এক টাকার স্বর্গ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ০৫/০৫/২০১২ - ৬:৩১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমরা তিনজন । দুজনের কাছে একটা করে টাকা আর তৃতীয় জনের কাছে একটা আধুলি । তিন টাকা দিয়ে আধ ঘণ্টার জন্য সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায় । আড়াই টাকা দিয়ে হয়না - তাতে কি? আমরা বাঙ্গালির ছেলে - দরাদরি করতে জানি । আড়াই টাকাতেই রফা হল

- পুরো আধা ঘণ্টার জন্যই ।
আমার বয়স দশ । বন্ধু রাশেদ সহপাঠী, আর লিটু বছর দেড়েক ছোট - তাই তার কাছে আধুলি । রাশেদ সাইকেল চালাতে জানে , বাকি দুজন জানিনা । মাঠের দিকে সাইকেল চালিয়ে নিয়ে গেল রাশেদ, পেছন পেছন আমরা দৌড়ে গেলাম ।
জীবনে প্রথম বারের মত সাইকেলে ওঠা হল - না, মোটেই সহজ না । সাইকেল চলল না তার যেভাবে চলা উচিত... পেছন থেকে রাশেদ ধরে রেখেছে - ইন্সট্রাকশন দিচ্ছে । অনেকক্ষণ চেষ্টাতেও হলনা । এর পর লিটু উঠল । সেও কিছুক্ষন চেষ্টা করল ।
'তোরা একটু দাঁড়া, আমি একটু চালিয়ে আসি ।' - হাত পা নিসপিস করছিল এতক্ষন রাশেদের । তবু ধৈর্য ধরে থেকেছে । সাইকেল ও ফেরত দেবার সময় চলে এসেছে । পুরো মাঠ দুচক্কর দিল রাশেদ । বাকি দুজন আবার কিছুক্ষন চেষ্টা করলাম ।
পরের কিছুদিন অন্য নানা বন্ধুর সাথে সাইকেল চালানো চলল - অবশ্যই একটাকা একটাকা চাঁদায় সাইকেল ভাড়া নিয়ে । কেউ চালাতে জানে কেউ জানেনা । 'যেদিকে পড়ে যাচ্ছিস সেদিকে হেন্ডেল ঘুরিয়ে নে' - ছোটদের ব্যাবহারিক জ্ঞান - কোন ভুল নেই । এভাবে সাইকেল চালানো শিখলাম । বড় সাইকেল ভাড়া করা শুরু হল - বড় গ্রুপে এবং এবার এক ঘণ্টার জন্য । চাঁদার হার? সেই এক টাকা। বড় সাইকেল , চালানো যাচ্ছে, কিন্তু ওঠা যাচ্ছেনা । পেছন থেকে দুজন সাইকেল ধরছে - একজন চড়ে বসছি, প্যাডেল চালানো শুরু হলে আর পড়ার ভয় নেই । মাঠ চক্কর দিয়ে ঘুরে আসছি - স্লো করতেই পেছন থেকে দুজন এসে ধরছে - নেমে পড়ছি । কত শতবার পড়লাম, কত কাটাছেড়া - ও নিয়ে ভাবার সময় আছে? উঁচুনিচু মাঠে বেল না বাজালেও ঝনঝন শব্দ করে চলে সাইকেল। ছোট সাইকেল, বড় সাইকেল । সাইকেল, সাইকেল আর সাইকেল । স্বর্গীয় কিছু নয়, এটাই স্বর্গ ।
হ্যাঁ, সেই দশ বছরের ছেলেটা জানত কিভাবে এক টাকা দিয়ে স্বর্গ গড়তে হয় - যার কাছে স্বর্গের কোন অর্থ ই ছিলনা । টীম ওয়ার্ক শব্দটাই যে শোনেনি সে নিজের অজান্তে একের পর এক দল গড়ে গেছে । নিজের স্বর্গ গড়তে গিয়ে যে বাস করেছে মিলিত স্বর্গে ।
আমি ছেলেটাকে খুঁজি । ভয় হয়, লুকিয়ে আছে নাকি মরেই গেছে? আমি যে স্বর্গ গড়া ভুলে একের পর এক নরক গড়ে চলছি...

-এ ইউসুফ


মন্তব্য

মোখলেছুর রহমান সজল  এর ছবি

স্মৃতি আনন্দে ঢাকা বিষাদ। মনে করিয়ে দিলেন ! ! !

সেই দিনগুলি ছিল স্বপ্ন দেখার, আগামী দিনের পৃথিবীর ছবি আঁকা, আর ভালবাসা

কুমার এর ছবি

আমিও এভাবেই সাইকেল চালানো শিখেছিলাম যদিও ইন্সট্রাকটর ছিল না। ছোট সাইকেল দিয়ে শুরু, পরে চায়না ফিনিক্সে হাফ প্যাডেল মারতে মারতে একদিন দেখি দিব্যি পাক্কা ড্রাইভার বনে গেছি।
লেখা চলুক। হাইফেন মনে হয় একটু কমানো যেত।

Atahar এর ছবি

ভালো লাগসে পড়ে। চলুক

আশালতা এর ছবি

শেষ লাইনটা ভাবালো। লেখা কিন্তু ভালো হয়েছে। হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

তারেক অণু এর ছবি
মৌনকুহর এর ছবি

দুঃখের কাহিনী মনে করিয়ে দিলেন ভাই! আমার সাইকেল-চালনা-বিদ্যা অর্জনের কাহিনী রীতিমত রোমহর্ষক! বল্বখন!

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

লেখাটা বেশ ভালো লাগলো।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

ভাল্লাগলো।

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

বন্দনা এর ছবি

সাইকেল চালাতে পারিনা, বিরাটা দুঃখ। এইবার দেশে গিয়ে কদিন ছোট ভাইয়ের কালো ঘাম ঝরিয়ে চেষ্টা চরিত্র করেছিলাম, কিন্তু কাম হয়নাই। আপনার লিখা ভালো লাগ্লো। কিছু কিছু লাইন কোট করার মত, বিশেষ করে শেষ লাইন্টা অসাধারন।

ইঁদুর এর ছবি

ছোট লেখা দারুন লাগল।

তাপস শর্মা এর ছবি

ভালো লাগল।

এ ইউসুফ এর ছবি

পড়ার জন্য মন্তব্যের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। আমার প্রথম ব্লগিং... কাজেই মন্তব্য গুলো আমার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ...
আবার ধন্যবাদহাসি

এ ইউসুফ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।