বিশ্বে ঘটে যাওয়া কিছু অজানা সুনামীর কথা -২য় পর্ব : সাগর দ্বিখন্ডন ও মোজেস এর পার হয়ে যাওয়া

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ২৮/০৯/২০১৩ - ১০:৫৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আগের পর্বে বলেছিলাম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে কিভাবে বোমা বানিয়ে সুনামী সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এখন বলবো আমাদের সবার জানা একটা ঘটনা, কিন্তু সে ঘটনা যে সুনামীর সাথে সম্পর্কযুক্ত সেটা অনেকেই জানিনা।

প্রাচীন বাইবেলের সূত্র ধরে আমরা সবাই হযরত মুসা বা মোজেস এর কাহিনী জানি। প্রাচীন বাইবেলের একটা খন্ড হলো এক্সোডাস (Exodus),যেখানে বলা আছে কিভাবে মোজেস ইসরায়েলীদের মিসর থেকে ইসরায়েলী ভূমিতে নিয়ে যায় (ইংরেজী এই শব্দটা পুরানো বাইবেল থেকেই এসেছে, যার অর্থ ধর্মীয় কারনে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গাতে স্থানান্তর) । এক্সোডাস (Exodus) এর সূত্র ধরে আমরা জানতে পারি, আনুমানিক ৩৫০০ বছর আগে মোজেস মিসরের ফারাওদের বন্দী দশা থেকে ইসরায়েলীদের মুক্ত করে নিয়ে যায়। কিন্তু যখন ইসরায়েলীরা মিসর ত্যাগ করার পথে থাকে, তখন ফারাও তাদের যেতে দেওয়ার ব্যাপারে তার মন পরিবর্তন করে। ইসরায়েলীদের আটকানোর জন্য সে তখন ৬০০ ঘোড়ার গাড়ী করে সৈন্য সামন্ত পাঠায়। এরপরের ঘটনা বাইবেলের সূত্র ধরে আমরা সবাই জানি। মোজেস এবং তাঁর অনুসারীদের বাচানোর জন্য খোদা তখন সাগর দুই ভাগ করে দিলো, এবং মোজেস তাঁর অনুসারীদের নিয়ে সাগরে সৃষ্টি হওয়া শুকনো পথ দিয়ে নিরাপদে পার হয়ে গেলো। তাদের পিছু পিছু ফারাও এর বাহিনী আসতে থাকলো। কিন্তু মোজেস ও ইসরায়েলীরা সবাই পার হয়ে যাওয়ার পরেই ফারাও এর বাহিনীর উপর সাগরের পানি ফিরে এলো এবং তাদের ডুবিয়ে দিলো। বাইবেলের বর্নণা হতে আমরা এটাই জানি।
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করে যে এই ঘটনার ভিন্ন ব্যাখ্যা আছে!

অনেক বিশেষজ্ঞ বদ্ধমূল বিশ্বাস করে যে রেড সী/লোহিত সাগর ( Red Sea)এর পরিবর্তে মোজেস ও তাঁর অনুসারীরা আসলে বড় একটা জলাভূমি পার হয়েছিল, যে জলাভূমি ছিল একদা রীড সী (Reed Sea) এর উত্তরে। মনে করা হয়, এই রীড সী ছিল নাইল ডেল্টার ঠিক পূর্ব দিকে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, এটা ছিল ভূমধ্যসাগরের উপকূলের অতি নিকটে।

এখানে মজার বিষয় হলো, আমরা যদি সেই আসল হিব্রু বাইবেল পড়ি, তাহলে দেখতে পারি যে লোহিত (Red) শব্দটা পরে ভুল অনুবাদ করা হয়েছে। আসল হিব্রু বাইবেলে আছে যে মোজেস এবং তাঁর অনুসারীরা ইয়াম ছাপ (Yam Suph) পার হয়, যার অর্থ রীড সাগর বা সী অফ রীডস্ (Sea of Reeds).
সুতরাং মোজেস এবং তাঁর অনুসারীরা রেড সী (Red Sea)পার হয় নাই, আসলে তারা পার হয়েছিল রীড সী (Reed Sea)। আর সেই পার হওয়া পথটা সাগরের কোন সরু অঞ্চল ছিল না, বরং সেই জায়গা ছিল ভূমধ্যসাগরের উপকূলের সাথে একটা অগভীর জলাভূমি!

এখন আমরা অনেকেই মনে করতে পারি যে, রীড সাগরকে দুই ভাগ করে শুষ্ক পথ তৈরী করে, পরে সেখানে আবার প্রবল পানির তোড়ে ভাসিয়ে দেওয়া সম্ভব হতে পারে একমাত্র অলৌকিক কিছু থেকে।

কিন্তু আসলেই একটা উপায় আছে, যেখানে প্রকৃতি ঠিক এই কাজটাই করতে পারে, আর সেটা সুনামীর সাথে সম্পর্কযুক্ত! আর এভাবেই প্রকৃতি করতে পারে।
পৃথিবীর সভ্যতার ইতিহাসে এযাবৎ কালের সবচেয়ে অন্যতম ব্যাপক ধ্বংসাত্মক অগ্নুৎপাত হয়েছিল আনুমানিক ৩৫০০ বছর আগে, অনেক বিশেষজ্ঞের মতে এটা হয়েছিল ঠিক মোজেসের কাহিনীর সমকালীন সময়ে। এটা ছিল স্যান্তোরিনির সেই ব্যাপক অগ্নুৎপাত যেটার কারনে ক্রীটের মিনোআন সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। স্যান্তোরিনির অগ্নুৎপাত এবং ধ্বসে যাওয়া এতই ভয়াবহ ছিল যে, এর কারনে সাগরে যে বিশাল আয়তনের পানির স্থানান্তর ঘটেছিল, তা থেকেই তখন সুনামী হয়েছিল।

খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, যখন সাগর তার শুন্য জায়গা পুরন করার কাজে ব্যস্ত ছিল, সে তখন আশে পাশের অঞ্চল থেকে বিশেষ করে উপকুল থেকে পানি টেনে নিলো, এমনকি নাইল ডেল্টা থেকেও পানি টেনে নিলো। এটা আসলে সুনামী হওয়ার ঠিক আগমুহুর্তে ঘটে থাকে, একে বলা হয় 'ড্রব্যাক (Drawback)'। (বিঃ দ্রঃ আপনি যদি কখনো সাগর তীরে যেয়ে খেয়াল করেন, তাহলে দেখতে পাবেন যে একটা বড় ঢেউ আসার আগে তীর থেকে পানি কিছু সময়ের জন্য সরে যেয়ে আবার আছড়ে পড়ছে। একটা বড় কোন পাত্রের ভিতর পানি বা অন্য কোন তরল জাতীয় পদার্থ নিয়ে আপনি যদি উপর থেকে টেনে ঊঠান, দেখতে পাবেন যে পাত্রের চারদিক থেকে তরলগুলো সরে আসছে- এটা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।)

যেহেতু সাগর তার উপকুলবর্তী জায়গা থেকে সব পানি টেনে নিলো, মিসরের রীড সাগর (Reed Sea)অঞ্চলের অগভীর জলাভূমি এলাকা হতে হাজার হাজার কোটি গ্যালন পানি সরে যেয়ে সেখানে প্রায় ২০ মিনিটের জন্য পানিশুন্য হয়ে গেলো, যা একটা শুকনো পথের মতো হয়ে গেলো (সৃষ্টিকর্তা যদি সাগরের পানি দুইভাগ করতো, তাহলেও এভাবেই সমান ফল হতো)। তারপরেই হঠাৎ করে সুনামী এসে কূলে আছড়ে পড়লো, উপকূলের কয়েক মাইল ভিতর পর্যন্ত ভাসিয়ে নিয়ে নদীর উপত্যাকা ডুবিয়ে দিলো। যখন সুনামী আছড়ে পড়লো, ফারাও এর সৈন্য বাহিনী ঐ পানির তোড়েই ডুবে গেলো। এটাই হলো বিষেশজ্ঞদের ব্যাখ্যা। আসলেই যদি স্যান্তোরিনির সেই ভয়াবহ অগ্নুৎপাতের কারনে মিসরে এই সুনামী হয়ে থাকে, সেটা হয়তো প্রজন্মের পর প্রজন্ম মনে রেখেছে, আর এই মহান কাহিনী তৈরী হওয়ার পিছনে সেটা বিরাট অনুপ্রেরনা হিসাবে কাজ করেছে।

কিন্তু এই ঘটনা আসলে প্রাকৃতিক শক্তির একটা উদাহরন। প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা এমনভাবে অবিশ্বাস্য কোন ঘটনা ঘটে, যেটাকে অনেক সময় ' সৃষ্টিকর্তার কারসাজী' বলে ধরা হয়।

desh_bondhu

ছবি: 
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন

মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

২১ শে সেপ্টেম্বর ২০১৩, রাত ৮ টায় BBC 4 চ্যানেলে প্রচারিত Professor Iain Stewart এর ডকুমেন্টারী '10 Things You don't know about Tsunami' হতেই আমার এই লেখাটির সূত্র।
desh_bondhu

অতিথি লেখক এর ছবি

সচলায়তন এর নীতিমালা অনুসারে একই সময়ে একই লেখকের একাধিক পোষ্ট প্রথম পাতায় রাখা যাবে না। কিন্তু এই পোষ্টটির ঠিক ২টি পোষ্ট নিচেই আপনার আগের লেখাটি আছে। আশা করি নীতিমালা অনুসরণ করে নিয়মিত লেখা চালিয়ে যাবেন।
ধন্যবাদ।

--সাদাচোখ
sad_1971এটymailডটcom

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি জানি না, একই লেখকের ২ টা লেখা প্রথম পাতায় থাকতে পারবে না। তবে এটা তো আর আমার দোষ না। মনে হয় মানুষজন এখন লেখা লেখি কমিয়ে দিয়েছে, তাই সেই শুন্য জায়গা আমার আগেরটা দিয়ে পূর্ণ করা হয়েছে চোখ টিপি

মন মাঝি এর ছবি

সুন্দর লেখা। এই জায়গাগুলির কিছুকিছু একসময় ঘুরে আসায় বিষয়টা সম্পর্কে আমার একটু আগ্রহ আছে। ফলে এ সম্পর্কে (আপনার লেখা সম্পর্কে না) আমার কিছু জেনারেল দ্বিমত ছিল। আশা করি কিছু মনে করবেন না।

১। বর্তমান কালের নিরঙ্কুশ সাংখ্যাগরিষ্ঠ - এমনকি বিবিলিকাল বিশেষজ্ঞরাই "এক্সোডাস"-এর এই কাহিনিকে কল্পকাহিনি মনে করেন। রূপক অর্থে নেন। আর বিজ্ঞানীদের তো কথাই নেই। এইসব লোহিত সাগর পেরুনো-টেরুনোর ছিটেফোঁটা মাত্রও প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমান পাওয়া যায়নি। একটা কাল্পনিক মীথের সাথে একটা বাস্তব ও বৈজ্ঞানিক প্রমানসম্পন্ন ঘটনকে (মিনোয়ান অগ্নূৎপাত) জুড়ে দেয়াটা যুক্তিসঙ্গত মনে হয় না। এটা অনেকটা টেরোডাক্‌টাইলের ডানার কথা পড়ে পঙ্ক্ষীরাজ ঘোড়ার উড়তে পারার ব্যাখ্যা দেয়ার মত হয়ে যায়। আগে তো এক্সোডাস ও পঙ্ক্ষীরাজ ঘোড়া প্রমাণ করতে হবে, তাই না?

No archeological evidence has been found to support the Exodus,[3] and most archaeologists have abandoned the investigation of Moses and the Exodus as "a fruitless pursuit".[4] The consensus among biblical scholars today is that the story is best seen as theology, a story illustrating how the God of Israel acted to save and strengthen his chosen people, and not as history. ( সূত্র )

২। তারপরও বাজার মাত করে সম্ভবত কিছু কামানোর ধান্ধায় এরিক ফন দানিকেন টাইপের কিছু স্বঘোষিত বিশেষজ্ঞ সব সময়ই পাওয়া যায়। এদের কারো মতে পিরামিড ভিন্‌গ্রহবাসীরা বানিয়ে গেছে, কারো মতে সভ্যতার জন্ম সাগরতলে ডুবে যাওয়া আটলান্টিস মহাদেশে যারা কিনা একবিংশ শতাব্দীর মানুষের চেয়েও উন্নত ছিল, ইউএফও-তে চড়ে আমাদের সভ্যতার শিক্ষাগুরু এলিয়েনরা আমাদের অগ্রগতির উপর নজরদারি করে, ইত্যাদি। এর সবকিছুর মধ্যেই এসব বিশেষজ্ঞরা কিন্তু বিজ্ঞান বা কোন বাস্তব ঘটনার সাথে যোগসূত্র খুঁজে পান। খুঁজে পেতে হয় আরকি, নইলে বই বা ডকুমেন্টারিটা কাট্‌তি পাবে ক্যাম্‌নে?! বাইবেলের নানান রূপকাহিনি নিয়েও এধরণের তথাকথিত "বিশেষজ্ঞ"-রা কিছুদিন পরপরই নানারকম হাঁসজারু বা বকচ্ছপ-মার্কা থিউরি হাজির করেন। কারও মতে বেহেশ্‌ত (গার্ডেন অফ ইডেন) আসলে দক্ষিণ ইরাকে ছিল, কারও মতে বাহরাইনে, কারও মতে ইরানে, এমনকি - এখনকার পাকিস্তানের একটা অঞ্চলে ছিল এমন থিউরিও আছে। ডা ভিঞ্চি কোডের কথা তো আমরা অনেকেই জানি। এক্সোডাস নিয়েও এমন একটা না - অনেকগুলি জোড়াতালি-মার্কা আধুনিক কল্প-থিউরিই আছে। কোন মতে লোহিত-পেরুনোটা (ক্রিয়াৎ ইয়াম সুফ) এখনকার গাল্‌ফ অফ সুয়েযের উত্তর-প্রান্ত দিয়ে, কোন মতে এটা সুয়েযের উত্তর-প্রান্তের কোন জায়গা দিয়ে বা নিকটবর্তী কোন খাল-বিলের মধ্য দিয়ে, কোন মতে লেক তিমসা দিয়ে, কোন মতে এটা এমনকি গাল্‌ফ অফ আকাবা দিয়ে হয়েছে - যা কিনা অনেক দূরে সিনাই পেরিয়ে। শুধু লোহিত পেরুনো না, মোজেসের সময় ফারাও কে ছিলেন সে নিয়েও তক্কাতক্কির কোন শ্যাষ নাই। এইসব থিউরির অনেকগুলির মধ্যেই নানা রকম তথাকথিত "বৈজ্ঞানিক" বা ভূতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা জুড়ে দেয়া হয়। মুশ্‌কিল হল, এইসব কল্প-থিউরিস্টরা অন্য সব জায়গায় পৃথক বা দ্বিমত হলেও - একজায়গায় প্রায় সবাই এক। সবাইই মনে হয় -- ঘোড়ার আগে গাড়ি জুত্‌তে চান। অর্থাৎ, যে ঘটনার ঐতিহাসিক বা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা (কিভাবে হল ইত্যাদি) তারা দেয়ার চেষ্টা করেন - সেই মূল ঘটনার অস্তিত্ত্বই তারা বৈজ্ঞানিক বা ঐতিহাসিক ভাবে প্রমান করতে পারেন না অনেক সময়, বা এড়িয়ে যান। এটা অনেকটা 'কাঠালের আমসত্ত্বের' ফুড-ভ্যালু বা ভাইটামিন কন্টেন্ট "বৈজ্ঞানিক" ভাবে নির্ধারণ করার মত। আগে 'কাঠালের আমসত্ত্বের' অস্তিত্ত্ব তো প্রমান করতে হবে, তাই না? সিলেটি ভাষায় একটা প্রবচন আছে (বাংলায় দিলাম) - "মূলে নাই ঘর, তার আবার পূব দিকে দুয়ার!"।

৩। মিনোয়ান অগ্নুৎপাতের উপর কাছাকাছি সময় ঘটা আরও অনেক ঐতিহাসিক ও মীথিকাল ঘটনার দায় চাপিয়ে দেয়া হয়। কোথায় যেন পড়লাম, আটলান্টিস ডূবে যাওয়ার জন্যেও নাকি এটা দায়ী - যদিও আদতে আটলান্টিসে অস্তিত্ত্ব প্রমাণের কোন খবর নাই এদিকে। যত দোষ নন্দ ঘোষ। যারা এইরকম দায় চাপান তারা অনেক সময়ই ঐ অগ্নুৎপাতের তারিখ আর তাদের আলোচ্য ঘটনার তারিখকে সমসাময়িক দেখানোর জন্য দু'টোকেই বেশ খানিকটা নিজেদের সুবিধামত ম্যানিপুলেট করেন মনে হয়। এত দূরবর্তী সময় যে, দুয়েকশ বছর এদিক-ওদিক করা মনে হয় তাদের খুব একটা গায়ে লাগে না! বেশ কিছুকাল আগে ভয়েস অফ আমেরিকাতে এমনি এক গবেষকের সাক্ষাৎকার শুনেছিলাম, যার দাবী তিনি মিশরসহ ঐ দ্বীপের আশেপাশের দেশগুলিতে ফসিলিভূত ট্রি-রিঙের উপর গবেষণা করে ঐ অগ্নুৎপাতের একেবারে সঠিক সময় বের করেছেন এবং এর সাথে ইউসুফ নবীর সময় মিশরে হওয়া ৭ বছরব্যাপী (?) নিস্ফলা দুর্ভিক্ষটার সরাসরি "বৈজ্ঞানিক" কার্যকারন যোগসূত্র স্থাপনে সক্ষম হয়েছেন। এখন এই থিউরিটা সঠিক হলে কিন্তু সুনামিজনিত লোহিতবিভাজন-তত্ত্ব বাতিল হয়ে যায়, কারন ঐ দুর্ভিক্ষ লোহিত-পেরুনোর অনেক আগের ঘটনা। সুতরাং অগ্নুৎপাতও।

৪। ইয়াম ছাপ / ইয়াম সুফ (Yam Suph)-এর সঠিক অর্থ নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ আছে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। এটা বলতে যে 'রীড' সী-ই বোঝানো হয়েছে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। অন্য অনেক বিশেষজ্ঞ অন্য রকম মনে করেন। রীড (বাংলায় নলখাগড়া) অর্থাৎ হিব্রু সুফ/ সফ / ছাপ বলতে অনেক বিশেষজ্ঞের মতে 'ঝড়' বা 'শেষ' - ও বোঝানো হয়ে থাকতে পারে।

ওল্ড টেস্টামেন্ট, প্রাচীণ নিকট-প্রাচ্য এবং প্রত্নতত্ত্বের অধ্যাপক জেম্‌স কার্ল হফ্‌মেয়ারের ভাষায়,

The crossing of the sea signaled the end of the sojourn in Egypt and it certainly was the end of the Egyptian army that pursued the fleeing Hebrews (Ex 14:23-29; 15:4-5). After this event at yam suph, perhaps the verb soph, meaning "destroy" and "come to an end," originated (cf. Amos 3:15; Jer 8:13; Isa 66:17; Psa 73:19). Another possible development of this root is the word suphah, meaning "storm-wind"...The meanings "end" and "storm-wind" would have constituted nice puns on the event that took place at the yam suph.[সূত্র]

৫। আগেই বলেছি কাল্পনিক ইয়াম সুফের কাল্পনিক অবস্থান নিয়েও কোন ঐক্যমত্য নেই। তেমনি পানি সরে যাওয়া নিয়ে 'কাল্পনিক-ঘটনার-যৌক্তিক-কল্পনাজাত-ব্যাখ্যা' (অর্থাৎ 'ঘরবিহীণ পূর্বদিকের দরজা' আরকি!!!)-ও অনেকগুলি আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আনড্রামাটিক কিন্তু কেন যেন কমন-সেন্স ব্যাখ্যা মনে হয় স্রেফ - জোয়ার-ভাঁটা। ভূমধ্যসাগরের কাছে যে সী অফ রীড্‌স, অর্থাৎ নলখাগড়ায়-আকীর্ণ অগভীর জলাভূমির কথা বলা হচ্ছে সেরকম কোন জলাভূমি হয়তো জোয়ারের সময় ডুবে যেত, আর ভাটার সময় তার পানি সরে যেত। অনেকটা ধরুন বাংলাদেশের সেন্ট-মার্টিন্স দ্বীপ আর তার দক্ষিণে ছেঁড়া দ্বীপে্র মধ্যে যেমনটা হয় সেরকম কিছু হয়তো। মোজেসরা ভাটার সময় এই বিশাল লেকটা পেরিয়ে গেছেন, আর পিছনে ধেয়ে আসা ফেরাউনের দল মাঝপথে দ্রুত ফিরে আসা জোয়ারের পানিতে ধরা খেয়ে গেছে। লেক ও ঘটনার ব্যাপ্তি, সময়, টাইমিং ইত্যাদি নানা বিষয় ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে এই ঘটনাকেই হয়তো এক্সোডাসে নাটকীয় করে ফেলা হয়েছে। যাজ্ঞে, এই জোয়ার-ভাঁটা তত্ত্ব বাস্তবে এভাবে ঘটা সম্ভব কিনা আমি জানি না, এবং মূল ঘটনা প্রমানিত না হওয়া পর্যন্ত এসবের 'ব্যাখ্যা' নিয়ে মাথা ঘামানোরও আগ্রহ নেই। আগে তো ঘর বানানো হোক, তারপর সেই ঘরের দরজা পূবে না পশ্চিমে হল তা নিয়ে ভাবা যাবে!

৬। আপনার লেখাটা পড়ে এত বড় মন্তব্য করে ফেলার আরেকটা কারন হল, ২০০৭ সালে নীলনদের মোহনা-সহ এই নাইল-ডেল্টা থেকে শুরু করে সাগর-তীরবর্তী নানা রকম এইসব খাল-বিল-লেক-মেক পেরিয়ে সুয়েজ হয়ে গাল্‌ফ অফ সুয়েয, রেড-সী, সিনাই ও তুর-পর্বত পর্যন্ত ঘুরাফিরা করে এসেছি। বিবলিকাল মীথ অনুযায়ী মোটামুটি মোজেস ও তার অনুসারী ইহুদীদের চলাফেরার প্রাচীণ জেনারেল রুট আরকি। দারুন সুন্দর এই জায়গাগুলির কথা আবারও মনে পড়ে গেল আপনার লেখা পড়ে। মীথে বিশ্বাস না করলেও, অদ্ভূত ব্যাপার হল মীথের উৎস ও চারণভূমিগুলিতে ঘুরতে কিন্তু আমি একটা আলাদা রকম চার্ম পেয়েছি!! এর একটা মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা খুঁজতেছি এখন। হাসি

****************************************

হিমু এর ছবি

আপনি কি মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে কোনো গোপন কারবারে জড়িত?

মন মাঝি এর ছবি

হা হা হা! হ, ধুরসি আমার পত্নীভ্রাতা!

আপনি আমারে একবার র‍্যাম্বো-টাইপের ইন্টেলিজেন্স অপিসার বানান, আরেকবার বানান টেররিস্ট! ব্যাপারটা কি বলেন তো? আপনার জ্বালায় কি একটু দেশ-বিদেশ যাইতে পারুম না? হো হো হো

আচ্ছা যান, আজকে গূঢ় তত্ত্বটা বলে ওয়ান্স এণ্ড ফর অল আপনার সব কৌতুহল নিরসন করে দিচ্ছি। তবে সাবধান, এটা টপ সিক্রেট ইনফো - কানে কানে বলতেসি। খবরদার আর কাউরে বলবেন না। বললে কিন্তু খবর আসে!

ইয়ে, আমি হলাম গিয়ে ২৪/৪ শাল বাগানে হেড কোয়ার্টারাস্থিত বঙ্গদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের দুর্ধর্ষ সিক্রেট এজেন্ট - MM9. ২০০৭ সালে আমরা খবর পাই ভিলেন চূঁড়ামণি পাগল বৈজ্ঞানিক খবির চৌধুরি মিশরে এক মহা ষড়যন্ত্র পাকাচ্ছে। সে নাকি মোজেসের আর্ক অফ দ্য কভেন্যান্টের অভ্যন্তরস্থ তুলনাহীণ অলৌকিক-মহাশক্তিধর "ট্যাবলেট্‌স অফ স্টোন" (তুর পর্বতে মোজেসকে দেয়া ঈশ্বরের বাণী তথা টেন কমাণ্ডমেন্টস ঈশ্বরের স্বহস্তে খচিত পাথরের ফলক) হস্তগত করে ফেলেছে। এখন সেটা সিনাইর জনবসতিহীণ দুর্গম মরুপার্বত্য অঞ্চলে তুর পর্বত অর্থাৎ জেবেল মুসার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ঐ পর্বতের চূঁড়ায় একবার ওটা বসাতে পারলেই কেল্লা ফতে -- ঐ পাথরের সাথে হেভেনের পাওয়ার সোর্স হেভেনলি রিয়্যাক্টরের সংযোগ স্থাপিত হবে এবং তারপর ঐ ফলক থেকে এমন এক বিশ্ববম্মাণ্ড-মাতানো মহাশক্তিশালী অলৌকিক ক্ষমতা-রশ্মি বেরুবে যে যার জোরে শয়তানটা সারা পৃথিবী কেয়ামত তক্‌ শাসন করতে পারবে। আমরা জানতাম আসল "ট্যাবলেট্‌স অফ স্টোন" দু'টি সেই এক্সোডাসের সময়ই হারিয়ে গিয়েছিল - মোজেসরা লোহিত পেরুনোর সময়ই ও-দু'টি আর্ক-অফ-দ্য-কভেন্যান্টের সিন্দুক খুলে পানিতে পড়ে গিয়েছিল এবং এতদিন খবিশ্‌ খবির চৌধুরি ওগুলি না হাতানো পর্যন্ত লোহিতের পানির তলাতেই কোথাও চাপা পড়েছিল (ইয়াহুদীরা নেতারা তখন ঘটনাটা গোপন করে যায় এবং রেপ্লিকা বানিয়ে সেটাকে আসল বলে চালিয়ে দেয়)। খবির চৌধুরির এইসব ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা আর তার প্রেক্ষিতে তার হাত থেকে স্টোন-গুলি কেড়ে নিয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করার আরও ভয়াবহ পরিকল্পনা নিয়ে সিআইএ, মোসাড, এফএসবি, বিএসএস-সহ আরও বহু ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের অপারেটররা মিশরে এসে জড়ো হতে থাকায় মিশরের কেমেট সিক্রেট সার্ভিসেসের চীফ আবদুল্লা জারকাসি তার পুরনো বন্ধু আমাদের বিসিআইর চীফ 'বুড়ো' ওরফে মেজর জেনারেল (অবঃ) কাঁচাপাকা ভুঁরু-র কাছে সাহায্য চেয়ে জরুরী সাঙ্কেতিক বার্তা পাঠান। এই বার্তা পেয়েই বস আমাকে তার রুমে ডেকে নিয়ে আমার হাতের তালু ঘামিয়ে নির্দেশ দেন খবির চৌধুরিকে ইন্টারসেপ্ট করতে, তার ষড়যন্ত্র বানচাল করতে, মানবজাতিকে রক্ষা করতে। সুতরাং, এই মিশন-ইম্পসিবল নিয়েই আমি মিশরে ছুটে যাই এবং নাইল ডেল্টা থেকে সুয়েয হয়ে লোহিত সাগর পেরিয়ে সিনাইর গহীণে তুর পর্বত অবধি ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইভিল জিনিয়াস খবির চৌধুরিকে দুর্দম বেগে ধাওয়া করে বেড়াই, তার মহা-ষড়যন্ত্রের বেলুন ফাঁটিয়ে দেই, আসল "ট্যাবলেট্‌স অফ স্টোন" উদ্ধার করি, মানবজাতিকে একটা মহা-ফাঁড়া থেকে রক্ষা করি - এবং এসব করতে গিয়ে সিআইএ, মোসাড, এফএসবি আর বিএসএসের বদ্‌ এজেন্টগুলিকে লোহিত সাগরের পানিতে চূড়ান্তভাবে নাকানি-চুবানি খাইয়ে ছাড়ি!!!

তো, এই হলো আসল কাহিনি। এবার আপনি খুশি তো?!! চোখ টিপি

****************************************

guest_writer এর ছবি

মন মাঝি যা বলেছেন !! আমার গাইতে হচ্ছে 'মন মাঝি তোর বৈঠা নেরে, আমি আর বাইতে পারলাম না'!
সেই "ট্যাবলেট্‌স অফ স্টোন" এতদিনে আস্ত থাকে কি ভাবে? সেটা কি আজকের কথা? এত দিনে পাহাড় পর্বত ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশে গেছে, আর "ট্যাবলেট্‌স অফ স্টোন" !

desh_bondhu

মন মাঝি এর ছবি

আপনার সঙ্গীত-প্রতিভায় আমি মুগ্ধ! হাসি

"ট্যাবলেট্‌স অফ স্টোন" এতদিন আস্ত থাকে কিভাবে? পাথর তো বরফ না, তাই!
পাথর-পর্বত এসব কত লক্ষ-কোটি বছর টিকে থাকতে পারে সে সম্পর্কে কি আপনার কোন ধারণা আছে? মুসা ও তার স্টোনের বয়স কত - মীথ অনুযায়ী বড়জোর সাড়ে তিন থেকে পৌনে চার হাজার বছর, তাই না? নীচের একটা অস্বাক্ষরিত কমেন্ট যেটা আপনার বলে মনে হল (না হলেও অসুবিধা নাই) - সেখানে দেখছি আপনি বলছেন আপনিও অনেক আগে মিশর ঘুরে এসেছেন। তাই যদি হয়, তাহলে সেখানে কি দেখেননি "ট্যাবলেট্‌স অফ স্টোন"-এর চেয়েও বহুগুন পুরনো প্রায় অফুরন্ত স্টোন ট্যাবলেট-ম্যাবলেট-মূর্তি-স্ফিংক্স-পিরামিড সহ অজস্র পাথুরে প্রত্ন-নিদর্শন সারা দেশটা জুড়েই চোখের সামনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে? কায়রোর কাছেই গিজার পিরামিডটাই তো প্রায় ৪৬০০-৪৭০০ বছর পুরনো - অর্থাৎ মুসার ট্যাবলেট থেকেও বোধহয় ১ হাজার বছর বেশি পুরনো। এবং এখনও বহাল তবিয়তে বর্তমান। গ্রীনল্যাণ্ডের ইসুয়া গ্রীনস্টোন বেল্টে ৩৭০ থেকে ৩৮০ কোটি বছর পুরনো পাথর আছে। মাটির সাথে মিশে যায়নি। আর পাহাড়? সাউথ আফ্রিকার বার্বারটন পর্বত প্রায় ৩৫০ কোটি বছর প্রাচীণ। এটাও মাটির সাথে মিশে যায়নি। কোটি বছর পুরনো পাহাড়-পর্বত-পাথর বোধহয় পৃথিবীর বহু জায়গাতেই আছে। মিশে যায়নি। আর মুসা নবীর টেন কমাণ্ডমেন্টসের ওহী প্রাপ্তির কথিত সেই বিখ্যাত পাহাড় তথা তুর পর্বত হওয়ার অন্যতম ক্যাণ্ডিডেট - মাউন্ট সিনাই বা জেবেল মুসাও দিব্যি বহাল তবিয়তে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে - মিশরের সিনাই পেনিনসুলায়। মাটিতে মিশে যায়নি। এখানে ছবি দেখুন। আরও দুটি ক্যান্ডিডেট মাউন্ট সার্বাল ও মাউন্ট ক্যাথারিনও এখানেই আছে। কোনটাই মিশে যায়নি। আর পাথর-পর্বত তো ছার, সামান্য বালির স্তুপ তথা বালিয়াড়ি পর্যন্ত কয়েক মিলিওন বছর ধরে দিব্যি টিকে আছে। জমে যাওয়া বালিয়াড়ি আছে ১ বিলিওন বছর পুরনো। সুতরাং বুঝতেই পারছেন.... হাসি

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

একটা স্টোনে কিছু লেখা আছে, আপনি সেই স্টোনে বছরের পর বছর ধরে যদি মসলা বাটেন, সেকাহ্নে কোনো লেখা আর থাকবে??? এমনও হতে পারে, "ট্যাবলেট্‌স অফ স্টোন" কেউ পেয়েছিল, আর সে এটাকে মসলা বাঁ ওষুধ বাটার কাজে ব্যবহার করতো, সেখান থেকে হাত বদল হতে হতে হাযার হাযার বছরে সেটা ক্ষয়ে গেছে আর লেখাও মুছে গেছে, তাই হয়তো সেটার হদিস কেউ পায় নাই। দেঁতো হাসি

মন মাঝি এর ছবি

হতে পারে। আমি একটা কল্পকাহিনি বলেছি এই মন্তব্যে (এবং নিতান্তই মজা করে সচল হিমুর আরেকটা রসিকতার জবাবে - যা বোধহয় আপনার রাডারে ধরা পড়েনি) - আপনিও আরেকটা বানান না, কে মানা করেছে?! মূল পোস্টটাই যেখানে কল্পকাহিনি, সেখানে ট্যাবলেটস অফ স্টোনকে মসলা বা ওষুধ বাটার পাটাও বানানো যেতে পারে আবার ভিলেন খবির চৌধুরির অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্রও বানানো যেতে পারে। আপনি বরং "বিশ্বের কিছু অজানা অলৌকিক মশল্লা পিষার পাঠার কথা - ট্যাবলেটস অফ মশল্লা-গ্রাইন্ডিং" শিরোনাম দিয়ে একটা পোস্ট দিননা। কোন অসুবিধা নাই! চোখ টিপি

ও হ্যাঁ, বেনামে/বে-নিকে যত্রতত্র মন্তব্য না করে নাম/নিক দিন মন্তব্যের শেষে।

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

মন মাঝি ভাই, এখানে মূল পোষ্টটা কল্প কাহিনী কিভাবে? মূল কাহিনীতে যে সুনামীর কথা বলা আছে, সেটা তো কল্প কাহিনী নয়, যে কারনে সুনামী হতে পারে, সেই সময় সেই উপাদান গুলো ছিল। সুতরাং সব মাল মসলা দিয়ে খিচুড়ী করলাম, খেতে কেমন হলো সেটাই বলেন চিন্তিত
desh_bondhu

অতিথি লেখক এর ছবি

মনমাঝি ভাইয়া, অসাধারণ, চমৎকার লিখেছেন। আমি ইদানীং গ্রীক মিথলজি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি। এক জায়গায় দেখলাম সূর্য দেবতা হেলিয়াসের সন্তান ফেইথন সূর্য দেবের চ্যারিয়টে করে আকাশ পথে ভ্রমণ করতে গিয়ে হুলস্থুল কান্ড করে ফেলেছিলো, পৃথিবী প্রায় ধ্বংস হয়ে যায় আর কি! এবং সেই হুলস্থুল কান্ডের সাথে একজন গবেষক মোজেসের নীল নদ পার হবার কাহিনীর যোগসূত্র একেবারে প্রমান করে দেখিয়েছেন!

যা হোক, এবার আমার একান্ত ব্যাক্তিগত অভিমত, নীল নদের দ্বিখন্ডিত হবার কাহিনী শুধু বাইবেলে নয়, কোরানেও আছে। আপনি ঠিক বলেছেন, এখনো হয়তোবা এই ঘটনাটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয় নি, কিন্তু আমি খুব বিশ্বাস করি! হয়তোবা এটা আমার ধর্মীয় সংকীর্ণতা।

ভালো থাকুন খুব।

-এস এম নিয়াজ মাওলা

ধুসর গোধূলি এর ছবি

কোনো ঘটনা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হবার আগে সেই ঘটনা যে ঘটেছে, সেটা প্রমাণিত হওয়া জরুরী, ঐতিহাসিকভাবে, প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে। এই কথাটাই বোধ'য় মনমাঝি বারবার বলেছেন তাঁর মন্তব্যে।

অতিথি লেখক এর ছবি

কথাটা সত্য।
কিন্তু ঘটনাটা নিয়ে যখন অনেকের মাঝে মতভেদ থাকে, তখন সেটার আগে 'হয়তো' শব্দটা জুড়ে দেয়। অনেক ঘটনার ঠিকমতো ব্যাখ্যা দিতে পারে না, অনেক কিছুই ধরাধরির ভিতরেই থাকে, এই মহাবিশ্বের অনেক কিছুই এখনো ধরাধরির ভিতরেই আছে, অনেক কিছুকে ধরে নিয়ে আনুসঙ্গিক বাকি ঘটনার বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত করার চেষ্টা করা হয়। কোন পরীক্ষাকেই বা কেউ কোন প্রমান করতে পারলেও সেটাকেই শুধুমাত্র সঠিক হিসাবে ধরে নেয়া হয়না, বলা হয় 'অমুকের পরীক্ষার ফলাফল হিসাবে এটা বলা যেতে পারে'।

ব্রুনো এর ছবি

মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে এইটা একটা ঘটনা, এখন এই ঘটনা কেম্নে ঘটতেছে তা ব্যাখ্যা করতে যেয়ে আপনি ধরাধরির ভিতর দিয়ে যাইতে পারেন। কিন্তু যে ঘটনা ঘটে নাই বা ঘটছে কিনা প্রমাণ পাওয়া যায় না তা কেম্নে ঘটলো তা নিয়ে ধরাধরির ভিতর দিয়ে যাওয়ার দরকার কী যদি না আপনি ফ্যান্টাসি রাইটার হন!

____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।

কাজি মামুন এর ছবি

যদি না আপনি ফ্যান্টাসি রাইটার হন!

তাহলে মিথের জন্মকাহিনি আবিষ্কারকেরা ফ্যান্টাসি রাইটারের দলে পড়েন? অথচ যারা মিথের উৎপত্তি নিয়ে গবেষণা করেন বা নৃতত্ত্ব, ভূগোল, বিজ্ঞান ইত্যাদি ঘাঁটাঘাঁটি করে প্রাণান্ত চেষ্টা চালান একটি মিথের জন্মকাহিনি আবিষ্কারের, তাদেরকে বৃহদার্থে ঐতিহাসিক বলা হয় বলেই জানতাম, ব্রুনো ভাই! কি জানি, আমার জানা ভুলও হতে পারে! এই মস্ত দুনিয়ার কতটুকুই বা জানি!

ব্রুনো এর ছবি

এক্সোডাসের কাহিনী কেমনে চালু হলো বের করা হচ্ছে মিথের জন্মকাহিনী আবিষ্কার (অনেক ক্ষেত্রেই সেটা হয় জন্মকাহিনী অনুমান)। আর ঐতিহাসিক কোন প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও এক্সোডাস ঘটেছিলো ধরে নিয়ে সেটা কিভাবে ঘটলো বের করতে যাওয়াটা আমার কাছে মনে হয় ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়তে যাওয়া।

____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।

কাজি মামুন এর ছবি

আগেই বলে নেই, জানার জন্যই ফের লিখতে বসেছি, কুতর্ক করে আপনার বিরক্তি উৎপাদন করতে নয়। আর মডারেটররা মনে হয় একজন পাঠকের জানার আগ্রহকে ব্লগে উৎসাহিতই করে থাকেন, আলোচনার মাধ্যমে জানার আগ্রহে জল ঢেলে দেন না।

আর ঐতিহাসিক কোন প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও এক্সোডাস ঘটেছিলো ধরে নিয়ে সেটা কিভাবে ঘটলো বের করতে যাওয়াটা আমার কাছে মনে হয় ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়তে যাওয়া।

ঐতিহাসিক প্রমাণ বলতে ঠিক কি বোঝাচ্ছেন??? বৈজ্ঞানিক প্রমাণ?
ধরুন, একজন বিজ্ঞানী নোয়াহ্‌র সময়কার মহাপ্লাবন আসলেই হয়েছিল কিনা, জানতে চাইছেন। এখন তিনি গবেষণার স্বার্থে আসলেই এমন একটা প্লাবন হয়েছিল ধরে নিয়ে যদি অনুসন্ধান চালান বৈজ্ঞানিক প্রমাণ সংগ্রহের জন্য, তাহলে তিনি কি ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দিলেন?

উপরোক্ত বিজ্ঞানী যদি অনুসন্ধান করতে যেয়ে এমন কোন প্রমাণ না পান, তাহলে তার পক্ষেই তো সবার আগে দুনিয়াকে জানানো সম্ভব আসলে মহাপ্লাবন আদৌ হয়নি।

ব্রুনো ভাই, আপনি প্রমাণ না থাকা স্বত্বেও কেন এক্সোডাস ঘটেছিল, সে ধরণের অনুসন্ধানে যেতে চান না। কিন্তু কেউ যদি বলেন, কেন এক্সোডাস ঘটেছিল, তা জানতে পারলে, এক্সোডাস প্রমাণের একটি ধাপ এগুনো হয়, তাহলে কি অন্যায় হবে? এই এক্সোডাস বাইবেলের এক্সোডাস নয়, মিথকে মাড়িয়ে সত্যিকার কোন অভিযানের ঐতিহাসিক অনুসন্ধান!

বা, অন্যভাবে বললে, এক্সোডাসের ঐতিহাসিক (এবং ১০০ ভাগ সুনিশ্চিত) প্রমাণ থাকলে তো কিভাবে তা ঘটেছিল, তা জানার আর দরকারই পড়ে না। সে তো ঐতিহাসিক প্রমাণের ভিতর থেকে এমনিই বের করা সম্ভব। মানে, ঐতিহাসিক প্রমাণ বের করতে গেলে কেন'এর উত্তর তো আগে দিয়েই নিতে হবে, তাই না?

লেখক স্পষ্টতই নতুন লিখছেন, তাই তিনি যখন বলেন, অনেক বিশেষজ্ঞের বদ্ধমূল বিশ্বাস করে যে, রেড সি বা লোহিত সাগরের পরিবর্তে মোজেস বা তার অনুসারীরা আসলে একটি বড় জলাভূমি পার হয়েছিল, তখন পাঠককে এমন ভুল বার্তা তিনি দেন যে, মোজেসের মিথ আসলেই প্রমাণিত ঘটনা। কিন্তু এ লেখকের অনভিজ্ঞতার জন্যই হয়েছে মনে হয়, কারণ তিনি যে আসলে পুস্তকের বাইরে সত্য খুঁজছেন, তার প্রমাণ তো এই লেখাতেই আছে। কারণ লেখক ত পুস্তকে কথিত 'দুইভাগ হয়ে যাও সাগর'কে এই লেখার মাধ্যমে অস্বীকার করলেন, তাই না? তাহলে তিনি কিভাবে এক্সোডাস ঘটেছিল ধরে নিলেন? বরং, তিনি কি মিথের বাইরে এসে বাস্তব কোন এক্সোডাসের অস্তিত্ব খুঁজছেন না?

একটা মহাপ্লাবন সত্যি সত্যি হয়েছিল এবং কিছু লোক হয়ত নিজেদের রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছিল... এইটা ধরে নিয়ে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান চালানো কি নোয়ার মিথকে বিশ্বাস করার সমতুল্য হবে? কোন কোন গবেষক ত ৭৬০০ বছর আগে এমন প্লাবনের সন্ধান পেয়েছেনও। আগে প্রমাণ হাতে নিয়ে তারপর অনুসন্ধানে নামার স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম থাকলে তো ব্ল্যাক সি'র অতলে অনুসন্ধান আর চালনোই হত না বিজ্ঞানীদের!!

ব্রুনো এর ছবি

লেখক স্পষ্টতই নতুন লিখছেন, তাই তিনি যখন বলেন, অনেক বিশেষজ্ঞের বদ্ধমূল বিশ্বাস করে যে, রেড সি বা লোহিত সাগরের পরিবর্তে মোজেস বা তার অনুসারীরা আসলে একটি বড় জলাভূমি পার হয়েছিল, তখন পাঠককে এমন ভুল বার্তা তিনি দেন যে, মোজেসের মিথ আসলেই প্রমাণিত ঘটনা।

এই তর্কটা আসলে লেখা থেকে শুরু হয় নাই, শুরু হইছে এস এম নিয়াজ মওলার মন্তব্য থেকে যেখানে উনি বলছেন যে উনি খুব বিশ্বাস করেন বা বিশ্বাস করতে চান যে এক্সোডাস আসলে ঘটছে কারণ এটা বাইবেল আর কোরানে আছে।
সুতরাং আপনার

একটা মহাপ্লাবন সত্যি সত্যি হয়েছিল এবং কিছু লোক হয়ত নিজেদের রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছিল... এইটা ধরে নিয়ে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান চালানো কি নোয়ার মিথকে বিশ্বাস করার সমতুল্য হবে?

এই কথা এখানে প্রযোজ্য না, এখানে প্রযোজ্য 'নোয়ার মিথকে বিশ্বাস করে সেটা কীভাবে ঘটলো তা নিয়ে গবেষণা করা কী উচিৎ হবে?' আমার উত্তর হলো, না। তবে দূর অতীতে একটা মহাপ্লাবন ঘটেছিলো এই হাইপোথিসিসে গবেষণা হতে পারে। তবে সেটা প্রমাণিত হলেও আপনি কিন্তু সেটাকেই নোয়ার প্লাবন বলতে পারেন না।

____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।

অতিথি লেখক এর ছবি

এক্সোডাস যে ঘটে নাই, সেটার কোন ঐতিহাসিক প্রমান কেউ বের করেছে? কেউ বলেছে যে এক্সোডাসে বর্নিত কাহিনী সঠিক নয়? ফারাও ছিল, তারা যদি ইসরায়েলীদের ধরে নিয়ে কাজ করাতে পারে, তাদেরকে নিয়ে আসাও মনে হয় অবাস্তব কিছু না। এখন প্রশ্ন হলো, তাদেরকে মিসর থেকে নিয়ে আসা হলে সে সময় কি সাগর ভাগ করে তাদের নিয়ে আসা হয়েছিল, নাকি প্রাকৃতিক *কোন ঘটনা থেকে পানি সরে যেয়ে পথ হয়েছিল। সুনামীর ফলে পানি সরে যাওয়াটা খুবই সাধারন ঘটনা, আর সেভাবেই পথ তৈরী হওয়াটাও সাধারন ঘটনা, যেখানে অলৌলিক কিছু নাই। মোজেস আসলেই ছিল কি ছিলনা, এই লেখাটার কারন সেটা না। এই লেখার কারনটা হলো, সেই সমসাময়িক কালে সুনামী হয়েছিল, যেটার কারনে একটা পথ তৈরী হয়ে থাকতে পারে যেটাকে অনেকেই মনে করে অলৌলিক কিছু। সমসাময়িক বললাম এই কারনে যে, ৩৫০০ বছর আগে সেই অঞ্চলে সুনামী হয়েছিল, আর সেই সময়ে মিসরে ফারাও ছিল, ফারাও থাকাকালীন সময়ে মিসর থেকে বের হওয়া আর সাগর বাঁ জলাভূমির পানি সরে যেয়ে পথ হওয়া, সেটা সেই সময় ছাড়া আর হতোনা, কারন ফারাওদের আর কোন সময়েই আশে পাশে কোথাও সুনামী হওয়ার প্রমান নাই। তাই মোজেস এর সময় কাল সেই ৩৫০০ বছর আগে। এখন মোজেস ছিল কি ছিল না, সেটা ইহুদীদের কাছে জিজ্ঞাসা করলেই হয়।

desh_bondhu

মন মাঝি এর ছবি

এখনো হয়তোবা এই ঘটনাটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয় নি

বিশ্বাস যদি করতে চান, করুন না! আপনার চয়েস। এমনকি আমিও যদি করি তাতেও আসলে কোন অসুবিধা ছিল না - আমার প্রথম মন্তব্যের বক্তব্য সত্ত্বেও। আর, আপনার বাড়া ভাতে ছাই দেয়ায় আমারও কোন আগ্রহ নেই। শুধু অপ্রমানিত বা প্রমান-অযোগ্য বিশ্বাসের সাথে 'বিজ্ঞান'-কে না মিশিয়ে ফেললেই হল। দুটো ভিন্ন জিনিষ। এই দুইটা যেখানে মেলে না সেখানে জোর করে মেলানোর চেষ্টা করলে শেষমেশ দুটোরই ক্ষতি হয়। এই ক্ষেত্রেই ধরুন না - লোহিত সাগরের পানির বিভাজনের কথা ধর্মগ্রন্থে কিভাবে আছে? আমি যদ্দুর মনে করতে পারি তা হল - মুসা নবী তার হাতের একটি ঐশ্বরিক-মহিমাযুক্ত লাঠি দিয়ে বাড়ি দেয়ার ফলেই ইশ্বরের ইচ্ছায় পানি দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়, আবার অন্যপারে গিয়ে আরেক বাড়ি দিলে তা আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে (আমার ভুল হলে সংশোধন করে দিয়েন প্লিজ)। তো, এখানে ইশ্বরের ইচ্ছাটা ঐ কুদরতি-লাঠির বাড়ির মাধ্যমেই চ্যানেলাইজ্‌ড হয়েছে, অন্য কোন ভাবে নয়। ধর্মগ্রন্থে এটাকেই ঐ জলবিভাজনের সুস্পষ্ট ও সরাসরি 'কারন' হিসেবে দেখানো হয়েছে, অন্য কিছু না। ধর্মগ্রন্থ অনুসারে এই কথাগুলি সরাসরি স্রষ্টার বাণী। একে অস্বীকার করে এর মধ্যে সুনামি-টুনামি-বিজ্ঞান-ফিজ্ঞান আনা সরাসরি ধর্মদ্রোহিতা বা খোদাদ্রোহীতা ও খোদার উপর খোদকারির সামিল! আপনি কি তাই চান? নাকি আপনার ধর্মবিশ্বাস এতই দুর্বল যে স্বয়ং সর্বশক্তিমান মহান সৃষ্টিকর্তা বলার পরও তাঁর বর্ণনার উপর আপনার পুরোপুরি প্রতীতি জন্মায় না - তুচ্ছাতিতুচ্ছ মনুষ্যসৃষ্ট তথাকথিত 'বিজ্ঞান'-এর সমর্থন লাগে মহান স্রষ্টার বর্ণনাকে ফিল্টার ও ভ্যালিডেট করতে? আপনার কথা জানি না, কিন্তু অন্য কিছু 'বিশ্বাসী' (অনুমান করছি) মন্তব্যকারীর মন্তব্য দেখে সেরকমই মনে হচ্ছে। তাদের জন্য আমার করুনা থাকল। আবার দেখুন, লোহিত-বিভাজনের পিছনে ধর্মে বিবৃত কারনের বাইরে গিয়ে সুনামিতত্ত্ব বা ঐ জাতীয় কোন প্রাকৃতিক তত্ত্বই আমদানি করতে হয়, তাহলে তো ধর্ম ও স্রষ্টা-বিবৃত ন্যারেটিভটাই মিথ্যায় পর্যবসিত হচ্ছে। মিথ্যা হয়ে যাচ্ছে ধর্ম। সেক্ষেত্রে, এইরকম বৈজ্ঞানিক / প্রাকৃতিক ব্যাখ্যায় বিশ্বাসকারী ধর্মবিশ্বাসীরা আর নিজেদেরকে 'ধর্মবিশ্বাসী' হিসেবে দাবী করার যুক্তিসঙত অধিকার রাখেন না।

বিজ্ঞান এ যুগে এত প্রত্যক্ষ ও সর্বাঙ্গীণভাবে আমাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রিত বা প্রভাবিত করে যে অনেকের পক্ষেই নিজেদের অন্তরে লালিত বিজ্ঞান-বিযুক্ত বিশ্বাসকে বিজ্ঞানের চোখে ভেট্‌, ভ্যালিডেট ও সিকিউর করার প্রলোভনের ফাঁদে পা দেয়া থেকে আত্নরক্ষা করা সম্ভব হয়ে উঠে না। এরা নিজেদের অন্তরের বিশ্বাসকে 'বৈজ্ঞানিক' ভাবে 'প্রমান' করে ফ্যাশনেবল হয়ে উঠতে চান, এবং সেইসাথে মানসিক ভাবে একটু সিকিউর বোধ করতে চান মনে হয়। সমস্যা হল এই ধরণের প্রয়াস বহুক্ষেত্রেই ব্যাক্‌ফায়ার করতে পারে এবং করে থাকে। তখন কিন্তু বিশ্বাসীদের পক্ষে সেটা মেনে নেয়া খুবই কষ্টকর হয়ে যায়, এবং কথার খেই হারিয়ে আবোল-তাবোল বকা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। তাই গোড়াতেই এই ধরণের চেষ্টা থেকে বিরত থাকাই বরং বুদ্ধিমানের কাজ আমার মতে। এর কোন দরকার নেই। আপনি আপনার একান্ত মনোজগতে প্রাইভেটলি কি বিশ্বাস করবেন না করবেন, সেটা একান্তই আপনার ব্যাপার। আমার মনে হয় না তা নিয়ে কারও কিছু বলার আছে। শুধু পাব্লিকলি সেটা অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়া বা এনিয়ে কোনরকম জগাখিচুড়ি বা গোঁজামিলতত্ত্ব প্রচারের চেষ্টা না করলেই হল।

আমার কথা বুঝাতে পারলাম? মোদ্দা কথাটা হচ্ছে, দুই নৌকায় পা দিয়ে চলাটা আসলেই বিপজ্জনক! পদে পদে ঝামেলা। একটাকে বেছে নেয়াই উত্তম। তবে এটাও যে এই বিশ্বাস-বনাম-বাস্তবশক্তি নির্ভরতার ক্রান্তিকালের যুগে অনেকের জন্য মানসিক ভাবে যথেষ্ট কঠিন কাজ, সেটিও আমি বুঝি। তবে আপনাকে ধন্যবাদ আপনার সৎ ও সরল স্বীকারোক্তির জন্য। অনেকে এটাও পারে না। তাদের অনেক টালবাহানা লাগে। তাদের জন্য করুনা।

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

মন মাঝি, চমতকার কিছু কথা বলেছেন।
বিজ্ঞান আর ধর্মকে এক সাথে মিশানো ঠিক নয়, সেটা আমি নিজে মনে করি। ধর্মটা একটা বিশ্বাস, এখানে প্রমান বা যুক্তিবাদের কিছু নাই। এখানে বিশ্বাস করতে হবে, বিশ্বাস ভিন্ন আর কিছু নাই।
আমাদের অনেকেই রোজা রাখাকে বিজ্ঞান সম্মত প্রমান করার চেষ্টা করে, যদিও সেখানে বিজ্ঞান সম্মত কিছু দেখি না। আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছে, আল্লাহ এর উপর বিশ্বাস থাকলে তার সেই নির্দেশ পালন করতেই হবে, এখানে বিজ্ঞান সম্মত প্রমান করার কিছুই নাই।
মোজেসের প্রসঙ্গ যদি আসে, সেই ঘটনা যে মিথ্যা এটা কেউ প্রমান করে নাই। পশ্চিমা দেশের কোন বিজ্ঞানী মহল এই সব বিষয় নিয়ে প্রমান করার চেষ্টা করে নাই যে এই ঘটনা মিথ্যা, হতে পারে কিছু বিজ্ঞানীরা তাদের নিজেদের মতামত দিয়েছে এটাকে কল্প কাহিনী বলে। সেটা ভিন্ন বিতর্ক। কিন্তু আবার অনেক বিজ্ঞানী সেই কাহিনীকে ভিত্তি করেই সেটার সাথে সম্পর্কিত বাকি ঘটনার ব্যাখ্যা দেয়। বিজ্ঞানের অনেক তত্ব নিয়েও বিতর্ক হয় একই বিষয়ের বিজ্ঞানীদের ভিতরে, যেমন বিগ ব্যাং ব মানব জাতির বিবর্তন। আর ধর্মীয় কোন কার্য নির্দেশের ব্যাখ্যা নাই, কিন্তু কোন ঘটনাকে নিয়ে তো ব্যাখ্যা হতে পারেই। আর সে কারনেই মোজেসের সাগর বা নালা পার হওয়ার যে ঘটনা, সেটার ব্যাখ্যা বিবিসি বা আমার এই প্রতিবেদনে দেয়া হয়েছে। এখন যদি বলা হয়, যেটা কল্প কাহিনী, সেটার আবার কিসের ব্যাখ্যা। তাহলে কথা হলো, এটা যে কল্প কাহিনী, সেটার কোন প্রতিষ্ঠিত প্রমান আর ব্যাখ্যা কোথাও
পাই নাই, যদি পেতাম তাহলে পৌরানীক কাহিনী বলেই চালাতে পারতাম। এমনও হতে পারে সব বিজ্ঞানীদের হয়তো মানসিক জোর নাই এসব কে কল্প কাহিনী বলার, এসব বিষয়ে তারা যেটা প্রমান স্বরূপ মনে করে, বলার সময়ে হয়তো ভিন্নভাবে বলে নিজেদের মাথা ঠিক রাখার জন্য। তাই হয়তো একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেউ নোবেল পাই মানব জাতির রহস্য আবিস্কারের কারনে, আবার পাশের রুমে বা বিভাগে ধর্মতত্ব পড়ানো হয়। তাই ঘোড়া আগে নাকি গাড়ী আগে অনেক সময়ে সেটা চিন্তা না করে, ঘোড়া আর গাড়ী দুইটা নিয়েই চালাতে হয়, কোনটা আগে পিছে থাকবে, সেটা নিয়ে চিন্তা হয়না, চললেই খুশী থাকি চোখ টিপি

desh_bondhu

ব্রুনো এর ছবি

মোজেসের প্রসঙ্গ যদি আসে, সেই ঘটনা যে মিথ্যা এটা কেউ প্রমান করে নাই।

বার্ডেন অফ প্রুফ তো যে ঘটে নাই বলতেছে তার না, যে ঘটেছে বলতেছে তার!

____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।

মন মাঝি এর ছবি

অশ্বডিম্ব কেউ মিথ্যা প্রমান করেছে? হাতির ডিমের ওমলেট কেউ মিথ্যা প্রমাণ করেছে? পঞ্চাশ পা-ওলা উটের অস্তিত্ত্ব কেউ মিথ্যা প্রমান করেছে? কাঠালের আমসত্ত্ব কেউ মিথ্যা প্রমান করেছে? ধান-গাছের কাঠের তৈরি জাহাজ কেউ মিথ্যা প্রমান করেছে? ঠাকুর মার ঝুলির রাক্ষস-খোক্কস কেউ মিথ্যা প্রমান করেছে? দত্যি-দানো-ভূত-পেত্নী-কন্ধকাটা-পাংশুপিশাচ-শাকচুন্নী-মামদো ভূত-ফুলপরী-নীলপরী-উর্বশী-তিলোত্তমা-মেনকা -- এইগুলি কেউ মিথ্যা প্রমান করেছে? সাইক্লপ্স, হাইড্রা, কাইমেরা, গর্গন, মেডুসা - এসব কেউ মিথ্যা প্রমান করেছে? পঙ্কখীরাজ ঘোড়া, মানুষের ভাষায় কথা বলা ইঁদুর, মানুষের চেয়েও বুদ্ধিমান পিঁপড়ে, উড়ন্ত যাদুর গালিচা - এসব কেউ মিথ্যা প্রমান করেছে? এই বিশ্বব্রম্মাণ্ড আসলে পুরাই মায়া (যার কোন বাস্তব অস্তিত্ত্ব নাই) বা আসলে এটা একটা ঘুমন্ত দানবের স্বপ্ন - এটা কেউ মিথ্যা প্রমান করেছে?

না করে থাকলে - আপনার যুক্তি অনুযায়ীই আমি দাবী করছি এগুলি সবই ১০০% সত্য এবং এর সবই আমি নিজের চোখে দেখেছি! এখন আপনার উচিত ঐ বিবিসি ডকুমেন্টারিওয়ালার মতই আমার কাছ থেকে শোনা কথার উপর ভিত্তি করে (কোন রকম প্রমান ছাড়াই) এক ডজন "বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ" ফেঁদে ফেলা আর অর্ধ-ডজন "বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা" সম্বলিত ডকুমেন্টারি বানিয়ে ফেলা। কেউ বলবে না আগে অশ্বডিম্ব, হাতির ডিমের ওমলেট, পঞ্চাশ পা-ওলা উট, কাঠালের আমসত্ত্ব, দত্যি-দানো-ভূত-পেত্নী-কন্ধকাটা ইত্যাদি ইত্যাদি প্রমান করতে (আমি তো বলবই না!)। আর কেউ বললেও আপনি নিঃশঙ্কচিত্তে - কেউ তো আর মিথ্যা প্রমাণ করেনি - এই যুক্তিটা দিয়ে তর্কে জিতে যেতে পারবেন। কেউ আপনাকে "বার্ডেন অফ প্রুফ"-এর ব্যাপারে প্রশ্ন করতে পারবে না, পারবে না আপনি "appeal to ignorance"-নামের ফ্যালাসি চর্চা করছেন এই অভিযোগ করতে। কেউ জিজ্ঞেস করবে না ঘোড়া আগে না গাড়ি আগে, ঘর আগে না দরজা আগে। সবই মিলেজুলে-তালেগোলে চলবে আরকি - কোনটা আগে পিছে থাকবে, সেটা নিয়ে চিন্তা হবেনা, চললেই খুশী থাকবে সবাই । তাই আমি আপনাকে গ্যারান্টি দিচ্ছি, উপরে করা আমার ফাটাফাটি সেনসেশনাল দাবিগুলির উপর ভিত্তি করে কিছু "বৈজ্ঞানিক" প্রবন্ধ ফাঁদতে আর ডকুমেন্টারি বানাতে পারলে আপনি নির্ঘাৎ ৫-১০টা নোবেল প্রাইজ আর অস্কার পেয়ে যাবেন। কি বানাবেন?

****************************************

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

মাঝি ভাই, আপনি অতি সত্বর আল্লামা শমশের আলী, পি এইচ ডি (ফ্রম নাছাড়ারাজ্য) এর সঙ্গে যোগাযোগ করে লাইনে আসুন হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

লেখার চেয়ে আপনার মন্তব্যটাই বেশি এনজয় করলাম!

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুন কিছু কথা বলেছেন। আমি নিজেও অনেক আগে মিসর থেকে ঘুরে এসেছি। একটা কথা সত্যি কি জানেন? বাইবেল বলেন বা সৃষ্টিকর্তা প্রেরিত যে কোন গ্রন্থই বলেন, কারোর সাধ্য নাই সেটাকে মিথ্যা বলা। এখন বিজ্ঞানী বলেন, বিশেষজ্ঞ বলেন, কেউ তো আর বলতে পারবেনা যে মোজেস নামে কেউ আসে নাই, আর সাগর বা নালা যাই বলা হোক না কেন, মোজেস সেটা পার হয়ে যায় নাই। আর গেলেই সেটা কি ভাবে গেলো? এখানে কিছু যুক্তিও চলে আসে। বাইবেল বলেন, কোরান বলেন, লেখা আছে যে পানি সরে গেলো, আর মোজেস ও তাঁর অনুসারীরা পার হলো, যখন ফারাও এর বাহিনী আসলো, তখন পানি এসে তাদের ডুবিয়ে দিলো।
এখন এ ইতিহাস যদি কেউ বিশ্বাস না করে, সেটা ভিন্ন বিষয়। ধরেন আপনি বিশ্বাস করলেন। এখন, সেই ঘটনা তাহলে কিভাবে হয়েছিল, সেটার একটা ব্যাখ্যাও বিজ্ঞানসম্মতভাবে আসতে পারে। ঐ ভাবে পানি সরে যাওয়া, কিছু পরেই পানি এসে ডুবিয়ে দেওয়া, এটা জোয়ার ভাটাতে হবে না, এটা হতে গেলে সুনামী ছাড়া হবে না। সুতরাং সুনামী কিভাবে হলো? ঐ যে সেই সময়ে ক্রীটের অগ্নুৎপাত। ক্রীটে অগ্নুৎপাত হইয়েছিল, আর সুনামী হয়েছিল, সেটার প্রমান বিজ্ঞানীরা কিছু পেয়েছে, সেখান থেকেই তারা ধারনা করে নিচ্ছে।
আটলান্তিসের বিষয়ে আসলে অনেক বিতর্ক আছে, এটা নিয়ে গল্প কাহিনী চলতে থাকবে। বিভিন্ন গল্প না হলে গবেষনা হবে না, আবার গবেষনা না হলে মানুষ জন পড়াশুনা করবে না, আর গবেষকদের আয় রোজগার থাকবে না।

মোজেস আসলে কোন সমইয়ে এসেছিল, কোন ফারাও এর সমইয়ে সে এসেছিল, এটা আসলে কেউ জানে? জানে না।কারা যে কোন হিসাবে রামাসিস ২ এর সময়ের সাথে মিলিয়ে দিলো, সেটাই একটা বেপার।

ইয়াম সুফের বিষয়ে এখনকার বিজ্ঞানীরা বলে 'সেটা একদা ছিল'। সব জায়গা তো আর সারাজীবন থাকে না, এটাও সত্য। সেটা হয়তো এখন পানির নীচে, বাঁ এখন বসত বাড়ী হয়েছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

বাইবেলে বর্নিত যে কাহিনী আছে, সেটা ঘটে থাকলে কিভাবে ঘটেছিল, তার কিছু ব্যাখ্যা বিজ্ঞানীরা দিতে থাকে। আসলে এমনতো না যে, আসমান থেকে একটা আগুন এসে পড়লো, আর সব ছারখার হয়ে গেলো। এখন সেই আগুনটা যদি পড়েই থাকে, সেটা কোন উল্কা পিন্ড হতে পারে। আসলে প্রাকৃতিক কোন ঘটনার জন্য কোন ব্যাখ্যা থাকে। জগতের অনেক কিছুই চলে নানা তত্ব আর হিসাব নিকাশের উপরে, কোন তত্বই একেবারেই সঠিক না, আজ এক তত্ব বের হলো তো, পরে আর এক তত্ব বের হবে, এভাবে চলতে থাকবে।
আর যাইহোক, মোজেসের সময়কালটা রামাসীস ২ এর সাথে মিলে যাওয়ার আর একটা কারনও হয়তো থাকতে পারে। এবার আমি একটা নিজস্ব তত্ব দেইঃ যেহেতু মোজেস ফারাওদের কাছ থেকে তাঁর অনুসারীদের নিয়ে মিসর ছেড়ে চলে গেলো, সাগর ফাকা করে তারা পার হলো, পরে সাগরের পানি ফারাও এর বাহিনী ডুবিয়ে দিলো, এটা হওয়ার জন্য যে কারন দরকার সেটার রসদ সেই সময়টাতে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের অগ্নুতপাত। তা না হলে এই রকম ঘটনা হওয়া অসম্ভব। ২ টা ঘটনা যেহেতু সময়ের মিল আছে, তাই বলতে পারি যে ঐ সময়টাতে রামাসিস ২ ছিলো ফারাও।
সব কিছুই ধরে নেওয়া চোখ টিপি

ব্রুনো এর ছবি

চলুক দারুন!

____________________________________________________________________________________
তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।

কাজি মামুন এর ছবি

অনেকটা ধরুন বাংলাদেশের সেন্ট-মার্টিন্স দ্বীপ আর তার দক্ষিণে ছেঁড়া দ্বীপে্র মধ্যে যেমনটা হয় সেরকম কিছু হয়তো। মোজেসরা ভাটার সময় এই বিশাল লেকটা পেরিয়ে গেছেন, আর পিছনে ধেয়ে আসা ফেরাউনের দল মাঝপথে দ্রুত ফিরে আসা জোয়ারের পানিতে ধরা খেয়ে গেছে।

হতেই পারে। আবার বিবিসি ডকুমেন্টারিতে যে সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে তাও হতে পারে। আপনি যেমন জোয়ার-ভাটার মত একটি প্রাকৃতিক ঘটনার কথা বলেছেন, তেমনি ওখানেও তেমন একটি প্রাকৃতিক ঘটনার কথাই বলা হয়েছে, যা হতেও পারে বা নাও পারে। বিবিসি ডকুমেন্টারি বা এই লেখায় কি কোন অতিপ্রাকৃত ঘটনা দিয়ে মোজেসের মিথকে ব্যাখা করা হয়েছে??? আশ্চর্য হল, আপনি ২ নং পয়েন্টে 'ভিনগ্রহবাসী কর্তৃক পিরামিড বানানোর' উদাহরণ টানলেন। যেন লেখকও তেমন কোন অতিপ্রাকৃত ঘটনা দিয়ে মোজেসের মিথকে জাস্টিফাই করছেন এখানে!! লেখকের বর্ণনা কেন গ্রহণযোগ্য নয়, তা আপনি অবশ্যই বলতে পারতেন।

মন মাঝি এর ছবি

প্রথমতঃ জোয়ার-ভাটা তত্ত্ব আমি বিকল্প ব্যাখ্যা হিসেবে উল্লেখ করিনি - এ ধরণের তথাকথিত 'ব্যাখ্যার' ফিউটিলিটি, এ্যাবসার্ডিটির প্রতি স্যাটায়ার হিসেবে উল্লেখ করেছি। পরের দুই লাইনেই সেটা পরিষ্কার করে দিয়েছি। আপনি বুঝতে পারেননি, সেটা আপনার সমস্যা। তবে, উপ্রে অনেকেই কিন্তু বুঝতে পেরেছেন।

২য়তঃ ২ নং পয়েন্টে 'ভিনগ্রহবাসী কর্তৃক পিরামিড বানানোর' উদাহরণ -টাতে ভিন্ন প্রসঙ্গে ভিন্ন ব্যক্তিদের ও ভিন্ন মোটিভেশন সম্পর্কে বলা হয়েছে, বর্তমান পোস্টলেখক বা তার লেখা / বক্তব্য বা উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়নি বা তিনি অতিপ্রাকৃত ঘটনা দিয়ে মোজেসের মিথকে জাস্টিফাই করছেন এমন কিছুও বলা হয়নি। পুরো মন্তব্যটার কোথাওই না। বরং প্রায় উলটো একটা কথাই বলা হয়েছে। ভিনগ্রহবাসী-সংক্রান্ত বাক্যটা ঠিক কি প্রসঙ্গে ও কাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, তা এর ঠিক আগের এবং পরের অন্তত চার-চারটি বাক্যে অত্যন্ত সুস্পষ্ট ভাষায়, ধরে-ধরে বানান করে করে বলা হয়েছে! আপনি কি চোখ বন্ধ করে পড়ছিলেন, নাকি এখনো মাতৃভাষাটা পুরোপুরি রপ্ত হয়নি?

লেখকের বর্ণনা কেন গ্রহণযোগ্য নয়, তা আপনি অবশ্যই বলতে পারতেন।

বলেছি এবং পেরেছি বলেই মনে হচ্ছে। পরের বেশ অনেকগুলি কমেন্ট লক্ষ্য করুন - এরা সবাইই বুঝেছেন বলেই মনে হয়, এমনকি যিনি এক্সোডাসের মীথত্বে আমার সাথে সহমত নন - তিনিও। শুধু একটা কথা বলি।

পাব্লিক ফোরামে লিখতে গিয়ে কারও লেঞ্জায় পাড়া দিয়ে ফেললে বকাবকি খাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবু সেটাও অনেক সময় সয়ে যায়, কিন্তু প্রায় শিশুবোধ্য জলবৎ-তরলং ভাষায় কোনকিছু প্যারায়-প্যারায় ছত্রে-ছত্রে বিস্তারিত ভাবে এবং রিপিটিটিভলি বলার পরও যদি কেউ 'সাত কাণ্ড রামায়ণ পড়ে সীতা কার বাপ্‌?" - টাইপের প্রশ্ন করে - তখন সত্যি কান্না পেয়ে যায়। নিজের উপ্রেই ঘেন্না ধরে যায়। গলা ছেড়ে বলতে ইচ্ছে করে - ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি!!!

"লেখকের বর্ণনা কেন গ্রহণযোগ্য নয়", এই রকম 'সীতা কার বাপ' টাইপের প্রশ্নের উত্তর দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। দুঃখিত।

****************************************

কাজি মামুন এর ছবি

আপনি কি চোখ বন্ধ করে পড়ছিলেন, নাকি এখনো মাতৃভাষাটা পুরোপুরি রপ্ত হয়নি?

দেখুন, কমেন্টটা কখন করেছি। সুতরাং, আপনার অনুমান মিথ্যে নয়, ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছিল, তাই আগে-পরের বিস্তারিত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য সত্যি পড়িনি।

নাকি এখনো মাতৃভাষাটা পুরোপুরি রপ্ত হয়নি?

এটিও মিথ্যে নয়, মাতৃভাষা পুরো রপ্ত করে ফেলেছি, এমন দাবী করার দুঃসাহস আমার সত্যি নেই। ভাষা একটি অতলস্পর্শী বিষয়, এটি পুরো রপ্ত করতে একজন রবীন্দ্রনাথ হতে হয় হয়ত! আর আমি তো ভাই একজন সামান্য অতিথি মন্তব্য-কারী। সুতরাং, মাঝি ভাই আপনার এই অনুমানটিও নির্ভুল!

অবসর খুব সামান্যই মেলে। যেটুকু সময় পাই, সচলের মত একটা দুটো ব্লগে ঢুকে পড়ি পড়ার দুর্বার নেশায়, মাঝে মাঝে ঢুলুঢুলু চোখে ভুল-পাঠ করে ফেলি আর আপনাদের মনোযোগে বিঘ্ন ঘটাই। না-বুঝ, নাবালকদের কারণে বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের অনেক বড় বড় ক্ষতি হয়ে গেছে, তবু না-বুঝ বলেই ক্ষমা পেয়েছে তারা।

সুতরাং, ক্ষমা করে দিন, মাঝি ভাই।

কল্যাণ এর ছবি

চরম চলুক

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

স্যাম এর ছবি

ইটা রাইখ্যা গেলাম...

কল্যাণ এর ছবি

হুই মিয়াঁ, ইটা রাইখা গেলেন কো চিন্তিত

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

অতিথি লেখক এর ছবি

মন মাঝি ভাইয়ের ব্যাখা খুব ভালো লেগেছে পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম । অনুমান দিয়ে বিজ্ঞান প্রমাণিথ হয় না।

মাসুদ সজীব

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।