আমার দেখা ব্রাজিলাংশ - ৩

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১০/০৯/২০১২ - ১:২৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পরদিন সকালবেলা আমরা সবাই নয়টা বাজে বের হওয়ার জন্য প্রস্তুত কিন্তু বের হতে পারছি না বাসা থেকে। এতদিন হোটেলে থাকার কারণে কিছু বুঝা যায় নাই, কিন্তু এখন সবাই হা করে ডিয়েগোর কাণ্ড দেখছে। সে সকাল আটটা থেকে “আই অ্যাম রেডি, আই অ্যাম রেডিইইইইইইই” করে চিল্লাছে, কিন্তু তার সাজ শেষ হচ্ছে না! কি এতো সে সাজে একটু দেখার জন্য উঁকি মারতে গিয়ে আমাদের মুখের উপর দড়াম করে দরজা লাগিয়ে দিল। দশটা পর্যন্ত তার ধানাই-পানাই সহ্য করে আমরা ঠিক করলাম, এ যাত্রা তাকে ছাড়াই রওনা দিতে হবে। যে কথা সেই কাজ! “আমরা যাচ্ছিগা, তুমি সাজ” ঘোষণা দিয়ে আমরা তিনজনে বের হয়ে গেলাম।
মুল রাস্তায় নামার পর পিছন ফিরে দেখি সে দৌড়ে দৌড়ে আমাদের পিছন পিছন আসছে। মুখে একগাল হাসি।

নিতেরয় থেকে রিওতে যাবার জন্য অনেকগুলো উপায় আছে – আপনি ইচ্ছে করলে বাস, ট্যাক্সি বা স্টিমারে করে যেতে পারেন; নির্ভর করবে মুলত সময় এবং সাধ্যের উপর। সাধ্য যাই থাকুক না কেন স্টিমারে করে যাওয়াটাই সার্বিকভাবে শ্রেয়। প্রায় বিশ মিনিট হাঁটার পর আমরা স্টিমার স্টেশনে এসে পৌঁছালাম। স্টেশনে এসে মানুষের ভিড় দেখে আমার বুড়িগঙ্গা লঞ্চঘাটের কথা মনে হয়ে গেল, এত্ত মানুষ! তাও আবার অধিকাংশ স্যুটেড-বুটেড। এ সময় এতো মানুষ কই যায়? জিজ্ঞাসা করতে আরিওম বলল, রিওতে অতিরিক্ত যানজটের কারণে আধা ঘণ্টা বিরতি দিয়ে দিয়ে অফিসের সময় শুরু হয়। আর সবাই চাকরি করে রিওতে কিন্তু খরচের ধাক্কা সামলাতে থাকতে চায় নিতেরয়ে, সেটাও নাকি আরেকটা কারণ।
সাকুল্যে ১৫ কি ২০ মিনিট লাগল আমাদের রিওতে পৌঁছতে। স্টিমার থেকে অদূরের রিও।

রিও শব্দের অর্থ হচ্ছে নদী এবং জেনিরো’র অর্থ হচ্ছে ইংরেজি মাস জানুয়ারি। অর্থাৎ রিও ডি জেনিরো’র অর্থ হচ্ছে জানুয়ারির নদী। এই শহরের ইতিহাস বিশাল, রক্তাক্ত এবং কষ্টদায়ক। এতো স্বল্প কলেবরে তা বলাও সম্ভব নয়।
আমাদের প্রথন গন্তব্য ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার এর মূর্তি, নব্য ঘোষিত সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে একটি।
বাসে করে যেতে চাইলে পাক্কা এক ঘণ্টা লাগবে বলে ট্যাক্সি নেয়া হল। ট্যাক্সিতে বসে দু’ পাশের সারি সারি গারির দৃশ্য দেখে আমার আবার দেশের যানজটের কথা মনে হয়ে গেল।

যানজট পেরিয়ে কিছুটা পথ যেতেই ডানদিকে পড়ল কার্নিভাল স্টেডিয়াম। ব্রাজিলের কার্নিভাল বা আরও সুনির্দিষ্ট করে বলতে চাইলে রিও ডি জেনিরোর কার্নিভাল হচ্ছে জগতবিখ্যাত।

আজ থেকে দুই বছর আগেও আমি জানতাম না কার্নিভাল ক্যাথোলিক খ্রিস্টানদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। ইস্টারের পূর্বের ৪০ দিন সকল ধরনের ডিম, মাংস, দুগ্ধজাত খাবার এবং সবজি পরিত্যাগযুক্ত খাবার খেয়ে রোজা রাখার পর ৪০ তম দিনটি উদযাপন করা হয় কার্নিভাল হিসেবে। ল্যাটিন শব্দ কার্নিভালের (Carnival = Carne --- মাংস + Vale --- বিদায় ) অর্থ হচ্ছে মাংসের বিদায়! তবে বিশ্বজুড়ে মানুষ একে এখন আর কোন ধর্মীয় আচার হিসেবে নয় বরং সার্বজনীন উৎসব হিসেবে ভাবতেই বেশি ভালবাসে। কিন্তু মার্সেলো বা জুলিয়ানাকে (মার্সেলোর বান্ধবী) প্রায়ই ওদের (ব্রাজিলিয়ান) কার্নিভাল নিয়ে অভিযোগ করতে শুনি। নগ্নতা এবং সেই ধারাবাহিকতায় যৌনতা এখন ব্রাজিলিয়ান কার্নিভালের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর সাথে সাম্প্রতিক সংযোজন হচ্ছে গ্লোবেলেযা নামক এক বিশেষ সাম্বা নৃত্যের যেখানে নর্তকী কোন পোশাক না পরে তার সর্বাঙ্গ শুধু রঙ-বেরঙের অংকনের (color painting) মাধ্যমে ঢেকে রাখে। প্রথম প্রথম এটি একজন বা দুইজন নর্তকীতে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন যেকেউ ব্যাক্তিগতভাবেও এটি করতে পারে এবং দিনদিন আশঙ্কাজনকভাবে এই হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর সাধারণ বাকি ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর ন্যায় যৌনতা ব্রাজিলে কোন ‘টাবু’ তো নয়ই বরঞ্চ বেশ উন্মুক্ত, তবুও এই বিষয়টির নায্যতা নিয়ে সুচিন্তিত সমাজবাদীরা আর ধর্মযাজকরা এর ভবিষ্যৎ সামাজিক প্রভাব নিয়ে যারপরনাই চিন্তিত।

অবশেষে আমরা এসে পড়লাম আমাদের গন্তব্যের পাদদেশে। সাদা শার্ট- কালো প্যান্ট পরিহিত সবাই অনুমোদিত বিশেষ ট্যাক্সিচালক, এদের মাধ্যমেই ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার মূর্তির প্রবেশ দ্বার পর্যন্ত যাওয়া যাবে। ভাড়া নির্ধারিত। দরদামের কোন ঝামেলা নাই। তাই প্রথমে যে ব্যাটা এগিয়ে আসল তারটাতেই চড়ে বসলাম।

এবারের ট্যাক্সিচালক বেশ দুনিয়াদারীর খবর রাখে, আমাকে দেখেই রায় দিয়ে দিল আমি ভারত থেকে এসেছি। যখন বিনীতভাবে জানালাম, না ভাই আমি ভারত থেকে নই, তখন আমাকে চরম অবাক করে দিয়ে ঠিকঠিক আমার দেশটার নাম বলে ফেলল। বিদেশ বিভূঁইয়ে সম্পূর্ণ অজানা অচেনা কারো মুখে অপ্রত্যাশিতভাবে নিজের দেশের নাম শুনলে যে কি অদ্ভুত আনন্দানুভুতি হয়, সে আর বলে বোঝানোর মত নয়!

গাড়ি এগিয়ে চলছে উঁচুনীচু পাহাড়ি রাস্তা ধরে, রাস্তার দু’ধারে বন। এই বনের নাম তিজুকা। নিতেরয়ের মত তিজুকাও একটি তুপি শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে জলাভুমি। প্রায় ৩২ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত তিজুকা পৃথিবীর সর্ববৃহৎ শহুরে বন (Urban Forest)। এই বনে শতশত প্রজাতির গাছপালা ও প্রানীদের বসবাস কিন্তু সরকার কর্তৃক জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা দেয়া সত্ত্বেও সময়ের সাথে সাথে প্রচুর প্রাণীকুল এখানে বিপন্ন হয়ে পরছে। কেন?

আসুন আমরা এখন থেকে একশত বছর পিছনে ফিরে তাকাই, তাকালে দেখতে পাওয়া যায় এস্থানে ছিল এক সুবৃহৎ অরণ্য। নানা প্রজাতির চিরহরিৎ গাছপালা, তাকে অবলম্বন করে বিভিন্ন প্রানীকুলের বসবাস। কিন্তু অর্থলোভী কফি ব্যবসায়ীরা পুরো অরণ্যের সব গাছ কেটে ফেলে কফি খামার করার জন্য। এবং বেশ কয়েক দশক ধরে কফির চাষ ও চলতে থাকে। এত্ত বড় সর্বনাশা ঘটনাটি উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে এসে প্রথম একজন সরকারী মেজরের চোখে পড়ে। তাঁর নাম মেজর ম্যানুয়েল গোমেজ আর্চার। তাঁরই উদ্যোগে কফির খামার সরিয়ে নতুন করে গাছপালা রোপণ করা হয়, সৃষ্টি হয় পৃথিবীর সর্ববৃহৎ শহুরে বনের। এ বিশাল কর্মযজ্ঞে সেসময় যারা সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিল, বিশেষত কায়িক পরিশ্রমের দিক থেকে, তারা পরবর্তীতে এখানেই রয়ে যায় এবং মাতা মাচাদো(এই শব্দটির অর্থ খুঁজে বের করতে পারিনি)নামের একটি ছোট শহর গড়ে তোলে। এরপর সেই শহর থেকে নট নড়ন, নট চড়ন। আর এরাই এখন এ বনের সমূহ ক্ষতি করে, নির্বিচারে শিকার করে পশু-পাখি; প্রচুর প্রজাতির বিপন্নতার যাত্রাপথের প্রত্যক্ষ কারণ।

গাড়ি এখানে এসে একটু বিরতি নিল, কারণ এখান থেকে খুব সুন্দর দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। ট্যাক্সিচালকের ফ্রি উপদেশ, আমাদের ছবি তোলা উচিৎ। আদেশ মান্য করে আমরাও নেমে পড়লাম হুরহার।

এখান থেকে কি সুন্দর দেখা যায় “চিনির ডেলা”! তার নীচে অতলান্তিকের নীল পানিতে যেন ভাসছে সাদা সাদা চিনির গুঁড়ো।

আরেকটু জুম করে দেখি ওগুলো সব এদেশীয় পালতোলা নৌকা।

ছবি তুলে ফিরে দেখি এই কাণ্ড। এই রমনীত্রয়ের ছবি তুলে দেবার জন্যে আল্লাহর দুনিয়াতে কেউ নাই। তাই যথাসময়ে যথাস্থানে ডিয়েগোর সদয় আবির্ভাব!

বনের এ প্রান্ত থেকে মূর্তিটা দেখা যায় না, তাই আরেক প্রান্তে গমন। সবার সামনে মার্সেলো, তারপর ডিয়েগো আর সবশেষের জন আরিওম।

দেখা মিলল পাহাড়ের চুড়ায় সুবিশাল বাহুবিস্তৃত ক্রাইস্টের।

এখান থেকে সব দেখে ফিরে এলাম আবার গাড়িতে, এবার যেতে হবে ঐ পাহাড়ের চুড়ায়, যেখানে ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার এর অবস্থান। পাহাড়ের নাম কর্কভাদো (Corcovado)।

কর্কভাদো (Corcovado) একটি পর্তুগিজ শব্দ, যার অর্থ কুঁজো। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এই পাহাড়ের চুড়ার উচ্চতা ৭১০ মিটার। দুইভাবে ওখানে যাওয়া যায় – হয় খুব সরু একটা রাস্তা ধরে বিশেষধরনের গাড়িতে করে অথবা ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য কর্কভাদো রেলপথে করে। দুটোর টিকেট একই কাউন্টারে পাওয়া যায়। আমাদের ট্যাক্সি সেই কাউন্টারের সামনে থেকে বিদায় বিদায় নিয়ে নিল, কিন্তু ঠিক দেড় ঘণ্টা পরে আবার আমাদেরকে নিতে ফিরে আসবে। এখান থেকে আমি রেলপথেই যেতে চাচ্ছিলাম কিন্তু এটা আবার এক ঘণ্টা পরপর যায়, যদিও কাগজে কলমে লেখা আছে আধা ঘণ্টা পরপর। আমরা যাবার ৫ মিনিট আগে একটা ট্রেন চলে গেছে। অগত্যা বিশেষ গাড়িতেই যেতে হল।

নেমেই প্রথমে দেখলাম এই স্যুভনিরের দোকানটা। আমি আগ বাড়াতেই তিনজন মিলে হেইহেই করতে লাগল। কি হল কি? এখানে নাকি গলা কেটে রেখে দিবে। হাহ... ডোমকে চেনাচ্ছে শ্মশানঘাট! গলা কিকরে কাটতে হয় সেটা বুঝতে হলে এদেরকে বঙ্গবাজার বা গুলিস্তান যাওয়া লাগবে।
এক চাইনিজ বন্ধু অবশ্য একবার তার দেশের দরদামের যে বিবরন দিয়েছিল, তা শুনে মনে হয়েছিল ওরা গলা কাটে না, বরং পুরা শরীর ফালাফালা করে ফেলে।

অবশেষে এসে পৌঁছালাম ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার এর পাদদেশে! এই মূর্তির উচ্চতা ৩৯.৬ মিটার (বাংলাদেশের একটা ১২ তালা দালানের সমতুল্য) এবং দু’বাহুর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত প্রশস্ততা ৩০ মিটার। ওজন ৬৩৫ টন।

নীচের ছবির ডান দিকের মূর্তিটি হচ্ছে ব্রাজিলিয়ান প্রকৌশলী হিতর দা সিলভা কস্তা’র (Heitor da Silva Costa), যিনি এই মূর্তির প্রকৌশলগত ডিজাইন করেছেন। আর বাম দিকের মূর্তিটি হচ্ছে কার্ডিনাল সেবাস্তিয়াও লেমে দা সিলভেইরা সিন্ত্রা’র (Sebastião Leme da Silveira Cintra)। ইনি ছিলেন এখানকার ক্যাথোলিক গির্জার ধর্মযাজক। দু'জনকে সালাম ঠুকে এগিয়ে গেলাম সামনে।

বিশ্বধাতার যজ্ঞশালা, আত্মহোমের বহ্নিজ্বালা
জীবন যেন দিই আহুতি মুক্তি আশে, এই আকাশে...........

এই প্রথম নিজের ক্যামেরায় রিও-নিতেরয় সেতুর পূর্ণ ছবি!

এই লেগুনটির নাম লেগোয়া রদ্রিগো দে ফ্রেইতাস। ২০১৬ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক এবং প্যারাঅলিম্পিকের বেশ কিছু ইভেন্ট এখানে অনুষ্ঠিত হবে। সত্যি কথা বলতে এখান থেকে মূর্তিটা দেখে যত না রোমাঞ্চিত হলাম, তার চেয়ে বেশি রোমাঞ্চিত হলাম চারপাশের দৃশ্য দেখে!

আমি ছবি তুলতে ব্যস্ত ছিলাম, তাই খেয়াল করি নাই এই তিন জন কি করে। এসে দেখি ধুন্ধুমার অবস্থা। আরিওম মেয়ে মহলে রীতিমত শোরগোল ফেলে দিসে। মেয়েরা ডেকে ডেকে ওর সাথে ছবি তুলে যাচ্ছে ! আর ডিয়েগোর চরম মেজাজ খারাপ, মেকাপ কোন কাজে আসছে না!

এই পোলাপানদেরকে আরও কিছুক্ষণ ছবি তোলার সুযোগ দিয়ে আমরা আবার বের হয়ে পড়লাম। এবারের গন্তব্য কোপাকাবানা সমুদ্রসৈকত।

ব্রাজিলের সমুদ্রসৈকতে যাবেন আর কেউ ফুটবল খেলবে না, এই চিন্তা অকল্পনীয়। আর যখন সৈকতটা কোপাকাবানার তখন আরও বেশি, কারণ ১৯৯৫ সাল থেকে ফিফা আয়োজিত “সৈকত ফুটবল বিশ্বকাপ” এর (FIFA Beach Soccer World Cup) অধিকাংশ খেলা এখানেই অনুষ্ঠিত হয়।

রিও’র বিখ্যাত কোপাকাবানা প্যালেস। থাকে নাই কোন মহারথী এই প্যালেসে? মাইকেল জ্যাকসন, ম্যাডোনা, ওয়াল্ট ডিজনি, রোলিং স্টোন, প্রিন্সেস ডায়ানা, মেরিলিন মনরো, আরও অনেকে। আরিওম সংগীতের ছাত্র, মায় আবার একটা ব্যান্ডের দল ও আছে নাকি। ঘোষণা দিয়ে দিল, আজ থেকে ৫-১০ বছর পর সেও এই হোটেলেই উঠবে। বাচ্চা মানুষ... নিজের শহরে কেন হোটেলে উঠবে আর জিজ্ঞাসা করলাম না।

ব্রাজিলের যেকোনো সৈকতে লাগোয়া ফুটপাথগুলোর পাথরের চমৎকার পর্তুগিজ নকশাশৈলী আপনার নজর কাড়বেই কাড়বে। কিন্তু কাজটি অসম্ভব কষ্টসাধ্য হওয়ায় এবং সে অনুপাতে মজুরি না থাকায় কেউ এখন এই পেশায় আসতে চায় না, অনেকটা আমাদের দেশের শাঁখাশিল্পের মত।

বহু ঘোরাঘুরি হয়েছে, এখন এরা আমাকে সেই বিশেষ জিনিষ খাওয়াতে নিয়ে যাবে, যা ল্যাটিন আমেরিকার কিছু দেশ ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যায় না। এর নাম হচ্ছে আসাই। আসাই একটি বিশেষ প্রজাতির পাম। এর পুষ্টিগুণ ভয়ংকর রকম বেশি, অনেকে দুপুরের খাবার হিসেবে এই পামের এক গ্লাস শরবত খেলেই নাকি হয়ে যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম আসাই পাউডারে ৫০০ ক্যালোরির উপরে থাকে। এতো অতিরিক্ত ক্যালোরি এড়িয়ে চলার জন্য এর সাথে কলা বা কমলা বা অন্য কোন ফলের রস স্বাদমত বরফ কুঁচির সাথে মিশিয়ে পরিবেশন করতে হয়। ও বলা হয়নি, আসাই ও একটি তুপি শব্দ এবং এর অর্থ হচ্ছে “যে ফল কাঁদে”। তুপি ভাষাটাকে আমি ভালবেসে ফেলেছি, এতো সুন্দর এদের নামগুলো!
১৫ মিনিট অপেক্ষার পর আসল সেই মহার্ঘ্য।

প্রথম এক চামচ মুখে দেয়ার পর বুঝলাম, আমার স্বাদগ্রন্থিগুলো বহুদিন পর নাড়াচাড়া শুরু করেছে, এদের জন্য এ এক নতুন অভিজ্ঞতা!
খেতে খুব বেশি আহামরি কিছু লাগল না, তবে নতুন সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু সমস্যা হল অন্যখানে। এ জিনিষ মারাত্মক ঠাণ্ডা, অর্ধেক মনে হয় শুধু বরফের কুঁচিই দেয়া ...... এদের তিনজনেরই গ্লাসের অর্ধেক শেষ, আর আমি তিন-চার চামচ খেয়ে চুপচাপ বসে আছি। ঠাণ্ডায় আমার নাক, কান শিরশির করা শুরু হল, বুক ও কিঞ্চিত ব্যাথা ব্যাথা করতে লাগল। কিন্তু এদেরকে এটা বলা যাবে না। আমি এক গাল হাসি দিয়ে আবার দুই চামচ খেলাম, কিছুক্ষণ পর নাক দিয়ে পানি পরা শুরু হল। কিভাবে এ বস্তু শেষ করব আমি? প্রায় ৬০০ মিলি!
আর থাকতে না পেরে বলে ফেললাম, আমি আর খাব না। বাকিটা তোমরা খাও। এটা খুবই ঠাণ্ডা।
যা ভয় পাচ্ছিলাম এরপর তাই হল।
তিনজন আমার দিকে ঝাড়া কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে সমস্বরে চিৎকার করে বলে উঠল

“মিমিমি!”

(চলবে)

---- ঠুটা বাইগা

আমার দেখা ব্রাজিলাংশ - ১
আমার দেখা ব্রাজিলাংশ - ২
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------
১। আমি গরীব মানুষ। আমার ক্যামেরা ডিজিটাল, হাত অ্যানালগ। তাই ছবির গুণগত বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
কখন পয়সা হলে ভাল একটা ক্যামেরা কিনে ফেলব। তবে হাতের ব্যাপারে কথা দিতে পারছি না।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রতিবার ব্রাজিলের মেয়েদের কিছু 'ইয়ে' মার্কা ছবি দেখার জন্য ঢুকি আর আপনে হতাশ করেন। এইবার একটা দিলেন তাও ছেলেদের। আমার মূল্যবান সময় ফেরত দেন খাইছে

যাই হোক, ভালোই চলছে, আরও আসুক চলুক

হিল্লোল

অতিথি লেখক এর ছবি

আইচ্ছা........ এইসব দেখার উদ্দ্যেশে আসা হয় বুঝি খাইছে
আমি আপনাকে আরও কত বালু চেলে ভাবলুম

---- ঠুটা বাইগা

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

বেশ ভাল ছবি তুলেন মশাই। চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- রাজা' ভাই হাসি
আসলে দিনটা খুব ভাল ছিল

--- ঠুটা বাইগা

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

দারুণ বর্ণনা। মনেহয় সঙ্গে সঙ্গে ঘুরছি। খানিক চটুল অংশ ঘোরাঘুরিতে বেশি আনন্দ দিচ্ছে!
চলুক। পরের পর্বের অপেক্ষায় আছি।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি
পরের পর্ব মনে হয় একটু দেরি হয়ে যাবে, তবু সাথে থাকবেন।

--- ঠুটা বাইগা

স্যাম এর ছবি

এবারেরটা বেশী ভাল লাগল।চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

ব্যানারজী, অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য। আপনার ব্যানারের প্রসংশা করা ছেড়ে দিব চিন্তা করতেসি চিন্তিত
ভাষা নাই আমার অভিধানে

--- ঠুটা বাইগা

কড়িকাঠুরে এর ছবি

চলছে গাড়ি- চলুক...

দারুণ লিখছেন...

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- ভাইয়া।
চেষ্টা করছি লেখার।

--- ঠুটা বাইগা

চরম উদাস এর ছবি

রিওর সমুদ্র সৈকতের ছবিতে কয়েকটা আন্ডু পরা বালকের ছবি দিলেন খালি? রিওতে কি বালিকা নাই নাকি আপনের নজর খারাপ চিন্তিত
আপনার এই সিরিজ এর তিনটাই পড়লাম, দারুণ চলুক

কালো কাক এর ছবি

ঠুটা বাইগা আন্ডু পরা বালকের ছবিই তো দিবে খাইছে

অতিথি লেখক এর ছবি

লইজ্জা লাগে ঠিক্কতা
খালি আপ্নেই বুঝলেন

--- ঠুটা বাইগা

অতিথি লেখক এর ছবি

বালিকা আমার নজরে আসে না , আমি বালকে বালু পাই দেঁতো হাসি
আমি সুস্থ মানুষ, আমার নজর তাই বালুকাবেলায় বালু বালকে দেঁতো হাসি

--- ঠুটা বাইগা

ধুসর জলছবি এর ছবি

দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

ঠুটা ভাই,
হ চরম ভাইয়ের মত আমিও চরম বিরক্ত হইতেছি আপনার এহেন আচরণে।
ব্রা--------জিল দেখাবেন আর খালি পোলা গো ছবি তুলবেন এইটা তো ঠিক না।

আপনি না হয় দুধ খেলেন , আমদের কপালে একটু ঘোল তো জুটুক । দেঁতো হাসি

নির্ঝরা শ্রাবণ

অতিথি লেখক এর ছবি

না, দুধ ঘোল সব আমার
মুহা হা হা দেঁতো হাসি

---- ঠুটা বাইগা

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

খুবই সুন্দর সব ছবি আর বর্ণনও দারুণ। চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে পড়ার জন্য। হাসি

--- ঠুটা বাইগা

তারেক অণু এর ছবি

ছবি গুলো কিন্তু বেশ, ভাগ্য ভাল আপনার, ঝকঝকে দিন পেলেন! আমরা ওঠার ১৫ মিনিট পরেই মেঘ এসে ঢেকে দিয়েছিল সব! সেই বনে দুটো বানরের দেখা পেয়েছিলাম।

অতিথি লেখক এর ছবি

হ্যাঁ, ভাইয়া। ভাগ্য তো আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে ভালই। অথচ কিন্তু শীতকাল চলছে দেঁতো হাসি
সেই বনে আমি কোন বানর দেখিনি, তবে পড়ে দেখেছি, অন্য বনে।

--- ঠুটা বাইগা

সত্যপীর এর ছবি

হাততালি

খুব ভালৈতেছে।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

লইজ্জা লাগে
অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

--- ঠুটা বাইগা

কালো কাক এর ছবি

আপনি খুব ভালো লিখেন চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ হাসি
তবে এতো এতো ভাল লেখার ভিড়ে আমার লেখা অন্তত আমার কাছে খুব আহামরি কিছু মনে হয় না।

--- ঠুটা বাইগা

সুমাদ্রী এর ছবি

দারুণ লেখা। সুন্দর সব ছবি। কবে যে যাব? আদৌ যেতে পারি কিনা কে জানে!! ভাল থাকবেন।

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। সময় এবং সুযোগ হলে অবশ্যই একবার ঘুরে আসবেন।
আপনিও অনেক ভাল থাকবেন।

--- ঠুটা বাইগা

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

চলুক


_____________________
Give Her Freedom!

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- হাসি

--- ঠুটা বাইগা

ধুসর জলছবি এর ছবি

এই লেখা খুব পছন্দ হইছে। সচলে তারেক অণু সারাজীবন ধরে শুধু সুন্দরীদের ছবি দিয়ে যাচ্ছিল, রূপবানদের এমন অবহেলা দেখে বড় খারাপ লেগেছে। এবার ঠিক আছে। দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি চলুক ঠুটা বাইগা রক্স । হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

সেই তো! না পারি কইতে না পারি সইতে........... নারী হইয়া নারীর জ্বালা না বুঝিলে কে বুঝিবে এই সংসারে? দেঁতো হাসি
... অনেক ধন্যবাদ আপু লেখা পড়ার জন্য। ভাল থাকবেন

---- ঠুটা বাইগা

অতিথি লেখক এর ছবি

লুল ফেলতে ফেলতে পোস্টে ঢুকলাম। নির্ঘাৎ ব্রাজিলীয় হুরপরীর দেখা মিলবে। কিয়ের কি! মন খারাপ শুধু কান্তিমান প্রুষদের ছবি দিলে চলবে? রেগে টং ...জনগনের কথা ভাবতে হবে।

লেখা চমৎকার হয়েছে। প্রুষ-ওয়ালা কয়টা বাদে সব ছবিই দারুন। প্রুষ দেখতারিনা, আমি প্রুষ বিদ্বেষী।

--
খাইশুই

অতিথি লেখক এর ছবি

দেঁতো হাসি

বাংলার পোষ্টাকাশে আজ লুলের ঘনঘটা......... চিন্তিত
আমার তো ঐ ছবিখানই সবচেয়ে প্রিউ, আর নারীদের ছবি দিলে এই লেখা মডারেশনের গেট পার হয়ে আর ছাপা হইত না, বুঝলেন ভাই চোখ টিপি

--- ঠুটা বাইগা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।