সুতো নিয়ে টানাটানি -০১

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ৩০/১২/২০১১ - ৬:০৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

চিন্তা করার কিছু নেই, আমার এ লেখায় যে সুতো নিয়ে টানাটানি করার কথা বলছি সেটি জামা-কাপড় সেলাই করার সুতো নয়। খাইছে এটি হলো স্ট্রিং থিওরীর সুতো! বিশ্বাস করুন এই সুতো নিয়ে টানাটানি করার ইচ্ছা আমার বিন্দুমাত্রও ছিলোনা। কসমোলোজি, রিলেটিভিটি আর ডার্ক-ম্যাটার নিয়ে আমার দিন ভালোই কেটে যাচ্ছিল।

আমাদের এক প্রফেসর হঠাৎ করেই কোন এক শীতের ছুটিতে আমাদের চাঙা রাখতে স্ট্রিং থিওরীর একটি ছোট-খাট নন-ক্রেডিট কোর্স নিয়েছিলেন। তারপর থেকে মাঝেমধ্যে সুযোগ পেলে আমিও এই সুতো ধরে টানাটানি করি।

যাই হোক স্ট্রিং থিওরীর মূল বিষয়ে সরাসরি আসার আগে বহুযুগ আগের কিছু সাহিত্য নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করে নেই।

একটা ছোট্ট প্রশ্ন করা যাক- মহাবিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম কণা কি? অথবা আমাদের মহাবিশ্ব আসলে কিসের সমন্বয়ে গঠিত? এই প্রশ্নটির সবচেয়ে সহজ উত্তরটি দিয়েছিলেন একজন গ্রীক দার্শনিক - এনাক্সিমেনিস

তিনি দাবী করেছিলেন বিশ্ব চারটি মৌলিক উপাদান দিয়ে সৃষ্টি। আর তারা হলো - পানি, বাতাস, আগুন আর মাটি। আর অন্য সকল বস্তুই এই চারটি মৌলিক উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত।

এনাক্সিমেনিস এর বিশ্বের গঠন সম্পর্কিত এই ধারনাটি আসলেই বেশ সহজ এবং সাবলিল। কিন্তু এই মতবাদটির একটি বিচ্ছিরি সমস্যা রয়েছে। সমস্যাটি হলো- 'এটি ভুল'!! খাইছে

যাইহোক, এনাক্সিমেনিস এর প্রায় ২৫ শতক পরে বিশ্বের মৌলিক কণিকার সবচেয়ে ভালো মতবাদটি ছিল ম্যান্ডেলিভের । আমরা সবাই ম্যান্ডেলিভের পর্যায়সারনী ও 'মৌলিক পদার্থ' নামক শব্দগুলির সাথে পরিচিত। বর্তমানে আধুনিক পর্যায়সারনীতে প্রায় ১০০ টির ও বেশি মৌলিক পদার্থ এসে জুটেছে!!

তাহলে মৌলিক পদার্থই কি মহাবিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম কণা?? চিন্তিত না!! প্রতিটি মৌলিক পদার্থ নিউক্লিওনের সমন্বয়ে গঠিত। বিজ্ঞানের ভাষায় নিউট্রন আর প্রোটনকে বলা হয় নিউক্লিওন

বহুবছর ধরে এই নিউক্লিওন গোষ্ঠিই পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞানে প্রাথমিক কণা হিসাবে রাজত্ব করে এসেছে।

তাহলে পদার্থের সবচেয়ে ক্ষুদ্র অংশ কোনটি? পরমানু? প্রোটন? নিউট্রন? এমন একটি সময় ছিলো যখন পদার্থের ক্ষুদ্র কণিকা সম্পর্কে এর থেকে গভীরে যাবার কথা কেউ কল্পনাও করতো না।

কিন্তু বিংশ শতাব্দির শেষে এসে হঠাৎ করেই সবকিছু যেনো বদলে যায়। পর পর একাধিক পরীক্ষার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন এক নতুন জগৎ - সাব-নিউক্লিয়ার কণিকা। তারা আবিষ্কার করেন যে এই দুষ্টু নিউক্লিয়নগুলিও আসলে অন্য কিছুর সমন্বয়ে গঠিত আর সেটি হলো 'কোয়ার্ক' ও 'লেপটন' (শান্তি দিলোনা!!) ।

সাধারনভাবে পরমানুতে প্রোটন আর নিউট্রন একসাথে শক্তিশালী নিউক্লিয়ার বল এর মাধ্যমে একে অপরের সাথে লেগে থাকে। নিউট্রন থেকে প্রোটনে পরিবর্তনের সময় (বিটা-ডিকের মাধ্যমে) আমরা অতিরিক্ত একটি ইলেকট্রন এবং এন্টি-নিউট্রিনো পেয়ে থাকি।

এবার এক ঝলক ছকটি দেখে নিন! ছকটি মোটামুটিভাবে প্রাথমিক কণাগুলিকে একসাথে উপস্থাপন করলেও এদেরকে ধাপে ধাপে আবিস্কার করতে গিয়ে বিজ্ঞানীদের বেশ ঘাম ঝরাতে হয়েছে। হাসি

পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফল থেকে বিজ্ঞানীরা আরও দেখেছেন নিউট্রিন আর প্রোটন একা নয় বরং এদের সাথে গাট্টি-বোচকা নিয়ে হাজির হয় আরও কিছু কণিকা, যেমনঃ ব্যারিয়ন , মেসন,হেড্রোন ইত্যাদি (আপাতত এটা নিয়ে বিশদ ব্যাখ্যায় আর গেলাম না, একটু ফাঁকি দিয়ে সামনে এগোনো যাক খাইছে ) ।

সুতরাং এতদিনে সবার কাছে এটি পরিস্কার হয়ে গেছে, মৌলিক পদার্থকেও ভেঙ্গে ক্ষুদ্র কণা পাওয়া সম্ভব। একই সাথে এসব কণা যখন আবিস্কৃত হয়েছে ততদিনে কোয়ান্টাম মেকানিক্স বৈজ্ঞানিকমহলে বেশ ভালোভাবে জায়গা দখল করে নিয়েছে। যারা প্রথম প্রথম নাক সিটকাচ্ছিলেন তাঁরাও বুঝে গিয়েছিলেন সাব-এটোমিক কণার কার্যকলাপ ব্যাখ্যার জন্য কোয়ান্টাম মেকানিক্স ছাড়া গতি নাই!!! হাসি

এইফাঁকে গ্রহ-নক্ষত্রের ঘূর্ণন, গ্যালাক্সি ও মহাবিশ্বের খুঁটি-নাটি ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে আমাদের ঝাকড়াচুলো আইনস্টাইনের রিলেটিভিটি তত্ত্বও বৈজ্ঞানিকমহলে নিজের অবস্থান করে নিয়েছে।

সমস্যা দেখা গেলো তখনই যখন এই দুই থিওরীকে বিজ্ঞানীরা এক করার জন্য চেস্টা শুরু করলেন। কারন মহাবিশ্বের বড়-বড় সকল কাজ কর্ম ব্যাখ্যা করার জন্য রিলেটিভিটি, কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কর্মকান্ডকে সযত্নে এড়িয়ে যায়।

এবার বৈজ্ঞানিকমহলে সাড়া পরে গেলো। দুটি থিওরীওকে এক করার জন্য দরকার হলো নতুন আরেকটা থিওরীর। জানেন সেটা কি?? সেটিই হলো আমাদের সুপরিচিত সুতাতত্ত্ব বা স্ট্রিং থিওরী। দেঁতো হাসি

দায়ীন (frdayeen)

(চলবে)

পাদটীকা

  • ১. মৌলিক কণিকা-fundamental particle
  • ২. নিউক্লিওন-nucleons
  • ৩. প্রাথমিক কণিকা-elementary particle
  • ৪. সাব-নিউক্লিয়ার-sub-nuclear
  • ৫. শক্তিশালী নিউক্লিয়ার বল-strong nuclear force
  • ৬. বিটা-ডিকে-beta decay
  • ৭. ব্যারিয়ন-baryons
  • ৮. মেসন-mesons
  • ৯. হেড্রোন-hadrons


মন্তব্য

শ্যামল এর ছবি

আপনে মিয়া লুক্টা মজার আছেন।
কত্ত সহজে কত্ত কঠিন কথা কইলেন।
চলুক.........।

দায়ীন (frdayeen) এর ছবি

আপ্নের ভালা লাগসে শুইন্না আমারও ভালা লাগলো! হাসি

চরম উদাস এর ছবি

চলুক

দায়ীন (frdayeen) এর ছবি

আপনাকে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

হিমু এর ছবি

আমি এই পোস্ট পড়ে কোয়ার্ক, লেপটন, বোজন বা স্ট্রিং থিওরি সম্পর্কে কিছুই বুঝতে পারলাম না। আরেকটু যদি বিশদ বুঝিয়ে বলতে পারতেন, ভালো হতো।

দায়ীন (frdayeen) এর ছবি

পরের সিরিজ গুলায় আস্তে আস্তে ব্যাখ্যা করার ইচ্ছা আছে। হাসি

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

আরও ডিটেইলস চাই।
লেখায় অতিরিক্ত ইমোটকন্স খুব বেশি চোখে লাগছে। কোথায় হাসতে হবে সেটা বোধহয় পাঠকের উপর ছেড়ে দিতে পারেন। আরও বিস্তারিত পরার অপেক্ষায় থাকলাম স্ট্রিং থিওরি নিয়ে।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

দায়ীন (frdayeen) এর ছবি

মূল স্ট্রিং থিওরী আরেকটু পরে আনার ইচ্ছে রয়েছে। যতটুকু জানি সেটুকু ডিটেইলস করে দেবার ইচ্ছা রয়েছে।
আর ধন্যবাদ, ইমো এর ব্যাপারে সতর্ক থাকবো তাহলে। হাসি

তাপস শর্মা এর ছবি

সত্যি বলছি আমি অনেক কিছুই বুঝি নাই। এটা আমার অক্ষমতা। বিষয় গুলোর সাথে আমি খুব ভালো ভাবে পরিচিত নই। তবুও পড়লাম। কিছু বুঝলাম কিছু মাথার উপ্রে দিয়ে চলে গেলো।

হ্যাঁ। আরেকটা কথা পোষ্টের মধ্যে ইমো ব্যবহার করলে কেমন জানি খাপছাড়া লাগে।

দায়ীন (frdayeen) এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ তাপসদা।
প্রায় এক শতাব্দির গবেষনা ছোট্ট একটা পোস্টে ঝেড়ে দেয়াও সম্ভব নয়। পরের পোস্টগুলিতে আরও কিছু জিনিসপত্র নিয়ে আসার ইচ্ছে আছে।

চিলতে রোদ  এর ছবি

চলুক

প্রায় এক শতাব্দির গবেষনা ছোট্ট একটা পোস্টে ঝেড়ে দেয়াও সম্ভব নয়

চলতে থাকুক, আমরা অপেক্ষায় আছি।
নিয়মিত লিখবেন কিন্তু ভাই হাসি

shafi.m এর ছবি

আমি মোটামুটি বুঝলাম। এটা নিয়ে পড়ছিলাম লাস্ট ইয়ার। কোয়ার্ক, লেপ্টন এর ধারণা খুবি কম, নাই বল্লেই চলে। স্ট্রিং থিওরির সেকেন্ড লেখাটা দ্রুত লিখে পোস্ট করে দেন।

শাফি।

দায়ীন (frdayeen) এর ছবি

সুতোর বিষয়গুলিকে গুছিয়ে নেয়াটাই একটু সময়সাপেক্ষ। তবে তাড়াতাড়ি পরের পোস্ট দেবার চেস্টা করবো। হাসি

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

বিজ্ঞান নিয়ে লেখায় ধন্যবাদ। আশা করি, পরের পর্বগুলায় আরো বিশদ করবেন, যাতে সাধারণ পাঠকের বুঝতে সুবিধা হয়।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

দায়ীন (frdayeen) এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ। হাসি

তারাপ কোয়াস এর ছবি

আজ সকালেই মাসিমো'র একটা বই পড়ছিলাম। সেখানে স্ট্রিং থিউরী নিয়ে বেশ চমকপ্রদ কথা পেলাম। আপনার সামনের পর্বের জন্য সেটা আপাতত তুলে রাখলাম খাইছে

আপনার লেখাগুলা সহজবোধ্য, সাবলীল। ক্যারি অন।


love the life you live. live the life you love.

দায়ীন (frdayeen) এর ছবি

বইটা আমার ডাউনলোড করা আছে। কিন্তু পড়া হয় নাই।
না জানি পরের পর্বে আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে। ভয় পাইলাম ! ইয়ে, মানে...

সত্যপীর এর ছবি

বিগ ব্যাং থিওরীতে স্ট্রিং থিওরী নিয়ে শেলডন প্রায়ই লেকচার দেয়, আপনেরটাও ঐরকম শুনলাম কিন্তু ঠিক ধরতে পারলাম না। আরেকটু খোলসা কইরা লিখেন দেখি, আপনার লেখা পড়ে মনে হচ্ছে আপনেই পারবেন আমারে বুঝাইতে ব্যাপারখান কি।

লিখা চালায় যান মাঝপথে থাইমেন না।

দায়ীন (frdayeen) এর ছবি

স্ট্রিং থিওরী নিজেই মেলা ভেজাল। দেখি কতদূর কি করতে পারি। ইয়ে, মানে...

উচ্ছলা এর ছবি

বিজ্ঞান ক্লাসে এসে একটু একটু মজা পেলাম চলুক

দায়ীন (frdayeen) এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- হাসি

ফালতু পাঠক এর ছবি

অনেক কিছুই বুঝি নাই , তবে যতটুকু বুঝছি তাতেই চ্রম মজা পাইছি । পরের পর্বের অপেক্ষায় ....

দায়ীন (frdayeen) এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সৃষ্টিছাড়া এর ছবি

চলুক

দায়ীন (frdayeen) এর ছবি

দেঁতো হাসি

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

চমৎকার সহজ ভাষায় লিখেছেন। চলুক কিন্তু সহজ করতে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ টার্মস গুলো খানিকটা এড়িয়ে গেছেন মনে হোলো। এই চমৎকার সিরিজটা অবশ্যই চলুক.....

দায়ীন (frdayeen) এর ছবি

মুর্শেদ ভাই অনেক ধন্যবাদ।
হ্যাঁ অনেক কিছুই এখানে বলা হয়নি। মূলতত্ত্বে যাবার আগে কয়েকটা পোস্টে কিছু ব্যাসিক বিষয়ের ভূমিকা নিয়ে ক্যাচাল করার ইচ্ছে আছে। দেখা যাক। হাসি

guesr_writer rajkonya এর ছবি

আচ্ছা, এই তাহলে ব্যাপার?

দায়ীন (frdayeen) এর ছবি

মোটামুটি এটাই ব্যাপার! খাইছে

মুবিন এর ছবি

পরের পর্বের আশায় রইলাম
সুন্দর হয়েছে

দায়ীন (frdayeen) এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

কাশফুল এর ছবি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

দায়ীন (frdayeen) এর ছবি

হাসি

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

চলুক। পড়ছি।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

দায়ীন (frdayeen) এর ছবি

অনেক আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- হাসি

এ হাসনাত এর ছবি

অতিরিক্ত সহজ করার অতিরিক্ত চেষ্টা আছে বলে মনে হলো। তবে সুন্দর হয়েছে। চলুক।

বন্দনা এর ছবি

মেলা ঝরঝরে লিখা। চলুক

শাব্দিক এর ছবি

পরের পর্বের জন্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকলাম।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।