ফ্রেন্ডলি ভাইরাস

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি
লিখেছেন রকিবুল ইসলাম কমল [অতিথি] (তারিখ: সোম, ০৩/০৬/২০১৩ - ৩:৪৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সম্প্রতি পিএনএএস জার্নালের একটি আর্টিকেলে ভাইরাসের ডুয়েল রোল এর কথা প্রকাশিত হয়েছে। পড়ার পর অনেক আগের একটি কথা মনে পড়ল। আমার ব্লগিং এর শুরুর কথা। সময়টা ২০০৭ এর শুরুর দিকে। ফেইসবুক চিনিনি তখনো। সবে মাত্র একটু একটু করে চিনছি ব্লগ। বেশ উৎসাহ নিয়ে ব্লগস্পটে একটি একাউন্ট করে ফেললাম। বিজ্ঞান বিষয়ক ব্লগ। প্রতিদিনই ভাবি কী লেখা যায়। একদিন লিখলাম ´ফ্রেন্ডলি ব্যাকটেরিয়া´ নিয়ে ক্ষুদ্র একটি আর্টিকেল। এর পর দুই একটি পোস্ট দিয়ে অলসতায় ডুবে আমার আর সব ব্লগের পরিণতির মতই সেটিও আর কখন আপডেট করা হয়নি। ওই ব্লগটি নিয়মিত লিখলে আজ হয়ত ´ফ্রেন্ডলি ভাইরাস´ এর উপরও একটি পোস্ট দিতাম।

পুরনো সেই ব্লগটি গুগলে সার্চ দিয়ে খুঁজে পেলাম। মনে হলো ব্লগ না, ৬ বছর আগের সেই সময়টা বুঝি গুগল আমার কম্পিউটারের স্ক্রিনে নিয়ে এলো!

চোখের সামনে ভাসছে, ভার্সিটির কম্পিউটার ল্যাবে বসে খয়েরী রঙ্গের একটি চেক শার্ট পরে, পায়ে প্রায় ছিন্ন ফিতার স্যান্ডেল পরে একটি শুকনা পটকা ছেলে ব্লগস্পটে একাউন্ট খুলছে। পেইজটি কাস্টমাইজ করে সবুজ টেম্পলেট পছন্দ করেছে। কী লেখা যায় কী লেখা যায় ভাবতে ভাবতে ক্লাস শেষে চলে গেল ব্রিটিশ কাউন্সিলের লাইব্রেরীতে। ফার্মাসিউটিক্যাল জার্নাল উল্টাতে উল্টাতে চোখে পড়ল ব্যাকটেরিয়ার প্রোবায়োটিক ভুমিকা নিয়ে একটি লেখা। সেই লেখা থেকেই সংক্ষেপ করে লেখা হয়েছিল ব্লগের পোস্টটি। সেই স্মৃতিচারণ এখন বাদ থাক। আজকে যা নিয়ে লিখতে বসেছি তাই লিখি।

ফ্রেন্ডলি ভাইরাস

ব্যাকটেরিয়া যেমন আমাদের শরীরে বসবাস করে শুধু অপকারই করে না, ভিটামিন প্রস্তুত, খাদ্যদ্রব্য হজম, সুযোগ-সন্ধানী সংক্রামণ (অপরচুনেস্টিক ইনফেকশন) থেকে রক্ষা করে নানান ভাবে সরাসরি আমাদের উপকারও করে থাকে তা আমারা অনেক আগে থেকেই জানি। যা জানা ছিল না, তা হল শরীরবৃত্তীয় কর্মকাণ্ডে ব্যাকটেরিয়ার মত ভাইরাসের এরকম কোন উপকারী দিক আছে কিনা?

এই প্রশ্নের উত্তর ছিল না এতদিন; অর্থাৎ বিজ্ঞানীদের চোখে তেমন কিছু ধরা পরেনি তখনো! কিন্তু কিছুদিন আগে সান ডিয়াগো স্টেট ইউনিভার্সটির একদল বিজ্ঞানী প্রথমবারের মত একটি জবাব খুঁজে পেয়েছে। তাঁরা দেখিয়েছে। ভাইরাস একটি বিশেষ অবস্থায় ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ঘটনাটি তাঁরা পরীক্ষা করেছে মানুষের মুখ গহ্বরের লালায়, যেখানে লক্ষ্য-মিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া বসবাস করে।

বিজ্ঞানীরা মুখের সেল বা কোষ নিয়ে ল্যাবরেটরিতে একটি সেল কালচার পাত্রে মুখের ভেতরের আবরণের মত একটি আবরণ তৈরি করল। যেখানে যা খুশি তাই পরীক্ষা করা যায়। কেউ ব্যথাও পাবে না; পরীক্ষা করতে গিয়ে কোষ গুলোতে সত্যি সত্যি খারাপ কোন অসুখ বিসুখ হয়ে গেলে কেউ বিজ্ঞানীদের ধরে পেটাতেও আসবে না।

যেহেতু মুখে গহব্বরের কোষ গুলোর একটি প্রধান বৈশিষ্ট হলো মিউকাস বা লালা ঝরানো। তাই এই কোষ গুলো সব সময় ভেজা-ভেজা থাকে। কৃত্রিম ভাবে কালচার করা কোষ বা সেল গুলোকেও লালাযুক্ত পরিবেশ দেয়া হলো। এখানে বলে রাখা বলে রাখা ভালো মুখের লালাতে থাকে বহু ধরনের ব্যাকটেরিয়া।

পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্যে মুখের ভেতর জীবন্ত কোষের আবরণী গুলো ল্যাবরেটরিতে প্রস্তুত। সেই আবরণী গুলোকে দুই গ্রুপে ভাগ করা হল। একটি গ্রুপের কোষাবরণীতে দেয়া হল লক্ষ্য লক্ষ্য ব্যাকটেরিয়া সহ মুখের লালা যেখানে ফাজ নামে কিছু ভাইরাসও আছে! আরেকটি গ্রুপে দেয়া হল ফাজ ভাইরাস ছাড়া শুধু ব্যাকটেরিয়া মিশ্রিত লালা। দেখা গেল যে গ্রুপে ফাজ ভাইরাস ছিল সেখানে কোষাবরনী সুস্থ কিন্তু অন্য গ্রুপের কোষাবরনীতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রামণ বা ইনফেকশন হয়েছে।

যা থেকে ধারণা করা যায় ফাজ ভাইরাসের উপস্থিতি সংক্রামণ-কারী ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে বা ধ্বংস করে মুখ গহ্বরের কোষের আবরণীকে সংক্রামণ বা ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে।

এই বিজ্ঞানী-দল অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে পুরো ব্যাপারটি কিভাবে ঘটে তা ছবির মাধ্যমে দেখিয়েছেন।

PNAS-2013-Barr-1305923110
ছবি সূত্র: J. Barra এবং সহকর্মীবৃন্দ ২০১৩। পিএনএএস জার্নাল।

ছবির একদম নিচের অংশে প্রায় বর্গাকৃতির মত কালো নিউক্লিয়াস এবং কিছু আঙ্গুলের মত অভিক্ষেপ সহ যে লাইনিংটা, সেটা মিউকোসাল এপিথেলিয়াল কোষ বা মুখ গহব্বরের আবরণী। একদম বাম পাশের প্রথম সেল, মাঝের একটি এবং শেষের আগেরটি থেকে দেখানো হয়েছে, হলুদ বাবলের মত করে মিউকাস বা লালা সিক্রেশন হচ্ছে। এই ধাপটিকে ১ নম্বর ধাপ হিসেবে চিহ্নিত করা করা হয়েছে। ২ নম্বর ধাপে দেখিয়েছে, ছাই রঙের কিছু ভাইরাস এসে তাদের দেহের আইজি নামক ডোমেইন আংটার মত ব্যবহার করে লালাতে থাকা কিছু প্রোটিনের সাথে লেগে থাকতে পারে। ৩ নম্বর ধাপে: কমলা রঙের লেজওয়ালা ব্যাকটেরিয়া আসা মাত্র, সেই ভাইরাস গুলো ব্যাকটেরিয়াকে ব্যবহার করে নিজেদের বংশ বৃদ্ধি করে, তাকে ধ্বংস করে ফেলে। এভাবে ফাজ ভাইরাস আমাদের শরীরকে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমন থেকে বাঁচায়। ৫ নম্বর ধাপে দেখিয়েছে, অতিরিক্ত ভাইরাস (ফাজ) গুলো লালার বা থুতুর সাথে হারিয়ে যায়।

Phage

উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেয়া এই ইলেকট্রন মাইক্রোগ্রাফে দেখা যাচ্ছে একটি ব্যাকটেরিয়াকে ফাজ ভাইরাস চারিদিক থেকে কিভাবে আক্রমন করে নতুন আবিস্কৃত এই পদ্ধতিতে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

- ছাইপাঁশ

পুরোনো ছাইপাঁশ:

মা দিবসের ইতিবৃত্ত
এসো এবার ফুলের রঙটা দেই পাল্টে
ব্রেক
অভাজনের প্যারিস ভ্রমন -পর্ব চার
অভাজনের প্যারিস ভ্রমন – পর্ব তিন
অভাজনের প্যারিস ভ্রমন – পবর্ দুই
অবশেষে প্যারিস যাত্রা
এই গরমে ঘোল খান
ব্র্যায়েনবোলঃ একটি মজার খেলা
অচেনা পাখি
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিমাতা সুলভ আচরন
I day 2010, প্রবাসে প্রথম সাফল্য
একজন ‘লেখক’ এবং বছরের প্রথম দিন!


মন্তব্য

কাজি মামুন এর ছবি

অনেকেই চিত্র দেয়, কিন্তু চিত্রটিকে পাঠকের জন্য এত সুন্দর করে ব্যাখ্যা করে না। অথচ বিজ্ঞান-নিবন্ধের জন্য চিত্রের সঠিক ও সহজবোধ্য বর্ণনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আমরাও জানতাম ব্যাকটেরিয়া ভাল, ভাইরাস খারাপ। কিন্তু ফ্রেন্ডলি ভাইরাসও যে আছে, তা এ লেখা পড়েই জানলাম। শিরোনামটিও যুতসই হয়েছে।

বিজ্ঞানের একটি সাম্প্রতিক বিষয় পাঠকদের সাথে শেয়ার করার জন্য লেখককে ধন্যবাদ! আশা করছি, আরও বিজ্ঞান-নিবন্ধ আসবে আপনার কাছ থেকে।

ছাইপাঁশ  এর ছবি

ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্যে। বিজ্ঞান বিষয়ক আরো লেখালেখি করার ইচ্ছা রাখি। হাসি

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ভালো লেখা। তবে আরেকটু বড় হলে ভালো। শুরু করতেই শেষ হয়ে যায়!

ফায ভাইরাস সম্পর্কে আরেকটু লিখলে ভালো হতো বোধহয়। তাত্ত্বিকভাবে সকল প্রাণির কোষের জন্য ফায রয়েছে বলে জানতাম। ব্যাচেলরের পর এই বিষয়ে আর খোঁজখবর করা হয়নি।

আমার জানামতে, লক্ষ্য = উদ্দেশ্য, লক্ষ = সংখ্যা একশ হাজার। তবে বানান বিষয়ে তৃষিয়া সবচে ভালো জানে। আমি বনান নিয়ে তার কাছে যাই। আমার জানামতে আরো অনেকেই যায়।

এবার পুরনো সচল হিসেবে একটু বলি, বেশ কয়েকটা লেখা প্রকাশিত হবার পরেও একাউন্ট সক্রিয় না হবার কারণ সম্ভবত মন্তব্যে অনুপস্থিতি। মডুরা যদি বুঝতে না পারেন আপনি কে এবং কেমন, তাহলে একাউন্ট সক্রিয় হতে দেরি হয় বলে আমার ধারনা হাসি

লেখা চালু থাকুক।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার লেখা। আরো আসুক, অপেক্ষায় থাকলাম।

ছাইপাঁশ  এর ছবি

`অতিথি লেখকে´র নাম কি `অপ্রকিততস্থ´? হাসি

একলহমা এর ছবি

কি যে ছাইপাঁশ বলেন! দেঁতো হাসি
- একলহমা

ছাইপাঁশ  এর ছবি

সকল প্রাণী কোষের জন্য ফাজ রয়েছে কিনা তা আমি ঠিক বলতে পারছি না। তবে প্রায় যে কোনো বড় ব্যাকটেরিয়াল পপুলাশেনেই ফায ভাইরাসের দেখা মেলে।

তৃষিয়া কি বুনোহাঁস?! উনি আমার প্রথম লেখায় প্রায় প্রতি লাইনে একটি করে বানান ভুল বের করেছিলেন! লইজ্জা লাগে সৎ পরামর্শের জন্যে আন্তরিক ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

অসমাপ্ত গল্পের মতো মনে হলো,গভীরে ঢুকার আগেই যা শেষ।আরো বিস্তারিত লিখলে ভালো হতো,আশা করি পরের বার আরো বড় লেখা পাবো। হাসি

মাসুদ সজীব

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।