আমার মনে হয় এই লেখাটা আপনাকে আকর্ষণ করবে।

গগন  এর ছবি

অনেক প্রাসংগীক ও জরুরী বিষয় নিয়ে আলোচনা নিয়ে কথা হচ্ছে দেখে ভাল লাগল। লেখক ও আলোচকদের ধন্যবাদ থামবেন না দয়াকরে..................শুভ কামনা

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

কেউ বলে ট্রানজিট, কেউ ট্রান্সশিপমেন্ট
ঘিলু নেই, বুঝিনাতো কি যে ইম্পর্টেন্ট! চিন্তিত

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।