আবার নির্যাতনের শিকার চিকিৎসক, এই সংস্কৃতির শেষ কোথায়?

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ১৫/০৪/২০১৪ - ৯:০৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


দেখুন যে এপ্রন পড়ে আমরা রোগী বাঁচানোর শপথ নেই তা আজ জানোয়ারদের হামলায় রক্তাক্ত।

১। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক এন্ডোক্রাইন ও মেটাবলিক ডিজঅর্ডার গবেষণা ও পুনর্বাসন সংস্থা (Bangladesh Institute of Research and Rehabilitation in Diabetes, Endocrine and Metabolic Disorders) বা বারডেম। ঢাকার প্রাণকেন্দ্র শাহবাগে অবস্থিত একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল।

রোগী ছিল অ্যাড্রেনাল ক্রাইসিস এর। এখানে অনেকেই আছেন যারা বিষয়টা বুঝবেন না তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ড দুই কিডনির ওপরে অবস্থিত দুটি অংশ নিয়ে গঠিত, যার প্রতিটির কাজ ভিন্ন। বাইরের অংশ কর্টেক্স এবং ভেতরের অংশ মেডুলা। হরমোন তৈরি এই গ্রন্থির কাজ। কিডনির উপর থাকে বল একে সুপ্রারেনাল গ্ল্যান্ড বলে।
কর্টেক্স তিন প্রকার হরমোন বা অন্তরস তৈরি করে: কর্টিসল (গ্লুকোকর্টিকয়েড), এলডোস্টেরন (মিনারালো কর্টিকয়েড), ডাইহাইড্রোএপিএনড্রোস্টেরন।
মেডুলা তিন প্রকার হরমোন তৈরি করে। এপিনেফ্রিন (অ্যাড্রেনালিন), নরএপিনেফ্রিন (নরড্রেনালিন), ডোপামিন।

অ্যাড্রেনাল ক্রাইসিস হল কর্টিসল যদি অপর্যাপ্তভাবে ক্ষরিত হয় তখন যে ভয়ংকর উপসর্গ দেখা দেয় তাকে বলে। একিউট অ্যাড্রেনাল ক্রাইসিস একটি মেডিকেল ইমারজেন্সি।

এই পহেলা বৈশাখের আগের দিন অর্থাৎ ১৩ এপ্রিল এই রোগে আক্রান্ত সিরাজুল ইসলাম নামক জনৈক রোগী ১৩২ নং ওয়ার্ডের ১৩৩১ নং বিছানায় থেকে এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি ৯ এপ্রিল ভর্তি হন। তিনি দেশবরেণ্য চিকিৎসক অধ্যাপক মোঃ ফারুক পাঠান স্যার এর তত্ত্বাবধায়নে উপযুক্ত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছিলেন। ১৩ তারিখেও রোগীকে দুইজন কনসালটেন্ট দেখেন ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরামর্শ দেন। তারপরও সেদিন বিকালে রোগীর শারীরিক অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হয়ে উঠলে সাথেসাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়। জরুরি চিকিৎসায় রোগীর উন্নতি না হলে আই.সি.ইউ চিকিৎসককে জানানো হয়, যিনি অতিদ্রুত রোগীকে দেখতে আসেন ও আই.সি.ইউ-তে স্থানান্তরের চেষ্টা করেন। কিন্তু ইতিমধ্যেই দুর্ভাগ্যবশত রাত ৮ টা ১৫ মিনিটে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে রোগী মৃত্যুবরণ করেন। রোগীর মৃত্যুর পর রোগীর স্বজনরা প্রায় ৫০-৬০ জন দুষ্কৃতকারীসহ কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ কল্যাণ ও ডাঃ আনোয়ারকে জিম্মি করে ফেলে। পুলিশের এএসপি মাসুদ পরিচয়দানকারী এক ব্যক্তি এবং সাবেক জনৈক মন্ত্রীর এপিএস পরিচয়দানকারী বাবু নামক দুই ব্যক্তির ইন্ধনে এসব দুষ্কৃতকারী এই চিকিৎসকদের অমানবিকভাবে মারধর করেন এবং অকথ্য গালিগালাজ করেন। তারা ডক্টরস রুমে থাকা বিভিন্ন আসবাবপত্র ছুঁড়ে মেরে তাদেরকে আহত ও রক্তাক্ত করে। একজন নারী চিকিৎসককে টয়লেটে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় দরজা ভেঙ্গে বের করে তাকে লাঞ্চিত করে। ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও এএসপি মাসুদের প্রভাবে তারা নীরব ভূমিকা পালন করে। চিকিৎসকদের বাঁচাতে এসে সহকারী অধ্যাপক ডাঃ কিরোজ আমিন তাদের হাতে লাঞ্চিত হন। কয়েক ঘন্টা জিম্মি থেকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত হবার পর রাত ১১.৩০ এর দিকে দুষ্কৃতকারীরা চলে গেলে চিকিৎসকরা মুক্তি পান।
এরপরও যদি কেউ বলেন চিকিৎসকরা ধর্মঘট করে ভুল করছেন, তাহলে সবাইকে আগে মনে করাতে চাই, ডাক্তাররাও মানুষ। তারা কোন এলিয়েন প্রজাতির কেউ নন। চিকিৎসাসেবা দেবার জন্য আমরা অন্তত নিজেদের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করার দাবি করতেই পারি।

২। বাড়ীর কাজের মহিলাকে মারলে মিডিয়ায় নিউজ আসে।বিশাল কলাম লেখা হয়। নারীবাদীরা জেগে উঠে। লম্বা টক শো হয়। কিন্তু মহিলা চিকিৎসক মার খেলে কোথায় থাক তোমরা।তখন কেন টকশ তে ঝড় উঠে না।

৩। একটু অতীতের দিকে তাকাই।

মৃত্যুপথযাত্রীকে বাঁচানোর সর্বশেষ চেষ্টা করেন চিকিৎসকরা আইভি স্টেরয়েড ইনজেকশন দেন। উদ্দেশ্য রক্তচাপ যাতে বৃদ্ধি পায় সেজন্য এই শেষ চেষ্টা। অনেক জায়গাতে সরাসরি হার্টের ভিতর এপিনেপ্রিন ইনজেকশন দেওয়া হয়। অবশ্য এর জন্য দক্ষতার প্রয়োজন হয়। এর চেয়ে আইভি স্টেরয়েড ইনজেকশন দেওয়া সহজ এবং চিকিৎসকরা তাই প্র্যাকটিস করে থাকেন।

২০১২ সালের ২১ নভেম্বর বরিশালের শেরে বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের (শেবাচিম) ইন্টার্নি চিকিৎসক চিকিৎসক তন্ময় বড়ুয়া এমন এক মৃত্যুপথযাত্রীকে বাঁচানোর সর্বশেষ চেষ্টা হিসেবে আইভি স্টেরয়েড ইনজেকশন দেন। কিন্তু রোগী মারা যান। এর জন্য স্টেরয়েডের কোন দোষ নাই। কিন্তু বাংলাদেশে তো সবাই একেকজন বড় চিকিৎসক। ডা তন্ময়কে পেটায় ঐ রোগীর লোকজন। এর জের ধরে শুরু হয় ইন্টার্নি চিকিৎসকদের কর্মবিরতি। সাংবাদিকগণ কর্মবিরতিকেই বেশি করে দেখান। কিন্তু সেবাদাতারা যে চরম ঝুঁকির মুখে সেবা দিয়ে যান তা আর থাকে না তাদের রিপোর্টে।

৪। কোনো কারণে যখন হূৎপিণ্ড এবং ফুসফুস বন্ধ হয়ে যায়, তখন সাময়িকভাবে হূৎপিণ্ড ও ফুসফুসের কাজ কিছু সময় চালিয়ে মস্তিষ্কে রক্ত এবং অক্সিজেন সরবরাহ করাকে বলে ‘কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন’ (cardio pulmonary resuscitation) বা সিপিআর। উন্নত বিশ্বে সব চিকিৎসকের জন্য সিপিআর প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। শুধু চিকিৎসকেরাই নয়, নার্স, প্যারামেডিক্স, ফায়ার ব্রিগেডসহ অন্যান্য সামাজিক সংগঠন যারা দুর্যোগ মোকাবিলায় সদাপ্রস্তুত, এমনকি সাধারণ মানুষকেও এই সিপিআর নামক পদ্ধতিটি নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এত ব্যাপকভাবে সিপিআর প্রশিক্ষণ সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য একটাই—জীবন রক্ষা করা, হঠাৎ করে যখন হূৎপিণ্ড ও ফুসফুস অকার্যকর হয়ে যায়, তখন আমাদের শরীরের শিরা-উপশিরায় যে পরিমাণ অক্সিজেন জমা থাকে তা দিয়ে চার থেকে ছয় মিনিট বেঁচে থাকা সম্ভব। আর সিপিআর প্রয়োগের জন্য এই চার থেকে ছয় মিনিট সময়টুকুই সবচেয়ে জরুরি। এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে কার্যকরভাবে সিপিআর প্রয়োগ করতে পারলে অনেককেই মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। দুঃখজনক হলেও সত্যি, শতকরা ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঘটনা হাসপাতালের বাইরে ঘটে। এদের মধ্যে মাত্র ৭ শতাংশ রোগী জীবিত অবস্থায় হাসপাতালে পৌঁছাতে পারে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী যথাযথ সিপিআর পেলে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৫০ শতাংশে। (সিপিআর: জীবন রক্ষাকারী পদক্ষেপঃকানিজ ফাতেমা | তারিখ: ১৯-১০-২০১১, দৈনিক প্রথম আলো)

বুকের উপর চাপ দিতে হয় অন্তত ৫ সেমি কমপ্রেস করতে হয়। উদ্দেশ্য মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন অব্যাহত রাখা যাতে মস্তিষ্কের মৃত্যু বা স্থায়ী ক্ষতি না হয়। তার ভিতরেই উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।

সার্জারির এক স্যার বলেছিলেন সিপিআর তখনি সার্থক হবে যখন তুমি রোগীর পাঁজরের হাড় ভেঙ্গে হাত দিয়ে হৃদপিণ্ড ম্যাসেজ করতে পারবে। কিন্তু সাবধান এই দেশে এটা কর না। কারণ রোগি মারা গেলে লোকজন বলে "চাইপা মাইরা ফালাইসে"। বাংলাদেশে এরকম অনেক কারণে চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনা ঘটে।
এখন আমি জানতে চাই এক রোগী আসল সিপিআর দিলে রোগী বাঁচতেও পারে নাও বাঁচতে পারে। কিন্তু রোগী যখন মারা যাবে আমাকে নিরাপত্তা দিবে কে? তাহলে চিকিৎসাবিজ্ঞান শেখার লাভ কি?

৫। মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কসন বা কথ্য ভাষায় 'হার্ট অ্যাট্যাক" হল হৃৎধমনীর রক্তপ্রবাহে অবরোধের কারণে হৃৎপিণ্ডের দেওয়ালের কোন অংশে হৃৎপেশীর রক্তাভাবজনিত মৃত্যু (ইনফার্কসন)। প্রবল হৃৎযন্ত্রণা (>৩০ মিনিট), কয়েকটি বিশেষ ইসিজি পরিবর্তন, ও কয়েকটি রক্ত পরিক্ষার দ্বারা এই হৃদরোগ নির্ধারন করা হয়।

এমআই এর রোগীদের ২৫% প্রথম কয়েক মিনিটের ভিতর মারা যায়, ৫০% প্রথম ২৫ ঘণ্টার ভিতর মারা যায় আর বাকিদের ৪০% এর আয়ুকাল আর ২৮ দিন। এটা আমার কথা না। এটা মেডিসিনের বাইবেল ডেভিডসনের কথা।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির যুগেও এম আই এর সারভাইভাল রেট খুব খারাপ। স্রস্টাপ্রদত্ত জিনিস নষ্ট হয়ে গেলে কি হয় তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ।

নোয়াখালীর এক চিকিৎসকের কথা বলি। তিনি এমআই এর রোগীকে এস্পিরিন দিয়ে উচ্চতর সেন্টারে রেফার করলেন। রোগী মারা গেল। দোষ হল চিকিৎসকের। সে কেন এসপিরিন দিলেন? অথচ গবেষণা বলে The use of aspirin has been shown to reduce mortality from MI. Aspirin in a dose of 325 mg should be administered immediately on recognition of MI signs and symptoms. The nidus of an occlusive coronary thrombus is the adhesion of a small collection of activated platelets at the site of intimal disruption in an unstable atherosclerotic plaque. Aspirin irreversibly interferes with function of cyclooxygenase and inhibits the formation of thromboxane A2. Within minutes, aspirin prevents additional platelet activation and interferes with platelet adhesion and cohesion. This effect benefits all patients with acute coronary syndromes, including those with amyocardial infarction. Aspirin alone has one of the greatest impacts on the reduction of MI mortality. Its beneficial effect is observed early in therapy and persists for years with continued use. The long-term benefit is sustained, even at doses as low as 75 mg/day.

( http://www.clevelandclinicmeded.com/medicalpubs/diseasemanagement/cardiology/acute-myocardial-infarction/#s0080 )

এবং স্বঘোষিত চিকিৎসকদের হাতে সেই গ্র্যাজুয়েট চিকিৎসক লাঞ্চিত হলেন।

এই নিয়ে আমার এক স্যার এর অভিজ্ঞতা তার ভাষায় প্রকাশ করছিঃ
“শুক্রবার ঢাকার বাইরে যাই practice করতে । এক দুপুরে মধ্যবয়সী এক রোগী আসলো। দর দর করে ঘামছেন। হাতের তালুটা বুকের মাঝ বরাবর চেপে ধরা । সেখানে, রোগীর ভাষায়, পাথরের মতো কি যেন চেপে ধরে আছে । আমি দ্রুত ইসিজি করতে বললাম । তারো আগে নিজের তত্ত্বাবধানেই তাকে Aspirin/Clopid/Metoprolol এ তিন রকমের বড়ি খাইয়ে দেই । যে কোন চিকিৎসকই এটাকে MI (হার্ট এটাক) ভাববেন, আমিও ভেবেছি । ECG তে MI ডায়াগনসিস হওয়া মাত্র ওনাকে হৃদরোগ হাসপাতালে পাঠিয়ে দিব এ ছিল আমার মানসিক প্রস্তুতি । কিন্ত ECG করার পরপরই তিনি মৃত্যুবরন করেন । সেটা ছিল বড় ধরনের হার্ট এটাক (Acute Extensive Anterior MI)

ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে তারা চলে যায় । তারপরই Health সেন্টারটির ম্যানেজার আমার কাছে এসে ফিসফিস করে বলে, স্যার খারাপ রোগীদের কখনো কোন ওষুধ খাওয়াবেন না, স্যালাইন দিবেন না । ডাইরেক্ট অন্য কোথাও রেফার করে দিবেন । আমি বলি,হার্ট এটাকের রোগীদের heart hospital এ পাঠানোর আগে যত তাড়াতাড়ি ঐসব drug দেয়া যায় ততই মঙ্গল । সেটাতো আমাদের দায়িত্ব ।

ব্যাপারটা আমি বুঝতে পারি । আসলেই তো রোগীটির স্বজনেরা সহজ সরল কৃষক পরিবারের না হয়ে অন্য কেউ হলে তারা আমাকে চার্জ করে বলতে পারতো আপনি কি ওষুধ খাওয়ালেন যে দশ মিনিটের মধ্যে মরে গেলো ? তারা হৈচৈ বাধাতে পারতো, প্রতিষ্ঠানটির ভাংচুর করতে পারতো, সাংবাদিকরা 'ওষুধ খেয়েই রোগীর মৃত্যু' এ জাতীয় নিউজ করতে পারতো অথবা ব্ল্যাকমেইল করে আমার পকেট কাটতে পারতো, ফেসবুকে ঝড় উঠতে পারতো, আরো মর্মান্তিক হলো তারা পুলিশ ডেকে আনতে পারতো অথবা পাশের পুলিশ ফাড়িতে আমাকে নিয়ে যেতে পারতো । পুলিশ খুনের মামলায় আমাকে আদালতে পাঠাতে পারতো, আদালত স্বজনদের কান্নাকাটি, পত্রিকার রিপোর্ট, পুলিশের আরজিকে আমলে নিয়ে আমাকে জেলে পাঠাতে পারতেন । অথচ মনের গভীরে আমি জানতাম, আমার মেডিসিনের বইকে সাক্ষী রেখে জানতাম আমার কোন ভুল ছিলনা, রোগীটির প্রতি শুভ কামনা ছাড়া ।”

৬। আমাদের দেশে সংবাদপত্রের প্রায়ই শিরোনাম থাকে ‘চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু’ বা ‘ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু’। এই শিরোনামগুলো সাধারণত করে থাকেন একজন সাংবাদিক। আমার মনে প্রশ্ন জাগে চিকিৎসাবিজ্ঞানের সাথে জ্ঞানের সম্পর্কহীন একজন মানুষ কিভাবে ভুল চিকিৎসা হয়ে বা চিকিৎসক অবহেলা করেছে তা বলতে পারেন? কোন চিকিৎসক ভুল চিকিৎসা দিয়েছেন কিনা তা নির্ণয় করবেন আরেকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। সংবাদমাধ্যমে এই ধরণের খবর ছাপানোর ফলে চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে কি বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছে না জনগণের ভিতরে?

৭। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন নামে চিকিৎসকদের যে অভিভাবক সংস্থা রয়েছে তার কাজ কি? চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়ানো না পোস্টিং বাণিজ্য করা? মাঝে মাঝে ভেবে অবাক হই। মাঝে মাঝে চিন্তা করি জুনিয়র ডাক্তার রা যতই সেবা দেয়া বন্ধ করুক, সিনিয়র ডাক্তার রা কিছুই করবেন না, তাই আমরা যতই আন্দোলন করি, যতই আইনের আশ্রয় নেই কোন লাভ নাই।

৮। এই লেখাটি যখন শেষ করছি তখন বাংলানিউজ ২৪ এর একটি খবর এর দিকে চোখ গেল। শিরোনাম ‘অভিযোগ থেকে বাঁচতে বারডেম চিকিৎসকদের নাটক’ ।
আপনারাই দেখুনঃ
http://www.banglanews24.com/beta/fullnews/bn/282520.html

কোনো বক্তব্য দিয়ে শিরোনাম করতে হলে যতোটুকু জানি বক্তব্যটাকে ইনভার্টেট কমার মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে হয়। এখানে পার্টির বক্তব্য দিয়ে হেডলাইন করা হয়েছে

ভিতরে রয়েছে রোগীর আত্মীয় স্বজনের বক্তব্য। অর্থাৎ এটি রোগীর আত্মীয় স্বজনের বক্তব্য । কিন্তু মিডিয়া যেভাবে উপস্থাপন করেছে দেখে মনে হচ্ছে এটা কোনো বক্তব্য না, সত্য ঘটনা। প্রমানিত সত্য ঘটনা। এইভাবে সংবাদ উপস্থাপন করে আপনারা চিকিৎসকদের প্রতি বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি করছেন কেন?

প্রায়ই দেখা যায় রোগীর অধিকার নিয়ে সেমিনার হয়, চিকিৎসকদের দুর্নীতি নিয়ে কথা হয়, কিন্তু যারা সেবা দিতে যেয়ে পদে পদে লাঞ্ছিত হচ্ছেন তাদের কথা কেউ বলে না। বরিশালের কাউখালিতে লঞ্চ থেকে নেমে একটা কুলিকে চর মেরে দেখবেন তো একবার? কোন কুলি কাজ করবে? একই কথা প্রযোজ্য খোদ মেডিকেলের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ক্ষেত্রেও ।

চিকিৎসকদের ভুলে যদি মারা যেয়ে থাকেন; তাহলে মামলা হবে। দেশের আইনেই এর তদন্ত এবং বিচার সম্ভব। আর এটা নন মেডিকেল রোগীর আত্মীয় স্বজনদের বুঝতে পারার কথা না- প্রয়োজন তদন্ত। কিন্তু গায়ে হাত তুলবেন কেন?

আসল কথা হচ্ছে সর্বং সহা হলে নির্যাতিত হতেই হবে। তা কি জাতিগত সংখ্যালঘু বলেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘু বলেন বা পেশাগত সংখ্যালঘু বলেন। বলতে খারাপ লাগে একদিন জরুরী বিভাগ সহ বাংলাদেশের সব হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হলেই জাতি বুঝবে চিকিৎসকের প্রয়োজনীয়তা। আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রায়ই বলেন চিকিৎসকরা গ্রামে থাকতে চান না কেন? খোদ রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে বারডেম হাসপাতালেই এই দশা হলে সারা দেশের অবস্থাটা ভেবে দেখুন একবার।

( বিদ্রঃ এখানে চিকিৎসক বলতে এমবিবিএস এবং বিডিএস ডিগ্রীধারীদের বলছি। পল্লী চিকিৎসক, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ফার্মেসীর দোকানদার, হোমিওপ্যাথ ও নামের আগে ডাক্তার লেখা ভুয়া এবং অপচিকিৎসকদের বুঝাচ্ছি না।)

একাকী মানব

ছবি: 
31/05/2007 - 2:46অপরাহ্ন

মন্তব্য

শাফায়েত এর ছবি

বাংলানিউজের এই অভ্যাসটা নতুন না, তারা প্রায়ই বিভিন্ন জনের মতামতকে শিরোনাম বানিয়ে খবর ছাপিয়ে ফেলে, খুবই ফালতু একটা পত্রিকা।

অতিথি লেখক এর ছবি

আসলেই শেষ নেই মন খারাপ

ডাক্তার না পিটাতে পারলে কি আর ক্ষমতা কতটুকু আছে তা কি জাহির করা যায়? তবে এর চেয়ে দু:খজনক এবং ধিক্কারজনক হলো পত্রিকাগুলোর শিরোনাম। নিশ্চিত প্রমাণ ছাড়া শুধু পরিবারের অভিযোগে কি করে এমন শিরোনাম করে? আমার নিজের বোনের মেয়ে মারা গেছে জন্মলগ্নে, আমার কিছু আত্নীয় বলেছে ডাক্তারকে শায়েস্তা করলি না কেন? কিন্তু আমার মা নিষেধ করেছে, কারন আমার নিজের ভাইও ডাক্তার। আজকে আমরা মারলে অন্য একদিন আরেকজন এসে মারবে। আর অতি ব্যবসায়ী মানসিকতার কিছু ডাক্তার থাকলেও বেশিভাগ ডাক্তার কোনদিন চায় না রোগী মারা যাক। আর ডাক্তারকে আঘাত করা কোন ভদ্র মানুষের বিবেক প্রসূত কর্ম হতে পারে না।

মাসুদ সজীব

অতিথি লেখক এর ছবি

বাংলা নিউজ২৪.কম এর ভুল নিউজের প্রেক্ষিতে হাসপাতালের একজন ডাক্তার (যিনি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী) তিনি নিচের স্ট্যাটাসটি দেন। পড়ে দেখো রাজি।

হাসপাতাল এ দায়িত্ব পালন রত অবস্থায় কন রোগীর মৃত্যু হলে টা খানিকটা হলে একজন চিকিৎসক কে মানসিক ভাবে আক্রান্ত করে। কিন্তু পেশা তাই এমন যে আপনি চাইলেও মন খারাপ করে বসে থাকতে পারবেন না। চিকিৎসক হিসেবে মৃত্যু কে আমরা খুব কাছ থেকে দেখি। বিগত ১৩/০৪/২০১৪ তারিখে বারডেম হাসপাতাল এর ১৩ তালায় আঁক রুগীর মৃত্যু কে কেন্দ্র করে যে তাণ্ডব ও অত্যাচার কর্তব্যরত চিকিৎসক এর উপর হয়েছে তার চাক্ষুষ সাক্ষী আমি। ঘটনা কি হয়েছিল সেটা আমাদের মিডিয়া এর কল্যাণে সবাই জেনে গেছেন। রোগী'র পরিবার আজ জাতীয় প্রেস ক্লাব এ আজ সংবাদ সম্মেলন ও করেছেন। এই সম্মেলন এ নিজেদের ভুল ঢাকার জন্য অসংলগ্ন কোন তথ্য দিতে তারা দ্বিধা বোধ করেননি।
১। "আমার বাবা ভর্তি ছিলেন ১৩ তলায়। অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, আমরা ৫ম তলায় ভাংচুর করেছি এবং চিকিৎসকদের লাঞ্ছিত করেছি। "
- আজ সকাল এই বারডেম থেকে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। ওইখানে কোথাও ৫ম তলা'র কোথা বলা হয় নাই। উনি এই তথ্য কোথা থেকে পেয়েছেন সেটা বোধগম্য নয়। এক দিক দিয়ে চিন্তা করলে ঠিক ই আছে। উনারা তো ৫ম তলায় ভাংচুর করেন নাই, করেছেন ১৩ তালায়। উনি জানেন ই ভুল। তাই দিয়েছেন ভুল তথ্য।
২। "ভুল চিকিৎসায় আমার বাবার মৃত্যু হয়েছে- এটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে কোনো টাকা না নিয়েই আমার বাবার লাশ দিয়ে দিয়েছে।"
- ৫০ জন সন্ত্রাসী ও পুলিশ নিয়ে যে অত্যাচার চালিয়েছেন ওই মুহূর্তে আপনাদের কাছে টাকা চাওয়ার ভুল বারডেম কেন, পৃথিবীর অন্য কোন হাসপাতাল করবে কিনা সন্দেহ আছে।
৩। "হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসকদের লাঞ্ছিত করা বা ভাংচুরের কোনো তথ্য-প্রমাণ দিতে পারবে না বলেও দাবি করেন তিনি"
- সি সি টিভি ফুটেজ দেখলে নিজেরাই লজ্জা পাবেন। বাধ্য করলে শাহবাগ মরে এল সি ডি স্ক্রীন এ দেখানোর বাবস্থা করা হবে।
৪। "ঢাকা জেলার এএসপি বাবু আমার চাচা (বাবার ফুফাতো ভাই)। লাশ নেওয়ার মতো কোনো অভিভাবক না থাকায় চাচা এসেছিলেন।এ সময় চাচার সঙ্গে কয়েকজন পুলিশ সদস্যও ছিলেন।"
- লাশ নিতে পুলিশ নিয়ে আসার প্রয়োজন কেন হল সেটা বোধগম্য নয়। শুধু মাত্র ঢাকা শহরে প্রতিদিন হাসপাতালে যত রোগী মারা যায় এবং তাদের সবার লাশ নিতে যদি পুলিশ কে জেতে হয় তাহলে লাশ টানাটানি করা ছাড়া পুলিশ কে আর কোন কাজই করতে হবে না।
৫। "১৩ এপ্রিল বিকেল চারটার দিকে হঠাৎ আমার বাবার শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এ সময় তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে চিকিৎসকরা অক্সিজেন নল দিয়ে চলে যান।"
- শ্বাস কষ্ট হলে অক্সিজেন দিতেই হয়। ভুল কিছু তো করে নাই। অক্সিজেন দেওয়া রোগীর মৃত্যুর কোন কারণ না।
৬। "মৃত্যুর পর আইসিইউ-এর চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, অক্সিজেন নল দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে আইসিইউতে ভর্তি করা জরুরি ছিল। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসক এ বিষয়ে কিছু বলেননি।"
- ডাহা মিথ্যা কথা। আই সি ইউ তে ভর্তির উপদেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বারডেম এর আই সি ইউ তে কোন বিছানা খালি না থাকায় বাইরের কোন আই সি ইউ তে নিয়ে যাওয়ার উপদেশ বিকেল বেলাতেই দেওয়া হয়।
৭। "ইসিজি মেশিন নষ্ট ছিল এমন অভিযোগ করে নাসরিন বলেন, দায়িত্বরত চিকিৎসক সোয়া আটটা ও নয়টায় দু’টি ইসিজি করেন। রিপোর্ট দু’টির মধ্যে কোনো মিল ছিল না।"
- খুব স্বাভাবিক । রোগী মারা যাওয়ার ঠিক পর মুহূর্তে করা ইসিজি আর ১ ঘণ্টা পর করা ইসিজি কখনই এক হবে না। উলটা পালটা তথ্য দিয়ে নিজেদের ভুল ধাকার আগে অন্তত ইসিজি নিয়ে পড়াশোনা করে আসা দরকার ছিল। এই তথ্য দিলে কোর্টেও মামলা টিকবে না।
৮। "এ সময় চিকিৎসার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন আনোয়ার হোসেন ও কল্যাণ দেবনাথ। এ দু’জনই ছাত্র বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।"
- অসম্পূর্ণ তথ্য। তারা ছাত্র তবে এম,ডী কোর্সের ছাত্র। আরও একজন মহিলা মেডিকেল অফিসার ও দায়িত্বে ছিলেন যাকে আপনার স্বজন রা বাথরুম থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে অপদস্থ করেছেন। তার কথা ভুলে গেলেন কিভাবে?

একাকী মানব

rubai এর ছবি

এর চাইতে কৃতজ্ঞতাবিহীন পেশা বোধহয় এখন আর নেই।
অন্য কোন পেশার মানুষের গায়ে হাত তোলা বোধহয় কল্পনাও করা যায় না।
সব চ্যানেল ই রোগীদের দুর্ভোগ দেখিয়ে যাচ্ছে, একবার ও কেউ চিকিৎসক মার খেল সেটা নিয়ে কিছু বলছে না।

দেব প্রসাদ দেবু এর ছবি

বড্ড অসহিষ্ণু আমরা, বড্ড নিয়ন্ত্রণহীন।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

আসলে আমাদের সামনে 'একপেশে' (মানে পত্রিকায় পড়া) নিউজ আসে, আমরা তাই দু'দিকের কথা শুনতে পাইনা।
আমার মনে হয় বাংলাদেশে চিকিৎসক লাঞ্ছিত করার এই সংস্কৃতির অবসান হওয়া দরকার। "কিছু হলেই মাইর" -এধরণের অদ্ভুত কালচার আমাদের পেয়ে বসেছে।

নিন্দা জানাই এ হামলার!

@ লেখক: শুধু ব্লগ না, আপনারা পত্রিকায় প্রেস রিলিজ প্রকাশ করুন, আপনাদের যত বন্ধু-বান্ধব আছে তাদের মাধ্যমে সোস্যাল মিডিয়ায় পেছনের ঘটনা তুলে ধরুন।

ভাল থাকুন সবাই ।

অতিথি লেখক এর ছবি

অভিজ্ঞতা বলে বেশির ভাগ মিডিয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে।

একাকী মানব

ওডিন এর ছবি

মানবাধিকার মানুষের জন্য, অমানুষের জন্য না।

শাফায়েত এর ছবি

বাবা মারা গেছে, আর উনি ফেসবুকে #হসপিটাল ট্যাগ দিয়ে ডাক্তার পিটানোর গর্ব করতেসে!!

মেঘলা মানুষ এর ছবি

বন্ধুর বাবা, খেয়াল করে দেখুন

অতিথি লেখক এর ছবি

এখন কোথায় আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র?
মজা লস" পেইজে মেয়েকে থাপ্পড় মারতে দেখে যদি ওই ছেলেকে ধরতে পারে,তাহলে একজন নারী চিকিৎসককে মেরে হেডাম দেখানোর জন্য এই বীর পুরুষকে গ্রেফতার করতে পারছেন না? নাকি এই চিকিৎসক হওয়াটা তার দোষ? আর নারী অধিকার নিয়ে গলা ফাটানো সংগঠনগুলি কোথায়?

একাকী মানব

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

বাংলাদেশে কনসেন্ট বা অনুমতি গ্রহণের প্রাকটিসটা চালু করা দরকার। যে কোনো কারণেই হোক আমরা সবাই কনসেন্ট ছাড়াই আমাদের সিদ্ধান্ত আরেজকনের উপর চাপিয়ে দেই। প্রতিটা ক্ষেত্রে ডাক্তার যদি পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করতো এবং পদক্ষেপের পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি দিয়ে রোগীর আত্মীয়দের উপর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার ছেড়ে দিতো তাহলে অনেক বিপদ এড়ানো যেতো। তাছাড়া এই অনুমতিটি একটি লিখিত আকারে উপস্থাপন করে তাতে সই করলে আরো পাকাপোক্ত হতো।

এই রকম হেনস্থা থেকে ডাক্তারদের আরো প্রতিরক্ষা দেয়া হোক এই মর্মে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আর্জি জানাচ্ছি।

এক লহমা এর ছবি

সহমত।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

তারেক অণু এর ছবি
দেব প্রসাদ দেবু এর ছবি

ভালো প্রস্তাব। কিন্তু জরুরী এবং তৎক্ষণাৎ পরিস্থিতিতে এটি মেনে চলা দুরহ হবে মনে হয়। সবচে' ভালো হতো যদি সচেতনতার লেভেলটা যেতো, কিন্তু আমরা এতো বেশি অনিয়ন্ত্রিত যে সেটাও বেশ কঠিন।

ওডিন এর ছবি

নুমতিটি একটি লিখিত আকারে উপস্থাপন করে তাতে সই করলে আরো পাকাপোক্ত হতো

এই লিখিত নেয়া সবসময়েই করা হয় । পেশেন্টের অনুমতি ছাড়া কোন কিছুই করা হয় না। নায়ক মান্নার কথা খেয়াল আছে? সেই বেচারা মারা গিয়ে তো সব দোষ ডাক্তারদের কাঁধেই পড়লো। এইটা কেউ বলবে না যে ওকে অপারেশন এর অনুমতি ওর পরিবার থেকেই দিতে গড়িমসি করা হচ্ছিলো।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

বাংলাদেশে 'পেশেন্ট এডুকেশন' ব্যাপারটার চর্চা কম। ধরুন, হার্টের কোন সমস্যা নিয়ে কেউ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যখন যান, তখন চিকিৎসক টেস্ট আর ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করতে পারেন। অথবা, এর সাথে রোগী আর রোগীর সাথে আসা স্বজনদের কিছু কথা বুঝিয়ে বলতে পারেন যে কোন রোগীর সমস্যা কোন স্টেজে আছে, কি কি ঝুঁকি আছে, কি লক্ষণ দেখা দিলে কি করতে হবে ইত‌্যাদি। দুর্ভাগ্যবশত, সেই সময়টা তাঁদের হয় না (বা আমরা দেই না) -একেকজন ডাক্তারের এত রোগী সমলাতে হয় যে তাঁরা সময় পান না ভালোমত উপদেশ, নিষেধ, সাবধানবাণী দেবার। এসব বিষয়ে আমজনতাকে সচেতন করা হলে, মানুষ বুঝতে শিখবে ডাক্তার তাঁর সাধ্যমত করেছিলেন। (আমি মারামারি সমর্থন করছি না, বরং এরকম পরিস্থিতির যাতে উদ্ভব না হয় সেজন্যে বলছি। আমার অবস্থান আগের মন্তব্যে বলেছি, পুনরাবৃত্তি করছি না।)

অতিথি লেখক এর ছবি

কাউন্সিলিং এর বিষয়টা এখানে দুর্বল। তবে বাংলাদেশে সবাই পণ্ডিত।

একাকী মানব

নির্ঝর অলয় এর ছবি

একটা দুঃখের কথা বলে যাই- রক্ষক নিজেই যেখানে ভক্ষক -অর্থাৎ প্রহারকারী তখন এই ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা কোন বিচার পাবে বলে মনে হয় না। প্রথমত, আক্রমণকারীর বিরুদ্ধে মামলা করাই তো মুশকিল!

কী আর বলব ভাই। অন্ধকার, শুধুই অন্ধকার!

অতিথি লেখক এর ছবি

ওঁয়া ওঁয়া ওঁয়া ওঁয়া

একাকী মানব

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি চিকিৎকস নই , চিকিৎসা বিদ্যা সম্পর্কে তেমন কছু জানি ও না ৷ তবে আমি যা বুঝি এক জন রোগী মারা গেলে তার আত্মীয় স্বজন যে কষ্ট পান তা ভষায় প্রকাশ করা সম্ভব না ৷ কিন্তু তাই বলে ডাক্তারের লাঞ্ছিত করা কোনো যুক্তি সঙ্গত কাজ হতে পারে না ৷ এমনকি ডাক্তার যদি সরা সরি দোষী ও হয় তবুও না ৷

আমাদের দেশ এ আইন এর প্রয়োগ, আইন প্রয়োগ করার জন্য যে মানুষিকতা তা এখনো গড়ে উঠে নি ৷ যত দিন পর্যন্ত আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হব এমন চলতেই থাকবে ৷

আমি জানি না যে সব লোক এভাবে ডাক্তারদের উপড় চড়াও হল আদো তাদের কোনো শাস্তি হবে কিনা ৷ আর যতদিন এমন গা হেলানো ভাব নিয়ে আমরা চলব এমন কর্মকান্ড চলতে থাকবে ৷

মাহবুব আশরাফী

ওডিন এর ছবি

এইখানে 'লাঞ্ছিত করা' বলতে কি আপনি এক ভদ্রমহিলাকে পিটিয়ে আধমরা করে টয়লেটের কমোডের সাথে মাথা ঠুকে তাকে পুরোপুরি মরার দিকে ডিরেক্ট করার কথা বলছেন? হাসি

ওডিন এর ছবি

এক বন্ধু সরকারি চাকরি করে মফস্বলে। ওকে ওর হেলথ সেন্টার এর সিনিয়র ওয়ার্ডবয় নার্সরা বলেছে, কোন ক্রিটিকাল পেশেন্ট রা আসলে কোনরকমের স্যালাইন, ইনজেকশন না দিয়ে ঢাকায় রেফার করে দিতে। কারন ইনজেকশন দেয়ার পরে রোগীর কিছু হলে তো সেই ডাক্তার এর দোষ, "ইনজেকশন" দিয়ে ডাক্তার "রোগি মেরে ফেলেছে"।

এখন ব্যপারটা কি হবে জানেন? লোকজন এখন ইমারজেন্সি ট্রিটমেন্ট পাবে না। ডাক্তাররা মরণাপন্ন রোগীদের চিকিৎসা করতে ভয় পাবে। শুধু রেফার করে দেবে। দেশটা আস্তে আস্তে আমেরিকা ইন্ডিয়ার মতো হয়ে যাবে। সেইটা অবশ্য একদিক থেকে ভালই হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

সহমত। নিজের জীবনের ভয়ে ডাক্তার রা এখন রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসাও দিতে চায়না।
মাসুদ সজীব

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই মনের কথাটা বলছেন। তাহলে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাই তো ধ্বসে যাবে।

একাকী মানব

অতিথি লেখক এর ছবি

ডাক্তার মাহমুদুর রহমান জুয়েল সুন্দর কিছু কথা বলেছেন

৬০,০০০+ মানুষ যে প্রফেশনে কাজ করেন তাদের সবাই সৎ হবেন না। কিন্তু কিছু খারাপ চিকিৎসকের জন্য ঢালাও ভাবে সবাইকে " বাইন্ধা " পেটানোর মানসিকতা দেখে কিছুটা বিপন্ন বোধ করছি।
ধরলাম, ৩০০০ চিকিৎসক অসৎ, রোগীর প্রতি একদমই সহমর্মিতা নেই কিন্তু 'চিকিৎসায় ভুল" প্রমানের আগেই চিকিৎসককে রড দিয়ে পেটানো, নারী চিকিৎসককে কমোডের সাথে বাড়ি দিয়ে মাথা থেতলে ফেলাতে আপনাদের চাপা উল্লাস, " ডাক্তাররা স্ট্রাইক করবে কেনো, রোগীর দুর্ভোগ কেনো?" টাইপ মানসিকতা, সত্য খবরকে রঙ মাখিয়ে বিকৃত ভাবে উপস্থাপন করে বাকি ৫৭,০০০ সৎ, রোগীর প্রতি সমব্যথি, সহমর্মী কে আপনারা যেভাবে আতংকিত করছেন, তাতে রোগী চিকিৎসক সম্পর্ক তলানী ছাড়া আর কোথায় পৌছাবে আমার তা জানা নাই।
দেশের আমজনতা ও সাংবাদিকরা, আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর খুজে পেতে খুব সমস্যা হচ্ছে, আমাকে কি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে বাধিত করবেন?
প্রশ্ন ১- আপনারা শুধু মেডিক্যাল নেগ্লিজেন্স এর কথা উল্লেখ করেন। আচ্ছা ভাই, গতবছর হাসপাতালগুলোয় প্রায় ১৩ কোটিবার সেবা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে সাধারন মানুষ, এটা আপনারা ফলাও করে উল্লেখ করেন না কেন?
প্রশ্ন ২- এই দেশে হাজার হাজার হাতুড়ে ডাক্তার, কবিরাজ নামের আগে ডাক্তার লাগিয়ে অবাধে প্র্যাকটিস করে, আপনারা এই ব্যপারে অস্বাভাবিক রকম নিশ্চুপ থাকেন কেন?
প্রশ্ন ৩- পটুয়াখালীতে ফ্রী মেডিক্যাল ক্যাম্প করতে গিয়ে প্রান হারিয়েছিলেন ডা. মুরাদ। চোখ উপড়ে লাশ পুকুরে ফেলে দিয়েছিলো। আপনি হয়ত বলবেন নারী ঘটিত সমস্যা, কিন্তু না ভাই, বেচারার অপরাধ ছিলো ফ্রী মেডিকেল ক্যাম্প স্থানীয় হাতুড়েদের ব্যবসা নস্ট করছিল। তো উপায় কি? একটা ডাক্তার মেরে ফেলা।মেরে ফেলে কারো কোন সমস্যা হয় নাই, কারন এই দেশে "ডাক্তার বাইন্ধা পিটানোর" সমর্থনকারী তো কম না... তাই না?
প্রশ্ন ৪- সেন্ট মারটিনে ৬ জন ছাত্র মারা গেল, ২০১০ এ একই স্থানে ৮ জন মারা গেল। আপনারা কিছু বললেন না কেন ভাই? ৩ জন মুমূর্ষু ছাত্র বেচে আছে, তাদের চিকিৎসা কিন্তু " বাইন্ধা পিটানো দরকার" টাইপ কষাই গুলোই করেছে, নাকি ভুল বললাম ভাই?
প্রশ্ন ৫ - দুই দিন আগে রেল দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত এবং ৫০ জন আহত। আচ্ছা একটু বলেন তো কোন চিকিৎসকের ভুলে এই ঘটনা ঘটলো?
প্রশ্ন ৬- আপনার পরিবারের সকল সদস্য কে নিয়ে এযাবত মোট কয়বার চিকিৎসকের শরনাপন্ন হয়েছেন? কয়জন সুস্থ হয়েছেন, কয়জন ভুল চিকিৎসায় মারা গেছেন, সত্যি করে বলবেন?
প্রশ্ন ৭- হেফাজতি, শিবিরের প্রহারে রাজনীতির মারপ্যাচে কিছুদিন আগেও যখন অজস্র পুলিশ আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, তাদের কয়জন এখন সুস্থ? কার কার চিকিৎসায় অবহেলা হয়েছে? কয়জন ভুল চিকিৎসায় মারা গেছে?
একটু হিসাব দিবেন, প্লীজ?
প্রশ্ন ৮ - একজন চিকিৎসক কেন একজন রোগীকে মারবেন? এতে তার কি লাভ?
আমাকে একটু উত্তর দিবেন?
প্রশ্ন ৯ - ভাই আপনারা মানবতার ধারক, বাহক, রক্ষক। পাকিস্তানের মালালা তালেবানের গুলি কেনো খেলো তা নিয়ে আপনাদের মাতম আর বুক চাপড়ে আহাজারি দেখে দেখে আমরা অভ্যস্ত।
আচ্ছা ভাই, আপনার দেশের এক মহিলা চিকিৎসক কর্মস্থলে খুন হল, এক চিকিৎসককে মেরে পুকুরে ফেলে দিলো, তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে মালালার বয়েসি শত শত ছাত্র ছাত্রী কে পুলিশ মারধর করলো, আপনাদের কলম তখন চুপ। মালালার জন্য যে কলম দিয়ে আগুন ঝরাতেন, তা দিয়ে তখন শুধু বের হয় " আবার ধর্মঘট, রোগীর দুর্ভোগ" ।
আচ্ছা ভাই, আপনাদের মানবতা তখন কোথায় থাকে?

একাকী মানব

গান্ধর্বী এর ছবি

রজত তোমার লেখার হাত ভালো, তাই বলছি- রেফারেন্স ছাড়া ৬০০০০-৫৭,০০০-৩০০০ ইত্যাদি উপাত্ত না দেয়াই ভালো। স্রেফ 'অধিকাংশ' দিয়ে লিখতে পারো। হাসি

------------------------------------------

'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)

অতিথি লেখক এর ছবি

এটা আমার কথা না। আরেকজনের লেখা শেয়ার করেছি।

একাকী মানব

অতিথি লেখক এর ছবি

উপরের উল্লেখিত আপনার শেয়ার করা সুবিশাল ফিরিস্তি যথেষ্ট অযৌক্তিক। এমন সস্তা একটা লেখা শেয়ার করে মূল পোষ্টটাকেই আপনি অনেকটা ছোট করে ফেলেছেন। যে মনগড়া তথ্য দেওয়া হয়েছে তার কোন রেফারেন্স নেই। আর যে প্রশ্নগুলো করা হয়েছে সেগুলো অতি আবেগী আর ছেলেমানুষি টাইপো হয়েছে।

প্রথম প্রশ্নে বলা হলো তের কোটি মানুষ চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে, সেটা প্রচার করা হয়নি। এটা কি প্রচার করার মতো বিষয়? যদি উল্টো প্রশ্ন করি হাসপাতালগুলোতে কত কোটি রোগী হয়রানি করা হয়েছে তার খবর কি পত্রিকায় এসেছে? হাসপাতাল বলতে কি আপনি সরকারী বুঝালেন না বেসরকারী বুঝালেন? বেসরকারীতেই অবহেলা যখন হয় তখন সরকারীতে কি হয় আশা করি সেটা অস্বীকার করবেন না।

চতুর্থ প্রশ্নে সেন্টমার্টিনে সেবা কর রোগী ভালো করা কথা বলা হলো, অথচ খবরগুলোতে বলল সেন্টমার্টিন হাসপাতালে ওইদিন সরকারী ডাক্তার ছিলো না (এটা সত্যি কিনা ঠিক জানি না)। তবে এটা ঠিক অধিকাংশ ডাক্তার ঠিক মতো উপস্থিত থাকে না বাংলাদেশের গ্রাম আর মফস্বলের সরকারী হাসপাতালগুলো তে? এর সবগুলো কি পত্রিকায় আসে?

ছয় নাম্বার প্রশ্নে বলা হলো আমার পরিবারে কয়জন চিকিৎসা নিয়ে ভুলে মারা গেছে? আমার পরিবারে দুজন মারা গেছে (এবং আমার টা হয়তো দৃষ্টা্ন্ত হবে না, এবং এটা দিয়ে বিচার করে আমি সব ডাক্তারকে খারাপের খাতায় ফেলে দেই না) হাসপাতালে এবং সেখানে অবশ্যই ডাক্তারের অবহেলা আছে। সহরার্দি হাসপাতালে আমার বাবাকে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তার এসেছে তার ঘন্টা দুয়েক পর, অথচ সকালবেলা বাবার বুকে ব্যাথা শুরু হয়, এসে নরমাল বেড়ে ফেলে রেখে গেছে। তারপর বড় ডিউটি ডাক্তার এসে দেখে তাড়াতাড়ি ইমার্জেন্সিতে নিয়ে গেছে এবং তার আধা ঘন্টার মাঝে বাবা মারা গেছে। মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত কি সরকারী হাসপাতালে যায়? যেতে পারে, সেবার কোন মান কি সেখানে থাকে?

প্রশ্ন ধরে আর উত্তর দিতে মন চাইছে না, হেফাজত-মালালা কত কিছু নিয়ে আসলেন, এগুলোর কোন দরকার ছিলো না। একটা গুরুত্বপূর্ণ পোষ্টে এমন অপরিণত মন্তব্য দেখা হতাশ জনক।

মাসুদ সজীব

অতিথি লেখক এর ছবি

তবে এটা ঠিক অধিকাংশ ডাক্তার ঠিক মতো উপস্থিত থাকে না বাংলাদেশের গ্রাম আর মফস্বলের সরকারী হাসপাতালগুলো তে? এর সবগুলো কি পত্রিকায় আসে?

এ কথা মানতে রাজি হলাম না। গ্রামে ডাক্তারদের পোস্টিং থাকে না। পোস্টিং হয় ইউনিয়ন পর্যন্ত। যাদের খুঁটির জোর বেশি তারা ছাড়া বেশির ভাগই উপস্থিত থাকে। আমরাও চাই অসৎ ফাঁকিবাজদের শাস্তি হোক।
২ বছর উপজিলায় থাকা লাগে। কিন্তু এমন অনেকে আছে বছরের পর বছর সেখানে কাঁটিয়ে দেয়। ক্ষমতা নাই, ঘুষ দেওয়ার শক্তি নাই পোস্ট গ্রাজুয়েশন বিসর্জন দিয়ে থাকতে হয়।
তবে পদ শূন্য আছে অনেক।

আপনার বাবার সাথে যা ঘটেছে তা দুঃখজনক। কেস কি ছিল হার্ট অ্যাটাক এর?

উপরের পোস্টটি ক্ষোভের প্রকাশ।

একাকী মানব

অতিথি লেখক এর ছবি

তো সেই খুঁটির জোরওয়ালাদের খবর কি পত্রিকায় আসে? পদ শূণ্য থাকে কেন? ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে অযুক্তিক কিছু বলা উচিত নয়। তথ্য প্রমাণ ছাড়া তুলনায় বা সংখ্যাতত্ত্বে না যাওয়াই উচিত।

হার্ট অ্যাটাক ছিলো, অনেক বছর আগের কথা।

মাসুদ সজীব

অতিথি লেখক এর ছবি

না সেই খুঁটির জোরওয়ালাদের কথা আসে না পত্রিকাতে। আসে না সেই দুর্নীতিবাজদের কথা যারা পোস্টিং বাণিজ্য নিয়ে কোটি কোটি টাকা কামায়।
আসে না তাদের কথা যারা অযৌক্তিকভাবে গণহারে পোস্ট গ্রাজুয়েশনে ফেইল করিয়ে কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করে।

পদ শূন্য থাকার কারণ সেখানে চিকিৎসককে পদায়ন দেওয়া হয় নাই। এবং ওই পদের তুলনায় চিকিৎসক কম।

উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সের অরগানোগ্রাম অনুসারে সেখানে একজন করে মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি এবং অবেদন বিশেষজ্ঞকে পদায়ন দেওয়ার কথা।
কিন্তু বাংলাদেশে এই পরিমাণ বিশেষজ্ঞ নেই যাতে করে টারসিয়ারি এবং সেকেন্ডারি লেভেল শেষ করে সমস্ত উপজিলায় সেই বিশেষজ্ঞকে পোস্টিং দেওয়া যায়। এই জন্যই তো বললাম মিডিয়াতে আসে না তাদের কথা যারা অযৌক্তিকভাবে গণহারে পোস্ট গ্রাজুয়েশনে ফেইল করিয়ে কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করে।

স্বাস্থ্যসেবার দুর্নীতির অনেক কথা আছে যা মানুষ জানে না। আপনি জানেন বেসরকারী মেডিকেল স্থাপনে কি পরিমাণ দুর্নীতি করা হয়? আজকাল শিক্ষা হয়ে যাচ্ছে বাণিজ্যিক পণ্য। অনেকে বলে সরকারী চাকরি করব না বেতন কম। বেসরকারি পর্যায়ে বেশির ভাগ একজন এমবিবিএস ডাক্তার দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজ করলে তার বেতন ১৫০০০ এর বেশী না। মানে তার দৈনিক আয় ৫০০ টাকা। তারপর বেশির ভাগ হাসপাতাল মুনাফা লাভের জন্য কম ডাক্তার দিয়ে অনেক বেশি খাটিয়ে নিচ্ছে।

বাংলাদেশে যে কেউ নামের পাশে ডা. লিখে দেয়। বি এস সি পাশ করা ফিজিওথেরাপিস্টরা তাদের নামের পাশে ডা. লেখে। মেডিকেল টেকনোলজিস্টরাও লেখে, হেকিমও লেখে, গ্রামের কোয়াকরাও লেখে, পাড়ার ঔষধের দোকানের মালিকও লেখে। এদের কাছে রোগ জটিল করে শেষ সময়ে আসে অনেক রোগী। এই দিকেও নজর দেওয়া উচিত।

একাকী মানব

সুবোধ অবোধ এর ছবি

[qoute] বাংলাদেশে যে কেউ নামের পাশে ডা. লিখে দেয়। বি এস
সি পাশ করা ফিজিওথেরাপিস্টরা তাদের নামের পাশে ডা.
লেখে।

বি এস সি ফিজিওথেরাপিস্ট দের নামের আগে কি লেখা উচিৎ?
বি এস সি ফিজিওথেরাপী কোর্সটি কোন অনুষদের অধীনে?

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রথম আলোতে গত বছর এসেছিল সারা দেশে ৪৮১টি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকের পদ আছে নয় হাজার ১৫০টি। ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারির হিসাবে দুই হাজার ২৯৪টি পদে চিকিৎসক নেই। অর্থাৎ এখানে চিকিৎসক পদায়ন করা হয় নাই। তার মানে উপজেলা পর্যায়ে ২৫ শতাংশ পদ শূন্য।

মনপুরা নামক দ্বীপেও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র আছে। সেখানেও চিকিৎসক আছেন। সেখানকার থাকার একটি অভিজ্ঞতা বলেছিলেন ডিএমসিয়ান এক বড় ভাই। বিসিএস নামক সোনার হরিণ পেয়ে তিনি যান সেখানে। সেখানে চিকিৎসকদের থাকার কোন জায়গা নাই। তিনি রাতে ঘুমান সেখানে স্বাস্থ্য সরকারীরা ঘুমায় সেখানে। গোসল করার জন্য বাথরুম নাই। গোসল করেন খোলা ছাদের উপর। একজন প্রথম শ্রেণীর সরকারী কর্মকর্তা এই সুবিধা পান তাঁর প্রজাতন্ত্রের কাছ থেকে। তাহলে কিভাবে তার কাছে আপনি আশা করেন এই প্রজাতন্ত্রকে তিনি ঠিকভাবে সার্ভিস দিয়ে যাবেন? এই সব দুর্গম জায়গাতে সুবিধা বাড়ানো উচিত। হ্যাঁ সরকার আমাকে যেখানে পদায়ন দিবে সেখানে আমার যেতে হবে। কিন্তু একজন প্রথম শ্রেণীর সরকারী কর্মকর্তাকে তার যোগ্য সম্মান দিতে হবে।

আর কিছু কথা বলা হয় নাই ইনজুরি সার্টিফিকেট হচ্ছে কিছু চিকিৎসকের কাছে বাণিজ্যের নাম। এই চক্র নিয়ন্ত্রণ করে কিছু ব্রাদার এবং স্টাফ। আর বেশিরভাগ চিকিৎসক এর কাছে আতংকের নাম। দুই দল মারামারি করে এসেছে। ইনজুরি সার্টিফিকেট চায় মামলা করার জন্য। আবার তারা টাকা দিতে চায় যাতে বাড়িয়ে লেখা হয় সনদে। এই জিনিস আইনে ঝামেলায় ফেলতে পারে চিকিৎসককে। তাই বেশির ভাগ চিকিৎসক তা দিতে চায় না। এর জন্য স্থানীয় নেতাদের হাতে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত হতে হয় চিকিৎসককে। আমার পরিচিত ডিএমসিয়ান বড় ভাই ( ভর্তি পরীক্ষায় তিনি ছিলেন জাতীয় মেধায় তৃতীয়) এই কারণেই বিসিএস হেলথ ছেড়ে প্রশাসনে চলে এসেছেন। জাতীর একটা বড় অপচয় হল না?

গ্রামে কাজ করার জন্য ডাক্তারদের প্রয়োজন আবাসন, নিরাপত্তা এবং যথাযথ চিকিৎসা উপকরণ। তার সাথে যদি কিছু সময়কে ট্রেনিং এর সাথে ইন্টিগ্রেট করা যায়, তাহলে আরও ভাল। উপরেই তো মন্তব্যে উঠে এসেছে নিজের জীবনের ভয়ে ডাক্তার রা এখন রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসাও দিতে চায়না। চিকিৎসক আর রোগীর সম্পর্ক উন্নয়নে ব্যবস্থা নিতে হবে। দুই পার্টিকেই।

সরকারী হাসপাতালে ট্রলি ঠেলতেও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দিতে হয় টাকা। সাধারণ মানুষ ভাবে হাসপাতালে যে কাজ করেই সেই ডাক্তার। (হাসবেন হয়ত কিন্তু গ্রামের মানুষ হাসপাতালের গাড়িচালককেও ভাবে ডাক্তার) দোষ হয় দাক্তারের। কিন্তু এদের বিশাল সিন্ডিকেট। এদের বিরুদ্ধে কিছু করা যায় না। এমনও রয়েছে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ক্লিনিকে চিকিৎসককে খ্যাপ মারতে হয়।

সব শেষে একটা কথা বলি – বেশির ভাগ ডাক্তারই টাকার জন্য মরে না , কারণ গ্রামে দুইশত টাকা ভিজিটে চেম্বার করলেও ডাক্তারদের দশ তলা এপার্টমেন্ট করতে বেশি সময় লাগবে না। বরং শহরের তুলনায় সেখানে প্র্যাকটিস করার সুবিধা হল সেখানে প্রতিযোগিতা কম। কিন্তু ডাক্তার মরে ডিগ্রির জন্য ; কেন ডিগ্রির জন্য ?
স্বাস্থ বাদে অন্যান্য ক্যাডারে সিনিয়র স্কেল পরীক্ষা , ডিপার্টমেন্টাল পরীক্ষা , ফাউন্ডেশন ট্রেনিং - এসব ক্রাইটেরিয়া পূর্ণ হলেই সিনিয়রিটি ভিত্তিতে প্রমোশন হয় ; কিন্তু শুধু ডাক্তারদের বেলায়ই একটা অলিখিত নিয়ম হচ্ছে উপরের সব ক্রাইটেরিয়া পূর্ণ থাকলেও ডিগ্রি না থাকলে প্রমোশন হবে না , সো কি দাঁড়াল ? কেউ যদি ডিগ্রি নিতে ব্যর্থ হয় তবে একই পোস্টে থেকে কোনরকম প্রমোশন ছাড়াই রিটায়ারমেন্টে চলে যাবে ; তাহলে এই সতেরো হাজার টাকা বেতন নিয়ে যদি জীবন পার করতে হয় তো সরকারি চাকরির দরকার কি ?

মানুষের সেবায় জীবন বিলিয়ে দিতে কেউ এ যুগে ডাক্তারি পড়ে না , আর কেউ যদি চায়ও সে নিজেই বিলীন হয়ে যাবে যুগের কারণে।

অনেক কথা বলে ফেললাম। ভালো থাকবেন।

একাকী মানব

অতিথি লেখক এর ছবি

মানুষের সেবায় জীবন বিলিয়ে দিতে কেউ এ যুগে ডাক্তারি পড়ে না , আর কেউ যদি চায়ও সে নিজেই বিলীন হয়ে যাবে যুগের কারণে।

আপনার এই কথাটি যথেষ্ট অপেশাদার এবং অগ্রহণযোগ্য। অন্যান্য প্রথম শ্রেণীর ক্যাডার রা কি ডাক্তারদের চেয়ে বেশি বেতন পায়? তারা সবাই কি বিলীন হয় যাবে? আর ডাক্তারি পেশার সাথে অন্য পেশার পার্থক্য আছে, সেটা ভুলে গিয়ে যদি বলেন সেবার দরকার নেই, অতি লোভে রোগীর গলায় চুরি বসিয়ে ডাক্তাররা টিকে থাকুক দীর্ঘকাল তাহলে সেই সেবা থেকে দূরে গিয়ে টিকে থাকার নেশায় মেতে থাকলে সাধারণ মানুষ ডাক্তারকে মারবে এতেও কোন বিস্ময় নেই। আর মারলে তখন আর মানবতা, শিষ্টাচার, সচেতনতা কপচিয়ে লাভ নেই। কারণ আপনরা যদি আপনাদের মূল আদর্শ থেকে সরে আসেন তাহলে প্রিয়জন কে হারানো মানুষ আপনাদের কে আক্রমন করতে দুইবার ভাববে না। সব আদর্শ শুধু সাধারণ জনগনকে ধরে রাখতে হবে আর ডাক্তার রা টিকে থাকার লড়াইয়ে টাকা পয়সার পেছনে ছুটবে এমন আশা করা হাস্যকর।

আসলে এটা কোন সমাধান নয়, ডাক্তারদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে। তাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে, রোগীদের সাথে তারা আরো বেশি আন্তরিক হতে হবে। আমরা সব বন্ধ করে দিলাম, পারলে কিছু করো এইসব গায়ের জোর, টিকবে না। তাই সেবাকেই প্রথমে স্থান দিতে হবে।

মাসুদ সজীব

অতিথি লেখক এর ছবি

যা বাস্তব তাই বলেছি। চিকিৎসকের কাছে এটা একটা পেশা। মানবসেবায় বিলিয়ে দেওয়া বলতে বোঝাতে চাচ্ছি অনেকে যা ভাবে, হাসপাতালে কেন ফ্রি সেবা দেওয়া হবে না? অনেককে দেখেছি সরকারী হাসপাতালে এসে অতিরিক্ত ঔষধ ( যা সরকারে সাপ্লাই এ নাই ) কেনার পর এও মন্তব্য করেছে কেন তাদের অতিরিক্ত টাকা দিতে হল?

আর ডাক্তারি পেশার সাথে অন্য পেশার পার্থক্য আছে, সেটা ভুলে গিয়ে যদি বলেন সেবার দরকার নেই, অতি লোভে রোগীর গলায় চুরি বসিয়ে ডাক্তাররা টিকে থাকুক দীর্ঘকাল তাহলে সেই সেবা থেকে দূরে গিয়ে টিকে থাকার নেশায় মেতে থাকলে সাধারণ মানুষ ডাক্তারকে মারবে এতেও কোন বিস্ময় নেই।

অসততাকে সমর্থন করা যায় না। এই কথা আমি কোথাও বলি নাই।

কারণ আপনরা যদি আপনাদের মূল আদর্শ থেকে সরে আসেন তাহলে প্রিয়জন কে হারানো মানুষ আপনাদের কে আক্রমন করতে দুইবার ভাববে না। সব আদর্শ শুধু সাধারণ জনগনকে ধরে রাখতে হবে আর ডাক্তাররা টিকে থাকার লড়াইয়ে টাকা পয়সার পেছনে ছুটবে এমন আশা করা হাস্যকর।

এমন আশাও করি না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে আদর্শের সাথে লড়াই করে রোগীর জান বাঁচাবার চেষ্টায় ব্যর্থ হলেই চিকিৎসকর মার খাচ্ছেন। দৈনিক ইত্তেফাকের রিপোর্ট অনুসারে গত এক বছরে চিকিত্সকদের উপর কয়েকশ হামলার ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ৫০টি ঘটনা গুরুতর। আহত হয়েছেন শতাধিক চিকিত্সক ও নার্স। এ সময় অনেক মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়েছে।

দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই রোগীর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে চিকিত্সক-নার্সের উপর হামলা কোনভাবেই কাম্য নয়। কারণ এখন সারাদেশের চিকিত্সকরা একটা আতঙ্ক নিয়ে রোগী দেখেন। এরকম আতঙ্ক নিয়ে কখনই ভাল চিকিত্সা দেয়া সম্ভব নয়। চিকিত্সকরা হামলার শিকার হলে তারা চিকিত্সা সেবা দেয়ার উত্সাহ হারিয়ে ফেলবেন। পরিণামে রোগীরাই চরম দুর্ভোগের শিকার হবেন। একের পর এক হামলার ঘটনায় চিকিত্সকদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। মুমূর্ষু রোগী হাসপাতালে আসলে ডাক্তার চিকিত্সা দিতে ভয় পাচ্ছেন। একই কথা তো এইভাবেও বলা যায় সব আদর্শ চিকিৎসক ধরে রাখবে আর আম জনতা যা খুশি তাই করবে তা ভাবা উচিত না। আমাদের সবাই কেই সংযত হতে হবে।

শেবা গ্রহীতা এবং সেবা দাতা উভয়কেই নিজের কর্তব্য এবং অধিকারের কথা চিন্তা করতে হবে।

একাকী মানব

অতিথি লেখক এর ছবি

মিডিয়াতে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে বেশির ভাগ সময় মিথ্যাচার করা হয়। এতে করে সাধারণ মানুষের বিরূপ ধারনা সৃষ্টি হয়।

একটা উদাহরণ দেই কিছুদিন আগে দেশের একটি জেলা হাসপাতালে এক দিনে ভুল ইঞ্জেকশানে ৭ শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে বিভিন্ন মিডিয়াতে বেশ ফলাও ভাবে প্রচার করতে থাকে। খবর দেখে বা শুনে সাধারন মানুষ মনে করতেই পারে জেলা হাসপাতালে এক দিনে এতো শিশুর মৃত্যু!! নিশ্চয়ই কোথাও গাফিলতি হয়েছে। তার উপর দেশের সকল মিডিয়া যখন বিভিন্ন ইমোশান আর বিশেষণ লাগিয়ে বাচ্চাগুলোর মৃত্যুর বর্ণনা দিলো তাতে ডাক্তারদের উপর মানুষজনের ক্ষেপে উঠাকে অহেতুক বলে উড়িয়ে দেয়াও যাবে না। ইঞ্জেকশন দেয়ার পর কাপতে কাপতে , নাক মুখ দিয়ে বমি করতে করতে এবং ইঞ্জেকশানের পর হঠাৎ নিঃশ্বাস বন্ধ করে বাচ্চাগুলো মারা যায়। এই ধরনের নাটকীয় বর্ণনা শুনে আমাদের স্টার জলসা আর স্টার প্লাস প্রিয় নটাঙ্কি জনগন আরো ইমোশনাল এবং ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেন। ফলাফল হাসপাতাল ভাংচুর , টি ভি তে সুশীল সমাজের ভুল চিকিৎসা বিষয়ক টক শো আর তদন্ত কমিটি গঠন। ঘটনা ঘটার ৩ দিন পর ওই হাসপাতালের শিশু বিভাগের কনসালটেন্ট মৃত বাচ্চাগুলোর হাসপাতালে আসার কারন , তাদের বয়স কি চিকিৎসা দেয়া হয়েছে তা সবিস্তারে তুলে ধরলেন। সদ্যজাত শিশুগুলো ৫ জনই ছিলো প্রি ম্যাচিউর যারা মায়ের গর্ভে থাকার ৩০ সপ্তাহের আগেই জন্ম নিয়েছিলো। আর বাকি ২ জন ৩২ সপ্তাহের আগে ভূমিষ্ঠ হয়। এদের সকলেরই বয়স ২-৫ দিন। প্রি ম্যাচিউর বেবি হওয়ায় শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুনাঙ্গরুপে সক্রিয় না থাকায় এরা সবাই “ নিউমোনিয়া “ জনিত শ্বাসকষ্ট এবং “ সেপ্টিসেমিয়াতে” ভুগছিলো। আর তাদের যে ইঞ্জেকশান দিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছিলো সেই একই ওষুধ ওয়ার্ডের নিউমনিয়া আক্রান্ত অন্য বাচ্চারা পেলেও তারা সুস্থ ছিলো। ইঞ্জেকশানে ঝামেলা থাকলেতো তাদেরো বাঁচার কথা না । কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্য বিশেষ- অজ্ঞ সাংবাদিকেরা ভুল চিকিৎসা নামক মায়ায় এতই বিমোহিত ছিলো যে বাস্তবিক জগত তাদের অতোটা তাড়িতো করতে পারে নাই।

আপনারা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্বর অনারারি প্রথার নাম শুনেছেন?
না জানলে বলি,

কোন একজন মানুষ প্রতি সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা কিংবা তার থেকেও বেশি সময় শ্রম দিয়ে যাবে কিন্তু বিনিময়ে তাকে কোন সম্মানী দেয়া হবে না- এই পুঁজিবাদী বিশ্বে এমনটাও যে ঘটতে পারে তা হয়ত অনেকেই বিশ্বাস করতে চাইবে না। কিন্তু এই অবিশ্বাস্য ঘটনাটিই আমাদের দেশে ঘটে যাচ্ছে বছরের পর বছর ধরে এবং আশ্চর্যের বিষয় হল যাদের সাথে ঘটছে তারাও মুখ বুজে ব্যাপারটা সহ্য করে যাচ্ছেন দিনের পর দিন। চিকিৎসা পেশার সাথে জড়িত মানুষেরা হয়ত এতক্ষণে বুঝে গেছেন আমি কী বলতে চাইছি। হ্যাঁ, আমি আমাদের দেশের ‘অনারারি’ প্রথার কথাই বলছি। যদিও নামে অনারারি কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে কোন ‘অনারিয়াম’ এর দেখা তারা কোন দিনই পাননা। আমাদের দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার সমস্ত হতাশাজনক বিষয়গুলোর যদি একটা তালিকা করা হয় তাহলে বোধহয় এই ‘অনারারি প্রথা’ সেই তালিকার প্রথমদিকেই থাকবে। ফেসবুকে, ব্লগে চিকিৎসকদের হতাশা-বঞ্চনার ব্যাপারগুলো নিয়ে এখন অনেকেই সোচ্চার কিন্তু অনারারি প্রথা’র মত একটা অবাস্তব এবং মধ্যযুগীয় প্রথা নিয়ে অন্তর্জালেও খুব একটা আলোচনা হয় না। অথচ আমাদের চিকিৎসকরা যে ব্যাপারগুলো নিয়ে সমলোচিত হই সেই ব্যাপারগুলোর অনেকগুলোরই উৎস কিন্তু লুকিয়ে আছে এই অবাস্তব সিস্টেমটির জটিল গোলকধাঁধার ভেতরে।

চিকিৎসক এবং মেডিকেল শিক্ষার্থীরা সবাই এই অনারারি প্রথা সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল। নন-মেডিকেল মানুষদের জন্য এই সিস্টেমটা আসলে কী তা একটু অল্প কথায় ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। এম.বি.বি.এস. পাস করার পর উচ্চতর ডিগ্রি নিতে হলে চিকিৎসকদের ট্রেনিং করতে হয়। উচ্চতর ডিগ্রি মানে এফ.সি.পি.এস., এম.ডি., এম.এস. প্রভৃতি। কোর্সভেদে ট্রেনিং এর মেয়াদ ভিন্ন ভিন্ন হয়। প্রতিটা সরকারি হাসপাতালে কিছু ট্রেনিং পোস্ট আছে। অ্যাসিস্ট্যাণ্ট রেজিস্টার, রেজিস্টার, আই.এম.ও. এগুলো হচ্ছে ট্রেনিং পোস্ট। যে সকল চিকিৎসক সরকারি চাকরি করেন, দুই বছর উপজেলায় বা ইউনিয়নে কিংবা গ্রামে থাকার পর তারা এই পোস্টগুলোতে আসেন এবং উচ্চতর ডিগ্রি’র জন্য ট্রেনিং করেন। যারা সরকারি চাকরি করেন না কিংবা সরকারি চাকরি এখনো পাননি তারা ট্রেনিং করার জন্য হাসপাতালগুলোতে কাজ করেন অনারারি অর্থাৎ অনারারি মেডিকেল অফিসার হিসেবে এবং এদের সংখ্যা নেহাৎ কম না। যেসকল হাসপাতালে ট্রেনিং করা হয় সেই সব হাসপাতালে ইন্টার্নিদের পর এরাই সবচেয়ে বড় ওয়ার্কফোর্স। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, এদের শ্রমটা পুরোটাই অবৈতনিক।সম্পূর্ণ বিনা বেতনে এরা দিনের পর দিন মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এর থেকে বড় তামাশা আর কী হতে পারে?

বিনা বেতনে মানবসেবা করার এই প্রথা পৃথিবীর কোন সভ্য দেশেই নেই। উন্নত দেশগুলোর কথা তো বাদই দিলাম, আমাদের পাশ্ববর্তী দেশগুলো যেমন ভারত কিংবা শ্রীলংকাতেও এইরকম বর্বর প্রথা চালু নেই। বিনা বেতনে এই অমানুষিক কষ্ট করার কথা শুনলে ওরা হাসে। ঐ দেশগুলোতে বিভিন্ন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিং কোর্সগুলোর জন্য ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয়। যারা চান্স পায় তাদেরকে সবাইকে কিছু না কিছু টাকা দেয়া হয় জীবন ধারণের জন্য। আমাদের দেশে শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব সীমিত পরিসরে এই সুযোগটা চালু হয়েছে অল্প কিছুদিন হল। অন্য সব জায়গাতেই অনারারিরা অনাহারী থেকেই মানব সেবা করে যাচ্ছে এখনো।

কিন্তু শুধু মানবসেবা করলেই তো আর পেট ভরে না। তাই পেটের তাগিদেই এই অনারারিদের কাজ করতে হয় বিভিন্ন ক্লিনিকে এবং শুনতে আশ্চর্য লাগলেও সত্যি এই ক্লিনিকগুলোতে ডাক্তারদের যে টাকা দেয়া হয় ঢাকা শহরে একজন রিকশাওয়ালা প্রতি ঘণ্টায় তার থেকে বেশি টাকা উপার্জন করে! এই কথাও আগেই বলেছি। কম চিকিৎসক নিয়ে বেশি খাঁটিয়ে অধিক মুনাফা লাভের উপায়জানে এই ক্লিনিক মালিকরা। এরা অবেদনবিদ ছাড়াই অপারেশন করে অনেক সময়। নার্স আর ওয়ার্ড বয় অপারেশন এসিস্ট করে অনেক সময়। এই কাজ করার কারণ নার্স আর ওয়ার্ড বয়কে কম টাকা দিলেই তারা খুশি। আর এটা বেআইনি। আর জুনিয়র ডাক্তারকে সাথে নিলে তাকা এর থেকে বেশি টাকা দিতে হবে। বিষয়গুলো তুলে ধরতে হবে সবার সামনে।

একাকী মানব

অতিথি লেখক এর ছবি

@ সুবোধ অবোধ

বি.এস.সি ফিজিওথেরাপি হল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ফ্যাকাল্টির অধিভুক্ত কোর্স।
কিন্তু তাই বলে তারা নামের আগে ডাক্তার লিখতে পারেন না। বিএমডিসির আইন অনুসারে এমবিবিএস এবং বিডিএস ডিগ্রীধারী ছাড়া নামের আগে কেউ ডাক্তার ব্যবহার করতে পারবেন না।

সুবোধ অবোধ এর ছবি

একই ফ্যাকাল্টির তিনটি কোর্সের মধ্যে দুইটা কে বি এম ডি সি রেজিস্ট্রেশন দেয়, আরেকটা কে দেয় না কেন??

সুবোধ অবোধ এর ছবি

ভাই, আপনার উত্তরের অপেক্ষায় আছি। একটা বিষয় পরিষ্কার করা দরকার -আমি নিজেও ফিজিওথেরাপিস্টদের নামের আগে ডাঃ লেখার পক্ষপাতি না। তবে আপনাদের এই একটা বিষয় (ফিজিওথেরাপী) সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান না রেখে স্বভাবসুলভ উন্নাসিকতা দেখে প্রশ্ন টা করলাম। আর ম্যালপ্র্যাকটিসের হিসেব করলে ফিজিওথেরাপিস্ট রা যতটা না এম বি বি এস দের রুগী দেখে এম বি বি এস রা তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি ফিজিওথেরাপিস্ট দের রুগী দেখে। গ্রহণযোগ্য যুক্তি তর্কের আহবান জানিয়ে গেলাম। অপেক্ষায় রইলাম ...

অতিথি লেখক এর ছবি

এটা বিএমডিসিই বলতে পারবেন। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ।

একাকী মানব

সুবোধ অবোধ এর ছবি

আপনি বিএমডিসি এর আইনের দোহাই দিলেন, এখন বলছেন "বিএমডিসি বলতে পারবে "! তার মানে কি আপনার কাছে বিএমডিসি এর এই দ্বৈত নীতি অযৌক্তিক মনে হয়?? আর যদি অযৌক্তিক-ই মনে হয় তাহলে আইন দেখানো তো ঠিক হয়নি।
ফিজিওথেরাপী চিকিৎসাব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য এবং অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়েও বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত, অবদমিত ও নিগৃহীত!!! পাশাপাশি সামনে এগিয়ে যাবার কথা থাকলেও আমাদের দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার স্বার্থান্বেষী এবং মাথামোটা মাথারা একে অবদমিত করে রেখেছে। আগে ডেন্টিস্টদেরও একই অবস্থা ছিল। তাদেরকেও তুচ্ছজ্ঞান করা হত। তাদের আজকের এই অবস্থান বহু ত্যাগ তিতিক্ষার ফল। তবুও তাদের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে কারণ তাদের সাথে স্বার্থের টানাটানি টা কম। আর ফিজিওথেরাপী?? সে এক দীর্ঘ, করুণ এবং অকথিত ইতিহাস! ভাল থাকবেন .....

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার জানা উচিত নার্সিং এবং মেডিকেল টেকনোলজি ইন্সটিটিউটগুলোই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত। তার মানে কি নার্স আর মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা চিকিৎসক? তারাও তো চিকিৎসাব্যবস্থার অংশ। ফিজিওথেরাপি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু অবহেলিত এটা আমাদের সিস্টেমের কারণ। তারা হেলথ টীমের পার্ট হতে পারে। কিন্তু তারা চিকিৎসক নয়।

একাকী মানব

সুবোধ অবোধ এর ছবি

নার্স এবং মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রা কি চিকিৎসা অনুষদের অন্তর্ভূক্ত??? বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত আর একই অনুষদের অন্তর্ভূক্ত দুইটা কি এক ব্যাপার??
আমি আগেই বলেছি ফিজিওথেরাপিস্টদের নামের আগে ডা লেখার পক্ষপাতি আমি নিজেও না। কিন্তু আপনি যেভাবে বললেন ফিজিওথেরাপিস্টরা চিকিৎসকই না সেখানে আপনাকে নিঃসন্দেহে যেসব ডাক্তার রা একমাত্র এমবি বি এস কেই চিকিৎসা শাস্ত্রের ইজারাদার ভাবে তাদের দলে ফেলা যায়।
আপনি আদৌ কি ফিজিওথেরাপী সম্পর্কে কিছু জানেন? তাদের কাজ সম্পর্কে কিছু জানেন???
তারা যে ডায়াগনোসিস ও চিকিৎসা করার অধিকার রাখে তা জানেন? নাকি কাগজে কিছু ঔষধের নাম লিখতে পারার অধিকারকেই আপনার কাছে শুধু চিকিৎসা মনে হয়??
পার্থক্য হচ্ছে ঔষধে ভাল হবে না জেনেও অথবা না জেনে অনেক কন্ডিশনে (যেমন মেকানিক্যাল পেইন) কিছু ইজারাদার গোছের ডাক্তার গন্ডা গন্ডা ঔষধ খাওয়ান, আর ফিজিওরা ওইসব কন্ডিশন ঔষধ ছাড়াই ভাল করে দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে কোনটাকে অপচিকিৎসা আর কোনটাকে চিকিৎসা বলবেন?

অতিথি লেখক এর ছবি

একাকী মানব

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

মন খারাপ

____________________________

হিমু এর ছবি

বাংলাদেশে চিকিৎসকদের একটা সংগঠন আছে, বিএমএ। এছাড়াও আম্লীগী ডাক্তারদের সংগঠন স্বাচিপ আর বিম্পিজামাতি ডাক্তারদের সংগঠন ড্যাব আছে। এই ঘটনায় এদের কারো কোনো প্রতিক্রিয়া চোখে পড়েনি। আমি কি মিস করে গেলাম, নাকি তারাই প্রতিক্রিয়া না দিয়ে চুপচাপ আছেন?

দীনহিন এর ছবি

আমি কি মিস করে গেলাম, নাকি তারাই প্রতিক্রিয়া না দিয়ে চুপচাপ আছেন?

চলুক

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

অতিথি লেখক এর ছবি

পোস্টিং বাণিজ্য ছাড়া আর কি করে তারা?

একাকী মানব

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

বিএমএ এর কিছু লোকজনকে দেখলাম আজ বারডেমের সামনে। আইন চাই, নিরাপদ কর্মস্থল চাই, এই জাতীয় কয়েকটা বিবৃতি শুনলাম

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

পুরো সিস্টেম ভেঙ্গে পড়বে একসময় ডাক্তার- রোগীর ভেতরে এত অবিশ্বাস চলতে থাকলে

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

অতিথি লেখক এর ছবি

সহমত।

একাকী মানব

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ডাক্তারদেরকে মানুষ কেন ঘৃণা করে, তার কারণ অনুসন্ধানের জন্য বেশিদূর যাওয়ার দরকার নেই। এই পোস্টের নিচে ফেসবুক কমেন্ট থেকেই বুঝা যায়। জনাব Dhaka Medical College Life বলেছেন,

একজন স্কুল শিক্ষিকা হয়ে ডাক্তারদের সাথে মেডিকেল সাইন্স নিয়ে তর্ক না করাই ভালো।

এটা একটা প্রচন্ডরকম অপেশাদার আচরণ। একজন ভালো ডাক্তার রোগ নিয়ে রোগীর সাথে রোগীর বোধগম্য ভাষায় কথা বলতে সক্ষম। আর যারা রোগ নিয়ে প্রশ্ন করলে, "আমনে কি বুজেন? আমনে কি ডাক্তর?" বলে হাইকোর্ট দেখায়, এরা অপেশাদার ডাক্তার। এদের হয় পর্যাপ্ত জ্ঞান নেই, না হয় রোগীকে ভালোভাবে দেখে নাই, সুতরাং প্রকৃতপক্ষে রোগটা কি, সে সম্পর্কে ধারণা নাই। স্বভাবতই এরা যেহেতু আসল কাজে ঠনঠন, সেহেতু এরা আক্রমণাত্মক হয়,

আপনাদের মত পশুদের জন্য পশু হাসপাতাল আছে। মানুষের হাসপাতাল না।

জাতীয় ঝাড়ি মেরেই কাজ সারে। এর ফলে রোগী ও তার আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে এই ডাক্তার সম্পর্কে বিরূপ ধারণা হয়, তারা আগে থেকেই বিরক্ত থাকে, এরপর রোগীর কিছু হলে উত্তম-মধ্যম দেয়া ছাড়া অন্য কোনো পন্থা ভাবতে পারে না। কাজটা বেআইনি। কিন্তু বাংলাদেশের কনটেক্সটে অপশন থাকলে আইনের জন্য বসে থাকা অনেক ধৈর্য্যের ব্যাপার। সিন্ডিকেট বাজি করে যেখানে রোগীদেরকে ঠ্যাকের ওপর রেখে ডাক্তাররা আণ্দোলন করে, সেখানে ডাক্তারের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু সম্পর্কে সঠিক তদন্ত রিপোর্টে আশা করা অনেক অনেক ধৈর্য্যের কাজ।

পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে অচিরেই ডাক্তাররা শুধু মার খেয়েই ঘটনা শেষ হবে না, রোগীর সাথে ডাক্তারকেও পরপারে পাঠানোর মতো ঘটনাও ঘটবে। এ অবস্থার উন্নয়নের জন্য ডাক্তারদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। পাবলিককে ঠ্যাক দিয়ে একটা পর্যায় পর্যন্ত পার পাওয়া যায়; কিন্তু পাবলিকের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলে সেটা কারো জন্যই সুখকর হয় না।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

অতিথি লেখক এর ছবি

অছ্যুৎ বলাই,

এখানে কিছু কথা বলার আছে। পেজটা যে চালায় তাকে আমি চিনি এবং সে রিয়েল লাইফে একজন অমায়িক মানুষ। উপরের ভদ্র মহিলা কি লিখেছে আপনি এক বার পড়েছেন?

কিন্তু বাবা বাচতে পারতেন , মরে গেছে কারো অবহেলার শিকার হয়ে,তারা আবার নির্দিধায় শিকার করছে এই অবহেলার কথা ,কৃতিত্বের স্বরে ,হাসিমুখে ? এও কি সইবার?? রক্ত গুলিয়ে ওঠে,মাথার ভেতর শিরাগুলো যেন একে একে ছিড়তে শুরু করে সেই মৃত অসহায় বাবার হতভাগ্য সন্তানের,তাদের সুখে দুখে পাশে থাকা সঙ্গীদের,বন্ধুদের l অবহেলাকারী দোষীর মুখে নির্বিকার হাসি,প্রশ্ন করলে উত্তর "আমার মুখটাই এমন হাসি হাসি l" এরপরেও আর কত ধৈর্য ? মুদ্রার যেমন এক পিঠ থাকেনা , বড় কোনো issue ই তেমন এক তরফা ঘটে না l কারো অবহেলার শিকার হয়ে বাবা মরে গেছে ,কিন্তু যাদের অবহেলায় মরেছে তারাতো বেচে আছে,অনুতাপ তো দুরে থাক,নিরাপত্তার সোচ্চার দাবি জানাচ্ছে, দোষীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছে l

কি অবহেলা হয়েছে তা তো বলেনই নাই এবং চিকিৎসকদের উপর হামলাকে সমর্থন করেছেন। দুঃখ হল চিকিৎসককে মানুষ অমানুষ সবাইকে চিকিৎসা দিতে হয়। কয়দিন মেজাজ ঠিক রাখা যায় বলুন?

একাকী মানব

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আপনার কাছে রিয়েল লাইফে অমায়িক হতে পারে, খুবই সম্ভব। এখানে অমায়িকত্ব কোনো ইস্যুও না। ইস্যু হলো তার মন্তব্য অপেশাদার। যারা রোগ নিয়ে প্রশ্ন করলে, "আমনে কি বুজেন? আমনে কি ডাক্তর?" বলে হাইকোর্ট দেখায়, এরা অপেশাদার ডাক্তার। ডাক্তারের কাছ থেকে অমায়িকত্ব চাই না, টাকার বিনিময়ে পেশাদার সেবা চাই।

যার মেজাজের ওপর নিয়ন্ত্রণ নাই, তার ডাক্তারি পেশার মতো গুরুত্বপূর্ণ পেশায় আসা উচিত না।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

অতিথি লেখক এর ছবি

জাতীয় ঝাড়ি মেরেই কাজ সারে। এর ফলে রোগী ও তার আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে এই ডাক্তার সম্পর্কে বিরূপ ধারণা হয়, তারা আগে থেকেই বিরক্ত থাকে, এরপর রোগীর কিছু হলে উত্তম-মধ্যম দেয়া ছাড়া অন্য কোনো পন্থা ভাবতে পারে না। কাজটা বেআইনি। কিন্তু বাংলাদেশের কনটেক্সটে অপশন থাকলে আইনের জন্য বসে থাকা অনেক ধৈর্য্যের ব্যাপার। সিন্ডিকেট বাজি করে যেখানে রোগীদেরকে ঠ্যাকের ওপর রেখে ডাক্তাররা আণ্দোলন করে, সেখানে ডাক্তারের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু সম্পর্কে সঠিক তদন্ত রিপোর্টে আশা করা অনেক অনেক ধৈর্য্যের কাজ।

তার মানে রোগী মরলেই মারতে হবে? হাসালেন। তাহলে তো চিকিৎসা ব্যবস্থাই ধ্বসে পড়বে।

পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে অচিরেই ডাক্তাররা শুধু মার খেয়েই ঘটনা শেষ হবে না, রোগীর সাথে ডাক্তারকেও পরপারে পাঠানোর মতো ঘটনাও ঘটবে। এ অবস্থার উন্নয়নের জন্য ডাক্তারদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। পাবলিককে ঠ্যাক দিয়ে একটা পর্যায় পর্যন্ত পার পাওয়া যায়; কিন্তু পাবলিকের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলে সেটা কারো জন্যই সুখকর হয় না।

দুই পক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে। আর চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে মিডিয়ার মিথ্যাচার বন্ধ করতে হবে।

একাকী মানব

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ডাক্তারি বা পুলিশি পেশার ঝুঁকি হলো, পাবলিকের সাথে সরাসরি ইন্টারফেস। আর বাই ডিফল্ট মানুষ ৯টা ভালো ব্যবহারের চেয়ে ১টা খারাপ ব্যবহার বেশি মনে রাখে।

রোগী মরলেই মারতে হবে বলি নাই। রোগী ও তার কেয়ারগিভারের সাথে অপেশাদার আচরণ করা ডাক্তার পিটাতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার একটা কারণ, এটা বলেছি।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

অতিথি লেখক এর ছবি

ডক্টর-পেসেন্ট রিলেশনশিপের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। হাস্যকরভাবে মেডিকেল কলেজে যে কমিউনিটি মেডিসিনে এটা পড়ানো হয় তা কিছু মানসিকভাবে অসুস্থ শিক্ষকের জন্য আতংকের আরেক নাম। এখানে রিসার্চ মেথডলজির মত গুরুত্বপূর্ণ জিনিস পড়ানো হয় কিন্তু তাও মুখস্থ আর ভীতির ফাঁদে পড়ে স্টুডেন্টরা কিছুই বুঝে না। মেডিকেল পড়ুয়া যে কাউকে এই বিষয়টা নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেই জানবেন।

একাকী মানব

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।