মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীর জামদানী পরিধান এবং জামদানী নিয়ে কিছু ছুটকা কথা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ২৬/০১/২০১৬ - ৯:২৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমাদের মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জামদানী শাড়ি ব্যবহার করতে পছন্দ করেন- এটা নতুন কোন তথ্য নয়। আবার আমাদের ভূতপূর্ব ফাস্র্টলেডি এবং বর্তমানের বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশান এরশাদ এরও জামদানী, বেনারসী শাড়ির প্রতি আলাদা টান ছিলো বলে শোনা যায়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া জামদানী না বেনারশী নাকি টাঙ্গাইল শাড়ি পছন্দ করতেন বা করেন সেরকম কোন সংবাদ শোনা যায় না। তবে তাঁর পরিধানে বরাবরই জরজেট শাড়ি দেখা যায় বলে আমরা ধারনা করতে পারি তিনি সেটাই পছন্দ করেন। সে দিক দিয়ে দেখলে বর্তমান মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী অনেক বেশি দেশজ! অনেক বেশি পারিবারিক আবহের!! (এইটা তেল না। প্রশংসা মাত্র)
পত্রিকা মারফত মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীর একখানা ছবি দেখে আমি বেশ আপ্লুত হইছি। ছবিখানা দেখেন।

এই ছবিখানা দেখে জামদানী বিষয়ে আমার দু’কথা লিখতে ইচ্ছা করলো।
একটু পুরান কথা শোনাই। একটা সময় ছিলো যখন নারীরা জামদানী বয়ন করতে পারত না। এর বড় কারণ জামদানীর বয়ন কৌশলসহ এর পুরো প্রক্রিয়াটা মেয়েদের সাথে সাথে অন্যের কাছে চলে যেতে পারে। আমাদের প্রথা হচ্ছে, বিয়ের পর নারীরা “পরের” বাড়ি যায়। তাই জামদানী বয়ন শিল্পী সমাজের ধারণা ছিলো, মেয়েদের এই বিদ্যা শেখালে তারা সেই বিদ্যাটা স্বামীর বাড়ি নিয়ে গিয়ে তাদের ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষতি করবে। একই কারণে অন্য গ্রাম বা পরিবার থেকে ছেলের বিয়ে দিয়ে আনা বউও কিন্তু কাজটা শিখতে পারতো না। একই ভয়। বউ বাপের বাড়িতে এটা শিখিয়ে দিতে পারে। এটা খুবই বাস্তবসম্মত ভীতি ছিলো বলেই আমার মনে হয়। (এর সাথে নারীদের ছোট করা কিংবা পুরুষতান্ত্রিক প্রভাবের গল্প ফাদা যাবে না) তবে বর্তমানে এই চিত্রটা পাল্টেছে। ২০০৮ সালে একটা ডকুমেন্টারি বানাইতে গেছিলাম জামদানী নিয়া। বানাইছিও তিন কাহন নামে। সেইটা বানাইতে গিয়া এবং পরবর্তীতে জামদানী এবং বাংলাদেশের তাঁত শিল্প নিয়া একখানা ব্যাপক বড় মাপের গবেষণার কাজ করতে গিয়া আমি মেলা জ্ঞান অর্জন করছিলাম। কিছু উল্লেখ করি। নারীদের জামদানী বয়নের ঘটনা শুরুর ইতিহাসটা আমি ব্যক্তিগত ভাবে পাইছি মোটামুটি পাকিস্তান আমল থেকে। তারপরে ১৯৭০ এবং ১৯৮৮ এর প্রবল জলচ্ছাসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুরযোগ এবং অর্থনৈতিক দূরাবস্থা আর নগর কেন্দ্রিক বিভিন্ন বুটিক হাউজের তথাকথিত আধুনিক চিন্তা নারীদের এই কাজে সম্পৃক্ত হবার হার বাড়িয়ে দেয় (তথাকথিত শব্দটার মাজেজা পরে বুঝবেন)। তাছাড়া জামদানী শিল্পীদের এমন অনেক পরিবার ছিলো, যাদের পুত্রসন্তান ছিলো না। কিন্তু জামদানী বয়ন করেই তাদের জীবীকা নির্বাহ করতে হতো। তারাও তাদের মেয়ে সন্তানদের জামদানী বস্ত্র বয়ন শেখানোতে উৎসাহী হয়ে পরে বাস্তবসম্মত কারণেই। তো এভাবেই নারীরা জামদানী বয়নের সাথে প্রবলভাবে যুক্ত হয়ে পরে। তিন কাহন (থ্রি স্টোরি) বানাইছিলাম এইরকম তিনজন নারীর কাহিনী নিয়ে যারা মূলত জামদানীকে অবলম্বন করেই এখন স্বাবলম্বী এবং “ওস্তাদ” শিল্পী হিসেবে এলাকায় চিহ্নিত। এই রকম আরো অনেক নারী এখন জামদানী শিল্পে “ওস্তাদ” হিসেবে পুরুষদের পাশাপাশি কাজ করে চলেছেন। যেটা আমার শুধু নয়, আমাদের সবার জন্য একটা সুখবর।
জামদানীর নকশা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বলা হয়, নকশাতেই জামদানীর আভিজাত্য। এটা বিবি রাসেল হইতে শুরু কইরা আমিও কই। তবে জামদানীর আদি নকশাগুলার বারোটা বাজাইছে নগর কেন্দ্রিক বুটিক হাউজগুলা নানা রকমের ফান্টা তুইলা। কিন্তু প্রবীণ জামদানী শিল্পী বা কারিগরদের সাথে কথা কইলে বুঝবেন, তারা ভীষণ চ্যাতা এইসব বুটিক হাউজের উপর। কারণ কী? মূল কারণ, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত নগরের বুটিক হাউজের চাকুরিজীবী ডিজাইনাররা যে কাজটা করছে সেটা হচ্ছে, কনটেক্সট না বুইঝা পুরান ডিজাইনগুলোকে নিজেদের ইচ্ছা মতোন ঝালাই করছে! যেটা জামদানী শিল্পীরা মাইনা নিতে পারেন নাই। আবার অনেকেই যেটা করেছে, নিজেদের ইচ্ছা মতো ডিজাইন বানায়া তার সাথে পুরান ডিজাইনগুলার ঘুটনি দিয়া একখান তিন নাম্বার ডিজাইন তৈরি করেছে। যেগুলা খুব বেশিদিন টেকে নাই। এই তথাকথিত নিরীক্ষার ফলে যেটা হইছে, তাঁতীগো নিরবিচ্ছিন্ন নকশা তৈরির যে পরম্পরা আছিলো সেটা ধ্বইসা গেছে। একটা কথা কইয়া রাখি। যারা চারুশিল্প বিষয়টা বোঝেন তারা সহজেই বুঝবেন, ডিজাইন তৈরি হয় ক্যামনে। পৃথিবীর সব চারুশিল্পীই কিন্তু ভালো ডিজাইন তৈয়ার করতে পারেন না। যোগো প্রকৃতির সাথে যোগাযোগ আছে, প্রকৃতির রহস্য খুঁইজ্যা দেখনের চোখ আছে তাদের মাথা থেকেই ভালো ডিজাইন বাইর হয়। আর অন্যরা যা করে সেইসব ডিজাইন নিয়া ঘষামাজা করে নতুন কিছু করে। দুইটারই দরকার আছে। কিন্তু “মাথাওয়ালা” মানুষগুলারে ডিসটার্ব করলে মৌলিক জিনিস বাইর হয় না। জামদানী ডিজাইনেও তাই হইছে। আমি শেষ একজন শিল্পীর নাম শুনছিলাম- আলী মাস্তান নামে। শুনছি, এই মাস্তান সাহেবই শেষ প্রজন্মের মানুষ যিনি “নিজের মাথা খাটায়া” নকশা তুলতেন জামদানীতে। এই মাথা খাটায়া ডিজাইন তোলা মানুষগুলার পর নগরের প্রভাবে বা বলা চলে চাকুরিজীবী ডিজাইনারগো প্রভাবে কিছু “ফাঁকিবাজ” তাঁতি সময় আর শ্রম বাঁচাইতে গিয়া মৌলিক কিছু তো করেই নাই, জামদানীর ঐতিহ্যবাহী ডিজাইনগুলারে সস্তা বানাইছে। এখন নাকি শহরে সেইগুলাই চলে জামদানীর নকশা হিসেবে! আমার কান্দন আসে। আপনি যদি আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগের ডিজাইনও কখনো কোথাও দেইখা থাকেন বুঝবেন পার্থক্যটা। না দেখলে আমার কথা বোঝার কোন উপায় আপনার নাই। এটা বুকে হাত দিয়া কইতে পারি। সেই অপশনও খুব যে পাইবেন তাও না। কারণ, ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগ আমাদের সামাজিক ইতিহাসের মৌলিক উপাদানগুলারে ধ্বংস করছিলো প্রথমবার। আর ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিগো হাতে বাকিটা ধ্বংস হইছে। যাও আছিলো সেগুলা এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনার মতো ঘটনার কারণে ধ্বংস হইতেছে। আর আমরা দিনে দিনে আন্ধারে তলাইয়া যাইতেছি। আমি আমার প্রায় ৫ বছর ফিল্ডওয়ার্ক কালে মহেশ্বরপাশা জমিদারবাড়ির একজন বংশধরের সন্ধান পাইছিলাম, যিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের স্বনামধন্য মাস্টার। শুনছিলাম তাঁর বাসায় পুরনো অনেক কালেকশন আছে- জামদানী, টাঙ্গাইল শাড়ির। দেখা কইরা আমার ইচ্ছার কথা বলতেই ভদ্রলোকের মুখ কালি হয়ে গেছিলো। আমারে খুব কষ্ট কইরা কইলেন- ’৭১ সালে তাঁর ঠাকুরমার প্রায় খান চল্লিশেক শাড়ি পুড়াইছিলো পাকিরা। প্রায় শ’খানেক ভড়ি সোনার গহনাও তারা নিয়া গেছে। এখন আর কিছু নাই। যাইহোক, লাইনে আসি।
বলছিলাম যে আমাদের মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী জামদানী শাড়ি ব্যবহার করেন। তা তাঁর পরনে যে জামদানীখানা শোভা পাইতেছে সেইখানার নকশা ব্যবচ্ছেদ করলেই আপনারা বুঝবেন, আমি এতক্ষণ যা কইছি তা সত্য না বানোয়াট। প্রধানমন্ত্রীর পরনের এই শাড়ির পাইরের ডিজাইনের নাম “কুশি” (অন্য কোন নামও বলতে পারে কেউ কেউ। এর কারণ জামদানী বয়ন অঞ্চলে এক গ্রাম পরে নকশার নাম বদল হয়ে যেতে পারে। সেটাই সম্ভব বেশি। আমি এই নামটা পেয়েছি- দক্ষিণ রূপসী গ্রাম থেকে) আর জমিনের ডিজাইন “ঝুমকা”। এটি আবার “কুশি ডবল” পাইর। মানে কুশি পাইরকে দুইবার বোনা হয়েছে। আর একটা ছবি দেখেন। এটা কুশি পাইর (সিঙ্গেল)।

জিওমেট্রিক ডিজাইনটা এইরকম আরকি। দুইটা পাইরের ভেতরের ছোট ছোট উপাদানগুলোর ভিন্নতা রয়েছে। এই ভিন্নতার কারণে নামের পরিবর্তন হয়। ডাবল পাইর বোনার প্রচলন আগেও ছিলো এখনো আছে।
একটা কথা বলে রাখি। লোকায়ত জ্ঞান নিয়ে নানাধরনের ছেলেখেলা হয় আমাদের দেশে। সম্ভবত পৃথিবীর সব দেশেই হয়। তবে অনেকে জেনেশুনে করে আর আমরা না জেনে করি। পার্থক্য এইটাই। না জেনে ছেলেখেলার বড় নেতিবাচক দিক হচ্ছে, ধিরে ধিরে এই বিশেষ বিদ্যাটা ধ্বংশ হয়ে যায়। অথবা তার গুরুত্ব হারায়। টাঙ্গাইল অঞ্চলেও এখন জামদানী তৈরি হয়! সেটা বিক্রিও হয় টাঙ্গাইল জামদানী নামে। মানুষে কেনেও! আমি বলছি না এটা বন্ধ করতে হবে। বলছি, যেটা জামদানী নয় সেটাকে জামদানী হিসেবে বিক্রি করাটা একধরনের করাপশন। এই করাপশনটা করা হচ্ছে জেনেশুনে। জামদানীকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কারণ যে অল্পকিছু শিল্প এখনো আমাদের প্রতিনিধিত্ব করে তার মধ্যে জামদানী অন্যতম। উন্নয়নের নামে, ডেভেলপমেন্টের নামে আর মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে এটা নিয়ে ছেলেখেলা বন্ধ করতে হবে। ডেভেলপমেন্টের ফান্টা যে কোন “উন্নয়ন” ঘটায় না সেটা জামদানী শিল্প আর পাহাড়িদের জীবনযাত্রা দেখলেই বোঝা যায়। হ্যাঁ, বড় বড় অভিজাত বুটিক হাউজে আপনি চোখ ধাধানো মনমাতানো জামদানী দেখবেন। কিনবেনও অনেক দামে। কিন্তু তার ভেতরে কত পরিবর্তনের কাহিনী যে লেখা আছে সেটা আপনি জানেন না। শুনে রাখুন, আপনি যে দামে বুটিক হাউজ থেকে জামদানী কেনেন তার অরধেকও তাঁতিরা পায় না। বিশ্বাস না হলে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। এটাই অবাধ বাজারের মূল ফান্টা। জামদানী বাঁচাতে আবেগের চাইতে যুক্তি দিয়ে ভাবতে হবে। বাজারের চাইতে আইডেন্টিটি নিয়ে ভাবতে হবে।


মন্তব্য

ঘুমকুমার এর ছবি

১। চলিত ও কথ্য ভাষার মিশ্রন আর প্যারার মধ্যে ফাকা জায়গার অভাবে লেখাটা ঠিক সুখপাঠ্য হয়নি। আপনার বক্তব্য মনে হয় বুঝতে পেরেছি কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর জামদানী পরিধানের বিষয়টা অপ্রাসঙ্গিক লেগেছে।

২। জামদানীর নকশার ক্ষেত্রে মৌলিকত্ব নেই বলে পুরো শিল্প ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথা না। ভেতরে আরও কারণ আছে নিশ্চয়ই। সেগুলোও লেখায় তুলে ধরতে পারতেন। মৌলিক নকশা যদি ভাল হয় সেক্ষেত্রে সেটাই ভোক্তার কাছে বেশি গ্রহনযোগ্য হওয়ার কথা। সেখানে ব্র্যান্ডিং/মার্কেটিং কি একটা ইস্যু?

৩। টাঙ্গাইলের জামদানী যদি একইরকম উপাদান দিয়ে তৈরি হয় তাহলে তাকে জামদানী বলতে সমস্যা কি? নকশা মৌলিক না হলেই তাকে জামদানী বলা যাবে না তা তো না।

৪। ভারত জামদানীর পেটেন্ট নিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটার কি হলো? সেটা কি কোনও ভাবে প্রভাব ফেলছে এই শিল্পে?

২০০৮ সালে একটা ডকুমেন্টারি বানাইতে গেছিলাম জামদানী নিয়া।

২০০৮ থেকে ২০১৫'র মধ্যে কি কি পরিবর্তন এসেছে এই শিল্পে? আপনার পুরো অভিজ্ঞতা নিয়ে সব সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে কিছু লিখুন।

মন মাঝি এর ছবি

মৌলিক নকশা যদি ভাল হয় সেক্ষেত্রে সেটাই ভোক্তার কাছে বেশি গ্রহনযোগ্য হওয়ার কথা। সেখানে ব্র্যান্ডিং/মার্কেটিং কি একটা ইস্যু?

এটা কি বাউল গান প্রঙ্গে বলতে গিয়ে --

মৌলিক র‍্যাপ যদি ভাল হয় সেক্ষেত্রে সেটাই শ্রোতার কাছে বেশি গ্রহনযোগ্য হওয়ার কথা। সেখানে আউল/বাউল কি একটা ইস্যু?

-- অনেকটা এই টাইপের কথা হয়ে গেল না?

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

দুঃখের বিষয় হচ্ছে, জামদানীতে এখন সবই “মৌলিক বাউল র‌্যাপ”!!!

পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

অনার্য তাপস

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
১। চলতি আর কথ্য ভাষার মিশ্রণ ইচ্ছাকৃত। বলতে পারেন নীরিক্ষা। এটা ভালো লাগতেও পারে নাও পারে। প্রধানমন্ত্রীর জামদানী শাড়ি পরার বিষয়টি ইচ্ছাকৃতভাবে এনেছি। কারণ আমার মনে হয়, ক্ষমতাকাঠামো শিল্পের উন্নয়নে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখে। আশির দশকে টাঙ্গাইল শাড়ির ব্যাপক প্রসারের পেছনে ফাস্র্টলেডি রওশন এরশাদের ভূমিকার কথা আমরা জানি। রংপুরের শতরঞ্জি শিল্পের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা বেশ প্রশংসিত হয়েছিলো। কিন্তু বাস্তবায়িত হয় নাই। সদ্য স্বাধীন দেশে তাঁতিদের সুতা সরবরাহের ব্যাবস্থাপনায় শোনা যায়, স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর পরামর্শ এবং নিরদেশ ছিলো। এইসব ছোট ছোট ঘটনার আপাত কোন মূল্য না থাকলেও যারা এইসব কাজের সাথে যুক্ত তাদের প্রনোদনার জন্য এগুলো কাজে লাগে। সেকারণে তিন নেত্রীর গল্প সংযোজন করেছি। হতে পারে নীরিক্ষাটা ঠিক মতো হয়নি। সেটা মেনে নিলাম।
২। আমি কোথাও বলিনি মৌলিকত্ব না থাকলে শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে! বলার চেষ্টা করেছি, সিগনেচারটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। নকশা জামদানীর মূল বিষয়। টাঙ্গাইল শাড়ির মূল বিষয় বুনন। এই বিষয়গুলো বুঝতে হবে। এখন টাঙ্গাইল শাড়ির বুনন যদি হালকা হয়ে যায় তার সাথে সিরাজগঞ্জ কিংবা পাবনার শাড়ির পার্থক্য থাকে না। সেরকমই, জামদানীর নকশা তৈরির যে ধরন সেটা যদি এক্সপেরিমেন্টের কারণে বাধাগ্রস্থ হয় তাহলে জামদানী তার সিগনেচার হারাবে। আপনি যদি ৬ মাস জামদানী বয়ন অঞ্চলে ঘোরাঘুরি করেন, বিষয়টা বুঝতে পারবেন। আমার সংগ্রহে জামদানীর ১০১টা নকশা আছে জিওমেট্রিক্যাল ডিজাইনসহ (এই লেখায় একটা ব্যবহার করেছি)। এগুলো নতুন নয়। সবই পুরাতন। এই পুরাতন নকশাগুলো ওলোটপালট করে এখন নতুন নকশা তৈরি হয়। “মাথা খাটিয়ে নকশা” করা হয় না এখন। এটা আমি নিজের চোখেই দেখেছি গত ৮ বছর। কাজেই ব্যাপারটা আমাকে ভাবায়। কিংবা আমি বলতেই পারি ৮ বছরের পর্যবেক্ষণের পর। গ্লোবাল ব্রান্ডিং প্রয়োজন। তাতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যটা করা যাবে। এটা সরকারী পলিসির বিষয়।
৩। টাঙ্গাইলে জামদানী তৈরি হয় না। জামদানী তৈরির টেকনিক আর সাধারণ সুতি শাড়ি তৈরি টেকনিক এক নয়। যেটা যে জিনিস নয় তাকে সেই নামে ডাকার কোন মানে হয় না। আপেল কুল আপেলের মতো দেখতে হলেও সেটা আপেল নয়। বাণিজ্যিক অসাধুতা এর জন্য দায়ী। এটাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন করি না।
৪। ভারত জামদানীর পেটেন্ট পাবে না বা পায়নি বলেই জানি। ইউনেস্কো জামদানীকে বাংলাদেশের ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজের অংশ হিসেবে স্বীকতি দিয়েছে। ভারতের জামদানীকে দেয় নাই। কোন কিছুকে পেটেন্টের আওতায় আনতে হলে একটা আইন দরকার। বাংলাদেশে এটা পাশ হয়েছে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসের দিকে। ভারতে সেটা হয়েছে ১৯৯৬ সালে। সেই আইনের সুবিধা তারা নেবে- এটাই স্বাভাবিক। আমরা নিতে পারছি না, কারণ আমাদের এখানে এই আইন নিয়ে কাজ করতে পারার মতো মানুষ খুব কম আছে। কারণ বিষয়টা খুব স্ট্রং পলিসির মধ্যে নেই।
৫। ২০০৮-২০১৫ এই সাত বছরে বাণিজ্যিক প্রচেষ্টা ছাড়া তেমন কোন পরিবর্তন আমার চোখে পরে নাই। আমি নিয়মিত বিষয়টার খোঁজ খবর করি।

অনার্য তাপস

হিমু এর ছবি

আপনার পোস্টের বিষয়টা খুব আগ্রহোদ্দীপক, কিন্তু লেখাটা একেবারেই অগোছালো হয়েছে। আপনি একটু সময় নিয়ে গুছিয়ে লিখুন। প্রামাণ্যচিত্র বানাতে গিয়ে নিশ্চয়ই এমন কিছু অভিজ্ঞতা আর তথ্য সঞ্চয় করেছেন, যা হয়তো এখনও অপ্রকাশিত রয়ে গেছে। আমাদের জন্যে সেগুলো একটা কাঠামোর মধ্যে রেখে তুলে ধরতে পারেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
প্রথম সমস্যা হচ্ছে, আমি সচলে লেখা সম্পাদনা করতে পারি না এখনো। কাজেই প্রকাশের পর সেটা সম্পাদনা করা আমার পক্ষে সম্ভব হয় না।
দ্বিতীয়ত, আমি যেভাবে লিখেছি সেটা একটা এক্সপেরিমেন্ট। ভালো নাও লাগতে পারে। তবে আমি জামদানী নিয়ে একটা লেখা লিখবো এখানে।

অনার্য তাপস

আয়নামতি এর ছবি

বাহ! জামদানি নিয়ে আপনার তো চমৎকার অভিজ্ঞতা আছে। এসব তো বুঝিনা সেভাবে, তাই পোস্টটা
ভিন্ন স্বাদ দিলো। হিমুভাইয়ের পরামর্শ মত পরবর্তী পোস্ট আশা করছি। ভালো কথা, নিজের নামটা
উল্লেখ করতে ভুলবেন না যেন। শুভকামনা।

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
বিষয়টা হচ্ছে, আমি এডিটটা করতে পারি না এখনো। কাজেই কিছু ভুল হলে সেটা ভুলই থেকে যায়।
লেখাটা ইচ্ছা করেই ওরকম করেছি।

অনার্য তাপস

নীড় সন্ধানী এর ছবি

ইন্টারেস্টিং একটা বিষয়। জামদানী শিল্প নিয়ে বেশ কিছু অজানা তথ্য জানলাম।
এই ভিডিওটিও দেখা যেতে পারে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

দেবদ্যুতি এর ছবি

ওয়ার্ড ফাইলে লিখে বারবার চেইক করার পর এখানে পোস্ট দিলে ভুল থাকার সম্ভাবনা কমে, বেটার লাক নেক্সট টাইম।

...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

আমার খুব প্রিয় শাড়ি। সোনারগাতে যেয়ে নিয়ে আসি মাঝেমধ্যে। ভাল পোস্ট।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

এক লহমা এর ছবি

চলুক
পুরানো দিন ফিরে পেলাম যেন। সোনার গাঁ (পানাম)-এর বস্ত্রব্যবসায়ীদের ঘরের ছেলে আমার বাবা বয়নবিদ্যার যন্ত্রবিৎ ছিলেন। এই লেখার ধরণের কথা শুনতে পেতাম তার কাছ থেকে।

হিমুর মন্তব্যর সাথে সহমত। পরের লেখার জন্য সাগ্রহ প্রতীক্ষায় রইলাম।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।