একজন মুক্তি যোদ্ধা ও শহীদ রুমী স্কয়ার এর গল্প

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ০১/০৪/২০১৩ - ১০:৫৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শহীদ রুমী স্কোয়াডে অনশন শুরু হওয়ার পরে মানুষজনের শাহবাগ যাওয়ার ইচ্ছা খুব বেশি দেখিনি । আমার এক বন্ধুর (নাম বলতে চাচ্ছি না) সাথে এগুলো নিয়ে নিয়মিত আলোচনা করি অফিস থেকে ফেরার পরে ।

গত ২৭/০৩/২০১৩ রাতে গেলাম শাহবাগে । দেখি যারা অনশন করার তারা অনশন করছে । ঠিক তাদের উল্টা দিকে রোড ডিভাইডার এর উপর একজন স্যুট পরা ৩২-৩৩ বছরের ভদ্র মানুষ বসে আছে । তাঁর পাশে বসে আছে ৬০-৬২ বছরের ভদ্র লোক । তাঁর লম্বা দাড়ি, জোব্বা পড়া ।

৩২-৩৫ বছরের মানুষের আপন মনে হারমোনিয়াম বাঁশি বাজাচ্ছে । ৬০-৬২ বছরের মানুষটা খুব মন দিয়ে শুনছে । তাঁর চোখ বন্ধ । গানের তালে তালে মাথা নারাচ্ছে ।
৩০ মিনিট ধরে তাকিয়ে দেখলাম। আমি খেয়াল করে দেখলাম, কি গান বাজাচ্ছে ? প্রথমে বুঝে উঠতে পারিনি । পরে খেয়াল করলাম । সকল দেশাত্মবোধক গান বাজাচ্ছে আর বৃদ্ধ মানুষটা মাথা বার বার মুগ্ধ হচ্ছে ।
১০ টা ২০ মিনিটে কথোপকথন ঃ
- আব্বা, অনেক রাত হয়েছে ।
- হুম।
- চলেন এখন যায় । আপনার বউ মা ফোন করেছিল ।
- হুম ।
- আম্মা আপনে না গেলে খাবেন না ।
- এটা তো ৩৫ বছরের কথা ।
চল শেষ গান বলে বৃদ্ধ লোকটা উঠে দাঁড়ালেন । সাথে তাঁর ছেলে উঠে । ২-৩ মিনিট “আমার সোনার বাংলা” গানটা বাঁশিতে বেজে উঠল ।
২৮ তারিখ গিয়ে দেখি একই ঘটনা । আমি গিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই, বৃদ্ধ মানুষ বলল, “বসো । আমি তোমাকে খেয়াল করেছি । আমাদের দিকে আধা ঘণ্টা তাকিয়ে ছিলে গতকাল। কি চাও? কিছু বলতে চাও ?”
-আপনাদের সম্পর্কে জানতে চায় ।
তাঁর ছেলে বলতে থাকল ।
- আমি মিজানুর রহমান (আসল নাম নয়) । আমার অফিস মতিঝিলে । উনি আমার আব্বু , নাইমুল রহমান (আসল নাম নয়)।
- আপনারা দৈনিক এখানে কি করেন ?
- আব্বু বিকাল থেকে এসে এখানে বসে থাকে । আমি আমি অফিস থেকে আসি । তারপর আমাদের দুই জনের গানের আসর বসে । ছোটবেলা আমাকে নিজে বাঁশি বাজানো শিখিয়েছন। কিন্তু উনার শ্বাসকষ্টের কারণে এখন বাজাতে পারেন না।
- উনি কি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন ?
এবার মুখ খুললেন নাইমুল রহমান ।
-ছিলেন বললে কেন ? ৪২ বছর পরে এখন কি আমি কি মুক্তিযোদ্ধা নেই ? ৫ ফেব্রুয়ারী থেকে এখানে আমি কি করছি । যখন সবাই থাকে না তখনই আমি থাকি , পাহাড়া দিতে থাকি এই এলাকাকে ।
বলতে বলতে পকেট থেকে ইনহেলার নিয়ে মুখে দিলেন ।
- আব্বু একজন মুক্তিযোদ্ধা । দুইটা বইয়ে তাঁর নাম আছে । (আগে বই পড়ব তারপর ঘটনা লিখে জানাব)।
ইনহেলার নামিয়ে, পকেট থেকে একটা কাগজ দিয়ে বললেন , “ আমার বাসার ঠিকানা। গিয়ে পরিচয় দিলে হবে । আসার আগে মিজানকে ফোন করে আসবে। আমি মোবাইল ব্যবহার করি শুধু বাসার জন্য। ”
আজকের শেষ গান বলে উঠে দাঁড়ালেন । বাঁশিতে বেজে উঠল , “ আমার সোনার বাংলা .........। ”
মিজানুর রহমান বললেন এটা দিয়ে সবাই শুরু করে কিন্তু আমি সবাইকে শেষ করতে বলি কারণ “শেষ ভাল যার সব ভাল তার।” এর থেকে ভাল শেষ কি হতে পারে । আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন, “গল্পের আড্ডায় দেখা হবে ।”
একজন মুক্তিযোদ্ধার দেশের প্রতি ভালবাসা দেখলাম । আর নিজের কথা চিন্তা করলাম । কত পার্থক্য দুই জেনারেশনের ভিতরে ?
দেশকে পাহারা দেওয়ার জন্য উনিজান শাহবাগ, কিন্তু আমরা ... ? নিঃশ্বাস ফেলা ছাড়া আমি কি করব ।

ছবি: 
24/08/2007 - 2:03am

মন্তব্য

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

লেখা আরও গোছানো হতে পারত। আরও আসুক লেখা।
লেখকের নামটা পেলাম না।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

বেচারাথেরিয়াম এর ছবি

লেখকের নাম "শুভ্র পল", ফেসবুক নোট হিসেবে পড়েছিলাম। আমার দোস্ত লাগে।

baba এর ছবি

হাসি

তানিম এহসান এর ছবি

এইরকম অভিজ্ঞতা গুলো লিখতে থাকুন, অনুপ্রেরণা পাই।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।