ক্ষুদ্র ডিটেইল্গুলি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ২১/১২/২০১৬ - ৭:৫০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একটা সময় চলে আসে যখন আর বড় বড় বিষয়গুলি চোখে-মুখে কিংবা স্মৃতিতে লেগে থাকে না। খুব ছোট অ/দরকারি ডিটেইলসগুলি কিভাবে যেন রয়ে যায়।
এখন শীতের রাত এলেই আমি একটা সমুদ্র-সমুদ্র সুগন্ধির গন্ধ পাই। যে রাতে সে সমুদ্রের ঘ্রাণ পেয়েছিলাম সে রাতের ডিটেইলস মনে নাই, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিন্তু অতি দরকারি কথোপকথনের সামান্যতমও মনে নাই,দীঘিতে পানি সামান্য বাতাসে নড়েছিল কিনা, একটা শুকনো পাতা হঠাৎ চমকে দিয়ে ঝরেছিল কিনা,উত্তাপ কতটুকু ছিল বা আদৌ ছিল কিনা কিছু নিয়েই কোন ধারণা নাই কিন্তু শীতের রাতে এক জ্বালাধরানো নেশার মত আমি ওই সুগন্ধির দৈব গন্ধ পেলেই বুক ভরে অনেকটা শ্বাস নিই।

একদিন কতিপয় যুবক যুবতী ঘুরঘুট্টি রাতে তারা দেখতে বের হল।ঘাস মাড়িয়ে চলতে গিয়ে সবার পেছনে পড়ে গেলাম, হঠাৎ আকাশের দিকে চোখ পড়তেই দেখি অজস্র গুঁড়ো গুঁড়ো তারার মাঝে ছুটে যাচ্ছে এক অতিকায় আশ্চর্য ফুলকি। অসম্ভব বিস্ময়ে আমি ভুলে গেলাম এক মৃত্যুপথযাত্রী জ্বলন্ত তারার কাছে মানুষের যে অনেক কিছু চাওয়ার আছে। সেদিনের যুবক-যুবতীরা চাঁদ ও গুঁড়ো-তারাভর্তি আকাশের নিচে হাল্কা ভেজা ঘাসের ওপর বসে কি জল্পনা-কল্পনা করেছিল? কার হৃদয়ে ছিল মৃদু আস্ফালন? কারা হারিয়ে যেতে চেয়েছিল দূরে ও আরও দূরে? কিছু না মনে রাখতে পারার তীব্র ব্যথাবোধ আমাকে খুব একটা আক্রান্ত করতে পারেনা কারণ আমার চোখে ওই আগুনের আশ্চর্য ফুলকি- একটা অতিকায় তারা কিভাবে অসম্ভব জ্বলতে জ্বলতে আবার নিভে গেলো সেই দৃশ্য ভেসে থাকে।

সমতল থেকে অনেক উঁচুতে একবার দুটি বোন ঘুরতে গিয়েছিল তাদের বাবা ও মার সাথে। প্রথমবার দেশের বাইরে যাওয়া, ছোটটির মনে অন্যরকমের দুরুদুরু আনন্দ। অত বড় উঁচুনিচু পথ,পাহাড়, মন্দির ও মনেস্টারি, কুয়াশা ও মেঘের আড়ালে কাঞ্চনজঙ্ঘার হাতছানি,ধোঁয়া-ওঠা বিশেষ চায়ের নেশালো গন্ধ--- অথচ স্মৃতিতে কি লেগে আছে? যখন দুজন সারা বিকাল-সন্ধ্যা ওই পথে হেঁটে বেড়িয়ে ক্লান্ত হয়ে হোটেলের সামনে দিয়ে চলে যাওয়া সরু বাঁকের মত পথের পাশে দাঁড়িয়ে নিচের দিকে তাকালো- পাহাড়ের গায়ে গায়ে লেগে থাকা জনপদের সান্ধ্য-প্রস্তুতিতে সকল ঘরে জ্বলতে থাকা টিমটিমে আলো তখন মনে হল পাহাড়ের গায়ে বিছানো এক সহস্র তারার চাদর। ক্যামেরায় ধরার মত নয়, চোখে ধরে রাখার মত। ওই ভ্রমণ, পাহাড়ি শীতের রাত, চায়ের স্বাদ বা আরও কত কিছু স্মৃতিতে নেই-আছে এক বিশাল ঝিকিমিকি চাদর ও দুটি বিশোর্ধ তরুণীর শৈশবে ফিরে যাওয়ার মত শিশুতোষ বিস্ময়।
জীবন বোধকরি প্রকৃতপক্ষে এইসব অসংখ্য ক্ষুদ্র ডিটেইলে, এর থেকে বেশি কিছুতে নয়।

স্কিকু


মন্তব্য

জিজ্ঞাসু এর ছবি

ভাল লাগল । লেখা আরও বড় হলে আরও ভাল হত।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

এক লহমা এর ছবি

চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অপ্রকৃতিস্থ এর ছবি

ভালো লেগেছে লেখা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।