কারাগারের মালি- ম্যান্ডেলার পদক্ষেপে

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: বুধ, ২৭/০৭/২০১১ - ৯:১২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একজন মালির মূল দায়িত্ব গাছে রঙ-বেরঙের ফুল ফোটানো। সকল ঋতুতে, সব ধরনের আবহাওয়ায়- গ্রীষ্মের দাবদাহ, বর্ষার জলসমারোহ, শীতের কনকনে ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে আপাত ঊষর মাটিতেও জীবনের ফল্গুধারা নিয়ে আসাতেই তার সার্থকতা, এর ব্যতিক্রম বিশ্বের কোন দেশে তো নেই-ই, এমনকি বন্দীশালা কারাগারেও নেই। তবে সাধারণত কারাগারের কোন বন্দীর কাঁধেই এই সুকঠিন দায়িত্ব অর্পিত হয়, লৌহকঠিন দেয়াল ঘেরা হলেও ছোট্ট গরাদের ফোকর থেকে খানিকটা মুক্তিই হয়ত বা নিয়ে আসে এই বাগান গড়ার কাজ, বুকের হাঁপরে সুবাতাস ভরে হয়ত নিজের অজান্তেই খালি পায়ে মখমল সবুজ ঘাসের স্পর্শে ফিরে আসে মুক্ত জীবনের স্মৃতি আর আশা জাগিয়ে রাখে সেই আলোকময় জীবনে ফিরে যাবার।

এমন এক প্রাক্তন কারাগারের প্রায় আকাশ ছোঁয়া উচ্চতার চার দেয়ালে ঘেরা চত্বরে দাড়িয়ে আছি, প্রাক্তন কারণ অনেক বছর আগেই দক্ষিণ আফ্রিকার স্বর্ণশহর খ্যাত জোহান্সবার্গের এই কন্সটিটিউশন হিল কারাগারকে তার আঁধারঘেরা ক্লেদময় ইতিহাস থেকে অব্যহতি দিয়ে পরিণত করা হয়েছে জাদুঘরে, দর্শনার্থীরা যাতে দেখতে পারে ইতিহাসের কালোতম অধ্যায়গুলো আর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন এর পুনরাবৃত্তি না করে কখনোই।

প্রতিদিন হাজারো মানুষের ঢল নামে এই সাবেক কারাগার বর্তমান জাদুঘরের পানে, জোহান্সবার্গে আসা পর্যটকদের জন্য তো অতিঅবশ্যদ্রস্টব্য, তার মূল কারণ- এইখানেইতো অনেক অনেক বছর আগে কালমানুষের মুক্তির দাবীতে সোচ্চার এক প্রতিবাদী তরুণ নেতাকে নিক্ষেপ করা হয়েছিল লৌহকপাটের পেছনে, তার বন্দী জীবনে দায়িত্ব ছিল এই প্রাণহীন ঊষর পরিবেশে মালির কাজ করা, যাতে পেতেন তিনি নবজীবন সৃষ্টির আনন্দ, সেই কারাগারের মালির পরিবার প্রদত্ব নাম মাদিবা রোহিহলালা গোটা বিশ্বের কাছে খুব পরিচিত না হলেও শত শত কোটি মানুষের মনের মুকুরে তিনি চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছেন নেলসন ম্যান্ডেলা নামে!

nelsonmandela

হ্যাঁ পাঠক, এই কারাগারেই ১৯৬২ সালে বন্দী জীবন শুরু হয় নেলসন ম্যান্ডেলার। মানুষের মুক্তি, মানবতার মুক্তির দাবীতে সোচ্চার এই চিরতরুণ কণ্ঠকে চিরস্তব্ধ করার হীন উদ্দেশ্যে সাজানো বিচারের নাটক দিয়ে বন্দী করা হয় তাকে, রুদ্ধ জীবনে হাতে তুলে দেওয়া হয় কোদাল-খুন্তি।
পরবর্তীতে রচিত বিশ্বের অন্যতম পঠিত আত্নজীবনী লং ওয়াক টু ফ্রিডম-এ ম্যান্ডেলা অকুণ্ঠ ভাবে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন বাগান জীবনের কথা- সেই এক চিলতে সবুজের ছোঁয়া তাকে নিয়ে যেত ইট- কাঠ- কংক্রীটের ক্লেদময় নরক থেকে অন্য কোথাও, নতুন কিছু গড়ার আনন্দ, নিজ হাতে রোপিত বীজ থেকে অঙ্কুরিত সবুজ লতানো চারার সরলতা সাময়িক মুক্তি দিত সেই দুর্বিষহ বন্ধীত্ব থেকে। প্রতিদিন সকালে ঘণ্টা বাজার পরপরই খড়ের টুপি মাথায় দিয়ে খসখসে দস্তানা পড়ে কাজের ময়দানে, প্রতি রোববারেই রান্নাঘরে টাটকা সবজী চালান দিতে হত যাতে বন্দীরা সপ্তাহে একটি দিন হলেও টাটকা কিছু খেতে পারে।

ইতিহাসের কয়েক পাতা উল্টালে দেখা যায় এই স্থাপনার যাত্রা শুরু হয়ে ছিল দুর্গ হিসেবে, পরবর্তীতে ১৮৯২ সালে থেকে তা কারাগারে রূপান্তরিত করা হয়, যদিও একপর্যায়ে শুধু মাত্র শ্বেতাঙ্গ বন্দীদের জন্য ব্যবহৃত হত, বিশেষ বিশেষ ব্যতিক্রম ছাড়া। ১৯৮৩ সালে এই কারাগারের যবনিকাপাত ঘটলেও তার সাথেই অবস্থিত আদালতের কার্যক্রম চলতে থাকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত। কন্সটিটিউশন হিল কারাগারে বন্দী হিসেবে ছিলেন বিশ্বে অহিংস আন্দোলনের জনক মহাত্না গান্ধীও!

Constitution Hill Prison

কারাগার চত্বরের এক কোণে প্রহরীর পর্যবেক্ষণের টাওয়ার, খানিকটা ফাঁকা জায়গা, বন্দীদের নানা অনুশীলন বা মার্চপাস্টের জন্য, আর সারি সারি বন্দীদের কক্ষ।

Constitution Hill Prison 2

নানা প্রান্ত ঘুরে গেলাম ম্যান্ডেলাকক্ষে, এখানেই সোনালী সময়গুলো ঘন আঁধারে অতিবাহিত করেছেন মর্তের এই স্বর্গবাসী।

DSC03705

একনিষ্ঠ মনে চালিয়ে যেতে চেয়েছেন লেখা-পড়া, সত্য জ্ঞানের অন্বেষণ থেকে কিছুই দমাতে পারেনি এই জ্ঞান সেবককে। এই কক্ষটিতে এখন স্থান হয়েছে তার বিভিন্ন সময়ে লেখা চিঠি, রোজনামচার।

DSC03704

সেই সাথে তার লেখা বইতো আছেই, আর আছে তাকে নিয়ে হওয়া বিভিন্ন বিচার ও আন্দোলনের নানা স্মারক। উপরে লেখা কয়েদী নম্বর ৪৬৬-৬৪, কারাগারের মালি বন্দী!

DSC03703

এর খানিক দূরেই আইসোলেশন সেল, অতি ভয়ংকর বা অবাধ্য কয়েদীদের মারাত্নক শাস্তি দিতে হলে এই ছোট্ট বদ্ধ খুপরিতে ( যেখানে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ ঠিক ভাবে শুতেও পারে না ) আটকে রাখা হত। কোন মানুষের জন্য আর কোন শাস্তির প্রয়োজন নেই, আল-বাতাস-জানালা-দরজাহীন ঘরে সপ্তাহের পর সপ্তাহ আবদ্ধতা যে কাউকেই মানসিক ভাবে প্রবল অসুস্থ করে তুলতে পারে। টয়লেট ব্যবস্থা ভিতরেই এক বালতিতে, খাবার মিলত হয়ত চব্বিশ ঘণ্টায় একবার। জানা যায়, অনেক বন্দীকে এর মধ্যেও এক বছরের অধিক সময় অতিবাহিত করতে হয়েছে। সাথের সঙ্গী জিম্বাবুয়ের স্ট্যানলে একটু মজা করেই বলল, ভিতরে যেয়ে থাক না কেন মিনিট পাঁচেকের জন্য? হাড়ে হাড়ে বুঝে যাবে বন্দীদের অভিজ্ঞতা।

DSC03700

না, সেই সাহস আর করলাম না বরং রওনা দিলাম ম্যান্ডেলার বাড়ীর উদ্দেশ্যে ( যে বাড়ী তিনি নিজের শ্রম দিয়ে গড়েছেন, যেখান থেকে শুরু হয়েছিল মহান সেই আন্দোলন এবং তার পারিবারিক জীবন)। পথে চোখে পড়ে জোহান্সবার্গের বিশালাকৃতির ম্যান্ডেলা সেতু, যার উপরে শোভা পাচ্ছে ফুটবল বিশ্বকাপ হাতে তার হাস্যজ্জল ছবি।

DSC03252

সোয়েটো, জোহান্সবার্গের অদূরেই এই শহরতলীর অবস্থান, যদিও এই এলাকার আদি বাসিন্দারা নিজেদের স্রেফ সোয়েটোর বাসিন্দা বলেই পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন, এই এলাকাতেই অবস্থিত দুই নোবেল শান্তি বিজয়ীর আবাস, নেলসন ম্যান্ডেলা এবং আর্চ বিশপ ডেসমণ্ড টুটু। পশ্চিম সোয়েটোর অরলান্দোর ৮১১৫ নম্বর বাড়ীটার সামনে সারা বছরই দর্শনার্থীদের ভিড়।

Mandela House

১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৬২, সুদীর্ঘ ১৬ বছর গ্রেফতার হবার আগ পর্যন্ত এই বাড়ীতেই ছিলেন জীবন্ত কিংবদন্তী। আত্নজীবনীতে লিখেছেন, প্রায় তিন দশক জেলখাটার পর মুক্তি পেয়ে যখন স্ত্রী উইনির সাথে এই বাড়ীটিতে ফিরে আসেন তখনই কেবল তার মনে বিশ্বাস হয় যে তিনি আজ মুক্ত, একজন স্বাধীন মানুষ। এই বাড়ীটিই তার সমগ্র সত্ত্বার কেন্দ্রবিন্দুতে।

IMG_4882
MANDELA HOUSE, sOWETO

টিকেটের জন্য লম্বা লাইন, বেশ খানিকক্ষণ অপেক্ষার পরে সুযোগ মিলল ভিতরে ঢোকার- প্রথমেই লাল ইটের দেয়াল, সেখানে থেকে থেকেই ভিন্ন ভিন্ন জায়গার ইটের উপরে ধাতব পাতে খোদাই করে লিপিবদ্ধ করা আছে এই বাড়ীকে ঘিরে ম্যান্ডেলার ও দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে নানা ঘটনা, যেমন ১৯৫১ সালে তার আফ্রিকার ন্যাশনাল কংগ্রেসের ( এ এন সি ) যুব সঙ্ঘের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া, ১৯৪৬ সালে তার প্রথম স্ত্রী ইভেলিন ও পুত্র মাদিবা থেমবিকেলের সাথে এই লাল বাড়ীতে আগমন।

IMG_4895

সময়নুসারে নানা ঘটনার পরিক্রমা, উইনি ম্যান্ডেলার সাথে পরিণয়, গ্রেফতার। বাড়ীটির দেয়ালে আজো দেখা যায় গুলির চিহ্ন, মলোটভ ককটেলের তৈরি ক্ষত। ১৯৯৭ সালে ম্যান্ডেলা বহুল স্মৃতিবিজড়িত বাড়ীটি জাদুঘরে রূপান্তরিত করার জন্যে দান করে দেন।
প্রথমেই ম্যান্ডেলা পাস বই পোড়ানোর ঐতিহাসিক ছবি, কালোদের আপন দেশে অত্যাচারী সাদা শাসকরা কালোদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এই পাস বই ব্যবস্থা চালু করেছিল, পাস বই ছাড়া ধরা পড়লে ছিল কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা। ম্যান্ডেলা সহ অন্যান্য নেতারা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই আপন আপন পাস বই জনসমক্ষে পুড়িয়ে ফেলেন।

Mandela Burning His Passbook

অতি ছোট একখানা বাড়ী, আফ্রিকার এই অঞ্চলের আর দশটি আটপৌরে বাড়ীর মতই- টিনের ছাদ, সিমেন্টের মেঝে, সরু রান্নাঘর, পিছনের দিকে আদিকালের টয়লেট। শয়নকক্ষটি এতই ছোট যে দুই জনের শোয়ার উপযোগী বড় বিছানা পাতলে তা মেঝের অধিকাংশই দখল করে ফেলে, তাই-ই হয়তবা সেখানে চোখে পড়ল ছোট বিছানা, সাধারণ আসবাবপত্র।

ম্যান্ডেলার লেখা চিঠিপত্র, নানা গুরুত্বপূর্ণ নথি, তাকে নিয়ে প্রকাশিত সারা বিশ্বের নানা পত্রিকার সংগ্রহ, নানা বিশ্ব-বিদ্যালয়ের দেয়া সন্মানসূচক ডিগ্রী, ঘটনাময় জীবনের অসংখ্য বাঁকের দুর্লভ আলোকচিত্র, এমনকি সাবেক বিশ্ব মুষ্টিযোদ্ধা চ্যাম্পিয়ন সুগার রে লিওনার্ডের চ্যাম্পিয়ন বেল্টটিও রয়েছে এখানে, যা তিনি বিশ্ব নেতাকে দিয়েছিলেন শুভেচ্ছা স্বরূপ।

DSC04290

একদেয়ালে ঝুলছে দক্ষিণ আফ্রিকার অকৃত্রিম বন্ধু ফিদেল ক্যাস্ট্রোর সাথে ম্যান্ডেলার হ্যাসোজ্জল আলোকচিত্র, পাঠক জানেন কি- কারাগারের প্রকোষ্ঠ থেকে ম্যান্ডেলার মুক্তি ও মানুষের স্বাধীনতার অধিকারের দাবীতে দীর্ঘ বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনের জন্য নেলসন ম্যান্ডেলা সব সময়ই ক্যাস্ট্রোকে মাই প্রেসিডেন্ট বলে সম্বোধন করেন!

Castro and Mandela

এইটিই ছিল সত্যিকার অর্থে ম্যান্ডেলার প্রথম বাড়ী এবং এই ক্ষুদে বাসস্থানকে নিয়ে সবসময়ই অত্যন্ত গর্ব অনুভব করেন তিনি। মন্ত্রমুগ্ধের মত বেশ খানিকটা সময় অতিবাহিত করে বাহির হয়ে আসলাম রোদেলা লাল ধুলোর রাস্তায়।

IMG_4884

পরের গন্তব্য ছিল বিশ্বকাপ ফুটবল দেখার উদ্দেশ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে প্রাচীন শহর ও সেই সাথে সমগ্র আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে নয়নাভিরাম শহর কেপটাউন।

cape

কেপটাউন যাওয়া মানেই তো অবশ্য দ্রষ্টব্য এককালের কারাগার ও বর্তমানে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট কুখ্যাত রোবেন আইল্যান্ড। শহর থেকে মাত্র সাত কিলোমিটার দূরে মহাসমুদ্রের মাঝের এই ছোট দ্বীপেই ১৮ বছর বন্ধী ছিলেন ম্যান্ডেলা। সেখানে যেতে হলে জলযান বিনা অন্য গতিক নেই, কাজেই ফেরীর টিকেট কিনতে সোজা বন্দরে হাজির হওয়ায় ছিল শহরে ঢোকার পর প্রথম কাজ, বন্দরের নাম আবার নেলসন ম্যান্ডেলা গেটওয়ে।

IMG_3925

বিশ্বকাপ ফুটবলের জোয়ারে তখন চলছিল এক প্রদর্শনী, তাতে ছিল ১৯৬৯ সালে গঠিত রোবেন আইল্যান্ড ম্যাকানা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ঐতিহাসিক যাত্রার নানা আলোকচিত্রের সম্ভার, ম্যান্ডেলা স্বয়ং বন্ধীত্বকালে এই অ্যাসোসিয়েশনের সাথে নানা ধরনের ক্রীড়ার মাধ্যমে শরীরচর্চায় যুক্ত ছিলেন।

DSC04013

আর আছে টেবিল মাউন্টেন। বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক বিস্ময় এই পর্বতের পাদদেশেই গড়ে উঠেছে কেপ টাউন শহর,

Table Mountain

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে খাড়া সাড়ে তিন হাজার ফিট উপরে উঠে গেলেও এর মাথাটা টেবিলের মতই সমতল কয়েক বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে।

DSC04149

আত্নজীবনীতে ম্যান্ডেলা বারংবার উল্লেখ করেছেন এই পর্বতের কথা, জানিয়েছেন যখনই পর্বতটি তার দৃষ্টি পথে পড়ত, জানতেন ঐ তো প্রিয় স্বদেশ, একদিন ফিরবেনই তিনি সেখানে মুক্ত স্বাধীন মানুষ হিসেবে।

এখানে আগত পর্যটকদের মাঝে ব্যপক জনপ্রিয় টেবিল মাউন্টেনে আরোহণ করা, অধিকাংশ জনই কাজটা সারে কেবল কারে চেপে আর আমাদের মত ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়রা হাইকিং করে। ট্রেকিং করে সরু সরু পাথুরে ট্রেইল বেয়ে মিনিট চল্লিশেক ওঠার পরেই দূর নীল সমুদ্রের মাঝে কালো টীপ রোবেন দ্বীপ নজরে আসল, মনে হল প্রিয় নেতা ম্যান্ডেলার অনুভূতির কথা, ভাবলাম- আর মাত্র কয়েকটা ঘণ্টায় তো, পরের দিনই তো যাচ্ছি রোবেন দ্বীপে।

RobenIsland

কিন্তু বিধিবাম, পরের দিন উত্তাল সাগরের কারণে সমস্ত ফেরী যাত্রা বাতিল হয়ে গেল, এমনকি পরের দিনও ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ল না মহাসমুদ্রের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে সৃষ্ট খারাপ আবহাওয়ায়। মনকে প্রবোধ দিলাম- একযাত্রায় তো আর সবকিছু সম্ভব হয় না, তবে জীবনের কোন প্রান্তে নিশ্চয়ই আসব দক্ষিণের এই অপরূপা ভূখণ্ডে, তখন নিশ্চয় যাব রোবেন দ্বীপে।

এক মাসের ভ্রমণ কালীন সময়ে ম্যান্ডেলা জন্মভূমিতে সর্বক্ষণ তার বাণী, সংগ্রাম, জীবন মানসপটে সমুজ্জল থাকত। বিশ্বের সব রাজনীতিবিদরাই মহাত্না গান্ধীর অহিংস নীতির কথা বলে যান, কিন্তু তা ব্যক্তিগত জীবনে কঠোর ভাবে পালন করতে পেরেছেন একমাত্র নেলসন ম্যান্ডেলা, আর তাইতো তিনি পৃথিবীর সমস্ত অত্যাচারিত মানুষের মুক্তির প্রতীক।।

IMG_4811


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বন্ধী না, বন্দী
লেখকের নাম নিশ্চয়ই তারেক অণু?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

দারুণ।
আপনি সিরিয়াসলি আপনার ভ্রমন কাহীনিগুলোর একটা সংকলন করে ফেলুন।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

তানিম এহসান এর ছবি

ভাবলাম রোবেন আইল্যান্ডের কথা পাবো। পাঁচদিন কেপটাউনে থেকেও সেখানে যেতে না পারার দুঃখ ভুলবো, হলোনা। রাতের কেপটাউন যে অদ্ভুত সুন্দর, কি অদ্ভুত সুন্দর! কেপটাউনের আরেকটা বৈশিষ্ট হচ্ছে এর দুইপাশে দুটি মহাসাগর। আমি একেক রাতে একেক পাশে যেয়ে বসে থাকতাম একা একা।

থামবেন না, বাংলাদেশের একজন মানুষ এইভাবে পৃথিবীব্যাপী ঘুরে বেড়াচ্ছে ভাবতেই গর্বে সিনা বত্রিশ ইন্চি হয়ে যায় হাসি

বইখাতা এর ছবি

ছবিগুলো দেখে ভালো লাগলো। আর ইয়ে...লেখার অনেক জায়গায় 'বন্ধী' শব্দটা খুব চোখে লাগছিলো।

guest_writer এর ছবি

হুমম , প্রতিটা বন্দীর পরে একটা করে হ লেগে বন্ধী হয়েছে দেখি !! লেখার জোশে কিছুই খেয়াল করি নাই, দুঃখিত।
অনার্য সঙ্গীত, কথা চলছে এই নিয়ে, আমি চাই আবার প্রচুর আলোকচিত্র সহ লেখা দিতে, প্রকাশকের আবার তাতে একটু দ্বিমত, দেখা যাক।
তানিম এহসান ভাই, কেপ টাউন খুব বেশী মিস করি, ভারত আর অতলান্তিকের মিলন দেখতে তো কেপ পয়েন্টে গিয়েছিলাম, পরে পেঙ্গুইন দেখতে জেমস টাউনে, সেই কথা আরেক দিন লিখব। আর ঐখানে যা একখানা পুরনো বইয়ের দোকান আছে না, আমি তো এক দিনেই অনেক বই কিনে পরে ওজন করে দেখি ১২ কিলো !
নজু ভাই কি মস্করা করলেন !!!----- অণু

প্রখর রোদ্দুর এর ছবি

এমন পোষ্টের জন্য কৃতজ্ঞতা

বন্দনা- এর ছবি

আগে বলেনতো এত জায়গা ঘুরলেন কেমন করে। আপনার প্রতি হিংসা দিনকে দিন বাড়তেছে ভাইয়া।তারপর ও আপনার লিখা পড়ার জন্য মুখিয়ে থাকি, আর কোথায় কোথায় যেতে হবে তার পরিকল্পনা করতে থাকি।

ফাহিম হাসান এর ছবি

সইসহ বইয়ের আগাম বুকিং দিলাম। দেঁতো হাসি

Sohel এর ছবি

বই চাই অতি শিগ্রই!!! আপনাকে দেখে সতি্ হিন্সা হই। মাত্র ৩টি দেশ ঘুরা হলো। আরো ঘুরুন আরো লিখুন।

সোহেল

guest_writer এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ সবাইকে। আরে Sohel ভাই, আমাদের সবার দেশ কিন্তু আসলে একটাই- এই পৃথিবী, সীমান্তরেখা তো মানুষের প্রয়োজনে তৈরি, এই একটা দেশই ঘোরার চেষ্টা করি।
বন্দনা, আসলে হয়ে যায়, পরিকল্পনা করে রাখি অনেক গুলো, তারপর যে দুই- একটাকে বাস্তবায়ন করা যায়, হে হে। আপনি প্ল্যান করতে থাকুন , বলা যায় না পৃথিবীর কোন প্রান্তে দেখা হতেও পারে।
সবাইকে শুভেচ্ছা-- অণু

কল্যাণF এর ছবি

অণু, আমি নিজেও ম্যান্ডেলাকে অনেক উপরে রেখেছিলাম। কিন্তু এই সাউথ আফ্রিকার বগলে গত দু'বছর বসবাস করে বেশ অন্যরকম তথ্যও পাচ্ছি। তথ্যগুলো এখুনি বলার মত বা লেখার মত গুছিয়ে উঠতে পারিনি, তাছাড়া অনেক যাচাই করাও বাকি, আর হুট করে এগুলো লিখে ফেলা নিরাপদ কিনা তাও বুঝতে পারছিনা, কিন্তু যা পাচ্ছি তার ২৫ ভাগও যদি সত্যি হয়, তাহলে ইতিহাসের অনেক কিছুই আমাদের জানতে বাকি। তোমার ক্যারিবিয়ান ভ্রমণ চমৎকার হোক। ভালো কিছু ছবি পাবো আশা করছি।

তারেক অণু এর ছবি

লিখে ফেলেন দাদা, সত্যতো একসময় জানা যাবেই, তবেই ম্যান্ডেলা আমার সবসময়ই বন্ধু ছাড়া একজন মানুষ মনে হয়, নীতির কারণে হয়ত মনের মত অনুসারী জোটে নি কখনোই! মাপুতোতে দেখা তার শ্বশুরবাড়ীর কথা অবশ্য উল্লেখ করা হয় নি। হ্যাঁ, আমিও উদগ্রীব হইয়ে আছি পানির নিচের প্রথম ছবি তোলার জন্য্‌ পারলে হাঙ্গরের সাথে!

অতিথি লেখক এর ছবি

রোবেন দ্বীপে যাওয়া হয়নি, পরের বার নিশ্চয়ই যেতে পারবেন ।

ম্যান্ডেলা কে নিয়ে লেখার দুঃসাহস না দেখাই ।



ছে পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

কড়িকাঠুরে

তারেক অণু এর ছবি

পরের বার, কেপ টাউন খুবই মিস করি।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লেগেছে।
হাততালি

তারেক অণু এর ছবি
রাত-প্রহরী এর ছবি

ভালো লাগলো অনু। এই নিয়ে দু'বার পড়লাম। তোমার লেখা পড়ে ভিজুয়ালাইজ করতে আমার সমস্যা হয়না। ভালো থেকো ভাই।
-কামরুজ্জামান পলাশ

তারেক অণু এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ

rubaiat এর ছবি

বই চাই।

তারেক অণু এর ছবি

কিসের !

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।