গ্রীক মিথলজি ২১ (লেটোঃ এপোলো এবং আর্টেমিসের মায়ের কাহিনী)

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ১৫/১০/২০১৩ - ৬:২৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গ্রীক মিথলজিতে এথেনা আর আফ্রোদিতির জন্মে যেমন চমক আছে, ঠিক তেমনি বৈচিত্র আছে দুই যমজ ভাই-বোন এপোলো এবং আর্টেমিসের জন্মকাহিনীতেও। এপোলো এবং আর্টেমিসের বাবা ছিলেন দেবরাজ জিউস এবং মা ছিলেন লেটো। টাইটান কয়ওস এবং ফয়বের কন্যা হচ্ছেন লেটো, সে হিসেবে জিউস এবং লেটো হচ্ছেন চাচাতো/ফুফাতো/মামাতো/খালাতো ভাই-বোন। অমরদের মধ্যে লেটো ছিলেন খুবই দয়াশীল এবং ভদ্র। অমর এবং মরণশীলদের মধ্যে লেটো খুব জনপ্রিয় ছিলেন, কারণ লেটোর কাছে কিছু চেয়ে কেউ কখনো বিমুখ হোন নি।

এই ভদ্র এবং লাজুক লেটোর প্রেমে পড়লেন জিউস, তখনো হেরার সাথে জিউসের বিয়ে হয়নি। এরপরও হেরা লেটোকে প্রচন্ড ঈর্ষা করতেন। যখন হেরা শুনতে পেলেন, লেটোর গর্ভে জিউসের যমজ সন্তান, প্রচন্ড রকম ক্রুদ্ধ হলেন, যদিও সেই সময়ে লেটোর সাথে জিউসের সম্পর্ক ছিলো না।

প্রবল ঈর্ষায় হেরা আদেশ জারী করলেন, পৃথিবীতে যেসব জায়গায় সূর্যের আলো পৌঁছাবে, সেইসব জায়গাতে লেটো তার সন্তানদের জন্ম দিতে পারবেন না। ক্রুদ্ধ হেরা পারন্যাসাস পাহাড় থেকে পাইথন নামের এক ভয়ংকর সাপকে তরুনী প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিপীড়ন করার জন্য পাঠালেন। কেউ কেউ অবশ্য বলেন পাইথন ভবিষ্যত বানী শুনেছিলো যে লেটোর সন্তান তাকে হত্যা করবে, তাই সে লেটোকে আগেই হত্যা করার জন্য খুঁজতে থাকে। ভীত এবং একা লেটো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে লাগলেন সন্তান প্রসবের জন্য, যেতে লাগলেন এক শহর থেকে অন্য শহরে। লেটো গেলেন ক্রীটে, এথেন্সে, এজিনা দ্বীপে, থ্রাসে, থেসালীর পেলিওন পাহাড়ে, ইডা পাহাড়ে- কত জায়গায়! কিন্তু হেরার ক্রোধের কারণে কোনো শহরেই জায়গা পেলেন না লেটো।

এই সময়েই সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন জিউস। জিউস উত্তরের বাতাস বোরিয়ার কাছে সাহায্য চাইলেন, লেটোকে ওরটাইগিয়া দ্বীপে পৌঁছে দিতে। সেখানে পৌঁছানোর পর পসাইডন বিশাল তরঙ্গ দিয়ে দ্বীপটিকে ঢেকে দিলেন, সূর্যের আলোর আসাকে দিলেন আটকে এবং লেটোর জন্য তৈরী করলেন স্বর্গের মতো এক জায়গা, যেখানে হেরার ভয়ে সমাজচ্যুতির কোনো সম্ভাবনা নেই, একইসাথে হেরার আদেশও লঙ্ঘন হলো না- সূর্যের আলো না পৌঁছানোর জন্য এবং পাইথনও লেটোকে খুঁজে পেলো না। ঠিক এই রকম এক পরিস্থিতিতেই লেটো জন্ম দিলেন আর্টেমিসের, তার কন্যা। বলা হয়ে থাকে, আর্টেমিস জন্মের সময় লেটোকে কোনো কষ্টই দেন নি। এই কারণে আর্টেমিসকে অন্তসত্ত্বা মহিলাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পুজা করা হয়ে থাকে, যদিও আর্টেমিস ছিলেন কুমারী দেবী। তাকে প্রায়ই প্রসব যন্ত্রনার সময় স্মরণ করা হয়ে থাকে।


১৫৬০ সালে আঁকা গুইলিও রোমানোর-'লেটো ডেলোস দ্বীপে আর্টেমিস এবং এপোলোর জন্ম দিচ্ছেন'

আর্টেমিসের জন্মের কিছুক্ষণ পরেই আর্টেমিস একটি সরু প্রনালী পারি দিয়ে ভাসমান ডেলোস দ্বীপে নিয়ে যান লেটোকে। ডেলোসের দেবী প্রথমে হেরার ক্রোধের ভয়ে তার দ্বীপে লেটোকে স্থান দিতে রাজী ছিলেন না। পরে লেটো যখন স্টিক্স নদীর নামে শপথ নিয়ে বলেন, এপোলো কখনো তার জন্মস্থান (অর্থাৎ, ডেলোস দ্বীপ) ত্যাগ করে যাবেন না, তখন ডেলোসের দেবী লেটোকে সেখানে থাকার অনুমতি দেন। ডেলোস দ্বীপ নিয়ে আরেকটি কাহিনী প্রচলিত আছে। এসটেরিয়া ছিলেন লেটোর আরেক বোন। জিউস একবার এই এসটেরিয়ারও প্রেমে পড়েন এবং তাকে ফুসলাতে থাকেন। এসটেরিয়া জিউসের কামনার্ত আগ্রাসন থেকে রক্ষা পাবার জন্য সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তার শরীর থেকেই একটি ভাসমান দ্বীপের সৃষ্টি হয়, পূর্বে এটিকে বলা হতো ওরটাইগিয়া, পরবর্তীতে বলা হতো ডেলোস। কিন্তু অধিকাংশ মিথ লেখকই বলেছেন, ওরটাইগিয়া এবং ডেলোস দুটি আলাদা দ্বীপ।

যা হোক, কৃতজ্ঞ লেটো ডেলোসের একটি অলিভ গাছ এবং খেজুর গাছের মধ্যবর্তী স্থানে শুয়ে পড়েন। নয় দিন এবং নয় রাত ধরে প্রসব বেদনায় অস্থির হয়ে পড়েন লেটো। অনেকেই বলেন, লেটোর প্রসব বেদনার সময় ডেলোসে উপস্থিত ছিলেন জিউসের মা রিয়া, থেমিস এবং অ্যাম্ফিট্রিটে (পসাইডনের স্ত্রী)। কিন্তু শিশু জন্মের দেবী ইলিইথিয়া হেরার কূট কৌশলের কারণে লেটোর প্রসব বেদনার কথা জানতেই পারেননি। লেটোর কাছে উপস্থিত অন্যান্য দেবীরা রংধনুর দেবী আইরিসকে একটি লেকলেস ঘুষ দিলে, আইরিস দেবী ইলিইথিয়াকে খবর দেন, ইলিইথিয়া ডেলোস দ্বীপে আসেন এবং জন্ম নেয় লেটোর পুত্র এপোলো। সেই সময় থেকেই ঘোষনা করা হয়, ডেলোসে জন্ম এবং মৃত্যু নিষিদ্ধ। সে জন্য অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং অসুস্থ মানুষদের ডেলোস থেকে ওরটাইগিয়া দ্বীপে স্থানান্তর করা হয়ে থাকে। আর লেটোর জন্য ভাসমান ডেলোস পাকাপোক্তভাবে সাগরের মধ্যে স্থির এবং সুদৃঢ় হয়ে যায়।


শিল্পীর তুলিতে আর্টেমিস এবং এপোলোর জন্ম, সাথে মা লেটো, পিছনে ঈর্ষান্বিত হেরা

এপোলোর বয়স যখন মাত্র চার দিন, তখন তিনি এক বিশেষ তীর এবং ধনুক (যে তীর এবং ধনুক এপোলোর জন্যই হেফাস্টাস বিশেষভাবে তৈরী করেছিলেন) নিয়ে সেই ভয়ংকর সাপ পাইথনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন। পাইথন তখন পারন্যাসাস পাহাড়ে তার গুহায় ফিরে গিয়েছিলো। এপোলোকে দেখে ভয় পেয়ে গায়ার মন্দিরে গিয়ে আশ্রয় নিলেও, এপোলো মন্দিরের পবিত্রতাকে পুরোপুরি অগ্রাহ্য করলেন এবং পাইথনকে হত্যা করেন এবং মা লেটোকে যন্ত্রণা দেওয়ার জন্য এইভাবেই প্রতিশোধ নিলেন।


শিল্পীর তুলিতে লেটো এবং পাইথন সাপ

আর্টেমিস এবং এপোলোকে জন্ম দেওয়ার পরও লেটো তার দুই সন্তানকে নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছিলেন, ঠিক কি কারণে ঘুরছিলেন সেটা অবশ্য জানা যায় নি। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে তিনি একসময় এলেন লাইসিয়াতে। পিপাসার্ত লেটো সেখানকার এক পুকুর থেকে পানি খেতে চাইলে সেখানকার কৃষকরা বাধা দেন। তারা ভয় পাচ্ছিলেন, লেটোকে সাহায্য করলে দেবী হেরা শাস্তি দিবেন। তাদের এই আচরনে লেটো প্রচন্ড ক্ষুদ্ধ হলেন। তিনি দেখলেন, কৃষকরা পুকুরে জলকেলি করছেন, পুকুরের গভীর থেকে মাটি তুলে আনছেন। তিনি অনুভব করলেন পুকুরের প্রতি কৃষকদের ভালোবাসা! তাই তিনি লাইসিয়ার অধিবাসীদের ব্যাঙে পরিণত করলেন এবং সেই থেকে ব্যাঙগুলো পুকুরের পানিতেই সাঁতার কাটতে থাকলো।


লেটো এবং লাইসিয়ার কৃষকরা, ১৬০৫ সালে জন ব্রুগেল দ্য এল্ডারের আঁকা চিত্রকর্ম

এরপর একদিন লেটো আবার ডেলোসে ফিরে এলেন। কোনো এক সময় ডেলোসের এক গোপন খাঁজে লেটো একাকী বসে চিন্তা ভাবনা করছিলেন। ঠিক সেই সময় আচমকাই তার সামনে এসে হাজির হয় এক দৈত্য, টিটাইউস তার নাম, যে কি না জিউসেরও এক সন্তান, কেউ কেউ বলেন মা গায়ার সন্তান। লেটোকে একা দেখে টিটাইউস কামনায় জর্জরিত হয়ে আক্রমণ করলে, লেটো চিৎকার করে উঠেন। এপোলো এবং আর্টেমিস লেটোর চিৎকার শুনে সেই খাঁজের নিকটে চলে আসেন এবং মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত টিটাইউসকে তীরবিদ্ধ করতে থাকেন। জিউস টিটাইউসের এই ব্যবহারকে ক্ষমার অযোগ্য হিসেবে গন্য করেন, মৃত্যুর পরেও টিটাইউসকে কঠোর শাস্তি দিতে চাইলেন। পাতালপুরীতে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টিটাইউসকে জমিনের সাথে শক্ত করে বেঁধে ফেলা হয়। এরপর কোত্থেকে যেনো দুটি শকুন এসে টিটাইউসের যকৃত ঠোকরাতে লাগলো। প্রতিরাতেই নতুন করে যকৃত তৈরী হতে লাগলো এবং শকুনগুলো এসে সেটাকে আবার ঠোকরাতে লাগলো, ঠিক যেভাবে প্রমিথিউসকে শাস্তি দেওয়া হয়েছিলো। অধিকাংশ দেবতারা অবশ্য ধারণা করেছিলেন, লেটোকে আক্রমন করতে টিটাইউসকে পাঠিয়েছেন দেবী হেরা।

আর্টেমিস এবং এপোলো যখন বড় এবং শক্তিমান দেবী এবং দেবতা হয়ে উঠলেন, হেরার আপত্তি সত্ত্বেও লেটো জিউসের কাছে তার পুরানো স্থান ফিরে পেলেন। আর তাই যেনো তিনি হয়ে উঠলেন কঠোর এবং ভয়ংকর।

নাইওবি নামে এক রাজকুমারী ছিলেন। তিনি ছিলেন ট্যান্টালাসের কন্যা এবং পেলোপসের বোন। নাইওবি বিয়ে করেছিলেন জেথাসের যমজ ভাই এবং থেবসের যৌথ শাসক, জিউসের পুত্র, বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ আম্ফিয়নকে। নাইওবি ও আম্ফিয়নের ছিলো সাত পুত্র এবং সাত কন্যা। পুত্ররা ছিলেন প্রত্যেকেই সুদর্শন, সাহসী এবং শক্তিশালী আর কন্যারা ছিলেন সুন্দরীদের মধ্যেও শ্রেষ্ঠা। নাইওবির এই সন্তানদের একসাথে বলা হতো নিওবিড। নাইওবি নিজেও ছিলেন সুন্দরী, ধনী এবং উচ্চ বংশীয়জাত।

তারা সুখেই দিনাতিপাত করছিলেন। তারপর একদিন এপোলো ও আর্টেমিসের মা লেটোর সম্মানে দেওয়া এক অনুষ্ঠানে এসে এক চরম ভুল করে বসলেন নাইওবি। সেই অনুষ্ঠানে স্বামী, পুত্র,কন্যাসহ নাইওবি উপস্থিত হলেন। পুত্র, কন্যা এবং স্বামীর গর্বে গরবিনী নাইওবি সেখানে লেটোকে উপহাস করলেন। অহংকারী হয়ে উঠা নাইওবি বললেন,”লেটোর আছে মাত্র দুইজন সন্তান- একজন পুত্র আর একজন কন্যা। আর আমার আছে সাতজন শক্তিশালী ও সুদর্শন পুত্র এবং সাতজন সুদর্শনা কন্যা। কোথায় আশ্রয় না পেয়ে লেটো শেষ পর্যন্ত ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে ক্ষুদ্র ডেলোসে। আমি সুখী ও শক্তিশালী, দেবতাদের পক্ষে আমার ক্ষতি করা খুবই কঠিন ব্যাপার। তাই এখন থেকে লেটোর পুজা করা বন্ধ করে দাও। এই মন্দিরে শুধু আমার জন্যই উৎসর্গ করো”।

লেটো খুব অপমানিত বোধ করলেন। তিনি তার সন্তানদের বললেন নাইওবিকে শাস্তি দিতে। এপোলো দ্রুত স্বর্গ থেকে মর্ত্যে নেমে এলেন। তিনি তার তীর দিয়ে নাইওবির সাত পুত্রকেই নাইওবির সামনে হত্যা করতে লাগলেন। নাইওবি আর্তনাদ করে উঠলেন, বিপর্যস্ত হয়ে উঠলেন, তবুও দেবতাদের কাছে মাথা নত করলেন না। তখন শিকারী দেবী আর্টেমিসও তার বিষময় তীর দিয়ে নাইওবির সাত কন্যা সন্তানকে হত্যা করতে লাগলেন। শেষ সন্তানকে হত্যা করার পূর্বে নাইওবি এবার প্রাণভিক্ষা চাইলেন। কিন্তু ততক্ষনে তীর ছোড়া হয়ে গেছে। তিনি তাদেরকে চরম যন্ত্রনা ভোগ করে মরে যেতে দেখলেন। পুত্র-কন্যাদের শোকে আম্ফিয়নও সঙ্গে সঙ্গে আত্মহত্যা করলেন, কেউ কেউ বলে থাকেন, সন্তান হত্যার প্রতিশোধ নিতে চাইলে এপোলোর ছোড়া তীরে আম্ফিয়নও মারা যান। সেই তরুন, বলবান এবং অসম্ভব সুদর্শন ও সুদর্শনা মানুষগুলোর মৃতদেহের পাশে নাইওবি বসে রইলেন পাথরসম দুঃখ নিয়ে, পাথরের মতো নির্বাক হয়ে এবং তার হৃদয় তার ভিতরে পড়ে রইলো এক পাথরের মতো। কেবল তার অশ্রুধারাই প্রবাহিত হতে লাগলো এবং তা আর কখনো থামলো না। তিনি পরিণত হলেন এক পাথরে, যা চিরদিন দিবা-রাত্রি ধরে সিক্ত থাকতো অশ্রুকণায়। এক প্রবল বায়ু এসে এই পাথরকে বয়ে নিয়ে গেলো তার জন্মস্থানে। সেখানে সিপাইলাস পর্বতে পাথরটিকে স্থাপন করা হলো।


জ্যাকুইস লুইস ডেভিড ১৭৭২ সালে এই ছবিটি এঁকেছেন- 'নাইওবি এপোলো এবং আর্টেমিসের তীর থেকে তার সন্তানদের রক্ষার বৃথা চেষ্টা করছেন'

নাইওবির সন্তানদের নয় দিন ধরে কোনো অন্তোষ্ট্যক্রিয়া হলো না, কারণ জিউস থেবসের সকল মানুষদেরকে পাথরে পরিণত করে রেখেছিলেন। দশ দিনের মাথায় জিউসের দয়া হলো। পাথর থেকে মানুষ হলো সবাই, এবং তারা নাইওবির সন্তানদের কবর দিলেন।

এই গল্প যদি হয়ে থাকে লেটোর প্রতিহিংসার উদাহরণ, তাহলে লেটোর ভালোবাসার উদাহরণের গল্পও সাথে সাথে থাকা উচিত।
ক্রীট দ্বীপের ফাইয়াস্টোস নগরে গ্যালাতিয়া নামে এক নারী ছিলেন (পিগম্যালিয়নের গ্যালাতিয়া নয়), তার স্বামীর নাম ছিলো ল্যাম্প্রস। এটি যে সময়ের গল্প, সে সময়ে গ্যালাতিয়া অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ল্যাম্প্রস খুব করে পুত্র সন্তান চাচ্ছিলেন এবং গ্যালাতিয়াকে সরাসরি বলেন, কন্যা সন্তান জন্ম নিলে সেই সন্তানকে তিনি ফেলে দিয়ে আসবেন। ল্যাম্প্রস তার কাজে বেরিয়ে গেলে, গ্যালাতিয়া এক কন্যা সন্তানেরই জন্ম দিলেন। সন্তানের প্রতি মায়াবশত, কাজ থেকে ল্যাম্প্রস ফিরে আসলে, গ্যালাতিয়া বলেন, “তোমার পুত্র সন্তান হয়েছে!” গ্যালাতিয়া কন্যাটিকে পুত্রের মতোই লালন-পালন করতে লাগলেন। সন্তানের নাম রাখলেন ‘লিউকিপ্পোস’।

লিউকিপ্পোস যত বড় হতে লাগলেন, ততই অসাধারণ সুন্দরী হয়ে উঠতে লাগলেন। শারিরীক পরিবর্তনের কারণে লিউকিপ্পোসের ‘কন্যা পরিচয়’ গোপন রাখা খুব কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিলো। ভয়ার্ত গ্যালাতিয়া তখন লেটোর মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনা করতে থাকেন, তার কন্যা সন্তানটি যদি পুত্র হতো! লেটো খুব দয়াপরবশ হলেন এবং কন্যাটিকে পুত্রে রুপান্তরিত করেন। (গল্পটি নেওয়া হয়েছে গ্রীক মিথ লেখক এন্টোনিয়াস লিবেরালিসের লেখা থেকে, যদিও এই গল্পটি ওভিদের মেটামরফোসিসেও আছে, কিন্তু সেখানে দেবী ছিলেন মিশরের দেবী আইসিস।)

ট্রোজান যুদ্ধে লেটো তার দুই সন্তানের মতোই ট্রোজানদের পক্ষাবলম্বন করেন, ট্রোজান বীর ঈনিয়াস (আফ্রোদিতির সন্তান)যুদ্ধে আহত হলে, ক্ষতস্থান সারিয়ে তুলতেও সাহায্য করেন। এভাবেই লেটো বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে মরণশীলদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন, আর হেরার অসহযোগিতা পেয়েও মর্ত্যলোকে হয়েছিলেন জনপ্রিয়।

এই সিরিজের আগের লেখাগুলোঃ

সৃষ্টিতত্ত্বঃ
পর্ব-১: বিশ্ব-ব্রক্ষ্মান্ডের সৃষ্টি এবং ইউরেনাসের পতন
পর্ব-২: টাইটান যুগের সূচনা এবং অলিম্পিয়ানদের জন্ম
পর্ব-৩: প্রথম টাইটান যুদ্ধ এবং জিউসের উত্থান
পর্ব-৪: মানবজাতির সৃষ্টি, প্রমিথিউস এবং পান্ডোরা উপাখ্যান
পর্ব-৫: প্রমিথিউসের শাস্তি এবং আইও
পর্ব-৬: আবার যুদ্ধ- জায়ান্ট এবং টাইফোয়িয়াস
পর্ব-৭: ডিওক্যালিয়নের প্লাবন

দেবতাদের গল্পঃ এথেনা এবং আফ্রোদিতি
পর্ব-৮: জিউস, মেটিস এবং এথেনার জন্ম
পর্ব-৯: এথেনার গল্পকথা-প্রথম পর্ব
পর্ব-১০: এথেনার গল্পকথা- দ্বিতীয় (শেষ) পর্ব
পর্ব-১১: আফ্রোদিতির গল্পকথাঃ আফ্রোদিতি, হেফাস্টাস এবং অ্যারিসের ত্রিমুখী প্রেমকাহিনি
পর্ব-১২: আফ্রোদিতির গল্পকথাঃ অ্যাডোনিসের সাথে অমর প্রেমকাহিনী
পর্ব-১৩: আফ্রোদিতির গল্পকথাঃ এনকেসিসের সাথে দূরন্ত প্রেম
পর্ব-২০: আফ্রোদিতির গল্পকথাঃ লেমনসের নারী এবং অন্যান্য

ভালোবাসার গল্পঃ
পর্ব-১৪: পিগম্যালিয়ন এবং গ্যালাতিয়া
পর্ব-১৫: পিরামাস এবং থিসবি
পর্ব-১৬: হিরো এবং লিয়েন্ডার
পর্ব-১৭: বোসিস এবং ফিলোমোন
পর্ব-১৮: কিউপিড এবং সাইকী- প্রথম পর্ব
পর্ব-১৯: কিউপিড এবং সাইকী- শেষ পর্ব

লেখকঃ

এস এম নিয়াজ মাওলা

ছবি সূত্রঃ ইন্টারনেট


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হাততালি

শালার জিউসেরও দেখি মস্তিষ্ক ভর্তি **** ... লোকে হুদাই খালি এরশাদরে গাইলায় ইয়ে, মানে...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

হা হা হা
ঠিকই বলেছেন সত্যানন্দ দা। শুধু শুধুই আমরা এরশাদরে গালি দেই!
ভালো থাকুন, খুব।

-নিয়াজ

এক লহমা এর ছবি

খামখাই লোকে হলিউডি মুভীওয়ালাদের দোষ দ্যায়। এই সব পৌরাণিক কাহিনীগুলোও উদ্দাম হিংসা আর কামনা-বাসনার গল্প।
গল্প চলছে জমজমাট। ভাল কাজ হচ্ছে নিয়াজ ভাই।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখার গতি কিছুটা স্লো হয়ে যাচ্ছে। জম জমাট হচ্ছে কি না ঠিক বুঝতে পারছি না, আপনাদের ভালো লাগলেই খুব খুশি। ভালো থাকুন একলহমা ভাইয়া, খুব।

-নিয়াজ

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

হে হে হে - রূপকথা ছাড়া আর সব গল্পই তো ঐ ঐ ঐ

____________________________

মন মাঝি এর ছবি

চলুক দারুন!

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো থাকুন খুব।

-নিয়াজ

অতিথি লেখক এর ছবি

নিয়াজ ভাই, দারুন লিখেছেন।

-----(সাদাত কামাল)।

অতিথি লেখক এর ছবি

আরে! আমি তো মনে হয় চিনি! কেমন খবর?
ভালো থাকা হোক, সবসময়ের জন্য।

-নিয়াজ

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

আচ্ছা, হেরার সাথে জিউসের তো বিয়েই হয়নি তখন, তাহলে এত ক্রোধ কেন? আর হেরার আগে জিউস যদি লেটোর প্রেমে পড়ে থাকে, তবে লেটোকে বিয়ে করেনি কেন? হেরার সাথে কি জিউসের প্রেম ছিল? হেরা-জিউসের বিয়ে হয় কীভাবে? আশা করছি কোন কাহিনিতে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাবো।

লেখা ভালো হচ্ছে যথারীতি। চলুক

____________________________

অতিথি লেখক এর ছবি

লেটোর সাথে জিউসের বিয়ে হয়েছিলো, না কি, শুধু প্রেম ছিলো- পরিষ্কারভাবে কোথাও পাওয়া যায় নি। কেউ কেউ বলেছেন, লেটো জিউসের স্ত্রী ছিলেন, আবার কেউ কেউ বলেছেন শুধু প্রেম ছিলো।
জিউসের সাথে লেটোর যখন প্রেম হয়, তখন হেরার সাথে জিউসের বিয়ে হয় নি। হেরার সাথে বিয়ের পূর্বেই লেটোর সাথে প্রেম ভেঙ্গে যায়। যখন লেটো যখন গর্ভবতী, ততদিনে হেরা জিউসের বৌ। আর তাই লেটোর গর্ভে জিউসের সন্তান- হেরা এটাই মানতে পারে নি!
জিউস আর হেরার বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে বিস্তারিত পর্ব পরে লেখা হবে, এখন শুধু এটুকু বলি, জিউস অনেকটা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে হেরাকে বিয়ে করেছিল।

অয়ন ভাইয়া, খুব সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন খুব।

-নিয়াজ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।