খুলনায় আন্দোলনের সূচনা এবং রাজনৈতিক প্যাঁচাল

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ০৮/০২/২০১৩ - ৪:৩০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

"খুলনার মানুষ পৃথিবীর সবচাইতে শান্তিপ্রিয় আলসে জাতি।এরা বিক্ষোভ,আন্দোলন,মারামারি কিছুর ভিতরেই নাই"

যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজার প্রতিবাদে মানুষ যেদিন শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করে,এইটা সেদিন রাত বারোটায় দেয়া আমার একটা স্ট্যাটাস আপডেট।
এরপরেই আমি আর আমার বন্ধু শুভ ঠিক করি,কাল সকালে আর কেউ না যাক,আমরা দুইজনে শহীদ হাদিস পার্কের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবো।
এই পোস্টের সূত্র ধরেই অনেকেই আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন।তারাও আমাদের সাথে যেতে চান।

শেষপর্যন্ত আমরা একটা ইভেন্ট ক্রিয়েট করে আমাদের পরিচিত সবাইকে জানানো শুরু করি।ঠিক হয় আমরা ৬ তারিখ সকাল ১০টায় হাদিস পার্কে যাবো।কিন্তু অল্পসময়ের ভিতরে সবাইকে ইনফরম করতে না পারায় আমরা পরদিন সকাল অর্থাৎ ৭ তারিখ ১০টায় আমাদের ইভেন্ট শিফট করি।এর ভিতরেই আমাদের সিনিয়র ভাইয়া আপুদের একটি গ্রুপ নির্দলীয় ছাত্রমঞ্চের ব্যানারে ৬ তারিখ সন্ধ্যায় পিটি আই মোড়ে অবস্থানের সিদ্ধান্ত নেয়।আমরাও তাদের সাথে এক হয়ে ওই ইভেন্ট প্রোমোট করি এবং নিজেরাও পিটি আই মোড়ে যোগ দেই।কিন্তু ৭ তারিখে হাদিস পার্কে রাজনৈতিক দলের কর্মসূচী থাকার কারণে আমরা শিববাড়ি মোড় আমাদের আন্দোলনের জায়গা হিসাবে বেছে নেই।

৭ তারিখ সকালে শুভ মেডিকেল কলেজের অনেক ছাত্রছাত্রী নিয়ে আসে।আমাদের রাহাত আপু এবং বাপ্পী ভাই ভার্সিটি থেকে অনেক ছাত্রসহ আমাদের সাথে এসে যোগ দেন।এর ভিতরেই আমরা নিজেরা পোস্টার বানাই।রাতমজুর কামলা ভাইয়া আমাদের মূল ইভেন্টের ব্যানার নিয়ে আসেন। ছাত্রছাত্রীদের ভিতর থেকেই সবাই স্লোগান দেয়া শুরু করে।তারা নিজেরাই মাইকের সামনে কথা বলে।যারা ভালো ছবি আঁকতে পারে তারা শুরু করে স্ট্রীট পেইন্টিং -এর কাজ।
এইখানে সেসময় উপস্থিত ছিলো সময় টেলিভিশন,মাছরাঙ্গা টেলিভিশন এবং এটিএন নিউজ।
রাজনৈতিক নেতাদের ভিতরে ছিলেন খুলনার অ্যাডভোকেট এম ফিরোজ আহমেদ।যেহেতু উনি সবসময় খুলনায় যেকোন আন্দোলন হলেই তার সাথে থাকেন এইজন্যে এইটা নিয়ে আমাদের তখন কোন মাথাব্যথা ছিলোনা।বিকালে কুয়েট থেকে আরো মানুষ আমাদের এই আন্দোলনে চলে আসে।
সন্ধ্যায় আমাদের সাথে যোগ দেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিটেকচার ডিসিপ্লিনের প্রধান আফরোজা পারভীন ম্যাডাম, ভার্সিটির ডিএসএ অনির্বাণ মুস্তফা স্যার এবং আমাদের ভিসি স্যার।
সন্ধ্যার পর থেকে চলে পথনাটক,মুক্তিযুদ্ধের গান এবং তার সাথে সাথে স্লোগান।এই রাত চারটার সময়ও মানুষের ভিড় একটুও কমেনি।আমার এক সহযোদ্ধা উৎসব রায় বলেছে
" কেবলমাত্র খেলাম। খাওয়ার ব্যপারে অভিযোগ অনেকেই করেছেন, নুন কম বা ঝাল কম এরকমের তবে ক্ষিদের চোটে খারাপ লাগছিল না। মশা আছে যথেষ্ট। কোন ব্যপার না। এখন সবাই একটু বিশ্রাম করছেন, কেউ কেউ গান গাচ্ছেন গুনগুনিয়ে...

আমরা সবাই খেলাম, পেট ভরেই খেলাম। রাজনৈতিক দলগুলো বড়সড় Donation দিতে চেয়েছিল। আমরা নিইনি। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নিয়েছি, নিজেদের পকেট থেকে দিয়েছি। তারপরেও সব ঠিকঠাক চলছে। এই যে সবকিছু ঠিকঠাক চলছে এই পুরো বিষয়টি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে সবাই সবার পাশে দাঁড়ালে আমরা সহজেই ভালো থাকতে পারি। আমাদের এই corporate পৃথিবী আমাদের এই সত্যটি ভুলিয়ে দিয়েছিল।"

এইযে সকাল থেকে আমরা রাজাকারদের ফাঁসীর দাবীতে আন্দোলন করছি,আমাদের কারো সাথেই কোন রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক নেই।কিন্তু একটি অনলাইন পেপার "বাংলাটাইমস টুয়েন্টিফোর" এর মতে,

খুলনা ব্যুরো: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার মামলার রায়ে সন্তুষ্ট না হতে পেরে তার ফাঁসির দাবি জানিয়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনত অবস্থান নিয়েছে। অবস্থানকারীরা মুক্তিযোদ্ধা, স্থানীয় রাজনীতিক, সাংস্কৃতিকর্মী, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ। খুলনা মহানগরীর শিববাড়ি মোড়ের গোল চত্বরে বেলা সাড়ে ১০টা থেকে তারা অবস্থান নেয়। এখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে জয় বাংলা বাহিনীর প্রধান শেখ আব্দুল কাইয়ুম, বিএল কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি এম ফিরোজ আহমেদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির স্থানীয় সংগঠক মনিরুল হক বাচ্চু ও খুলনা নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ শাহাজালাল হোসেন সুজন বক্তৃতা করেন। বক্তারা এ যুদ্ধাপরাধীর দন্ডা দেশ বাতিল করে ফাঁসির দাবি জানান। এ সময় শিক্ষার্থীরা গণ সঙ্গীত পরিবেশন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে দুপুর সাড়ে ১২টায় খুবির শিক্ষক ছাত্র ছাত্রীরা ও খুলনা মহানগরীর বিএমএ ভবনের সামনে দুপুর ১টায় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ জামায়াতের এ নেতার ফাঁসির দাবিতে সমাবেশ ও মানববন্ধন করে।

ছাত্রলীগের কাউকেই আমরা চিনিনা,এবং পাত্তাও দেইনা।কাজেই তারা যেন দাবী না করে এই আন্দোলন তাদের।নাহলে কালকে সকালে লোকজন ছাত্রলীগকেই হেনস্থা করবে।আমাদের এই রাজাকারবিরোধী আন্দোলনে যে কেউই যোগ দিতে পারেন,শুধু আসার সময় আপনার রাজনীতি আর ধর্মের ব্যানার খুলে একজন মানুষ হিসাবে আসবেন।

আমাদের ইভেন্টের ছবি ঃ https://www.facebook.com/media/set/?set=a.3763183778717.118184.1850282728&type=1

উদ্ভট খবরের লিঙ্কঃhttp://www.banglatimes24.com/?p=160524

খুলনার মূল ইভেন্টঃhttps://www.facebook.com/events/415379308541081/


মন্তব্য

রাতমজুর এর ছবি

ঠিক এই কথাগুলোই কাল কয়েকবার মাইকেই বলে দিতে হবে। নির্লজ্জ্ব বেহায়ার দল যেনো দুরে সরে থাকে নিজেরাই। নইলে ধোলাই।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

অনেক অভিনন্দন। এই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে দিন। সবার তো ফেসবুক নেই, তাই ব্লগ বা ইমেইলের মতো মাধ্যমকেও ব্যবহার করতে ভুলবেন না যেন।

সুবর্ণা  এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া !!!
কে বলে তোমরা পারো না ? এই তো তোমরা পারো!

খুলনা আমার অনেক আবেগের একটা জায়গা ,একই সাথে অনেক ভাল লাগছে এটা দেখে যে আমার ছোট ভাইয়েরা নিজ থেকে এরকম একটা উদ্যোগ নিয়েছে ।

শুভেছা ও শুভ কামনা নিরন্তর !

অতিথি লেখক এর ছবি

একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার।
5x3.5
কসাই কাদের সহ অন্যান্য সকল মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই, ফাঁসি।
ফাঁসি ছাড়া কোন বিকল্প রায় নাই।

তুহিন সরকার।

তানিম এহসান এর ছবি

অভিনন্দন!

খুলনা এলাকায় মুক্তিযুদ্ধে’র সময় পাকিদের যে নাকানিচুবানি খাইয়েছিল তার সূত্র ধরে বলতে পারি, খুলনাবাসী চাইলে সারা বাংলাদেশের জন্য উদাহরণ তৈরি করতে পারবে। শুভকামনা রইলো হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।