আমার দেখা ব্রাজিলাংশ - ২

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ০৫/০৯/২০১২ - ৯:৪৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার দেখা ব্রাজিলাংশ - ১

আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলোতে একটি বিশেষ সুবিধা হল (পরে আমার মনে হয়েছে) কেউ আপনার দিকে আপনার চেহারা, গায়ের রঙ বা পোশাকের উপর ভিত্তি করে চোখ গোলগোল করে তাকিয়ে থাকবে না- সে আপনি ক্ষুদ্র বাংলাদেশ, শোষক আম্রিকা, খাইশটা পাকিস্তান বা প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ কিরিবাটি যেখান থেকেই আসুন না কেন। যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে সবাই এখানে ইংরেজিই ব্যবহার করে, নেহায়েত নিজের ভাষাভাষী কাউকে পেলে সে অন্য কথা। কিন্তু রিওতে পা দিতে না দিতেই আমি বুঝতে বাধ্য হলাম আমি এখন আর কোন সম্মেলনে নেই। আমি এখন ব্রাজিলে, সত্যিকারের ব্রাজিলে।

তেরেসোপোলিস থেকে ছেড়ে যাওয়া আমাদের বাস এসে থামল রিও ডি জেনিরো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে। সব পাখি ফিরে যাবে নীড়ে। আমাদের তিন জনের নীড় এখন মার্সেলোর বোনের বাসা।

মার্সেলোর সাথে অতিরিক্ত তিন স্যুটকেস ভর্তি বই। এগুলো সে এই দুই বছরের মাস্টার্স কোর্সে ব্রাজিল থেকেই বিভিন্ন সময়ে জার্মানিতে নিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু শেষযাত্রায় এতগুলো আনতে পারবে না দেখে এ যাত্রায় কিছু রেখে যাচ্ছে। অগত্যা আমাদের ট্যাক্সি নেয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। ট্যাক্সি ঠিক করা হল। গাঁটটি বোঁচকা উঠাতে উঠাতে ট্যাক্সি চালক আমার দিকে কতক্ষণ পরপর বেশ কৌতূহলী দৃষ্টি নিয়ে তাকাচ্ছে। কৌতূহল নিবৃত্তের জন্যই মনে হয় আমাকে কিছু একটা জিজ্ঞাসা করল আর আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম। আমি এক বর্ণ এদের ভাষা বুঝি না!
মার্সেলোই চালকের প্রশ্নের উত্তর দিল আর এরপর থেকে শুরু হয়ে গেল পর্তুগিজ ভাষায় কথোপকথন। এখানে প্রসঙ্গত বলে রাখি, পুরো লাতিন আমেরিকা এবং মধ্য আমারিকার ভাষা ব্যবস্থাকে মোটা দাগে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে – ব্রাজিলে পর্তুগিজ আর বাকি সব দেশে স্প্যানিশ। আদিবাসী বা কিছু দেশের কলোনিগুলোতে শুধুমাত্র বাসাবাড়িতে বা এলাকাভিত্তিতে নিজেদের পূর্বপুরুষদের ভাষার প্রচলন থাকলেও, পড়াশোনা, অফিস-আদালত এসবের জন্য দেশ ভিত্তিতে পর্তুগিজ বা স্প্যানিশ জানা ছাড়া উপায়ন্তর নেই।
অথচ মজার ব্যাপার হচ্ছে এই দুই ভাষাই এসেছে কলোনাইজেশনের মাধ্যমে, সে অবশ্য বিরাট ইতিহাস

মোদ্দা কথা হচ্ছে ডিয়েগোর এদের ভাষা বুঝতে খুব বেশি সমস্যা হচ্ছে না কারণ ডিয়েগো গুয়াতেমালা(মধ্য আমেরিকার একটি দেশ)থেকে আসলেও তার মাতৃভাষা স্প্যানিশ এবং এর সাথে পর্তুগিজ ভাষার অনেক অনেক মিল। মার্সেলোর ভাষায়


“স্প্যানিশ যদি সি হয়, তবে পর্তুগিজ হচ্ছে সি++ !”


সর্বদা স্প্যানিশ ভাষার শ্রেষ্ঠত্তের ঝাণ্ডাধারী ডিয়েগো এই আপ্তবাক্য সত্য বলে নাকি সি আর সি++ এর পার্থক্য জানে না বলে উচ্চবাচ্য করল না, তা আর বোধগম্য হল না।

ট্যাক্সি চলতে শুরু করল। এখানেও আমাদের দেশের মত চালকের সাথে যাত্রীর বকবক করা নাকি অভ্যাস। বাড়ি কই, থাকেন কই, কি করেন, বাসায় বিবি ছাওয়াল আছে, এ পেশায় আসছেন কেন - এই জাতীয়। কিন্তু আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি এই মুহূর্তে কথার বিসয়বস্তু আমি বা আম্মার দেশ। চালক আমার ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহী। মার্সেলো চালকের পাশে সমানে বকবক করে যাচ্ছে আর আমি বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, ক্যাটাসট্রফি এই টাইপের শব্দ গুলো বুঝতে পারছি। মেজাজ গরম হচ্ছে আমার। আবার সেই ক্যাটাসট্রফি? মার্সেলো আমার দেখা একজন চরম মাইন্ড রিডার। সে আয়নায় আমার চেহারা দেখে পিছনে ফিরে আমাকে ইংরেজিতেই বলল,

“দেখ মিমিমি, যারা পড়াশোনা করে আর দেশ বিদেশের খবর রাখে তাদের কথা আলাদা। কিন্তু এদেরকে ভারতের পাশে ছোট্ট দেশ, অনেক ঝড় বন্যা হয় এই ধরনের কিছু ইঙ্গিত না দিলে আমার পক্ষে এদেরকে তোমার দেশটাকে চেনান তো কঠিন। আমি এর জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত!”
বলেই মার্সেলো, ডিয়েগো দু’জনেই ঠা ঠা হাসতে লাগল। হাসির কারণ আর কিছু না, “মিমিমি!”

এই হয়েছে আরেক জ্বালা!
আমি বঙ্গদেশের মানুষ। ছাত্রজীবনে ভাদ্র মাসের তাল পাকা গরমে চরম বিদ্যুতবিভ্রাটের মধ্যেও পুরা কাপড়ের বস্তা গায়ে নিয়ে ঘুমের ওষুধকে ল্যাং মেরে ফেলে দেয়া অধ্যাপকের ক্লাস করেছি, রাত্রে মশারির ভিতরে দমে দেয়া মাংসের মত সিদ্ধ হয়েছি, সেই গরমেই বাসে যেভাবে ঝুলে ঝুলে অফিসে যাতায়াত করেছি তাতে বাদুড় সম্প্রদায়ের এসে আমার পা ছুঁয়ে সালাম করে যাবার কথা। সেই আমি জার্মানি থেকে আসার সময় বিমানের ভিতরে একটু ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাগছিল বলে বিমানবালার কাছে একটা কম্বল চাওয়াতে আমার নাম হয়ে গেল “মিমিমি!” তাও আবার এই নামে আমাকে এখন রাস্তাঘাটে ডাকা হচ্ছে! কিন্তু কেন জানি মেজাজ আরো গরম হওয়ার পরিবর্তে ঠাণ্ডা হয়ে গেল। হাসি মারাত্মক সংক্রামক জিনিষ। আমিও ঠা ঠা করে হাসতে লাগলাম।
আমাদের ট্যাক্সি এখন বিখ্যাত রিও-নিতেরয় সেতুর দিকে ছুটে যাচ্ছে।
মানব সভ্যতায় সেতুর গুরুত্ব অপরিসীম। এক শহরের সাথে আরেক শহরের সেতুবন্ধন হয়, এক জাতির সাথে আরেক জাতির সেতুবন্ধন হয়, এক জীবনের সাথে আরেক জীবনের সেতুবন্ধন হয়। আহা! সেতুর মত সুন্দর স্থাপনা আর কি আছে এই পৃথিবীতে!

(উইকিপিডিয়া থেকে সংগৃহীত)

রিও-নিতেরয় সেতুটি গুয়ান্তানামো উপসাগরে অবস্থিত এবং রিও ডি জেনিরো ও নিতেরয় নামে দুটো শহরকে যুক্ত করেছে। এর দৈর্ঘ্য ১৩.২৯ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৭২ মিটার (আমাদের যমুনা সেতুর দৈর্ঘ্য ৪.৮ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.৫ মিটার)।
মোট আটটি লেন আছে গাড়ি চলাচলের জন্য, কিন্তু কোন রেল চলাচলের পথ নেই। ব্রাজিলে রেলপথ খুব বেশী জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম নয়। প্রতিদিন প্রায় দেড় লাখ ট্রাফিক যাতায়াত করে এই সেতুর ওপর দিয়ে। বর্তমানে এটি দক্ষিন গোলার্ধের সবচেয়ে দীর্ঘতম এবং পুরো পৃথিবীতে ষষ্ঠ দীর্ঘতম প্রিস্ট্রেসড কংক্রিট সেতু। (সবধরনের কংক্রিটের হিসেবে এর অবস্থান পুরো পৃথিবীতে হয়তবা ৩৭তম হবে, কিন্তু যুক্তিযুক্তভাবেই সবধরনের কংক্রিটের সেতুর তুলনামুলক বিচার এক কাতারে করা যায় না। কংক্রিট শব্দটির বাংলা করলে দাঁড়ায় ঢালাই। ব্যক্তিগতভাবে ঢালাই শব্দটির প্রতি আমার বিশেষ এলার্জি থাকায় আমি কংক্রিট বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।)

(উইকিপিডিয়া থেকে সংগৃহীত)

উপরোক্ত ছবিটিতে দেখুন সেতুটি বাম দিক থেকে ধীরে ধীরে উঁচু হতে হতে এক পর্যায়ে একটি চুড়ায় উঠে আবার নীচের দিকে নেমে যাচ্ছে। সবচেয়ে উঁচু স্থানটির উচ্চতা ৭২ মিটার। এই উঁচু স্থানের মাহাত্ম্য হচ্ছে প্রতিদিন শত শত জাহাজ এই উপসাগরে আসাযাওয়া করে এবং এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে তাদের অবাধ যাতায়াতের জন্য সেতুর কোন একটি নির্দিষ্ট অংশ এরকম উঁচু করতে হয়।

সেতু পার হয়ে আমরা এসে পরলাম নিতেরয়ে। এই শহরেই ওর বোনের বাস। ‘নিতেরয়’ একটি তুপি শব্দ যার অর্থ হল ‘লুকিয়ে রাখে যে জল’। শব্দটির সৌন্দর্যে আমি অত্যন্ত বিমোহিত হলাম; লুকিয়ে রাখে যে জল...লুকিয়ে রাখে যে জল... কি লুকিয়ে রাখে? বা কাকে লুকিয়ে রাখে? এর কোন উত্তর নেই! কিন্তু এই নেইতেই তো জগতের সকল সৌন্দর্য, জানার তীব্র ইচ্ছা!
তুপি’রা ব্রাজিলের অন্যতম আদি জাতিগোষ্ঠী। এদের আদিনিবাস আমাজন জঙ্গলে হলেও ২৯০০ বছর আগে থেকে এরা অতলান্তিক মহাসাগরের উপকুলের দিকে ধীরে ধীরে সরে পড়তে থাকে। পরবর্তীতে এরা অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এরকম একটি গোষ্ঠীর প্রধান, যার নাম আরারিবয়্যা, আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর পূর্বে ১৫৭৩ খ্রিস্টাব্দে নিতেরয় নগরটি প্রতিষ্ঠিত করেন। পুরো ব্রাজিলে নিতেরয় হচ্ছে একমাত্র শহর যা কোন অখ্রিস্টান ব্রাজিলিয়ান আদিবাসী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। তাই এরা যে একটু জাত্যাভিমানী হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না!
ঘণ্টা দেড়েক পর আমরা মার্সেলোর বোনের বাসায় পৌঁছালাম। ওর বোনের নাম মারিয়া। তবে আমাদেরকে বাসায় অভ্যর্থনা জানাল মারিয়ার একমাত্র ছেলে। ছেলেটার বয়েস ১৭ কি ১৮। এক মাথা কোঁকড়া চুল। গায়ের রঙ উজ্জ্বল হলুদ। মোটামুটি ইংরেজি পারে। নাম আরিওম। নামটা শুনে আমার কাছে একটু খটকা লাগছিল, অন্তত আমার পরিচিত লাতিন নাম নয় এটা। কিছুটা ‘হরিওম’ শব্দটার সাথে মিল আছে। নামটা শুনে আমি হয়তবা বিড়বিড় করছিলাম আর তাই দেখে ও জানাল ওর নামটা লাতিন নয় বরঞ্চ সংস্কৃত। ওর বাবা ভারতের সাঁই বাবার ভক্ত ছিলেন, তিনিই এই নাম রেখেছেন। বাবা ভারতীয় কিনা জানতে চাইলে বলল, বাবা ভারতীয় নন, তিনি ব্রাজিলিয়ান ছিলেন কিন্তু পূর্বপুরুষ ছিল আফ্রিকার। যদিও তিনি বেশ কিছু বছর ভারতে ছিলেন। বাবা মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর আগে।
বুঝলাম, মা-ছেলের ছোট্ট সংসার।

মারিয়া আসল আরো বেশ কিছুক্ষণ পর। পঞ্চাশের কোঠায় দাঁড়ান এই ভদ্রমহিলাকে দেখে পূর্বপুরুষ আঁচ করা বেশ কঠিন। মার্সেলোর বক্তব্যে বুঝা গেল, পুরো ব্রাজিলেই ব্যাপারটি কঠিন তো দুরের কথা রীতিমত অসাধ্য। রাস্তাঘাটে সব ধরনের গায়ের রঙের, বাহারি চুলের মানুষ দেখতে পাওয়া যায়। খোদ মার্সেলোর দাদা আর নানী হচ্ছেন পুরোদস্তুর ইটালিয়ান, নানা লিথুয়ানিয়ান (ইউরোপের এক ছোট্ট দেশ লিথুয়ানিয়ার অধিবাসীদের লিথুয়ানিয়ান বলা হয়)আর শুধুমাত্র দাদী হচ্ছেন ব্রাজিলিয়ান, তায় আবার নাকি আদিবাসী ছিলেন! তার নামের বিয়ানকো অংশটি সে বংশানুক্রমে তার দাদার কাছ থেকে পেয়েছে এবং এটি একটি ইটালিয়ান শব্দ যার অর্থ সাদা!

হায়! আমার দেশে কবে এমন দ্বিধাহীন মানবসংকর হবে? এখনো এক জেলার মানুষ আরেক জেলার মানুষকে বিয়ে করলেও ঝামেলা হয়, ধর্ম, জাত তো দুরের কথা! ব্যক্তিগত বা জাতিগত সঙ্কীর্ণ মনমানসিকতাকে উপেক্ষা করলেও সরকারীভাবেই আমার সবুজ দেহধারী পাসপোর্টের জন্য আমি ইসরায়েল যাওয়ার অধিকার রাখি না! প্রথম পাসপোর্ট হাতে পেয়ে আমি এত্ত অবাক হয়েছিলাম এই দেখে যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার আমি কোথায় যাব না যাব সেটাও ঠিক করে দিবে? বিবর্তনের সাথে সাথে আমরা যেমন লেজ হারিয়ে শুধু লেজের হাড়টাকেই বয়ে বেড়াচ্ছি তেমনি স্বাধীনতা ও যেন একধরনের বোধে রূপান্তরিত হয়েছে, রক্তমাংসের সমাজে এর আর কোন অস্তিত্ব নেই।

মারিয়া আমাকে দেখে যারপরনাই উচ্ছসিত। উচ্ছসিত হবার কারণ সে জীবনে কোন বাংলাদেশের মানুষ দেখে নাই। সম্মেলনে ও অনেকে অবশ্য এই কথাটা বলেছিল, কিন্তু ওসব জায়গায় এ নিয়ে তো আর উচ্ছাস প্রকাশ করতে পারে না কেউ। তাই মারিয়া ক্ষণে ক্ষণে আমার গাল ছুঁয়ে দেখে, চুল নেড়ে দেখে, হাতের আঙুল উলটেপালটে দেখে, একটু পরপর গালে চুমু খায়......ঠিক আমি যেন একটা খেলনা। এদের অভ্যর্থনার নিয়মটাই এমন, জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেতে হয়, তাও আবার বিশ্বসুন্দরী নির্বাচনের চুমু না। জার্মানিতে অন্তত জার্মানদের মধ্যে এ চল না থাকলেও ইউরোপের বেশ কিছু দেশে এ চল রয়েছে। প্রদেশভেদে এর নাকি আবার অনেক নিয়ম-কানুন!

মারিয়া ইংরেজি জানে না এবং আমি পর্তুগিজ জানি না দেখে বাকিরা সবাই দোভাষীর কাজ চালাচ্ছিল। অল্প সময়ে অতি আদর পেয়েই কিনা কে জানে এই মহিলাটিকে আমার বেশ পছন্দ হয়ে গেল। তখন মাত্র সন্ধ্যা হয়হয় করছে। রাতের খাওয়ার একটু দেরী হবে বলে মারিয়া আমাদের বাইরে থেকে ঘুরে আসতে বলায় এবার আমরা চারজন হইহই করতে করতে বেরিয়ে পরলাম আবার।
গোধূলিলগ্নে সব কিছুই কি খুব বিষণ্ণ লাগে? একটি দিনের শেষ হয়ে গেল, কি লিখলে জীবনের খাতায়? নাকি একটি শুন্য পাতা উল্টালে শুধু?
এরকম ছাইপাঁশ ভাবতে ভাবতে ভাবনার আগুনে ঘি ঢালতেই যেন গিয়ে পড়লাম এই দৃশ্যের সামনে। এ যেন আমার সেই চিরচেনা গোধূলি......পৃথিবীর সব গোধূলির রঙ কি এক?

বসে থাকা উটের কুজের মত বাম দিকের পাহাড়টির নাম ইংরেজিতে সুগারলোফ পাহাড়। এর আমি বাংলা নাম দিয়েছি ‘চিনির ডেলা’। ষোলশ শতাব্দীতে ব্রাজিলের চিনির ব্যবসা যখন পৃথিবীজুড়ে ফুলে ফেঁপে উঠে, তখন ঠিক এরকম আকারের একটি ছাঁচে করে পর্তুগিজ ব্যবসায়ীরা চিনির একক নির্ধারণ করতেন। চিনি আর অর্থ একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। অর্থ মানেই আভিজাত্য। আভিজাত্য প্রমাণের জন্য মিষ্টিজাতীয় খাবার বানানোর সময় গৃহকত্রীদের প্রতি নির্দেশ ছিল অতিরিক্ত চিনি ব্যবহার করার জন্য। সেই ধারাবাহিকতায় এখনও অনেক পরিবার আভিজাত্য প্রমাণের জন্য বাসায় অতিথি আসলে খাবারে প্রচুর চিনি ব্যবহার করে।
আজ থেকে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন বছর পূর্বে দক্ষিণ আমেরিকা এবং আফ্রিকা যখন দুটি আলাদা মহাদেশে বিভক্ত হয়, তখন সমুদ্র উপকুল ঘেঁষে এরকম বহু বন্ধুর তটের মধ্যে একটি হচ্ছে এই চিনির ডেলা যা পরবর্তী সময়ে উচ্চ চাপ এবং তাপমাত্রায় এধরনের আকার পায় এবং হয়ে যায় অত্যন্ত বিখ্যাত।

হাঁটতে হাঁটতে আর অল্প কিছুদূর যেতেই দেখতে পেলাম ব্রাজিলিয়ান আর্কিটেক্ট অস্কার নিমায়ার’এর এক অন্যতম সৃষ্টি। নিতেরয় সমসাময়িক (কনটেম্পোরারি) আর্ট যাদুঘর।

১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করা অস্কার নিমায়ার আধুনিক স্থাপত্যবিদ্যার ইতিহাসে এক জীবন্ত কিংবদন্তি। নিতেরয় কনটেম্পোরারি আর্ট যাদুঘর এর উদ্বোধন হয় ১৯৯৬ সালে, যখন তাঁর বয়স ৮৯ বছর!
কেন তাঁর সমসাময়িক সকল স্থাপত্যবিদ তাঁকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ মানেন আজো, তার ব্যাখ্যা এই যাদুঘরের মাধ্যমেই অল্প কথায় দেয়ার চেষ্টা করি।

যাদুঘরটির আকার এমন কেন? – যাদুঘরটি দেখতে অনেকটা উড়ন্ত সসারের মত, যা সমসাময়িকতার প্রতীক।

আচ্ছা। কিন্তু কেন উড়ন্ত সসারের নীচের দিকে এরকম উন্মুক্ত? – কারণ, এই অংশটুকু মুক্ত না হলে নিতেরয়’এ অবস্থানকারী কোন ব্যাক্তির পক্ষে অবাধভাবে রিও বা উপসাগরের অন্য পাশ দেখতে পাওয়া অসম্ভব।

বেশ বেশ! কিন্তু উড়ন্ত সসারের উপরের অংশটির ঢাল এমন কেন? এর চেয়ে বেশি বা কম নয় কেন? - এর উত্তর নীচের ছবিতে দেখুন।

হ্যাঁ হ্যাঁ, আপনিও ঠিক ধরেছেন। যাদুঘর আর চিনির ডেলার ঢাল (slope) হুবহু একই!

এরকম আরো অসংখ্য খুঁটিনাটি এই স্থাপত্যকে এক অনন্য শিল্পে রূপান্তরিত করেছে। এবং আশ্চর্যের বিষয় এই যে, আর কোন স্থাপত্যবিদই সেই সময়ে এর কাছাকাছি মানের সমাধান দিতে পারেননি।
আমাদের দুর্ভাগ্য ও খারাপ! বিশেষ ধরনের অভ্যন্তরীন মেরামত কাজ চলায় আমরা ভিতরে ঢুকতে পারিনি।
ফিরে আসার সময় এরা ঘোষণা দিল আমাকে এখন একটি বিশেষ জিনিষ খাওয়ানো হবে। ব্রাজিল আসার সার্থকতার ২৫ ভাগ নাকি ক্ষণিক পরেই সফলতার মুখ দেখবে। এসব যাদুঘর, চিনির ডেলা ঢিল মাইরা ফেলাইয়া দাও। খাওয়াটাই দুনিয়াতে আসল। বাকি সব উছিলা...... পুরুষ মানুষের পেট ও দেখি গোধূলির রঙের মত বিশ্বজুড়ে সাম্যের গান গায়!

যাই হোক, দেখি এরা কি জিনিষ খাওয়ায়!
.
.
.

খোদা......... এই জিনিষ???!!!???
(আমার বিহবলতার কারণেই বোধ করি আমি সেই সময় কোন ছবি তুলতে ভুলে গিয়ে থাকব, তাই আন্তর্জালেই ভরসা করলাম)

কি আর বলব? আমরা তো তাও ব্রাজিল কই দেখাতে বললে নাকি আফ্রিকার আশেপাশে খুঁজি, এদেরকে বাংলাদেশ খুঁজে দেখাতে বললে খুঁজবে কিনা আমার এখন সেই সন্দেহ হয়। তায় আবার কি খাই, কি পড়ি, আদৌ খাই-পড়ি কিনা সেটা জানবে- এ আশা করাও অনর্থক।
অতঃপর হাসতে হাসতে তাদেরকে আমাদের ডাব-সংস্কৃতির বিষদ ব্যাখ্যা দেয়ার পর তারা জানাল, কুছ পরোয়া নেহি! কল্য আমাকে আরেক বস্তু খাওয়ানো হবে। এই জিনিষ ব্রাজিল ছাড়া দুনিয়ার কোথাও নাই।

এই বার তারা সিরিয়াস! তিনজনের ২৫ ভাগ ব্রাজিল সার্থক সম্মিলিত প্রচেষ্টা বানের জলের মত ভেস্তে গেছে, সিরিয়াস না হয়ে উপায় কি?
(চলবে)

---- ঠুটা বাইগা

----------------------------------------------------------
১। আমি গরীব মানুষ। আমার ক্যামেরা ডিজিটাল, হাত অ্যানালগ। তাই ছবির গুণগত বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কখন পয়সা হলে ভাল একটা ক্যামেরা কিনে ফেলব। তবে হাতের ব্যাপারে কথা দিতে পারছি না।
২। কিছু ছবি আরিওমের সহায়তায় নেয়া।


মন্তব্য

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- হাসি

-- ঠুটা বাইগা

স্বপ্নহীন এর ছবি

চলুক

(গুড়)

অতিথি লেখক এর ছবি

স্বপ্নহীন ভাইয়া,
আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- লইজ্জা লাগে

--- ঠুটা বাইগা

স্যাম এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

--- ঠুটা বাইগা

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বছর দুয়েক পরে ব্রাজিল যেতে চাই মন খারাপ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

বিশ্বকাপের জন্য? আমিও যাইতে চাই।
কিন্তু পয়সার কথা চিন্তা করে মনটা খ্রাপ ওঁয়া ওঁয়া

--- ঠুটা বাইগা

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

বিশ্বকাপ ফুটবল দেখতে নিশ্চয়!

অতিথি লেখক এর ছবি

হ্যাঁ, কিন্তু হিসাব করে যা বুঝলাম, আবারো আমাকে কারো স্পন্সরের আশায় থাকতে হবে।
মন খারাপ

--- ঠুটা বাইগা

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

দারুণ! চমৎকার লেখা।
ব্রাজিল না গিয়ে উপায় নেই।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- লইজ্জা লাগে
আমিও আবার যাব, কবে জানি না (দীর্ঘশ্বাস এর ইমো হবে)

----- ঠুটা বাইগা

ধুসর জলছবি এর ছবি

চলুক পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

---- ঠুটা বাইগা

রংতুলি এর ছবি

চলুক তোফা!! হাঁ হয়ে সসার আকৃতির যাদুঘরটি দেখলাম! আপনার লেখার ভক্ত হয়ে যাচ্ছিতো, লিখতে থাকুন...

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপু
লইজ্জা লাগে
উৎসাহ দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

--- ঠুটা বাইগা

সত্যপীর এর ছবি

আভিজাত্য প্রমাণের জন্য মিষ্টিজাতীয় খাবার বানানোর সময় গৃহকত্রীদের প্রতি নির্দেশ ছিল অতিরিক্ত চিনি ব্যবহার করার জন্য। সেই ধারাবাহিকতায় এখনও অনেক পরিবার আভিজাত্য প্রমাণের জন্য বাসায় অতিথি আসলে খাবারে প্রচুর চিনি ব্যবহার করে।

বাংলাদেশেও অনেক জায়গায় দাওয়াতে অতিরিক্ত তেল-ঘি দিয়ে তরকারি রাঁধা হয় ওই একই কারণে। যার যত পয়সা তার তত তেল ঘি কেনার ক্ষমতা টাইপ লোক দেখানি ব্যাপার।

পোস্টে উত্তম জাঝা!

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য। হাসি

আমার বাংলাদেশ অভিজ্ঞতা বলে, অসচ্ছল ব্যক্তিরাই তেল ঘিয়ের জন্য বেশি ব্যাকুল হয়ে ওঠে; এখন সেকি আন্তরিকতার জন্য না বিলুপ্ত আভিজাত্যে কিঞ্চিত ঘষামাজার জন্য সে আর বলি কি করে? তবে খাওয়ার সময় প্রথমটা ধরে নিলেই বোধ করি হজমের সুবিধা হয়।

---- ঠুটা বাইগা

সত্যপীর এর ছবি

ইয়ে, হজমের সুবিধা কুনোদিক দিয়েই হওয়ার কথা না খাইছে

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

হো হো হো
হয়তোবা………….

--- ঠুটা বাইগা

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

প্রথম পাসপোর্ট হাতে পেয়ে আমি এত্ত অবাক হয়েছিলাম এই দেখে যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার আমি কোথায় যাব না যাব সেটাও ঠিক করে দিবে?

খুব ভালো মানের একটা লেখাতে এই বাক্যটি ভালো লাগেনি।

রাষ্ট্র কেবল আপনি কোথায় যেতে পারবেন - না পারবেন এ'সবই না, আরো অনেক কিছুই ঠিক করে দেয়। এমনকি সেটা না মানলে আপনাকে শাস্তি দেবার অধিকারও রাখে। কারণ, রাষ্ট্র হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠান। আর প্রতিষ্ঠান মানেই হচ্ছে কিছু অবধারিত বিধি-বিধান। এই জন্য আপনাকে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হয়েছে। নয়তো আপনি তো বলতে পারতেন, আমার যেখানে খুশি যাবো তার জন্য পাসপোর্ট-ভিসা লাগবে কেন?

একজন মানুষ হিসেবে আপনার পূর্ণ অধিকার আছে যে কোন প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্বকে অস্বীকার করার। বিশেষ কোন রাষ্ট্রের কর্তৃত্বকে অস্বীকার করতে চাইলে সে রাষ্ট্র বরং ত্যাগ করাই ভালো। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে সেক্ষেত্রে অন্য কোন রাষ্ট্রের কর্তৃত্বকে স্বীকার করে নিতে হবে। কোন রাষ্ট্রের কর্তৃত্বের আওতায় পড়ে না, বসবাসযোগ্য এমন কোন ভূখণ্ড মনে হয় পৃথিবীতে অবশিষ্ট নেই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

পাণ্ডব'দা,
প্রথমেই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য এবং আপনার সুচিন্তিত মতামতের জন্য।
আপনার আমাকে ভুল ধরিয়ে দেয়াটাকে আমি সাদরে গ্রহন করছি এবং আমি এও স্বীকার করছি যে বাক্যটিকে আমার অন্যভাবে লেখা উচিৎ ছিল।

রাষ্ট্র কেবল আপনি কোথায় যেতে পারবেন - না পারবেন এ'সবই না, আরো অনেক কিছুই ঠিক করে দেয়। এমনকি সেটা না মানলে আপনাকে শাস্তি দেবার অধিকারও রাখে। কারণ, রাষ্ট্র হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠান।

১০০% সহমত।

কিন্তু এও মানি, যেহেতু সে একটি রাষ্ট্র তথা প্রতিষ্ঠান, সেহেতু সেও কোন ভুল ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। সে ভুল করে, করেছে এবং করবে; এবং সচেতন নাগরিক তার প্রতিবাদ ও করবে। আমরা সবাই এখনও সেই প্রক্রিয়াতেই রয়ে গেছি। তাই সত্য/ উচিৎ কথা বলেন বলে অনেককে দেশত্যাগী হতে হয়, ব্লগগুলোর উপর কড়া নজরদারী রাখা হয়।

মানুষ হিসেবে অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্ব মেনে নেয়ার আগে নিজের প্রতিষ্ঠানের ভুল ত্রুটিগুলো সারাতেই বোধ করি কিছু মানুষ কলম ধরেন, নিজের শোবার ঘরে খুন হন।

এই জন্য আপনাকে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হয়েছে। নয়তো আপনি তো বলতে পারতেন, আমার যেখানে খুশি যাবো তার জন্য পাসপোর্ট-ভিসা লাগবে কেন?

আমি ইসরায়েল ছাড়া আর কোন দেশে কি পাসপোর্ট ভিসা ছাড়া যেতে পারছি? পারছি না।
আমার বক্তব্যের মুল ভাবার্থ ছিল, আমি বা আমরা সব দেশে যাওয়ার অধিকার রাখি (অবশ্যই ভিসা পাবার পরে), তাহলে ইসরায়েল নয় কেন? আমি সেই রাষ্ট্রে ঢুকতে পারব কিনা, আমার উপস্থিতি তাদের জন্য ক্ষতিকর কিনা তা যাচাই করা হোক। আমি তো বাধা দিচ্ছি না তাতে।
এমনকি পাকিস্তানে পর্যন্ত যেতে পারব, তবু ইসরায়েলে নয়!
আজকে যদি রাষ্ট্র ঘোষণা করে, আপনারা কাল থেকে আমেরিকা যেতে পারবেন না, তাহলে আমরা কি সেটাও মেনে নেব?

আমার উপরোক্ত বক্তব্যে ভুল থাকাটা স্বাভাবিক। যেহেতু এ বিষয়ে জ্ঞান নেই বললেই চলে, তাই আবেগটাই প্রাধান্য পাচ্ছে।
আমি আবারো আপনাকে তাই অনুরোধ করব, আমার চিন্তায় যদি ভুল থাকে তাহলে তা ধরিয়ে দিন।

আবারো আপনাকে ধন্যবাদ।

---- ঠুটা বাইগা

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

প্রথমেই ধন্যবাদ আমার মন্তব্যটা ঠিকভাবে রিসিভ করার জন্য।

এক কালে বাংলাদেশের পাসপোর্টে লিস্ট দেয়া থাকতো কোন কোন দেশে যাওয়া যাবে। তারপর এক সময় লেখা থাকতো ইসরায়েল, দক্ষিণ আফ্রিকা আর তাইওয়ান ছাড়া দুনিয়ার সব দেশে যাওয়া যাবে। আর এখন লেখা থাকে ইসরায়েল ছাড়া দুনিয়ার সব দেশে যাওয়া যাবে। বুঝতেই পারছেন এই নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারটা স্থায়ী কিছু না। সময়ের সাথে সাথে, সময়ের প্রয়োজনে পালটায়। আগামীকাল বাংলাদেশের সাথে ভারত বা মায়ানমারের সাথে যদি যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে তখন কিন্তু সেখানে যাওয়াও নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। এগুলোর কোনটাই পরম নয়।

আপনি ভারতে যাবার ভিসা পেলেও ভারতের সব রাজ্যে কিন্তু ভ্রমণ করতে পারবেন না। ভারতের অনেক যায়গা আছে যেখানে যেতে হলে আপনাকে ভারত সরকারের বিশেষ বিশেষ দফতর থেকে পূর্বানুমতি নিতে হবে। আবার এমন কিছু জায়গা আছে যেখানে আপনি মোটেই যেতে পারবেন না। অর্থাৎ, ভারত সরকার আপনাকে ভিসা দিল মানে এই নয় যে, পুরো ভারতের যে কোন জায়গায় যেতে পারবেন। ভারতে অবস্থানকালে ভারত সরকারের আইন মেনে চলতে আপনি বাধ্য থাকবেন। এই সত্যটা সব দেশের জন্য প্রযোজ্য।

এককালে যুক্তরাজ্য বা হঙকঙ যেতে আমাদের আগেভাগে কোন ভিসা নিতে হতো না। পোর্ট এন্ট্রি ভিসা পাওয়া যেত। আর এখন যুক্তরাজ্য যেতে হলে ৪৮ পৃষ্ঠার ভিসা আবেদন ফরম পূরণ করে তার সাথে এক বস্তা দলিল-দস্তাবেজ দাখিল করতে হয়, হঙকঙ যেতে হলে যে লম্বা আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় তা লিখতেও আমার কষ্ট হচ্ছে। আগামীতে ব্যবস্থাগুলো এমন নাও থাকতে পারে। আবার কিছু কিছু দেশ যেমন ঠিক করে নেয় এক বছরে কতোজন বাংলাদেশীকে ভিসা দেবে, অমনটাও সবাই করতে পারে। পরিবেশ-পরিস্থিতিই ঠিক করে দেয় কখন কী করতে হবে।

অল্প কিছু মুসলিমপ্রধান দেশের নাগরিকেরা ইসরায়েল ভ্রমণ করতে পারেন। এটা সম্ভব হয়েছে ঐ দুই দেশের যৌথ উদ্যোগের ফলে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ ধৈর্যসহকারে বিষয়টির বিশদ ব্যাখ্যার জন্য। পরবর্তীতে আরও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, অন্তত ব্যক্তিগত আবেগ প্রকাশের দিক থেকে হলেও।

--- ঠুটা বাইগা

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

চলুক, পড়ছি।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

--- ঠুটা বাইগা

কড়িকাঠুরে এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি

--- ঠুটা বাইগা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।