জিউসনামা ০১

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৯/১২/২০১১ - ৫:৫৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জিউস আমেরিকান ঈগল আলখেল্লাটাতে আরমানি পারফিউমে লাগাইতে লাগাইতে বাফেলো সোলজার গানটির সুর ভাজছিলেন।

হেরা মাছের সস্প্যান উল্টাইতে উল্টাইতে কিচেন থেকে গলা উচিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এই ভরদুপুরে যাও কই তুমি? দুপুরে একটু ওপেন্টি বাইস্কোপ খেলমু ভাবছিলাম।

জিউস বগলদেশে স্প্রে করতে করতে বললেন, জব ইজ জব ইউ নো বেবি। দরবারে যাইতে হইব একটু; মক্কেল আইছে, যাইতাছি বাট সন্ধ্যার আগেই আয়া পড়ুম, প্রমিজ। বাই হানি।

‘তোমার যেই লুইস স্বভাব, খ্যাপ মাইরা রাইতে তো কইবা মাথা ধরছে।’ কিচেন থেকে হেরা গজরাতে থাকে।

বজ্রটা আলখাল্লার সাইডহোলে ঢুকিয়ে হোন্ডা নিয়ে সাই করে বেরিয়ে যাওয়ার পথে ফ্লাইং কিস ছুড়ে দেন জিউস। কিচেনের সাইড থেকে হেরার মুখ মোচড়ানি দেখার আগেই গতি পায় জিউসের হোন্ডা।

জিউস দরবারে এসে হোন্ডার চাবির রিং ঘুরাইতে ঘুরাইতে জিজ্ঞেস করলেন, দর্শনার্থী কে কে আছে?

আর্তেমিস বলল, বারাক ওবামা ফ্রম ইউ এস আ।
এপোলো গাইল, খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে, বিরাট শিশু আনমনে।
প্রলয় সৃষ্টি তব পুতুলখেলা নিরজনে প্রভু নিরজনে।

জিউস বললেন, অরে একখান ওয়াইম্যাক্স এক্টিভ সহ ল্যাপটপ ধরিয়ে দেও, নং০০৫ টা দিওনা; অইডা খালি রিবুট মারে। ব্লাকবেরির স্টক থাকলে তাও দিও একটা। কালকে এনো, আছে আর কেউ?

আর্তেমিস বলল, এঙ্গেলা মের্কেল ফ্রম জার্মানি।
এপোলো গাইল, বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই,
মাগো আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই?

জিউস চোখ টিপে বললেন, ওকে দাও ডিভিডি প্লেয়ার, সাথে হিন্দি, জার্মান আর ইংরেজি সিরিয়ালের ব্লু রে প্রিন্ট। কালকে এনো, আছে আর কেউ?

আর্তেমিস গলা খাকরে বলল, এরশাদিসচাচ্চুস ফ্রম বাংলাদেশ।
এপোলো গাইল, মাই নেম ইজ শীলা, শিলা কি জাওয়ানি...

জিউস চিল্লাইয়া বললেন, খাইছে আমারে। ঐ হালায় চায় কি? খবিশটারে ঢুকতে দিছে কেডা? এই নির্বোধগুলা আমারে ডুবাইব। আরে অয় দরবারে আসলে আমার ব্যবসা চলব? আরেকটা গ্রহ বানামু ভাবতাছি টেকা পামু কই?

আর্তেমিস কানে কানে বলল, বস, টেনশন লইয়েন না। ভাল কালেকশন আছে ডিভিডি ভান্ডারে। অরে অইগুলা দিয়া বসাইয়া দেই, কাইল্কা কমু নে আপনে গ্রিষ্মকালীন অবকাশে আছেন। দেখা করন লাগবনা।

জিউস পকেট হাতড়ে বজ্রডান্ডা বের করতে করতে বললেন, ঐ বিখাউজটা চায় কি?

আর্তেমিস বলল, ঐ যে বঙ্গদেশরে প্রদেশে ভাগ করনের প্ল্যান।
জিউস বললেন, ধুরু হালায়। হালারে কাইলকা যাওয়ার আগে ভ্যাসেক্টমি পোশন টা সুরার লগে মিশাইয়া দিও, আছে আর কেউ?

মহিউদ্দিনিস ফ্রম বাংলাদেশ।
এপোলো গাইল, সাতকোটি সন্তানের মুগ্ধ জননী,
রেখেছ বাংগালী করে মানুষ করনি।

জিউস জিজ্ঞেস করলেন, এইডা আবার কেডা?

জানিনা। জ্ঞানী মানুষ। মনে হইল বিরাট কোন প্ল্যান আছে। স্বর্ণমুদ্রা ভর্তি ব্যাগ আনছে লগে। একটা দুইটা না পাচ পাচ টা। আরো কি কি জানি সাথে।

জিউস বললেন, ডাক অরে।

আর্তেমিস হাকল, মহিউদ্দিনিস ফ্রম বাংলাদেশ হাজির।

সেলাম ঠুকে প্যান্ট শার্ট পরা মহিউদ্দিনিস দরবারে হাজিরা দিল।

জিউস জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি আম্লীগ না বিম্পি?

মহিউদ্দিনিস বলল, বস, মনে করেন কোনটাই না আবার দুইটাই।

জিউস বিষম খেয়ে বললেন, ওস্তাদি আলাপ মারাইবানা। মিজাজ গরম আছে। তাইলে কি গামছা, না এলডিপি?

মহিউদ্দিনিস বলল, বস, মনে করেন আমি হইলাম গিয়া পেঙ্গুইন। সাদা ও আছে কালোও আছে। আসলে আমি একজন একাধারে লেখক ও গবেষক।

জিউস অস্বস্তিতে নড়েচড়ে বসলেন, পেঙ্গুইন হইল গিয়া আম্লীগ, মুজিব কোট পরে দেখনা, আবার দলে দলে আত্মহত্যাও করে। যাউকগা আসল কথা কও মিয়া, চাও কি?

মহিউদ্দিনিস বলল, বস, মনে করেন আমাদের দেশে নদীগুলার আর দরকার নাই। এইগুলারে বেচতে চাই।

জিউস বললেন, নদীর দরকার নাই? কি কও মিয়া এইগুলা? মাথামুতা খারাপ নাকি তোমার?

মহিউদ্দিনিস বলল, বস, আমার কথা হুনেন আগে। নদী দিয়া কি হয়? পানি হয়, আর আমরা পানি তো টিউবওয়েল থিকাই পাই। আর কি হয়, মাছ হয়। মাছ এখন আর হয় না, আগে হইত, এখন তো এমনিতেও মাছ নাই, তাই আমরা ফার্মের চিকেন খাই। আর হয় পলিমাটি, সার দিয়া কাম করব সারা। আর হয় বন্যা, সারা দেশের মানুষের দূর্ভোগ। আমাকে এ জন্য বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত হাজির করতে হবে। পদ্মার পানিতে নদীতীরবর্তী ৫৬% ও যমুনার পানিতে ৩৪% মানুষের দূর্ভোগ হয়।

জিউস বললেন, অইগুলা বুঝিনা, আসল কথা কও, নজরানা আনছ কি?

মহিউদ্দিনিস বলল, বস, মনে করেন শাজাহানের স্বর্ণমুদ্রা আনছি দুই বস্তা, দুই বস্তা জাহাঙ্গীরের, একবস্তা হীরা চুনি, পান্না। আরো আছে আপনার জন্য আইফোন ফোর এস উইথ সিরি, ম্যাকবুক এয়ার, জিলেট ম্যাক ১১, জুতা হ্যায় জাপানি, ইংলিশস্থানি পাতলুন, আর রুশি টুপি। ভাবীর জন্য কানিজিসের ফেস প্যাক আর উটপাখি’র মিনিয়েচার।

জিউস খুশীতে বাকবাকুম হয়ে উঠলেও মুখে প্রকাশ করলেন না। পোলা তো নয় যেন আগুনেরই গোল্লা।

জিউস চিন্তামগ্ন স্বরে বললেন, এইগুলা পাইলা কই তুমি?

মহিউদ্দিনিস বলল, বস, মনে করেন গবেষণার একটা দাম আছে না? তাছাড়া ভাইলোগ হ্যায় না?

জিউস বললেন, নদী কিনব কেঠায়?

মহিউদ্দিনিস বলল, বস, মনে করেন ইন্ডিয়া আছে মেইন গ্রাহক। তুড়ি দিলে আরো পাওয়া যাইব। আমি তো জানি ক্রাউড আর জনতার তফাৎ, তাছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা ও আসব। আসলে আমি তো ভাবতাছি ইন্ডিয়া না কিনলেও আমাদেরই উচিৎ এইগুলা দাদাদের দিয়া আসা। দরকার হইলে আমরা টাকা দিয়া ওদেরকে দিয়া আসব। নদী থাকা মানেই ঝামেলা। আমন ফসলে ঝামেলা, বোরো ফসলে ঝামেলা, পানি নিষ্কাশনে ঝামেলা, ঝাকে ঝাকে ঝামেলা। আমি ত এই জন্যই কই বেইচা দিলে নদী নিয়ে ভাবনা, আর না, আর না। যারা নদীবিষয়ক বিষয় আশয় গুলো বুঝেন তারা এটা বুঝবেন; না বুঝলে তা হলো ‘ভাবের ঘরে চুরি’।

জিউস ধমক দিয়া বললেন, ধুরু মিয়া তুমি বেশী কথা কও। আমি কি কই শোন, এখনি গিয়া পেহলা রোশনি পেপারে এইডা নিয়া একখান গবেষণামূলক আর্টিকেল লেইখা ফেল, বাকিটা আমি দেখতাছি।

----------------------------------------------------------------------------------------------------
এই গল্পের সাথে জীবিত, মৃত বা বিবাহিত কোন বাস্তব ব্যক্তি, ঘটনা বা সংবাদের মিল নাই, যদি কেউ খুজে পান কাকতাল বলে জানবেন।
----------------------------------------------------------------------------------------------------

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-12-29/news/212374
----------------------------------------------------------------------------------------------------
শ্যামল
ayon99eএটyahoo.com


মন্তব্য

হাসান মামুন  এর ছবি

পোলাতো নয় যেনো আগুনের গোলা।

স্যাটায়ার হিসাবে ভালো লাগলো ।

হেমন্তের ঘ্রাণ এর ছবি

ভাল লেগেছে । দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি

তারেক অণু এর ছবি

আবারো গুল্লি দেঁতো হাসি

ফারুক হাসান এর ছবি

দুর্ধর্ষ!!!
গুল্লি গুল্লি গুল্লি

উচ্ছলা এর ছবি
তদানিন্তন পাঁঠা এর ছবি

আমি সকালে পত্রিকায় লেখাটা পড়ে রীতিমতো স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। সবারই মত প্রকাশ এর স্বাধীনতা আছে ঠিক, কিন্তু একটা জাতীয় পত্রিকায় কেমনে এমন একটা বুরবক এর লেখা যায়। সত্যি সেলুকাস। মন খারাপ

লেখা ভালো লেগেছে।

সাদরিল এর ছবি

জিউস তো দেখি পুরাই ডিজুস

তাপস শর্মা এর ছবি

উত্তম জাঝা! । খাসা অইছে।

জিজ্ঞাসু এর ছবি

চলুক

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

দ্রোহী এর ছবি

দুর্দান্ত প্লট, কিন্তু গল্পটা ঠিক জমে নাই। মন খারাপ

আশালতা এর ছবি

হুম। সুগার কোটেড ? শেষটুকু বেশ লাগল।

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

জিজ্ঞাসু এর ছবি

আমি তো জানি ক্রাউড আর জনতার তফাৎ, তাছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা ও আসব।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

নীড় সন্ধানী এর ছবি

হাসতে হাসতে পড়ে যেতাম। মহিউদ্দিন সায়েবের উচিত একবার ঘুরে যাওয়া এই পোষ্টে।
গুল্লি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।