গাছগুলি মোর: অশোক

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১৫/০৭/২০১৩ - ৬:৪৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[১৪৪০ মিনিটে এক দিন হয়। সে অনেক অনেক মিনিট আগের কথা। সচলায়তনে এই অধমের একটা লেখা প্রকাশিত হয়েছিল- ‘গাছগুলি মোর’ শিরোনামে। লেখার শেষে ভেবেছিলাম, এই নামে একটা ধারাবাহিক লিখব আমার ভাবনার গাছগুলো নিয়ে। সাথে থাকবে আমার প্রিয় কিছু গাছের ছবি- আমার নিজের তোলা। নানা কারনে কারনে সেই ভাবনা আর বাস্তবায়ন করা হয়নি। প্রধান কারন আমার ব্যক্তিগত উৎসাহের অভাব।
আজ আবার মনে হলো, কী আছে জীবনে- লিখে ফেলি, তাই শুরু করলাম সেই ধারাবাহিকতায়:]

প্রথম অশোক গাছ দেখি ঢাকা শহরে এসে। খুলনাতে অশোক গাছ আছে কিনা আমি জানিনা। সরকারী অফিসারদের কোয়ার্টার আছে সার্কিট হাউজ রোডে সেই কোয়ার্টারগুলোতে অনেক প্রাচীন আর ছায়াময় গাছ ছিল। ভেতরে ঢুকতে পারলে নিশ্চিত হতে পারতাম। সে সুযোগ কখনো ঘটেনি তাই খুলনা শহরে অশোক গাছ আছে কিনা আমার জানা নেই। ২০০৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী আমি প্রথম অশোক গাছ দেখি নিজের চোখে।মিরপুরে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে।

ঢাকায় এসেছিলাম চাকরীর পরীক্ষা দিতে, পরীক্ষা দিয়ে ছোটমামাকে বললাম যে অশোক গাছের কথা পড়েছি, দেখিনি| এখন বসন্তকাল; জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে এই গাছে ফুল ফুটেছে, খবরের কাগজে পড়েছি। যেতে চাই। ছোটমামা নিজে না যেয়ে উনার এক জুনিয়র (আমার ও জুনিয়র কিন্তু মামার সহকর্মী সূত্রে মামা ডাকি) কে সাথে দিলেন। অতপর আমি, রেহেনা খালামনি আর সেই মামা> মিশন: অশোক গাছ। আলাপে বের হলো তারা দুজনে কেউই অশোক গাছ দেখেননি বা ফুল দেখেননি।উদ্যানে প্রবেশ করার পর দ্বিতীয় যে ফটক পার হতে হয় তার দুইপাশেই অশোক আলো জ্বেলে ছিল ফুল ফুটিয়ে। কিন্তু সমস্যা বাধল নাম ফলক নেই দেখে। আমি বইয়ের লেখা মিলিয়ে নিশ্চিত যে এই আমার অশোক আর অশোকের ফুল। তবে আর কিছুদূর যেয়ে যেখান থেকে আর্ন্তজাতিক উদ্যানের সাইনবোর্ড ছিল, সেখানে কিছু গাছে নাম ফলক আবিস্কার করলাম। অশোক- সারাসা ইন্ডিকা (বর্তমানে এর নাম সারাসা অশোকা)

এ্যলিসের যে অবস্থা হয়েছিল ওয়ান্ডারল্যান্ডে যেয়ে আমার তারচেয়ে খারাপ অবস্থা হল জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে যেয়ে। অনেক অনেক গাছ। ফুল, ফুলের সুরভী কিন্তু অধিকাংশ গাছেরই নাম ফলক নেই। তাই অনেক গাছের ছবি মনের মুকুরে তোলা থাকলেও নাম জানা নেই তাদের। ইশ! গাছগুলি যদি কথা বলতে পারত! একজন ফুলের সুরভী ছড়িয়ে ডাল নেড়ে বলত, ‘আমি উদাল, শুধু ফুল দেখে মুগ্ধ হয়ো না, আমার ফল আরও সুন্দর, পলাশের ফুলের মতন সুন্দর আমার ফল’! আর একজন পাতা ঝিরিঝিরি করে বলত, ‘আমি কইনার’ (কইনার হলুদ রঙের এক সুগন্ধি ফুল, রোদ যেমন হলুদ হয় তেমন হলুদ রঙ তার) অন্য প্রসঙ্গে চলে যাচ্ছি। জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে ভ্রমণের অনুভূতি নিয়ে পৃথক পোস্ট দিব আশা করি।
যাই হোক ঘুরতে ঘুরতে আমরা এক অশোক বীথিতে গিয়ে পড়লাম।চারিদিকে শুধু অশোক আর অশোক। নানা রঙ, সুগন্ধ। সে যেন হঠাৎ হাওয়ায় ভেসে আসা ধন, তাই পরে অনেকবার চেষ্টা করেও জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে আর খুজেঁ পাইনি সে অশোক বীথি। ৭২/৭৩ টা গাছের সারি। যুথবদ্ধ । অশোকের ফুল বেশিদিন থাকে না। 10-15 দিন। সব অশোক গাছের এক যোগে পূর্ণ প্রস্ফুটন থাকে 5/7 দিন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে দেখেছি ক্লাসে কিছু জনগন থাকেই অগ্রীম পড়া করে আসে আর কিছু জনগন থাকে চিরকালের পিছিয়ে থাকার তালিকায়। এখানেও দেখেছি কিছু অশোক গাছ পড়িমড়ি করে বসন্তের শেষে ফুল ফোটানো শুরু করে বৈশাখেও হাসতে থাকে আর কেউ কেউ শীতের শেষেই ফুল ফুটিয়ে ফেরে বীর দর্পে। তবে সব গাছে একযোগে ফুল আসলে আপনার মনে হবে আপনি নন্দন কাননে আছেন। আপনার প্রচন্ড মন খারাপ কিন্তু সে ভরা প্রস্ফুটনে কখন যে আপনার মন খারাপের মেঘ ভেসে যাবে, টেরই পাবেন না।

রমনা পার্কে, আমার প্রিয় রমনা পার্কে অশোকের একটা বীথি আছে, ওয়াক ওয়ে। মোট 13 টি গাছ রাস্তার দুই পাশে। রাস্তাটি প্রাত:ভ্রমণকারীদের জন্য বিশেষ ভাবে করা, পাথর এবং কংক্রিটের স্লাব দেয়া। সকাল বিকাল প্রাত:ভ্রমণকারীরা হুম-হাম করে হাটেঁন সেখানে। আমিও যাই কিন্তু হাটতে নয়, অশোক ফুল দেখতে। একদিন কৌতুহলবশে গুনে দেখেছিলাম, শতকরা 5 জন মানুষও মাথা তুলে অশোকের ফুল দেখেন না, তারা স্বাস্থ্য নিয়েই বেশি সচেতন।ঝরে পড়া অশোকের সৌন্দর্য অন্যরকম সুন্দর।পায়ের দিকেও চেয়ে দেখন না কিংবা জানিনা, হয়ত দেখেন, প্রকাশ করেন না, মনের মুকুরেই রেখে দেন সেই অনুভূতি।

পুরো রমনা পার্ক জুড়েই টুকটাক অশোক গাছ পাবেন আপনি। কিন্তু বীথি আছে একটাই। বর্তমানে ডাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতেও বেশ কিছু গাছ চোখে পড়ে আমার। ধানমন্ডি আবাসিকের পথগুলিতে হাটঁতে গেলেও কিছু চোখে পড়তে পারে।
শেষ করি আমার অশোক গাছ রোপন নিয়ে, সেবার ঢাকা থেকে ফিরে পরিচিত নাসারী কে 300 টাকা দিয়েছিলাম চারা আনতে, তিনি এনেওছিলেন কিন্তু সেই বেচারা অশোক চারা মাত্র 5টি পাতা সমেত অকালে প্রাণপাত করেন, আমার শত যত্নেও তিনি মুখ তুলে দেখেননি সূর্যের আহবান।

অশোকের ফল দেখতে অনেকটা শিমের মতন। নতুন পাতা গাছে আসলে মনে হবে ডাল ভেঙ্গে নুইয়ে আছে, কিন্তু কিছুদিন পরেই দেখবেন ঝকঝকে চকচকে পাতায় ভরে আছে।

[যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা আছে তাদেরকে আগেই সাবধান করে দিচ্ছি, অশোক ফুলের গন্ধের মৃদু কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব আছে। আমার প্রিয় দুইজন মানুষকে অশোকের ফুল দেখাতে রমনা পার্কে নিয়ে গিয়েছিলাম। তারা সেখানেই মাইগ্রেনের ব্যাথায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছিল। এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে কিনা জানিনা, তবে তীব্র সুগন্ধে মাইগ্রেনের ব্যাথা হয় এটা জানি।]

-ব্যাঙের ছাতা

ছবি: 
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন

মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ছবি গুলি লেখার মাঝে মাঝে দিয়েছিলাম কিন্তু আসছে না কেন, বুঝতে পারছি না। মডারেটরগনের দৃষ্টি কামনা করছি।
-ব্যাঙের ছাতা

তানিম এহসান এর ছবি

সাবাস! হাততালি

জোরেসোরে লিখা শুরু করে দিন এখন থেকে। হাসি

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

হাসি
ধন‌্যবাদ

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হাততালি
চলুক

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

ধন্যবাদ এবং
আপনাকে শুভেচছা হাফ সচল হওয়ার জন্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

গোয়াজম যতক্ষণ পুর্ণ সচল আছে, ততক্ষণ হাচলত্ব দিয়ে কি হবে? জানিনা মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অর্বাচীন এর ছবি

ভালো লেগেছে, ঝরঝরে লেখা। পড়তে পড়তে মনে হয়নি বৃক্ষ পরিচিতি পড়ছি, গতিময় লেখা। আরও লেখা পাবো বলে আশা রাখি। হাসি

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
আমি শুধু অশোক ফুল নিয়ে আমার নিজের অনুভূতি প্রকাশের চেষ্টা করেছি। যদি চলতি পথে অশোকের ফুল দেখে আপনি থমকে দাড়াঁন তাহলেই আমি আনন্দিত হব।

সমুদ্রপুত্র এর ছবি

প্রাণবন্ত লেখা। এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করলাম। নিয়মিত পড়ার সুযোগ পাব আশা রাখছি। যখনই পুষ্পসজ্জিত অশোকা চোখে পড়েছে, মনে হয়েছে, বিষন্নতা আর সুন্দরের একই অঙ্গে সাঙ্গ হল বুঝি! খুব জানতে ইচ্ছে করছে ফলস্ অশোকাটি কেমন।

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

ফলস অশোকা! আপনি কি ‘সারাসা অশোকা’ কে বোঝাচ্ছেন? দু:খিত, আমি ডিটেইলস লিখিনি বলে।
অশোকের বৈজ্ঞানিক নাম পূর্বে ছিল সারাসা অশোকা, পরবর্তীতে গবেষকগণ অশোককে ভারত উপমহাদেশের গাছ হিসেবে চিহ্নিত করার পর এর নাম রাখা হয়েছে অশোকা ইন্ডিকা।

রাজ অশোক নামে আর একটি অনিন্দ্য সুন্দর ফুল আছে তাকে নিয়ে পৃথক পোস্ট দিব আশা করি।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সিরিজটি নিয়মিত হোক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।