কান্তজিউ মন্দির, নয়াবাদ মসজিদ এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চিরায়ত সৌন্দর্য

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ৩১/০৮/২০১৫ - ১:০৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

“এই রূপক ভাই, উঠেন। আরে মিয়া উঠেন না। যমুন সেতু চইলা আইসে তো।“

ক্রমাগত ধাক্কাধাক্কিতে যথেষ্ট বিরক্তি নিয়ে চোখ খুললাম। কিন্তু কিছু বলতেও পারলাম না। বেচারা এই প্রথম এত কাছ থেকে যমুনা সেতু দেখছে, ওর উৎসাহে পানি ঢেলে দেওয়ার তো কোন মানে হয় না।

চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনে চেপে দিনাজপুর যাচ্ছি। কমলাপুর স্টেশন থেকে সকাল ১০ টায় ট্রেন ছেড়েছে। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর স্টেশন পার হওয়ার পর কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না। দিনাজপুর এইবারই প্রথম যাচ্ছি না, তবে আমার সঙ্গীর জন্য সেটা প্রথম। সাধারণত অফিসিয়াল ট্যুরগুলোতে আমরা একাই যাই। এইবার স্পেশাল একটা কাজ নিয়ে দুইজন রওনা দিয়েছি দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে। রাত্রিযাপন হবে দিনাজপুর কিন্তু যেতে হবে ঠাকুরগাঁ, পঞ্চগড় এবং নীলফামারীর বিভিন্ন স্থানে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুবাদে যমুনা সেতুর সাথে পরিচয় বহুদিনের। তাই যমুনা সেতু নিয়ে কোন উচ্ছ্বাসই আমার মাঝে কাজ করছিল না। বাশারে’র ব্যাপারটা ভিন্ন। এর আগে যতবার সে উত্তরবঙ্গ গেছে ততবার গেছে বাসে করে সেটাও আবার রাত্রিতে। মধ্যরাতে ঘুমাবে নাকি সেতু দেখবে? ট্রেন যেহেতু সেতুর উপর দিয়ে খুব ধীরে চলে, তাই ভাল করে একইসাথে সেতু এবং যমুনা নদী দেখা যায়।

কাঁচা ঘুমটা ভেঙে দেওয়ায় আমি যারপরনাই বিরক্ত হয়েছি বুঝতে পেরেই কিনা বাশার বলে উঠল,

“ভাই, মাইন্ড করলেন নাকি? আচ্ছা আপনাকে একটা ১৮+ টেকি জোকস শোনাই। মন ভাল হয়ে যাবে।“

বাচ্চা ছেলে তাঁর বাবাকে জিগ্যেস করল, “আচ্ছা বাবা আমি জন্মেছি কিভাবে?

বাবার উত্তর, “ তোমার আম্মা আর আমি ইয়াহুতে পরিচিত হয়েছি। আমরা ই-মেইলের মাধ্যমে ডাটা ট্রান্সফার করি। এরপর সাইবার ক্যাফেতে দেখা করি। তোমার আম্মা ওখানে আমার হার্ড ডিস্ক স্লটে ঢুকাতে বলে। যে মুহুর্তে আমি আপলোড করবো ঠিক তখনই মনে পড়লো আমাদের কারো ফায়ার ওয়াল ইন্সটল করা নাই, ততক্ষনে ডিলিট চাপার সময়ও শেষ। ৯ মাস পর একটা পপ আপ আসে, ওটা তুমি”

"আপডেটেড জোকস শোনা। এইসব উইন্ডোজ ৯৮ আমলের জোকসের দিন অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।"

বিরক্তি প্রকাশে মোটেও কার্পণ্য করলাম না এইবার। জোকস বলা শেষ করে নিজে নিজেই হাসছিল বাশার। আমার মুখে বিরক্তির অভিব্যক্তি দেখে আর মনে হয় ঘাঁটানোর সাহস পেল না। চুপ করে গেল। আমিও বাঁচলাম।

রাত ৮ টায় পৌঁছুলাম দিনাজপুর। রেলস্টেশনে জোনাল ম্যানেজার, এরিয়া ম্যানেজার সবাই অপেক্ষা করছিল। সোজা হোটেলে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে খাওয়াদাওয়া সারলাম দিনাজপুরের বিখ্যাত রুস্তম হোটেলের গরুর মাংস দিয়ে (আহ, সেইরাম স্বাদ। এখনও মুখে লেগে আছে)। খেতে খেতেই প্ল্যান করে ফেললাম। পরদিন দুপুরে কান্তজীউ মন্দির দেখতে যাব।

বাংলাদেশের বিখ্যাত যে কয়টা প্রাচীন স্থাপত্য এখনও টিকে আছে তাঁর মাঝে কান্তজিউ মন্দির অন্যতম। দিনাজপুর শহর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তরে এবং কাহারোল উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে সুন্দরপুর ইউনিয়নে, দিনাজপুর-তেঁতুলিয়া মহাসড়কের পশ্চিমে ঢেঁপা নদীর তীরে এর অবস্থান। এই মন্দির নির্মিত হয়েছিল শ্রীকৃষ্ণের উদ্দ্যেশে ভক্তি নিবেদনের জন্য। শ্রীকৃষ্ণের মন্দির, এই অর্থে একে বলা হয় কান্তজীউ বা কান্তজীর মন্দির। এই মন্দিরের কারণে এই স্থান কান্তনগর নামে পরিচিত হয়ে উঠে। তাই একে কান্তনগরের মন্দির-ও বলা হয়। এটি নবরত্ন মন্দির নামেও পরিচিত কারণ নির্মাণের সময় তিনতলাবিশিষ্ট এই মন্দিরের নয়টি চূড়া বা রত্ন ছিলো।

উপরের ছবিটি তোলা হয়েছিল ১৮৭১ সালে। ফটোগ্রাফার ছিলেন John Henry Ravenshaw. ১৮৯৭ সালের ১২ জুনের ৮.৭ মাত্রার The Great Indian Earthquake বার্মা, দিল্লি এবং ভুটানের হাজার হাজার বাড়িঘর ধ্বংস করে দিয়েছিল। আমাদের বঙ্গদেশের উপর দিয়েও তাঁর প্রভাব ছিল মারাত্মক। সেই ভূমিকম্পে কান্তজির মন্দিরটিও প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ৯ টি চূড়াই ভেঙে পড়ে। পরবর্তীতে ব্যাপক সংস্কার করা হলেও আগের চেহারায় আর মন্দিরটিকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় নি। সংস্কারের পর মন্দিরের বর্তমান চেহারা দাঁড়িয়েছে নিম্নরূপ।

কান্তজিউ মন্দিরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম দুপুরে খাওয়ার পর। ভাতঘুমটা নষ্ট হওয়ায় খারাপ লাগছিল কিন্তু নতুন কিছু দেখার আনন্দে এইটুকুন সেক্রিফাইস তো করাই যায়। মন্দিরে যাওয়ার জন্য সরাসরি কোন বাহন নেই। একটা অটো ভাড়া করে যাওয়ার চিন্তা করলাম। অটোর ড্রাইভারকে ভাড়া জিগ্যেস করতেই বলল ১০০০ টাকা (আমাদেরকে নতুন ভেবে মদন বানানোর ধান্দা আর কি)। ভাড়া শোনার পর আমরা কোন কথাই বললাম না। রিক্সা নিয়ে সোজা বাসস্ট্যান্ড চলে আসলাম। অটোর ড্রাইভারও বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত রিক্সার পিছন পিছন আসল। শেষে মাত্র ৫০০ টাকায় (!) মন্দির ঘুরিয়ে আনার দুর্দান্ত এক প্যাকেজ আমাদের সামনে উপস্থাপন করল। ভাড়া শুনে প্রথমেই মেজাজ চড়ে গিয়েছিল তাই আমরা তাঁর দুর্দান্ত প্যাকেজটাও ফিরিয়ে দিলাম। বেচারা গজগজ করতে করতে চলে যাওয়ার সময় জানিয়ে গেল এত সস্তায় (!) আর কেউ আমাদের কান্তজিউ মন্দিরে নিয়ে যাবে না। না গেলে নাই। আমাদেরও জেদ চেপে গিয়েছিল। প্রয়োজনে মিগ-২৯ ভাড়া করে মন্দির ঘুরতে যাব কিন্তু ঐ বেটার অটোয় চড়ব না। আমাদের কত খরচ হয়েছিল সেটা পরে বলছি।

দিনাজপুর-পঞ্চগড় হাইওয়েটা দারুন। মসৃণ রাস্তার দুইপাশে উঁচু উঁচু গাছ সটান দাঁড়িয়ে ছায়া দিয়ে যাচ্ছে। সেই রাস্তা ধরে ১০ কিলোমিটার যাওয়ার পরেই আমাদের নামিয়ে দেওয়া হল। এইবার নদী পাড়ি দিতে। নদীর নাম ঢেপা নদী। নদীতে পানি কম থাকলে তাকে যে রুগ্ন দেখায় সেটা আবারও বুঝতে পারলাম। আমরা যখন গিয়েছি তখন নদীর উপর সেতু তৈরির কাজ চলছিল। নদী কিভাবে পার হব সেই নিয়ে অবশ্য একদমই চিন্তা করতে হয় নি। সবাই যেভাবে পার হচ্ছে আমরাও সেভাবেই পার হলাম। নদী পাড়ি দেওয়ার পদ্ধতিটা বেশ ইন্টারেস্টিং। নদীর দু’পাড়ে দুইটা খুঁটি। এই দুই খুঁটিকে সংযোগ দেওয়া হয়েছে নদীর প্রস্থ বরাবর লম্বা একটা দড়ি দিয়ে। নদী পাড়ি দেওয়ার জন্য মাঝিকে বৈঠা বাইতে হয় না। নিউটনের তৃতীয় সুত্র মেনে দড়ি টেনে সে নদী পাড়ি দেয়। ডিজিটাল যুগেও এইরকম এনালগ পদ্ধতির কার্যকারিতা দেখে ভালই লাগলো।

নৌকা থেকে নেমে প্রায় ২০ মিনিট হাঁটবার পর মন্দিরের প্রবেশদ্বারে পৌঁছালাম। প্রবেশদ্বার শুনতে যতটা রাজকীয় শোনায় বাস্তবে ঠিক ততটাই সাধারণ।

মন্দিরের উত্তর দিকের ভিত্তিবেদীর শিলালিপি থেকে জানা যায়, তৎকালীন দিনাজপুরের মহারাজা জমিদার প্রাণনাথ রায় তাঁর শেষ বয়সে ১৭২২ সালে মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এবং তাঁর স্ত্রী রুকমিনির আদেশে পিতার ইচ্ছা পূরণ করার জন্য মহারাজের দত্তকপুত্র মহারাজ রামনাথ ১৭৫২ সালে মন্দিরটির নির্মাণ সম্পন্ন করেন। ১৮৯৭ সালের ভুমিকম্পের পর মহারাজা গিরিজানাথ বাহাদুর ধ্বংস হয়ে যাওয়া নয়টি শিখর বাদে মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেন।

জমকালো পিরামিড আকৃতির মন্দিরটি তিনটি ধাপে উপরে উঠে গিয়েছে এবং তিন ধাপের কোণগুলির উপরে মোট নয়টি অলংকৃত শিখর বা রত্ন রয়েছে যা দেখে মনে হয় যেন একটি উচুঁ ভিত্তির উপর প্রকান্ড অলংকৃত রথ দাঁড়িয়ে আছে। মন্দিরের চারদিকে খোলা খিলান পথ রয়েছে যাতে যে কোন দিক থেকেই পূজারীরা ভেতরের পবিত্র স্থানে রাখা দেবমূর্তিকে দেখতে পায়। বর্গাকৃতির মন্দিরটি একটি আয়তাকার প্রাঙ্গনের উপর স্থাপিত। এর চারদিকে রয়েছে পূজারীদের বসার স্থান যা ঢেউ টিন দ্বারা আচ্ছাদিত।

বর্গাকার প্রধান প্রকোষ্ঠটিকে কেন্দ্র করে সম্পূর্ণ ইমারত নির্মিত হয়েছে। পাথরের ভিত্তির উপর দাঁড়ানো মন্দিরটির উচ্চতা ৫০ ফুটেরও বেশি (ভূমিকম্পের আগে উচ্চতা ছিল ৭০ ফুট)। ধারণা করা হয়, গঙারামপুরের (দিনাজপুর) নিকট বাননগরের প্রাচীর ধ্বংসাবশেষ থেকে নির্মাণ উপকরণ এনে এটি তৈরি করা হয়েছিল। বাইরের দিকে উচুঁ করে তৈরী তিনটি চতুষ্কোণা প্রকোষ্ঠ এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এ ধরণের নকশা কেন্দ্রীয় প্রকোষ্ঠটিকে শক্তিশালী করেছে বিধায় উপরের বিরাট চূড়াটিকে এ প্রকোষ্ঠটির পক্ষে ধারণ করা সম্ভব হয়েছে। মন্দিরের পুরাতন ছবিটি দেখলে ব্যাপারটা বোঝা সহজ হবে। এটিও John Henry Ravenshaw এরই তোলা। কান্তজিউ মন্দিরের পুরাতন দুটি ছবিই online British library-র কল্যাণে পাওয়া।

বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত বাকি আটটি অলংকৃত চূড়া নিচের দু’তলার ছাদের আটটি কোণে সংযোজন করা হয়েছিল। নিচতলার বাঁকা কার্নিস কোণগুলিতে এসে ঝুলে আছে। এর মধ্যভাগ কিছুটা উঁচু হওয়ায় ভিত্তি থেকে উচ্চতা দাড়িয়েছে ২৫ ফুট, যার দ্বিতীয় তলার উচ্চতা ১৫ ফুট এবং তৃতীয় তলার ৬'-৬"। নিচের চারকোণের প্রত্যেকটির সঙ্গে একটি করে ছোট প্রকোষ্ঠ রয়েছে এবং এগুলি দ্বিতীয় তলার উপরে স্থাপিত কারুকার্য খচিত অষ্টকোণাকৃতির কোণের বুরুজগুলির ভর বহন করছে। নিচতলার প্রার্থনা ঘরের চারদিকে মন্দিরে মোট চারটি আয়তাকার বারান্দা আছে। নিচতলার প্রত্যেক দিকের প্রবেশ পথে আছে খাঁজ যুক্ত খিলান। সমৃদ্ধ অলংকরণ যুক্ত দুটি ইটের স্তম্ভ দ্বারা প্রতিটি খিলানকে পৃথক করা হয়েছে। নিচতলার চার প্রকোষ্ঠের বাইরে মোট ২১টি খিলান দরজা আছে, আর দ্বিতীয় তলায় এ খিলান দরজার সংখ্যা ২৭টি। ছোট হয়ে আসা তৃতীয় তলার মাত্র তিনটি প্রবেশ দরজা এবং তিনটি জানালা রয়েছে। পশ্চিম দিকের দ্বিতীয় বারান্দা থেকে ২"-৩" প্রশস্ত সংর্কীণ সিঁড়ি পথ উপরে উঠে গেছে। অন্ধকারাচ্ছন্ন এ প্রবেশ পথ এঁকে বেঁকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় উঠে শেষ হয়েছে।

কান্তজিউ মন্দিরের আসল সৌন্দর্য এর টেরাকোটায়। পুরো মন্দিরে প্রায় ১৫,০০০-এর মতো টেরাকোটা আছে। পাহাড়পুর, শালবন বিহার কিংবা মহাস্থানগড় সবখানেই গিয়েছি কিন্তু বাংলাদেশের আর কোন স্থাপত্যে এত বিশাল পরিমাণ এবং বৈচিত্র্যময় টেরাকোটার ব্যবহার চোখে পড়ে নি। এ সমস্ত পোড়ামাটির ফলক ছিল বড় আকৃতির এবং কিছুটা সেকেলে ধরণের। কিন্তু কান্তনগর মন্দিরের দেওয়াল সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। শিল্পীগণ অত্যন্ত উচ্চমানের পরিশীলিত এবং পরিণত শিল্পের বিকাশ ঘটিয়েছিলেন, যেখানে সমন্বিত ধারায় অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে অলঙ্করণ করা হয়েছিল। মন্দিরের প্রতিটি ইঞ্চিতে পোড়ামাটির ফলক ব্যবহার করা হয়েছে। পোড়ামাটির ফলকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তিনটি পৌরাণিক কাহিনীর (রামায়ন, মহাভারত এবং শ্রীকৃষ্ণের) উপাখ্যান। শুধু তাই নয়, মুঘল বাদশাহদের কিছু কর্মকাণ্ডের ছবিও আছে। পোড়ামাটির এ শিল্পগুলির বিস্ময়কর প্রাচুর্য, মূর্তির গড়ন কোমল ভাব ও সৌন্দর্য এত যত্নের সঙ্গে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যে, বাংলার যে কোন ম্যূরাল চিত্রের চেয়ে তা অনেক উৎকৃষ্ট। কেউ যদি মন্দির দেয়ালের অলংকরণের দৃশ্য যে কোন দিক থেকে গভীর মনোযোগের সঙ্গে দেখেন এবং বিষয়বস্তুকে সমন্বয় করেন, তবে এর বিষয় বৈচিত্র দেখে বিস্ময়ে অভিভূত হতে বাধ্য হবেন।

মন্দিরের ৩ টি ধাপে ৩ ধরণের বিষয়বস্তু ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মন্দিরের বাইরের দেয়ালের পোড়ামাটির অলংকরণের সাধারণ যে চিত্র, তাতে চারদিকের ভিত্তি প্যানেলের নিম্নাংশে চিত্রগুলি সমান্তরাল ভাবে চারটি প্রবেশ পথের দিকে এগিয়ে গেছে। ভিত্তির একটু উপরেই লতা পাতার মধ্যে প্রস্ফুটিত গোলাপ এবং এর বিকল্প হিসেবে কোথাও চারটি ধাতুর পাতে ধাতব প্রলেপযুক্ত ডিজাইন; স্ত্তম্ভের কার্নিসে সমসাময়িক সামাজিক চিত্র ও মাটির খন্ডে তৈরী অভিজাত জমিদারদের শিকারের দৃশ্য এবং উপরের সমান্তরাল প্যানেলে সূক্ষ্ম জটিল অলংকরণের মাঝে প্রস্ফুটিত গোলাপ; যা সাধারণভাবে ষাট গম্বুজ মসজিদ, বাঘা মসজিদ, কুসুম্বা মসজিদ ও ছোট সোনা মসজিদ প্রভৃতির গায়ে লক্ষ্য করা যায়।

দ্বিতীয় ধাপের অলংকরণের উজ্জ্বল নিদর্শনসমূহ হচ্ছে বনের ভেতর শিকার দৃশ্য,হাতি, ঘোড়া, উট সহযোগে রাজকীয় শোভাযাত্রা এবং অভিজাতদের জন্য চমৎকারভাবে তৈরী গরুর গাড়ি। তাদের গায়ে ছিল মুগল পোশাক ও অস্ত্র। সুন্দরভাবে সজ্জিত হাতি এবং ঘোড়া। এদের সঙ্গে যুক্ত রথসমূহ ছিল কারুকার্য সমৃদ্ধ। অলংকৃত পালকিতে গুটিসুটি মেরে বসে থাকা নাদুস-নুদুস দেহের জমিদার, হাতে তার বিলাসী হুক্কা। হুক্কার অন্যদিকে লম্বা নল থেকে ধূঁয়ার কুন্ডুলি ছুড়ছেন। অন্যদিকে নদীর দৃশ্য রয়েছে, যেখানে লোকজনে ঠাসা সর লম্বা নৌকায় সকলে আন্দোৎসবে মগ্ন।

হিন্দু মন্দিরে মোঘলদের চিত্রায়ন বেশ কৌতূহলী করে তুলেছিল আমাকে। সেই কৌতূহল নিবৃত করেছিলেন শ্রী দীনেশ চন্দ্র রায়। পাশেই নয়াবাদ গ্রামে তাঁর বাড়ি। জিগ্যেস করতেই তিনি হড়হড় করে বলতে থাকেন দিনাজপুরের মহারাজা প্রাণনাথের কথা। প্রাণনাথ স্বপ্নে আদেশ পান কৃষ্ণ মন্দির গড়ার। তিনি তখন অনুমতির জন্য যান দিল্লীর সম্রাট আকবরের কাছে। তার ভাষায়, ‘উনি তখন মন্দির করার হুকুম দেন। দান সাহায্য করেন। শুরু হয় কান্তজীর মন্দিরের কাজ। এই কারণে মন্দিরের গায়ে মোঘলদের কাজকারবার কিছুটা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। দিনেশদা’র ভাষ্যমতে মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল আরও আগে, ১৭০৪ সালে। রেফারেন্স জানতে চাইলে হেসে বললেন, ঠাকুরদা “বইলে গ্যাসেন”।

তৃতীয় ধাপের অলঙ্করণে রয়েছে পৌরাণিক কাহিনীর চিত্রণ। এখানে লৌকিকভাবে কৃষ্ণর প্রতিকৃতি তৈরী করা হয়েছে। এ পর্যায়ের পোড়ামাটির অলঙ্করণে রয়েছে দানব রাজা কংস কিশোর কৃষ্ণকে বধ করতে উদ্ধত; কৃষ্ণ কর্তৃক রাক্ষস পাতনা এবং সারস গলার দানব বাকাসুর হত্যা; গোবর্ধন পার্বতকে উপরে ফেলে কেশি হত্যা; স্বর্প দানব কালিয়াকে দমন এবং লম্বা সরু নৌকায় কৃষ্ণের আনন্দ ভ্রমণ ইত্যাদি। মন্দিরের দক্ষিণ মুখে কিছু বিভ্রান্তকর দৃশ্যসহ রামায়ণের কাহিনী ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। রামায়ণের কাহিনীর চিত্র পূর্ব প্রান্তের সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এখানে পঞ্চবটীর বনে রাম চন্দ্র, সীতা ও লক্ষণের বনবাসের রুপায়ণ রয়েছে, সূর্পনখার নাকে আঘাতরত লক্ষণ, দন্ডকের বন থেকে রাবন কর্তৃক সীতা অপহরণ; রাবণের রথকে বাঁধা প্রদানে জটায়ুর ব্যর্থ প্রচেষ্টা, অশোক বনে সীতার বন্দি জীবন; কিশকিন্দিয়ার সিংহাসনের জন্য বালী এবং বানর অনুসারী সহ সুগ্রীভের যুদ্ধ। এছাড়াও আকর্ষণীয় ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রাম চন্দ্রের সপ্ততলা বেদ এবং বানর অনুসারীসহ রামচন্দ্রের সঙ্গে আলাপ আলোচনায় রত সুগ্রীভ।

উত্তর দিকের প্রতিমূর্তিগুলির মধ্যে প্রাধান্য বিস্তার করেছিল কৃষ্ণ বলরাম। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কৃষ্ণের বিভিন্ন বিয়ের ছবি; গোয়ালিনী দন্ডের দু্ই মাথায় ঝোলানো শিকায় (পাটের ঝোলা) দুধ ও দৈ বহন করে নিয়ে যাচ্ছে। অলঙ্করণের দ্বিতীয় ধাপে একটি আকর্ষণীয় ইউরোপীয় যুদ্ধ জাহাজ খোদিত হয়েছে। এখানে সূক্ষ্ম ও বিস্তারিতভাবে দৃশ্যমান রয়েছে সৈনিক এবং কামান। পশ্চিম দিকের পুরো অংশেই তৃতীয় ধাপের সূক্ষ্ম অলঙ্করণে কৃষ্ণ কাহিনীর বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। এ অলঙ্করণ শেষ হয়েছে মধুরার দানব রাজা কংসকে হত্যার মধ্য দিয়ে। এখানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কংসের দানবাকৃতির খুনে হাতি কবল্লপীড়ার ধ্বংস, মথুরায় কংসের সঙ্গে দ্বন্দ্ব যুদ্ধে কৃষ্ণকে অংশগ্রহণে বিরত করতে না পেরে রাধার জ্ঞান হারানো। বহু খাঁজ বিশিষ্ট খিলানের স্প্যান্ড্রিলের উপরে সম্প্রসারিত প্যানেলে চমৎকারভাবে দৃশ্যমান করা হয়েছে মহাকাব্যগুলির প্রাণবন্ত যুদ্ধের দৃশ্যাবলি। এতে আরও দেখানো হয়েছে একটি বৃত্তের ভেতর নৃত্যরত রাধাকৃষ্ণের যুগল মূর্তিসহ রস-মন্ডল ও এর সাথে অন্যান্য সহায়ক মূর্তি। কুরুক্ষেত্র ও লঙ্কার প্রচন্ড যুদ্ধের দৃশ্যাবলি রুপায়নে স্থানীয় লোকশিল্পীদের কল্পনা ও প্রচুর প্রাণশক্তির প্রকাশ ঘটেছে।

কান্তজীর মন্দিরের চমৎকার পোড়ামাটির অলঙ্করণের একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দিক হলো যে, এতে কামদ দৃশ্যাবলির চিত্র অঙ্কন করা হয়নি, যেমনটি দেখা যায় উড়িষ্যা ও দক্ষিণ ভারতীয় মন্দিরসমূহে। এখানে দেবতাদেরকে কামুক চরিত্র থেকে মানবিক চরিত্রকে অধিক প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

কান্তজির মন্দিরে কেবল যে কৃষ্ণের পুজা হয় তাই নয়। এখানে শিবের পূজাও হয়। মূল মন্দিরের পাশেই একটা ছোট শিব মন্দিরও আছে। সিঁড়ির নিচে জলের আধার। সেখানে পা ভিজিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করতে হয়।

পূজারীদের চালার বাইরে প্রধান মন্দিরের প্রায় ১০০ গজ দূরে আগাছায় ছাওয়া একটি এক চূড়া বিশিষ্ট ছোট ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দির রয়েছে। প্রচলিত ধারণা মতে মহারাজ প্রাণনাথ ১৭০৪ সালে মন্দিরটি তৈরি করে এখানে কৃষ্ণের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। এটি সাময়িকভাবে বৃন্দাবন থেকে আনা হয়েছিল। নবরত্ন মন্দির তৈরি সমাপ্ত হলে এ মূর্তিটি এখানে স্থানান্তর করা হয়। এটি এখন একটি পরিত্যক্ত দেবালয়। ৪০ ফুট উচ্চতা এবং ১৬ পার্শ্ব সম্বলিত সৌধ নিয়ে নির্মিত মন্দিরটির দক্ষিণ দিকে প্রবেশ পথে ছিল বহু খাঁজবিশিষ্ট খিলান।

মন্দির থেকে যখন বের হয়েছি তখন সন্ধ্যা হয় হয়। দীনেশ’দা কে জিগ্যেস করলাম মসজিদ পাব কোথায়? তখনই প্রথম নয়াবাদ মসজিদের কথা শুনলাম। কান্তজিউ মন্দির নির্মাণের কাছাকাছি সময়েই নয়াবাদ মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই মন্দির এবং মসজিদ একই নির্মাতাদের হাতে তৈরি হয়েছিল। শুনে আমাদের আনন্দ তো আর বাঁধ মানে না। এ যে দেখছি এক টিকিটে দুই সিনেমা দেখার মতন এক ভ্রমণে দুই ঐতিহাসিক জায়গা দর্শন। এখান থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরত্ব। অতএব হাঁটা দিলাম। মসজিদে যখন পৌঁছুলাম তখন মাগরিবের আজান হচ্ছিল। চারদিক গোধূলির আলোয় রাঙা। অস্তগামী সূর্যের আলোয় ঐতিহাসিক মসজিদটিকে কেমন জানি অপার্থিব লাগছিল। ছোট্ট মসজিদটিতে ইতিহাসের ছোঁয়া আছে বলেই হয়ত এমন অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছিল মনে।

মসজিদের প্রবেশের প্রধান দরজার উপর স্থাপিত ফলক হতে জানা যায় এটি সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের রাজত্ব কালে ২ জৈষ্ঠ্য, ১২০০ বঙ্গাব্দে (ইংরেজি ১৭৯৩ সালে) নির্মান করা হয়। সেসময় জমিদার ছিলেন রাজা বৈদ্যনাথ। যিনি ছিলেন দিনাজপুর রাজ পরিবারের সর্বশেষ বংশধর। ১৮ শতকের মাঝামাঝিতে কান্তনগর মন্দির তৈরির কাজে আগত মুসলমান স্থপতি ও কর্মীরা এই মসজিদটি তৈরি করেন। তারা পশ্চিমের কোন দেশ থেকে এসে নয়াবাদে বসবাস শুরু করে এবং তাদের নিজেদের ব্যবহারের জন্য মসজিদটি তৈরি করেন।

তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদের চার কোনে ১২.৪৫ মিটার x ৫.৫ মিটার আকারের চারটি অষ্টভুজ মিনার রয়েছে। দেয়ালগুলির পুরুত্ব ১.১০ মিটার। উত্তর ও দক্ষিণের দেয়ালে একটি করে জানালা রয়েছে। পশ্চিম পাশের দেয়ালে মোট তিনটি মিম্বার রয়েছে যেগুলি মসজিদের তিনটি প্রবেশ দরজা বরাবর তৈরি করা হয়েছে। মাঝের মিম্বারটি আকারে বড় (উচ্চতা ২৩০ মিটার এবং প্রস্থ্য ১.০৮ মিটার) এবং অপর দুটি মিম্বার একই আকারের।

মসজিদটা তৈরির সময় যে সকল টেরাকেটা বা পোড়ামাটির কারুকার্য ব্যবহার করা হয়েছিল তার অধিকাশংই এখন নেই এবং যেগুলি রয়েছে সেগুলিও সম্পূর্ণ অক্ষত নেই। এখানে বর্তমান মোট ১০৪টি টেরাকোটা অবশিষ্ট রয়েছে। এগুলি আয়তক্ষেত্রাকার এবং আকার ০.৪০ মিটার x ০.৩০ মিটার।

মসজিদটির পাশে একটি কবর রয়েছে। তবে কবর বা মসজিদে কোন অংশেই এটি সম্পর্কিত কোন তথ্য দেয়া নেই। সাধারণ লোকজনের ধারণা এটি কান্তজিউ মন্দির এবং নয়াবাদ মসজিদের প্রধান স্থপতি কালু খানের কবর। তবে আসল সত্যটা আমরা কোনদিনই জানতে পারব না।

আপনারা হয়ত ভাবছেন শিরোনামের সাথে লেখার সম্পর্ক কোথায়? ৩০০ বছর আগেও আমাদের এই দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কত চমৎকার ছিল তারই নিদর্শন এই কান্তজিউ মন্দির আর নয়াবাদ মসজিদ। মুঘল বাদশাহের পৃষ্ঠপোষকতা ছিল এই মন্দিরের নির্মাণে। মন্দিরের স্থপতি ছিলেন মুসলিম। পূজারী সহ বেশিরভাগ গ্রামবাসী ছিলেন হিন্দু। মন্দিরের কারিগররা কৃষ্ণনগর থেকে এসে এখানেই থেকে গিয়েছিলেন। তাঁদের জন্য ছিল মসজিদ। ঈদ কিংবা পূজায় কাছাকাছি অবস্থিত এই দুই উপাসনালয় মুখরিত হত। যার যার জায়গা থেকে নিজ নিজ ধর্মীয় আচার পালন করত। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের সৌন্দর্য তো এই পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়াতেই। আজ সময় এগুচ্ছে আর আমরা পেছনের দিকে যাচ্ছি।

ফিরবার পথে আবার দিনেশদা’র সাথে দেখা হয়ে গেল। বললেন,”ও দাদা, কীর্তন না শুনেই চলে গেলেন।“

“কীর্তন কখন হয়।?”

“ঠিক নাই।“

“দাদা, আমরা তো বিদেশী। আবার কবে আসব ঠিক নাই। আপনিই একটু গেয়ে শোনান না।“

দিনেশদা’র মুখে লজ্জা ভর করল। ভাবলাম গাইবেন না তিনি। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হঠাতই গেয়ে উঠলেন,

বৃন্দাবনের সেই সুরে মন হল উদাসী
কংশ রাজার দর্পনাশন থাকেন মথুরাতে
রাধার বুকে প্রেম কাঁদে তাঁর আখির যমুনাতে
প্রেমের নদীর কৃষ্ণ নামের সাগর জলে মেশে
কত সাধের হারামনি পাব সে কোন দেশে
বলে দাও প্রানের ঠাকুর।

আমরা তন্ময় হয়ে শুনতে থাকি। মাথার উপর বড় অশ্বথ বৃক্ষের ডালগুলো হাওয়ায় দুলতে থাকে। সেই হাওয়া আমাদের শরীরে আগমনী শীতের বার্তা শোনাতে থাকে। নীড়ে ফেরা পাখিরা ডানা ঝাপটায়। সময়ের পেন্ডুলাম তাঁর যাত্রা থামিয়ে আমাদের সঙ্গ দেয়। আমাদের উদাস ভাব আর কাটে না।

বিঃদ্রঃ সন্ধ্যা হয়ে যাওয়াও নয়াবাদ মসজিদের ছবিগুলো ক্যামেরায় তুলতে পারি নি তাই শেষের ছবি ৩ টির জন্য গুগলের সাহায্য নিতে হয়েছে। তবে মন্দিরের ছবিগুলো আমার নিজের তোলা। আর হ্যাঁ, পুরো যাত্রায় আমাদের খরচ পড়েছিল মাত্র ১৫০ টাকা।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক


মন্তব্য

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১। কান্তজীউ মন্দির নির্মিত হয়েছে ১৭০৪-১৭২২ সালে। ঐ সময় মুঘল সম্রাটরা ছিল আওরঙ্গযেব > প্রথম বাহাদুর শাহ্‌ > ফর্‌রুখশিয়ার > রাফিউল দারজাত > রাফিউল দৌলত > নিকুশিয়ার > মুহাম্মাদ ইব্রাহিম > মুহাম্মাদ শাহ্‌ রঙ্গীলা। ১৭০৪-১৭০৭ সালে ক্ষমতায় ছিল আওরঙ্গযেব, যার পক্ষে বাংলা মুলুকে হিন্দু মন্দির নির্মাণে অর্থ সাহায্য করার ব্যাপারটা কষ্ট কল্পনা বলতেও কষ্ট হয়। আওরঙ্গযেবের পরে মুঘল সাম্রাজ্যে সিংহাসন নিয়ে যে খেয়োখেয়ি শুরু হয় সেটা ১৮ বছরে ৮ জন সম্রাটের নাম থেকে বোধগম্য। এইসব সম্রাটরা নিজের জান আর গদি টেকাতেই ব্যস্ত ছিল। উল্লেখযোগ্য কোন সমাজসেবা বা উন্নয়নমূলক কাজ এদের দিয়ে হয়নি। সময়কালটাকে ১৭৫২ পর্যন্ত টানলে এই তালিকায় আর একজন মুঘল সম্রাটের নাম যুক্ত হয় - আহ্‌মাদ শাহ্‌ বাহাদুর। কিন্তু তাতে আগের ব্যাপারটার কোন হেরফের হয় না।

২। নৌকা চালানোর ক্ষেত্রে নিউটনের তৃতীয় সূত্রের ব্যবহার বুঝতে পারিনি। এখানে দেখা যাচ্ছে দড়ি ধরে টেনে নৌকা চালানো হচ্ছে। আমরা জানি নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রানুযায়ী, বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার তার উপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং ভরবেগের পরিবর্তনের অভিমুখ প্রযুক্ত বলের অভিমুখেই হবে। এতে নৌকা চালনায় নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র ব্যবহৃত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

৩। বকাসুরকে বধ করেছিল ভীম, কৃষ্ণ নয়। পাতনা নয় পুতনা, বাকাসুর নয় বকাসুর, কালিয়া নয় কালীয়, কিশকিন্দিয়া নয় কিষ্যিন্ধ্যা, সুগ্রীভ নয় সুগ্রীব। ভুলের ধরন দেখে মনে হয় ইংলিশ বানান দেখে তার বাংলা ট্রান্সলিটারেশন করেছেন। কংস যে 'দানব রাজা' এই তথ্য কোথা থেকে পেলেন?

৪।

কান্তজীর মন্দিরের চমৎকার পোড়ামাটির অলঙ্করণের একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দিক হলো যে, এতে কামদ দৃশ্যাবলির চিত্র অঙ্কন করা হয়নি, যেমনটি দেখা যায় উড়িষ্যা ও দক্ষিণ ভারতীয় মন্দিরসমূহে। এখানে দেবতাদেরকে কামুক চরিত্র থেকে মানবিক চরিত্রকে অধিক প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

এই অনুচ্ছেদটা পড়ে হতভম্ভ হয়ে গেছি। 'কামদ' শব্দটার মানে কী জানেন? কামদ মানে হচ্ছে যিনি অভীষ্ট ফল প্রদান করেন। ধরে নিলাম আপনি কামজ লিখতে গিয়ে কামদ লিখে ফেলেছেন। ধরে নিলাম উড়িষ্যার মন্দির বলতে কোনার্কের মন্দির বোঝাচ্ছেন। দক্ষিণ ভারতের মন্দির বলতে কোন্‌ মন্দির বুঝিয়েছেন? খাজুরাহো? কিন্তু সেটা তো মধ্য প্রদেশে, দক্ষিণ ভারতে নয়। তো কোনার্ক বা খাজুরাহোতে দেবতাদের কামুক চরিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে! ওগুলো দেখে এই বুঝলেন! আর 'কাম' কি 'অমানবিক' ব্যাপার?

৫। কান্তজীউর মন্দিরের কাজ শেষ হয়েছে ১৭২২ সালে, আর নয়াবাদ মসজিদ হয়েছে তার ৭১ বছর পরে ১৭৯৩ সালে। সুতরাং একই গ্রুপ অভ ক্রাফটসম্যান দিয়ে কি এই দুটো কাজ হওয়া সম্ভব? ১৭২২-এর জায়গায় আপনার বলা ১৭৫২ ধরলেও সময়ের পার্থক্য হয় ৪১ বছর। ব্যাপারটা তবুও সম্ভবপর হয় না।

ইতিহাসকে ঘুঁটা দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে নজির দেখাতে চাইলেন সেটা স্রেফ কষ্ট কল্পনা।

ছবি ভালো লেগেছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

শুরুতেই তথ্যগত ভুলগুলো ধরিয়ে দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি পাণ্ডব'দা। আপনার প্রশ্নের উত্তরগুলো দেওয়ার চেষ্টা করছি।

১। কান্তজীর মন্দিরের নির্মাণকাল বিবেচনায় আমি উইকিপিডিয়ার রেফারেন্স ব্যবহার করেছি। আর মোঘল বাদশাহদের পৃষ্ঠপোষকতার ব্যাপারটা স্থানীয় গাইড দীনেশদা'র মুখ থেকে শোনা। স্বীকার করছি এইখানে রেফারেন্সের ব্যাপারটা শোনা কথার সাথে বই বা অনলাইন থেকে ক্রস চেক করে নেওয়া উচিৎ ছিল। আপনার মন্তব্যের পর একটু ঘাটাঘাটি করে মোঘল বংশলতিকা পেয়ে ভুলটা ধরতে পেরেছি।

২। এইটা নিউটনের দ্বিতীয় সুত্রই হবে, তৃতীয় না। লিখবার সময় খেয়াল করি নি, এখন চোখে পড়ল।

৩। মহাভারত কিংবা রামায়ন নিয়ে আমার পড়াশোনা কম। সাধারণত প্রয়োজনের সময় ইন্টারনেট ঘেঁটে যা পাই তাই লিখি। এই লেখাতেও সেটাই হয়েছে।

৪। 'কামদ' শব্দের অর্থ জানা ছিল না, 'কামজ' বোঝাতে চেয়েছিলাম। আসলে 'মানবিক' বা অমানবিক এইভাবে চিন্তা করি নি। প্রাচীন মন্দিরগুলোতে এইসব কামকলার চিত্রায়ন খুব স্বাভাবিক, তার সাথে তুলনা করলে কান্তজীর মন্দিরে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে নি। এই যে সাধারণ থেকে একটু আলাদা, সেই বিষয়টাকেই বোঝাতে চেয়েছিলাম।

৫। এই ব্যাপারটাও স্থানীয় লোকদের কাছ থেকেই শোনা যেটা আমি লেখায় উল্লেখ করেছি। বিশ্লেষণ করি নি বলেই হয়ত বছরের অসামঞ্জস্যতা চোখ এড়িয়ে গেছে।

৬। ১৭০০ সালের পরবর্তী সময়ের মোঘল বাদশাহেরা সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তি লালন করতেন জানি, কিন্তু যতদূর জানি সেসময়কার সাধারণ বাংলাদেশীরা এতটা সাম্প্রদায়িক ছিলেন না। ব্যক্তিগতভাবে আমি সবসময় পজিটিভ মানসিকতা নিয়ে চলতে পছন্দ করি। তাই পাশাপাশি মন্দির আর মসজিদ দেখে সম্প্রীতির ব্যাপারটাই আগে মাথায় এসেছে।

৭। ছবি ভাল লেগেছে শুনে খুশি হয়েছি। হাসি

শেষ কথাঃ সচলায়তনে লেখার মজাটা এইখানেই, ভুলগুলো খুব সহজেই ধরা পড়ে। এর পরেরবার থেকে কোন ঐতিহাসিক স্থান নিয়ে ভ্রমণ কাহিনী লিখলে আরও সতর্ক হব। পড়াশোনার পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। পরের লেখাটা পুঠিয়া রাজবাড়ি নিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে আছে (এই মাসেই ঘুরে আসলাম)। আশা করছি সেইখানে তথ্যগত ভুল অনেক কম থাকবে।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

এরকম মন্তব্যের জন্য সচলায়তন সচলায়তন হয়ে ওঠে। এরকম মন্তব্যের জন্য লেখকের হাত পোক্ত হয়।

এরকম মন্তব্যের জন্য মন্তব্যদাতাকে মাসোহারা দেয়া উচিত!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি লেখক এর ছবি

এরকম মন্তব্যের জন্য মন্তব্যদাতাকে মাসোহারা দেয়া উচিত!

সহমত। হাততালি

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

স্যাম এর ছবি

এই প্রস্তাবে সবরকম সমর্থন জানাইলাম।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সমর্থকদের কাছ থেকে কি টেকাটুকা পাওয়া যাবে?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ধ্রুব আলম এর ছবি

গুরু গুরু ভয়ঙ্কর মন্তব্য! এবং অসাধারণ মন্তব্য! এইল্লাইগাই কিছু লেখার আগে সোর্স চেক করে নেই, আপ্নের কথা মাথায় রেখে! আরেকটা সেলাম গুরু গুরু

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সারছে! লোকে লেখার আগেই যদি আমার করা মন্তব্যের ভয়ে থাকে তাহলে তো বিপদ। সেক্ষেত্রে তো কেউ কেউ ভয়ে লেখাটাই লিখবে না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মিলু এর ছবি

গুরু গুরু
হতভম্ব

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

পাণ্ডবদার চমৎকার বিশ্লেষণী মন্তব্যের পর লেখকের কাছ থেকে উত্তর প্রত্যাশা করছি। এছাড়া বানান ভুলগুলোও ঠিক করে নেয়া দরকার। আর তথ্যগত ভুলগুলো আলোচনার মাধ্যমে হয় লেখায়, অথবা মন্তব্যে ঠিক করে দেয়া উচিত।

লেখার মূল থিমের সাথে একমত হতে না পারলেও ছবিগুলো ভালো লেগেছে। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

ছবিগুলো ভাল লেগেছে শুনে খুশি হলাম। হাসি বানানের ব্যাপারে আরও সতর্ক হতে চেষ্টা করব। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

হাসিব এর ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি একটা জীর্ণবচন। বাংলা ও আশপাশের অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কখনোই ছিল না। সাম্প্রদায়িক টানাপোড়েন বিটউইন দ‍্য গ্রুপ এবং এ‍্যাক্রোস দ‍্য গ্রুপ দুই পর্যায়েই ছিল। পান্ডবদার মন্তব‍্যেই উত্তরের অপেক্ষায় থাকলাম।

অতিথি লেখক এর ছবি

পাণ্ডবদা'র মন্তব্যেই উত্তর দিতে চেষ্টা করলাম। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

নজমুল আলবাব এর ছবি

পাণ্ডবদার মন্তব্য এই পোস্টের বড় প্রাপ্তি। আপনি ভালো লিখেন, পরের লেখায় আরও যত্নবান হবেন আশাকরি। তখন আর এমন ভ্রান্তি থাকবেনা। চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

ইতিহাস বিষয়ক পোস্টগুলো নিয়ে লেখার আগে আরও পড়াশোনা করতে হবে। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

লেখায় ঐতিহাসিক বিষয়বস্তু ব্যবহারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। কোন এক দীনেশ চন্দ্র রায় কিছু একটা বললেই সেটা লেখার মধ্যে ব্যবহার করলে কি ভজঘট হয় দেখুন- দীনেশ বাবুর বক্তব্য অনুযায়ী মহারাজা প্রাণনাথ স্বপ্নে কৃষ্ণ মন্দির গড়ার আদেশপ্রাপ্ত হয়ে অনুমতির জন্য যান দিল্লীর সম্রাট আকবরের কাছে। তো সম্রাট আকবর যেহেতু পটল তুলেছেন ১৬০৫ সালে, তাহলে ধরে নিতে হয় প্রাণনাথ অন্ততপক্ষে ১৬০৫ সালে আকবরের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করতে গিয়েছিলেন। অতঃপর মহানুভব আকবর অনুমতি প্রদানের প্রায় একশ বছর পর ১৭০৪ সালে প্রাণনাথ মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন। আকবরের সাথে সাক্ষাৎের সময় প্রাণনাথের বয়স যদি ত্রিশ বছরও হয়ে থাকে, তাহলে তিনি প্রায় ১৩০ বছর বয়সে মন্দির নির্মাণের কাজ শুর করেন এবং কমবেশি ১৫০ বছর বয়সে তাঁর অকাল প্রয়ান হয়। সে হিসাবে তিনি সর্বাধিক দীর্ঘজীবী বাঙালি হিসেবে অনায়াসে বিবেচিত হতে পারেন।
মন্দির গাত্রে সমসাময়িক সমাজ জীবনের কিছু চিত্রও সন্নিবেশিত হয়েছে, যেমন- পর্তুগীজ জলদস্যুদের কাহিনী, লেখা এবং ছবিতে তার উল্লেখ থাকলে ভাল হত।

সত্যপীর এর ছবি

মন্দির গাত্রে সমসাময়িক সমাজ জীবনের কিছু চিত্রও সন্নিবেশিত হয়েছে, যেমন- পর্তুগীজ জলদস্যুদের কাহিনী, লেখা এবং ছবিতে তার উল্লেখ থাকলে ভাল হত।

খাইছে কন কি। এইটা নিয়া দুইটা লাইন দেন, পড়ার বাসনা। হুগলি কলকাতা চিটাগাং সুন্দরবন আরাকান এইসব জায়গা ছাড়া পর্তুগীজ মামুদের ঘটনা জানা মুস্কিল, হেতেরা দিনাজপুরে কি করে?

..................................................................
#Banshibir.

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

বাংলায় বেশ কিছু মন্দিরে টেরাকোটার টালি ব্যবহার করে বিভিন্ন কাহিনী, ঘটনাবলী, দৃশ্যাবলী, ধর্মীয় বানী, ইত্যাদির চিত্রায়ন হয়েছে। সে সবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পৌরানিক বা ধর্মীয় বিষয়বস্তু প্রাধান্য পেলেও কোন কোন ক্ষেত্রে সমসাময়িক বিষয়াদিও স্থান লাভ করেছে। কান্তজিউর মন্দির তেমনি একটি মন্দির, এখানে পৌরানিক বিষয়বস্তুর বাইরে সমসাময়িক রাজা বাদশা, এমনকি পর্তুগীজ জলদস্যুদেরও তুলে ধরা হয়েছে।
পর্তুগীজ জলদস্যুরা হয়ত দিনাজপুর অবধি হানা দিতে পারে নি, কিন্তু কোন কোন সময় তারা ঢাকা ময়মনসিংহ ছাড়িয়ে পাবনা বগুড়া অবধি চলে যেত। তাদের দুর্বৃত্তপনার সেসব কাহিনী পল্লবিত হয়ে দিনাজপুরেও নিশ্চয়ই পৌঁছে গিয়েছিল, যেমনটা পৌঁছে গিয়েছিল হুগলী বন্দর থেকে বহু দূরের বিষ্ণুপুর অঞ্চলে। তাই কান্তজীর মত বিষ্ণুপুরের শ্যাম-রাইয়ের মন্দির গাত্রেও রয়েছে পর্তুগীজ দস্যুদের কাহিনী সম্বলিত টেরাকোটার টালি।

সত্যপীর এর ছবি

মারাত্মক কথা। ছবিটবি আছে নাকি?

অন্য কারো কাছে ছবি থাকলেও আওয়াজ দিয়েন ভাই।

..................................................................
#Banshibir.

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

হ্যাঁ, ছবিও আছে, কোথায় আপলোড করি বলতে পারেন?

হাসিব এর ছবি
আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

কয়েকটি মন্দিরে পর্তুগিজদের পোড়ামাটির ফলকের ছবি দেয়ার চেষ্টা করা গেল। প্রথমটি বরানগর, দ্বিতীয়টি মালঞ্চ, তৃতীয়টি সুখোরিয়া, চতুর্থ এবং পঞ্চমটি ঝিকিরা, ষষ্ঠটি বিষ্ণুপুর এবং সপ্তমটি কান্তজীর মন্দিরের।

১।[img][/img]

২।[img][/img]

৩।[img][/img]

৪।[img][/img]

৫।[img][/img]

৬।[img][/img]

৭।

সত্যপীর এর ছবি

প্রত্যেকটাই অসাধারন, কিন্তু কান্তজীর মন্দিরের যুদ্ধজাহাজের ছবিতে একবারে একশোতে একশো! মাল্টিডেক নাও, তলায় কামান ফিট করা। দুইটা বা তিনটা মাস্তুল মনে হইতেছে, এইটা খুব বড় যুদ্ধজাহাজই হওয়ার কথা। আমার সীমিত জ্ঞানে মনে হইতেছে এইটা গ্যালিয়ন নাও। গভীর সমুদ্রের জাহাজ। দিনাজপুরের চিপায় এই জাহাজ ঢুকার কথা না, মন্দিরের শিল্পী এই জাহাজ কোন বড় বন্দরে দেখছিলেন মনে হয়।

আপনাকে ছবির জন্য উত্তম জাঝা।

..................................................................
#Banshibir.

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এটা কোন জাহাজ সেটা যদি আমরা সিস্টেমেটিকভাবে চিন্তা করি তাহলে ব্যাপারটা এমন দাঁড়ায়ঃ

১। যে শিল্পী এটা এনগ্রেভ করেছেন সেটা তিনি নিজ অভিজ্ঞতা থেকে করেছেন বলে ধারণা করা যায়। আগের কারো শিল্পকর্ম থেকে কপি করার ব্যাপার হলে এমনতর শিল্পকর্ম বাংলার আরও অনেক জায়গায় পাওয়া যেতো।

২। নির্মাণকাল থেকে ধারণা করা যায় শিল্পীর অভিজ্ঞতা সপ্তদশ শতকের শেষ ভাগের। সপ্তদশ শতকের শেষ ভাগের হলে এটা কারাভেলা হতে পারে না। কারণ ততোদিনে কারাভেলার ব্যবহার কমে গেছে। তাছাড়া কারাভেলা পর্তুগাল থেকে ইউরোপের উপকূলীয় সমুদ্রসমূহ, উত্তর আটলান্টিক আর পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলের চলার উপযুক্ত। এবং কারাভেলা দীর্ঘ যাত্রা ও বড় যুদ্ধের উপযুক্ত নয়।

৩। এটা কি কারাক? হতে পারে। কারণ, এর বো আর স্টার্ন দুটোই কারাকের মতো উঁচু। তাছাড়া ওয়াটারলাইনের উপরে কারাকের সুপারস্ট্রাকচার গ্যালেইও'র চেয়ে বেশি উঁচু হয়। কারাকও মাল্টিডেক হতে পারে যেখানে লোয়ারডেকে কামান বসান থাকতে পারে। যেমন ভাস্কো দা গামা'র 'সাও গাব্রিয়েল' বা আলফনসো দে আলবুকার্কের 'ফ্রল দে লা মার'। এই জাহাজটার ওয়াটারলাইনের উপরের সুপারস্ট্রাকচার কারাকের মতো উঁচু বলে মনে হচ্ছে।

৪। এটা কি গ্যালেইও? সেই সম্ভাবনা বেশি। কারণ, স্টার্নে একটা স্কয়ার গ্যালারি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু গ্যালেইও'র অন্যতম বৈশিষ্ট্য লম্বা বীক্‌ দেখা যাচ্ছে না। এটা একটু সন্দেহ তৈরি করছে। মাস্তুলগুলো দেখলে আরও ভালোভাবে বোঝা যেতো। আবার ওয়াটারলাইনের উপরের সুপারস্ট্রাকচার উঁচু বলে সেটাও সন্দেহ তৈরি করছে। গ্যালেইও'র ওয়াটারলাইনের উপরের সুপারস্ট্রাকচার নিচু বলে সহজে বাতাসের বাধা কাটিয়ে দ্রুত চলতে পারতো। কিন্তু নির্মাণ বা ব্যবহারের সময়ের হিসেব যদি করি তাহলে এটা গ্যালেইওই হয়। কারণ, পর্তুগীজ ইন্ডিয়ান আর্মাডা ততোদিনে পুরো মাত্রায় গ্যালেইও বানানো ও ব্যবহার করা শুরু করে দিয়েছিল।

৫। শিল্পকর্মটির জাহাজটির গ্যালেইও থেকে বিচ্যুতির কারণ সম্ভবত শিল্পী নিজের কিছু কল্পনা এখানে মিশিয়েছেন। ময়ুরপঙ্খী নৌকার মতো করে ফোরক্যাসেল তৈরি করায় লম্বা বীক্‌ বাদ পড়েছে। শক্তিশালী জাহাজ বোঝাতে সুপারস্ট্রাকচার উঁচু করেছেন।

সুতরাং আমার হিসেব অনুযায়ী এটা গ্যালেইও'ই হয়। সত্যপীরের অনুমান সঠিক।
Quod Erat Demonstrandum


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাইরে ভাই, এত জানেন ক্যামনে? অ্যাঁ

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

পাণ্ডব দা,

উপরে সত্যপীরের জন্য দেয়া মন্তব্যে একটি দারুণ জার্নালের লিঙ্ক দেয়া আছে, আগে না পড়ে থাকলে পড়ে দেখতে পারেন।

সত্যপীর এর ছবি

Galleon এর পর্তুগীজ/স্প্যানিশ উচ্চারণ গ্যালেইও নাকি?

২, ৩, ৪। কারাক বনাম গ্যালিয়নের গিয়াঞ্জাম ভালো লাগছে। কারাভেল নয় এটা, আপনি যেমন বলেছেন। আমি এইখানে দেখেছিলাম যে পর্তুগীজ কারাক সাইজে বিশাল এবং চড়া দামের হত, অন্তত যে সময়ের কথা হচ্ছে সেই সময় আসতে আসতে। গ্যালিয়ন ছিল দামে সস্তা (তিনটা কারাকের দামে পাঁচটা গ্যালিয়ন হয়) এবং কারাকের তুলনায় অনেক বেশি সশস্ত্র। এইটা গ্যালিয়ন হওয়াই যুক্তিযুক্ত।

৫। এইটা দারুণ বলছেন। শিল্পীর স্বাধীনতা এবং জাহাজের নাকে লম্বা বীকের বদলে ময়ূরপঙ্খী ঢেউ, এইটা আগে ভাবিনাই। তবে, নিচে আব্দুল্লাহ ভাইয়ের রাজবলহাট এবং কালনা ছবি দুইটা দেখেন। এইগুলাতেও ময়ূরপঙ্খী ঢেউ, কাহিনিটা কী?

জার্নালটা পড়ি নাই অবশ্য এখনো, রাতে পড়তে হবে।

..................................................................
#Banshibir.

সাইদ এর ছবি

ইংরেজি galleon পর্তুগীজ galeão উচ্চারণ গ্যালিয়াও।

সত্যপীর এর ছবি

বুঝলাম বস। অনেক ধন্যবাদ।

..................................................................
#Banshibir.

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

বাঁশবেড়িয়া, কালনা এবং রাজবলহাট মদিরের আরও তিনটা ছবি দিলাম। নিশ্চিত নই, তবে সময়কাল অনুযায়ী এগুলোও পর্তুগীজ জাহাজ হওয়ার কথা। এইখানে অসাধারন একটা প্রাসঙ্গিক জার্নাল আছে। পড়ে দারুণ মজা পাবেন বলে আশা রাখি। এখানকার ছবি তিনটি ছাড়াও ওখানে আরও অনেকগুলো মূল্যবান ছবি আছে।


রাজবলহাট

কালনা

বাঁশবেড়িয়া

ধ্রুব আলম এর ছবি

আমার একটা অফটপিক প্রশ্ন আছে। বাংলাদেশে পর্তুগিজ কানেকশন বা তাদের বংশধর বলে কি কিছু নেই? তাদের শব্দই বা বাংলায় এত কম কেন?

আরেকটি অফটপিক ছোট্ট তথ্য, যা আমার ব্রাজিলিয়ান বান্ধবীর থেকে জানতে পেরেছি, পর্তুগিজরা মোটেই এখন আনারসকে আনানাস বলে না! এটি খুবই অপ্রচলিত শব্দ। মনে হয় আগে একসময়ে, বা শুধু নাবিকরাই এই শব্দটি ব্যবহার করতো। আবার পর্তুগিজ ও স্প্যানিশ খুব কাছাকাছি ভাষা, তাই স্প্যানিশ বন্ধুদেরও জিজ্ঞেস করলাম। তারাও আর আনানাস বলে না! তবে দুভাষাতেই শব্দটি আছে!

সাইদ এর ছবি

@ধ্রুব আলম
ব্রাজিলিয়ানরা আনানাস নাও বলতে পারে, কিন্তু পর্তুগীজরা আনানাস বলে না, এটা সঠিক নয়। কারণ হল ব্রাজিলিয়ান পর্তুগীজ আর পর্তুগালের পর্তুগীজ কালের বিবর্তনে অনেক পরিবর্তিত।আপনি পর্তুগালে কখনো এসে থাকলে যেকোন ফলের দোকানে আনারস কে ananás লেখা দখবেন।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

বাংলায় পর্তুগিজদের বংশধর খুব একটা কম নাই, বিশেষতঃ দক্ষিন ও মধ্য বাংলায়। কিন্তু এখন তাদের আর আলাদা ভাবে শনাক্ত করার উপায় নাই, হয়ত দরকারও নাই। ভারতে তারা এসেছিল গায়ের জোরে খ্রীষ্ট ধর্মের বীজ বপন করতে, আর মশলার বানিজ্য থেকে আরবদের হটিয়ে দিয়ে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। তাদের প্রথম উদ্দেশ্য বলতে গেলে ব্যর্থই হয়েছিল, দ্বিতীয় উদ্দেশ্য প্রাথমিক ভাবে সফল হলেও পরে ডাচরা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। আর পর্তুগীজরা ধীরে ধীরে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছে দস্যুতার জগতে। মগ দস্যুদের সাথে মিলে মধ্য ও দক্ষিন বাংলায় তারা কায়েম করেছিল ভয়ঙ্কর এক ত্রাসের রাজত্ব। তাদের হাতে কত নারীর সম্ভ্রম হানি ঘটেছে, কত পুরুষের জীবনহানি ঘটেছে, কত শিশু হয়েছে ছিন্নমূল, তার কোন ইয়ত্তা নাই। বাংলার অগনিত নারী পুরুষ শিশুদের তারা ধরে নিয়ে গিয়ে দাস-দাসী হিসেবে বিক্রি করেছে ভারত ও পৃথিবীর নানা প্রান্তে।
কিন্তু তাদের হিংস্র, পাশবিক ও বেপরোয়া সেই সব কর্মকাণ্ডের একটি অন্য দিকও আছে। তাদের কারনে মানব সভ্যতায়ই যোগ হয়েছিল নতুন এক মাত্রা। তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরন করে ইউরোপের অন্যান্য দেশের অধিবাসীরা জাহাজ নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল এ বিশ্বের অসীম জলরাশিতে।

ভারতবর্ষের মানুষ পর্তুগিজদের হাতেই সর্বপ্রথম দেখেছিল কামান, পিস্তল, কার্তুজ। আবার বাংলা তথা ভারতীয় ভাষায় ছাপার অক্ষরে প্রথম বইটি প্রকাশ করেছিল পর্তুগীজরাই। ভারতে দুধ প্রচুর ছিল, ছানাও। কিন্তু সেই ছানা থেকে মিষ্টি বানাতে শিখিয়েছিল সেই পর্তুগীজরাই, এখনকার প্রচলিত ছানার মিস্টি তাদেরই অবদান।

বাঙ্গালীরা সঙ্গত কারনেই পর্তুগিজদের আপন করে নিতে পারে নাই। কিন্তু নিম্নোক্ত দ্রব্য কিংবা শব্দগুলো পর্তুগিজদের কল্যানেই এদেশে প্রচলিত হয়েছে-
পেঁপে, পেয়ারা, জামরুল, আনারস, আতাফল, আলু, মিস্টি আলু, মিস্টি কুমড়া, সফেদা, বাদাম, সাবু, চা, কেক, বিস্কুট, তামাক, সাবান, জানালা, আলমারী, বেহালা, বালতি, তোয়ালে, বোতাম, মাস্তুল, ইস্ত্রি, আলপিন, তুফান, বজরা, কামান, পিস্তল, কার্তুজ, লোকলস্কর, আয়া, বাসন, বোতল, কামিজ, বাস্প, আলকাতরা, পিপে, নোনা, বয়া, কাকাতুয়া, গারদ, গির্জা, ছাপা, কোচ, ফর্মা, নিলাম, চাবি, কম্পাস, ফিতা, নিলাম, গুদাম, লন্ঠন, পেরেক, আচার, সায়া, বারান্দা, ইস্পাত, কম্পাস, কামরা, বরগা, ইত্যাদি।

সত্যপীর এর ছবি

চলুক

ছানা থেকে মিষ্টি বানাতে শিখিয়েছিল সেই পর্তুগীজরাই, এখনকার প্রচলিত ছানার মিস্টি তাদেরই অবদান।

আমি অবশ্য পড়ছিলাম দুধের মধ্যে লেবু/অ্যাসিডিক তরল দিয়া ছানা তৈয়ারের পদ্ধতি ১০০ ভাগ খাঁটি পর্তুগীজ আমদানি কিনা তা নিয়া তর্ক আছে। তবে তর্কের উর্ধে যেইটা সত্য সেটা হইল পর্তুগীজেরা বাংলায় তথা তৎকালীন ভারতের মানুষকে হাতে ধইরা ইয়োরোপীয় কায়দায় বেকিং শিখাইছে। কেক পেস্ট্রি রুটি বেক করার পশ্চিমা পদ্ধতি তাদের আগে এইখানে আসেনাই।

দুনিয়া বড়ই অদ্ভুত। আমি আমার দুই বছরের মেয়েকে দোকানে রুটি দেখায় যখন জিজ্ঞেস করি মামা এটা কি বলোতো...সে মাথা নেড়ে বলে পাউ-রুটি! এই খাবারের নাম যে পাউ এইটা আমার মেয়ের এক পূর্বপুরুষকে কয়েকশ বছর আগে শিখায় দিয়ে গেছে দূর দেশ পর্তুগালের কোন এক ঘরছাড়া মানুষ। সেই মানুষেরা লং গন, কিন্তু আমি আমার মেয়েকে পৃথিবীর আরেক প্রান্তে শিখাচ্ছি তাদের শিখিয়ে দিয়ে যাওয়া পর্তুগীজ শব্দ। এইটাকেই বলে লিগেসি।

..................................................................
#Banshibir.

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

ছোটবেলায় আমার এক সবজান্তা দোস্ত বলেছিল- বাসা বাড়ীতে তো রুটি বানায় হাত দিয়া। কিন্তু কারখানায় ময়দার ঢেলা পাও দিয়া পাড়ায়া পাড়ায়া সাইজ করা হয়, সেই জন্য ঐ রুটির নাম পাওরুটি। তত্ত্বটা অনেকদিন পর্যন্ত ধারন করে রেখেছিলাম।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

উপরে পর্তুগীজদের আনা দ্রব্যের তালিকার মাঝে অতি গুরুত্বপূর্ণ লঙ্কা মরিচের নামটা বাদ পড়ে গেছে। বস্তুতপক্ষে লঙ্কা মরিচ আর ছানার মিষ্টান্ন, দুটিরই সুত্রপাতের ইতিহাস বাঙ্গালীর জন্য বেশ হৃদয় বিদারক। পর্তুগীজদের আসার আগে আমরা কাঁচা মরিচে কুট্টুস করে কামড় দিতে পারতাম না, আর রসগোল্লা নামক হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসার এই মিষ্টিরও তখন অস্তিত্ব ছিল না, এ কথা কি কভু মেনে নেয়া যায়?

প্রাচীন কাল থেকেই গোদুগ্ধ এবং তার স্বাভাবিক উপজাত ননী, মাখন, ঘি, ক্ষীর, ভারতীয় মানুষ তো মানুষ, দেবতাদের মাঝেও অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিন্তু ছানাকে দুধের নষ্ট পরিণতি হিসেবেই বিবেচনা করা হত এবং শাস্ত্রকার মনু একে পরিত্যাজ্য বলে বিধান দিয়ে গেছেন। সে কারনে হিন্দু যুগে ভারতের কোথাও ছানার মিষ্টির কোন উল্লেখ দেখা যায় না। মোগল, পাঠান, তুর্কীদের পছন্দও অন্যরকম, সেখানে ছানার স্থান নাই।

পর্তুগীজদের মধ্যে কেউ কেউ ব্যবসায়ে মনোনিবেশের চেষ্টা করেছিল। বাংলার বন্দর গঞ্জে পর্তুগীজ ময়রারা কেক প্যাস্ট্রি এবং ছানার তৈরি নানারকম মিষ্টি তৈরি করে দোকান খুলে বসেছিল। কিন্তু পর্তুগীজদের ব্যবসা ভাগ্যও বোধ হয় মন্দ, তাই শাস্ত্রে নিষিদ্ধ ছানার তৈরি মিষ্টি, তাতে আবার ম্লেচ্ছ খ্রিষ্টানদের হাতের ছোঁয়া, অতএব ব্যবসায়ে লালবাত্তি। অবশ্য সেই মিষ্টি আবার একেবারে এক কথায় ফেলেও দিতে পারে নি, বাঙালি ময়রারা তা নিয়ে নিয়ে নানা রকম পরিক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে গেছে। তারই ফলশ্রুতিতে কালে কালে বাঙ্গালীর পাতে উঠে এসেছে নানা স্থানের অজস্র নামের মনভোলানো মিষ্টি।

অতিথি লেখক এর ছবি

উত্তম জাঝা! উত্তম জাঝা! উত্তম জাঝা!

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

অতিথি লেখক এর ছবি

পুরো মন্দির জুড়েই তো ছবির ছড়াছড়ি। কোনটা রেখে কোনটা বলি বলুন?

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

জীবনযুদ্ধ এর ছবি

লেখাটি পরার সময় যে কয়টি জায়গায় খটকা লাগছিলো, নিচে নেমে মন্তব্যের ঘরে দেখলাম পান্ডবদা সেগুলোর সব কটিতেই আলোকপাত করেছেন। এ ধরনের লেখা আরও আসুক। লেখা এবং এমন শাণিত মন্তব্যের মধ্য দিয়েই উন্মোচিত হবে নতুন কিছু।

ছবিগুলো ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

ধ্রুব আলম এর ছবি

আপনার লেখা সবসময়ই ভাল লাগে, হয়ত নিজের পায়ের তলায়ও সর্ষে আছে আর অনেক কিছু দেখতে পারিনি, কিন্তু দেখার ইচ্ছে আছে বলে। এ লেখাটিও চমৎকার লেগেছে, সাথে ছবিগুলো, কিন্তু সাথে কিছু তথ্য নিয়ে সন্দেহও ছিলো, পাণ্ডবদা তার সবই তুলে ধরেছেন।

তথ্য উপস্থাপনের সময় আরেকটু খেয়াল করে নিলে ভাল হতো। একটা সাজেশন বা উপদেশ দিতে পারি, তথ্যের জন্যে গুগল করুন, এরপরে নিচে লিঙ্কসহ রিসোর্স জুড়ে দিন। নিজে গবেষণাপত্র লেখি বলে হয়তো এমনটা বললাম। আর একটা কথা হচ্ছে, যে তথ্যগুলো আপনি গাইড থেকে শুনেছেন, বা কেউ বলেছে, সেগুলোকে 'কথিত আছে' বা 'অমুকে বলেছিলেন' বলে কোট করুন। তাহলে ভুল হোক, সঠিক হোক, দায়টা আপনার নয়। পরে মন্তব্যে এসে, বা লেখাটি সম্পাদনা দিলেন না হয়। যা হোক, আরো ঘুরতে থাকুন, লিখতে থাকুন, দমে না গিয়ে। অনিচ্ছাকৃত ভুলে সমস্যা নেই, ঠিক করে নিবেন সময় সুযোগমত।

*আর অসাম্প্রদায়িক নিয়ে কিছু না বলি, বাংলাদেশকে আমার কখনোই তেমন মনে হয়নি, কখনো ছিলোও না বলে মনে হয়, আমার ক্ষুদ্র ইতিহাসপঠিত জ্ঞানের উপর ভিত্তি করেই বললাম।*

অতিথি লেখক এর ছবি

পরেরবার থেকে তথ্যের ব্যাপারে সতর্ক হয়ে যাব। উৎসাহমূলক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।