প্রায়শ্চিত্ত...

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ৩১/০৭/২০১১ - ৪:০৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমি যখন বাড়িটাতে ঢুকছিলাম, আমার ভীষণ খারাপ লাগছিল। আমি কিছু স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করতে পারছিলামনা, আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল, হাত কাঁপছিল, মনে হচ্ছিল যেকোনো সময় মাথা ঘুরে পড়ে যাব। এগুতে ভয় পাচ্ছিলাম,এতদিন যে ভয়ে আমি এই মুহূর্তটার মুখোমুখি হয়নি তা আবার মনে চলে আসল, আর দৌড়ে পালানোর অদম্য ইচ্ছাটাকে আমি কোন মতে চাপা দিলাম।

আমি জানতাম আমাকে এই পরিস্থিতিতে পড়তে হবে তবুও আমি নিজের ইচ্ছায় এখানে এসেছি। মা অনেক মানা করেছেন, বাবা রীতিমতো হুমকি দিয়েছেন। আমি কারোর কথা শুনিনি।আমি জানি আমি এতদিনে ঠিক সিদ্ধান্তটা নিতে পেরেছি, এই সাহসটা আমার আরও আগেই আসা উচিৎ ছিল।

অন্ধকার একটা রুমে বসে আছি আমি আর প্রলয়,অনেকক্ষণ হল আমাদের এখানে এনে বসিয়ে রাখা হয়েছে। রুমটা এত ছোট যে আমার আবারো মনে হচ্ছিল আমি নিশ্বাস বন্ধ হয়েই মারা যাব,এবার মনে হয় সত্যিকারের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। পুরো রুমটাকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম আমি, দেখতে পেলাম এখানে সেখানে ঝুল ঝুলে আছে,মনে হয় অনেকদিন পরিস্কার করা হয়না। আমাদের উলটোদিকে ডেস্কের পেছনে একটা ছোট্ট জানালা, সেখান দিয়ে এই রুমটার থেকেও দৈন্য বাড়িটার পিছনটা দেখা যাচ্ছে।খুবই ক্ষীণ একটা আলোর রেখা সেই অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া জানালাটা দিয়ে এই রুমটায় ঢুকছে, আরও বেশিঅন্ধকার করে দিচ্ছে সবকিছু।দেয়ালে তিনটা টিকটিকি পাশাপাশি দেখতে পেলাম,আমি টিকটিকি ভীষণ ভয় পাই কিন্তু এখন যেন গায়েই লাগল না আমার। অনুভুতিশূন্য মনে হচ্ছে নিজেকে। রুমটার এক কোণায় একটা বোর্ড ঝুলতে দেখলাম,তাতে অনেকের ছবি সাঁটানো আছে,সাথে নামগুলো । আমি প্রলয়ের হাত চেপে ধরলাম,হয়তবা ভয়ে অথবা আতঙ্কে,কেন ঠিক জানিনা। তালিকাটাতে আমার চোখ ইতিপাতি খুঁজে ফিরল, অনেক চেষ্টা করলাম চিনতে, কিন্তু বুঝতে পারলাম না কিছুতেই।

অপেক্ষা করছি সেই মুহূর্তটার, যেটার অপেক্ষায় আজ প্রায় দুটা বছর কখনো লজ্জায়, কখনো শঙ্কায় আবার কখনো নিদারুণ অপরাধবোধে একটা একটা দিন কাটিয়েছি। এমন একটা দিনের কথা আমি মনে করতে পারিনা, যখন আমি ওর কথা ভাবিনি। আমার দুঃখ আমি একাই বয়ে বেড়িয়েছি , কাউকে জানতে দেইনি, প্রলয়কেও না।

এতোটা বছর এত বড় একটা কষ্টকে আমি কেমন করে চেপে রেখেছিলাম, আমি জানিনা। ভিতরে ভিতরে আমি শেষ হয়ে গিয়েছিলাম, নিজেকে শেষ করে দেয়ার একটা প্রবল ইচ্ছা আমার প্রায় জেগে উঠত। কিন্তু পর মুহূর্তেই চিন্তাটা বাদ দিয়ে দিতাম, হয়তোবা এই সময়টার জন্যই।আমি জানতাম আমার কাজ শেষ হয়ে যায়নি, বরং সবে শুরু হল।

খুব কান্না পাচ্ছে হঠাৎ। কখনো ভাবতে পারিনা এমন একটা জায়গায় আমাকে আসতে হবে, অথচ ও কিনা এই ছোট্ট জায়গাটায় তার জীবনের সবগুলো বছর কাটিয়ে দিল! আমি ভেবে পাইনা আমি কি করে এমন পাষাণ হলাম,আমি ভেবে পাইনা আমার পক্ষে কেমন করে সম্ভব হল ওকে এরকম একটা জায়গায় থাকতে দিতে। বিধাতা আমার সমস্ত অপরাধগুলোর শাস্তি ওকে দিয়ে দিয়েছেন, আমি চাইনি,কখনই চাইনি এটা। বাঁধ ভেঙ্গে কান্না আসছে আমার, আমি আটকাতে পারছিনা নিজেকে। কিন্তু এখন কাঁদলে তো চলবে না, আমাকে আরও অনেক বেশি শক্ত হতে হবে।

সময়গুলো এমন করে চলে যাচ্ছে আর আমি এক সময় বুঝতে পারলাম,কেমন করে জানিনা, আমার পিছনের দরজায় কেউ এসে দাঁড়িয়েছে। আমি জানিনা কে, কিন্তু আমি ওর উপস্থিতি খুব বেশি করে অনুভব করতে পারছি, বুঝতে পারছি, একবার ঘুরলেই আমি সেই চেহারাটা দেখতে পাব, যাকে দেখার জন্য এতোটা অস্থিরতা আমার।

আমি ঘুরলাম। একটা অসম্ভব মায়াময় মুখ আমার সামনে দাঁড়ানো। আমি অনেক বেশিকরে চিনি এই চেহারাটাকে কিন্তু এখন অবাক লাগছে খুব। কি অদ্ভুত সুন্দর সে! বড় বড় চোখে সে আমাকেই দেখছে, অবাক বিস্ময় লেগে আছে চোখ জোড়ায়। ছোট্ট একটুখানি একটা নাক তার, তার নিচে পাতলা একজোড়া ঠোঁট পুরো গোলাপি রঙের। আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসি দিল কিনা, বুঝতে পারলাম না। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি ওকে,আগে কোনদিনই দেখিনি যাকে, তবু মনে হল আমি একে সবসময়ই চিনি। যেন আজ নয়,কত শত বছর ও আমার কাছেই ছিল।

(চলবে)

-আফরিনা হোসেন


মন্তব্য

ধৈবত(অতিথি) এর ছবি

চলুক...

আফরিনা হোসেন রিমু এর ছবি

ধন্যবাদ। তাড়াতাড়িই পরের পর্বটা পেয়ে যাবেন।

স্বপ্নাদিষ্ট (অতিথি) এর ছবি

চলুক! অপেক্ষায় আছি।
-- স্বপ্নাদিষ্ট

===============================================
যে জাতি নিজের ভাগ্য নিজে পরিবর্তন করে না, আল্লাহ তার ভাগ্য পরিবর্তন করেন না।

আফরিনা হোসেন রিমু এর ছবি

ধন্যবাদ। বেশি অপেক্ষা করাব না আপনাদের।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

প্রথমে ট্যাগ দেখলাম...
তারপর পড়লাম...
তারপর আবার ট্যাগ দেখলাম...
এবার কনফিউজড হয়ে গেলাম...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আফরিনা হোসেন রিমু এর ছবি

থাক ভাই। আর কনফিউজড হবেন না। এর পরের পর্বটাতে খোলসা করার চেষ্টা করব জট।

ফাহিম হাসান এর ছবি

চলুক। আমি টিকটিকি ভয় পাই না, তবে বড় মাকড়শা ভয় পাই হাসি

স্বপ্নাদিষ্ট (অতিথি) এর ছবি

আমি আবার টিকটিকি বড় ভয় পাই। ইয়ে, মানে... কেমন লম্বা লেজ.. দেখে মনে হয় দেয়াল থেকে গায়ের উপর পড়ে যাবে.. মন খারাপ

-- স্বপ্নাদিষ্ট

===============================================
যে জাতি নিজের ভাগ্য নিজে পরিবর্তন করে না, আল্লাহ তার ভাগ্য পরিবর্তন করেন না।

আশালতা এর ছবি

এহহে ভিতুর ডিম। আমি টিকটিকি আরশোলা মাকড়সা কিচ্ছু ভয় পাইনা। খালি সাপ আর তেঁতুল বিছে দেখলে উরে বাপ্রে।

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

আশালতা এর ছবি

গল্পটা কি একজন মায়ের, যে কিনা নিজের বাচ্চাকে অনাথ আশ্রম থেকে নিতে এসেছে ? বোঝার ভুল হতে পারে, আমার এরকমই মনে হল। আর ট্যাগটা আসলেও বিভ্রান্তিকর।

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

আফরিনা হোসেন রিমু এর ছবি

আপনাদের সবার এত কনফিউশন দেখে এখন আমিও কনফিউজড হয়ে যাচ্ছি। যেমন প্রথমে চিন্তা করেছিলাম তেমনটা আর লিখতে ইচ্ছা করছে না।

কনফিউজড!

বন্দনা এর ছবি

ভালো লাগছে। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

আফরিনা হোসেন রিমু এর ছবি

ধন্যবাদ অনেক। আশা করি তাড়াতাড়ি লিখে ফেলতে পারব।

বন্দনা কবীর এর ছবি

অপেক্ষা বড্ড বাজে জিনিস। তাও...
চলুক...

অর্ক রায় চৌধুরী এর ছবি

চলুক

আফরিনা হোসেন রিমু এর ছবি

ধন্যবাদ।

তানিম এহসান এর ছবি

সবাই দেখি অপেক্ষার লাইনে দাড়িয়ে গেছে, অতএব লাইনের সর্বশেষ কোনায় দাড়িয়ে গেলাম।

সাইফ জুয়েল এর ছবি

চলতে থাক। ভালই তো লাগছে বেশ।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

তারপরের অংশ কই?

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।