খাদ্যসংস্কৃতি তেমন নিরিহ কোন বিষয় নয়- ১

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ০৪/০৫/২০১৬ - ২:৪১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমি ইদানীং খুব বুঝেশুনে সুশীল একটা বিষয় নিয়ে কিংবা বলতে পারেন নিতান্তই ভদ্রগোছের, সহজ একটা বিষয় নিয়ে কাজ করতে আরম্ভ করেছি। সেটা হলো খাদ্যসংস্কৃতি। খাবারের সংস্কৃতি আরকি। যাইহোক আর তাইহোক, রবীন্দ্রনাথেরও ক্ষুধা লাগতো। আইনস্টাইনও খেতেন। হিটলারও বিষয়টা অপছন্দ করতেন না। তাই একটু খোঁজখবর করার চেষ্টা। প্রথমে ভেবেছিলাম এটা নেহাতই সাদামাটা একটা বিষয়! নেহাতই একটু আধটু ইতিহাসপত্তর ঘেঁটে দেখতে হতে পারে। এই যা। ও মা, যতই এগুচ্ছি জল ততই হাঁটু ছাড়িয়ে কোমর, কোমর ছাড়িয়ে বুক আর এখন বুক ছাড়িয়ে মাথার উপরে উঠতে চাইছে!
তবে বলে রাখা ভালো যে, আমি খাদ্যসংস্কৃতি বলতে শুধুমাত্র রেসিপি বা রান্নার পদ্ধতিকেই নির্দেশ করছি না। বরং শষ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, খাদ্যপযোগীকরণ, রান্না, পরিবেশন রীতি, খাওয়া, খাদ্য বা শষ্যকে নিয়ে গড়ে ওঠা মানুষের আচার-প্রথা-সংস্কার এবং বর্জ্যব্যবস্থাপনা− এই পুরো চক্রটিই মূলত খাদ্যসংস্কৃতির অঙ্গীভূত বলে মনে হয় আমার কাছে। এর সাথে খুব আবশ্যিকভাবে যে জিনিসগুলো যুক্ত তা হলো কৃষিবিজ্ঞান, ভূগোল, রসায়ন, সমাজনীতি, অর্থনীতি। এ পর্যন্ত আমার কোন আপত্তি নেই। ভয়তো দূরের কথা। কিন্তু খেয়াল করে দেখলাম, খাদ্যসংস্কৃতির সাথে যুক্ত আছে ইতিহাস আর রাজনীতি। আবার খাবারের সংস্কৃতিকে গভীরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে ধর্ম। কাজেই আপাত দৃষ্টিতে নিরিহ খাদ্যসংস্কৃতি এবার আমার কাছে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলো। ঘাড়ে মাথা তো একটাই, সেকারণে ভয়টা আরো বেশি। আর ঠিক গলির মুখেই মাংসের দোকান বাবা!
খাবারের সাথে রসায়নের যোগসূত্র কী? আছে। ভীষণভাবে আছে। আমার বন্ধু, যে কিনা একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাপলায়েড ক্যামেস্ট্রির মাস্টার, আমাকে বলল, আরে মামা, আমাদের বুড়িরা কী কেমিস্ট মাইরি! আমি বললাম, কেন মামা? সে বলল, আরে আর বলবেন না, আচার আচার। সংরক্ষণ করা একটা খাবার। আমি তো ছোটবেলায় ভাবতাম আচার এমনি এমনি হয়। এখন পড়তে গিয়ে আর পড়াতে গিয়ে দেখছি বিষয়টা তত সোজা নয়! এটা জটিল একটা বিষয়। আমাদের ইকুয়েশন করে আচার হয়। আর আমাদের বুড়িরা এই পুরো বিষয়টিকে মুখস্ত করে বসে আছে! যুগের পর যুগ ধরে চালিয়ে যাচ্ছে! যাক বাবা, আমি ক্যামেস্ট্রিতে কোনমতে ৩৩ পেয়ে পাশ করতাম। তাই ওটা নিয়ে আর ভাবতে চাই না। ক্যামেস্ট্রির মাস্টার সে, ওটা তারই ভাবনার বিষয়। বরং জিওগ্রাফিটা মোটামুটি একটু সহজ মনে হয় আমার কাছে। হ্যাঁ, মরুভূমিতে কিংবা বরফের প্রান্তরে ধান জন্মাবে না এটাই স্বাভাবিক। আর পাহাড়ের কৃষিসংস্কৃতি সমতল আর নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের থেকে ভিন্ন হবে- খুবই স্বাভাবিক। দুই অঞ্চলের মানুষের খাদ্যাভ্যাসে তাই পার্থক্য থাকবে- এটাও খুব স্বাভাবিক। বোঝাই যায়। নদী এলাকার মানুষের মাছ নিয়ে প্রচুর খাবার আইটেম থাকবে, নদী দূরবর্তী মানুষের থাকবে না− এটাও স্বাভাবিক। ঠিক যেভাবে সমুদ্রপোকুলবর্তী মানুষদের মাছ খাবার অভ্যাস আর সমুদ্রদূরবর্তী মানুষের মাছ খাবারের অভ্যাস এক নয়। বুঝলাম।
কিন্তু, ইতিহাস আর রাজনীতি? ভয়ঙ্করভাবে খাদ্যসংস্কৃতির সাথে যুক্ত। ততধিক ভয়ঙ্করভাবে যুক্ত ধর্ম। খাদ্যসংস্কৃতির নিরিখে ধর্ম আর রাজনীতির ব্লেন্ড করা একটা ককটেল খেয়ে ফেলেছি আমরা। যেমন, মশুর ডালের সাথে কালাপাহাড়ের নাম জড়িত। আর এই কালাপাহাড়ের সাথে জড়িত ভারতের এক রক্তাক্ত ইতিহাস। খাদ্যসংস্কৃতিতে এরকম কত শত টুকরো টুকরো ইতিহাসের গল্প যে ছড়িয়ে আছে- যেগুলো ধর্ম দিয়ে জাড়িত। কাজেই খাদ্যসংস্কৃতি বিষয়টা এখন আর মোটেই ছেলেখেলার বিষয় মনে হচ্ছে না।
আর একটি বিষয়, আমাদের এখানে মানে ভারতীয় উপমহাদেশে বৈদিক যুগকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়। যেটা নিয়ে বেশখানিকটা বিতর্কও আছে বটে। এই যুগ রোমিলা থাপারের মতো ঐতিহাসিকদের মতে ১,৫০০-৫০০ খ্রি. পূর্বাব্দ। কিন্তু তার আগে মানে প্রিভৈদিক এজের মানুষ কি খেতো না? খেলে কী খেতো? সিন্ধুসভ্যতার কথা তো আমরা জানি। এটা বৈদিকযুগের চাইতেও প্রাচীন। এর সময় ধরা হয় ৩,৩০০ – ১,৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ; পূর্ণবর্ধিত কাল ২,৬০০ – ১,৯০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। তো এই যুগের মানুষ কী খেতো? এইসব নানান বিষয় জড়িত আছে খাদ্যসংস্কৃতির আপাত নিরিহ চেহারার ভেতর।
ও হ্যাঁ, বলছিলাম যে ধর্মও জড়িত আছে খাদ্যসংস্কৃতির সাথে, গভীর আর ভয়ঙ্করভাবে জড়িয়ে আছে। দু’টো উদাহরণ দেই। বুঝতে সুবিধা হবে।
সংস্কৃতে একটা শব্দ আছে− “গো-সঙ্খ্য”। এই শব্দটার অর্থ হলো- গরু পরীক্ষক। এই শব্দটি পরে অর্থ সঙ্কুচিত হয়ে “গোপ” হয়েছে। এই গরু পরীক্ষা কেন হতো? কারণ, আর কিছুই না, যে বলদ বা ষাঁড়টিকে খাবার জন্য কাটা হবে, তার স্বাস্থ্য কেমন আছে সেটা দেখার জন্য। পরীক্ষা না হলে সেই মাংস মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
মাংস তিন প্রকার। যথা: ভূচর (যারা ভূমিতে চরে। মূলত গরু, ছাগলসহ বিভিন্ন পশু এবং উড়তে না পারা পাখি), খেচর (যারা আকাশে ওড়ে) এবং জলচর (যারা জলে বিচরণ করে। মূলত মাছ।) এক জলচর বাদে, স্ত্রী পশু বধ নিষিদ্ধ ছিল প্রাচীন কালে। কারণ তাতে প্রজনন কমে যাবে । মাছের লিঙ্গ নির্ধারণ করা শক্ত বলেই হয়তো, এই ব্যাপারটা হয়েছিল। বৌদ্ধ যুগের আগে, হিন্দুরা প্রচুর গোমাংস ভক্ষণ করতো এ তথ্যও অনেকেই জানেন। ডাঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ প্রণীত Beef in Ancient India গ্রন্থে, স্বামী ভুমানন্দ প্রণীত অনেক গ্রন্থে, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের জাতি গঠনে বাধা গ্রন্থে উল্লেখ আছে। এসব গ্রন্থ থেকে জানা যায়, বৌদ্ধযুগের আগে গো-হত্যা, গো-ভক্ষণ মোটেই নিষিদ্ধ ছিল না। মধু ও গো-মাংস না খাওয়ালে তখন অতিথি আপ্যায়নই অপূর্ণ থেকে যেতো। তাই অতিথির আর এক নাম গোঘ্ন। বৌদ্ধ সম্রাট অশোকের সময় থেকে গোহত্যা নিষিদ্ধ করা হয়। সুতরাং বৌদ্ধ ধর্মের আবির্ভাব ২,০০০ বছর আগে হলেও গো-হত্যা আরও অনেক পরে নিষিদ্ধ হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, সম্রাট অশোকের নিষেধাজ্ঞা হিন্দুরা মানছে কেন? এটাও ধর্মীয় সংঘাতের ফল! (সাধে কি আর বলি- ধর্ম এখানেও আছে?) বৌদ্ধ ধর্ম এতই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, প্রচুর মানুষ, বিশেষ করে তথাকথিত “নীচ জাতি” আকৃষ্ট হয়েছিল এই ধর্মের প্রতি। এ দেখে ব্রাহ্মণরা প্রমাদ গুনলো। তারাও পুরোপুরি মাছ- মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়ে ভেকধারী হয়ে গেল। অবশ্য যতসহজভাবে কথাটা লিখে ফেললাম তত সহজে বিষয়গুলো যে ঘটেনি তা বলাই বাহুল্য। মূলত, এটা উত্তরভারতেই হয়েছিল । তাই এখনও ওটা “গো বলয়”। বেশীদিনের কথা নয়, আলিবর্দির সময়ে সাধক রামপ্রসাদের গুরু কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ একটা বই লেখেন। নাম বৃহৎ তন্ত্রসার। এতেও অষ্টবিধ মহামাংসের মধ্যে গোমাংস প্রথম বলেই বলা হয়েছে। ঋগ্বেদে ফিরে আসি। কী দেখছি? প্রথম মণ্ডলের ১৬৪ সূক্তের ৪৩ নং শ্লোকে বৃষ মাংস খাওয়ার কথা আছে। মহিষ মাংসের উল্লেখ আছে পঞ্চম মণ্ডলের ২৯ নং সূক্তের ৮ নং শ্লোকে। মোষ বলি আজও হয়। নেপালে যারা মোষের মাংস খায়, তাদের ছেত্রী বলা হয়। এছাড়া, বনবাসকালে রামচন্দ্রের লাঞ্চের মেনু কী ছিলো সেটা অনেকেরই জানা নেই। তিন রকম মদ বা আসব- গৌড়ী (গুড় থেকে তৈরি), পৌষ্টি (পিঠে পচিয়ে তৈরি), মাধ্বী (মধু থেকে তৈরি)। এর সঙ্গে প্রিয় ছিলো শূলপক্ব গোবৎসের মাংস। বিশ্বাস না হলে রামায়ণ পড়া উচিৎ। রামকে যদি কল্প চরিত্র বলেও ধরি, তাহলেও এইগুলো তখনকার খাদ্যাভ্যাসের নমুনা। এখানেই কিন্তু হিন্দুদের গরু খাওয়া নিষিদ্ধ করণের কারণটা আছে। স্ত্রী পশু বধ নিষিদ্ধ থাকলেও, গরু মোষের সংখ্যা কমতে থাকে ক্রমশ। এটা মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দেখা দেয় সেই সমাজে। এর একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ আমার মনে হয় কৃষি। ষাঁড় বা বলদ ছাড়া কৃষির কথা ভাবাই যেতো না সেকালে শুধু নয় হালের নব্বই দশকের আগেও। অথচ খাওয়া কিন্তু হতো ষাঁড়ই। গাভী নয়। কাজেই ষাঁড়ের সংখ্যা দিন দিন কমছিলো। প্রাচীন সংস্কৃতি সাহিত্যে বিভিন্ন গ্রন্থে এসবের বর্ণনা আছে। চাইলে পড়তে পারেন। আর সেকালেও যে ডাক্তার-বদ্যি ছিলো না, তাতো নয়। তারা লক্ষ্য করলো– প্রচুর ফিতা ক্রিমি হচ্ছে গো মাংস খেলে। ভালো করে সেদ্ধ করলে অবশ্য হয় না, তবে সে হ্যাপা অনেকের পোষায় না। চর্বি জমে, রক্তচাপও বাড়ে। সুশ্রুত এটা বলেও গেছিলেন তাঁর সুশ্রুত সংহিতায়। এইসব বিভিন্ন কারণে তাই নিষিদ্ধ হলো গো মাংস খাওয়া। এবার বুঝলেন তো হিন্দুরা কেন গরু খায় না কিংবা সনাতন ধর্মে কেন গোমাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এসব কথা বললে আর কাউকে দরকার নাই, হিন্দুরাই তেড়ে আসবে। কেন ভয় পাই ইদানীং বুঝতে পারছেন। খাবো যে তারও শান্তি নাই।
(আর এক পর্বে সমাপ্য)

----------------------------------------------------------------------------------------
সূত্র: রামকৃষ্ণভট্টাচার্য সান্যাল এবং তাঁর চাপড় ঘন্ট। ফেসবুকে তার আরো কিছু লেখা থেকে সংস্কৃত সাহিত্যের সূত্রগুলো নেওয়া।
রামকৃষ্ণভট্টাচার্য সান্যাল এর সাথে একটি যৌথ প্রকল্পের জন্য বেশ কিছু লেখা তৈরি করা হয়েছিলো। এটি তারই একটি অপ্রকাশিত অংশ।
-----------------------------------------------------------------------------------------

অনার্য তাপস


মন্তব্য

মাহবুব লীলেন এর ছবি

খাদ্য সংস্কৃতির কথাই যখন কইলেন তখন আশা করি এই কয়েকটা পয়েন্টের ব্যাখ্যাও যোগ করবেন:

কেউ খায় হাত দিয়ে কেউ খায় চামচ-কাঠি দিয়ে: এর কী ইতিহাস?
কারো নিয়মে খাওয়ার সময় কথা বলা অসভ্যতা আর কারো নিয়মে খাওয়ার সময় কথা না বলা অসভ্যতা: ইতিহাস কী?
কেউ খাবারের মধ্যে ঝোল দেয় আর কেউ আলাদা শুকনা খাবার গিল্লা পরে আলাদা ঝোল খায়; কী কারণ?

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
এই পয়েন্টগুলো আমি এখনো জানি না। শুরু করেছি মাত্র। তবে অবশ্যই সেগুলো জানার চেষ্টা করবো।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

দুনিয়াতে এত কিছু থাকতে কিভাবে করে "কাঠি" খাবারের হাতিয়ার হল সেটা আমার মাথায় আসে না।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমারো। চামচ হলেও একটা কথা ছিলো। আজব!

অতিথি লেখক এর ছবি

ঋগ্বেদ এর উৎপত্তি স্থান/কাল নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে, গবেষণাও হচ্ছে প্রচুর। কিন্তু মজার ব্যপার হলো আপনি যদি ঋগ্বেদে বর্ণিত খাবার/শষ্য গুলো একটু মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করেন, তাহলে বোঝা যায়, বৈদিক সংস্কৃতি এসেছিলো উত্তর ভারত বা ভারতের উত্তর পশ্চিম অংশ থেকে (যেমন পাঞ্জাব, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান অঞ্চল)।

প্রথমত ঋগ্বেদে "বাঘ" এর ব্যপারে কোনই উল্লেখ নাই, মানে ব্যপারটা এমন যে ঋগ্বেদের পাব্লিক জীবনে বাঘই দেখে নাই, তবে সিংহ, উট, ঘোড়া, হায়েনা, নেকড়ে, মহিষ, ময়ূর, হাঁস, পাহাড়ী ছাগল (মার্খোর?) এইসব পাবেন প্রচুর। "ধান" নিয়ে তাদের তেমন বেশী একটা আগ্রহ নেই (যেমন "ধান চাষ" ব্যপারটা পুরাই অনুপস্থিত), তবে যব/বার্লি মনে হয় তাদের বেশ প্রিয় ছিলো। আরেকটা জিনিস ছিলো চরম হিট -- "সোম", এই সোম যে কি জিনিস ছিলো তা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। তবে সোমের কাছাকছি আরেকটা জিনিস জরাথুসট্রীয় ধর্মে পাওয়া যায়, যারে বলে "হাওমা", বর্ণনা পড়লে দুটাই মনে সেইম জিনিস।

এইসব দেখে অনেকে মনে করেন ঋগ্বেদীয় সংস্কৃতি আসলে মহেঞ্জোদারো-হরপ্পা এলাকা থেকে উদ্ভূত।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ।
যদি মহেঞ্জোদারো-হরপ্পাকে ঋগ্বেদের আগে ধরে নেওয়া হয় (এভাবে বলছি কারণ ব্যাপারটা নিয়ে বিতর্ক তো আছেই, এখনো নিশ্চিৎভাবে কিছু বলা যায় না।) তাহলে তার কন্টিনিউটি থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। বরং স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে খাবার, সংস্কৃতি সবকিছুতেই সিন্ধু সভ্যতার ছাপ থাকবে। অবশ্যই থাকবে। ‘সোম’ বিষয়টি নিয়ে খুব বিতর্কের কিছু আছে বলে মনে হয় না। আমি এখানে বলেছি যে, খাদ্যসংস্কৃতিতে ভূগোল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উত্তর ভারত বা ভারতের উত্তর পশ্চিম অংশের ভূমিরূপ বা জিওগ্রাফি ধান চাষের উপযুক্ত নয়, খুব সম্ভবত। কারণ ইরফান হাবিবও বলছেন, সিন্ধু সভ্যতায় গম, যব, বার্লিএইসব চাষ হতো (সিন্ধ্যু সভ্যতা ইরফান হাবিব)। এই কারণেই ধানচাষ, ধান কিংবা ধানজাত খাবারের উল্লেখ খুব একটা পাওয়া যায় না। এটাই স্বাভাবিক।

শেহাব এর ছবি

খুব ভাল লেখা হয়েছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

তাপস'দা, আপনি লিখেছেন গরু-পরীক্ষক শব্দটার অর্থ সকুচিত হয়ে গোপ হয়েছে। আমার তো মনে হয়েছিল গোপ মানে দুগ্ধদোহনকারী। মহাভারতের দ্রোণপর্বে লেখা হয়েছেঃ হে সঞ্জয়, গোপ-কুলে যখন মহাত্মা কৃষ্ণ সংবর্ধিত হয়েন, তখন তাঁহার বাহুবল ত্রিলোক বিশ্রূত।

ছয়শ বছর আগে কবীর নামে ভারতের এক সন্তকবির লেখা কবিতায় আছেঃ

Saints I've seen both ways.
Hindus and Muslims don't want discipline, they want tasty food.
The Hindu keeps the eleventh-day fast, eating chestnuts and milk.
He curbs his grain but not his brain, and breaks his fast with meat.
The Turk prays daily, fasts once a year, and crows "God!, God!" like a cock.
What heaven is reserved for people who kill chickens in the dark?
Instead of kindness and compassion, they've cast out all desire.
One kills with a chop, one lets the blood drop, in both houses burns the same fire.
Turks and Hindus have one way, the guru's made it clear.
Don't say Ram, don't say Khuda, so says Kabir.
________________
সৌমিত্র পালিত

মাসুদ সজীব এর ছবি

দারুণ মজাদার বিষয় নিয়ে লিখছেন, চলুক কয়েক পর্বে বিস্তৃত আকারে চলুক

লেখার মাঝে স্পেস রাইখেন, তাহলে পড়তে সুবিধা হয়। হাসি

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

সোহেল ইমাম এর ছবি

বাহ! চমৎকার বিষয়। লিখেছেনও দারুন। চলুক

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রাচীন আমলের কথা ছাড়ুন, আধুনিক কালেও ধনী পরিবারে বৃষোৎসর্গের প্রচলন ছিল (আছে)। মহিষ বলি দেবার খাঁড়া আর হাঁড়িকাঠ অনেক মন্দির খুঁজলে পাওয়া যাবে। অর্থাৎ পূজার উপলক্ষে মহিষ বলি দেয়া শাস্ত্রসম্মত। তাহলে অবধারিত প্রশ্ন হচ্ছে — উৎসর্গীকৃত বৃষের মাংসের কী হবে? উৎসর্গীকৃত পাঁঠার মাংস খাওয়া বিধেয় হলে উৎসর্গীকৃত মহিষের মাংস খাওয়াও বিধেয় হওয়া উচিত। একই যুক্তিতে সাধারণভাবে হত্যা করা (জবাই বা অন্য উপায়ে) মহিষের মাংস খাওয়াও বিধেয় হবার কথা। কিন্তু আমরা দেখতে পাই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মহিষের মাংসকে গোমাংসের মতই পরিত্যাজ্যরূপে গণ্য করেন। মহিষের মাংসকে গোমাংসের মতই অভক্ষ কিনা এই ব্যাপারে কোন পরিষ্কার নির্দেশনার সন্ধান পাইনি। কেউ কি শাস্ত্রের রেফারেন্স সহ এর উত্তর জানাতে পারেন?

অতিথি লেখক এর ছবি

রেফারেন্সসহ কিছু খুব অল্প সময়ের মধ্যে জানানো সম্ভব নয়। তবে খুঁজবো। পেলে অবশ্যই জানাবো।
নেপালে যারা মহিষের মাংস খায়, পূজায় উৎসর্গ করে, তাদের বলা হয় ছেত্রী। মহিষ উৎসর্গ এখনো নেপালে বর্তমান। বাংলা অঞ্চলে মহিষ উৎসর্গ বেশ আগেই বন্ধ হয়েছে। আমার ধারণা, গরু যে কারণে খাওয়া হয় না মহিষও একই কারণে খায় না সনাতনধর্মাবলম্বীগণ।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।