ট্রাফিক আইনঃ না মানলে যা ঘটে...

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ৩০/০৬/২০১৫ - ৬:২৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অফিসে যাওয়া আসার জন্য প্রতিদিন আমাকে কয়েক ঘণ্টার মতো রাস্তায় সময় কাটাতে হয়। মানে রাস্তা কিংবা ফুটপাথ দিয়ে হাঁটতে হয়, রাস্তা পার হতে হয়, ওভারব্রিজে উঠতে হয়, বাসে বসে থাকতে হয়। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে সবসময় চেষ্টা করি, যেখানে ওভারব্রিজ আছে সেখানে ব্রিজ দিয়েই রাস্তা পার হতে; ব্রিজ না থাকলে ট্র্যাফিক পুলিশ গাড়ী থামানোর পর রাস্তা পার হতে। আর রাস্তায় নেমে অসচেতন নাগরিকদের কারণে অনেক সময়ই দেখেছি ভয়ংকর কিছু ঘটনা, নিজের সাথেও ঘটেছে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা। তাই অনেকদিন ধরেই ট্র্যাফিক সিগন্যাল মেনে চলার বিষয়ে লিখবো ভাবছিলাম। আজ লিখেই ফেললাম ঘটনাগুলো। এগুলো পড়েও যদি কেউ একটু সচেতন হন...!

১) চার রাস্তার সিগন্যালে বাস দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক যে মুহূর্তে ট্র্যাফিক সার্জেন্ট বিপরীত পাশের যানবাহন থামিয়ে আমাদের যাওয়ার ইংগিত দিলেন, সে মুহূর্তেই বিপরীত পাশ থেকে এক সাইকেলওয়ালা শোঁ শোঁ করে উড়াল দিলো। মানে তার সিগন্যালে থামা চলবে না। যেকোনো মূল্যেই বেরিয়ে পড়তে হবে লাল বাতি থেকে। কিন্তু আমরা চোখের সামনে যেন দেখতে পেলাম একটা এক্সিডেন্ট!

যারা ড্রাইভারের আশেপাশে ছিলাম, সবাই কমবেশি চিৎকার করে উঠলাম, "গেলো গেলো" বলে। কিন্তু ড্রাইভার প্রচণ্ড হার্ড ব্রেক কষলেন। ফলে সাইকেলওয়ালা বেঁচে গেলো ঠিকই, কিন্তু বাসের ভেতর ওলট পালট হয়ে গেলো সবাই। ধুমধাম আছাড়ে পড়লো দাঁড়ানো যাত্রীরা, মাথায় মাথায় ঠুসঠাশ খেলো পাশাপাশি বসা যাত্রীরা।

২) আরেকবার তো আমার উপরেই উঠে পড়তে যাচ্ছিলো এক মোটর বাইকওয়ালা!

যে রাস্তা আমি পার হবো, তার বিপরীত দিকের রাস্তা পুলিশ থামিয়েছে দেখে আমি রাস্তা পার হতে শুরু করেছি, ঠিক সে সময় ঐ রাস্তা থেকে হুঁশ হুঁশ করে বেরিয়ে এলো এক মোটর বাইক। যেহেতু সে পুলিশের সিগন্যাল অমান্য করছে, তাই তার নিয়ত ছিল যত দ্রুত সম্ভব চালিয়ে রাস্তাটা পার হওয়া। কিন্তু সামনে পড়ে গেলাম আমি। নিশ্চিত মৃত্যু দেখলাম যেন! ডানে বামে কোনোদিকেই নড়তে পারছি না, স্রেফ জড় পদার্থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি আর দেখছি বাইকের এগিয়ে আসা।

এমন সময় হার্ড ব্রেক করে বাইকওয়ালাই নিজেকে থামাল। আমিও বাস্তবে ফিরে এসে রাস্তা পার হলাম।

৩) এমন ঘটনা ঘটেছিলো আরেকবার।

আমরা সাধারণত যে রাস্তাটা পার হবো, সে রাস্তায় আসা গাড়ীর দিকে তাকিয়েই অপেক্ষা করতে থাকি যে, কখন গাড়ীগুলো থামানো হবে আর আমরা রাস্তা পার হবো। খুব একটা নিজের পেছন দিকে তাকানো হয় না। কারণ সেটা রঙ ওয়ে। রঙ ওয়ে দিয়ে গাড়ী চালানোর নিয়ম নেই, তার মানে সেদিক দিয়ে কোন গাড়ী আসবে না। তাই নিশ্চিন্ত মনে পেছনে খেয়াল না করেও রাস্তা পার হওয়ার মতো বোকামি আমি করতাম।

একদিন এই বোকামির মাশুল আমাকে দিতে হল। পেছনে খেয়াল না করেই আমি রাস্তা পার হতে গিয়েছিলাম আর আমার সামনের এক মধ্যবয়স্ক লোকের আতংকিত চিৎকার শুনে থমকে দাঁড়ালাম। উনি আমার পেছনে তাকিয়ে চিৎকারটা করেছিলেন। আমিও তখন পেছনে তাকিয়ে দেখলাম, সাঁই করে এক মোটর সাইকেল বেরিয়ে গেলো পাশ ঘেঁষে। এটি আসছিলো রঙ ওয়ে দিয়ে। তাই যদি এক্সিডেন্ট হতো, তাহলে পেছনে না তাকানোর জন্য আমাকে কোন দোষ দেওয়া যেতো না। কিন্তু সেদিন থেকে এটা পরিষ্কার হয়ে গেলো যে, বাংলাদেশে রঙ ওয়ে বলে কিছু নেই। আপনি রঙ ওয়েতে তো নয়ই, রাইট ওয়েতেও নিরাপদ নন।

৪) প্রচণ্ড ব্যস্ত রাস্তায় কিছু অতি সাহসী "বোকা" যানবাহন থামিয়ে রাস্তা পার হয়। ভাবখানা এমন যেন এটা খুব স্মার্টনেস আর সাহসের পরিচয়। কিন্তু এভাবে রাস্তা পার হতে গিয়েই কয়েকমাস আগে মারা যেতে দেখেছি একজন টিপটপ অফিসিয়াল পোশাক পরা স্মার্ট ব্যক্তিকে। মাথা ফেটে রক্তে মাখামাখি হয়ে গিয়েছিলো রাস্তা। নিথর দেহটার পাশে দুজন ট্র্যাফিক সার্জেন্ট ওয়্যারলেস হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাদের হতভম্ব চাহনি এখনো আমার চোখে ভাসে।

৫) ফুটপাথ দিয়ে মোটরবাইকের অবৈধ চলাচল আরেকটি মারাত্মক বিষয়। অন্যদের কেমন অভিজ্ঞতা আছে এই ব্যাপারে, জানি না। তবে আমার সাথে অনেকবার ঘটেছে বিশ্রী এই ব্যাপারটি। ফুটপাথ দিয়ে মনের সুখে হাঁটছি আর কথা নেই বার্তা নেই, হুট করে সামনে বা পেছন দিক থেকে এগিয়ে এলো মোটরবাইকওয়ালা, বিকট শব্দে হর্ন দিতে দিতে। যেন সাইড দিচ্ছি না বলে প্রচণ্ড বিরক্ত!

ফুটপাথ তৈরিই করা হয় রাজপথে হাঁটা এড়িয়ে চলার জন্য। অর্থাৎ পথচারীরা যেন স্বস্তিতে আর নিরাপদে হাঁটতে পারেন, সেজন্য। কিন্তু ঢাকার ফুটপাথ চলাচলকারীদের জন্য মোটেও নিরাপদ নয়। জ্যাম বাঁধলেই আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন যে, মোটরবাইক উঠে আসবে আপনার হাঁটার রাস্তায়।

তাই সবসময় যাদের রাস্তা পার হতে হয় তারা তো বটেই, যারা কালে ভদ্রে রাস্তায় পা দেন, তারাও উপরের ঘটনাগুলো থেকে সাবধানতা শিখে রাখুন! আর যারা সাইকেল কিংবা মোটরবাইক চালান, তাদের প্রতি অনুরোধ রইলো উপরোক্ত পরিস্থিতিগুলো এড়িয়ে চলার জন্য। মনে রাখা দরকার, "একটি দুর্ঘটনা সাড়া জীবনের কান্না" বা সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশী!
....

- নির্ঝর রুথ।


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

ঘ্যাচাং! ইয়ে, মানে...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হুমম... শেষ ঘটনাটির মুখোমুখি হলে আমরা কয়েকবন্ধু আরও ল্যাটা মেরে, হাতে হাত ধরে, পুরা ফুটপাথ বন্ধ করে হাঁটতাম। বেশি প্যাঁ-পোঁ করলে ইঙ্গিতে রাস্তা দেখিয়ে দিতাম। শয়তানী হাসি

(একবার অবশ্য জনৈক 'উগ্র' বাইকার গায়ের ওপর দিয়েই চালিয়ে গেছিলেন। ইয়ে, মানে... )

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আলতাইর এর ছবি

হেহে।।। আমিও এইরাম করি। অনেকবার এইরাম হইছে, পিছন থেকে মোটরবাইকের তীব্র হর্ন আর আমি ফুটপাথের মাঝ দিয়া হেলেদুলে কানে হেডফোন গুঁজে 'তুমি কে বাওয়া' মার্কা একটা ভাব নিয়া হাঁটতেছি। বাইকওয়ালা অতিষ্ঠ। ফুটপাথের দোকানদাররা ৩২পাটি দাঁতের শোকেস খুইলা দিয়া মজা নিতাছে। দেঁতো হাসি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

দেঁতো হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি এতোটা সাহসী হতে পারি না, যদিও অনেকবার চেয়েছি কাজটা করতে।

এক লহমা এর ছবি

লেখার গুরুত্বের জন্য ৫ তারা দাগালাম।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপু!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মোটরসাইকেলের অত্যাচার ও তার প্রতিকার নিয়ে তিন বছর আগে একটা লেখা লিখেছিলাম। প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় সেটার লিঙ্ক দিলাম। যদি সম্ভব হতো তবে ঐ লেখাটা সামান্য সম্পাদনা করে আবার পোস্ট করতাম 'অদম্য মোটরসাইকেল, অপ্রতিরোধ্য বাইসাইকেল' নামে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

পাণ্ডবদা,
আপনার লেখা পড়ে মোটরসাইকেলের ট্রাফিক আইন ভঙ্গের ব্যাপারে বিশদভাবে জানলাম। কেন আইন ভাঙ্গা ইনাদের জন্য সহজ, তাও বুঝলাম। খালি বুঝছি না, আইন ভঙ্গ রোধ করতে কবে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইনাদের দৌরাত্ম্যে তো ফুটপাথ, রাস্তায় টেকাই দায়!

মন মাঝি এর ছবি

এইতো কিছুদিন আগে ফার্ম গেটের কাছে পরস্পর রেসরত দু'টি দ্রুতগামী বাসের চিপা দিয়ে সাঁই করে বেরিয়ে যেতে গিয়ে এক মোটরাবাইক চালক দুই চলন্ত বাসের মাঝখানে চাপা পড়ে ভর্তা হয়ে সাঁই করে পরপারে চলে গেলেন না?

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

এসব ঘটনাকে লোকে ভাবে হাজারে একটা। ভাবে, "আমার সাথে এমন ব্যতিক্রম ঘটবে না।" এটাই সমস্যা!

অতিথি লেখক এর ছবি

ফুটপাতে হাঁটার সময় মোটর বাইকের বিরক্তিকর অভিজ্ঞতা আমারও আছে।এমন ভাবে মোটর বাইক নিয়ে সাঁই সাঁই করে চলে যায় যেন যারা ফুটপাতে হাঁটে তারা মানুষ না
জারাহজেবিন

রানা মেহের এর ছবি

ঢাকার লোকজনদের আমার অশেষ সৌভাগ্যবান মনে হয়।
যেখানে দিনে কয়েকশো অ্যাক্সিডেনট হবার কথা ছিল সেই তুলনায় কিছুই হয়না।

সাইকেল মোটরসাইকেলের আইন না মানার প্রবনতা শুধু ঢাকায় নয় পৃথিবীর সব বড় শহরেই কমন যন্ত্রনা। আমি ঠিক বুঝিনা সাইক্লিস্ট মোটরসাইক্লিস্টরা কেন নিজেদের আইনের উর্দ্ধে ভেবে নেন।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

এক লহমা এর ছবি

পুরো মন্তব্যের সাথে সহমত।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।