সাধারণ পার্টি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১৮/১২/২০১৩ - ৪:০৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ডেইলি টিভি খুল্লেই দেখি অমুক কম্পানির সাবান ভালা আর আমরা যেই সাবানে কাপড় ধুই ঐটা ‘সাধারন’ সাবান — ঐটা ভালানা। এই রকম কইরা শ্যাম্পু, বিস্কুট, আচার, আটা, ময়দা, কয়েল, ফ্রিজ, টিভি এমনকি বাড়ি বানানির রডেরও যে বিজ্ঞাপন দেয় তারটা ভালা বাকি বেবাকতেরগুলা ‘সাধারণ’ — ঐগুলা খারাপ। বাজারে গিয়া খুইজ্জাই পাই না ‘সাধারণ’ কম্পানির মাল কোনটা! এইসব রইস কম্পানিগুলা বেচে সাধারণ মাইনষের কাছে আর গাইল পারে ‘সাধারণ’ কইয়্যা! হালায় মাঝে-মইদ্যে মনে লয় একটা কম্পানি খুলি যার নাম হইবো ‘সাধারণ কম্পানি’। দেহি এইবার ক্যাঠা ওরে খারাপ কয়!

কয়দিন আগে পেপারে পড়লাম দিল্লির মসনদ কাঁপায়া দিল “আম আদমি পার্টি”। আমার মাথাতো পুরাই নষ্ট, হালায় কয় কী! নেহরুর এত পুরান কম্পানি থুক্কু পার্টি থাকতে আর গেরুয়া কাপড় পিন্দা ভগবানের নাম বেচা পার্টি থাকতে এইডা আবার ক্যাঠা আইল? খোঁজখবর লইয়া দেহি অরবিন্দ কেজরিওয়াল নামে এক ব্যাডা এই কাম করসে। আগে জানতাম হিন্দি সিনামায় আগারওয়াল, ঝুনঝুনওয়ালা, স্ক্রুওয়ালারা ট্যাকা খাটাইত, অহন দেহি এরা পলিটিক্সও করে। যাউকগ্যা হ্যায় নাকি যন্ত্রের ইঞ্জিনিয়ার মাগার বউসুদ্দা কাম করত আয়কর বিভাগে। পরে হেইহানে বনিবনা হয়না বইল্যা কাম ছাইড়া দিসিল। পরে ‘নিখিল ভারত ভুখানাঙ্গা পার্টি’র আন্না হাজারের লগে হাংগার ইস্ট্রাইক কইরা সরকাররে মাপ চাওয়াইছে। আতকা হ্যার মনে হইল, এম্নে না খাইয়া কদ্দিন আর দাবি আদায় করুম। শ্যাষে না খাইয়া থাকতে থাকতে মরণ লাগবো। আসল কাম করতে হইলে পার্টি বানাইতে হইব আন্না বুইড়ার তো হেইদিকে মন নাই। তাইলে নিজেই পার্টি বানাই। এম্নেএম্নে হ্যায় বানায়া ফালাইল এই নতুন পার্টি।

পার্টিতো হইল, এদিকে পুরাইন্যা নামকরা পার্টির সব্বাই ত হাইস্যা অজ্ঞান — এই মিঃ বিন আবার কইত্থেইক্কা আইল! পুরান পাগলে ভাত পায়না আবার নতুন পাগলের আমদানি। মুরব্বিরা ডাক দিয়া কইল বাপধন এইসব কইরা কোন কাম হইব না, খালি খালি আমগো ইয়েতে আংগুল না দিয়া নিজের কাম কর গিয়া। দুই চাইরজন মন্ত্রী আরও বাড়ায়া কয় হ্যাডম থাকলে ইলেকশন কইরা একটা সিটে জিত্যা দেহাও দেখি।

নেহেরু পার্টি জিত্যা কী করব হেই চিন্তাভাবনা করার লগে গেরুয়া পার্টির ডরে ‘ইয়া নফসি! ইয়া নফসি!!’ জপ শুরু করতাছিলো। ইলেকশন শেষে দেখা গেলো নেহেরু পার্টির চাট্টিবাট্টি গোল আর গেরুয়া পার্টি পাইসে ৭০ এ ৩১। বেবাকতে টাস্কি খাইয়া দেখে পুরান পাগলগো মেলায় নতুন পাগল ২৮ সিটে জিত্যা গেছে।কমপক্ষে ৩৬ সিট না পাইয়া গোস্বা গেরুয়া পার্টি কয় — আমরাতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাই নাই, তাইলে হ্যারাই সরকার বানাউক। নেহেরু পার্টি মিনমিন কইরা কয় — আমরা বাইরে থাইক্যা হ্যাগো সাপোর্ট দিমু। এদিকে কেজরিওয়াল ভাইজান কয় — আমরা কারো লগে যামু না, বিরোধী দলে থাকুম। লাগসে এইবার পেজগি। ইলেকশনে এই কারবার দেইখা সারাদেশের ৩০০ জায়গা থেইক্যা লোকজন ঠিক করসে হ্যারাও এই পার্টির শাখা বানাইব। এইবার লও ঠ্যালা!

নিজের ‘সাধারণ কম্পানি’টা ক্যাম্নে বানামু হেই চিন্তা করতাসিলাম। আমারেতো কোন উমেদার নাই যে তার তদবিরে কোন ব্যাংক আমারে ট্যাকা ধার দিব। আর এদিকে কেজরিওয়াল ভাইজান আস্তা একটা পার্টি বানাইয়্যা ৯ মাসে একটা ইলেকশন প্রায় জিত্যা ফালাইলো। কনতো কী করণ যায়? তাইলে চলেন, ‘সাধারণ কম্পানি’ যখন বানাইতে পারুম না আমরা বেবাকতে মিইল্যা এই রকম একটা ‘সাধারণ পার্টি’ বানায়া ফালাই। আমগো দেশরে আমরাই চালাই। পুরানা পার্টিগুলারে তো বহুত দেখলাম, খালি নিজেগো পেটভরন ছাড়া আমগো লাইগ্যা কিছু করতে তাগো হাত সরে না। এইবার চলেন আমগো কপাল আমরাই বদলানের চেষ্টা করি।

অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

লীগগন্ধী মাহমুদুর রহমান মান্না, বিম্পিগন্ধী মুহম্মদ জাহাঙ্গীর, জামাতগন্ধী আসিফ নজরুল এইরকম কথাবার্তা প্রচুর বলছে। বিশেষ লাভ হয় নাই।

হাসিব এর ছবি

হাঁটুগন্ধী ইব্রাহীমও বহুত খাঁটছে হাঁটুসরকার থাকাকালীন সময়ে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার কথা ই কিন্তু বলছে তারা জনগনপন্থী নয় বিভিন্ন পন্থী তাই তাদের কাছে এর চেয়ে বেশি কি আর আশা করা যায়।

অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

অতিথি লেখক এর ছবি

পরিবর্তন দরকার, কিন্তু বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্র কী পরিবর্তন করতে দিতে চাইবে? নতুন দল বানিয়ে স্ট্রাগল করার চাইতে আমাদের আগ্রহ বিদ্যমান কোন দলে ঢুকে যেতে ঠিক যেমন আমরা উদ্যোক্তা না হয়ে সারাজীবন কামলা খেটে যেতে চাই।

শব্দ পথিক

অতিথি লেখক এর ছবি

পরিবারতান্ত্রিক এইসব দলে এর আগে অনেক বাঘই ঢুকে বিড়াল হয়ে গেছে। তাই নতুন করে বিড়াল হবার চেয়ে নতুন করে চেষ্টা করাটা ভালোনা।

অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

দীনহিন এর ছবি

তাইলে চলেন, ‘সাধারণ কম্পানি’ যখন বানাইতে পারুম না আমরা বেবাকতে মিইল্যা এই রকম একটা ‘সাধারণ পার্টি’ বানায়া ফালাই। আমগো দেশরে আমরাই চালাই।

সাধারণ পার্টি করে ফেলেন, ভাই। তবে একটাই অনুরোধ, ক্ষমতায় যেয়ে আবার 'অসাধারণ' হয়ে যাইয়েন না! আর মন্ত্রনালয়গুলোতে অসাধারণ সব সাধারণ মানুষকে জায়গা দিয়েন কিন্তু!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

অতিথি লেখক এর ছবি

ঠিক বলেছেন লংকায় যে যায় সেই রাবন হয়ে যায়।
অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

আয়নামতি এর ছবি

শুরু করে দেন ভাইয়া। মান্না, জাহাঙ্গির, আসিফেরা গলেপঁচে গেলো বলে সবাই যাবে এমনটা বিশ্বাস করিনা।
শুভকামনা থাকলো।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ।
অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

‘আম আদমি পার্টি’র আপাত সাফল্যে আশান্বিত হবার কিছু নেই। কেন?

১. ভারতের সাপেক্ষে দিল্লী একটা খুব ছোট জায়গায়। ছোট জায়গার জন্য প্রযোজ্য স্ট্র্যাটেজি ১.৩ বিলিয়ন লোকের দেশের জন্য প্রযোজ্য নয়, এমনকি ১৮০ মিলিয়ন লোকের দেশের জন্যও প্রযোজ্য নয়। কেজরিওয়ালদের মেনিফেস্টো নির্বাচনকেন্দ্রিক। আরো ভালো করে বললে দিল্লীর নির্বাচনকেন্দ্রিক। দীর্ঘমেয়াদী বা জাতীয়ভিত্তিক কোন মেনিফেস্টো তাদের নেই।

২. কেজরিওয়াল তথা আম আদমি পার্টির রাজনৈতিক আদর্শ কী? তাদের রাজনৈতিক দর্শনই বা কী? রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শ ঠিক করে পার্টি গঠন করলে সেটা আর ‘সর্বসাধারণ’কে ধারণ করতে পারে না। সেটার দরকারও নেই।

৩. কেজরিওয়ালদের সৃষ্ট একটা হাইপ হচ্ছে সারা দুনিয়া থেকে চাঁদা তোলা, তার লিস্ট ওয়েবসাইটে ঝুলিয়ে দেয়া, এবং তার খরচের হিসাবও পাবলিকলি দেয়া। কিন্তু চাঁদা কার কাছ থেকে নেয়া হলো? তাদের সবাই কি গ্রহনযোগ্য উৎস? কারো অন্ন খেলে তার প্রতি অন্নঋণ তৈরি হয়, এবং কোন একসময় সেটা শোধের প্রশ্ন উঠবে। অগ্রহনযোগ্য উৎস থেকে গৃহীত সাহায্য একদিন কড়ায়গণ্ডায় শোধ করতে হবে। সেদিন ঝাড়ুর হাতলটা কার হাতে থাকবে, আর কে সাফাই হবে!

৪. ভারতের মতো বহুজাতিক দেশে স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়নের জন্য শক্তিশালী স্থানীয় দল থাকা জরুরী। দিল্লীর এতোদিন নিজেদের পার্টি ছিলোনা, এখন হলো। তেলেগু দেশম পার্টি বা দ্রাবিড় মুনেত্রা কাঝাঘামের মতো হেভিওয়েট দলরাও জাতীয়ভিত্তিক দল গঠনে ব্যর্থ হয়েছে। জাতীয়ভিত্তিক দল গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহ ঐ হেভিওয়েট দলগুলোর ছিলোনা, কেজরিওয়ালদেরও নেই। দলভাঙা, দলছুট আর ডিগবাজীখাওয়াদের বাদ দিলে স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতে গঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একমাত্র ভারতীয় জনতা পার্টির মধ্যে জাতীয়ভিত্তিক দল গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহ থাকায় তারা তা হতে পেরেছে।

কেজরিওয়ালদের মতো ঘটনার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে বা দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিরক্ত হয়ে বাংলাদেশে কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার চেষ্টা যে হয়নি তা নয়। তবে তার কোনটাই সাফল্যের মুখ দেখেনি। কেন সফল হয়নি সেটা বরং অনুসন্ধান করা যেতে পারে। এতে বিফল হবার সম্ভাবনাগুলো হ্রাস করা যাবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

১। এটা সত্য যে তাদের মেনিফেস্টো নির্বাচন কেন্দ্রিক কিন্তু আমাদের দেশেও বড় দলের ক্ষেত্রে কি একই কথা প্রযোজ্য নয়। ছোট জায়গায় হয়েছে তাই বড় জায়গায় হবে না তা কি সবসময় সত্য ? সবকিছু কি প্রথমেই বড় থাকে না ছোট থেকে বড় হয়।
২। এটা ঠিক সুনির্দিস্ট আদর্শ ও দর্শন ছাড়া দল হলে তার দীর্ঘমেয়াদে কতটা ফলপ্রসু হবে তা প্রশ্নসাপেক্ষ।
৩। ঋণ কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কখনই কোন দীর্ঘ্যমেয়াদে কোন ফল বয়ে আনেনা তা যে উৎস থেকেই আসুক।
৪। ভবিষ্যতে তারা জাতীয় দল করতে পারবে কিনা সেটা ভবিষ্যতেই দেখা যাবে কিন্তু প্রচেস্টাটাকে সাধুবাদ দেয়াতো যায়।

আসলে আমি আশাবাদী লোক তাই সব জায়গায় উদ্গ্রিব হয়ে তার খোঁজ করি। আম আদমি পার্টি তেমনি একটা আশার ক্ষীন আলো মনেহয়েছে তাই এ লেখার অবতারণা। মোদ্দাকথা হচ্ছে কোন প্রচেস্টা না থাকার চেয়ে কিঞ্চিৎ চেষ্টা কি মঙ্গলজনক নয়। আর আমাদের দেশে যারা চেষ্টা করেছেন হয় তারা ইতিমধ্যে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া নতুবা কখনই তাদের গ্রহণযোগ্যতা ছিলনা, তাই বাতিলদের কাছে অতীত কর্মকান্ডের গালগল্প শোনা সময়ের অপচয় আর ভবিষ্যৎ আশাবাদ তো নির্বুদ্ধিতার সামিল। একারনেই এইসব নষ্টদের বাইরে নতুন কারো কাছে কিছু আশা করা বেশি যুক্তিসঙ্গত মনেহয় না।

অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

বাউলিয়ানা এর ছবি

চলুক
কেজরিওয়ালের পার্টির একটা বড় অংশ নবীন ভোটার এবং শিক্ষিত। ওরা এটাই প্রথম টার্গেটে রেখেছে। আমাদের দেশের এই অংশ হিসেব করলে শুধু বড় বড় শহরে বা নিদেন পক্ষে ঢাকাতে এরকম সফলতা আসা উচিত।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

তৃতীয় দল যে একটা আসবে তাতে কোনোই সন্দেহ নেই। তবে আরো অনেক সময় লাগবে। বাঙালি নেতাকে বিশ্বাস করে না আর। শাহবাগ আন্দোলনে কোনো নেতা নেই। যারা নেতা হওয়ার চেষ্টা করেছে, তারা এক অর্থে পরিত্যক্ত। কারণ রাজনীতি আর নেতা, এই দুটো শব্দই এত বেশি ভয়াল আর কলঙ্কিত যে, মানুষ এই পথে আর হাঁটতে চায় না।
ইতিহাস সবসময় মহান নেতা প্রসব করে না। রাজাকার ঝুলিয়ে, জামাত ঠেঙিয়ে, পাকিপন্থী লোকদের উষ্টা মেরে মেরে যে গতিময় আন্দোলনটা চলতে থাকবে, তার পথ ধরে নিশ্চয় একটা নতুন কিছু হবে। অপেক্ষায় আছি দেখার। জীবদ্দশাতে দেখে যেতে পারব আশা করি।

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।