ঘুরে আসুন সাগরকন্যা কুয়াকাটা থেকে

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ০১/১২/২০১২ - ৫:৪৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রথমেই বলি কুয়াকাটায় আমাদের যাওয়াটা অনেকটা হুট করে। অনেক দিন দূরে কোথাও যাওয়া হচ্ছিলনা। তাই একদিন হুট করে বন্ধু রাকিব আর আমি বেড়িয়ে পড়ি। আগেই শুনেছিলাম কুয়াকাটায় দেখার মত কিছু নেই, এর থেকে কক্সবাজার অনেক সুন্দর। কিন্তু গিয়ে আমার ধারনা পাল্টে গেছে। এখানে বলে রাখি কক্সবাজার আর কুয়াকাটার সৌন্দর্য সম্পূর্ন ভিন্ন রকমের। রাকিব নির্ধারিত দিনে চট্টগ্রাম থেকে আর আমি ঢাকা থেকে পূর্ব নির্ধারিত স্থানে মিলিত হয়ে সোজা সদরঘাট। আগেই ঠিক করা ছিল আমরা লঞ্চে বরিশাল সেখান থেকে কুয়াকাটা যাব।
বরিশালে থেকে খুব সকালে কুয়াকাটা যাবার প্রথম বাসের ট্রিপ ধরার জন্য ভোর ছয়টায় বরিশাল রূপাতলী বাস টার্মিনালে গেলাম। আগের দিন রাতে খোজ নিয়েছি বরিশাল থেকে এক ঘন্টা পরপর কুয়াকাটার বাস ছাড়ে। বরিশাল থেকে সোজা কুয়াকাটা। আমরা প্রথম ট্রিপটা ধরলাম সাতটায়।
আগেই শুনেছিলা কুয়াকাটার রাস্তা খুবই খারাপ। তাই একটু ভয়ে ভয়ে ছিলাম। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা হল কুয়াকাটার যাবার রাস্তা খুবই ভাল। শুধু শেষের কয়েক কিমি রাস্তা মুটামুটি হিসেবে চালিয়ে দেয়া যায়। কিন্তু ফেরিতে নদী পার হতে হয় চারটি। তবে আশার কথা হল আমরা তিনটি নদীতে সেতু নির্মান হতে দেখেছি। একটির কাজ অনেক দূর এগিয়েছে।


কুয়াকাটার পথে একটি ফেরি নদী পার হচ্ছে

বরিশাল বিভাগ পুরোটাতে অসংখ্য নদী দিয়ে ঘেরা। তাই নদীপারের জীবন যাত্রা দেখে অবিভূত হতে পারেন। যত কুয়াকাটার দিকে যেতে থাকবেন ততই পাল্টাতে থেকবে আশেপাশের দৃশ্য। দেখা পাবেন সাগরের মাছ ধরার ট্রলার হয়তো সাগর থেকে ফিরছে। এদিকের মানুষের অনেকেরই প্রধান জীবিকা মাছ ধরা।


সাগর থেকে ফিরে আসছে মাছ ধরার ট্রলার

দূরে দেখতে পাবেন ম্যনগ্রোভ বনের সারি। এসব দৃশ্য দেখতে দেখতে কখন যে সময় কেটে যাবে বুঝতেও পারবেন না। আমাদের কুয়াকাটা গিয়ে পৌছাতে সময় লেগেছে ৪ঘন্টা ত্রিশ মিনিট। যার বেশির ভাগ সময় কেটেছে ফেরীর জন্য অপেক্ষা করে।


ইঞ্জিন চালিত নৌকাতে নদী পারাপার

কুয়াকাটায় গিয়ে প্রথম কাজ হবে কোন একটি হোটেলে ওঠা। আমরা উঠেছিলাম পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল এ। যারা একটু নিরিবিলি থাকতে পছন্দ করেন তাদের জন্য পর্যটন করপোরেশনের হোটেল অনেক ভাল লাগবে। চারদিকে নারিকেল গাছে সারি। সামনে বিশাল বাগান। পর্যটন করপোরেশনের হোটেলে একটু বাড়তি নিরাপত্তা দেয়। তাছাড়াও আছে অসংখ্য হোটেল। তার যে কোন একটিতে উঠতে পারেন।


আমরা এই হোটেলেই উঠেছিলাম

দুপুরে খাবার পর বেড়িয়ে পড়ি সৈকত দেখতে। অনেক শান্ত নিরিবিলি একটি সৈকত। হেটে হেটে বহুদূর পর্যন্ত যাওয়া যায়। পূর্ব দিকে কয়েক কিমি গেলে দেখা মিলবে ঝাউ গাছের বাগান। মাঝে মাঝে মাথা উচু করে আছে নারিকেল গাছ। ছোট ছোট কাঁকড়া মাটি খুড়ে তৈরী করছে সুন্দর সুন্দর নকশা।


নিরিবিলি কুয়াকাটা সি বিচ

তাছাড়া ভাড়াতে মটরসাইকেল পাওয়া যায়। মটরসাইকেল ভাড়ার নানা অফার পাবেন তাদের কাছ থেকে। দেখতে পাবেন সাগর পারের মানুষের মাছ ধরা। কেউবা ধরছে চিংড়ির পোনা। বিশাল সৈকতে রাখা আছে সারি সারি নৌকা। যেগুলো জেলেরা মাছ ধরার কাজে ব্যবহার করেন।


সাগর তীরে সারিবদ্ধ ভাবে রাখা জেলেদের নৌকা

জেলেদের সাথে উড়ে বেড়ায় গাংচিলের ঝাঁক। নিশ্চিন্তে হেঁটে বেড়ায় সি বিচে। এখানে তাদের কেউ উৎপাত করেনা। দেখা পাবেন গাংচিলের ঝাঁক মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত।


একঝাক গাংচিল

বিশালতার মাঝে হারিয়ে যেতে পারেন। বিশাল আকাশ আর বিশাল সমূদ্র। হারিয়ে যান বিশালতার মাঝে।

বিশাল নীল আকাশ

কুয়াকাটার বিশেষত্ব হচ্ছে এখান থেকে একই সাথে সূর্য উদয় আর সূর্য অস্ত দেখা যায়। সূর্যাস্ত খুব সহজেই দেখা যায় কিন্তু সূর্যদোয় দেখতে হলে খুব সকালে উঠতে হবে। তা নাহলে এই মুহূর্তটা মিস করতে পারেন।


সূর্যাস্ত, সূর্যটা মেঘে ঢাকা পরে গেছে


এমন একটি ছবি আপনিও তুলতে পারেন। পেছনে জেলেরা মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত।

ঢাকা থেকে বাস অথবা লঞ্চে কুয়াকাটা যেতে পারেন। সায়দাবাদ থেকে সরাসরি কিছু বাস কুয়াকাটায় যায়। লঞ্চে গেলে দুভাবে যেতে পারেন। ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা অথবা ঢাকা থেকে পটুয়াখালী হয়ে কুয়াকাটা। লঞ্চে গেলে বরিশাল হয়ে যাওয়া অনেক সুবিধাজনক। কুয়াকাটার মনুষজন অনেক আন্তরিক। বরিশাল থেকে কুয়াকাটা যাবার বাস ভাড়া ২২০টাকা। বাস গুলো খুব বড় নয়। বরিশাল রূপাতলী বাসস্টান্ড ও লঞ্চঘাট থেকে প্রতি ঘন্টায় বাস ছাড়ে। কুয়াকাটাতে গেলে হাতে কিছু সময় নিয়ে যান। দেখার মত অনেক কিছু আছে সেখানে। তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হল ফাতরার চর। যেটা আসলে সুন্দরবনের একটি অংশ।

E-mail:


মন্তব্য

কাজি মামুন এর ছবি

লেখাটা খুব ভাল লাগল। অনিন্দ্যসুন্দর ছবির সাথে সাথে বাস ভাড়ার মত খুঁটিনাটি বিষয়ও উল্লেখ করতেও ভুলেননি, তাই ভ্রমণ কাহিনীর সাথে একটা যথার্থ ভ্রমণ গাইডও হয়ে উঠেছে আপনার লেখাটি।
কুয়াকাটা যাইনি এখনো, যদিও দেশের অন্য অনেক সমুদ্রসৈকতই দেখা হয়েছে। অনেকের কাছেই শুনি, যাতায়াত-ব্যবস্থা ভাল নয়, বা কেউ কেউ বলেছেন, সূর্যোদয় দেখার সৌভাগ্য খুব কমই মেলে। হয়ত মনের কোণে এই বিষয়গুলো কুয়াকাটার আকর্ষণ কিছুটা কমিয়ে দিয়েছিল। তবে আপনার লেখা পড়ার পর মনে হচ্ছে, খুব শীঘ্র বেরিয়ে পড়তে হবে কুয়াকাটার পথে।

দেখা পাবেন গাঙচিলের ঝাঁক মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত

'দেখতে পাবনে' হবে মনে হয়। তবে ভাল লেগেছে, আপনার বলার ভঙ্গি। আপনি যেন সবাইকে প্রবলভাবে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন বাংলাদেশের এই আকর্ষণীয় জায়গাটি দেখে আসার জন্য। আপনার এই স্বপ্রনোদিত তাগিদ মন ছুঁয়েছে।
শেষটা পড়ে মনে হল, আরও কিছু হয়ত অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। ফাতরার চর নিয়ে লিখবেন তো? অপেক্ষায় রইলাম।

অতিথি লেখক এর ছবি

গেলে ভাল লাগবে এটুকু বলতে পারি। বেড়িয়ে পড়ুন। আসলে বাংলাদেশে অসাধারন সুন্দর সুন্দর যায়গা আছে। আমরা অনেকেই সেগুলো জানি না। আবার প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে সেসব যায়গায় যাওয়া হয়না। আমার লেখার মাধ্যমে যদি একজনও আগ্রহী হয় তাহলে আমি খুশি। ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার ভ্রমন আনন্দের হোক।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

যাক!
তবু কেউ বললো যে, কুয়াকাটা যাবার রাস্তা ভালো। এই কথাটা এখন শোনানো যাবে অনেককেই। দেঁতো হাসি

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

অতিথি লেখক এর ছবি

আগে হয়তো রাস্তা ভাল ছিলনা। কিন্তু আমাদের আগে যারা গিয়েছে তারা বলেছিল রাস্তার কাজ হচ্ছিল। আমরা ভাল রাস্তা পেয়েছি। কিছুদিন পর চারটি ফেরির জায়গায় একটি পার হতে হবে। তখন কুয়াকাটা যাওয়ার সময় আরো কমে যাবে। ধন্যবাদ ।

কীর্তিনাশা এর ছবি

আমার খুব প্রিয় জায়গাগুলোর একটা কুয়াকাটা। অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে একে ঘিরে। আমাদের তিন বন্ধুর প্রথম সাইকেলে দেশ ভ্রমন শুরু হয়েছিল এই ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যাত্রা দিয়ে।

খুব ভালো লাগলো আপনার লেখা ও ছবি। পুরোন স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়ার জন্যও ধন্যবাদ অনেক।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

অতিথি লেখক এর ছবি

সাইকেল ভ্রমন সমন্ধে আমারও খুব আগ্রহ আছে। ভাল সঙ্গির অভাবে সেটা ভাটা পরেগেছে। আপনি খুব ভাগ্যবান। ধন্যবাদ কীর্তিনাশা আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

তানিম এহসান এর ছবি

এই পথ ধরে আমি প্রচুর গিয়েছি গত চারটি বছর! মনে পড়ে গেলো সব স্মৃতি।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি সত্যি আনন্দিত যে আমার লেখা পড়ে আপনার পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে গেছে। আপনার চারটি বছর খুব ভাল কেটেছে বুঝতে পারছি। ধন্যবাদ তানিম এহসান।

অতিথি লেখক এর ছবি

ছবির সাথে লেখা দারুন লাগলো। বরিশাল, পটুয়াখালি, সহ বরগুনার দিকের কয়েকটি চরেও গিয়েছি ঘুরতে নয় ঠিক কাজে। কিন্তু কুয়াকাটা যাওয়া হয়ে ওঠেনি। আকর্ষণটা বেড়ে গেল।

স্বয়ম

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুন ভাল কিছু সময় কাঁটবে আশা রাখি। এই শীতে যেতে পারেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

সূর্যদয় ও সূর্যাস্তের সেই সময় দুটি দারুন। ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। গিয়ে দেখে আসুন না।

কৌস্তুভ এর ছবি

সূর্যাস্তের ছবিটা দারুণ তো!

আশালতা এর ছবি

কুয়াকাটা যাওয়া হয়না কেন যেন কখনই। ছবি দেখে আরেকবার দীর্ঘশ্বাস পড়ল।

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

অতিথি লেখক এর ছবি

দীর্ঘশ্বাস আর দীর্ঘ করতে না দেয়া ভাল। আশাকরি সব সমস্যা কাটিয়ে এই সুন্দর জায়গাটায় ঘুরে আসতে পারবেন।

রংতুলি এর ছবি

চলুক চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি হাসি

মাধুকরী এর ছবি

খারাপ রাস্তা আর নিরাপত্তার অভাবের কথা শুনে অনেক বার যাবার কথা ভেবেও যাওয়া হয়নি।
আপনার লেখায় রাস্তার ব্যাপারটা একটু পরিষ্কার হলেও নিরাপত্তার কথাটা আসেনি। তাই সৈকত ধরে অনেক দূর হেটে যাবার কথা পড়ে একটু ভয় ভয়ও লাগছে। সত্যিই কি জায়গাটা নিরাপদ ?

অতিথি লেখক এর ছবি

নিরাপত্তার কথা আগেই একটু বলেছি। ভাল হোটেলে উঠলে কোন সমস্যা নেই। সৈকতে হেটে বেড়ানোয় কোন ভয় নেই। অবশ্যই সৈকতে একা না যাওয়া ভাল। বিশেষ করে নিরিবিলি জায়গাগুলোতে। আমরা রাত ১১টা পর্যন্ত বিচে ছিলাম। অনেকেই ছিল। এক জায়গায় আবার বাউল গানের আসর বসেছিল। অনেক রাত পর্যন্ত চলেছিল। রাতে বিচে ২-৩জন পুলিশকে টহল দিতে দেখা গেছে। মানুষ গুলো অনেক আন্তরিক। তবুও সাবধানে থাকা ভাল। ধন্যবাদ মাধুকরী।

তারেক অণু এর ছবি

বিশাল নীল আকাশ ছবিটা খুব ভাল লাগল। ঘোরাঘুরি চলুক-

অতিথি লেখক এর ছবি

অনুভাই ঘুরাঘুরি চলছে। এই একটা কাজই তো ভালভাবে পারি।

রু এর ছবি

দারুন! খুব ভালো বর্ণনা দিয়েছেন। ছবিগুলো খুব সুন্দর।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। ছবিগুলোর চেয়ে ছবির জায়গাটা আরো সুন্দর।

অতিথি লেখক এর ছবি

কখনো যাওয়া হয়নি।
যেতে হবে একদিন হটাত করেই।
ছবিগুলো দারুন হয়েছে।
-- ফয়সাল সিকদার

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।