আমার স্বপ্নযাত্রা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৪/০৮/২০১১ - ৯:২৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১৯৯৭ সালের মার্চ বা এপ্রিল মাস। তারিখটা আজ এতদিন পরে মনে নেই। ঢাকায় আসার উত্তেজনায় তখন আমি বিভোর। আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছি নটরডেম নয়তো ঢাকা কলেজে পড়ব। কলেজ দুটোর ব্যাপারে ছোটবেলাতেই বাবার কাছে গল্প শুনেছি। শুনেছি এখানে যারা পড়ে তারা নাকি অনেক বড় বড় জ্ঞানী। আর সেই কলেজে আমি ভর্তি হতে পারবো ভাবতেই যেন আমার ঘুম আসছিলো না।
আমি তখনও ঢাকা শহরের কিছুই চিনিনা। স্রেফ উত্তেজনার বশে আমার প্রথম ঢাকা আসা। প্রথম দিন এসেই নটরডেম কলেজে যখন ঢুকলাম আমার রক্তে যেন এক আনন্দের শিহরন বয়ে গেলো। ঘুরে ঘুরে সারা ক্যাম্পাসটা দেখলাম, কোথায় থাকা যাবে, কত খরচ হবে এগুলো যখন জানলাম তখন বুঝলাম এখানে আমার পড়া হবে না। চলে গেলাম ঢাকা কলেজে। সেখানে গিয়ে আমি যেন বিমোহিত হয়ে গেলাম। বিশাল ক্যাম্পাস, বড় বড় দুটো মাঠ, মাঠের পেছনে হোস্টেল সব মিলিয়ে আমি তখনই ভর্তি হওয়ার জন্যে পাগল হয়ে গেলাম। রাতে আমার গ্রামের এক বড় ভাইয়ের কাছে থাকলাম। সকলে যখন ঘুম ভেঙ্গেছে তখন দেখি বড় ভাই নেই। ভীষন ক্ষুধা নিয়ে নিচে নেমে দেখি কোন খাবার নেই। হাটতে হাটতে রাজ্জাক মামার দোকানে এসে দেখি বেশ বড় বড় সিঙ্গারা। লোভ সামলাতে পারলাম না। ওমা খেতে গিয়ে দেখি ভেতরে কলিজা দেয়া, তায় আবার দাম মাত্র ২ টাকা, ব্যস দুটো খেয়ে ফেললাম। রুমে ফিরে দেখি দাদা ক্লাস থেকে চলে এসেছেন। জিজ্ঞেস করলেন কি খেয়েছিস। আমি বললাম সিঙ্গারা। শুনে উনি আমার দিকে এমনভানে তাকালেন, তখনই বুঝলাম আমি কি করেছি!! গরুর কলিজা খেয়ে ফেলেছি! সেবারের মত বাড়ি চলে আসলাম।
পরে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিলে প্রয়োজনীয় টাকা আর কাগজপত্র নিযে এসে ভর্তি হয়ে গেলাম আমার স্বপ্নের ঢাকা কলেজে। ভর্তির কাজ শেষ করার পর আমরা প্রায় ১৫-২০ জন নতুন মুখ (যাদের অনেককেই পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও পেয়েছিলাম) ইন্টারন্যাশনাল হোস্টেলের সামনে কৃষ্ণচূড়ার চারপাশে বাধানো বেদিতে বসে আড্ডা দিলাম। সেদিনটা এখনও আমার চোখের সামনে শুকতারার মতই উজ্জ্বল হয়ে আছে। আড্ডা দিয়ে যখন ফিরছি তখন আবার সেই রাজ্জাক মামার দোকান, আবার সেই সিঙ্গারা। আবারও দুটো খেয়ে ফেললাম।
তার পরদিন হোস্টেলে থাকার জন্যে বিছানা বালিশ কিনে চলে আসলাম ১০২ নম্বর রুমে। সেদিন রাতে ঔই রুমে আমি ছাড়া আর কেউ ছিলনা। রাতে যখন লাইট বন্ধ করে শুয়েছি তখন টের পেলাম আমার চারপাশে গাতক পাখির দল গাইতে শুরু করেছে। শূধু তাই নয় মাঝে মাঝে হাততালি দিতে বাধ্য করছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই ওরা দলে এত ভারী হল যে আমার হাততালি ওদের কাছে যথেষ্ট মনে হল না। তাই প্রাণভয়ে নিজেকে বিছানার চাদরে মুড়িয়ে নিলাম। কিন্তু সেটা মনেহয ওদের পছন্দ হলো না। তাই গানের আওয়াজ বাড়তেই থাকলো। অনেক সকালে যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন ওদের আওযাজ কিছুটা কমেছে। কিন্তু ততক্ষণে আমার সাদা বিছানার চাদর ততক্ষণে রক্তে লাল হয়ে গিযেছে। নিজিকে একজন রক্তদাতা বলে মনে হতে লাগলো, কিন্তু সেইসাথে ভয়ও পেলাম এইভাবে রক্ত দিতে থাকলে শহীদ হতে বেশীদিন লাগবে না! তাই দেরি না করে ঔ দিনই মশারী কিনে আনলাম। দুপুর হতে না হতেই আমার রুমের বাকী সদস্যরা এসে হাজির। পরিচিতি পর্ব শেষ করার পর বেশী সময় লাগেনি, শুরু হয়ে যায় আমাদের দুষ্টুমি। বিকেল হতে না হতেই চার বন্ধু মিলে হলে গেলাম নিউমার্কেট। ওমা, ওখানে গিয়ে তো আমাদের চোখ ছানাবড়া। কি দেখছি আমরা! ভূল করে রম্ভা, উর্বশীদের দেশে চলে আসিনি তো! ঘোর কাটতে না কাটতেই রাত আটটা। এরপর থেকে প্রতিদিন বিকেলে নিউমার্কেট না গেলে আমাদের পেটের ভাত হজম হতো না!! রুমে ফিরে আমরা পরের দিন কার কখন ক্লাশ সেটা দেখে নিয়ে নতুনদের সাথে পরিচিত হতে চলে গেলাম ডাইনিং রুমে। খাওয়া দাওয়া শেষে টিভি রুমে কিছু সময় কাটিয়ে যখন রুমে ফিরলাম তখন রাত ১২টা। পরের দিন ক্লাশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
শুরু হয়ে গেলো আমার স্বপ্নের কলেজে স্বপ্নযাত্রা।

অর্ক রায় চৌধুরী।


মন্তব্য

মৌনকুহর এর ছবি

যাবতীয় স্মৃতিচারণ ভালু পাই চলুক
তবে আপনি নটর ডেমে পড়তে পারেন নি ব্যয়বহুলতার জন্য-- এটা বোধ হয় খানিকটা বেখাপ্পা হয়ে গেল। আমার সময়ে অন্ততঃ অবস্থা এমন ছিল না।

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ

সজল এর ছবি

নটর ডেমে তো হোস্টেল ছিলো না, সুতরাং বাইরে থাকার জন্য বাড়তি খরচ লাগারই কথা। আমি মিশনের হোস্টেলে থাকতাম, তাতে মেলাই খরচ যেত। সে তুলনায় ঢাকা কলেজে পড়ার খরচ অনেক কম হওয়ার কথা।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

মৌনকুহর এর ছবি

তা ঠিক।
লেখকের ভাব বুঝতে ভুল করেছি।

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ

সাইফ জুয়েল এর ছবি

বহু পুরানা দিনের কথা, কলেজের স্মৃতি মনে পড়িয়া মনটা একটু উদাস হইল।

অর্ক রায় চৌধুরী এর ছবি

লিখতে বসে আমার মনটাও উদাস হয়ে গিয়েছে।

তানিম এহসান এর ছবি

মৌনকুহর এর সাথে একম পোষন করছি। আাপনাদের ঢাকা কলেজের সাথে আমাদের নটরডেমিয়ানদের সম্পর্ক বরাবরই একটা টক-ঝাল-আচারের মত, বন্ধুত্বও দারুন ছিলো আমদের সময়ে। কলেজ জীবন শুনতে ভালো লাগছে।

অর্ক রায় চৌধুরী এর ছবি

আমার প্রচুর বন্ধূ নটরডেমের। আসলেই সর্ম্পকটা অনেকটা সেইরকম। তবে আমাদের বেশী লাগতো ভিকির সাথে। হাসি

অর্ক রায় চৌধুরী এর ছবি

ভাই মাস গেলে ৮০০-১২০০ টাকা পেতাম বাড়ি থেকে। এই টাকায় কি চলতো। থাকতাম কই, খাইতাম কি!!
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
লেখাটার খসড়াটা পোষ্ট করে ফেলেছি। তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে মূলটা রয়ে গেছে। মন খারাপ

তানিম এহসান এর ছবি

ব্যাখ্যা না দিলেও চলতো ভাই। আমার মন্তব্যে আশা করি মন খারাপ করেননি। আমি নিশ্চিত আপনি এখন অনেক সামর্থ্যবান। আপনার সামর্থ্য এবং সক্ষমতা বাড়ন্ত থাকুক! শুভেচ্ছা,

অর্ক রায় চৌধুরী এর ছবি

মন খারাপ করবো কেন ভাই, হা হা। মজা পাইছি। তবে সত্যি বলছি, রাগ কইরেন না, ঢাকা কলেজ আমার বেন জানি বেশী ভালো লাগছে। নাইলে হয়তো নটরডেমেই ভর্তি হইতাম। বড়জোড় একটা দুইটা টিউশনি করতে হইতো।

সজল এর ছবি

এইবার আপনারে তীব্র ধিক্কার। নটরডেমের উপরে সুন্দর কলেজ হয় নাকি! চোখ টিপি

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

অর্ক রায় চৌধুরী এর ছবি

চোখ টিপি

অর্ক রায় চৌধুরী এর ছবি

ভাই মৌনকুহর, পড়ার জন্যে ধন্যবাদ।

নিবিড় এর ছবি
অর্ক রায় চৌধুরী এর ছবি

আশা করি চলবে।

গেরিলা এর ছবি

উত্তম জাঝা!

অর্ক রায় চৌধুরী এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমিও ঢাকা কলেজের...
পুরাই স্মৃতিকাতর করে দিলেন
আমি হলে থাকতাম না, কলেজে গিয়ে সোজা ক্যান্টিনে। ফ্রি লেবু চা সিগারেট দাপায়া মিছিল... তারপর নিউমার্কেট... তারপর জল লাগোয়া ক্যান্টিনের বারান্দায় বসে টুয়েন্টি নাইন...
দুদিন পর পর অমুক তমুক কলেজের সঙ্গে মারামারি...
কনসার্ট, মিউজিক... আহ্... জীবনের অন্যতম সুন্দর সময়

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অর্ক রায় চৌধুরী এর ছবি

ভাই, আর বইলেন না, এখনও যখন সামনে দিয়ে যাই মনডা মোচড় দিয়ে উঠে।
জাগো বাহে, কোনঠে সবাই।।।

ইস্কান্দর বরকন্দাজ এর ছবি

হাসি

অর্ক রায় চৌধুরী এর ছবি

হাসি

দিহান এর ছবি

ঢাকা কলেজ, নটরডেম কলেজ আর হলিক্রস,ভিকারুননেসার ঠান্ডা যুদ্ধ আমরা যারা এর কোনোটাতেই পড়িনি তারা খুব উপভোগ করতাম। দল ভারী করার জন্য মাঝে মাঝে আমাদের ভোট দরকার হতো ওদের!

অর্ক রায় চৌধুরী এর ছবি

খাইছে
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

কৌস্তুভ এর ছবি

গরুর কলিজা খাইছিলেন তাতে হইছেটা কী?

অর্ক রায় চৌধুরী এর ছবি

তখন পর্যন্ত ওটা আমার কাছে নিষিদ্ধ ছিলো। আর ওটাই ছিলো একেবারে প্রথমবার। ধর্মের নিয়মকানুন থেকে তখনও পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারিনি।

সজল এর ছবি

প্রথম প্রথম অনেক কিছু হয়। কলেজে পড়ার সময় থাকতাম রামকৃষ্ণ মিশনের হোস্টেলে। মিশনের উলটা দিকে ছিলো এক পুরি-সিঙ্গারার দোকান, সেখানে গিয়ে একটা ঝোল সহ আলু-পুরি খেতাম। একদিন জানতে পারলাম সেটা গরুর ঝোল। একেবারে যাকে বলে প্রদীপের নীচে অন্ধকার।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

অর্ক রায় চৌধুরী এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি
মিশনে আমার কয়েকটা বন্ধুও থাকতো।

 মৃদুলা বিশ্বাস এর ছবি

ভাল লেগেছে। অনেক দিন আগের কথা মনে পরে গেল ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।