এখনও নারীদিবস

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ০৮/০৩/২০১৭ - ৯:৫৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ব্যাঙ্গালোরের রাস্তাঘাট খুব বেশী আলাদা না। অনেক পরিচিত দৃশ্যই চোখে ধরা পড়ে যাওয়া আসার পথে। দোকানপাট, মানুষজন, শহুরে জীবনযাত্রা কীংবা কিছু পরিচিত গাছ। মিলে যায় অনেককিছুই, শুধু একটা জিনিসই বেশ বড় পার্থক্য হয়ে ফুটে ওঠে, শত শত কিশোরী থেকে মধ্যবয়স্কা নারী স্কুটি বাইক নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে শহরময়। খুব ভালো লাগে দৃশ্যগুলো, ছোট্ট বাচ্চাটাকে স্কুটির সামনে বা পিছনে বসিয়ে কোনও মা হয়ত এসেছে শপিং এ, ফেরার সময় বাচ্চাটাকে নিয়ে কিছু খেয়ে আবার লম্বা টানে পৌছে যাবে বাসায়। আবার সকালে মা হয়ত অফিসে যাওয়ার পথে বাচ্চাটাকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে যাচ্ছে বাইকে করে। আমার মায়ের কথা মনে পড়ে যায়, কী আধুনিক আর স্বাধীনচেতা একজন মানুষ ছিল! কী অসাধারণ দক্ষতায় সবদিক সামাল দিয়ে চলত আর কত স্মার্টই না ছিল। আমাকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে যেত, আবার ছুটি হলে অফিস থেকে এসে নিয়ে যেত, আমি রাজত্ব হত মায়ের কর্মস্থল। মা ব্যাঙ্গালোরে থাকলে হয়ত আমিও মায়ের বাইকের পিছনে চড়ে ঘুরে বেড়াতে পারতাম হাওয়ায় উড়ে। আমি পারিনি, আমি জন্মেছিলাম অন্য সমাজে, অন্য মানসিকতার আবহে।
এখানে কত স্টুডেন্ট মেয়ে, বাইক নিয়ে চলে যাচ্ছে কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে, কীংবা প্রাণবন্ত কোনও আড্ডায়, চলাফেরার এক গতিময় স্বাধীনতা। কেউ তাকিয়ে নেই তাঁদের দিকে গিলে খাওয়া চোখে কীংবা কুৎসিত কোনও বাঁকাদৃষ্টিতে।

আমার স্কুলের দিনগুলোতে আমার শহরে আমি কোন মেয়েকে সাইকেলও চালাতে দেখিনি। কোনও মেয়ে সাইকেল চালাতে পারে এই ব্যাপারটাও যেন অদ্ভুত ছিল আশেপাশের মানুষজনের কাছে। আমি নিজে সাইকেল নিয়ে শহরের বাইরে জোরে ছুটে চলার সময় ভাবতাম, কেন আমার এই স্বাধীনতা একটা মেয়ে পাবে না? কেন স্কুল-কলেজের গণ্ডী, প্রাইভেট আর বাসার বাইরে তাঁদের খুঁজে পাওয়া যাবে না? কেন রাস্তায় গিজগিজ করা ছেলেদের মত মেয়েরাও নেমে আসে না? এগুলো কোনও প্রশ্ন ছিল না, কারণ আমি জানতাম যে ঠিক কী কারণে একটা মেয়ে এই সমাজে আবদ্ধ হয়ে যায়, কীভাবে তাকে আটকে ফেলা হয় নানারকম চাপিয়ে দেওয়া আচার, সংস্কার আর বিধিনিষেধে। প্রতি পদক্ষেপে তার ট্যাবু, পুরো দেশ ও জাতি সাগ্রহে অপেক্ষায় আছে তার ত্রুটি খুঁজে বের করার জন্য কীংবা নিজেদের লেলিহান লালসার তৃপ্তি ঘটাতে তাকে ইচ্ছামত বিশেষণে অভিহিত করতে। বলাই বাহুল্য, বিশেষণগুলো এতই ভদ্র(!) যে শুনলে মনে হতে পারে, মানুষ আসলে বুক আর নিম্নাঙ্গের দুটি জায়গা ছাড়া আর কিছু না। আমি উত্তরগুলো জানতাম, তাই আক্ষেপ বাড়ত, কিছু অক্ষম রাগও হত, মেয়েরা নিজেরা কেন আরেকটু শক্ত হয় না? কেন একটু চিন্তা করতে শেখে না?

আসলে চিন্তাও হয়ত করে অনেকেই। কিন্তু শেষমেশ সাহসে আর কুলিয়ে উঠতে পারে না। এই সমাজে তার বিকৃত অর্থহীন নিয়মের বাইরে গেলে, সমাজ যেভাবে ঘিরে ধরে মানুষকে তা দেখলে খোদ শয়তানও মনে হয় লজ্জা পাবে। তাই মেয়েগুলো আস্তে আস্তে গঙ্গাফড়িং হয়ে যায়। যারা জানে না তাদের জন্য বলে রাখি, গঙ্গাফড়িং কে আটকানোর চেষ্টা করলে প্রথমে বের হবার জন্য অনেক চেষ্টা করে, যখন পারে না তখন হাল ছেড়ে দেয় একেবারেই। তখন যদি তাকে মুক্তও করে দেওয়া হয় তাহলেও আর মুক্ত হতে পারে না। ওরকম দশাই মেনে নেয় অধিকাংশ মেয়ে, মনোজগতে পাকাপাকিভাবে গেঁথে যায় তাদের যে তারা দুর্বল, অক্ষম, এবং পুরুষের উপর নির্ভরশীল হয়ে তাকে চলতে হবে। মানুষের জীবন পেয়ে তাদের সেটা কাটাতে হয় বন্দী গঙ্গাফড়িং হয়ে, এর চেয়ে বড় কষ্টের ব্যাপার পৃথিবীতে খুব বেশী ঘটে না, এবং এই দুই হাজার সতেরো সালে এসেও বিশ্বের অধিকাংশ মেয়ের ভাগ্য হয়ত এভাবেই লেখা হয়ে যায়।

পৃথিবী বা কষ্টের কথা বললে চলে আসে আরও অনেককিছু। আমাদের সমাজ এবং তথাকথিত সভ্যতার ইতিহাস আসলে নারীর উপর অত্যাচার আর তাঁদের কান্নার ইতিহাস। প্রতিটা যুদ্ধের রক্ত ধোওয়া হয়েছে নারীর চোখের জলে, জন্ম থেকে হাজারো বিধিনিষেধ আর অবমাননার পাহাড় চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে নারীদের উপর, তাঁদের পুড়িয়ে মারা হয়েছে, জীবন্ত কবর দেওয়া হয়েছে, ইচ্ছেমত তাঁদের শরীরকে ব্যবহার করা হয়েছে, শুধুমাত্র একটি কারণে, “পুরুষের সন্তুষ্টি এবং খামখেয়াল”। আজও তাঁদেরকে একদিকে যেমন বস্তায় ভরে ঘরে আটকে ফেলার ষড়যন্ত্র চলছে যাতে পুরুষ তাকে যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করতে পারে, ঠিক তেমনিভাবেই তাঁদের এমনভাবে বাজারে তোলা হচ্ছে যেখানে মানুষটি মুখ্য নয়, মুখ্য তার শরীর। কোথায় যাবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষগুলো? যারা কিনা মেধা বা সামর্থ্যে কোনও অংশে কম না হয়ে বরং এক সমুদ্র মায়া, ভালোবাসা আর যত্ন নিজেদের ভেতরে নিয়ে হাজারটা অপমান, নির্যাতন আর অবিচার সহ্য করে যাচ্ছে হাজার বছর ধরে।

পৃথিবী বড্ড বড় হয়ে যায়, হাঁপিয়ে উঠব ফিরিস্তি দিতে গেলে। বাংলাদেশের দিকে তাকানো যাক। দেশের ৭২ শতাংশ বিবাহিত নারী কখনও স্বামীর নির্যাতনের কথা প্রকাশ করেন না। এই নির্যাতনের ধরণ কেমন? না, শুধু মারধোরের কথা না। একটা মানুষকে কতভাবে নিষ্পেষণ করা যায় তার হাজারটা উদাহরণ ছড়িয়ে আছে আমাদের আশেপাশেরই সুখী(!) পরিবারগুলোয়। শিক্ষিত, ভদ্রসমাজের তলে যে কদর্য অন্ধকার তাতে কত মেয়ের অশ্রুভেজা কাজল মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে। আমার ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবী ও ফোকাসড মানুষগুলো হত মেয়ে। বছরের পর বছরের কষ্ট করে শেখা জ্ঞান, আর অর্জন করা যোগ্যতা এক মুহূর্তে নাই হয়ে যায় যখন মহান স্বামী বলেন, “না”। স্বামীর অপছন্দ কীংবা সংসার সামলানোর অজুহাতে কত মেয়ে হারিয়ে গেল এভাবে। কত মেয়ে নিজের ভালোলাগা, শখ কিংবা সামর্থ্যের জায়গাগুলো ভুলে গেল। মেয়েটা আর গান গাইতে পারে না, নাচের নাম মুখেও আনে না, পড়াশোনা করতে গেলে শুনতে হয় নানা অজুহাত, চুল খুলে ঘুরতে পারে না, কাপড়ের আস্তরণে বন্দী হওয়া চুলগুলো নিয়ে আর খেলা করতে পারে না মুক্ত বাতাস, বের হতে গেলে হাজারটা কৈফিয়ত দিতে হয়, মেয়েবন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া বাড়াবাড়ি, ছেলেবন্ধুগুলোর নাম মুখে আনাও বারণ, চারিদিকে কী সম্মানজনক অবস্থান! দেশের ৪২ শতাংশ পুরুষ স্ত্রীকে চাকরি করতে দিতে চান। বাকি ৫৮ ভাগের কাছে স্ত্রী শুধু শরীর আর সন্তান জন্মের মেশিন ছাড়া কিছু না মনে হয়। কী চমৎকার, একটা মেয়ে সারাজীবন পড়াশোনা করে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়ে এসে শুধু একটিমাত্র “না” এর কাছে মুখ থুবড়ে পড়ছে। না মানলেই তুমি খারাপ মেয়ে, তোমার চরিত্রে সমস্যা আছে তোমার। একটা সমস্যাপূর্ণ সমাজের প্রথম ও প্রধান শিকারই হচ্ছে নারী।
দিনদিন কোথায় যাচ্ছি আমরা? প্রতিনিয়ত মেয়েদের জন্য কী ভয়ঙ্কর একটা জায়গা হয়ে উঠছে আমার দেশ। নতুন করে আবার তাঁদের ঘরে বন্দী করে ফেলার ষড়যন্ত্র চলছে যেমন একদিকে তেমনি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে মানুষের মানসিকতা। কোনটাই দিনশেষে ভাল ফলাফল নিয়ে আসবে না মেয়েদের জন্য। কী বিপুল নেতিবাচক মনোভাব! শুধু তথাকথিত “অশিক্ষিত” বা “নীচু” সমাজ নয় বরং উপরে ফিটফাট –আধুনিক-শিক্ষিত কিন্তু ভিতরে মধ্যযুগকে বয়ে বেড়ানো কোটি কোটি মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে চারপাশে। এদের কাছে, মেয়েরা খারাপ, সমস্যার জিনিস, উপভোগের জিনিস, বুদ্ধিহীন এবং তাঁদের সবসময় পুরুষের কথামত চলা উচিৎ। তাছাড়া, পুরুষকে অসম্মান করতে তাকে মেয়েদের সাথে তুলনা করা তো আছেই, যেন মেয়ে হওয়াটা কত নিকৃষ্ট আর পুরুষ হওয়া কত গর্বের! তথাকথিত সুশীল বা প্রগতিবাদীগণেরও একে অপরকে গালি দিতে গেলে প্রতিপক্ষের মা-বোন ছাড়া চলে না। তাছাড়া জাতীয়ভাবেই এখন আমরা রাগ মেটানোর কাজে কিংবা অপরকে ছোট করার কাজে তাদের মা-বোনকে না নিয়ে এসে থাকতেই পারি না, এতটা উন্নতি হয়েছে আমাদের লোকসংস্কৃতির! ছোট ছোট স্কুলের বাচ্চা, তাদের কাছেও মেয়েরা হয়ে উঠছে আনন্দের উৎস, তাদের টিজ করে মজা পাওয়া যায়। কোটি কোটি স্কুল-মাদ্রাসা ছাত্রের কাছে মেয়েরা যেন বন্ধু নয়, শুধুই মেয়ে; মেয়েরা যেন সহপাঠী নয়, শুধুই মেয়ে; মেয়েরা যেন মানুষ নয়, শুধুই মেয়ে। এরা যত বড় হতে থাকবে এদের মানসিকতার কি আহামরি কোন উন্নতি হবে?

এখন আমরা হাইপার লুপের স্বপ্ন দেখি, টাইম ট্র্যাভেলের স্বপ্ন দেখি, ঈশ্বরের কণাও তৈরি করে ফেলতে পারছি ইদানীং। কত এগিয়ে গেছি আমরা তাই না? অথচ এখনও পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে একটা মানুষ নেই হয়ে যেতে পারে শুধু একটা কারণে, যদি সে মেয়ে হয়! এখনও প্রতি মুহূর্তে তাঁদেরকে সন্ত্রস্ত থাকতে হয় তাঁদের শরীর নিয়ে (কিছু কিছু সমাজে তো এমনকি শরীর এতটাই গুরুত্বপূর্ন যে কেউ ছুঁয়ে দিলেই নাকি “মেয়েটার” সম্মান ধ্বংস হয়ে যাবে); এখনও কোথাও কোথাও সে নিছক পুরুষের আনন্দের বস্তু, তাঁদের জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি কেটে যায় পুরুষের ইচ্ছাখুশীতে; এখনও একদল শয়তান তাকে ছিঁড়েখুঁড়ে খেয়ে ফেলে রাখতে পারে, তার বিচার চাওয়ার জায়গাটাও নেই মতামত তো দূরের কথা; এখনও কোথাও কোথাও তার চুল দেখা গেলে পাথর মেরে মেরে তাকে রক্তাক্ত করে দেওয়া যায়; এখনও তাকে এসিডে ঝলসে দেওয়া যায় যখন তখন.....হাসিমাখা মুখটাকে একদলা গলে যাওয়া মাংসপিণ্ড বানিয়ে দেওয়া যায়; এখনও কয়েকটা শয়তানের পাশবিক নির্যাতনের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করানো হয় মেয়েটার পোশাক দিয়ে; এখনও কয়েকটা টাকার উন্মাদনায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া যায় তাঁদের শরীরে; এখনও পৃথিবীর বড় একটা অংশের প্রধান চিন্তার কারণ মেয়েদের চুল দেখা যাওয়া না যাওয়া, তাঁদের পোশাক এবং চলাফেরা; এখনও নির্দ্বিধায় একটা মেয়েকে খুন করে ফেলা যায় পরিবারের সম্মানের নামে যদি মেয়েটা নিজের ইচ্ছানুযায়ী জীবন সাজাতে চায় (হায়রে সম্মান!); এখনও একটা মানুষের স্বপ্ন, ইচ্ছা, মতামত সবকিছুকে একটা কথা বলে থামিয়ে দেওয়া যায়, “তুমি মেয়ে!”। আসলেই অনেক এগিয়েছি আমরা, অনেক সভ্য হয়ে গেছি!

গতবছর যখন এই ছবিটা এঁকেছিলাম একবুক হতাশা নিয়ে, তার থেকে দেশ হয়ত আরও পিছিয়েছে এই সময়ে। এখন আইন করে দেওয়া হয়েছে যাতে একটা বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া যায় যেকোন বয়সে, এখনও বিভিন্ন মাহফিলে মেয়েদের নিয়ে কুৎসিত আর অপমানকর মন্তব্য ও নির্দেশনা দিলেও কারও গায়ে লাগে না বরং দিনে দিনে বাড়ছে তাদের সংখ্যা, এখনও মেয়েদের শরীর নিয়ে গালি না দিলে বন্ধু সমাজে কুল হওয়া যায় না, আজও প্রতিনিয়ত মুখোমুখি করে দেওয়া হচ্ছে নারী ও পুরুষকে, বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে দূরত্ব আর হারিয়ে যাচ্ছে তাদের “মানুষ” পরিচয়। আজ চারপাশে ডুবছে নারী, চারপাশ থেকে বিষাক্ত বাঁকা জল এসে তাঁদের ডুবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষগুলো ভেসে থাকার প্রাণপণ চেষ্টা করছে, কিন্তু সমাজ, সভ্যতা, ধর্ম, রাজনীতি সবকিছু মিলিয়ে এখনও তাঁদের ডুবিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। এই স্রোতে যদি নিজেরা সাঁতরে না বাঁচে তাহলে তলিয়ে যাবে সহজেই। কিছু পুরুষ হয়ত লাইফ জ্যাকেটটা ছুঁড়ে দিতে পারে, কিন্তু দিনশেষে নারীর মুক্তি তাঁদের নিজেদেরই হাতে। যেদিন মেয়েরা এই স্রোত ঠেলে তীরে গিয়ে উঠবে, পায়ের নীচে যে শক্ত মাটি পাবে, সেটা কিন্তু হবে স্বর্গভূমি।

-সীমান্ত রায়

ছবি: 
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন

মন্তব্য

আয়নামতি এর ছবি

পোস্টের শিরোনাম 'এখনও নারীদিবস' কেন ভাই? আপনার কী মনে হয় এই দিনটি অপ্রয়োজনীয় এখন? সেটি হলে কেন মনে হয়/হচ্ছে জানার কৌতূহল হলো।

*
আপনার আঁকার হাতটি ভারী চমৎকার! লিখালিখি-আঁকাআঁকি চলুক।

অতিথি লেখক এর ছবি

আসলে শিরোনামটা একটা আক্ষেপ থেকে দেওয়া। এতদিন পরে এসেও যে সভ্যতার এই পর্যায়ে আমাদের খুব বেসিক কিছু বিষয় নিয়ে লড়াই করতে হচ্ছে, এখনও যে মানুষ পরিচয়টা প্রাধান্য পেল না, এখনও যে নারীদের অধিকারের জন্য বা সম্মানের জন্য যুদ্ধ করে যেতে হচ্ছে, সেই আক্ষেপ বা ক্ষোভ থেকেই শিরোনামটা এসেছে।

অনেক ধন্যবাদ পড়া এবং ভাবার জন্য। চেষ্টা থাকবে লেখালেখির, আঁকাআঁকিটা খুব অনিয়মিত।

-সীমান্ত রায়

অতিথি লেখক এর ছবি

সময়ের পরিবর্তনের সাথে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি হয়, মানুষের জীবনযাত্রা পালটে গিয়ে একইসাথে মসৃন ও জটিল হয়, সামাজিক রীতিগুলো পালটায়, মূল্যবোধ পালটায়, মানুষের মানসিকতাও পালটায়। শুধু একটা জিনিস মোটামুটি ধ্রুব থাকে - নারীর প্রতি পুরুষের আচরণ। আপাতদৃষ্টিতে যে সময়কালটিকে বা যে স্থানটিকে নারীর জন্য অনুকূল বলে মনে হয়, তখন প্রায়ই আবিষ্কার হয় তা সত্য নয়। সামান্য সুযোগ পেলে কিছু পুরুষ তাদের থাবা ঠিকই বসিয়ে দেয়। তাই নারীর জন্য আপাত নিরাপদ ব্যাঙ্গালুরুর এম জি রোডে নববর্ষের রাতে আরেকটা 'টিএসসি চত্ত্বর' বা 'তাহরীর স্কয়ার' নেমে আসে; অথবা ঈশ্বর কণিকা আবিষ্কার করা পৃথিবীর স্থানে স্থানে এক একটা পাকিস্তান, আফগানিস্থান বা সিরিয়া নেমে আসে। নারীর জন্য পৃথিবীটা এখনো একটা অনন্ত 'তাহার্‌রুশ গামাঈ'। সেখানে কখনো কখনো একটু বিরতি থাকে বটে, কিন্তু এই অনন্ত চক্র শেষ হয় না।

অতিথি লেখক এর ছবি

হ্যাঁ, সহমত। নারীর জন্য নিরাপদ জায়গা আসলে লুকিয়ে থাকে পুরুষের মানসিকতার উপর। সেটার বিকৃতি ঘটলে যেকোন জায়গায়ই হয়ে ওঠে ভয়ানক। ভারত তো অবশ্যই মেয়েদের জন্য খুব সুখকর জায়গা নয়। এখানের নির্যাতন, অবিচার আর অসম্মানের কথা টেনে আনলে সেটা নিয়ে আরও একটা দীর্ঘ লেখা বের হবে। তবু এখানে কিছু প্র্যাকটিক্যাল দিক দিয়ে মেয়েদের জন্য সুযোগ খোলা থাকে। কিছুটা স্বাধীনতা মেলে। তবে মানসিকতার আহামরি কোনও ফারাক আছে বলে মনে হয় না। এর সাথে আছে অসম্মানজনক মিডিয়া আর মেয়েদের মোড়কবন্দি করে ঘষেমেজে খেলনা বানানোর তাল। তারপরও যখন মেয়েদের মধ্যে গতিশীলতা দেখি এখানে, ভাল লাগে ভাবতে আর নিজের দেশের জন্য একটু হলেও আক্ষেপ ঝরে।

-সীমান্ত রায়

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার লেখায় সত্যিই বাস্তব চীত্র ফুটে উঠেছে। যে জিনিষটার অভাব আছে মনেয় হয়েছে সেটি হলো নারীকে ভোগ্য পণ্য করে পুরুষদের ব্যবসা আর এই ব্যবসায় নারীরাই নিজেদেরকে বিকিয়ে দিচ্ছে সেই ব্যপারটি। পুনষ সমাজ নারী দেহকে পূঁজি করে এক একটি আইটেম বাজারে ছাড়ে, নারীরাও অর্থ জস ব্লা ব্লার লোভে সেগুলোকে নিজের করে নেয়। পুরুষ নারীর প্রতিদ্বন্দী নয়, সমাজে এই দৃষ্টিকোনের দারুণ অভাব আছে। হান্টার।

অতিথি লেখক এর ছবি

চীত্র > চিত্র
জিনিষ > জিনিস
ভোগ্য পণ্য > ভোগ্যপণ্য
পুনষ > ?? (কী তা বুঝিনি)
পূঁজি > পুঁজি
অর্থ জস > অর্থ, যশ

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। আমার মূল লেখাটা আরও বড় ছিল, এখানে কিছু কিছু অংশ বাদ গেছে। মূল লেখাটা থেকে আরও কিছু অংশ দিচ্ছি,

"তৃতীয় বিশ্বের কথা ছেড়েই দিলাম, তথাকথিত প্রথম বিশ্ব নিয়েও খুব বেশী উচ্ছ্বাস দেখাতে পারছি না। সেখানেও মেয়েরা “Bitch”, ইন্টারনেট ঘাঁটলে মেয়েদের নিয়ে হাজার হাজার জোকস পাওয়া যাবে যেখানে মেয়েদেরকে এবং তাঁদের বুদ্ধিমত্তাকে খুব সুনির্দিষ্টভাবে হেয় করা হয়েছে। মেয়েদের নিয়ে শত শত স্টেরিওটাইপ মনোভাব ঐসব সমাজেও বিদ্যমান। আর পর্ণ ইন্ডাস্ট্রির কথা নাই বা বললাম। কত আবার ভ্যারিয়েশন তার, মেয়েদেরকে উপভোগ করার কত রকমের আয়োজন! যেন তারা মানুষ নয়, পুরুষের কোন আনন্দের খেলনা। মানুষ নয়, শুধু শরীরটাকে নিয়ে যে লালসা, সেটার শেষ কোথায়?"

-সীমান্ত রায়

সোহেল ইমাম এর ছবি

চলুক

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

অতিথি লেখক এর ছবি

"One is not born a woman,
rather becomes one." - সাইমন ডি ব্যুভুয়ার

এক লহমা এর ছবি

অনেকটা পথ হাঁটা বাকি ঠিক-ই কিন্তু, আমরা এসছিও বেশ খানিকটা। আর, সবচেয়ে বড় আশার কথা - যে যত-ই থাবা বসাক, আর পাঁচিল তুলুক, নারীর এগিয়ে চলা সাময়িক আটকাতে পারে, থামিয়ে দিতে পারবে না। লেখায় চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।