খুঁজে ফেরা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১৬/০১/২০১৩ - ১০:০২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বন্ধু নামক জিনিষটার প্রতি আমার খুব ছোটবেলা থেকে আকর্ষণ। বড় ভাইয়া, আপুদের দেখতাম কত বন্ধু নিয়ে আসত বাসায়।যখন ওরা বেড়াতে যেত কখন কখনো আমিও সঙ্গী হতাম আর ভাবতাম কবে আমারও এমন প্রাণের বন্ধু হবে। রেগুলার স্কুল আমার শুরু হয় মূলত ক্লাস থ্রী তে। ক্লাস ওয়ান এ ২ মাস ক্লাস করার পরপর ই একটা মজার কাহিনী হয়।আমাকে সবসময় আমার বড় ভাইয়া গাইড করত। স্কুলে দিয়ে আসা, নিয়ে আসা,পড়ানো,এমন কী আমার ড্রেস পর্যন্ত ভাইয়া সিলেক্ট করত। ঐদিন বড় ভাইয়া যেতে না পারায় ছোট ভাইয়া আমাকে স্কুলে দিয়ে আসে।আমাদের যেতে একটু দেরি হয় বলে আমাকে আর ক্লাস এ ঢুকতে দেয়নি।আমি আর কি করব,একাই বাড়ীর উদ্দ্যেশে রওনা দিলাম।এত ছোট্ট মেয়েকে একা হাঁটতে দেখে একটা ছেলে এগিয়ে আসে। পরে সে আমাকে বলে চল আমি তোমাকে বাসায় নিয়ে যাই। আমিও খুশি মনে তার সাথে রওনা দেই।ভাগ্যক্রমে ওই সময় আমার আব্বু কাজের মেয়েকে নিয়ে বাজারে ছিলেন।কাজের মেয়েটি আমাকে দেখে আপু আপু বলে চিৎকার করে ওঠে। পরে আব্বু আমাকে নিয়ে বাসায় যায় আর সবাই মিলে ছোট ভাইয়াকে বকা দিয়ে একাকার করে,আমাকে ক্লাস পর্যন্ত না দিয়ে আসার জন্য। তারপর আমি আর স্কুল এ যাইনি। বড়ভাইয়া আমাকে ভালো স্কুল এ ভর্তি করানোর জন্য বাসাতেই পড়াচ্ছিল। পরের বছর আমি খুব ভালো একটা স্কুলে চান্সও পেয়ে যাই।তখন আমার মনে প্রথম যে আশাটা ছিল তা হল এবার আমার অনেকগুলো জানের দোস্ত হবে। কিন্তু সে আশার গুড়ে বালি। আমি যাদের সাথে বসতাম মিশতাম তারা ছিল সম্পূর্ণ আমার উলটা।কিন্তু তাদের সাথে না বসে উপায় ছিল না, কারন আমাদের বসতে হতো রোল অনুযায়ী। কিন্তু তবুও পরের বছর আমি আমার জীবনের প্রথম বেষ্ট ফ্রেন্ডকে পাই।অর নাম ছিল তিশা,যে আমাকে জীবনের প্রথম নেশা ধরায়। যে নেশার নাম তিন গোয়েন্দা!!! ওর কালেকশন এর সব বই পড়া শেষ করে আমি নিজে বই কেনা শুরু করলাম। টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে, মেহমানদের দেয়া সালামির টাকা, ভাইয়ার মানিব্যাগ থেকে মেরে কতভাবে যে বই কিনতাম তার কোন হদিস নাই।তারপর ওইটা পড়ে তিশার সাথে আলোচনা কোন জায়গাটা সবচে থ্রিলিং।কোন জায়গায় আমি আগেই বুঝে গেছি কে আসল ক্রিমিনাল... আমরা বেশ ভালই ছিলাম, হটাত একদিন তিশা বলল ওর বাবা ওদের সবাইকে নিয়ে চলে যাবে দুবাই।আর চলেও গেল তিশা আমাক ছেড়ে। ওর দুঃখে আমি অনেকদিন কেঁদেছি। এরপর ওই স্কুল এ আমার র কোন বন্ধু হয়নি। যখন আমি সেভেন এ উঠলাম আমাদের বাসা কেন যেন চেঞ্জ হল।একদম মতিঝিল থেকে ফার্মগেট।একা একা অতদুরে যাওয়া আমার জন্য খুব সমস্যা হতো। কারন তখন আর আমার বড় ভাইয়া ঢাকায় থাকত না।ব্যাবসা করার জন্য ও চলে যায় আমাদের গ্রামের বাড়ি। তো আব্বু বছরের মাঝখানেই আমার স্কুল চেঞ্জ করে দিল।ভাল স্কুল থেকে একটা সাধারন স্কুল এ আসায় সবারই খুব মন খারাপ ছিল।আমিও বাইরে মন খারাপের ভাব করলেও আসলে খুব খুশি ছিলাম, কারন আমার মনে আশা জাগল ভালো বন্ধু পাবার। আর পেলামও, প্রথম দিনেই আমি অনেকগুলো মেয়ের সাথে দোস্তি করলাম যারা আমাকে ঝালমুড়ি আচার আরও কত কি খাওয়াল।অনেকের সাথে বন্ধুত্ত হলেও এখানে আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড হল শিল্পি। খুব ই লক্ষ্মী টাইপ মেয়ে।যদিও বই পরার আশেপাশে নাই।তাও ওর সাথে আমার খুব জমে উঠল।শিল্পিকে আমি খুব ভালবাসতাম। ওকে অন্য মেয়েরসাথে বেশি মিশতে দেখলেই আমার হিংসা লাগত,যদিও জানতাম আমিই ওর বেষ্ট ফ্রেন্ড।দেখতে দেখতে আমরা নতুন ক্লাস এ উঠলাম। কিন্তু ক্লাস করতে গিয়ে একদিনও শিল্পিকে পাইনা।ওর বাসায় মোবাইল বা টেলিফোন কিছুই ছিলনা।এদিকে আমি হয়ে গেছি অস্থির।তারপর ১০ ১২ দিন পর খবর পেলাম ও নাকি মর্নিং শিফট এ চলে গেছে।সেদিন থেকে আমি আগেই স্কুলে চলে যাই যাতে ওর ছুটির পর দেখা হয়। যেদিন দেখা হল ঐদিন দুজন শুধু জড়িয়ে ধরে কানলাম কিছুক্ষন। পরে বুদ্ধি করলাম কি করা যায়। আমি বাসায় এসে আব্বু কে বললাম যে মর্নিং শিফট এর মিসরা খুব ভালো। ওরা প্রশ্ন করে সাজেসন দেয় ইত্তাদি ইত্তাদি। পরে আব্বু আমাকে মর্নিং শিফট এ দিল।বাকি সময়টা সত্যিই খুব অসাধারণ ছিল।আমি আরও কিছু বন্ধু যোগাই যারা আমাকে সত্যিই ভালবাসতো। ওদের সাথে ঘুরে,বাসায় আড্ডা মেরে, একসাথে পড়াশোনা করে আমিও খুব ভালো ভাবে আমার স্কুল আর কলেজ জীবন শেষ করি কিছু অসাধারন বন্ধুর সাথে। ভার্সিটি তে আমি কোন বন্ধু জোটাতে পারিনি। সবার সাথে শুধু নোট্‌স শেয়ার করি,অনুভুতি শেয়ার করার মত কাউকে পাইনা।আবারও বন্ধুহীন হয়ে যাই।কলেজের বন্ধুরা সব আলাদা জায়গায় ভর্তি হয়ে, বয়ফ্রেন্ড জুটিয়ে নিজেদের মত ব্যস্ত হয়ে যায়। ফলে যোগাযোগ অনেক কমে যায়। আমার সেই বন্ধুহীন মরা জীবনে রেহান আসল ঈদের চাঁদের মত খুশি নিয়ে। ওর সাথে আমার পরিচয় হয় ফেবু তে। প্রথম দিন আমরা ৩ ঘণ্টা চ্যাট করে বুঝি যে আমাদের প্রচুর মিল। বই পড়া,গান শোনা, মুভি দেখা, আড্ডা দেয়া এমনকি চায়ের নেশাটাও দুজনের খুব বেশি। রেহানের সাথে আমার আড্ডা চলতে লাগল। সব কিছু দুজন দুজনের সাথে শেয়ার করতাম। ও আমাকে খুব ভালো বুঝত।আর খুব হাসাতো ।আমি যে কোন উপলক্ষ্যে কার্ড দিতে খুব পছন্দ করি, তাও আবার নিজের হাতে বানানো। রেহানকেও দিতাম। ও খুব ভুলো মনা বলে ওর সব কিছু মনে করিয়ে দায়িত্ব নিলাম আমি।মিষ্টি খেতে খুব পছন্দ করে বলে প্রায়ই পুদিং,পায়েস হালুয়া বানিয়ে ফোন দিতাম আসার জন্য। দুজনই ছিলাম নিশাচর,তাই যত রাতই হোক যে কোন সমস্যায় ওকে ফোন দিতে কোন বাধা ছিল না।মন খারাপ হলেই ওকে ফোন দিতাম আর ও আমাকে ওর অদ্ভুত যত কাহিনি বলে হাসাতো আর উপরি পাওয়া ছিল ওর অসাধারণ কণ্ঠের গান।ওকে যে আমি কি প্রচণ্ড ভালবাসতাম, সেটা আমি সবসময় বলতাম। কিন্তু অভাগার কপালে কি আর সুখ সয়!! রেহানের জীবনে এল প্রেম, যার ফলে ও আমাকে ভুলে যেতে লাগল। গার্লফ্রেন্ডকে টাইম দিতে গিয়ে ও আর আমাকে টাইম দিত না। আমারও হিংসা লাগতো। আমি রাগী মেসেজ দিতাম।ভুল বোঝাবুঝি হয়ে ও আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিল। আমি যতই মেইল, মেসেজ বা ফোন দেই ও কোন রেসপন্স করেনা। সেই থেকে আমি আবারও বন্ধুহীন। গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে আড্ডা দেয়ার মত কেউ নেই। খুব খুশির মুহূর্ত গুলো শেয়ার করারও কেউ নেই। অথবা যখন কোন কষ্টের কিছু ঘটে, প্রচণ্ড দুঃখে বুকটা ফেটে যেতে চায়,কেউ নেই যে না বলতেই সব বুঝবে। তবুও আমি ছোট বেলার মতই অপেক্ষায় থাকি....।হয়তো আবারও কেউ আসবে, যাকে আমি শিল্পি আর রেহানের মতই ভালবাসব, সুখ দুঃখের ভাগীদার বানাব.........

অদ্ভুত মেয়েটি


মন্তব্য

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

অনুচ্ছেদ অনুচ্ছেদ করে দিলে ভাল হত। হাসি

রাজীব মাহমুদ এর ছবি

আপনার বর্ণনায় একটা সারল্য আছে। কিন্তু ভাষাটা পুরণো। একটু নাগরিক গন্ধ আছে কিন্তু ঠিক শেষটায় ক্লিশে শোনায়। যেমন বলছেন, “ঈদের চাঁদের মত খুশি”। এটা খুব সেকেলে আর ম্যাড়ম্যাড়ে শোনালো। আবার একটা ঘটনায় কোন বিশেষত্ত্ব তৈরী না করেই চলে যাচ্ছেন পরের ঘটনায়। যেমন স্কুল থেকে একা ফেরার ঘটনাটা কোন পরিণতি নিয়ে শেষ হলনা। লিখে যান। শুভকামনা।

অদ্ভুত মেয়েটি এর ছবি

নতুন লেখক হিসেবে সব ভুলের জন্য আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইছি। ওই ঘটনার পরে আমি র ওই স্কুল ে যাইনি। বড় ভাইয়া বাসায় পরিয়ে নতুন স্কুলে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নেয়ায়। অনেক ধন্যবাদ

অদ্ভুত মেয়েটি এর ছবি

পরের বার খেয়াল রাখব আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ভাগ্যক্রমে ওই সময় আমার আব্বু কাজের মেয়েকে নিয়ে বাজারে ছিলেন।কাজের মেয়েটি আমাকে দেখে আপু আপু বলে চিৎকার করে ওঠে।

- দয়া করে 'কাজের মেয়ে' বলা বাদ দিন। 'গৃহকর্মী' বলুন। যে মেয়েটি বা ছেলেটি বা মহিলাটি আপনার বাসায় কাজ করছে সে একটা পেশাগত দায়িত্ব পালন করছে। তাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার দেয়া হয় না, কোন নিয়মতান্ত্রিক বেতন-বোনাস দেয়া হয় না, চাকুরীজনিত অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয় না - এসব আমাদের দোষ, আমাদের অপরাধ। তাতে তার অবস্থান আপনার আমার মতো একজন সাধারণ চাকুরীজীবি'র চেয়ে নিচে নেমে যায় না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অদ্ভুত মেয়েটি এর ছবি

ভবিষ্যতে অবশ্যই খেয়াল রাখব। ব্যাপারটা ধরিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

একশভাগ একমত। চলুক

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

'অদ্ভুত মেয়েটি' নিকের দুইটি লেখা নীড়পাতায় দেখতে পাচ্ছি। কান্না এবং আমি আর খুঁজে ফেরা

সচলের নীতিমালা বলছে,

যেকোন সময় ১ম পাতায় একাধিক পোস্ট দৃশ্যমান হওয়া (বেশী পোস্ট করলে সব পোস্টকে ১ম পাতায় দেখানো থেকে বিরত থাকুন)

মডারেটররা হয়ত খেয়াল করেননি। আশা করি নীতিমালা পড়ে দেখবেন।

কিছু ফিডব্যাকঃ
১। প্যারা করে লিখলে পড়তে চোখের আরাম হয়।
২। '।'-এর পরে বা যে কোন জ্যোতি চিহ্নের পরে একটা 'স্পেস' চাপুন

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

নরাধম এর ছবি

ভাল লাগলো চলুক

অদ্ভুত মেয়েটি এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

অদ্ভুত মেয়েটি এর ছবি

আশা করি লিখতে লিখতেই হাত, ভাষা সব কিছুই পোক্ত হবে। জীবনে প্রথম এরকম ভাবে লেখা, হয়তো একটু বেশিই উত্তেজিত। সেইজন্য হয়তো আরেকটু বেশী গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। আশা করি প্রতিটি লেখা আগের বারেরটার চেয়ে উন্নত হবে, যদি আপনারা সবাই আমার ভুলগুলো শুধরিয়ে দেন।

রাজীব মাহমুদ এর ছবি

আসলে এগুলো কোন ভুল না। কিছু ব্যাক্তিগত পর্যবেক্ষণ মাত্র। আপনি লেখক হিসেবে সিদ্ধান্ত নেবেন কোন পর্যবেক্ষণটা/গুলো পরদর্তী লেখার সময় মাথায় রাখবেন আর কোনটা রাখবেন না। ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।