তবুও আছি, কাছাকাছি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ১১/০১/২০১৫ - ৬:১১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ভাবছিলাম ফেসবুকের কোন বাংলা এখনো চালু হয়েছে কিনা। যেমন ওভারব্রিজ এর বাংলা করা হয়েছে পদচারী সেতু, আর ফ্লাইওভারের বাংলা হল উড়ালসড়ক! ফেসবুকের জন্য “মুখপুস্তক” নামটা শুরু করা যেতে পারে সেক্ষেত্রে। সারা পৃথিবীই এখন এই মুহুর্তে খুব ভয়াবহ রকমের সোশাল মিডিয়া জ্বরে কাতর! বাংলাদেশে মানুষ এখনো ফেসবুকটাই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছে। টুইটার, হাই ফাইভ বা অন্যান্য সাইটগুলো হয়ত বাংলাদেশের মানুষকে ঠিক ততটা প্রভাবিত করে না। এটা একেবারেই আমজনতাকে চিন্তা করে করা মন্তব্য, কিছু ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। বাংলাদেশ এখনও ইন্টারনেট ব্যবহার করেন এমন মানুষের সংখ্যাই তুলনামূলকভাবে অনেক কম। সোশাল মিডিয়ার জ্বরের এই জীবানু এখনো পর্যন্ত বহুলাংশেই শহুরে জীবনের প্রতিচ্ছবি!

ফেসবুক ব্যাবহার করা শুরু করেছি বছর আটেক আগে থেকে, তখন থেকে এখন পর্যন্ত নিজেকে এর থেকে বের করে আনতে পারি নি পুরোপুরি কখনই। শুরুর দিকে পরীক্ষার সময়গুলোতে খুব অপরাধবোধ হত, কেন এত সময় নষ্ট করছি তা ভেবে! ভাবনা গুলো যখন থেকে গড়তে শুরু হয়েছে তখন থেকেই দেখছি মানুষের সব কিছুতেই কেমন যেন একটা লোকদেখানোর প্রবণতা। আগে ডায়েরী লিখতাম কেউ দেখতে পেত না কি লিখছি! আর এখন কিছু লিখলেই মনে হয় সবাই পড়ুক যা লিখলাম! বিষয়টা লেখা থেকে শুরু করে এখন ব্যক্তিগত জীবনের প্রত্যেকটা জিনিসের জন্যই সত্যি। কয়েকদিন আগে একটা কারণে খুব মন খারাপ ছিল, কাছের এক বন্ধুকে বলেছিলাম কারণটা। সে পরামর্শ দিল, নতুন একটা প্রোফাইল ফটো দেবার! মানুষ ওই ছবিতে ভাল ভাল কথা লিখতে থাকলে এমনিতেই মন ভাল হয়ে যাবে! হাস্যকর হলেও সত্যি যে পরবর্তীতে হয়েছিলও তাই!

কাউকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলছি না, আমাদের মধ্যে এমন মানুষ খুব কমই আছে যাদের কখনও না কখনও অন্যের লেখা বা ছবি দেখে বিরক্তি ধরেনি। কিন্তু দিন শেষে আমরা সবাই কেবল সবাই হয়ে যাই। কারও হয়ত কফি খেতে গিয়ে সবাইকে জানাতে ইচ্ছা করে, তেমনি হয়ত কারও বেডরুমের একান্ত কোন গোপন মুহুর্ত! আমি লিখতে খুব পছন্দ করি, আমার মনেহয় লিখতে লিখতে এক ধরণের মানসিক চাপমুক্তি হয় যেটা আর কিছুর মধ্যে হয় না। কারণ আমি যা বলতে চাই, তা মাঝপথে থামানোর কেউ নাই, কেউ পড়ার আগ পর্যন্ত কোন মন্তব্য করতে পারবে না আমার চিন্তাগুলো নিয়ে! কিন্তু মাঝে মাঝে মনেই হয় লেখালেখিটাও কেমন যেন লোক দেখানো! কিন্তু হঠাত যখন কেউ শুধু ছোট একটা ইনবক্স করে, বা ছোট করে লিখে, আপু, আপনার লেখা পড়তে ভাল লাগে্,‌ তখন আবার নতুন করে কিছু লিখতে ইচ্ছা করে, এই অল্প কিছু মানুষের জন্য! অবশ্য বন্ধুদের কাছে “পঁচা টমেটো” টাইপ কথাও শুনতে হয়েছে অনেকবার!

সে যাইহোক, লিখতে শুরু করেছিলাম অন্য একটা কারণে। কিছুদিন আগে “Disconnect to connect” নামে একটা ভিডিও খুব ভাইরাল হয়েছিল। বাংলা করলে দাঁড়ায়, সংযোগের জন্য বিচ্ছিন্নতা! কাছের মানুষের আসে পাশে থেকেও আমরা একেকজন এলিয়েনেটেড! জীবনের এক একটা পর্যায় পার হয়ে আরেকটা জায়গায় গেলে আগের বন্ধুগুলো কেমন যেন টুক করে মুঠোফোন আর ফেসবুকের মধ্যেই ঢুকে যায়! একটু বেশি কাছের হলে হয়ত ইনবক্সে কিছু কথা হয়ে থাকে যোগাযোগটা, আর তা নাহলে শুধু লাইক বা কমেন্ট! আমরা আমাদের বাবা মার যুগ থেকে আসলে সরে এসেছি অনেক আগেই, এখন বাস্তবটা আসলেই এই সোশাল মিডিয়া নির্ভর জীবন! কিন্তু গবেষণা সব সময়ই বলছে, এই যোগাযোগটা শুধু মানুষের মধ্যে শূণ্যতাকেই বাড়াচ্ছে। সবাই কাছে, শুধু এক সেকেন্ডের দুরত্বে, কিন্তু ঘোরটা কেটে গেলেই সব শূণ্য! কয়েকদিন আগেই একটা প্রতিবেদনে পড়ছিলাম, ফেসবুকের প্রতিটা জিনিস খুবই স্বনিয়ন্ত্রিত! একটা মানুষ নিজেকে ঠিক যেভাবে দেখাতে চায়, সেভাবেই দেখাচ্ছে, অথচ বাস্তবে হয়ত সে সম্পূর্ণ আলাদাই এক মানুষ! কোন দিকে মুখটা একটু বাঁকা করলে নিজেকে ভাল দেখাবে এটাও এখন সবার জানা! আরেক জায়গায় পড়েছিলাম "ঘুমিয়ে আছে সেলিব্রিটি ভাব, সব ফেসবুকারের অন্তরে"! কথাটা খুবই সত্যি! এই জায়গাটা মানুষের মধ্যে প্রবলভাবে তৈরী করছে নার্সিসিজম বা আত্মপ্রেম! কিন্তু কারোই আসলে খুব বেশি কিছু এসে যায় না তোমার সাফল্য, ব্যর্থতা বা বিষণ্ণতায়, শুধু ইনফরমেশনটা জানা হয় হয়ত! মনটা খুব খারাপ! ফিলিং এলোন! বা ইটিং রাইস উইথ হাবি, জাতীয় স্ট্যাটাস আমাদের দিতে হয়ত ভাল লাগে, কিন্তু দেয়ার আগে বোধহয় একটু চিন্তা করা ভাল বিষয়টা অনেক বেশি পাবলিক! এমন কি মানুষ হজ্বে গিয়ে সেলফি তুলে চেক-ইন দিচ্ছে, এট হজ্ব! সেদিন একজন কে দেখলাম নিজের বিয়ের ছবি পোস্ট করতে, আর নিচে লেখা “ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে, কিন্তু ছবিটাতো সুন্দর”! এসব দেখে মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা থেকেই পেছনে অনেক কথা বলে যেটা হয়ত আমাদের কান পর্যন্ত পৌছায় না!

আগে মানুষ দূরে চলে গেলে কষ্টটা হত বেশি, আবার ফেরত আসলে খুশিটাও হত অনেক বেশি! কারণ মাঝের ব্যবধাণটা আসলেই একটা ব্যবধাণ ছিল। যখন কাছের একজনের জীবনটা সত্যি সত্যি অনেক দূরে চলে যেত! আর এখন মানুষ দূরে চলে গেলেও মনেহয়, থাক সমস্যা কি, ফেসবুকে তো থাকবেই, সব খবরই পাওয়া যাবে। ওরা যখন অনেকদিন পর ফিরে আসে তখন আগের মত দেখা করা উতসাহটাও থাকে না, দু একটা ব্যতিক্রম ছাড়া। এই জিনিসটা অনেকটাই দুঃখজনক। আমরা খুব বেশি কাছে থাকতে থাকতে এতটাই দূরে চলে যাচ্ছি যে কাছে ফিরে আসার ইচ্ছাটাও আর থাকছে না!

পৃথিবী তো সময় সময় বদলাতেই থাকে, আমরা এই সোশাল মিডিয়ার বন্দীত্ব থেকে হয়ত বের হতে পারব কিছুদিন বা বেশি হলে কয়েক বছর পর। হয়ত টেকনলজী আমাদের তখন অন্য কিছু দিয়ে বেঁধে রাখবে। অনেকবার চেষ্টা করেছি বের হয়ে আসার। কিন্তু দিন কয়েক যেতে না যেতেই আবার ফিরে আসতে হয়েছে অভ্যাসের টানে! ধূমপান আর এই আসক্তিটা আসলে খুব আলাদা কিছু না। কিন্তু আবার এটাও ঠিক এই জিনিসটার কল্যাণে অনেক মানুষ অনেক কিছু করতে পেরেছে আর কারো কোন সাহায্য না নিয়ে। লিখতে ভাল লাগলে লিখেছে, মানুষ পড়েছে, কোন প্রকাশকের পিছনে ঘুরে মরতে হয়নি। এখান থেকেই তৈরী হয়েছে অনেক এফ-উদ্যোক্তার! অনেক “Good cause activity” র খবর খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে মানুষের কাছে। অনেকের হয়ত কখনও কোন খবরই পাওয়া যেত না, ফেবুর কল্যাণে ছোট করে নামটা চোখের সামনে এসে পড়ে সেই মানুষটারও। ভাল খারাপ দিক সব কিছুরই আছে, এই ভাল টুকু আছে বলেই হয়ত আমরা বের হতে পারি না অন্তর্জালের এই অন্তরাল থেকে!

আনীকা


মন্তব্য

তিথীডোর এর ছবি

। ফেসবুকের সবচেয়ে চমৎকার বাংলা প্রতিশব্দ খোমাখাতা, আমার মতে।
মুখবইও বেশ।

। আমার চলতি নেশা ছবি তোলা। পোট্রেট থেকে শুরু করে ফুড ফটোগ্রাফি-- সবতাতেই হাতুড়িপনা চলে। সেগুলোর অনেকগুলোই এফবিতে সরাসরি বা ফ্লিকার লিঙ্ক দিয়ে শেয়ারও করি, তবে কাস্টমস সেটিঙসে।
প্রোপিক বদলেও লোকজনকে ঈষৎ ত্যক্ত করি, সেও সত্যি। তবে লাইক-কমেন্টের ওপর ভর করে মুড বদলায় না। ফটোশপ-ডিএসএলআরের জামানায় ছবি খুবই ভুয়া একটা জিনিস, ইউ নো। চোখ টিপি
আর
একটা মানুষের ভেতরটা পছন্দ বা অপছন্দ হয়ে গেলে বাইরের অংশটা আসলে খুব বেশি ম্যাটার করে না।

। পাবলিকলি অতি ব্যক্তিগত ছবি শেয়ার করা, হাবি- আপি- পাকি লন ফ্লেভারড কিংবা মেঘবালিকা/ ড্রিম গার্ল নিক লাগানো ক্যাটাগরির ললনা, সেলিব্রিটি হবার ধান্দায় থাকা ভাইবেরাদর, কাশেম বিন আবু বকর পড়ুয়া পাঠিকা, মারডালা মমতাজের মিউচুয়াল দুস্ত, মেয়েদের নিয়ে অভব্য 'ফাতরামি' (শব্দটা ইচ্ছেকৃত ভাবে ব্যবহার করলাম) করা পুরুষ --- এ জাতীয় পাবলিকদের চরম অপছন্দ করি।

। ইউবিসি বা বিসিএসের মেধাবি বলদদের বিনোদন উপভোগ করি। ইন ফ্যাক্ট, অন্তত ৯০ ভাগ বাঙালি শিক্ষিত ও সুশীল পুরুষ যে আদতে শফি হুজুরীয় আত্মাই ধারণ করেন, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে অবাধ আনাগোনার বদৌলতে সে ব্যাপারে এখন আর সন্দেহ পোষণ করি না।

। আমি নেট অ্যাডিক্টেড। কিন্তু ফেসবুকিং জিনিসটা ঠিক মিস করি না আসলে। মিস করি ভিন্ন টাইমজোনের কয়েকজন রিয়েল লাইফ ফেভারিট মানুষের ভার্চুয়াল সঙ্গকে, এফবি অ্যাকাউন্ট ডি-অ্যাকটিভ্যাট করে রাখলে যাদের সঙ্গে যোগাযোগের পথটা খানিকটা সীমিত হয়ে যায়।

। ইস্কুলের যে বন্ধুটি বাবার চাকরির সুবাদে ক্লাস এইটে চলে গিয়েছিলো জামালপুরে, আজকে এতো বছর পর তাকে জুকারবার্গ সাহেবের কল্যানে সস্ত্রীক বা সপুত্রক খুঁজে পাওয়ার অংশটা চমৎকার। কিন্তু দীর্ঘদিন অদর্শনের পর রিইউনিয়ন বা গেটটুগেদারে দেখা হলে যদি ঠিকঠাকমতো কথা বলার আগে ফেসবুকে সেই গ্রুপফি আপলোড করাটাই কারো কাছে মূল কনসার্নিং ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়, সেটা পীড়াদায়ক। সংযোগের জন্য বিচ্ছিন্নতা যাকে বললেন।

এহহে, ব্লগের সমান মন্তব্য করে ফেললাম দেখি! সরি। হাসি
লেখা চলুক।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

শাব্দিক এর ছবি

ফেসবুকের সবচেয়ে চমৎকার বাংলা প্রতিশব্দ খোমাখাতা

সহমত।

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

তিথীডোরের মন্তব্য থেকে ধার করছি,

ইস্কুলের যে বন্ধুটি বাবার চাকরির সুবাদে ক্লাস এইটে চলে গিয়েছিলো জামালপুরে, আজকে এতো বছর পর তাকে জুকারবার্গ সাহেবের কল্যানে সস্ত্রীক বা সপুত্রক খুঁজে পাওয়ার অংশটা চমৎকার। কিন্তু দীর্ঘদিন অদর্শনের পর রিইউনিয়ন বা গেটটুগেদারে দেখা হলে যদি ঠিকঠাকমতো কথা বলার আগে ফেসবুকে সেই গ্রুপফি আপলোড করাটাই কারো কাছে মূল কনসার্নিং ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়, সেটা পীড়াদায়ক।

আর প্রতি দশ মিনিট অন্তর ফিলিং হট, ফিলিং ডাউন! আমি ভাবি আমার সেই বন্ধুটা অফিস করে কখন!
তবে আমিও তিথীডোরের ভাষায় নেট অ্যাডিক্টেড। ব্লগ পড়ছি, নিউজ পড়ছি, ফেবুতে ঢুঁ মারছি। ফেবুতে অন্যদের খবর পেতে বেশ লাগে। ভালই চলছে জীবন।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

এক লহমা এর ছবি

চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

মেঘলা মানুষ এর ছবি

ফেসবুকে দিনের শেষের সকালে একবার, দিনের শেষে একবার দেখি। কে কি করল, কে কি দিয়ে ভাত খেল, কে কক্সবাজার গেল এসব জানা যায়। আবার, কতগুলো এক-দু'দিনের শিশুর ছবি দেখলে ভালোই লাগে। কত কত বাচ্চা আছে যাদের চোখের সামনে (মানে কম্পিউটার স্ক্রিনে) বেড়ে উঠতে দেখেছি গত ৩-৪ বছরে। ঐ শিশুগুলো আমাকে চিনবে না, কিন্তু আমি জানি ওরা কি করে, কি পছন্দ করে, কার সুপারহিরো বা হিরোইন কে? -এটা একটা দারুন ব্যাপার।

তবে, কানেক্ট টু ডিসকানেক্ট (বিচ্ছিন্ন হবার জন্য সংযোগ -আপনি যেটার কথা বললেন তার উল্টোটা) -খুবই অপছন্দের। সবাই মিলে বসে কথা বলা বা শোনার বদলে পকেট থেকে ফোন বের করে টেপাটিপি একটা অসৌজন্যমূলক কাজ।

তবে, ফেসবুকের কল্যাণে মানুষ চেনার কিছু সুবিধা হয়েছে। কে কোন পথের পথিক সেটা আস্তে আস্তে ঠিকই বের হয়ে আসে। নাহলে হয়ত অনেক মানুষকে অনেক উঁচুতলায় তুলে রেখে দিতাম ভুল করে।

শুভেচ্ছা হাসি

এক লহমা এর ছবি

চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

রংতুলি এর ছবি

চলুক

মেঘলা মানুষ এর ছবি

একটা গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, যারা স্মার্টফোন ব্যব‌হার করে তাদের কাছ থেকে স্মার্টফোন নিয়ে তাদের পাজল সলভ করতে দিলে তারা ধীর হয়ে যায়। আবার, তাদের সাথে (পকেটে) স্মার্টফোন থাকলে তারা ভালো 'বুদ্ধিমান' মানুষের মত কাজ করে, চিন্তার ক্ষমতা ঠিক ঠাক থাকে। আর পকেটে ফোন না থাকলে তাদের হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়!

এককথায়: পকেটে ফোন না থাকলে মানুষ একটু বেকুব টাইপের হয়ে যায় (এমনকি যে কাজে ঐ ফোনটা কোন কাজেই আসবে না)

পাদটীকা

শাব্দিক এর ছবি

পকেটে ফোন না থাকলে মানুষ একটু বেকুব টাইপের হয়ে যায় (এমনকি যে কাজে ঐ ফোনটা কোন কাজেই আসবে না)

হো হো হো চলুক

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

শাব্দিক এর ছবি

ফেইসবুকের ব্যবহার অবশ্যই বয়স, মন, মানসিকতা সাপেক্ষে ভিন্ন। আজকাল সিনিয়ার সিটিজেনরাও অনেকে যেমন ফেইসবুক ব্যাবহার করছেন, আবার অনেক শিশু কিশোর ও অবাধে এই জ্বরে আক্রান্ত। আমার মনে হয়েছে যারা জীবনের একটা মাঝামাঝি পর্যায়ে এসে ফেইসবুক ব্যবহার করছে, তাদের চেয়ে এখনকার জেনেরেশান যারা টিন-এজ থেকে ফেইসবুক সঙ্গে করে বড় হয়েছে তারা অনেক সচেতন।

কি শেয়ার দেয়া উচিত, কাকে শেয়ার দেয়া উচিত ব্যপারগুলি একটু লক্ষ্য না করলে এবং সবাইকে সব কিছু জানিয়ে যখন তখন ট্যাগ এবং চেক ইন দেয়া অন্যদের জন্য যথেষ্ট বিরক্তির কারণ হয়ে দাড়াতে পারে এটা বহু মানুষ কেন জানি বুঝতে চায় না।

প্রায়ই যেটা হয় ছবি আপ্লোড করে দেয়া হল যাদের, তাদের সম্মতি গ্রহনের প্রয়োজন বোধ করা হয় না। কেউ নিজে তার ব্যক্তিগত জীবন শেয়ার করতে পছন্দ করলেও অন্যেরাও না ও করতে চাইতে পারে এই বোধটা অনেকের নাই।

বেশিরভাগ সময়ে ফেইসবুকে অন্যের সুখবার্তাটাই বেশি পাওয়া হয়, অধিকাংশ মানুষের ফেইসবুক প্রোফাইল ভর্তি কেবল সুখ আর আনন্দ। রিয়েল সিনারিওটা এমন হওয়াটা স্বাভাবিক নয়। তখন স্বাভাবিক ভাবেই নিজের না পাওয়াটা হিসেবের খাতায় গোনা শুরু হয়ে যায়।

সামাজিক এবং পারিবারিক বন্ধন ফেইসবুকের কল্যাণে নড়বড়েই হয়ে যাচ্ছে। কোথাও গিয়ে প্রকৃত উপভোগ করার চেয়ে ছবি তোলা (স্মার্ট ফোনের বদৌলতে) এবং আপলোড দিয়ে লাইক আর কমেন্ট কুড়ানোতেই অধিক উপভোগ করেন মোহগ্রস্ত ফেইসবুক ব্যবহারকারীরা। ডিভোর্সের পরিমাণ বাড়ছে ফেইসবুক অপব্যবহারের কারণে এই তথ্য বহু পরীক্ষিত।

প্রতিদিন অসংখ্য পরিচিত, স্বল্প পরিচিত মানুষের দৈনন্দিন জীবনের আপঝাপ ছবি আর স্ট্যাটাস দেখতে দেখতে অনেক সময় খুব কাছের মানুষগুলির খবর নেয়ার কথা ভুলে যাই অনেকে। ফেইসবুকে তো সব ই দেখছি, কি যে বাদ পড়ল জীবন থেকে সে হিসাবটা থাকে না।

ফেইসবুক ছাড়াও আবার জীবন কঠিন, যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে এতটাই জনপ্রিয় যে ফেইসবুক বন্ধ রাখলে অনেক জরুরী খবর মিস হয়ে যায়, অনেক প্রয়োজনীয় তথ্য না জানা থেকে যায়, অনেকের ক্রিয়েটিভিটি দেখে মুগ্ধ হওয়া বাদ পড়ে যায়। ফেইসবুকহীন জীবনটা কেমন শান্তিময় ছিল তা মনে করতে ভুলে গেছি।

কয়দিন পর পর ফেইসবুক ডিএক্টিভেটেড করে মনে মনে বলি মাফও চাই, দোয়াও চাই, কিন্তু খোমাখাতার মোহ থেকে ক্ষমা পাওয়া অত্যন্ত কঠিন।

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ফেসবুকে শুধু না, মানুষ ব্যক্তিজীবনেও নিজেকে যেভাবে চায় সেভাবেই প্রকাশ করে। পোশাকের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে, কুৎসিত চিন্তাগুলোকে রেখে ঢেকে, ভয়ঙ্কর ইচ্ছাগুলোকে দমন করেই সে সমাজে নিজের একটা গ্রহণযোগ্য ইমেজ গড়ে তোলে। পার্টিতে যে লোকটির চমৎকার আচরণ দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন, ঘরের খোলসে ঢুকলেই তার চেহারা পাল্টে যাবে হয়তো। এটাই বাস্তবতা।
ফেসবুকে কে কী করলো না করলো সেগুলো নিয়ে আমি বিরক্ত হই না। যার যার নিজস্ব গণ্ডির বন্ধুদের নিয়েই তার সার্কেল। কেউ যদি আলুভর্তা দিয়ে ভাত খেয়ে সেটার ছবি তিনবেলা ফেসবুকে দিতে চায় দিবে, এইটা তার ব্যাপার। আমার পছন্দ না হলে নিজ দায়িত্বে তাকে আমি বন্ধুতালিকা থেকে বাদ দিবো, কিন্তু তার আচরণ নিয়ে কথা বলার আমি তো কেউ না।

আরো কী কী যেন বলতে চেয়েছিলাম, ভুলে গেছি। যাহোক, লেখা ভালো লেগেছে। চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

এক লহমা এর ছবি

চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

মাসুদ সজীব এর ছবি

সহমত

নাজু ভাই হঠাৎ করে অচল থেকে মারদাঙ্গা সচল হয়ে গেলেন দেখছি, চিন্তিত । শেষ কবে সচলতায়নে আপনার এমন সরব উপস্থিতি ছিলো মনে পড়ছে না খাইছে ? ভাবী কি বাপের বাড়ী গেছে নাকি দেঁতো হাসি

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রংতুলি এর ছবি

‘বদনকিতাব’ শুনতে ভালই লাগে। নামটা বরের দেয়া। এই ‘বদনকিতাব’ থেকে একটানা আট মাস বিরতি নিয়েছিলাম, পুরো নেট দুনিয়া থেকেই দূরে ছিলাম। কিন্তু অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাক্টিভ্যাট করে না। ভেবেছিলাম আমি না ঢুকলেই তো হলো, অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার আলদা মানে কি। ভুলটা পরে বুঝেছি। দুনিয়ার আবজাব পেজ, গ্রুপ আরো নানা জায়গায় লোকে আমাকে অ্যাড করে বসে আছে।

এটা অস্বীকার করার উপায় নাই ফেসবুক দিনদিন অল ইন ওয়ান হয়ে উঠছে... ব্রেকিং নিউজ, প্রয়োজনীয় তথ্য, নতুন লেখা, প্রিয়মুখ, অল্প পরিচিত/অদেখা মুখ, হারিয়ে যাওয়া বন্ধু... সবাই/সবকিছুর সাথে এক বসায় এক সাথে সাক্ষাৎ হয়ে যায়। সমস্যাটা হয়ত এখানেই এত এত দরকারী অদরকারী জিনিস একসাথে একবারে পেয়ে প্রতিটাতে প্রয়োজনীয় মনযোগের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।

রোজ কত কিছুই না ঘটছে, সবাই কত কিছুই না করছে। বই পড়ছে, লিখছে, ছবি আঁকছে, ফটোগ্রাফি করছে... আরো কত কি, লোকের সবকিছুতে সমান ব্যাল্যান্স দেখে নিজে কত বড় অকর্মন্য এই উপলদ্ধি থেকে রোজ জন্ম নেয়া দীর্ঘশ্বাসগুলো টুপ করে গিলে ফেলি। ব্যাপার না। থাম্বস আপ!

অচেনা হোক সুখী সুখী মুখের ছবি দেখে অতোটা বিরক্তি লাগে না। কাচ্চা-বাচ্চা, খাবারের ছবি, ফুল-বাগানের ছবির দিকে কখনো কখনো হা-করে তাকিয়ে থাকি। আনন্দ সংক্রমিত কোথায় যেন পড়েছিলাম। বাংলিশ/টাকলিশ, হাবিজাবি, আজাইরা ইস্যু নিয়ে মানুষের কটাক্ষ অসুস্থ মাতামাতি মাত্রা ছাড়িয়ে যেতে দেখলে বরং সত্যিকার অর্থেই বিরক্তি ধরে। আর থাকে কিছু ফাঁকা গুলি টাইপ স্ট্যাটাস, যেখানে কাকে আঘাত করা হচ্ছে, কেনই বা করা হচ্ছে পরিষ্কার না। ফেসবুকের সবচেয়ে বড় গুণ হলো এখানে নিজের প্রকাশ যেমন স্বনিয়ন্ত্রিত, তেমন চোখের সামনে কি দেখব কিনা এটাও স্বনিয়ন্ত্রিত, এ বলেই রক্ষা! হাসি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

ইয়ে, খোমাবই/খোমাখাতা অনেকদিন ধরেই ব্যবহার হচ্ছে বোধহয় হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মেঘলা মানুষ এর ছবি

তবে, ফেসবুক একটা অযাচিত Peer Pressure ও তৈরি করে। অমুকে মালয়েশিয়া গেল, তমুকে থাইল্যান্ড গেল -এসব দেখে দেখে মানুষের মনে একটা 'চাপ' আসে যে, "আরে, ও গেছে এখন আমারও যেতে হবে, ছবি দিতে হবে"

"ঐ জুটি এত রোমান্টিক রোমান্টিক ছবি দেয়" -এখন আমারও দিতে হবে। অনেক সময় কিছু করার চাইতে, সেটা দেখানোটা মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়।

অনেক সময় মুহূর্তটা উপভোগের চাইতে সেটাকে ফেসবুকে তুলে ধরার চেষ্টা বেশি হয়ে যায়। যেমন, কোথাও কোথাও দেখা যায় খেতে গিয়ে বন্ধুরা ছবি তোলা আর সেটা শেয়ার করা নিয়েই ব্যাস্ত। খাওয়ার সময়টা বার বার রিফ্রেশ -কটা লাইক পরল?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।