এস্তেখারা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ৩০/০৭/২০১৩ - ৯:১৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

উস্তাদ, ঐ উস্তাদ; হুন না!
মান্টোর ঘ্যান-ঘ্যানানিতে বিরক্ত হয়ে চোখের কোণা দিয়ে তাকাল হাসান আলী। এমতেই, চশমার কাচঁ মুছতে মুছতে হয়রান। এ নিয়ে গত এক ঘন্টায় বার বিশেক হল। আর যেন তেন করে তো নয়, ঘটাপটা করে। হাসান আলী কোন কাজই হেলাফেলা করে করতে পারে না। তার উপর চশমাটা বড় শখের- সেবার আমেদাবাদ থেকে মাল আনার সময় বহুত দাম দিয়ে নিয়ে আসছে। বাহারী নিকেল ডাটিতে গোল্লা গোল্লা কাঁচ। বিজ্ঞানি মন তার- ছোটবেলা থেকেই। সব সময় নতুন নতুন আইডিয়া কিলবিল করে, এই যেমন এখন চেষ্টা চলছে আঁতর দিয়ে। তিন-তিন ছয় ফোঁটা মেশকাতে আম্বর ঢেলে, গলায় ঝোলানো রেশমি গামছা দিয়ে রগড়ে রগড়ে মোছা হল। বাহ, বেশ সু-ঘ্রাণ দিচ্ছে। কিন্তু, কাজ হলো ঘোড়ার ডিম। সামনে সব কিছু দুলছে, যেন চিত্রা বা মানসীতে-তে নাইট শো চলছে।

কি অইচে?
চা আনতে গেচিলাম জমির সাবে আমারে খানকির বাচ্চা কইচে।
অ, ফির- তুই কি কইচস?
আমি বুজা পারি নাইক্কা, কইচি গালি দেন কেলা। কয়, মাগীর পুতেরে নাকি এইডা কইলে কিচু হয় না। উস্তাদ, খানকি কি?

রাগ হলো হাসানের।কপালের রগ ফুলে তির তির করে কাঁপতে থাকে, এই কথা শুনলে তার রক্তে আগুন ধরে; মনে হয় দুইন্যা জ্বালায় দেয়। হালার দুনিয়া, সব খানে কি আলো থাকে? আন্ধার তো আলোর নকীব! না থাকলে আলোর মর্তবা বুঝা পারতো কেউ? দুনিয়াভর খাটাসের কাম হাইরা ভদ্রলোক কয়া পারো নিজেগরে, আর বাপের নাম না জানলেই বেজন্মা!ঠোঁটের কোণে ক্রূঢ় হাসি ফোঁটে তার, এক্ষেত্রে নিজেকে সামলাতেও জোর খাটাতে হয় নিজের উপর।

আবার, মায়াও লাগল একটু; প্যাঁচাল পারিচ না। গেলি এহেন থন।
মন খারাপ করল মান্টো, বুঝতে পারলো না, কিল্লিগা বিলা খাইল উস্তাদ। দোকান থেকে গুটি গুটি পায়ে বেরিয়ে গেল।

এই সন্ধাবেলা খদ্দের নেই তার দোকানে, তবু খালুজানের হুকুম- বসে থাকতেই হবে। হাসান আলীর পরনে সাদা একটা লুঙ্গী আর নীল হাফহাতা ফতুয়ার উপরে গলায় মাফলারের মতো করে দু্-প্যাঁচে জড়ানো গামছা। বেতের টুপী আর সুন্নত মিলিয়ে এই মধ্য তিরিশেই সুফি সুফি ভাব আসছে। কানে সবসময় তুলা গোঁজা থাকে। তুলায় আতর ঢেলে খদ্দেরদের ভাল-মন্দ মালুম করাতে হয় বলে সবসময় এই ব্যবস্থা। মাছি মারতে ভাল্লাগে না আর বইয়া বইয়া-আবার, চশমা নিয়া বিদিক দিগদারি! নাহ, চা না মারলে চলতাছে না- গলা হুকাইয়া কারবালা অয়া গ্যাচে।

এ মান্টো, আহি উস্তাদ- বলে হাফপ্যান্ট পরা মান্টো এগিয়ে এলো।
আগুন মাসের শেষের হিম হিম ঠান্ডাতেও খালি গা। অবশ্য বুড়িগঙ্গাতে এখন আর বাতাস হয় না বলে বা পুরান ঢাকার গাদাগাদি ভীড়ে ঠান্ডার দাদাও আসতে ভয় পায়।
যা বে, মালাই মারকে চা লে আ, তুরন্ত।
পুরোটা না শুনেই ১২ বছরের মান্টো ফনিক্সের গতিতে চলে গেল। পিছন ফিরলে দেখতে পেত, তার দিকে হাসান সস্নেহে তাকিয়ে আছে।

চারশ বছরের পুরানো ঢাকা শহর। বেলুনের মতো ফুলতে ফুলতে গাজীপুর-না’গঞ্জে-মানিকগঞ্জে ঠেকেছে। এখন কদর না থাকলেও একটা সময় বুড়িগঙ্গা ছিল ঢাকার প্রাণ। টলটলে পানিতে সেই দিল্লি থেকে মাল বয়ে আনা, সারারাত মাছ ধরা নৌকাথেকে ভেসে আসা রসের গান আর সদরঘাট, সওয়ারিঘাট, ওয়াইজঘাট, আরমানি ঘাটে সারাদিনের হইহল্লা- সবকিছুর গল্প ঢাকার এই অংশের সাথে লেপ্টে আছে। সেই যে বেড়িবাঁধের রাস্তার এপার-ওপার; জিঞ্জিরা থেইকা কাপ্তানবাজার। বাইরের মানুষের কাছে এর নাম পুরাণ ঢাকা। মোগলাই খানা, শ্রুতিমধুর ভাষা, দিল-দরিয়া ভাব, বাঘের জিগার আর বেকুবির জন্য এখানকার মানুষ সারা দেশে বিখ্যাত।

এখন আর নতুন কেউ এখানে বড় একটা বসতি করে না। ব্যবসার জন্য আসে। বাদামতলী, চকবাজার, ইংলিশ রোড, নয়াবাজার, বাবুবাজার ঘিরে গিজগিজ করে ব্যবসায়ীরা। এখানে, টাকা ওড়ে- চারফুট বাই ছয়ফুট একটা দোকানের গদীতে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়। আদি বুড়িগঙ্গা আর এর সাথে শীতলক্ষা আর ধলেশ্বরীকে সংযোগ করা দোলাই খালের পাড় ঘেষে কবে যে মানুষের আর স্থাপনার ঠাসঁ-বুনট তৈরি হলো তা বলা শক্ত। তবে, এটা ঠিক সদরঘাট পাকিজা রোড, জগন্নাথ কলেজ আর কোর্ট-কাচারীর কারনে ইংলিশ রোড-জনসন রোড আর ওদিকে বাবুবাজারের মাঝখানের এলাকাটা (গোলাপপাল স্ট্রীট)জুড়ে ভিন্ন এক ব্যবসা যুগে যুগে থিতু হয়েছে। এককালের, রেড লাইট এরিয়া। কাঁচা-মাংসের লোভে রইস আদমীরা এই সেদিন পর্যন্ত মুখর করে রাখতো এ পাড়া।

১০ নং গোলাপপাল স্ট্রীট ছিল ৯৬ সাল পর্যন্ত ঢাকার সবচেয়ে বড় পতিতালয়। স্থানীয়দের ভাষায়- মাগীপাড়া বা কেউবা বলে খানকিপাড়া। সভ্য মানুষেরা বলত, ইংলিশ রোড ব্রথেল। সেই টানবাজার বা গোয়ালন্দ ঘাটের দৌলতদিয়া ছাড়া এত বড় পাড়া আর কোথাও ছিল না। এ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে কত নতুন নতুন ব্যবসা ছিল।চা-পান বিড়ির দোকান, খুচরা অনেক জিনিসের সাথে জন্ম-নিয়ন্ত্রন সামগ্রীর ঠেক- সারি সারি খাবার দোকান, চাপ/কাবাব/মোসাল্লাম আর দেশি-ফরেন মালের ঠেক। দুই ম সবসময়ই পাশাপাশি ব্যবসা করে তাবত দুনিয়া জুড়ে।সেসব জায়গায় কাজ করতো পতিতালয়ে জন্ম নেয়া বেজন্মারা।কেউবা হতো দালাল।অজস্র শিশু বাপের নাম ছাড়াই নাযিল হতো সেখানে, তাই হুট করে বাপের নাম পুঁছলে সেটাই সবচেয়ে বড় গালি- এরা সবাই হারামজাদা।

তাও, ভাল তারা ছেলে! মেয়েদের জন্য ভয়াল দাঁত বের করা জীবন, জন্মের পরপরই নির্ধারিত হত। তাদের জীবন আশা-নিরাশা-সন্তাপে আবর্তিত হত এই চৌহদ্দির ভেতরেই; একটা অমোঘ চক্রে। হারামজাদাদের অনেকেই আবার নানান ব্যবসায় মাল কামিয়ে ভোল পাল্টে সুফি সেজেছে। বাপের নাম দিয়েছে বাংলা বই থেকে, পছণ্দ মত; এদের অনেকে নিজের জন্যও ভদ্রগোছের নাম খুঁজে নিতে হয়।

যেমন, হাসান আলীর নাম সে পেয়েছে বিষাদ-সিন্ধু থেকে। নিজে অবশ্য না, সে তো এখনও কোনমতে নিজের নাম দস্তখত করতে পারে; এই মান্টোর মত বয়সে তার নাম ছিল বিচ্ছু। মাক্কুশা মাজারের ছোট খাদেম হুজুর রেখেছেন এই নাম। বড় পেয়ার করতো তাকে।আতর আলী নাম ছিল হুজুরের।মান্টোর নামডা হাসান রাখছে আকবর আলী।মুগল বাদশার নামে নাম। কিন্তু, এত বড় নামে ডাকা দিগদারি; তাই, মান্টো বলেই ডাকে।

এখন, জমিরসাবের উপর রাগ হল।পাশের বিসমিল্লাহ কাবাব ঘরের মালিক জমির সাব।হাসান আলীর সাথে খাতির ভি আছে।কিন্তু, আক্কেল কম আর মুখটা জবর খারাপ- পায়খানার মতো, সবসময় গন্ধই বের হয়। সব সময় কি সত্যি কথা বলতে আছে! পিচ্চি পুলাডারে এগুলো বলাটা কি ঠিক? বুঝে হাসান আলী যে, গত সপ্তাহে তার কাছে টাকা ধার চাইছিল ১০ হাজার, জমির। কিন্তু, খালুজানরে না পুছে কেমতে দেয়! এল্লিগা মান্টোরে দিয়া আসলে তার গোয়াতেই আঙুল দিল।

নিজের শৈশবের কথা মনে হল: একটু বুঝতে শিখেই যখন নিজের মাকে দেখেছে রাতের পর রাত বিভিন্ন লোককে ঘরে তুলতে; দেখে দেখে- ঘেন্না ধরে বিচ্ছুর। ৬ বছর বয়সে মার কাছে আসা এক সাবের টাকায় ঠাঁসা মানিব্যাগ চুরি করে পালিয়ে আসে চকবাজারে।

দিন-কতক বেশ হই-হই করে বেড়াল। দু’দিন পরেই জেলখানার সামনে- তার গালে দুইটা থাপ্পর দিয়ে এক সেপাই টাকা কেড়ে, পাছায় লাত্থি দিয়ে সোজা রাস্তায়। খোদার কিরা, না খেয়েই মারা যাইতো যদি মাক্কুশা মাজারের হুজুর তাকে আদর করে না রাখতো।
মাগার, সেই পিয়ার তোবা তোবা আস্তাগফিরুল্লা।
হারামজাদা পরিচয় হাসানের ছিল বাপের নাম জানা ছিল না বলে; কিন্তু আখ্যা দুইন্যায় হারামীরা বাপের নাম থাকলেও রুচির কারনেই হারামজাদা হয়ে যায়।পেটের দায় বড় দায়, এর কাছে মান-ইজ্জত- হালাল/হারাম সব ফিঁকে হয়ে যায়। যে বোঝে সে বোঝে।তাই বছর তিনেক পরে ঘুমের মধ্যে একটা ব্লেড দিয়ে হুজুরের খতনা আবার করে সে পালিয়ে গিয়ে উঠল ধোলাইখাল।

ভীরে গেল গাড়ির পার্টস চোরদের সাথে। উড়েব্বাস, বিরাট সাহসের কাজ। কেউ গাড়ি দাড় করে রেখে কোথাও গেলেই হলো। বিচ্ছু বাহিনী নিমিষেই- চাকা, লুকিং গ্লাস, সকেট জাম্পার খুলে হাওয়া। কামাই হচ্ছিল-নাম ফুটছিল বেশ। কিন্তু, ধানের লোভে ঘুরে ঘুরে আসা-ঘুঘু পাখি কখনো না কখনও ডানা হড়কে ধরা পড়েই।

বৃষ্টির মতো কিল-ঘুষি-সবুট লাত্থিতে নাক-মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছিল দরদর করে। পাবলিকের গাব্বুইরা মাইর, এ মাইরের কুন বাপ-মা নাই। ইস বিচ্ছু ধরা পড়ত না। যদি না সাবের ডেরাইভার উই পাশের চায়ের দোকান থেকে ধর ধর বলে চিক্কুর না দিত। টিটু, হাবুল, আক্কাস সবাই দৌড়ে পালালো- এ ক্ষেত্রে এটাই নিয়ম। ইয়া নফসি, ইয়া নফসি।
মাইর গুলো হাড্ডিতে-হাড্ডিতে লাগতাচিল মগর বিচ্ছু হেবি ডর ভি খাইচিল; জানে মাইরা হালাইবো নাকি পেংটির পুতেরা? অনেকদিন পরে, ভুলে যাওয়া প্রায় মাকে স্মরণ করছিল কইলজা উজাড় করে।
বাঁচাইলো চাচাজি, হাজী ইজ্জতুল্লা ব্যাপারি; কিল্লিগা জানি রহম খাইচে- খোদা মালুম। পাবলিকরে খেদাইয়া নিজের দোকানে লইয়া আইল। সুদু দোলাইখাল না, আখ্যা ইংলিস রোডে সবতে হেরে সমঝে চলে। তারপর থেকে তার দোকানে দোকানে কাটায় বিচ্ছু, হেই চাচাজি কইল- আব্বে, বিচ্চু এলা কিমুন নাম? কেঠা দিচে ইমুন নাম? বাপের নাম কী? এই প্রথম কেঁদেছিল বিচ্ছু আবার এই শেষ।

তবে, তার হারামজাদা পরিচয়ে চাচাজি তেমন বিব্রত হলো না।
কইল, কেমতে পয়দা অইচস- সেইটা বিসয় না। নাযিল যখন অইচসই তয় আর কি! শোকর কর। আমারে খালুজান কবি, এহন থিকা। ফিরি খাবি-দাবি, এহেনেই থাকবি- লেকিন চুরি করলে মাইরা আরেকটা বিচিও খুইলা হালামু।

সেই পাবলিকের মাইরে বিচ্ছুর একটা বিচি খুলে গেছিল। আরেকটা হারাতে চায় না সে। তখন, খালুজান তার নাম ঠিক করলো- হুজুরে যিটা দিছে; হাসান আলী।বিচি গেল দিখা, মায়্যা মানুষের উপরে ফিকির নাই, আবার মাইয়া মানুষ দেখলেই মার কথা মনে হয়।মনে হয়, তার মার সাথে এখন কে শুয়ে আছে? তার বাপের মতো কেউ? যে এনজয় কইরা ট্যাকা দিয়া চইলা যাইবো!
নারীসঙ্গ বঞ্চিত বলেই বোধহয়, তার নাক কুকুরের চেয়েও সরস হয়ে গেল। প্রত্যেক মানুষের চরিত্র তার কাছে এক একটা গন্ধ হয়ে জমা থাকলো।

খাল কাইটা জুতা বানাইলে ভি হাজী সাবের উপকারের বদলা অইব না, হাসান আলী জানে। প্রানপনে তাই, খালুজানের ব্যবসা দেখে।প্রথমে ফাই-ফরমাশ খাটতো; কয়দিন ডেরাইবরি ভি সিখবার চাইচিল, মাগার মাথায় প্যাচ বাজে। একদিন আলুবাজারের চিপ্পা গলিতে গাড়ি টানুনের সম এক পিচ্চির উপরে দিল বাজাইয়া। কি রক্ত! পলায় নাইকা হাসান আলী। কুনো পেংটির পো কয়া পারবো না যে হাসানের খাটাসের জিগার। নিজেই চাংখারপুল দিয়া কোলে কইরা দৌড়াইয়া ছেড়ারে মেডিক্যালের ইমার্জেন্সীতে নিছে। তারপর থেকে পিচ্চি তার সাথেই আছে। জিগাইছিল, বাপের কতা কয়া পারে না। মা সোরওয়ার্দিতে রাইতে ভাড়া খাটে। সেই থিকা মান্টো রাইতে তার লগে থাকে। সবতে কয় এক বিচির হাসান আলীর মুরাদ নাইকা- মায়্যা মানুষের ফির, এল্লিগা ভাই পালে। তোবা তোবা, আস্তাগফিরুল্লা।
কেওরটা খায়-পড়ে না হাসান আলী, মাইনসের কতায় ফালও পারে না।
কউগ্গা, খোদা দেখনেঅলা।

দেখতে দেখতে, দেড়-কুড়ি বছর চলে গেল। খালুজানের দোলাইখাল, বাদামতলীর দোকান ঘুরে এখন সে আছে এই ‘আল্লাহর দান আতর হাউজ’ এর ম্যানেজার হয়ে।আতরের ঘেরানে খালুসাবের সইল কিরকিরায় তাই বড় একটা আসেন না। আর তার, নাকের ঘেরান পাওয়ার কথা জানার পর খালুজান কয়, এইডা হিগা তুই কি কাম করচস! তয়, বে তরে আতরের দোকান দিয়া বহায় থুই। যেই বড়শিতে যেই আঁধার।

বেচারাম দেউড়ি থেকে সিধা ১০০ গজ বামে মোচড় দিলেই এই আতরপাড়া।নলীণী বসাক লেন; আতরের পাইকারি বাজার। দুনিয়ার তামাম কিছিমের আতর আর সেন্ট এহেনে আছে।আবার, জিঞ্জিরার দুই লম্বর মাল ভি আচে।যারে যেইটা গছায়া পারে, কেঠায় আর আসল-নকল বুজা পারে। সবের নাক তো কুত্তার লাহান না! এল্লিগা হাজী সাবের চাইলের আড়ত ছাইড়া নিজে থেইকাই এহেনে আইচে। হাসান আলী, দুজন কর্মচারী আর মান্টো আছে এখানে। গত বছর ১০ লাখ প্রফিট করছে এই ব্যবসা। রাতে হাসান আলী আর মান্টো থাকে এই দোকানে। হাসান আর এক বিচির জোড়ে বিয়ে করতে সাহস করেনি।

মান্টোর মাকে আর খোঁজেনি কখনো। জানে, খুইজা ফয়দা নাইকা। যে যায়, হে এমতেই যায়। আতরের ব্যবসা করতে করতে হাসান আলীর একটা খ্যামতা আইচে।হাসান আলীর নাক ভাল। সব কিছু ঘেরাণ দিয়াই ইয়াদ রাখে সে। হে, মাইনসের শইলে ঘেরান পায়। আর ঘেরাণ পাইলেই বুঝা পারে কিমুন ইনসান, ভালা না বুঢ়া।মান্টোর শইলের ঘেরাণ কয়, ছেড়া বালাই।থাউক।

পনরো বচ্ছর আগে যখন সবতে মিল্লা মাগীপাড়া তুলে দিল; তখন নিজের মাকে খুঁজতে গেছিল হাসান আলী; পায়নি। শুনছিল, স্বপ্নারাণী নাম নিয়া- মগবাজার ম্যাসেজ পার্লারে কাম নিছে। তয়, সেইখানে গিয়াও না পাইয়া গেল কাকলী মোড়ে। তাও না পেয়ে বুঝলো যে দৌলতদিয়া চলে গেছে মালুম। না ভি যায়া পারে। কেউ কয়া পারে না- বেশ্যাদের আড়ালে আড়ালে অনেকেই খোঁজে মাগার দিনের বেলায় নাম শুনলেই অজু করতে চায়- মানুষ এমনই খবিস জানোয়ার। থাক! খুঁইজা ফয়দা নাই। মায়্যা মানুস দেখবার পারে না তারপর থেকেই সে।

চা খেয়ে উঠে পরে,মান্টোরে বসিয়ে চিপ্পা গলি ধরে এগোয়। এশার নমাজ ‘তারা মসজিদে’ পরে সে; নিয়মিত। খতীব সাবের শইল থেকা জালালি ঘেরান আহে, বালা মানুস; হাসান আলীরে ভাল পায়। জিগাইছিল একদিন, আইচ্চা হুজুর- যেগো বাপের নাম মালুম নাই হেরা কি নামাজ-কালাম করা পারে? গভীর দৃষ্টিতে তার দিকে কতক্ষন তাকিয়ে বিষন্ন স্বরে ধীরে ধীরে বলেছিল প্রানের কথাগুলো।

খতীব সাব বলছিল, দেহো মিয়া- আল্লার দুনিয়ায়, তার ইচ্ছা অইলেই ইনসান পয়দা হয়। বাপ-মার ইচ্ছায় না। হাসবুন আল্লাহি নিমাল ওয়াকিল- তিনিই সবার অভিভাবক। বাপ-মা তার তরফে পুলাপান পয়দা করে, বড় করে। ইনসানের জন্ম তার হাতে না; আল্লার ইশারায়। তাই আল্লার উপর সবের সমান অধিকার। সবার সাথেই তিনি আছেন। যে তারে পায়- তার সাথেও; আবার যে খোঁজে না- তার সাথেও।

বহুত আরাম পাইচিল কথা হুইনা হাসান আলী। তারপরথিকা, পেরেশানি হইলেই হুজুরের কাছে জানবার যায়। আইজ, শইল গরম অইচে- আইজ হুজুররে জিগাইবো একটা কথা।

মসজিদে ঢুকার সময় জমির সাবের সাথে দেখা।
পুলাপানরে কি কন এইসব?
তার অনুযোগের উত্তরে ঝাঝিয়ে উঠল জমির, আমারে হিগাইতে আইও না। যে হারামজাদা, হেরে কউন জায়েজ।
হুজুরের কাছে হুনচি, পয়দা হওনের উপর ইনসানের হাত নাই। না কইলেন এইসব। রাগ চেপে বলে হাসান আলী।
ফালাও থোও উই হালার কথা;পেংটির পুতে- মুনসীগীরী ছাইড়া –সবতেরে সমঝাইয়া বেড়ায়। ঐ হালায় ভি খানকির পুত অয়া পারে। হাসতে হাসতে বলে, জমির মসজিদের দিকে পা বাড়ায়। গা কিরকির করতে থাকে হাসান আলীর। এত্ত সাহস! একামত হচ্ছে, চিন্তার সময় নাই। দৌড়ে নামাজে দাঁড়াল।

নামাজে তার পাশের কাতারেই দাড়ালো জমির সাব। এহেনে আইলে হাসান নানান পদের ঘিরান পায়। কারও শইল থিকা গোলাপের, হাসনাহেনার আবর কারও শইল থিকা গুয়ের গন্ধও পায়। এর থিকা বুজা পারে, কে কোন নিয়তে আইচে এহেনে। আল্লার ঘর সবতে সমান নিয়তে আহে না। কিছু মানুষ আছে যারা সাড়া জীবনে কিছু পায় না। বাপ-মা-আত্মীয়স্বজন/বিদ্যা/জীবিকা- কিচ্চু না। সব ছাইড়া আশেক অয়। যেহান দিয়া যায়, আগুনের বলের মতো পুড়াইতে পুড়াইতে যায়- হেগো লগে যারা থাকে সবতে পোড়ে। একসময় আর কিছু পোড়ানোর মতো না পেয়ে সূর্যের মতো নিজেই জ্বলতে থাকে। সব বাঁধা জয় করে, নিজেকে আবিস্কার করে অতীন্দ্র উচ্চতায়। হিমালয় জয় করা নি:স্বঙ্গ শেরপার মতো আবেগশূণ্যতা গ্রাস করে। তাদের শরীরের হিনা আতরের গন্ধে ম ম করে চারদিক, যে পায় সে পায়। তারা আসে আল্লার মাশুক হয়ে।

আবার, মরুভূমির উটের মতো কিছু মানুষ- যাকে পায় তারা মরে যায়, যাদের চায় তারা সরে যায়। খাবার না পেয়ে, কচমচ করে ক্যাকটাস খেয়ে গাল ছড়ে যায়। দরদর করে ঘাম ঝরে। মরূদ্যান বহুদূরে; ছায়া নেই- গরম বালিই বিছানা। জীবন যেখানে যেমন। বাসী বকুল-গন্ধা সে মানুষগুলোর দু:খে হাসান আলী শেষ মোনাজাতে নিজেই ভেউ ভেউ করে কাঁদে।

অযু করে শব্দ করে হাসলে নাকি মাকরূহ হয়; কিন্তু, আসার পথে কান্ড দেখে না হেসে পারে নাই সে। চুন্নু ব্যাপারি তার ৪ বছরের বাচ্চাডারে নিয়া মসজিদে আইতাছিল; পুলাডার নাম রূম্মন। মসজিদের উত্তর গেটে একটা চায়ের দোকান।চা খিলাইতে খিলাইতে দোকানদার রশীধ চুন্নু মিয়ারে সালামালকি দিল। রূম্মন বাপেরে জিগায়, আব্বাজান- অরা কি খায়? ব্যাপারি কইল, চা বাজান। রূম্মন কয়, আমি চায়া পারুম না, আমার শরম লাগে- তুমি চাও! অইছে নি কাম। হাসতে হাসতে সবে চুন্নুরে কয়- পুলা তোমার ব্যরিস্টর অয়া পারে, ব্যাপারি।

যাউকগা নামাজে মন দেয় হাসান আলী। এ সময়টা তার খুব প্রিয়। হুজুরে, কেরাত পরে আর সে মনভরে আল্লার লগে বাতচিত করে। আল্লা তো সবের কাছে একরূপে ধরা দেয় না।

হুজুরে কইচে, হুন হাসান মিয়া- আল্লা যে যেমতে ভাবে, তার কাছে তেমন। তুমি যদি মালিক ভাব, ডরাও, ভিক্ষা চাও- তাও ভি ঠিক। আবার, শত্তুর ভাইবা গাইল পারলেও অসুবিদা নাইকা। কেউ কেউ আচে, আল্লারে দুস্ত ভাবে।
তাতে কি, মনসুর হাল্লাজতো বলে ফেলছিল, “আনাল হক। আমিই আল্লাহ’’ তারপর যখন মৃত্যুদন্ড হয় ইসলামি আইনে, তখন চিল্লাফাল্লা না করে বরণ করে তা- ফেতনা ছড়াবার অপবাদ নিয়েও মনসুরের মনে হয়েছিল যে সে ঠিক তবে কাউকে বলা উচিত হয় নাই। আল্লার সাথে সম্পর্ক তাই পেয়ার-মুহাব্বত-এশক-ডর সবই হয়, কিন্তু, কাউকে জানান দিতে নাই।

গল্পটা হুজুরের মুখে শুনেছে সে। হাসান আলী লেখাপড়া জানে না বলে খুব দু:খু তার। তবে, আলেমসহবতে তা পুষিয়ে নেবার চেষ্টা করে।
একসময় যখন নারীসঙ্গের জন্য প্রাণ ছটফট করতো, তখন মসজিদে-মন্দিরে-ইনিভার্সিটির গুরুদুয়ারা- হাইকোর্টের মাজারে দিনের পর দিন আর রাতের পর রাত জেগে কাটাত। তখন অবশ্য গাঞ্জা-ভাঙের কু-অভ্যাসও হইছিল।

একদিন, জয়কালি মন্দিরের পুরোহিত কইছিল,
কামাস্তাদগ্রে সমবর্ত্ততাধি, মসসো রেত: প্রথমত যদারীত।।
পৃথিবী এইটার পেছনেই ঘুরতাছে তুমি একা না। তবে? হতভম্ব হাসান আলী জানে না তার বাবা কে ছিল! কি ছিল তার ধর্ম! তাইতো, যে কোন ধর্মের উপাসানালয়ে যেতে তার বাঁধে না। যেখানেই যাক, তার সাথে আল্লার যোগাযোগ হয়। তবে, মনে-প্রানে সে একজন মুসলমান।

গুরুদুয়ারাতে রাতের বেলা কীর্তন হয়।
সবাই মিলে, গানের সুরে ঐ একজনকে খুঁজে পেতে চায়। উদারা-মুদারা ছেড়ে গলা তারসপ্তকে গিয়ে ঠেকে। তবুও কাঁদতে কাঁদতে সবাই তাকে ডাকতেই থাকে, এতই তার মায়া। অনেক জ্ঞানী মানুষ আসতো সেখানে। সেখানে রাতের পর রাত কাটিয়ে হাসান আলী শিখেছে যে, বড় চাকরি- গোলদারি ব্যবসা- খ্যাতি- অর্থ কিছুই পাবে না যদি একমনে তাকে ডাকা যায়।
কিন্তু, আনন্দ পাওয়া যাবে; ভরপুর। সেখানেও হাসান আলী খারাপ গন্ধ-ভাল গন্ধ মিশিয়ে পেয়েছে। বোঝে সে, ঝাঁকের সবাই একরকম হয় না। একটা ভাত টিপলেই পাতিলের বিরানির কথা হয়তো বোঝা যায় কিন্তু উপাসনালয়ে প্রার্থনারত মানুষ প্রত্যেকে আলাদা আলাদা।

সিজদাতে আজকে অনেক্ষন কাঁদলো হাসান আলী।
কেন তাকে এমন একটা জীবন টানতে হচ্ছে? জন্মের ঠিক নাই, ছোট বেলা থেকেই নাটকীর পো উপাধি তার গায়ে খামের শরীরে ডাকটিকিটের মতো সেঁটে থাকবে? কেন, কেন? তার দোষ কি? বেশ্যাপাড়া কি সে খুলেছে? সেখানে যারা ঔরস নিক্ষেপ করে দাম চুকিয়ে চলে আসে তাদেরও কি এই আল্লাই বানান নাই? তাইলে, একজনের পাপের দাম আরেকজন সারা জীবন ধরে কেন দিবে? কেন জমিরের মতো মানুষের ধার ধার জিহবা ডেলি ডেলি তার বুক চিরে রক্তের নদী বইয়ে দেবে?
একসময় অভিযোগ শেষ হলো। নামাজ শেষ।
দোয়ার সময়, জমিরের ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার সাথে মিশে থাকা শরীরের চোলাইয়ের গন্ধ মিলাতে পারে না হাসান আলী। এখানে এসেও কেউ কেউ ভান করে! ইয়া মাবুদ!

মসজিদ এখন খালি।
হাসান আলী বসে আছে হুজুরের সাথে কথা বলবে। সাহস পাচ্ছে না, হুজুর তাকিয়ে আছে তার দিকে কিন্তু দেখছে না। কোথায় যেন হারিয়ে গেছেন, সুদূরে। হাসান আলী বোঝে। এমনতো না যে যারা দিনরাত ইবাদত করে, আল্লা শুধু তাদের জন্যই। এমন অবস্থা তারও হয়, সে প্রায়ই দোকানে এমন চোখে তাকিয়ে থাকে। তার চাউনি নাকি ভালা না, মাইনসে ডর পায়।
খালুজান এল্লিগাই তো চশমা নিতে কইছে, হাসান আলী, চউখ ঢাইকা রাখ না কেলা? মাইনসেরে ডর দেখায়া মজা নিতাছ নিকি? চসমা, কিনতাছ না কেলা?

হাসান আলীর প্রশ্নের উত্তরে হুজুর বলল, এস্তেখারা কর মিয়া। যা করবার চাও, তা নামাজ পইরা আল্লারে কও, হের বাদে- নিজের মনেই বুঝবা, করবা নিকি করবা না। আরেকটা কথা মিয়া, আইজকারে মন দেও। গতকাইল কি অইচিল হেইটা নিয়া পইরা থাকলে চলবা কেমন? বর্তমানের নেশায় বুঁদ না থাকলে, অতীত তো কষ্ট দেবেই!

হাসান আলী অবুঝ না। এই দুনিয়ার ঘাট কম দেখে নাই। কিন্তু কি করবে সে? কিছু কিছু অতীত আছে যার গন্ধ বর্তমানের গন্ধকে ছাঁপিয়ে নাক দখল করে রাখে।

দোকানে ফিরে গোছল করল ভাল করে, তারপর সাদা আলখাল্লাটা পড়ল। এটা খালা সৌদি থিকা নিয়া আইচে। হাজী সাবের তিন নাম্বার বিবি। তিনিও ভাল পান হাসান আলীরে।ভালা-বুঢ়া রাইন্ধা আর কিন্না ভি পাঠাইয়া দেন। আম্মাজান ডাকে তারে হাসান আলী।

মনে পড়তেই- দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে একটা, তোমার লীলা বোঝা কষ্ট মিয়াবাঈ- তোমার দুনিয়াতে: যাদের কাছ থিকা পিয়ার পাওনা ছিল তারা উড়াল দিল, আর আগানে-বাগানে পিয়ার পাই। মায়ার দুনিয়াতে তোমার ভালই কেরামতি। সবার ঘ্রান পেলেও নিজেরটা কখনও পায় না হাসান আলী। এ নিয়ে মাথাও ঘামায় না তেমন।

দুনিয়ার পথে ঠেক খেয়ে খেয়ে এখন আর কিছুতেই অবাক হয় না। তবে, গত শুক্রবারে বলধা গার্ডেন গিয়া হইছিল্। আহারে, কি সুন্দর। কোন গন্ধ ছাড়াই শুধু রংয়ের দোকান নিয়া কসমস ফুলগুলোর কি বাহার। জীবনের উপর থিকা মায়া উইঠা যায় এমন দেখলে।

এস্তেখারা হল।
ডানকাতে শুয়ে অপেক্ষা করতে লাগল সে। আজকের জন্য মান্টোকে খালুজানের বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে। সেখানে, ডেরাইবারের সাথে শুয়ে থাকবে। হঠাত, কেমন যেন একটা গন্ধ পেল ঘরে, চা-পাতা কড়া করে জ্বাল দিয়ে তার সাথে দু’চারটা বাসমতি ধানের পাতা কচলালে এমন মিষ্টি গন্ধ পাওয়া যায়।

ঠিক তখনই এস্তেখারার জবাব পেল সে। সুবহানাল্লাহ!

খাটের নীচ থেকে কোরবাণির বড় ছুড়িটা বের করল।হাতে টেনে দেখে, ভালই ধার। এইডা দিয়াই পত্যেক ইদে মিরকাদিমের সাদা সাদা পাউডার মাখা গাভীগুলিরে কোরবান করা হয়।

আলখাল্লার ভেতরে লুকিয়ে দোকান থেকে বের হয়ে হাটতে হাটতে আগা সাদেক রোডেএল।
লোডশেডিং চলছে। এখানেই, ১৩ নাম্বার বাড়ির নীচতলার বাইরের দিকে রুমে জমির থাকে। জোরে জোরে ডাক দিল, জমির সাব আছেন?
কেঠা? উত্তর এল।
আমি হাসান আলী একটু আহেন, কথা আচে।
জমির এল।
বাইরে আশ্বিন মাসের চাঁদ জ্বলজ্বল করছে। আজ পূর্ণিমা। এই চিপা গলিতেও কেমন করে যেন চুইয়ে চুইয়ে আলো চলে আসছে। চাঁদের গতি অবারিত, ফ্রী লাইসেন্স। কোনের দিকে একটু অন্ধকারে দুটি কুকুর আশ্বিন মাসের দাবী মেটাতে ব্যস্ত- চাপা কুই কুই আওয়াজ আসছে।পূর্ণিমার পাগল করা চান্নি পৃথিবীর কিছু মানুষের মাথা খারাপ করে ফেলে। অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনার ঘোর লাগে।

ঘরঘর আওয়াজটা এখনো বের হচ্ছে, কোরবানি দিলে গরুর গলা দিয়ে যেমন বের হয়।পিচকিরির মতো রক্ত বের হচ্ছে। কুকুর দুটো তাজা রক্তের গন্ধ পেয়ে জোড়কলম ছুটিয়ে ছুটে এসে চেঁটে চেঁটে খেতে লাগল। হাসান আলীর পায়ের চাপে নড়তে না পারা, জমিরের সাদা দাড়ি রক্তের জটে কালো দেখাচ্ছে। চাঁদের আলোতে সব কালোই দেখা যায়।কোন বাড়ির বারান্দা থেকে নারীকন্ঠের তীক্ষ্ণ চিতকার আসলো। ডরাইচে, মালুম অয়। মায়্যা মানুসরে নিয়া মুশকিল- খালি চিল্লামিল্লি করে।

আলখাল্লাতে ছুড়িটা মুছে আকাশের দিকে তাকিয়ে হা হা করে হাসছে হাসান আলী। দু’চোখ বেয়ে দরদর করে পানি পড়ছে। বহুদিনের অতৃপ্তির প্রতিশোধ সম্পন্ন। খানকীর বাচ্চা হবার কষ্টে নয়, যারা তাকে খানকীর বাচ্চা বানিয়ে আবার প্রতিদিন মনে করিয়ে দেয়, তাদের রক্তের গন্ধ নিয়ে কষ্ট ভুলতে চায় সে।মনটা তৃপ্তিতে ভরে আছে।

হঠাত, নাকে ধ্বক করে পঁচা একটা গন্ধ আসে- চুকা চুকা একটা গন্ধ। তার শরীর থেকেই বের হচ্ছে- খুনীর গন্ধ। তা কেন? তবে যে সে এস্তেখারা করলো?

কেন যেন ঠিক তখনই, আইত্যান শুরু হলো;আশ্বিনা ঝড়। আইত্যান এমনই বলা নেই কওয়া নেই দিগ্বিদিক ছুটে আসে মহররমের আবু হানিফার ঘোড়ার মতো।
দরবারি উস্তাদ- মিয়া তানসেন মেঘমল্লার দিয়ে একবার শুকনা ঝকঝকে আকাশে বৃষ্টি ঝরিয়েছিল আকবর বাদশার জমানায়। গল্পটা হুনছিল খালুজানের কাছে। হেই থেইকাইতো মান্টোর নাম দিছিল আকবর আলী। এখন, তবে পরিষ্কার আকাশ বৃষ্টি ঝরালো কেন? বেজন্মা হবার আজন্ম হাহাকার কি তবে তারসপ্তক ছুঁয়েছে?

চাঁদ ঢেকে আকাশ কালো, নিমিষেই। বাতাসে সব উড়ছে। পতপত করে উড়ছে হাসান আলীর জোব্বা।বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা ঝরছে।

চারদিক থেকে হইহই করে মানুষ ছুটে আসছে- হাসান আলী প্লান অনুযায়ী পালাতে পারছে না। তার হিসাব মিলছে না, শরীরের গন্ধ মোঁছার জন্য পাগলের মতো দুহাতে রক্ত নিয়ে শরীরে মাখতে লাগলো। বৃষ্টির পানি আর রক্তের মিশ্রনের আঁষটে গন্ধ মিলছে না। চুকা গন্ধটা রয়েই গেল।

আকাশের দিকে তার নিরুত্তর প্রশ্ন, তবে যে তোমার কাছে অণুমতি নিলাম?
মনে হল, এই তোমার পথ?
অতিন্দ্রীয় যে ঘ্রাণের ক্ষমতা তাকে ঘিরে রেখেছিল তার বধ হলো নিজের শরীরের গন্ধেই!

নাহ, মানুষ হত্যার অনুমতি কারো নাই, এর জন্য এস্তেখারা চলে না।
কোন উছিলাতেই, একজনের অধিকার নাই আরেকজনের রক্ত হাতে মাখার।

বিচারের অধিকার শুধুই আহকামুল হাকীমের;কাহহার হবার অধিকার একান্তই সংরক্ষিত।

স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট

(গল্পের প্রয়োজনে যে সব অশ্লীল কথা উঠে এসেছে, তা পথ চলতি জীবন কথা। এর দায়দায়িত্ব লেখকের নয় বরং গল্পের কুশীলবের।)


মন্তব্য

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

বাই, এই রহম লেখার হাত পাইসেন কই? এত লাম্বা গফডা শ্যাষ কইরতে গিয়া কুন খান দিয়া টাইম গেল গা বুজবার ফি পারি নাইক্কা!! পইড়া মনে লয় ইলিয়াস সাবের লেখা পড়তাসি।

কতডা ভাল্লাগসে কয়ার পার্বো না!! গুল্লি উত্তম জাঝা! লেখা -গুড়- হয়েছে

অতিথি লেখক এর ছবি

চিলেকোঠার সেপাই- বাংলা সাহিত্যে বাঙালি লেখকের লেখা অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপাখ্যান। লইজ্জা লাগে , বেশি বড় হয়ে গেল? আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিস্ট)

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

ছাপা বই একখান পাইলে কয়ার পারতাম, অহন এইখানে পারতাসি না। ছুড হউক আর বড়, মাগার লিখাডা "সেরাম" হইসে।

অতিথি লেখক এর ছবি

গুরু গুরু
লেখ‌নী অসাধারণ!!!
কোট করার মত অনেক লাইন ছিল,তাই আর কোট করলাম না।
সব মিলিয়ে অসাধারণ লেগেছে।

------------------------------
সুবোধ অবোধ

অতিথি লেখক এর ছবি

তাই কি? কোট করে দিলে পারতেন- তাহলে পাঞ্চ লাইন হিসাবে স্বতন্ত্র করে রাখতাম, পরের লেখা বিব্রত হতো না- লইজ্জা লাগে (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিস্ট)

গৃহবাসী বাঊল এর ছবি

ও এম জি অ্যাঁ

কি করছেন এইটা। মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়লাম।

ঢাকাইয়্যা কথার মাঝে কিছু কিছু জায়গায় শুদ্ধভাষা হান্দাইয়া গেছে। তাই মাঝে মাঝে একটু আধটু কেমন জানি লাগছিল। হাতে সময় থাকলে একটু দেখে নিতে পারেন।

লেখা -গুড়- হয়েছে হাততালি চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

ধরাইয়া দিলে পরে কোথাও ঠিক করে নিব, যদি দেন- আর এইখানে এডিট করার উপায় নাই। আমি ঢাকাইয়া না হলেও ছোটবেলা রায়সাহেববাজার এলাকায় কেটেছে- তারপর অনেকদিন কেটে গেছে দেঁতো হাসি পড়ার জন্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- , এইটা কি ছোটগল্প হলো না একটু বড় হয়ে গেল? (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট)

গৃহবাসী বাউল এর ছবি

আচ্ছা এত করে যখন বলছেন দাদা, দিই ধরিয়ে,

পনরো বচ্ছর আগে যখন সবতে মিল্লা মাগীপাড়া তুলে> তুইলা দিল

খুঁইজা ফয়দা নাই> নাইক্কা

এই জাতীয় বেশ কিছু আছে দেখলাম। সব ধরিয়ে দিতে গেলে ঘন্টাখানেক লাগবে। নিজে একবার একটু পড়ে নিন। হয়ে যাবে।

এটা ছোটগল্প বা ছোট সাইজের গল্প কোনটাই হয়নি। মাঝারি সাইজের গল্প হয়েছে। কারো কারো কাছে বড় গল্পও মনে হতে পারে। তবে ভাল হয়েছে। বুণট ভাল ছিল।

-----------------------------------------------------------
আঁখি মেলে তোমার আলো, প্রথম আমার চোখ জুড়ালো
ঐ আলোতে নয়ন রেখে মুদবো নয়ন শেষে
-----------------------------------------------------------

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- ( স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিস্ট)

ইসতিয়াক এর ছবি

একটা ভাত টিপলেই হয়তো পাতিলের বিরানীর কথা হয়ত বোঝা যায়, কিন্তু উপাসনালয়ে প্রার্থনারত মানুষ প্রত্যেকে আলাদা আলাদা

অতিথি লেখক এর ছবি

কথা কিন্তু সইত্য। ইয়ে, মানে... (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিস্ট)

কাজি মামুন এর ছবি

পরিণতি হয়ত ততটা নতুন নয়, কিন্তু তবু গল্পটি মনে থাকবে বহুদিন এর অনবদ্য হাসান চরিত্রটির জন্য, এর জীবন-ঘনিষ্ঠ সংলাপ, এর মাঝে লুকিয়ে থাকা জীবনের আটপৌরে দর্শনের জন্য।
লেখকের ব্যস্ততার কারণে বোধ করি, ভাষার মিশ্রণ ঘটে গেছে অনেক জায়গায়। তবে এগুলো খুবই তুচ্ছ আর সামান্য এডিটিংয়েই ঠিক করা সম্ভব। গল্পটির অন্তর্নিহিত শক্তিকে এই তুচ্ছ বিষয়গুলো মোটেই খর্ব করে না।

গল্পটি যেন পুরান ঢাকার এক সচিত্র প্রতিবেদন, জীবন থেকে তুলে আনা সংলাপ গল্পটিকে করে তোলে বিশ্বাসযোগ্য। পুরান ঢাকার মানুষ স্বাক্ষর করতে পারে না, কিন্তু উষ্ণ হৃদয়ের প্রতিযোগিতায় তারা অভিজাত ঢাকাবাসীকে হারাবে নিশ্চিত। পুরান ঢাকাতেই পাওয়া যায় খালুজানদের, মাক্কুসা মাজারের হুজুরদের।

যে সংলাপগুলো অনেকদিন মনে থাকবে, তার কিছু কোট করার লোভ সামলাতে পারছি নাঃ

যারে যেইটা গছায়া পারে, কেঠায় আর আসল-নকল বুজা পারে।/
দুনিয়াভর খাটাসের কাম হাইরা ভদ্রলোক কয়া পারো নিজেরে, আর বাপের নাম না জানলেই বেজন্মা/
বেশ্যাদের আড়ালে আড়ালে অনেকেই খুঁজে, মাগার দিনের বেলায় নাম শুনলেই ওযু করতে চাই- মানুষ এমনই খবিশ জানোয়ার/খানকির বাচ্চা হবার কস্টে নয়, যারা তাকে খানকির বাচ্চা বানিয়ে আবার প্রতিদিন মনে করিয়ে দেয়, তাদের রক্তের গন্ধ নিয়ে গন্ধ ভুলতে চায়

হাসান চরিত্রটির সাথে বিশ্বাসযোগ্য-ভাবে ফুটে উঠেছে জমিরের চরিত্রও। ইমামকে পেংটির পুত/খানকির পুত ডেকেও জমির 'হাসতে হাসতে বলে জমির মসজিদের দিকে পা বাড়ায়' বা 'দোয়ার সাথে' সে 'ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে' কাঁদতে পারে। এদের কাছে 'যে হারামজাদা, হেরে কওন জায়েজ'। এদের ধর্ম যেন এরা নিজেরাই সৃষ্টি করে।

গল্পটির যে দিকটা সবচেয়ে ভাল লেগেছে, তা হল, এক সহনশীল মুসলিম দর্শনের চিত্র আঁকা। গল্পের খতিব যার প্রতিনিধিত্বকারী। সুফিজম একেবারেই অলিক জিনিস নয়, এটি আছে আমাদের মুসলিম সমাজে, যেমনি আছে গল্পের খতিবের মাঝে। ইসলামের এক উচ্চ আদর্শকে যা ধারণ করে। আজকের এই চরম অ-সহিষ্ণু মুসলিম সমাজে খতিবের দর্শনের আরও বিস্তৃতি ঘটানো দরকার। যেই দর্শনের প্রভাবে মনসুর হাল্লাজও খতিবের কাছে শ্রদ্ধেয় হন, তার 'আনাল হক, আমিই আল্লাহ...যেখানেই যাক, আল্লাহ্‌র সাথে তার দেখা হয়' - এই দর্শনের ভুল ব্যাখ্যায় বিভ্রান্ত হতে হয়না এমনকি একজন খতিবকে।

অতিথি লেখক এর ছবি

এরকম কেউ পড়ছে জানলে, লিখতে ভালো লাগে- দর্শন নিয়ে ভেবেছেন বলে ধন্যবাদ। ভাষা, চরিত্র সব ছাঁপিয়ে দর্শন খোঁজা কঠিন ছিল কী? সুফিবাদ ভালো জিনিস ঠিক বলছেন। দেঁতো হাসি (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিস্ট)

তানিম এহসান এর ছবি

আন্ধার তো আলোর নকীব! বহুদিন পর কথাটা শুনলাম! পুরাতন ঢাকায় জীবনের একটা বড় সময় কেটেছে, বহু স্মৃতি মনে পড়ে গেল!

অতিথি লেখক এর ছবি

পুরাণ ঢাকায় থাকা- আর কোন কাজে যাওয়ার মধ্যে কি অদ্ভুত ভিন্নতা তাই না! হুম, কথাটা লোটাকম্বলে পড়েছিলাম কি- আঁধার তো আলোর নকীব? (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিস্ট)

আয়নামতি এর ছবি

ভালো লাগলো লেখাটা। চলুক

বিচারের অধিকার শুধুই আহকামুল হাকীমের;কাহহার হবার অধিকার একান্তই সংরক্ষিত।

এটা কি হাসান আলীর মনের কথা? নাকি স্বয়ং লেখকের?
এতো তাড়া কিসের আপনার? একটু ধীরে সুস্হে লিখলে কী হয় রে!

অতিথি লেখক এর ছবি

খাইছে , আমি লিখি একটা ঘোরের মধ্যে। একবার ঘোর ছেড়ে গেলে আর চরিত্রে ঢুকতে পারি না। তাই, লিখলাম তো ব্যস। তাড়া কি এ লেখার প্রেক্ষিতে বললেন? না সব মিলিয়ে? লইজ্জা লাগে আর হাসান আলীর মনের কথাটা কি আমার! জটিল প্রশ্ন হয়ে গেল দিদিভাই (নাম দেখে অনুমান)- কি জানি আরো ভেবে দেখতে হবে। চিন্তিত (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট)

আয়নামতি এর ছবি

অপরাধীর শাস্তির ব্যাপারে আপনার মতামত কী? সেটার জন্য আহকামুল হাকীম'ই ভরসা? রাস্ট্রের বিচার ব্যবস্হায় 'আহকামুল হাকীমের' ভূমিকা কী এবং কতটা? ভালো কথা সুফীবাদের স'ও আমি জানিনা ভাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

অপরাধী আসলে কি! অপরাধ বলতেই বা কি বুঝি! গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আইন তৈরি হয়- স্বার্থান্বেষি শ্রেণির কাজে বৈধতা দিতে! কে বলবে কোনটা অপরাধ আর কোনটা নয়! যদি ধর্মীয় বিশ্বাসী কেউ থাকে- তবে ধর্মই চূড়ান্ত দর্শন যেখানে পাপ/পূন্য ক্ষেত্র বিভাজিত- সেক্ষেত্রে আহকামুল হাকিম-ই ভরসা! কিন্তু অবিশ্বাসী কিংবা অধুনা দর্শন বিশ্বাসী অথবা স্ব-নির্বাচিত দর্শন অনুসারীদের ক্ষেত্রে আইনের শাসন রাষ্ট্র নির্ধারণ করে বৈকি। সুফিবাদ খুব কঠিন কিছু নয়- সবার আগে দুভাগে কাজ ভাগ করে নিতে হবে- ১। সৃষ্টিকর্তার প্রতি দায়িত্ব (বিশ্বাস, প্রার্থনা, প্রশংসা ইত্যাদি) ২। মানুষ, অন্যান্য প্রানীজগত/ পৃথিবীর প্রতি দায়িত্ব (সংক্ষেপে সৃষ্টির প্রতি দায়িত্ব)- সেখানে, খেয়াল রাখতে হয় যাতে নিজের দ্বারা কারো উপকার না হোক- ক্ষতি যাতে না হয়। তিনটি স্তর আছে,- শেষ স্তরে গেলে সৃষ্টিকর্তার সাথে সরাসরি সখ্যতা হয় এবং কিছু বিভূতি পাওয়া যায়। (মূলত: অণুশীলন প্রক্রিয়া দ্বারা ইন্দ্রিয় চর্চার মাধ্যমে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় শার্প করে )- এ এক অদ্ভুত জগত। যেখানে, জাগতিক সমস্ত প্রাপ্তি তুচ্ছ হয়ে যায় ভবিষ্যতের আশায় কিংবা বর্তমানের একক স্বত্তার সাথে সুসম্পর্কের নেশায়। আগ্রহী থাকলে, মাছনবী শরীফ (রুমি) দিয়ে পড়া শুরু করতে পারেন। কিংবা প্রয়োজন নেই ভাবলে নাও পড়তে পারেন। আপনা আপনা মর্জিকা মালিক হ্যায় সাব। (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিস্ট)

আয়নামতি এর ছবি

এ মুহূর্তে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীরাই সবচে' বড় অপরাধী। নয় কী???

হুম পড়ার কত কি যে বাকীরে ভাই! সবটা না হলেও কিছু পড়তে চেষ্টা করবো।
আপনি চট্ করে একবার লেখালেখির নিয়মে চোখ বুলিয়ে নিন। দারুণ মজারু করে বলা আছে সব। তবে এটুকু বলে যাই, সিরিজের পুরো লেখা একবারে দিবেন না। আর আপনার এবারের লেখাটা মনে হয় জলেই গেলো। ব্যাপার না, যখন সচল হবেন তখন ওটা দিয়ে দিবেন না হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

মন খারাপ , যুদ্ধ একটি সময়ের থমকে যাওয়া ইলাস্ট্রেটেড টাইম। এখানে, যারা সরাসরি অন্যের অধিকার হরণ করে। তারা যেকোন ভাবেই সৃষ্টিকর্তা এবং সমগ্র মানবতার অপরাধী। বাংলাদেশের ইতিহাসে গত ৪২ বছরে তারাই সবচেয়ে ঘৃণিত অপরাধী নি:সন্দেহে। হুম, পড়ে নিলাম- ঠিকাছে। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিস্ট)

কিষান এর ছবি

কী অসাধারণ একটা গল্প। আমি অবশ্য আগেই পড়ে নিয়েছি চোখ টিপি

পড়তে পড়তে বারবার চিলেকোঠার সেপাইয়ের কথা মনে পড়ছিল। সেটা আপনার কৃতিত্ব বলেই জানবেন। আর এরকম গল্প আরো চাই হাসি

লেখা -গুড়- হয়েছে

অতিথি লেখক এর ছবি

ইয়ে, মানে... (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিস্ট)

 মেঘলা মানুষ এর ছবি

ভাল লেগেছে গল্প। তবে, 'চা বাজান' এই অংশটা না থাকলেও পারত। এটা অনেকটাই বহুল প্রচলিত কৌতুক।
চরিত্রচিত্রণ দুর্দান্ত হয়েছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

হয়েছে কি বলি! লেখার সময় আমি বুঁদ ছিলাম - তখন আমাকে থামিয়ে - সম্ভবত আলপিনে ছাঁপা এই কৌতুকটা বললো আমার এক কলিগ (শুনে হাসলাম )। কোন ফাঁকে যেন লেখায় ঠুকে দিলাম। ইস।। সঙ্গদোষ। অ্যাঁ (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিস্ট)

অতিথি লেখক এর ছবি

বাহ বাহ। কিচ্ছু বলার নাই। পরেরটা কবে পাচ্ছি?

স্বয়ম

অতিথি লেখক এর ছবি

পাবেন, মডুরা ছাঁপলেই পাবেন। শয়তানী হাসি (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিস্ট)

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

প্রথম পাতায় এক লেখকের একাধিক লেখা ছাপা হয় না। সুতরাং আপনার লেখা প্রথম পাতা থেকে সরে যাবার পর লেখা সাবমিট করুন।

অতিথি লেখক এর ছবি

জানা ছিল না। খাইছে তাই করবো এবার থেকে। তবে কি যে লেখা সাবমিট করে ফেলেছি ইতোমধ্যে সেটা রিজেক্টেড? না পরে আবার চেষ্টা করবো? আর একটা ব্যাপার এই বেলা জেনে নেই, কোন ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান লিখতে হলে কি পুরোটা একবারে সাবমিট করতে হবে? না এক এক পর্ব করে দিলেই হবে? দেখুন- এই কদিন নিয়মিত সচলে ঘোরাঘুরি করে জেনে ফেলেছি আপনি মডুদের একজন! তাই পেয়ে একবারে কতগুলো প্রশ্ন করে ফেললাম! আসলে, বছরে একমাস ছুটিতে থাকি। সারা বছর ব্যস্ততার মাঝে যে লেখাগুলো জড় হয়েছে- সেগুলোই দিচ্ছি। (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিস্ট)

মালাকাইটের ঝাপি এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিস্ট)

অতিথি লেখক এর ছবি

এখনো পর্যন্ত আপনার যে কটা লেখা পড়েছি তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ভাল লাগল।
- একলহমা

অতিথি লেখক এর ছবি

সবচেয়ে গোঁছানো বলছেন? আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিস্ট)

মসীলক্ষণ পণ্ডিত এর ছবি

জমজমাট কাহিনী, সাবলীল বর্ণনা আর পরিমিত রসবোধ! দারুণ দারুণ! একটানে পড়ে ফেললাম, খুব ভালো লাগলো। হাততালি

অতিথি লেখক এর ছবি

পরিমিত রসবোধ! বাহ! আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

বেচারাথেরিয়াম এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু

অতিথি লেখক এর ছবি

অ্যাঁ (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিস্ট)

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

দেঁতো হাসি (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিস্ট)

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

চমৎকার, চমৎকার একটা গল্প। কিছু কিছু বাক্য, শব্দ, উৎপ্রেক্ষা- খুবই ভালো লেগেছে। ভালো লাগেনি লেখার এডিটিং। অনুচ্ছেদ ভাগ করা নেই, চোখে চাপ পড়েছে- বিরক্তি বেড়েছে।

মূল লেখা শেষ হবার পর সময় নিয়ে একবার কাটছাঁট করলে লেখার সৌন্দর্য বাড়ে বই কমে না। পরের লেখাটা আরো গোছালো হবে আশা করি।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক দেরীতে হলেও পড়লাম, অসাধারন হাততালি , এত লম্বা গল্প একটানে শেষ হয় গেল চলুক
ইসরাত

মেঘা এর ছবি

অসাধারণ একটা লেখা। মন্তব্যগুলো আগেই পড়েছিলাম। লেখা বড় বলে হাতে সময় নিয়ে পড়তে চাইছিলাম বলে বেশ দেরিতেই পড়লাম। লিখে যান এমন সব অসাধারণ গল্প। শুভ কামনা থাকলো।

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।