আমিয়াখুম বিজয়ের গল্প - বান্দরবান ভ্রমণ দ্বিতীয় পর্ব

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ০৪/০৩/২০১৩ - ১০:৩৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দ্বিতীয় দিনের অভিযান শুরু হল সূর্যের আলো ফুটতেই। সকালে খাওয়া দাওয়া সেরে নিলাম সকাল ৭.৩০ টার মধ্যেই। আবার ও ভাত আর মুরগি, সাথে ডাল। পথে খাওয়ার জন্য বিস্কিট কিনে নিলাম সবাই কারণ মাঝে খাওয়ার জিনিস কেনার মত জায়গা পাওয়া যাবে না। হালকা ওষুধপত্র ও কেনা হল।

তিন্দু থেকে রেমাক্রির পথে

৮ টার দিকে আবার নৌকা ভ্রমণ শুরু। পথে বড় পাথরে যা দেখলাম অবর্ণনীয়। পাহাড় থেকে পাথর ভেঙ্গে নদীতে পড়ে আছে। এর মাঝে সবচেয়ে বড় যে পাথরটা ওটার নাম রাজা পাথর। বড় পাথরের ধারে চাইলে ক্যাম্পিং ও করা যায়। এবার ও বেশ কিছু জায়গায় নামতে হল পানি কম থাকায়। মজার ব্যাপার সকালের পানি যত ঠাণ্ডা হবে ভেবেছিলাম তারচেয়ে অনেক গরম ছিল। নৌকার তলা প্রায় ই নিচের পাথরে আটকে যাচ্ছিল। মাঝির দক্ষতার সাথে তার মাঝে দিয়ে নৌকা চালাল।

দেবতার পাহাড়

বড় পাথরের কিছু দৃশ্য

রাজা পাথর

প্রায় দুঘণ্টা লাগল রেমাক্রি পৌঁছাতে। রেমাক্রি গিয়ে সবচেয়ে ভাল যে কাজটা করেছি টা হল একজোড়া স্যান্ডেল কেনা। ১৫০ টাকা দিয়ে একজোড়া বার্মিজ স্যান্ডেল কিনেছিলাম। পরে বুঝেছি ওটা না থাকলে পাহাড়ে ওঠার সময় কি বিপদে পরতে হত।

এখন শুরু হল আমাদের আসল ট্যুর। রেমাক্রি থেকে হাঁটা শুরু হল। রাস্তা বেশ ভালই, পাহাড়িদের ভাষায় সমতল আর আমাদের ভাষায় পাথুরে রাস্তা। দুপাশে পাহাড়, মাঝখানে রেমাক্রি খাল। পানির গভীরতা নেই, হাঁটু পানি খুব বেশি হলে। পাহাড়ের গা ধরে এগিয়ে গেলাম আমরা। প্রায় পনে দুঘণ্টা পর পৌঁছালাম নাফাখুম ঝরনায়। জীবনের প্রথম নিজের চোখে দেখা প্রাকৃতিক ঝরনা। এক কথায় অসাধারণ। অনেকদূর থেকেই ঝর্নার আওয়াজ পাওয়া যায়। সবাই সেখানে হালকা খাওয়া দাওয়া সেরে নিলাম। কেউ কেউ গোসল করল ঝর্নার পানিতে। শীতকালে নাফাখুম বেশ ছোট দেখালেও বর্ষায় এর আসল রূপ দেখা যায়।

রেমাক্রি থেকে নাফাখুমের পথে

নাফাখুম

নাফাখুমে ঘণ্টা খানেক কাটানোর পর আবার হাঁটা শুরু হল। পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটার অনুভুতি ই অন্য রকম। সবার মাঝে কিছুটা উত্তেজনা, কিছুটা অজানার ভয়। এখনকার সমতল আগের চেয়ে একটু খারাপ এবং কিঞ্চিৎ বিপদজনক। ঠিক করা ছিল থাকা হবে জিন্না পাড়ায়। প্রায় ৩ ঘণ্টা হাঁটার পর বিকালের দিকে সেখানে পৌঁছালাম। সেটা ছোটখাটো একটা টিলার উপর । সেখানে উঠতেই জিব্বা বের হয়ে গেছে সবার। শুনলাম কিছু দুরেই একটা পাড়ায় নাকি নেটওয়ার্ক আছে। ওটা একটা নতুন পাড়া। ওখানেই যাব ঠিক করলাম। যেতে যে অবস্থা হল সবার বলাই বাহুল্য। মাঝে একটা বিশাল পাহাড় টপকিয়ে যেতে হয় সেখানে। ওঠা এবং নামার রাস্তা দুটাই অনেক খাড়া। নামার সময় দৌড়ে নামাটা বুদ্ধিমানের কাজ। তাহলে পায়ে চাপ কম পড়ে, পিছলাবার ভয় ও কম থাকে। কিভাবে উঠেছি ভাবতে এখনও ভয় লাগে। আর পিঠের ব্যাগটাকে মনে হচ্ছিল ১০০ কেজি ওজনের বোঝা। পাড়াটা যে পাহাড়ের উপর সেটায় ওঠার রাস্তা অবশ্য ভাল। তবে ওঠার যে কষ্ট সেটা একি। পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। হতাশার কথা হল সেখানে গিয়েও আমরা দেখলাম নেটওয়ার্ক নাই। কারো শরীরে বিন্দুমাত্র শক্তি অবশিষ্ট নেই।

দেখতে সুন্দর হলেও উঠতে গেলে সুন্দর লাগে না

সাদেক ভাই ইতিমধ্যে থাকার জায়গা ঠিক করে ফেলেছে। উঠলাম পাড়ার কারবারির বাসায়। কারবারি হল পাড়ার প্রধান। ওখানে গিয়ে সবাই যেটা করলাম সেটা হল ব্যাগ গুলো ছুড়ে ফেলে বারান্দাতেই শুয়ে পড়লাম। যাই হোক সেরাত সেখানেই কাটালাম। রাতে দেখলাম আশেপাশের সব বাড়ির মানুষেরা একত্রে জড়ো হয়ে বাংলা সিনেমা দেখছে। সিনেমার নাম বাঘা ও বাঘিনী। এই সিনেমাও আমার কাছে অনেক বিনোদনের মনে হচ্ছিল তখন। আমাদের যখন এই দুরবস্থা বেচারা সাদেক ভাই তখন রান্নার আয়োজন করছিল। উপজাতীয়দের কাছ থেকে বন মুরগি, চাল আর চালকুমড়া কিনতে হয়। মুরগির দাম প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা। থাকা খরচ আগের মতই জনপ্রতি ১০০ টাকা করে। রাতে সেদিন সবাই খেলাম রাক্ষসের মত। খেয়ে আর দেরি না করে সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়লাম সবাই। সামনে দীর্ঘ যাত্রা অপেক্ষা করছে।

পরবর্তী পর্বে থাকছে আমিয়াখুম ঝর্না আবিষ্কার।

প্রথম পর্বের লিঙ্ক ঃ http://www.sachalayatan.com/guest_writer/48256#comment-576652

অবুঝ শিশুর ব্লগ


মন্তব্য

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

উপজাতীয়দের কাছ থেকে বন মুরগি, চাল আর চালকুমড়া কিনতে হয়।

- উপজাতি বলার বদঅভ্যাস ত্যাগ করুন। যে জাতির মানুষদের আতিথ্য নিয়েছিলেন তাদের জাতি নাম উল্লেখ করুন।

জাতি পরিচয় নৃতাত্ত্বিক একটি ব্যাপার, মাথা গোনাগুনতির ব্যাপার নয়। একটি নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর একজন মাত্র মানুষ জীবিত থাকলেও সে ঐ জাতিরই মানুষ। তাকে তার জাতি পরিচয় ছাড়া অন্য বিশেষ কোন সম্বোধনে অভিহিত করা তাকে অপমান করার শামিল।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

ওইটা মারমা পাড়া,ওই পাড়াটা একেবারেই নতুন। পাড়ার কোন নাম নাই। সাধারণত পাড়ার নাম ধরেই বলা হয় যে ওরা অমুক। কিন্তু এক্ষেত্রে তেমনটা বলার সুযোগ নাই।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

অবশ্যই, ধন্যবাদ হাসি

অবুঝ শিশু

Utpal এর ছবি

Very good

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

অবুঝ শিশু

Utpal এর ছবি

Nice

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।