এলান কোয়াটারমেইন ও আয়েশা ২

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ০৮/০৮/২০১১ - ২:৫০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রথম অংশ

প্রথম অধ্যায়
দ্যা তালিসমান

আমার ধারনা প্রাচীন মিসর এর বাসিন্দারাই প্রথম বলেছিল প্রতিটি মানুষ ব্যাক্তি ৬ বা ৭ টি ভিন্ন ভিন্ন উপাদান দ্বারা তৈরি। যদিও বাইবেল তিনটি উপাদান এর কথা বলে, এক – শরীর , দুই – আত্মা আর তিন - অতি আত্মা বা বিদেহী আত্মা। এই প্রাচীন মিসরীয়রা আমাদের ধারনার চাইতে বেশী বুদ্ধিমান ছিলেন এবং এসব ভাবার মত যথেষ্ট সময় এদের ছিল। আমি এসব ব্যাপারে নির্বিকার হলেও তাদের ধারনা যা বুঝেছি তাতে এই মানব শরীর ভিন্ন ভিন্ন তত্তের একক মুল ধারক, আমাদের দেহ কেবল রক্ত মাংসের একটি আবরন। অথবা সহজ করে বলা যেতে পারে আমাদের এই দেহ একটি বাড়ি ,যেখানে এইসব তারা মাঝে মাঝে থাকে, কখনো কখনো একসাথে। কিন্তু একটি সব সময়ই থাকে যা এই বাড়ি আলোকিত আর কর্মক্ষম করে রাখে।

আমার এইসব কথা দৈনন্দিন চিন্তাভাবনা ছাড়া কিছুইনা, আমি এলান কোয়াটারমেইন , আমার এই স্বল্প জ্ঞান আর অতি অল্প পড়াশোনা, প্রাচীন মিসর সম্পর্কে আমার মতামত প্রকাশ এর কোন অধিকার দেয় কি? কিন্তু তা সত্ত্বেও যা বুঝেছি তাতে মনে হয় মানুষের অস্তিত্ত এক নয় অনেক। এই সম্পর্কে মনে পড়ে যায় বাইবেল এর কথা যেখানে বলা হয়েছে মানুষের দেহে সাত অপদেবতা বাস। বেশ দুরের উদাহরন হলেও , জুলু উপজাতির ডাক্তার বা ওঝাদের দেহের ভিতর অনেক আত্মা বাস করে।

যাইহোক একটা জিনিস খুব ভালো ভাবে জানি , তা হল মানুষ কখন একরকম হয় না। আমাদের ব্যাক্তিগত বৈশিষ্ট আমাদের নানা সময় পরিচালনা করে থাকে। এক মুহূর্তে কোন কিছুর প্রতি আমাদের অনুরাগ পরিচালনা করে থাকে আবার পর মুহূর্তেই আমরা আমাদের সম্বিৎ খুজে পাই। আবার কোন মুহূর্তে আমরা আমাদের আকাঙ্ক্ষার পিছনে দৌড়াই আবার পরেই তার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে থাকি, আমাদের সি আত্মা আমাদের মরণশীল দেহের ভিতরে বা বাইতে তারার মত জ্বল জ্বল করে। কখনো আমারা নাছোড় মনোভাব নিয়ে মেরে ফেলতে চাই আবার ঈশ্বরসুলভ মনোভাব নিয়ে ক্ষুদ্র পোকা বা সাপকে ক্ষমা করে দেই। এ সব কিছুই আমাদের এত প্রচণ্ড ভাবে পালা করে নিয়ন্ত্রন করে যে মাঝে মাঝে মনে হয় আমাদের নিজেদের হাতে কি কোন কিছু আছে?

আমি এলান,একজন অত্যন্ত কাটখোট্টা , বাস্তব্বাদী মানুষ,একজিন সাধারন , অর্ধশিক্ষিত শিকারি আর পাইকারি ব্যবসায়ী , যে নিজের কাজের জগতকে ভিসন ভালোভাবে চেনে, আমার মুখে এমন কথা শোণার কারন হোল আমি নিজে এক সময় অলৌকিক আকাংখার শিকার ছিলাম।

হয়তো একটু পুরোন আর সরল চরিত্রের কারনে আমি হয়তো আবেগ প্রবন।আমার জীবনে অনেক মৃত্যুশোক পেয়েছই যা আমার মনকে তছনছ করে দিয়েছে। যাদের আমি ভালবাসতাম বা তারা আমাকে ভালোবাসতো বলে মনে হত তাদের আমি কখনো ভুলতে পারি না।

আমাদের অহমিকায় আমরা কখনো কখনো ভেবে নেই আমরা যাদের সাথে সংযুক্ত তারা আমাদের পছন্দ করেন আর এমন ভাবা কি যুক্তিসঙ্গত নয় যে তারা আমাদের এই পৃথিবী ছেড়ে অন্য সমাজ আর পরিবেশে পরেও আমাদের সম্পর্কে আগ্রহী নয়? এমন কল্পনা করা অন্যয় না পাগলামো জানিনা। এই নুতুন সমাজ আর পরিবেশ এ থাকেলেও তা এখানকার চাইতে অনুকূল। কখনো এ সম্পর্কে সন্দেহ দানা বাধে, অন্ধকার সত্যকে জানতে চায় আমাদের মন, আদৌ কি তারা বেঁচে থাকে?

আমার একলা থাকার দিনগুলিতে এই সমস্যা আমাকে তারা করে বেড়াত।আমার ইচ্ছা হোত যেকোন কিছুর বিনিময়ে এই সমস্যার নিস্পত্তি করে ফেলি। একবার ডারবানে এক আধ্যাত্মিক বন্ধুর সাথে দেখা হলে আমার এই সব কথা খুলে বলি। তিনি বলেছিলেন আমার এই সমস্যা সমাধান করা অত্যন্ত সহজ, আমাকে শুধু এক গিনি( স্বর্ণ মুদ্রা) খরচ করে স্থানীয় এক ওঝার সাথে দেখা করতে হবে আর সেই আমি যা জানতে চাই সব কিছু খুলে বলবে।এক গিনি খরচ করার ইছা না থাকলেও আমি তার সাথে দেখা করলাম। যদিও সেই সাক্ষাৎ এর ফর বা তার প্রভাব আমি কিছুই এখানে বলব না।

তার পরো আমার এই সন্দেহজনক আর সম্ভবত অস্বাস্থ্যকর আকাঙ্ক্ষা থেকেই গেল, আমি আমার এলাকার এক পাদ্রীর সাথে দেখা করলাম এই বিষয়ে যে কিনা একজন ভালো আর আধ্যাত্মিক মানুষ। তিনি কেবল তার কাধ ঝাঁকিয়ে বাইবেল পড়তে বললেন আর বললেন বাইবেল এ যতটুকু আছে ততটুকু নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে। তার পর কিছু আধ্যাত্মিক বইও পড়লাম। এই বইগুলোতে অনেক সুন্দর সুন্দর কথা পেলাম যা আমি পকেট ডিকশনারিতেও পাইনি। তাতেও আমার লাভ হলো না কারন এথেকে আমি নতুন কিছু জানতে পারলাম না যা আমার অজানা। যদিও এই বইগুলো পড়ার সময় বেশ বিশ্বাসযোগ্য লেগেছিলো। এমন কি সুইডেনবর্গের কিছু লেখা পড়লাম যাতে প্রাচুর্যের অভাব ছিলো না, কিন্তু তাতেও আমার লাভ হলো না।
এরপর আমি ব্যবসাই ছেড়ে দিলাম।

কয়েক মাস পরের কথা তখন আমি ছিলাম জুলুল্যান্ডের ব্ল্যাক কুলফ এলাকার কাছে। যার নিকটেই ছিলো আমার পরিচিত অত্যাশ্চারয্য বামন ওঝা যিকালী। সে জুলুদের মাঝে “এমন একজন যার জন্মানোর কথা নয়” বলে পরিচিত ছিলো। আবার তাকে “ সব রাস্তা খোলার লোক” বলেও অভিভিত করা হত। আমি একদিন তার সাথে দেখা করলাম আর জুলুল্যান্ড আর তার রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করে আমার ওয়াগনের দিকে এগোলাম। কারন সম্ভব হলে আমি এই এলাকায় রাত না কাটানোর পক্ষপাতী ছিলাম।

বৃদ্ধ বামন তার লম্বা ছুল ঝাঁকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, যেন আমার ভিতরে সব কিছু লেখা আছে “ তুমি কি আমার কাছে কিছু জানতে চাও মাকুমাজন”
আমি মাথা নাড়লাম।
“আশ্চর্য ব্যাপার, আমি মনে হয় তোমার মনের ভিতর আত্মা সম্পর্কে কিছু লেখা আছে দেখতে পাচ্ছি”
তখন আমার মনে পড়লো আমার সমস্যার কথা, যদিও সে কথা যিকালীকে কখনো বলা হয়নি বা বলার কথা মনেও ছিলো না।

আমার অভিব্যক্তি দেখে বলে উঠলো “ মনে পড়েছে তাইতো? তাহলে বলে ফেল মাকুমাজন, এখন আমার উত্তর দেয়ার মেজাজ রয়েছে আর তুমি আমার পুরোন বন্ধু, তাই ক্লান্ত হয়ে পরার আগে তোমার কব কথার জবাব দেয়ার চেষ্টা করব। আরো অনেক বছর তুমি আমার বন্ধু থাকবে আর আমিও চেষ্টা করব তোমার সেবা করতে।“

আমি আমার পাইপটা ঠেসে নিয়ে আমার জন্য আনা লাল কাঠের টুলটায় আবার বসে পরলাম।

“যিকালী তুমিত সব রাস্তা খোলার লোক বলে পরিচিত”

“হ্যাঁ, চাকারও আগের সময় থেকে জুলুরা আমাকে ঐ নামেই ডাকে। কিন্তু নামেই বা কি যায় আসে? এইসব নামের কোন মানে থাকে না”

“আমি আসলে একটি রাস্তা খুলতে চাই যেটা চলে যাবে মৃত নদীর ঐ পাড়ে”

সে তার পাশে পড়ে থাকে আসেগাই তুলে ধরে আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল হেঁসে বলে উঠলো “ ওহ এতো খুব সহজ ব্যাপার। সাহসী হও আর এটা তুলে নাও। আমি ষাট গোনার আগেই রাস্তা খুলে যাবে, অবশ্য তুমি কিছু দেখতে পাবে কিনা জানিনা”

আমি মাথা নেড়ে উত্তর দিলাম “ এটা আমাদের নিয়মের বাইরে। নিচে বেঁচে থাকার সময় আমার জানতে ইচ্ছা করে আমার নিজের এই নদী পার হওয়ার সময় এলে ঐ পাড়ে কারো দেখা পাবো কিনা। তুমি আত্মা নিয়ে চর্চা করো বলেই হয়ত আমাকে প্রমান সহ জানাতে পারবে”

আবার হেঁসে যিকালী বলে উঠলো “ আহ ! একি কথা শুনছি আমি? তোমার মনে পড়ে তুমি আমাকে বিচ্ছিরি ঠকবাজ জুলু বলেছিলে? আজ তুমিই আমাকে এমন কিছু দেখাতে বলছো যা সমস্ত সাদা মানুষের জ্ঞানের বাইরে?”

আমি অস্বস্তির সাথে উত্তর দিলাম “ তোমাকে কি বলা হয়েছে তা বিষয় নয়, আসল বিষয় হলো তুমি কি করতে পারো?”

“ সে আমি জানিনা মাকুমাজন, তুমি কাদের আত্মা দেখতে চাও? মামিনা নামের মেয়েটি জদি হয়, সে আমাকে ভালোবাসতো .........”
(মামিনা-চাইল্ড অফ স্ট্রম- অন্য একটি বই যা এর পরে আপনাদের পূর্ণ অনুবাদ উপহার দিব)

“ না মামিনা তাদের একজন না, আর ভালোবাসলেও তুমি তাকে ভালো উপহার দিয়েছিলে, মৃত্যু”

“এর চেয়ে ভালো কিছু করা সম্ভব ছিলো না মাকুমাজন, আর কারণটা হয়তো তুমি আন্দাজ করতে পারো , আর না পারলেও তা তোমাকে বলে বিরক্ত করব না। মামিনা না হলে কে? দাড়াও আমাকে দেখতে দাও, দেখেতো মনে হছে দু জন, দুই জন সাদা স্ত্রী। আমিতো জানতাম সাদা মানুষদের একজন স্ত্রী থাকে। আরো অনেক কে দেখতে পাচ্ছি। এদের মুখ তোমার মনের নদী ভাসছে, একজন সাদা চুলের বৃদ্ধের মুখ, ছোট ছোট শিশুরা , বোধহয় তোমার ভাইবোন ওরা, আরো অনেক এ যারা তোমার বন্ধু ছিল। আর ভীষণ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে তাকে যাকে তুমি দেখতে চাও না, মামিনা। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হোল মামিনাকেই আমি তোমায় দেখাতে পারি, অবশ্য যদিনা আরো কোন কাফির মহিলা তোমার জীবনে থাকে”

“কি বলতে চাও তুমি?” আমি জিজ্ঞাসা করলাম।

“ আমি বলতে চাইছি আমার খোলা রাস্তায় শুধু কালো আর কাফিরাই আস্তে পারে। সাদা মানুষদের সেখানে আনার ক্ষমতা নেই আমার”

“তাহলেত হয়েই গেল” বলে আমি গেটের দিকে দু এক পা এগোলাম।

“ফিরে এসো, বসো এখানে। আমি আফ্রিকার একমাত্র জাদুর সম্রাট, সেই আফ্রিকা যেটা নাকি শুনছি বিরাট বড় এক দেশ”

কৌতূহলের চোটে আবার এসে বসে পড়লাম। প্রশ্নের উত্তরের আশায় ভীষণ উত্তেজিত ছিলাম।

“ না না , তোমরা অকারনেই ওদের ভয় কর, আমি ছাড়া ওরা সবাই প্রতারক। আমিই জ্ঞানের শেষ সন্তান, বাকি সবাই মিথ্যায় ভরা। আর এই কথা বুঝতে পেরেই চাকা ওদের সবাইকে মেরে ফেলেছে। তবে সম্ভবত এমন কোন শ্বেতাঙ্গ রয়েছে, যে শ্বেতাঙ্গদের আত্মার উপর রাজত্ব করে ”

“ কোন মিশনারি?” আমি ইতস্তত করে বললাম।

“ না । আমি তোমাদের একধাচে গড়া, এক নিয়মে মানা, ভাবতে না জানা আর মুখস্ত বুলি আওড়ানো সাধকদের কথা বলছি না”

“ ওদের কেউ কেউ ভাবতে জানে যিকালী”

“ হ্যাঁ তারপর সবাই তাকে লাঠি দিয়ে মারতে আসে। আসল সাধক হল সেই যার কাছে আত্মার আনাগোনা, সে নয় যে তার পূর্ববর্তী সাধকের মুখোশ পড়ে তাদের বলা বুলি নতুন ভাবে বলে। আমি সেরকম না বলেই তোমার সাথের লোকেরা আমাকে ঘৃণা করে”

“ তাহলে তুমিও তাদের ঘৃণাই দিয়েছ যিকালী, দুর্বল কুকুরের মত সিংহ এর চারপাশে ঘোরা বন্ধ কর আর বল সে কে? কার কথা বলছো তুমি?”

“ সেটাই তো বলতে পারছি না আমি সে সিংহ না সিংহী... সম্ভবত সে সিংহী। বহু দূরের এক পাহাড়ের গুহায় রয়েছে সে। আমি তাকে কখনো দেখিনি।“

“তাহলে যা দেখনি তা বলছ কীভাবে?”
“ ঠিক যেমন তোমাদের পুরোহিত রা যা কোন কিছু দেখেনি তা সম্পর্কে কথা বলে। তাদের অন্তত কিছু লোক জ্ঞানী এ বিষয়ে। আমি তোমাকে এক গোপন কথা বলব। সমসাময়িক সকল মহান ভবিষ্যৎদ্রষ্টা মানুষেরা পরস্পরের সাথে ভাব বিনিময় করে। কারন তারা একই গোত্রের আর ধ্যানের মাঝে অথবা স্বপ্নে তারা ভাব বিনিময় করে। আমি এমন এক সিংহের মত মহিলাকে চিনি যে আমাদের এই সব বিষয়ে অত্যন্ত দক্ষ আরে হাজার বছর দরে রয়েছে উত্তরের কোন এক গুহায়। আমি অতি সাধারন হলেও সে আমাকে চেনে। ”

আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম “ভাল কথা যিকালী , কিন্তু তাতে আমার কি যায় আসে? সে কি? তার নাম কি? আর সে থাকলেও কি আমাকে সাহায্য করবে?”

“ তোমার প্রশ্নের উত্তর আমি পিছন থেকে দিব। আমার ধারনা তুমি তাকে সাহায্য করলে সেও তোমাকে সাহায্য করবে। পুরুষ ওঝারা কখনো কখনো মুল্য ছাড়াই কাজ করে ,যেমন আমি এখন করছি। কিন্তু মেয়ে ওঝারা কখনই মুল্য ছাড়া কাজ করে না। তার নাম নেই। আমাদের মাঝে তার প্রাচীন একটাই নাম ‘রানী’। কারন সে হ আমাদের মধ্যে প্রথম আর অতি অসাধারণ সুন্দরী। বাই বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারব না। শুধু এটুকুই বলব সে নানা রুপে চিরকাল ছিল আর ততদিন থাকবে যতদিন এই জগৎসংসার থাকবে। কারন সে শেষ না হওয়া জীবনের গোপন রহস্য জেনেছে। ”

আমি হেসে বললাম “তুমি বলতে চাইছ সে অমর, যিকালী?”

“ আমি তা বলছি না। কারন আমার এই ছোট্ট মন দিয়ে অমরত্ত কি জিনিস বোঝার সামর্থ্য নেই। অনেক কাল আগে আমি যখন ছোট , তখন সে এতোদিন বেচে ফেলেছেন যে তখন আর এখনকার পার্থক্য করা কঠিন আর এত জ্ঞান তার হৃদয়ের মাঝে সমস্ত জ্ঞান অর্জন করে ফেলেছেন। আমি তাকে কখনও দেখিনি কিন্তু ঘুমের মাঝে আমারা পথ চলি। সে তার একাকীত্বের কথা বলে। হয়তো তা স্বপ্ন ছাড়া কিছুই না। গত রাতে সে আমায় বলল যে তুমি যদি আমার কাছে কিচু কথার উত্তর খুজতে আসি যেন তার কাছে পাঠিয়ে দেই। আরো বলল যে তার এক কাজ করে দিতে হবে কিন্তু কি কাজ তা বলেনি। ”

এবার আমি রেগে গিয়ে বললাম “ এইসব কথা বলে আমাকে বোকা বানিয়ে কি মজা পাও তুমি, যিকালী? আর এতে যদি সামান্য সত্যিও থাকে তাহলে আমাকে দেখাও কোথায় থাকে তোমাদের এই রানী আর কীভাবে তার কাছে যাব আমি?”

বৃদ্ধ জাদুকর যে ছোট্ট আসেগাই আমাকে দিয়েছিলো সেটা তুলে নিয়ে সামনে ধিকিধিকি জ্বলতে থাকা আগুনের ছাই সরাছিল। সে হয়তো কথা ঘোরানোর জন্য এসব করছিলো। যিকালী আমাকে বলল এক শ্বেতাঙ্গর কথা যার সাথে আমার এই যাত্রা পথে দেখা হবে। আরো অনেক কথাই বলতে থাকলো যেগুলো আমার মোটেও শুনতে ইচ্ছা করছিলো না। তারপর তার হাতের বর্শা দিয়ে কয়লার উপর এক মানচিত্র আঁকল যার নদীনালা মাটিতে গর্ত করে আর বিভিন্ন চিহ্ন্য দিলে ঝোপ ঝাড়, জঙ্গল , জলাভুমি দিয়ে বুঝালো। আর ছোট্ট ছোট্ট ঢিপি দেখালো পাহাড় হিসাবে। শেষ করার পর আমাকে ভালো করে তাকাতে বলে আবার আগুনের পাশে গভীর দাগ দিয়ে নদী আর অনেকটা ছাই জড়ো করে উত্তরের দিকে এক পাহাড় বানালো।

তারপর বলল “ভালো করে দেখে নাও। কিছু ভুললে চলবে না। এই পথে যাওয়ার মানে হল মৃত্য। নাহ তোমার খাতায় এটা তোলার দরকার নেই। আমি এটাকে তোমার মনের খাতায় তুলে দেব।”

এরপর হটাত গরম ছাই তুলে নিয়ে আমার মুখের দিকে ছুড়ে দিয়ে বিড়বিড় করে মন্ত্র পড়তে লাগলো।

“ ব্যাস এইবার তোমার সব মনে থাকবে”

আমি কাশতে কাশতে উত্তর দিলাম “ অবশ্যই মনে থাকবে আর প্রার্থনা করি এই রকম রসিকতা আমার সাথে কখনও করবে না।” কিন্তু ঘটনা যাই হক সেই জটিল মানচিত্র আমি কখনো ভুললাম না।

আমি একটু ইতস্ত করে বললাম “ ঐ বড় নদী নিশ্চয়ই জাম্বেসী। কিন্তু তোমার ঐ রানীর পাহাড় সত্ত্য হলেও বহু দূরে। আমি কীভাবে ওখানে যাবো?”

“ তা আমি জানিনা মাকুমাজন। আমার ধারনা তোমার সাথে কেউ থাকলে তুমি পারবে। মনে হয় পুরনো দিনে লোকজন ওখানে যেত। কারন আমি শুনেছি ওখানে এক প্রকাণ্ড শহর ছিলো যা ছিলো এই দুনিয়ার প্রান কেন্দ্র।”

কিন্তু বিশ্বাস না করলেও যিকালীর অভাবনীয় সেই রানীর কথা কান খাড়া করে শুনতে থাকলাম। কারন বরাবরই আমার প্রাচীন সভ্যতা আর তার প্রত্নতাতিক নিদর্শন নিয়ে বিশাল এক আকর্ষণ আছে। আমি এটাও জানতাম যে এই বৃদ্ধ জাদুকর এর জ্ঞান বিশাল এবং সে তা অর্জন করেছে। এবং সত্য কথা বলতে কি আমি মনে মনে ঠিকই করে ফেলেছিলাম যে যেকোন ভাবে সম্ভব আমি এই অভিযানে যাব।

(চলবে)

হাসান মামুন


মন্তব্য

অপছন্দনীয় এর ছবি

দারুণ, চালিয়ে যান হাসি নিয়মিত পাঠক হিসেবে থাকলাম হাসি

অনুবাদের কয়েকক্ষেত্রে একটু আটকে গেলাম, বাক্যগুলো একটু ছোট আর আরেকটু সহজ ভাষায় লেখা হলে হয়তো পড়তে সুবিধে হতো। যেমন ধরুন, "কিন্তু বিশ্বাস না করলেও যিকালীর অভাবনীয় সেই রানীর কথা কান খাড়া করে শুনতে লাগলাম" টা এভাবে বলা যেতো, "বিশ্বাস না করলেও কান খাড়া করে শুনতে লাগলাম। যিকালী তার সেই রানীর কথা বর্ণনা করে গেলো।"

আর শিরোনামটায় যেহেতু শুধু আয়েশা আছে, "কোয়াটারমেইন"টা বাদ দিয়ে শুধু অ্যালান হলে মনে হয় আরেকটু আকর্ষণীয় হতো।

(পুরোটাই ব্যক্তিগত মতামত)

লেখায় চলুক

হাসান মামুন এর ছবি

আগের বারের মত এবারও আপনার মতামত পরের অংশে প্রতিফলন পাবেন। আরেটু সহজ ভাষায় অনুবাদের চেষ্টা করব। আর শিরোনামের কথা মনে থাকবে।

অপছন্দনীয় এর ছবি

হাসি

কল্যাণF এর ছবি

খুব ভালো লাগছে, এটা অবশ্য প্রথম পর্বে বলেছি। তবে সমস্যা একটা হচ্ছে, তা হল পুরটা একসাথে পড়তে ইচ্ছা হচ্ছে। চালিয়ে যান।

হাসান মামুন এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

হাসান মামুন এর ছবি

ভাই , আপনাদের কাছে অনুবাদের মানের বিষয়ে মতামত আশা করি। কারন এতো কষ্ট করে অনুবাদ করার পর কোন সম্পাদকের কাছ থেকে ঠিক করে নেয়ার পর আবার লেখা বরই কষ্ট সাধ্য ব্যপার। টাই আপনারা যদি এই ব্যাপারটিতে উপকার করতেন.........

তবুও পড়ার জন্য অসংখ্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

তারেক অণু এর ছবি

চলুক সমস্যা একটা হচ্ছে, তা হল পুরটা একসাথে পড়তে ইচ্ছা হচ্ছে। চালিয়ে যান।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।