পশুর গর্জন

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ২২/০৭/২০১৫ - ১০:৫৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

চৈতির মনে আজ দারুন আনন্দ। জীবনে প্রথমবারের মত স্বাধীনতার স্বাধ পেতে যাচ্ছে। ছোট বেলা থেকে হয় বাবা নয় বড়ভাই এই দুইজনের শাসনে কিছুই করতে পারে নি। স্কুলে পিকনিক হচ্ছে সবাই যাচ্ছে, শুধু চৈতি যাচ্ছে না। কারন বাবা বলেছে যাওয়ার দরকার নেই, নিরাপত্তা ভালো না। বড় হও তখন যেও। তারপর চৈতি বড় হল, কলেজে ভর্তি হল কিন্ত কোন কিছু পরিবর্তন হল না। প্রতিদিন কলেজে যাওয়ার সময় বাবা নামিয়ে দিত আর বিকেলে কলেজ শেষে ভাইয়া বাসায় ফিরিয়ে আনে। যেদিন ভাইয়া ব্যস্ত থাকে সেদিন একেবারে পুঁচকে ছোট ভাইটা ওকে নিয়ে আসত। ওর ভারী মজা লাগত এই ভেবে যে, ক্লাস এইটের ছেলে ওর কি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে। মা বলে তবুও মা সাথে একটা পুরুষ থাকা লাগে, মনে বল আসে, যা দিনকাল পড়েছে।
চৈতি কিছু বলে নি, শুধু অপেক্ষা করেছে একদিন স্বাধীন হবে।
আজকে সেই দিন। বন্ধুদের কাছে কত বইমেলা, পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানের গল্প শুনেছে কিন্তু কখনো যেতে পারে নি। একদিন সাহস করে বের হতে চেয়েছিল, কিন্তু মা ঠিকই বুঝে গেল তাই আর যাওয়া হল না। বিয়ের পরে তাই চৈতির খুব মজা লাগে। যে মানুষটার সাথে বিয়ে হয়েছে সে দারুন মজার। সাকিব বিয়ের পরে গল্প করতে গিয়ে বুঝতে পেরেছে চৈতির অনেক শখ অনেক ইচ্ছে। বলেছে,
তোমার সব শখ পুরন করা হবে। এত পূরন করা হবে যে, শখ ব্যাটা ভয়ে পালিয়ে যাবে। মনে হবে পুরানো দিন তো ভালো ছিল। হা হা।
চৈতি আজ শাড়ী পরেছে, সাকিবের পছন্দ লাল রং। সাকিব লাল, হলুদ আর নীল এই তিন রং ছাড়া অন্য কোন কিছু কিনতে চায় না। বলে তোমাকে সবকিছুতেই ভালো লাগে, তবে এই তিন রং এ সবচেয়ে ভাল লাগে।
ঠিক আছে আমি তো পড়ছি শাড়ী, তুমি কি পরবে।
আমি একটা কিছু পড়ে নিব।
না, আমার পছন্দের পাঞ্জাবীটি পরতে হবে।
ঠিক আছে ম্যাডাম।
চৈতির ইচ্ছে করছে অনেক সাজতে। কৈশোর, তারুন্যের সব সাজ আজ এক সাথে করতে। সাজ শেষে আয়নায় নিজেকে দেখে চমকে উঠল, মাত্রাতিরিক্ত সুন্দর লাগছে। পেছনে ফিরে দেখে, সাকিব হাসছে।
হাসছো কেন?
পরে বলব, আগে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান থেকে বেড়িয়ে আসি।
চৈতি টিএসসিতে পৌছে একটা দারুন আনন্দ বোধ করল। বৈশাখ তো ভারী আনন্দের, রৌদ্র ঝলমল দিনে সুন্দর পোষাক পরা খুব চমৎকার সব মানুষে ভরে আছে পুরো প্রাংগন। এই তাহলে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান, কি মজা কি আনন্দ। সাকিবের হাত ধরে হাটছে আর আশেপাশে দেখছে ও।
কি সুন্দর সাকিব।
তোমার ভাল লাগছে এত ভীড়ের মাঝেও।
হা ভাল লাগছে। তোমাকে বুঝাতে পারব না, আমার কেমন লাগছে। মনে হল স্বাধীন হলাম।
মোটেও স্বাধীন হও নি। তুমি এসেছো আমার সাথে, নিজে যদি একা আস কোন দিন সেদিন হবে আসল স্বাধীন। এক কাজ কর আসল স্বাধীন হও, কিছুক্ষন একা একা ঘুরে বেড়াও। আমি ফোন করে তোমাকে খুঁজে নিব।
শুনুন জনাব, খাঁচার পাখিকে হঠাৎ বনে ছেড়ে দিলে বিপদও হতে পারে। একা সুন্দরী মেয়েকে যদি কেও প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে ফেলে।
সাকিব হেসে ফেলল। তাহলে তো সুন্দরীকে একা ছাড়া যাবে না। তোমার বডিগার্ড তোমার সাথে সাথে থাকছে। নো চিন্তা, ডু ফুর্তি।
আচ্ছা তখন বললে না তো কেন হাসছিলে।
বললাম না, পরে বলব।
হঠাৎ একজন ওদের সামনে এসে সাকিবকে বলল, আপা এত করে বলছে বলে ফেলেন না ভাইজান। আর আপা আপনি বুঝি বুঝেন না ভাইয়া কি চায়। উনি আপনেরে আপ্পা দিবার চায়।
সাকিব বলল, আপনি কে।
বলতে না বলতেই চারদিক থেকে ১০-১৫ টা ছেলে এসে ওদের ঘিরে ধরল। চৈতি শক্ত করে খামচি মরে ধরে আছে সাকিবকে। তিন চারটা ছেলে সাকিবকে ঝাপটে মাটিতে ফেলে দিল। ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দিয়ে বলছে, শালার শালা মাল নিয়ে ঘুরিস, আমাদেরকে ভাগ দে।
আর চার-পাচটা ছেলে চৈতির কাপড় টেনে ছিড়ে ফেলতে চাইছে। এদের বয়স কত হবে, ওর চার পাঁচ বছর ছোট হবে হয়ত। আচ্ছা এদের কি মা নেই, ওদের কি কোন বড় বোন নেই। ওদের পাশবিকতা তীব্র আকার ধারন করছে। প্রায় আব্রুহীন চৈতি চিৎকার করে ডাকছে, বাঁচাও, বাঁচাও।
ছোট খাট একটা জটলা তৈরী হয়েছে। কেও চিনাবাদাম চিবুচ্ছে, কেওবা বন্ধুর কাধে হাত রেখে দেখছে এই ঘটনা। চৈতির চেতনা লোপ পাচ্ছে, দেখতে পেল কেউ একজন আরেকজনকে বলছে, ভিডিও কর, ভিডিও কর, এই জিনিস সহজে পাবি না।
কি লজ্জা। কি লজ্জা। চৈতি হাতের কাছে কিছু পাচ্ছে না নিজেকে ঢেকে দেওয়ার। আকাশে না একটু আগে রোদ ছিল, এমন মেঘলা হয়ে গেল কেন। চারদিক কেমন যেন অন্ধকার শুনশান নিরবতা, শুধু হিংস্র পশুর তীব্র পাশবিক শব্দ শোনা যায়।
তোমরা কি শুনতে পাচ্ছ ওই পশুর ডাক?

বশির মাহমুদ


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

মন খারাপ মন খারাপ

দেবদ্যুতি

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

অনুভূতির জন্য শ্রদ্ধা। তবে আরেকটু সময় নিয়ে লিখলে অনুভূতির তীব্রতা আরো দাগ কেটে যেতো নিশ্চিত। নিয়মিত লিখুন। আরো গল্প চাই। শুভকামনা রইল।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

সচলে স্বাগতম। হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

রানা মেহের এর ছবি

আপনি নিশ্চই এরকম দেখাতে চাননি কিন্তু গল্প পড়ে মনে হতে পারে,
বাবা মা ঠিক করেছেন চৈতিকে কোথাও যেতে না দিয়ে, প্রথমবার গিয়েই বিপদে পড়লোতো।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

অতিথি লেখক এর ছবি

স্বাধীনতার স্বাদ এমন নোনতা ভাবে দিলেন। তবুও ভালো । চমৎকার পুরো গল্পটা
Jaraahzabin

গৌতম হালদার এর ছবি

ভয় হয় এই পশুগুলোর গর্জনে। এগুলো পশুর চেয়েও ভয়ংকর পশু।
শুভকামনা থাকলো আর অপেক্ষায় থাকলাম।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।