ম্যা বি আই লাইক ক্যাটস্

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১৮/০৭/২০১২ - ৪:৪৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ম্যা বি আই লাইক ক্যাটস্

আমি আগে কখনও ডায়েরি লিখিনি। আজ লিখতে বসলাম, সেটাও আমার একটি বন্ধুর কথা শুনে। সকালে ঘুম থেকে উঠে, ব্রেকফাস্ট সেরে বাজারে বেরিয়ে পড়লাম। বাজারে শাক্-সবজির দামও বেশ বেড়েছে।

আলু = ১৫ টাকা (প্রতি কিলো)
বেগুন = ৪০ টাকা (প্রতি কিলো)
কাঁচা লঙ্কা = ১৫ টাকা (১০০ গ্রাম)
কাকরল,টমেটো,বরবটি = ১০ টাকা (৩০০ গ্রাম)

যাই হোক্ শাক্-সবজির কেনাকাটার পালা শেষ করে মাছের বাজারের দিকে এগিয়ে গেলাম। লটে,চিংড়ি,পোনা,তেলাপুঁইয়া,মোড়লা,রুই আরও কি কি মাছ উঠেছে। মাছের নামতো অনেক জানি কিন্তু চিনতে একটু অসুবিধা হয়। তবে আমি অবশ্য সেইসব মাছই কিনি যেইসব আমি চিনতে পারি। শাক্-সবজির বাজারটা আমি ঠিকঠাকই করেনি, যেটাই একটু অসুবিধা হয় সেটা হল মাছ কিনতে। বাজারে প্রত্যেক মাছ বিক্রেতায় হাঁক দিচ্ছিল কিন্তু আজ আমার কানে লটে মাছ বিক্রেতার হাঁকটাই একটু পছন্দের ব’লে মনে হল। তার কারণ মা অনেকদিন ধরেই বলছিল লটে মাছ খাবে। আমি বলতাম, লটে মাছের দাম প্রচুর – এখন খাওয়া যাবে না, আরও কিছুদিন পরে খেও। আজ যে লটে মাছের দাম কমেছে তা ঠিক নয়, আজও লটে মাছের দাম সেই একই আছে – ৪০ টাকা (প্রতি কিলো)। কিন্তু আজ আমারও খেতে ইচ্ছে করছিল। আমি যথা শীঘ্রই লটে মাছ বিক্রেতার দিকে এগিয়ে গেলাম। মাছ বিক্রেতার কাছে গিয়ে যতটা কম দামে মাছ নেওয়া যায় তার চেষ্টা করতে লাগলাম। আমার সাথেও একজন বৃদ্ধ লোকও বলতে লাগলেন। আমি বললাম, ৩০ টাকা করে যদি দাও তাহলে দেড় কিলো নেব। মাছ বিক্রেতাকে কোন রকমে রাজি করিয়ে আমি দেড় কিলো মাছ নিলাম আর সেই ভদ্র লোকটিও ১ কিলো মাছ নিলেন। সব বাজার শেষে পকেটে মাত্র ১৫ টাকা ছিল। শেষে ঐ ১৫ টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরলাম আর বাজারের হিসেব সহ বাজারটা মায়ের হাতে তুলে দিলাম। তারপর খবরের কাগজটা নিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ পরে আমার ফোনটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে” গানের রিংটোনে বেজে উঠল। দেখি আমার বন্ধু ফোন করেছে। ফোনটা রিসিপ করার সাথে সাথেই, বন্ধু – “কিরে? আজ একবার আমার বাড়িতে আসতে পারবি?” আমি বললাম – ঠিক আছে , আমি সাড়ে দশটা নাগাদ যাব। বন্ধু – “দেরি করিস্ না”। এই বলে সে ফোনটা রেখে দিল।

তখন সবে ন’টা বাজে। মা কল্ পারে বসে লটে মাছ কেটে, ধুচ্ছিলেন। কয়েকটা বেড়াল এসে জড়ো হয়ে গেল আর যেখানে মাছ ধোওয়া জলটা জমছিল সেখান থেকে ওরা খেতে শুরু করল। একটা বেড়াল সেই জমা জল এবং তার বেড়াল সঙ্গীদের ছেড়ে আমার মায়ের হাতের খানিকটা কাছে এসে বসে রইল। হয়ত তার জমা জল থেকে খাওয়াটা অপছন্দের ব’লে মনে হয় অথবা তার যুদ্ধ করে খেতে ভাল লাগে না। জানি না তার কোন ভাবনাটা আমার সাথে মেলে। মা তাকে বারবার তাড়ানোর চেষ্টা করছে। বারংবার তাড়ানোর চেষ্টার পরেও মা তাকে তাড়াতে ব্যর্থ রইল। সে আবার কিছুক্ষণ পর এসে আগের ঠিক সেই জায়গাতেই এসে বসে পড়ে। বারংবারের ব্যর্থতার পরে মা এবার আমাকে ডেকে বললেন – “বাবু, বেড়ালটা তাড়াতো”। যদিও আমার ডাক্ নাম বাবু নয় – ওটা মা-বাবার আদর করে ডাকা নাম। আমার ডাক্ নাম রেণী। আমার আত্মীয়-স্বজন সবাই আমাকে ‘রেণী’ নামেই ডাকে। আমি সবার কাছে যতই বড় হই না কেন মা-বাবার কাছে সব সময়ের সেই ছোট্ট ছেলে হিসেবেই আছি। তাই মা-বাবার ডাকা নামটা আমার নিজের বেড়ে ওঠার সাথে সাথেও এখনও কোনও পরিবর্তন হয়নি। এখন এমন হয়েছে মা-বাবার থেকে শুনে শুনে পাড়ার লোকেরাই আমাকে ‘বাবু’ নামে ডাকে। ঠিক তেমনই সবাই আমার বোনকে মা-বাবার ডাকা নামেই ডাকে। ডাক্ নাম নিয়ে অনেক আলোচনা হয়ে গেল – এবার আসল জায়গায় আসা যাক্। মা আবার বলে উঠলেন – “বেড়ালটা তাড়া”। আমি বেড়াল মোটেই পছন্দ করি না। বেড়াল দেখলে আমার মাথা গরম হয়ে যায়। কুকুর ভালবাসি তবে বেড়াল একদম নয়। বেড়াল দেখলে আমার রাগ এতটাই হয়, যেন আমি “টম্ এন্ড জেরি” কার্টুনের ‘টম’ এর রোল্ প্লে করছি আর বেড়ালটা “জেরি” র রোল্ প্লে করছে। মা যেই না বেড়ালের কথা বলল্ আমি ছোট্ট এক টুকরো ইট নিয়ে প্রস্তুত। আমি আসতে আসতে পা টিপে টিপে বেড়ালের পেছন দিকে গিয়ে দাঁড়ালাম আর ইটের টুকরোটা জোড়ে বেড়ালের গায়ে ছুঁড়ে মারলাম। যেইভাবে মারার চেষ্টা করেছিলাম ঠিক সেইভাবে বেড়ালটার গায়ে লাগল না – বেড়ালটা পালাল।

দেখতে দেখতে সময়ের কাঁটা সাড়ে দশটায় এসে দাঁড়াল। আমিও পোশাক পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছিলাম। বন্ধুটা আবার ফোন করল – “আসছিস্ তো?” আমি বললাম – এইতো বেরোচ্ছি। বন্ধু – “ঠিক আছে, দেরি করিস্ না। তাড়াতাড়ি চলে আয়্”। এই বলে সে ফোনটা রেখে দিল আর আমিও বেরিয়ে পড়লাম।

ঠিক এগারোটায় বন্ধুটার বাড়ি পোঁছালাম। স’রি, অনেকক্ষণ ধরে ওর,বন্ধু এইসব শব্দ ব্যবহার করছি। আমার বন্ধুর নাম হল প্রলয় বিশ্বাস। ও এইবার বি.সি.এ. কমপ্লিট করল। এখন এম্.সি.এ. করবে ভাবছে আর পাশাপাশি চাকরির চেষ্টা করছে। প্রলয়ের বাড়িতে ঢুকতেই – ও, আমাকে তার রুমে নিয়ে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে বলল্ – “তুই একটু বস্”। আমি জিজ্ঞাসা করলাম – কিরে? কি হল? ও বলল্ – “অনেক কথা আছে”। তারপর প্রলয় তার ডেল্ এর ল্যাপটপটা অন্ করল। ল্যাপটপটা অন্ করেই ইনটারনেট এর সাথে যুক্ত করে সে ফেসবুকটা খুলল। আমি বললাম – প্রলয়, তুই কি আমায় আমার বাড়ি থেকে ডেকে আনলি ফেসবুক দেখানোর জন্য? প্রলয় বলল – “আরে- না, না”। তারপর সে তার ম্যাসেজ বক্স খুলল। ম্যাসেজ বক্সে প্রায় অনেক ম্যাসেজ ছিল। সে পঞ্চম ম্যাসেজটা আমার সামনে খুলে দিয়ে বলল – “এটা পড়ে দেখ্”। আমি পড়তে লাগলাম, লেখা ছিল – “প্রলয়দা “সচলায়তন” এ তোমার গত সপ্তাহের ব্লগটা পড়ে আমার খুব লাগল। তোমার ব্লগটা আমায় অনেক পুরানো কিছু হারিয়ে যাওয়া মূহুর্তের কথা মনে করিয়ে দিল। আমি ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি, তুমি যেন আরও অনেক বড় হও। আরেকটা কথা আমি তোমার ব্লগটা আমার বন্ধুদেরকেও পড়িয়েছি, তাদেরও ব্লগটা খুব ভাল লেগেছে।”। আর ম্যাসেজটা এসেছে, শর্মি মুখার্জী নামে একজন ফেসবুক ফ্রেন্ডের কাছ থেকে। আমি বললাম – কি ব্লগ লিখেছিস্ দেখা, আমিও একটু পড়ে দেখি। সে তখন “সচলায়তন” এর ওয়েব সাইটটা খুলে তার লেখা ব্লগটা ল্যাপটপ স্ক্রীনে পেশ করল। আমি ৫ মিনিট ধরে ব্লগটা পড়লাম। আমারও বেশ ভাল লাগল। আমি আগে কখনও তাকে লেখালেখি করতে দেখিনি আর সেও আমাকে কোনদিন তার এই প্রতিভার কথা জানাইনি। আজ জানাল কারণ এটা তার অষ্টম ব্লগ ছিল। আগে যতগুলো ব্লগ সে লিখে পোস্ট করেছিল সেগুলো পাবলিশের জন্য সিলেক্ট হয়নি। কিন্তু তার এই অষ্টম ব্লগটা পাবলিশের জন্য সিলেক্ট হয়েছে। প্রলয়ও দেখছি খুব খুশি আর তার আনন্দ তার চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে। যদি তার আনন্দটাকে আরও ভাল ভাবে বলি তো তাহলে বলব, সে প্রায় আনন্দে উন্মাদ হয়ে উঠেছে। তার আনন্দ দেখে আমারও আনন্দ হতে লাগল। আমার তখন কেন জানি না ইচ্ছে হতে লাগল যে আমিও কিছু লিখব। কিন্তু কি করে লিখব? তাকে জিজ্ঞাসা করলাম – তুই কি করে তোর লেখা শুরু করেছিলিস্। প্রলয় বলল – “আমিতো প্রথমে ডায়েরি লিখতাম। ডায়েরি লিখতে লিখতেই আমি গল্প লিখতে শুরু করলাম”। তখন আমিও ভাবলাম ডায়েরি লেখা দিয়ে শুরু করব। তারপর তার সাথে আরও নানা রকম গল্প করে দুপুর দেড়টা নাগাদ বাড়ি ফিরলাম।

বাড়ি ফিরে স্নান সেরে দুপুরের খাবার খেতে খেতে চিন্তা করতে লাগলাম – কি লেখা যায়? লিখতেও ইচ্ছে করছে কিন্তু কি লিখব সেটাও মাথায় আসছে না। খাওয়া দাওয়া শেষের পর বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম। ভাবতে ভাবতে একটু তন্দ্রা মতো এসেছিল কিন্তু সেই তন্দ্রাতেই আমি অতীথের অনেক বছর আগের স্মৃতিগুলো নিয়ে নড়াচড়া করতে লাগলাম। নড়াচড়া করতে করতেই হঠাৎ মনে পড়ল ছোটকালেও আমি খাতার শেষের পৃষ্ঠায় কিছু লেখালেখি করতাম। অবশ্য সেটাকে ডায়েরি লেখা বলা চলে না। তখন বোধ হয় আমি ক্লাস ফোর কি ক্লাস ফাইভ এ পড়তাম। তখন হয়ত অবুঝ মনের খেয়ালে অতিরিক্ত আনন্দের টানে কখনও কখনও ভুল কিছু করে বসতাম। আর তার জন্য আমাকে গুরুজনদের কাছ থেকে বকুনি বা মার খেতে হত। ছোট ছিলাম তাই কষ্টটা খুব বেশিই লাগত। মনে হত কেউ আমায় ভালবাসে না। আর কাঁদতে কাঁদতে মনের কষ্টটাকে খাতার পাতায় লেখার চেষ্টা করতাম। সেই লেখাটা ছিল অবশ্য যিনি বকুনি বা মার দিয়েছিলেন উনাকে স্মরণ করে। লেখাগুলি এই রকমই হত – ঊনি আজ আমাকে মেরেছেন। ঊনি খুব খারাপ। আমি ঊনার সঙ্গে আর কথা বলব না। তখন শুধু আমার লেখায় নজরে পড়ত আমিই পৃথিবীর সব থেকে ভাল আর নির্দোষ ছেলে এবং অন্যরা সবাই দোষী আর খারাপ ছিল। ছোটকালে এইরকম কত কিছুই না লিখতাম আর আজ সেইসব কথা মনে পড়লে খুব হাসি পাই।
মনে হয় যেন কি বোকায় না ছিলাম তখন। এইসব ভাবতে ভাবতে যে কখন ঘুমিয়ে পড়লাম নিজেই জানলাম না। তবে দুপুরের খানিকের ঘুমটা রাতের দীর্ঘ ঘুম থেকে যে ভালই হয়েছে সেটা বুঝতে পারছি। ঘুম ভাঙ্গতেই লক্ষ্য করি, ছাদের টিনের ওপর কড়কড় শব্দের আওয়াজ সারা বাড়ি লোড-শেডিং এর শিকার হয়ে রয়েছে। বিছানা ছেড়ে বারান্দায় এসে লক্ষ্য করলাম বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে আর আকাশটা কালো মেঘে ছেয়ে গেছে। আমি বারান্দার সেই দোলনা চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে দোল খেতে লাগলাম। হালকা বৃষ্টির ছিটে-ফোটা জল কখনও আমার হাতের লোমের ওপর শিশির বিন্দুর মতো জমতে লাগল আবার কখনও শিশির বিন্দুর রূপ ছেড়ে সরু পথ সৃষ্টি করে হাতের ওপর চলতে লাগল। তার পথ চলাটা আমি সুড়সুড়ির ন্যায় অনুভব করতে পারছিলাম আর আমার মনে এক অদ্ভূত আনন্দ জেগে উঠছিল। প্রাণে শুধু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটাই গান বেজে উঠছিল –
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
খেলে যায় রৌদ্র ছায়া বর্ষা আসে বসন্ত।।
কারা এই সমুখ দিয়ে আসে যায় খবর নিয়ে,
খুশিরই আপন মনে – বাতাস বহে সুমন্দ।।
সারাদিন আঁখি মেলে দুয়ারে রব একা,
শুভক্ষণ হঠাৎ এলে তখনি পাব দেখা।
ততক্ষণ ক্ষণে ক্ষণে হাসি গাই আপন-মনে,
ততক্ষণ রহি রহি ভেসে আসে সুগন্ধ।।

আর এই সুন্দর আনন্দের মূহুর্তটাকে বিব্রত করে আমি আমার নিজের ভাবনাটাকে গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে গেলাম। কিন্তু ভেবে ভেবে যেই কিছু খুঁজে পাচ্ছি না তখন হাল ছেড়ে দিয়ে নিজেকে নিজেই বলতে লাগলাম – এইসব আমার জন্য নই। শুধু শুধু নিজের মস্তিষ্কে চাপ দিয়ে লাভ নেই। তক্ষণই আমি সব ভাবনা ছেড়ে নিজের স্বাভাবিক নিত্য চাল-চলনে ফিরে এলাম।

বৃষ্টিটাও কমে গেল। পাশের বাড়ি থেকে সন্ধ্যা-আরতির শাখের ধ্বনি শুনতে পেলাম। দেওয়াল ঘড়ির দিকে চোখ ফিরিয়ে দেখি বিকেল সাড়ে ছ’টা বাজে। আজকে মাও এই বৃষ্টিতে ভালই ঘুম দিয়েছে। মা ঘুম থেকে উঠে আমাকে বলল – “বিকেল হয়ে গেছে আমাকে ডাকিসনি কেন?” আমি বললাম – আমিও এইমাত্র উঠলাম।

রাত আটটার সময় লোড-শেডিং এর জাল থেকে মুক্তি পেলাম। মা তাড়াতাড়ি দৌঁড়ে গিয়ে টেলিভিশনটা অন্ করে স্টার জলসা চ্যানেল এ ‘মা’ সিরিয়ালটা দেখার জন্য বসে পড়লেন। আমি আমার কমপিউটারটা অন্ করে ‘২২শে শ্রাবণ’ ফ্লিমের গানগুলো শুনতে শুনতে কমপিউটারে ‘স্পাইডার সলিটেয়ার’ নামক গেমটা খেলতে লাগলাম। তারপর কমপিউটারে এটা সেটা করে আরও নানারকম অকাজের কাজে সময় নষ্ট করে, কমপিউটার শাট-ডাউন করে, রাত সাড়ে ন’টায় কমপিউটার ছেড়ে উঠি। আমার ঘর থেকে বেড়িয়ে দেখি বাবা টেলিভিশনে ‘স্টার আনন্দ’ চ্যানেলে সংবাদ দেখছেন। আমিও কিছুক্ষণ বসে সংবাদ দেখলাম। সংবাদ দেখতে দেখতে বাবার সাথে নানারকম বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম। তারপর সবাই একসাথে রাতের খাবার শেষ করে যে যার ঘরে ঢুকলাম। বিছানায় শোয়ার সাথে সাথে ঘুমও এসেছিল। আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আধ ঘণ্টা পর আমার ঘুম ভাঙ্গে। বাইরে শুনতে পেলাম বৃষ্টি আবার পড়ছে। আমি বিছানা থেকে নেমে এসে জল খেয়ে আবার শুতে যাচ্ছিলাম, শুনতে পেলাম একটা বেড়ালের ডাকার শব্দ – “মেয়াও মেয়াও” করে ডাকছে। শব্দ শুনে মনে বলে ওটা বেড়ালের বাচ্চার ডাকার শব্দ। আমি তখন ঘরের খাটের নিচে, টেবিলের নিচে, রান্নাঘরে, বারান্দার বিভিন্ন জায়গায় খুঁজলাম। আগেই বলেছিলাম, বেড়াল আমি একদম অপছন্দ করি – আই হেট ক্যাটস্। কোথাও খুঁজে পেলাম না।

বাড়ির মেইন দরজার কাছে গিয়ে শব্দটা লক্ষ্য করলাম, শুনে নিশ্চিত হলাম বেড়ালটা বাড়ির বাইরে থেকেই ডাকছে। আমি তখন নিশ্চিন্ত হয়ে নিজের ঘরের দিকে এগোতে লাগলাম। কিন্তু কেন জানি না আমার মনে হচ্ছিল, আমি বোধ হয় ভুল করছি। নিজের মনে ভাবছিলাম – এই বৃষ্টির রাতে বেড়ালটা আমার বাড়ির দরজায় এসে ডাকছে আর আমি নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাতে যাচ্ছি! রাত সাড়ে এগারোটা বাজে। এত রাতে বাড়ির মেইন দরজাটাও খোলা উচিত নয়। যাকগে্, আমি ঘুমাতে যাই। লাইট অফ্ করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। কিন্তু সেই বেড়ালের অনবরত ডাক আমাকে অস্থির করে তুলল। আমি আর বিছানায় পড়ে থাকতে পারলাম না। আমি বিছানা ছেড়ে বাড়ির মেইন দরজার দিকে এগোতে এগোতে অন্য ঘরের দিকে লক্ষ্য করলাম, দেখি সবাই ঘুমিয়ে আছে। বাড়ির মেইন দরজাটা খুলে আমি দেখলাম, একটা বাচ্চা বেড়াল বৃষ্টিতে ভিজে আমার বাড়ির দরজার সামনে বসে আছে আর ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে তার ভাষায় সে আমার কাছে অসহায় কন্ঠে আশ্রয়ের সাহায্য চাইছে। আমি তখনও ভাবছি - কি করব? তাড়িয়ে দেব নাকি বাড়িতে ঢোকাব? বেড়ালটা আমার দিকে অসহায় চোখ নিয়ে তাকিয়ে দু’বার “মেয়াও মেয়াও” করে ডাকল। আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে তাকে তাড়িয়ে দিতে পারলাম না আর না পারলাম তাকে বাড়িতে ঢোকার অনুমতি দিতে। কিন্তু সে নিজে থেকেই বাড়িতে ঢুকে পড়ল। আমার মনে হয় সে বুঝতে পেরেছিল, আমি আর যাই করি না কেন? – এই বৃষ্টির রাতে তাকে অন্তত একটি রাতের আশ্রয় দেব।

সেইদিন আমার কি যে হল, আমি নিজেই জানি না। যাকে আমি সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করতাম, যাকে দেখলেই আমার প্রচুর রাগ হত আর ছুটে যেতাম মারার জন্য, তার জন্যই আমি সেইদিন যেটা অনুচিত বলে মনে হয়েছিল আমি সেটাকে উচিত বলে গ্রাহ্য করেছিলাম। আমি শুধুমাত্র তার জন্যই সেইদিন বাড়ির মেইন দরজাটা খুলেছিলাম। আর সেইদিনের সেই ঘটনাটা আমি ছাড়া আর বাড়ির কেউ জানে না। সকালবেলাই বাড়ির অন্যরা টের পেল যে বাড়িতে একটা বেড়ালের বাচ্চা ঢুকেছে। সবাই আমাকে বেড়ালের বাচ্চাটাকে তাড়ানোর জন্য বলেছিল কিন্তু আমি সেই বেড়ালের বাচ্চাটাকে আমার কাছে রেখে দিলাম। শেষে বাড়ির অন্যদেরকে বুঝিয়ে আমি বেড়ালটাকে কাছে রাখার অনুমতি পেলাম। তারপর থেকে কেন জানি না বেড়ালকে একটু একটু পছন্দ করতে লাগলাম। আর এখন – “আই হেট ক্যাটস্” নয়, এখন মনে করি – “ম্যা বি আই লাইক ক্যাটস্”।

সুপম রায়
১৮/৭/২০১২


মন্তব্য

সুমন চৌধুরী এর ছবি

লেখাটা ভালো। তবে যদ্দুর জানি May = মে অথবা মেই, অস্ট্রেলিয়া হইলে মাই। ""‌ম্যা" আগে শুনি নাই কখনো।

অতিথি লেখক এর ছবি

"মে" এই শব্দটা ইংরাজি মাস হিসেবে ব্যবহার হয়।আমি যে শব্দটা ব্যবহার করেছি সেটার উচ্চারণ "ম্যা" হয়। লেখাটা ভালো লাগার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

লেখা ভালো লেগেছে।
"ম্যা" ব্যাপারটা এই প্রথম জানলাম।

শিশিরকণা এর ছবি

কোন ক্ষেত্রেই may এর উচ্চারণ ম্যা হওয়ার কথা না। ম্যা শুধুমাত্র ছাগলের ডাক হিসেবেই জানি। দেঁতো হাসি

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

বন্দনা এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

অতিথি অবস্থায় লেখা পোস্ট করার পর এডিট করার সুযোগ নাই। তাই লেখা লেখা পোস্ট করার আগে দুই/তিন বার খুঁটিয়ে পড়ে নিন, যাতে বানান বা বাক্য গঠনে ভুলগুলো না থাকে।

আপনার অনেক কিছু আপনি আমাদের জানাতে চান। আমরাও সেগুলো পড়তে আগ্রহী। তবে প্রতিবারে এক একটা টপিক নিয়ে লিখুন। হতে পারে সেটা দিনপঞ্জী আকারে, হতে পারে গল্প আকারে, হতে পারে কবিতা আকারে। মন খুলে, দু'হাত খুলে লিখতে থাকুন। পাঠকদের প্রতিক্রিয়াগুলো ফলো করুন, অন্য ব্লগারদের লেখাও পড়ুন - সেখানে আপনার মতামত দিন। দেখবেন ব্যাপারগুলো কতো মসৃণ হয়ে গেছে, ভার্চুয়াল বন্ধুজগতও তৈরি হয়ে গেছে। এরপরে পূর্ণসচল হওয়া কেবল সময়ের একটা ব্যাপার মাত্র।

আপনি চারপাশটা খুব খুঁটিয়ে দেখতে পারেন, সেগুলো আবার লেখায় তুলেও আনতে পারেন। লেখার জন্য আপনি কখনো ইন্টারেস্টিং বিষয়বস্তুর অভাব বোধ করবেন না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি নতুন অতিথি হয়ত এখনও নিয়মগুলো আমার অভ্যাস হয়নি। তবে আগামি দিনে মনে রাখার চেষ্টা করব। মনে করিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ।

chinky এর ছবি

ম্যাঁও

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

লেখাটা ভালো লাগল। উচ্চারণটা "ম্যা" না, "মে"। মে মাস হলেও মে, মে বি হলেও মে।

পান্না রায় এর ছবি

ম‌্যা শুনলে একটা প্রাণীর কথা মনে পড়ে। ৫৫০ টাকা করে কেজি।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

'ম্যা' নিয়ে অনেক কথাই তো হল। শিরোণাম দেখে ভেবেছিলাম হয়ত স্যাটায়ারিস্টিক ভাবে লিখেছেন। যাই হোক লেখা চলুক।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

বাপ্পীহায়াত এর ছবি

চলুক

লটে মাছ বলতে কি লইট্যা মাছ বুঝিয়েছেন? (যেটা সাধারনত বৃহত্তর চট্টগ্রামে পাওয়া যায়)

অতিথি লেখক এর ছবি

হ্যাঁ, এখানে লটে মাছেরই কথা বুঝিয়েছি।

উতপাখির হৃদয় এর ছবি

শাক - সব্জির যে বাজার দর দিয়েছেন তা বর্তমান বাজারদরের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় মশাই । ম্যাঁও

অতিথি লেখক এর ছবি

শাক-সব্জির যে দর এখানে দেওয়া আছে সেটা আমার এই গল্প লেখার কিছুদিন আগের।আর মশাই এটা বাংলাদেশের বাজারের দর নয় এটা ভারতবর্ষের বাজারের দর বলছি। তাই না মেলাটা স্বাভাবিক। তবে এখনও প্রায় কম বেশি একই দর আছে।

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

পশ্চিমবঙ্গের হিসেবে বাজারদর যথার্থ। কেউ বাংলাদেশের বাজারদরের ফর্দ দিলে ভাল হয়।

বন্দনা এর ছবি

লেখা ভালো লাগছে সুপম।

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখাটা ভালো লাগার জন্য ধন্যবাদ।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

ষষ্ঠ পাণ্ডব যেটা বলেছেন ওটা মেনে লেখা চালিয়ে যান। মনে হচ্ছে আপনার কাছে লেখার খোরাক আছে। হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

ষষ্ঠ পান্ডবের কথা আমি মাথায় রাখব। ধন্যবাদ।

শাব্দিক এর ছবি

লেখা ভাল লেগেছে। লিখতে থাকুন হাত খুলে। পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখা ভালো লাগার জন্য, ধন্যবাদ।

স্বপ্নখুঁজি এর ছবি

লেখালেখি চালিয়ে যান। আরও ভালো হবে।

" কাকরল,টমেটো,বরবটি = ১০ টাকা (৩০০ গ্রাম)" এভাবে ককটেল সবজি বিক্রি চোখে পড়েনি আগে।

অতিথি লেখক এর ছবি

গ্রামের কিছু কিছু জায়গা আছে যেখানে বিক্রির জন্য বিক্রেতারা এই রকম দর করে থাকে।এটাই অবাক হওয়ার কিছু নেই।

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখাটা ভালো লাগার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

ইমা এর ছবি

চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।