সমর সেনের অপহরণ : গণবাহিনীতে মারিগেল্লার গেরিলা দাওয়াই

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ১৬/০৮/২০১৬ - ৯:৫৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

লিখেছেন- টেলেমেকাস
বাংলাদেশের ইতিহাসে জাসদ এক বিপুল বিভ্রান্তির নাম ।
সত্তরের দশকে,জাসদের সশস্ত্র শাখা গণবাহিনী নিজেকে আরবান গেরিলার প্রতিচ্ছবি হিসেবে প্রকাশ করতে চেয়েছিল । সত্তরের দশক ছিল আক্ষরিক অর্থেই যেন প্রসব বেদনার দশক । একদিকে অসংখ্য নতুন জাতিরাষ্ট্রের জন্ম হচ্ছে, অন্যদিকে প্রসব বেদনায় যাতনায় বিদীর্ণ হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বের অজস্র জনপদ । ষাটের বা সত্তরের দশকের উন্মাতাল সময়ে বিপ্লবী হওয়ার মরণ নেশায় কাতর হয়ে দেশে দেশে তরুণেরা নিজেদের চিরতরে নিঃশেষ করে দিয়েছিল । সেই অদ্ভুত সময়ে, একের পর এক অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছিল বঙ্গভূমির উর্বর উষর ।জাসদ ছিল সেই অদ্ভুত সময়েরই এক অদ্ভুততম চরিত্র ।

জাসদের রহস্যজনক অপারেশনগুলোর মধ্যে একটি ছিল, ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সমর সেনের অপহরনের ব্যর্থ প্রচেষ্টা । সেই রহস্যের অনুসন্ধান শুরু করার আগে, আমাদের যেতে হবে ব্রাজিলে, ম্যানুয়েল মারিগেল্লার কাছে ।
সত্তরের দশকে অজস্র গেরিলা বাহিনীর পাঠ্য ছিল ম্যানুয়েল মারিগেল্লার ‘মিনিম্যানুয়েল অফ আরবান গেরিলা’ । ব্রাজিলিয়ান বিপ্লবী মারিগেল্লা তার বইতে শহরভিত্তিক গেরিলা কর্মকাণ্ডের এক ‘রেসিপি’ যেন লিখে রেখেছিলেন । দ্রুত এই পুস্তিকাটি পৃথিবীব্যাপী বিপ্লবী দলগুলোর কাছে সংবিধান হয়ে উঠে ।
http://imgur.com/K0jv6cd

মারিগেল্লা তার বইতে অপহরণ কে শহরভিত্তিক গেরিলা অপারেশনের একটি অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন । মারিগেল্লা ও তার অনুসারীরা ১৯৬৯ সালে ব্রাজিলে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে ৭২ ঘন্টার জন্যে অপহরণ করে সারা বিশ্বে হই চই ফেলে দিয়েছিলেন । এই রাষ্ট্রদূত অপহরণের বিষয়টি এবার বিশ্বব্যাপী আরবান গেরিলাদের প্রিয় কৌশল হয়ে উঠে । ১৯৭২ সালে, কোস্তা গাভরাসের বিখ্যাত সিনেমা ‘State of Siege’ এ দেখা যায় উরুগুয়ের টুপামারো গেরিলারা এক মার্কিন কূটনীতিক কে অপহরণ করছে ।উল্লেখ্য, এই সিনেমাটি বাস্তব ঘটনার উপর ভিত্তি করেই নির্মিত । মারিগেল্লার অপহরণ কাণ্ড নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘Four Days in September’

জাসদের সশস্ত্র শাখা গণবাহিনীর নেতৃবৃন্দ এইসময় মারিগেল্লার রচনাকর্মের প্রতি মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন । এবং তারা একই ধাঁচের অপহরণ-অভিযানের রোমাঞ্চে ভুগতে থাকেন বেশ কিছুদিন । শহরভিত্তিক সমরবাদের এডভেঞ্চারে তারা মশগুল হয়ে উঠেন । তিন বছর আগেই যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে লড়াই করেছে বিপুল বিক্রমে, তারাই এই গেরিলা আমেজ ছাড়তে পারলেন না দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ও ।

১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাস । বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে রহস্যময় মাস, সবচেয়ে ঘটনাবহুল তিরিশটি দিন । মাসের শুরুতেই খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থান । মাসের সপ্তম দিনেই আবার অভ্যুত্থান, এইবার জেনারেল জিয়াকে কাঁধে চড়িয়ে ক্ষমতায় বসালেন কর্নেল তাহের । কিন্তু ক্ষমতার রাজনীতির অদ্ভুত চালে কর্নেল তাহের নিজেই বন্দী হয়ে গেলেন ২৪ নভেম্বর । জাসদের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সকলেই জিয়ার সরকারের হাতে গ্রেফতার হয়ে গেছেন ততোদিনে । ঠিক এই সময়ই ঘটলো এই অপহরণের ঘটনাটি, যেটি জাসদের জন্যে দুর্ভাগ্য ব্যতীত আর কিছু বয়ে আনেনি ।

কর্নেল তাহেরের ভাই এবং ঢাকা নগর গণবাহিনীর কমান্ডার আনোয়ার হোসেন ছিলেন এই অপহরণ কাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী । ছয় জনের সুইসাইড স্কোয়াড গঠন করা হলো । দলের সদস্যরা হলেন, সাখাওয়াত হোসেন বাহার, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল, মীর নজরুল ইসলাম বাচ্চু, মাসুদুর রহমান , হারুনর রশীদ এবং সৈয়দ বাহারুল হাসান সবুজ ।
উল্লেখ্য, এই ছয় জনের মাঝে দুইজন, বাহার ও বেলাল ছিলেন কর্নেল তাহের এবং আনোয়ার হোসেনের ভাই। ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীরপ্রতীক ফিলিস্তিনে গিয়েও যুদ্ধ করেন ইসরাঈলীদের বিরুদ্ধে । বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের একজন সাংসদ ।

প্রথমে পরিকল্পনা হয়, মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে অপহরণ করা হবে । এই লক্ষ্যে মতিঝিলের আদমজী কোর্টে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের আশেপাশের এলাকা রেকি ও করা হয় । কিন্তু পরবর্তীতে, এই সিদ্ধান্ত পালটে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত কে অপহরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ।

২৬ শে নভেম্বর, ১৯৭৬ । ঘড়ির কাঁটা নয়টা ছুঁই ছুঁই করছে ।
ধানমণ্ডি দুই নাম্বার রোড । গাছপালায় ঢাকা, সুনসান আবাসিক এলাকা । এখন যেখানে ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার, ঠিক সেখানেই একসময় ছিল ভারতীয় দূতাবাস । আশেপাশে ছয়জন নাম না জানা তরুণের চলাফেরা । মগবাজারের নয়াটোলার আস্তানা থেকে তারা ভোর বেলাতেই বের হয়েছে অপারেশনের জন্যে । খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯ টায় রাষ্ট্রদূত সমর সেন অফিসে আসেন ।

সমর সেন ছিলেন বাংলাদেশে ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রদূত । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সমর সেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক ভূমিকা পালন করেছিলেন । তিনি সেই সময় জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছিলেন, মার্কিন কূটনৈতিক চাপকে বেশ ভালোমতোই সামাল দিয়েছিলেন জাতিসংঘে । ’৭৪ এর জুলাইয়ে তাকে সেই কাজ থেকে ফিরে বাংলাদেশে চলে আসতে হয় , রাষ্ট্রদূত হিসেবে । ঢাকায় তার নিযুক্তির ঘটনাটিও বেশ অভিনব । বাংলাদেশে ভারতের প্রথম রাষ্ট্রদূত ছিলেন সুবিমল দত্ত । সুবিমল দত্ত ছিলেন ভারতের অন্যতম জ্যেষ্ঠ কূটনীতিবিদ । ঢাকায় নিয়োগ পাওয়ার ১৬ বছর আগেই, জওহরলাল নেহেরুর আমলেই তিনি ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করেন । এত জ্যেষ্ঠ একজন কূটনীতিবিদকে একটি সদ্য স্বাধীন দেশে নিযুক্তির বিষয়টি থেকেই প্রতীয়মান হয় যে ভারত এখানে কূটনৈতিক সম্পর্কের ব্যাপারটিকে কতোটুকু গুরুত্ব দিচ্ছিল । সুবিমল দত্ত এই পূর্ববঙ্গেরই মানুষ, চট্টগ্রামের কানুনগো পাড়ায় বড় হওয়া । ১৯৭৪ সালে ভুট্টোর ঢাকা সফর কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝে একটি কূটনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয় । এইসময় সুবিমল দত্ত পদত্যাগ করেন, এবং পদত্যাগের কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন ,

“(বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পাশে থেকে)ভুট্টোকে ঢাকা বিমানবন্দরে স্বাগতম জানানো এবং তাঁর সঙ্গে করমর্দন করতে আমি প্রস্তুত নই ।“

এর কিছুদিন পরে, রাষ্ট্রদূত হিসেবে সমর সেনের আগমন ঘটে ঢাকায় । সমর সেনের উপর হামলার বিষয়টি নতুন নয় । প্রায় দশ দিন আগেই, ’৭৫ সালের নভেম্বরের ১৫ তারিখ সমর সেনের বাড়ির আঙিনায় একটি অবিস্ফোরিত গ্রেনেড পাওয়া যায় ।

http://imgur.com/wo5YEiM

আমরা আবার ফিরে যাই ’৭৫ এর ২৬ শে নভেম্বর তারিখে । সকাল ৯টা বেজে ৪০ মিনিট । সমর সেনের গাড়ি এসে দাঁড়ালো দূতাবাসের চৌকাঠে । গাড়ি থেকে নামতেই, গণবাহিনীর সেই ছয় তরুণের স্কোয়াড তাকে জিম্মি করে ফেলে । তাকে বলা হলো,

“আপনি এখন আমাদের হাতে জিম্মি । আপনার ঘরে চলুন, আপনার সাথে আমাদের কথা আছে ।“

সমর সেন কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেলেন । নিজের দূতাবাসের দরজার সামনে এভাবে তাকে অপহরণ করা হবে, ভাবতেও পারেননি ভদ্রলোক । ভাবতে পারেনি কেউই ।

সিঁড়ি দিয়ে একতলা থেকে দোতলায় যাওয়ার পথেই ওপর থেকে ব্রাশফায়ার শুরু হলো । রেকি করার সময় তারা খেয়াল করেনি, ভবনের দোতলায় নিরাপত্তারক্ষীদের একটি দল সর্বদা পাহাড়ায় থাকে ।
সাথে সাথেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লো সবাই । অপহরণকারীদের মধ্যে বাহার, বাচ্চু, মাসুদ ও হারুন ঘটনাস্থলেই নিহত হয় । বেলাল ও সবুজ আহত বস্থায় কাতরাতে থাকে । সমর সেনের কাঁধে গুলি লেগেছিল, কিন্তু সৌভাগ্যের ব্যাপার এই যে, আঘাত ততোটা মারাত্মক ছিলো না ।

http://imgur.com/cutrOru

পরিস্থিতি ততক্ষণে নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে । পুলিশ চলে এলো, লাশগুলো নিয়ে যাওয়া হলো ধানমণ্ডি থানায় । ব্রিগেডিয়ার আবুল মঞ্জুর তখন সদ্য নিয়োগ পেয়েছেন চিফ অফ জেনারেল স্টাফ হিসেবে । সেনাবাহিনী থেকে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন । আহত দুই জিম্মিকারীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ।

http://imgur.com/DfMeJTf

http://imgur.com/LSpn3kq

এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া হয় মারাত্মক । জাসদের অনেক নেতাই এত বড় ঘটনা সম্পর্কে একদমই অন্ধকারে ছিলেন । দলের ভেতরই প্রতিবাদ উঠতে থাকে, ফলস্বরূপ এর পরিকল্পনাকারী আনোয়ার হোসেনকে তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয় । জাসদের পার্টি ফোরাম ঘোষণা দেয়,

“ এই ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তারা বিপ্লবীও নয়, প্রতিবিপ্লবী ও নয় । তারা অবিপ্লবী । “

কিন্তু জাসদের সবাই যে এমন মনোভাব পোষণ করতো, তা নয় । আশির দশকেও জাসদ ছাত্রলীগের স্লোগান ছিলো,
“বাহার-বাচ্চু-মাসুদ-হারুন! দিকে দিকে জ্বালাও আগুন!”

জাসদ কেন এই অপহরণের পরিকল্পনা নিয়েছিল, সেই বিষয়টি এখনো ধোঁয়াশায় রয়ে গেছে । কর্নেল তাহেরের আরেক ভাই আবু ইউসুফ, যিনি নিজেও জাসদের একজন শীর্ষ নেতা ছিলেন, তার ভাষ্যমতে,

“আসলে মার্কিন দূতাবাসের পরিবর্তে ভারতীয় দূতাবাসে আক্রমণ হয়ে যায় । এইসময় ফিলিস্তিনের বীর রমণী লায়লা খালেদ তরূণদের বিরাট অনুপ্রেরণার উৎস ছিলেন । আমাদের পার্টিতে বিভিন্ন দিক থেকে বিভিন্ন রকম চিন্তা-ভাবনা ছিল । যদি বিপ্লব হয় তাহলে ডানপন্থীরা তো সহজে মানবে না, একটা প্রতিক্রিয়া হবেই । সেক্ষেত্রে করণীয় কি হবে? একটা ভাবনা ছিল, মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে জিম্মি করে অবস্থা অনুকূলে নিয়ে আসতে হবে । সে লক্ষ্যে গণবাহিনীর ছেলেরা মতিঝিলের আদমজী কোর্টে মার্কিন দূতাবাসের উপর বহুদিন নজরদারি করে । যখন আমরা সবাই এরেস্ট হয়ে গেলাম- তখন যারা এ কাজে জড়িত ছিল তাদের ভাবনা থেকে এ কাজটি( সমর সেনকে অপহরণ) হয়ে যায় ।“

বাংলাদেশের সাথে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক তখন যেকোন সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি নাজুক ছিল । ইন্দিরা গান্ধী এতোটাই অবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলেন, যে তিনি সমর সেনকে উদ্ধার করে কলকাতায় চিকিৎসার জন্যে নিয়ে আসতে বিমান বাহিনীর একটি দলকে পাঠাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সমর সেন তাতে রাজি হননি । অবশেষে ইন্দিরা গান্ধী কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে ঢাকায় পাঠান, সমর সেনের শারীরিক অবস্থা তদারকির জন্যে । ভারত সরকার একদমই প্রস্তুত ছিলো না এই ধরনের কোন ঘটনার জন্যে । বাংলাদেশ সরকার চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যায় । ঘটনার প্রতিক্রিয়া সামাল দিয়ে প্রেসিডেন্ট সায়েম ফোন করেন ইন্দিরা গান্ধী কে । তাতেও যখন সম্পর্কের শীতলতা কাটছিল না, বিচারপতি সাত্তারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল কে ভারতে পাঠানো হয়, পুরো পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্যে ।

http://imgur.com/VRGm6uW

অপহরণকারীরা রায়েরবাজারের জয়নুল হক শিকদারের দুটি পিস্তল ছিনিয়ে নিয়ে ব্যবহার করেছিল তাদের ব্যর্থ অভিযানে । পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত পিস্তলের সূত্র ধরে শিকদার কে গ্রেফতার করে । অস্ত্র হারানোর তথ্য পুলিশকে না জানানোর অভিযোগে তার জেল হয় । জয়নুল হক শিকদার ১৯৮২ তে আমেরিকায় পাড়ি দেন । বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের একজন । ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান, নিজের নামে একটি খ্যাতনামা বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও প্রতিষ্ঠা করেছেন ।

চারজন অপহরণকারীকে হত্যা ও দুইজনকে জীবিত অবস্থায় গ্রেফতারের জন্যে পুলিশের পাঁচজন সদস্য কে পুরষ্কৃত করা হয় । আইজিপি তাদের প্রত্যেক কে দুই হাজার টাকার পুরষ্কার তুলে দেন ।

একটি রহস্যময় ঘটনা ঘটে এইদিনই । নভেম্বরের ২৬ তারিখ সকাল ৯ টা ৪০ এ সমর সেন আক্রান্ত হন । উইকিলিকসের ফাঁস করা মার্কিন দূতাবাসের তারবার্তায় দেখা যাচ্ছে, সেইদিনই সকাল ১০টা থেকে কিছু সময়ের জন্যে ভারত ও বাংলাদেশের মাঝে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ ছিল । কেন বন্ধ ছিল? মাত্র বিশ মিনিটের মাথায়? এই প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়নি কোথাও । ১৯৭৬ সালের ১৬ জানুয়ারির তারবার্তায় আরো দেখা যায়, মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিস ইউজিন বোস্টারের সাথে আলোচনায় সমর সেন তার অপহরণ প্রচেষ্টার পেছনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন । সমর সেনের মতে, কেউ তাকে অপহরণ করতে চাইলে অবশ্যই ভারতীয় দূতাবাসের সামনে থেকে অপহরণের চেষ্টা করতো না । সমর সেন এই ঘটনাকে হত্যাপ্রচেষ্টা বলেও মনে করছেন না, কারণ তার মতে, আক্রমণকারীরা সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও তাকে হত্যা করেনি ।

পুলিশ এই ঘটনার সূত্র ধরে খুঁজতে খুঁজতে জাসদ কর্মীদের বিপুল হারে গ্রেফতার করা শুরু করে । কেন্দ্রীয় নেতাদের হারিয়ে জাসদ তখন দুর্বল হয়ে পড়েছিল, সেইসময় এই ঘটনা আরেকটি বড় ধাক্কা দেয় জাসদের কাঠামোতে । সেই ধাক্কা বোধহয় জাসদ আর কখনোই সামলে উঠতে পারেনি । কয়েক মাসের ভেতরই কর্নেল তাহেরের ফাঁসি হয়ে গেল । শীর্ষ নেতারাও সকলে জেলে । আস্তে আস্তে জাসদের শক্তি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে ওঠে ।

সবচেয়ে বড় ধাক্কা লাগে কর্নেল তাহেরের পরিবারে । অদ্ভুত এক পরিবার । ৭ ভাই ২ বোনের সবাই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন । এক ভাই বীরউত্তম, তিন ভাই বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত । কিন্তু জাসদের ৭ই নভেম্বরের অভ্যুত্থান ও তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে পরিবারের একজনের ফাঁসি হয়, একজনের হয় যাবজ্জীবন, সমর সেনের অপহরণকাণ্ডে একজন হয় নিহত, একজন আহত, আরেকজনের দশ বছরের কারাদণ্ড । এই পরিবারটি যেন যুদ্ধপরবর্তী বাংলাদেশেরই রূপক, যেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধ্বারা একের পর এক অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানে নিজেরা হানাহানি করে, বিপ্লবের কোন এক অদ্ভুত নেশায় পড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিলেন । আর ক্ষমতার সেই শুন্যস্থান পূরণ করে নেয় মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বিরোধী সেনা কর্মকর্তারা , যারা ইতিহাসের চাকা উলটো দিকে ঘুরিয়ে বাঙলাদেশকে নিয়ে গিয়েছিলেন আরেক গভীর অন্ধকার সময়ে !

রেফারেন্সঃ
১) আলতাফ পারভেজ, ‘মুজিব বাহিনী থেকে গণবাহিনীঃ ইতিহাসের পুনর্পাঠ’
২) মহিউদ্দিন আহমদ, ‘জাসদের উত্থানপতনঃ অস্থির সময়ের রাজনীতি’
৩) দৈনিক ইত্তেফাক, ২৭ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ।
৪) দৈনিক বাংলা, ২৭ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত
৫)দ্য বাংলাদেশ অবজারভার, ২৭ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত
৬) দ্য বাংলাদেশ টাইমস, ২৭ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত
৭) Muchkund Dubey,’ A legend among diplomats’ , March 12, 2003 issue, ‘The Hindu’
৮) ডেভিস ইউজিন বোস্টারের পাঠানো তারবার্তা সমূহ (https://wikileaks.org/plusd/cables/1975NEWDE15781_b.html
https://wikileaks.org/plusd/cables/1975DACCA05708_b.html
https://wikileaks.org/plusd/cables/1976DACCA00272_b.html)
৯) আবু ইউসুফ খান বীরবিক্রমের সাক্ষাৎকার, বিশেষজনের বিশেষ সাক্ষাৎকার, পাঠক সমাবেশ, পৃ ১৫০
১০) J. N. Dixit, Liberation and Beyond: Indo Bangladesh Relations, P. 189


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ইতিহাসের এই প্রসঙ্গটি বিস্তারিত তুলে ধরার জন্য টেলেমেকাসকে ধন্যবাদ।

জাসদের ১৯৭২-১৯৭৫ পর্ব ব্যাপক গবেষণা, তদন্ত এবং ন্যায়বিচার দাবী করে। আলোচনা যদি শুধুমাত্র এই ঘটনাটিতে সীমাবদ্ধ রাখি তাহলে এই ঘটনাটিও গবেষণা, তদন্ত ও বিচার দাবী করে। ১৯৭২-১৯৭৫ পর্বে জাসদের করা অরাজকতা, হত্যা, লুণ্ঠন, নাশকতার প্রসঙ্গ তুললে জাসদের লোকজন বিপ্লবের দোহাই দেয়। কিন্তু তাদের এই দোহাই যে একটি স্বাধীন দেশে বিদ্যমান আইনের আলোকে বেআইনী ও অপরাধমূলক সেই সত্যটাকে তারা স্বীকার করে না। তারা সেটা স্বীকার করুক আর নাই করুক, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার লক্ষ্যে জাসদের কর্মকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার হওয়া উচিত। একইভাবে জাসদের কর্মীদের ওপর কৃত অত্যাচারেরও তদন্ত ও বিচার হওয়া উচিত।

ইতিহাসের পরিহাস এই, যে জাসদ বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে সারা দেশজুড়ে তাণ্ডব চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর সরকারকে স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি, তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র কার্যক্রম চালিয়েছে সেই জাসদ আজ বঙ্গবন্ধুকন্যার কৃপাপ্রার্থী হয়ে ধুঁকে ধুঁকে টিকে আছে। ঐ আমলে জাসদ নেতারা আওয়ামী লীগ আর বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে যা কিছু বলতো, আর আজকে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রশংসায় তারা যা বলে সেগুলো পাশাপাশি রাখলে ‘ডিগবাজী’র সংজ্ঞা পরিষ্কার হয়ে যাবে। কারো কাছে গণকণ্ঠের ঐ সময়কার কালেকশন থাকলে ভালো রগড় দেখাতে পারবেন।

একটা বিষয় খুব স্পষ্ট নয়, সমর সেন অপহরণ ঘটনার কি বিচার হয়েছিল? বিচার হলে কার কী শাস্তি হয়েছিল?

অতিথি লেখক এর ছবি

উইকিলিকসে আমি ১৯৭৬ সালের ৭ মে এর একটি তারবার্তায় দেখেছি, এই হামলার বিচার শুরু হয়েছে । কিন্তু তারবার্তাটি ইলেক্ট্রনিক ডকুমেন্ট নয় বলে পড়তে পারছি না, কিছু মেটাডাটা দেয়া আছে । এই সংক্রান্ত আর কোন তথ্য পাইনি ।

https://wikileaks.org/plusd/cables/1976DACCA%20A-47_b.html

অতিথি লেখক এর ছবি

গণকণ্ঠের কোন সংখ্যা খুঁজে পাইনি । কোন আর্কাইভে অনলাইনে-অফলাইনে আছে কি না জানি না । এই সংক্রান্ত কোন তথ্য পেলে জানাবেন । কৃতজ্ঞ থাকব হাসি

ইউটিউবে আশির দশকের একটা ডকুমেন্টারিতে হাসানুল হক ইনুর বক্তব্য দেখেছিলাম, আর এখনো তার তৈলাক্ত বক্তব্য শুনি টিভিতে । বড় ভাই ভালো ডিগবাজি দিয়েছেন

মন মাঝি এর ছবি

বিপ্লব...যে একটি স্বাধীন দেশে বিদ্যমান আইনের আলোকে বেআইনী ও অপরাধমূলক সেই সত্যটা....

বিপ্লব সর্বদেশেই এবং চিরকালই বেআইনী ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। বিপ্লব মানেই তাই। আইন-বেয়াইন নিয়ে মাথা ঘামিয়ে কেউ বিপ্লব করে না - "স্মারকলিপি-পেশ" করে। হাসি

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

পরাধীন দেশে বিপ্লবের উদ্দেশ্য দেশ স্বাধীন করা। সফল হলে দেশ স্বাধীন, ব্যর্থ হলে বিপ্লবকারীদের গলায় ফাঁসির দড়ি। স্বাধীন দেশে বিপ্লবের উদ্দেশ্য ক্ষমতার পরিবর্তন। সফল হলে বিপ্লবীরা ক্ষমতায়, বিফল হলে সেটা আর বিপ্লব নয় - অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা; আর ব্যর্থ অভ্যুত্থানকারীদের গলায় ফাঁসির দড়ি হবার কথা।

১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ভেতর হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যে অভ্যুত্থান ঘটানো হয়েছিল সেটা আর যা কিছু হোক তথাকথিত 'সিপাহী-জনতার বিপ্লব নয়'। এই তথাকথিত বিপ্লবে জনগণের অংশগ্রহন দূরে থাক, অন্য ক্যান্টনমেন্ট বা জাসদের নেতৃত্বের একাংশের অংশগ্রহনও ছিল না। কর্নেল তাহেরকে সামনে ঠেলে দিয়ে কাপালিকের দল আগেই গা ঢাকা দিয়েছিল। অন্য শহর-গ্রাম দূরে থাক, খোদ ঢাকার লোকজনও বিপ্লবে অংশ নেয়নি। কারণ, বিপ্লব হতে যাচ্ছে বা বিপ্লব হবে এমন গণভিত্তি কখনো তৈরি করা হয়নি। খোদ জাসদেরও যে এই ব্যাপারে কোন প্রস্তুতি ছিল না সেটার প্রমাণ প্লেটে ক্ষমতার খাবার সাজিয়ে জেনারেল জিয়ার হাতে তুলে দেয়া, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কথিত সমাবেশ করতে ব্যর্থ হওয়া।

ঢাকার রাস্তায় ট্যাঙ্ক বের হয়ে এসে 'আল্লাহু আকবর' শ্লোগান দেয়ায় কিছু মানুষ বের হয়ে এসেছিল। খুনী মোস্তাকের সমর্থক দল তার ছবি আর ফুলের মালা নিয়ে ট্রাক মিছিল করার মাধ্যমে তাদের পূর্ব প্রস্তুতির বিষয়টি স্পষ্ট হয়।

এটা বিপ্লব হলে জেনারেল জিয়া ক্ষমতা দখল করলেও সারা দেশে বিপ্লবীরা তাদের বিপ্লবী কার্যক্রম অব্যাহত রাখার চেষ্টা করতো, দমন-নিপীড়ন চললেও। এটা ছিল একটা সামরিক অভ্যুত্থান যেখানে অভ্যুত্থান ঘটিয়েছিল কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে কী করতে হবে সেই সম্পর্কে বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা ও জাসদের কোন ধারণা ও পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় ক্ষমতা জেনারেল জিয়ার হাতে চলে যায়।

আয়রনি এই যে, জাসদ এবং বিএনপি দুই প্রতিপক্ষই এই ঘটনাকে 'বিপ্লব' বলে।

বিপ্লবের নামে ৭ই নভেম্বরে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের বিচার হোক।

হাসিব এর ছবি

জাসদের সশস্ত্র শাখা গণবাহিনীর নেতৃবৃন্দ এইসময় মারিগেল্লার রচনাকর্মের প্রতি মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন ।

আপনি কিছু লেখার রেফারেন্স দিতে পারবেন যেখানে জাসদের সংশ্লিষ্টরা এই রচনাকর্মগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন? 

অতিথি লেখক এর ছবি

আলতাফ পারভেজের বই থেকে সরাসরি উদ্ধৃত করছি -
" 'শহরভিত্তিক গেরিলা অভিযানের কলাকৌশল' সম্পর্কে কার্লোস ম্যারিগেল্লার চিন্তার আলোকে ধারাবাহিক লেখা প্রকাশের দায়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৭-১ ধারাকে ব্যবহার করে ১৯৭৪ সালের জুলাইয়ের বিভিন্ন দিনে তৎকালীন সরকার জাসদের মুখপত্র গণকণ্ঠের অন্তত ১১টি সংখ্যা বাজেয়াপ্ত ও করেছিল ।"
এই লাইনের রেফারেন্স হিসেবে তিনি ব্যবহার করেছেন 'Press Under Mujib Regime' Mahfuz Ullah,, কাকলী প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ১১০

গোল্ড ফিস  এর ছবি

হাসিব ভাই
আপনি গণ উন্নয়ন গ্রন্থগার এর সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দীন আহমেদের লেখা কিছু যুদ্ধ স্মৃতিচারণমূলক লেখাতে খুঁজে দেখতে পারেন। দেশে শেষ বার, আমি গণ উন্নয়ন গ্রন্থাগার (CDL) শেষ দেখেছিলাম ধানমণ্ডি ১৫ নং রোডে। বইয়ের নামটা ভুলে গেছি, কিন্তু আশা করি সেখানেই পাবেন। আর উনি শেখ কামালের কলেজ বন্ধু ছিলেন, কাজেই অনেক ঘটনা আপনি আরও ইতিহাস হিসাবে পাবেন। সমর সেনের ঘটনাটি বলেছিলেন, সমর সেন একদম কোন রকম উত্তেজনা দেখান নি।

লেখাটা অনেক ভালো হয়েছে। আর জাসদের ডিগবাজী আওয়ামী লীগ যেভাবে ভুলে গিয়ে কোলে তুলে নিয়ে বসেছে, তাতে বুঝলাম রাজনীতিতে শেষ বলে কোন কথা নেই মন খারাপ

অতিথি লেখক এর ছবি

"অপহরণকারীরা রায়েরবাজারের জয়নুল হক শিকদারের দুটি পিস্তল ছিনিয়ে নিয়ে ব্যবহার করেছিল তাদের ব্যর্থ অভিযানে ।" - এই জয়নুল হক শিকদার হচ্ছে সিরাজ শিকদারের ভাই। জাসদ কর্তৃক তার দুইটা পিস্তল ছিনিয়ে নেবার গল্পটা বানোয়াট। এদের আরেক ভাই নূরুল হক শিকদার ছিল বিশিষ্ট গার্মেন্টস ব্যবসায়ী - পলমল গ্রুপের মালিক। এদের বোন ভাস্কর শামীম শিকদার।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ তথ্যটির জন্যে । জয়নুল হক শিকদার যে আসলে সিরাজ শিকদারের ভাই, এটি জানা ছিল না । সিরাজ শিকদারের ভাইবোনদের মধ্যে শুধু শামীম শিকদার এবং বাদশা আলম শিকদারের ব্যাপারে জানতাম । বড় ভাই বাদশা আলম শিকদারও সিরাজ শিকদারের মতোই বুয়েটের পুরকৌশলের ছাত্র ছিলেন । মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা তাকে হত্যা করে ।

অতিথি লেখক এর ছবি

বাদশা আলম শিকদার নামে কারো নাম বুয়েটের শহীদদের তালিকায় কখনো দেখিনি। আপনি তথ্যটি একটু পুনর্যাচাই করে দেখবেন।

আরেকটা অদরকারী তথ্য দেই। শামীম শিকদারের হাজবেন্ড জাকারিয়া চৌধুরী জেনারেল জিয়ার মন্ত্রীসভা না যেন উপদেষ্টা সভার সদস্য ছিলেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি তথ্যটির ব্যাপারে সুনিশ্চিত । 'মুক্তিযুদ্ধে শহীদ প্রকৌশলীরা' নামে একটি বইয়ে তার সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেয়া আছে, তিনি কোথা থেকে কবে কোন বিভাগে পড়াশোনা করেছেন যাবতীয় তথ্য। পাশাপাশি শামীম সিকদারের একটি স্মৃতিচারণ ও আছে । শহীদ হওয়ার সময় তিনি উত্তরবঙ্গে ছিলেন খুব সম্ভবত ।
বুয়েটে যে তালিকা আছে, তাতে কেবল ছাত্রাবস্থায় শহীদ বুয়েটিয়ানদের নাম আছে ।

জীবনযুদ্ধ এর ছবি

জয়নুল হক শিকদারের পিস্তল চুরির গল্পটা কেন যেন বিশ্বাস যোগ্য মনে হয় না.

বেশ খাটুনি নিয়ে লেখাটি তৈরি করবার জন্যে ধন্যবাদ। অনেক নতুন তথ্য জানলাম।

পুতুল এর ছবি

বুঝলাম, কর্ণেল তাহের এবং জাসদ খুবই খতরনাক প্রাণী!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

Salekin এর ছবি

আমি সে সময়ে হাফ প্যান্ট পরা প্রাইমারি স্কুল বালক । ক্লাস নাইনে পড়া রবি নামের একজন আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। একদিন শীতের সকালে সে বলল চল ফারমগেটে যাই , কি জানি হইতাছে । আমি খালি পায়ে হাফ প্যান্ট পড়ে তার সাথে হেটে রওনা দিলাম ফারমগেটে ( আমরা আগার গাও সরকারি কলোনিতে থাকতাম )। প্ফথে যেসব মানুষ হেটে ফার্মগেটে যাচ্তেছিল তারা কেউ আমাদের মত তামাশা দেখার জন্য যাচ্ছিল মনে হয় নি, কোন আলাপ হয় নি । ঊল্লেখ্য সে সময়ে আগারগাও তালতলা পর্যন্ত পাকা রাস্তা ছিল আর তার গ্রাম। সামান্য কিছু রিকশা চলত, বাস নেই আর গাড়ি মানে সরকারি গাড়ি - খুব দুরলভ । তেজগাও থানা এলাকায় কিছু সেনাবাহিনির সদস্য ট্রাকে আর শ খানেক মানুষ হেটে খুব হল্লা করে মিছিল করছে । জীবনে প্রথম শুনলাম " নারায়ে তাকবির , আল্লাহু আকবর " স্লগান। মুশ্তাক জিয়া ভাই ভাই স্লোগান শুনেছিলাম বলে মনে হয় কিন্তু স্মৃতি ঘোলাটে মনে হচ্ছে। কিছু সেনা আকাশের দিকে তুমুল গুলি ছুঁড়ে ঊল্লাস করছে । ট্যাঙ্ক ছিল বলে মনে পড়ে না । আমরা বেশ খানিকক্ষন সেই মিছিল দেখলাম , তারপর মিছিলটা ক্যান্টনমেন্টের দিকে চলে গেলে আমরা হেটে বাসার দিকে যাই।
ফেরার পথে আমরা খুব ঊত্তেজিত ছিলাম , গুলি , মিছিল আর বেশ কিছু গুলির খোসা পাওয়ার কারণে ।
বাসার কাছে পৌঁছে রবি তার সমবয়সীদের জানাল কি দেখে এসেছে । সবাই অবাক। কিছু অভিভাবক এসে জড়ো হলেন। আমার প্যান্তের পকেট থেকে গুলি খোসা দেখালাম - তবুও কেউ বিশ্বাস করল না। ঠিক সে সময়ে একজন সেনা সদস্য পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন । আমি সরাসরি উনাকে বললাম, একটু গুলি করেন না । তখন সেই সেনা সদস্য তার এস এম জী থেকে আকাশের দিকে ব্রাশ ফায়ার করলেন। আমরা মহা আনন্দে গুলির খোসা কুড়ালাম ।
তারপর সন্ধ্যার দিকে কিছু মানুষকে দেখলাম নারায় তাকবির দিয়ে মিছিল করছে - এরপর নারায়ে তাকবির ঘন ঘন শোনা যেত । সংক্ষেপে এই হচ্ছে একজন বালকের দেখা ৭ নভেম্বরের মহান বিপ্লব ও সংহতি দিবস ।
পরদিন দৈনিক বাংলায় অবশ্য বিরাট খবর ছবি ছাপা হয়েছিল ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।