বাল্যবিবাহঃ বাবামায়েরা কি জানেন তারা কী করছেন? - ২

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ১২/০৫/২০১৫ - ১০:০২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রথম পর্ব

আমার বয়স তখন সতেরো। জামাইর সাথে ঢাকায় থাকি। সঙ্গে আছে দেবর ও ননদের জামাই। দেড় রুমের ছোট্ট বাসায় থাকি। যদিও জামাইর অবর্তমানে পড়াশোনা করছিলাম, বুঝে গিয়েছিলাম আমার আর আগানো হবে না। একটা পরীক্ষায়ও অংশ নিতে পারি নাই। প্রচন্ড বিষন্নতায় ভুগছিলাম। মনে হতো একটা বাচ্চা আসলে বেঁচে যেতাম। মা -চাচিরা যখন আমার হাতে পিল খাবার দায়িত্ব দিয়েছিল তখন থেকে পিল ফেলে দিতাম। প্রচন্ড ভাবে একটা বাচ্চার অপেক্ষায় ছিলাম।

মা আমাকে এখান সেখান থেকে পানি পড়া এনে খাওয়ায়। পিরিয়ডের সময় ঘনিয়ে এলে আল্লাহ আল্লাহ করতে থাকি, পিরিয়ড হয়ে গেলে ভেংগে পড়ি, মুষড়ে যাই। জামাইয়ের বাচ্চা কাচ্চার ব্যপারে কোনো আগ্রহ ছিলো না। আমার শাশুড়িরা আমাকে বাজা বলতেও ছাড়েনি। অবশেষে আমি পিরিয়ডের ডেট পার করলাম, যেন বিশ্ব জয় করলাম। সেই আনন্দ সেই সুখ কোনো ভাবেই লিখে বুঝানো যাবে না। নানা রকম শারীরিক সমস্যার মাঝেও আমি আমার বাবুর জন্য প্রচন্ড ভাবে অপেক্ষা করতে থাকি। বাবুর অস্তিত্ব বুঝার জন্য পেট থেকে হাত সরাই না, পেটে একটু কাঁপন হলে মন স্বর্গীয় আনন্দে ভরে যায়। আমার জামাই আমার অবস্থা দেখে বিরক্ত। এম্নিতেই আমাদের কথা কম হতো, তখন তো আরো হয় না। আমিও বেচেঁ যাই। আমি আমার ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে থাকি।

ছেলে বলছি এই জন্য যে আমার জামাইয়ের মতো আমিও বিশ্বাস করতাম, আমাদের ছেলে আসছে। আমার সব শাশুড়িরা হিসাব নিকাশ করে বের করেছিল, আমাদের ছেলে হবে। আমার শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাওয়ায় শেষ দুই মাস বাবার বাড়ি ছিলাম। আমার দাই দাদি পেট মালিশ করে দিতে দিতে বলত তোর মেয়ে হবে। আমি মুখ ঝামটা দিয়ে বলতাম, তুমি পেটের ভিতরে যেয়ে দেখে এসেছো? প্রায়ই জামাই আসতো, যে দিন সন্ধ্যায় পেইন উঠলো সেই দিন দুপুরে সে ঢাকায় গেল। সারা রাত যমে -মানুষে টানা টানির পর কয়েক জন দাই টেনে হিচড়ে আমার মেয়েকে দুনিয়ায় আনলো। আমার মা জায়নামাজে বসে গেল, আমি আমার মেয়েকে দেখে পুত্র শোক ভুলে গেলাম। নিজেকে সব চেয়ে সুখী মনে হলো। জামাইয়ের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম৷।

মেয়ের জন্মের পর থেকে তার বাবার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। জানি তার মন খারাপ হয়েছে, কষ্টও পেয়েছে। তার জন্য মন খারাপ হয়েছে আমারও। কিন্তু আমি জানি ও বাচ্চা খুব পছন্দ করে। সত্যি বলতে কী, আমি যখন দেখতাম পাশের বাসার মানিক রতনকে ও এতো আদর করতো তখন থেকেই একটা ছেলের মা হবার স্বপ্ন মনের ভিতরে বাসা বাঁধতে থাকে। আমার আর একটা স্বপ্ন ছিল, আমার ছোট্ট বাবা তার বাবার হাত ধরে জুম্মার নামাজ পড়তে যাচ্ছে। এখনো এমন দৃশ্য দেখলে বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠে। আমার মেয়ের একুশ দিনের দিন তার বাবার দেখা পেলাম। আমি তো তার দিকে তাকাতেই পারছিলাম না। যেন বিরাট অন্যায় করে ফেলেছি। না ওর মুখ কিছু বলেনি, তবে একটু কষ্ট যেন লুকিয়ে ছিলো। আমি ঢাকায় ফেরার অপেক্ষায় এর জন্য রইলাম যাতে বাবা-মেয়েতে ভাব হয়ে যায়।

ঢাকায় ফেরার পর বাবা - মেয়েতে সত্যিই ভাব হয়েছিল। আমার অনেক গুলো শ্বাশুড়ী ছিল, তাদের অনেকেই আমার ছিলো কাছাকাছি কারন ওদের সবার ব্যবসা একই ধরনের আর একই এলাকায়। আর তাই ছেলে হওয়া নিয়ে ওদের দেয়া ক্ষত গুলো এখনো বড্ডো কষ্ট দেয়।

মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় ফিরলাম। নানা রকম ঘটন অঘটনের মধ্য দিয়ে সময় পার করছিলাম।
আমার মেঝ সন্তান এসেছে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে ঠিক দুই বছরের মাথায়। আমি তক্ষুনি আর একটা বাচ্চা চাইনি। তবু এসে গেল। আমি অনেক বেশি রোগা হয়ে গেলাম। হয়তো একটা ছেলেই আসছে, এই আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষা করতে লাগলাম। স্বপ্ন ভঙ্গ হলো। ভয়াবহ কষ্টের পর মেঝ মেয়ের জন্ম হলো। আমার প্রতিটা বাচ্চা পেটে থাকা অবস্থায় শবে বরাত পেয়েছি। সারা রাত জেগে নামাজ পড়ে, কোরআন পড়ে আল্লাহর কাছে ছেলে চেয়েছি যতটা না নিজের জন্য, জামাইর জন্য তার চেয়ে বেশি শ্বাশুড়ীদের চোখে ছোট হবার ভয়ে। এই মানুষ গুলোই আমাকে বুঝিয়েছিল, আমি মেয়ে তৈরির কারখানা। আর তাই তো আমি শীতল হয়েছি, যতটা না রক্ত ক্ষরণে তার চেয়ে বেশি ওদের আক্রমণে। এখন আর ওরা আমায় ক্ষতবিক্ষত করতে পারে না, আমি আর সেই আমি নেই।

চারপাশে এতো শীতলতা, কেবল মনে হতো -স্বপ্ন না তো! যদি সব বদলে যেতো! আমার দুই মেয়ের কাছাকাছি সময়ে আমার ননদের দুই ছেলের জন্ম। ওর অবস্থান যত উপরে উঠতে থাকে আমার অবস্থান তত নীচে নামতে থাকে। কেবলই মনে হয় বড় ভুল করে ফেলেছি।

তখনো আমার বিশ বছর পুরো হয় নি। দুইটা বাচ্চা নিয়ে হিমসিম খেতে খেতে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। তখনো শ্বশুরের ছোট্ট ভিটায় ঘর তোলা হয়নি, প্রচন্ড অসচ্ছল জীবন। বাচ্চার দুধ শেষ হয়ে গেলে ভয়ে অস্থির হয়ে যাই। ওর টাকা পয়সা কী আছে কী নাই কিছুই জানিনা। দেখা গেল মেয়ের জন্য আনানো ডিমটি নষ্ট বের হয়েছে ---কষ্টে চোখে পানি চলে আসতো। ওকে জানানোর কোনো উপায় ছিলো না। আমার কাছে দশ না দুই টাকাও থাকতো না। আমাকে টাকা পয়সা দেবার দরকার মনে করতো না। ওর ব্যংকের নমিনি ছিলো ওর ভাইদের নামে। আমি সংসারের কাজের বাইরে বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম।

আমরা তিনটি শিশু একসাথে বড় হতে লাগলাম। আমি নিজে যখন পড়েছি তখনও এতোটা শিখিনি, ওদেরকে পড়াতে যেয়ে যা শিখলাম। আমাদের দামি খেলনা ছিলো না, সস্তা কিছু খেলনা ছিলো একটা ঝুড়িতে। আর ছিলো আমার হাতে তৈরি কিছু কাপড়ের পুতুল, কাথাঁ বালিশ। আমরা অপেক্ষায় থাকতাম বিদ্যুৎ চলে যাবার। রাতের বেলায় বিদ্যুৎ যাবার পর ছাদে চলে যেতাম। আমরা তিন জন পুতুল ও খেলনা পাতি দিয়ে খেলতাম। কখনো বেসুরে রবীন্দ্র সংগীত শোনাতাম, আবার কখনো কবিতা আবৃত্তি করে শোনাতাম। কতো গল্প যে শুনিয়েছি!

আমার এমন কোনো ঘটনা নাই যা ওরা জানেনা। এই আমিই আবার নিজের কষ্ট-ক্ষোভ গুলো ওদের ওপর ঝেড়ে ফেলতাম। হয়তো বড় মেয়েকে মারছি তখন ছোটটি দূরে দাঁড়িয়ে বলতো - আব্বুকে বলে দিব, নানুকে বলে দিব। অনুতপ্ত আমি যখন রান্না ঘরে বসে কাদঁতে থাকতাম তখন ছোট টি এসে গলা জড়িয়ে ধরে বলাতো ---কাউকে বলবো না, স্যরি মা আর কেঁদো না। আমার অনুতাপ আরো বেড়ে যেতো। অতটুকুন মেয়ের চোখে চোখ রাখতে পারতাম না। আমার এই মেয়েটি অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে এসে আমার বাগানের সৌরভ অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

ওদেরকে বকা দিয়ে হয়তো আমি মন খারাপ করে কাজ করছি, কিছুক্ষণ পরেই ওদের হাসির শব্দ পেতাম, আমার মন ভাল হয়ে যেতো। পড়া শেষ করে বড় মেয়ে আমার দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হলে --ছোট টি এসে ফট করে টিভি ছেড়ে দিতো। খুব সাহসী ছিল। আমার মন খারাপ দেখলে বড়টি যেমন দূরে থাকতো ছোটটি তেমন খুব কাছে থাকতো, গলা ধরে বলতো -- মা আর দুষ্টামি করবো না, একটু হাসো। আমি বারবার ওদের কাছে হেরে গেছি, বারবার। আমি নিজেও অসংখ্য বার ওদেরকে স্যরি বলেছি।

খুব সাধারণ স্কুল দিয়ে ওদের পড়াশোনা শুরু। আমাদের এলাকায় নাম করা একটা স্কুল আছে, ভর্তি ফির খবর শুনে আঁতকে উঠলাম। প্রতি দিন যাতে 20/50 টাকা করে জমা করে তার জন্য জামাইর কাছে ঘ্যান ঘ্যান করতে লাগলাম। লোকটা আমার কথা রাখলো। তিন বৎসর পর ওদের ভর্তির টাকা জমা হলো। ওরা ভর্তি পরিক্ষায় উৎরে গেল। শুরু হলো নতুন যুদ্ধ। আমার বাসায় কখনো গৃহ শিক্ষক রাখা হয়নি, কখনো ওদেরকে কোচিং করাইনি। তবুও ওরা মেধা স্থান দখল করতো, বৃত্তি পেতো। আমি রাত জেগে ওদের জন্য নোট করতাম, তার পর যখন নোটে চোখ বুলাতাম সব ক্লান্তি দূর হয়ে যেত। পাবলিক পরিক্ষায়ও ওরা সব চেয়ে ভাল রেজাল্ট করেছে। আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, ওদেরকে আনন্দময় শৈশব দিতে পারিনি। একটা গল্পের বই বা খেলনা পাবার জন্য ওদেরকে মেধা স্থান দখল করতে হতো। পছন্দের টিফিন খাবার জন্য এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হতো। কারন সপ্তাহে একবারই ওরা টিফিনে টাকা পেতো।

আমার জামাইয়ের কথা বলি একটু। এই লোকটা আমার গায়ে হাত দেবার সুযোগ খুব বেশি পায়নি। কারন আমি কখনো ওর হ্যা কে না বা না কে হ্যা করার চেষ্টা করি নাই। কখনো কোনো অন্যায় আবদার করি নি। ওর নিজের বাড়িতে ঘর তোলার আগে বোনের শ্বশুরবাড়িতে ঘর তুলে দিয়েছে, কারন জানতে চাই নি। কখনো শাড়ি গয়না চুড়ির জন্য বায়না ধরিনি। কখনো হাত খরচের টাকা চাই নি। খুব একটা প্রশ্ন আসতে পারে ---কেন, কী ছিল আমার দুর্বলতা? দুর্বলতা ছিল। আমি নিজেকে কোনঠাসা করে রেখেছিলাম বাবা -মায়ের কৃত কর্মের জন্য। আমার বয়স যখন আট, তখন বাবা চাকরি ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দেবার চেষ্টা করে। প্রতি বছর জায়গা জমি বেচে বিদেশ যেত, বছর খানেক পর খালি হাতে ফেরত আসতো। আবার জমি বেচতো, ঋন করতো আবার যেত। ভাগ্যের চাকা আর ঘোরে না। এভাবে সর্বশান্ত হবার পথে। তখনো পর্যন্ত যৌতুকের মটর সাইকেল দিতে পারে নি। বিয়ের সাত বছর পর মটর সাইকেলের দাম দিয়েছে। আর বাবার অবর্তমানে মায়ের নামে ছড়ানো রটনাও আমাকে কোনঠাসা করে ফেলেছিল। নিজের সব ইচ্ছা অনিচ্ছাকে কোরবানি করে ছিলাম। আমার জামাই আমাকে যদি অর্থনৈতিক কষ্টে না রাখতো, হয়তো ওর সব দোষ মাফ করা যেত।

চমকে উঠলেন? ভাবছেন টাকাই সব? যখন মেয়ে একটা বই বা পেন্সিল হারালে তাকে প্রচন্ড পিটুনি দেই তখন আমার জামাই জায়গা কেনে, বাড়ি করে। ও মেয়েদের পড়াশোনায় বাধা দেয় নি কারন এদের পড়াশোনায় কোনো খরচ ই ছিল না। টাকা খরচের ব্যাপার আসলেই তার চেহারা বদলে যেত।

আমার নিষঠুর হাত অনেক বার আমার মেয়েদেরকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। আমার অর্থনৈতিক ও মানসিক কষ্ট গুলো শিলা খন্ড হয়ে ওদের ওপর ঝরে পড়তো। আমার ২৯ বৎসর বয়সে ছোটটির জন্ম হয়। ও জন্মেছে ক্লিনিকে। ওকে যখন বাসায় নিয়ে এলাম, বারবার মনে হতে লাগলো, মাকে কেন বলি নি ওকে মেরে ফেলার কথা কিংবা কাউকে দিয়ে দেবার কথা। প্রতি রাতে আল্লাহকে ডাকতে ডাকতে ঘুমাতে যেতাম, যেন সকালে উঠে দেখি ও ছেলে হয়ে গেছে। আত্মীয় স্বজনদের জ্বালা ধরানো কথায় পাগল হয়ে গিয়েছিলাম।

আমার ইচ্ছাতেই এর জন্ম হয়েছে তাই নিজেকে নানাভাবে শাস্তি দিয়েছি। দীর্ঘ দিন রঙহীন জীবন কাটিয়েছি, গত চৌদ্দ বৎসর কাজের লোক রাখিনি। আমার জামাইয়ের চেয়ে আত্মীয় স্বজন অনেক বেশি জ্বালিয়েছে। বাচ্চাদের নিজে পড়িয়েছি, ওদেরকে নিয়ে দুই জনে দৌড়েছি। যখন কলেজে পড়ে তখন তো আর আমি কোনো হেল্প করতে পারি না, কোচিংএ যেতে হতো। সারা দিনে কত বার যে বাইরে যেতাম! প্রতিবেশীরা আমাকে পাগল বলতো, আর জামাইকে বলতো, সাবধান, বউ না হারিয়ে যায়! আমি হারাইনি, মেয়েরাও না। ওরা যতক্ষন পড়তো, পাশে বসে থাকতাম। তার পর মাঝ রাতে জামাইকে সময় দিতাম। নিজের কথা বলার বা ভাবার সময় পাইনি।

ওদের নিরাপত্তার ব্যপারে কোনো গাফলতি করিনি। মেহমান এলে নিজের রুম ছেড়ে দিয়ে ডাইনিং এ ঘুমিয়েছি তবুও ওদের রুম শেয়ার করতে দেইনি। একটু বড় হবার পর ওদের চাচাতো ফুপাতো, পাড়াতো ভাইদের আমার বাসায় আসা নিষেধ ছিলো। এই ব্যপারে জামাইর হেল্পও পেয়েছি। যে কোনো কারনেই হউক না কেনো লোকটা আমার মেয়েদের পড়াশোনায় কখনো বাধা দেয় নি। হয়তো উনার মনেও ডক্টর -ইঞ্জিনিয়ারদের বাবা হবার লোভ ছিল।

আমার বড় মেয়ে যখন ঢাকার বাইরে ডাক্তারি পড়তে যায় তখন কত রকম কথা শুনেছি - মেয়েদের একা একা এতো দূরে পাঠানো ঠিক না, কার না কার পাল্লায় পড়ে, পড়াশোনা করে কি না করে, এতো লেখা পড়া করা মেয়ের জামাইও পাবা না। আমি কারও কথায় কান দেইনি।

মেয়ে যখন ডাক্তার হয়ে ফিরে এসে জানালো --আগামী দুই বৎসরের মধ্যে বিয়ে করবে না, তখনো সমাজ ও তার বাবার রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে তার পাশে আছি। আমার মেঝ মেয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। এখানেও অনেক বাঁধা ছিল, আমি সব বাঁধাকে পায়ে ঠেলে মেয়েকে এগিয়ে দিয়েছি।

ওদেরকে আমি আনন্দময় শৈশব দিতে পারিনি কিন্তু প্রতি রাতে চুমু দিয়ে ঘুম পাড়াতাম, একসাথে সুর করে নামতা, ছড়া পড়াতাম, সারাদিনে কোনো ভুল করে থাকলে স্যরি বলতাম, নিজেকে সব চেয়ে সুখী মনে হতো।
মেয়েদের বিয়ের ব্যপারে কতো জন আমাকে উৎসাহী করার চেষ্টা করেছে, আমি কারো কথায় কান দেইনি। বিবাহিত জীবন সম্পর্কে আমি যা জানি অনেকেই জানে না। আমার যাপিত জীবনের ছিটেফোটাও যেন ওরা না পায়, সেই চেষ্টা আজও করে যাচ্ছি।

আমি ওদেরকে অনেক কিছুই দিতে পারিনি কারন আমার সামর্থ ছিলো না। কিন্তু যা কিছু আমার ছিলো ঢেলে দিয়েছি। মুক্ত আকাশে, মুক্ত বাতাসে শ্বাস নেবার যোগ্য করে গড়ে তুলেছি। বিনিময়ে চাই সময় ওরা সুযোগের স্বদব্যবহার করে নিজেদের পরিপূর্ণ করুক। আমার চৌদ্দ বতসরের মেয়েটি আমাকে নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে। এখন তো মনে হয় ও না থাকলে আমার জীবন অপূর্ণ ই রয়ে যেতো। যখন আমার জামাইর কিছুই ছিলো না তখন শুনতে হতো --কে তোমাদেরকে শেষ বয়সে খাওয়াবে, তোমাদের দাফন বা চল্লিশা কে করবে? এখন তো ওর কিছু সম্পদ হয়েছে, ডক্টরের বাবা হয়েছে। এখন শুনতে হয় তোমাদের দাফন কে করবে? আমি হেসে বলি - আপনারাই করবেন, মরা-পচা গন্ধ তো আপনারাই আগে পাবেন।

****কারো মন্তব্যের উত্তর দিতে পারি নাই। মাফ করবেন। আমার আগের লেখায় যারা মন্তব্য করে আমাকে সাহস যুগিয়েছেন, এগিয়ে যাবার উৎসাহ দিয়েছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ, অনেক অনেক ধন্যবাদ। আর রানা মেহেরকে জানাচ্ছি অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা, যার সহযোগিতা ছাড়া কোনো মতেই আমার কথাগুলো সচলায়তন পর্যন্ত পৌছাতো না। সবার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইল।

- জোছনা


মন্তব্য

এক লহমা এর ছবি

এবারে আর মন্তব্য করতে দেরী করলামনা। আগের বারের মতই এবারেও কুর্নিশ জানাই এবং আকাঙ্ক্ষা জানাই - আপনার স্বপ্ন সফল হোক একটার পর একটা।

এইবারে একটি হাল্কা কথা বলি (তা নইলে কেমনে কি!)
কোন নিকটা ঠিক করলেন - ঝর্ণা নাকি জোছনা? দুইটাই ভালো। যেইটাই ঠিক করবেন, এর পরের লেখাগুলোতে সেইটাকে একটা ক্যাটেগরী হিসেবে জুড়ে দিবেন। ভবিষ্যতে নিজের লেখাগুলি যখন খুঁজবেন কাজে লাগবে।

আর হ্যাঁ, লেখায় ৫ এ ৫ তারা অবশ্যই।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

বন্দনা এর ছবি

আপনার জন্য অনেক শ্রদ্ধা আপু। আশা করি আরো লিখবেন।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এইসব গল্প পড়লে নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী মনে হয় কেবল।

একটা কথা কেউ আমাকে বলুন তো, চারপাশে যে দোপেয়ে জীবগুলো দেখি তার মধ্যে কয় পার্সেন্ট মানুষ আছে?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সুমিমা ইয়াসমিন এর ছবি

আপনি যুদ্ধ করতে শিখেছেন বলেই বিজয়টা ছিনিয়ে আনতে পারবেন।
শুভ কামনা আপনার জন্য এবং আপনার কন্যাদের জন্য।

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

অনেক শুভকামনা রইলো। আপনাদের যুদ্ধগুলো নিয়ে পড়লে মনে হয় কতো সুখে থেকেও 'ভালো নেই' বলে হাহাকার করি!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

রানা মেহের এর ছবি

আরো এগিয়ে যান আপু। আপনার মেয়েরা আপনার মতোই দৃঢ় হোক

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।