গোফা খানের সাথে অনির্ধারিত সাক্ষাত

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ২৪/০৩/২০১৭ - ৮:২৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

৭৫ বছর বয়স্ক পাকিস্তানী গোফা খানের সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারটা উল্লেখযোগ্য কোন বিষয় ছিল না, কিন্তু ইয়াহিয়া খানের বিষয়ে তার দেয়া কিছু অগুরুত্বপূর্ণ তথ্যের জন্য ঘটনাটা বলতে হচ্ছে। সিঙ্গাপুরে ৪ ঘন্টার একটা ট্রানজিটে পরবর্তী বিমানে আরোহনের জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে তার সাথে সামান্য আলাপ হয়েছিল।

শুরুতেই গোফা খান পাকিস্তানী এটা শোনার পর আমি তার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে এয়ারপোর্টের সুন্দরী ললনাদের দিকে মনোযোগ দেয়া শুরু করি। কিন্তু পরবর্তী বাক্যে যখন সে জানালো এককালে সে ইয়াহিয়া খানের নফর ছিল, তখন তার দিকে আবার ফিরে তাকাতেই হলো।

তাকালাম শুধু, কোন কিছু জিজ্ঞাস্য ছিল না। গোফা খান নিজ থেকেই আধা উর্দু, আধা ইংরেজি, সিকি বাংলা মিশিয়ে যা বললো আমি সেটাই শুনে গেলাম। মাঝখানে গোফা খান একবার উঠে দুজনের জন্য দুই গ্লাস কোক নিয়ে এলে আমি তা নেবার সময় তার হাতে একটা ডলার দিয়ে বললাম, দুঃখিত, আমি কোন পাকিস্তানীর পয়সায় থেকে কিছু খাই না, এটা তোমাকে রাখতে হবে। গোফা খান বিমর্ষমুখে ডলারের নোটটা পকেটস্থ করলো।

আমি উর্দু হিন্দি কিছুই বুঝি না। মাঝে মাঝে দুটোকে এক লাগে। তাই গোফা খান যখন কথা বলছিল আমি তা হিন্দি সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা দিয়ে যতটা সম্ভব অনুবাদ করে বোঝার চেষ্টা করে গেছি। গোফা খানের ইংরেজি খুব দুর্বল এবং প্রায়ই তা হোঁচট খাচ্ছিল। তাই তাকে অভয় দিয়ে বললাম উর্দু আর বাংলাতে বলতে।

ইয়াহিয়া খান সম্পর্কে প্রথম যে বিরক্তি প্রকাশ করলো তাতে আমি অপটু অনুবাদে যা বুঝলাম তাতে মনে হলো কথাটা হবে - 'ইয়াহিয়া হারামজাদালোক পাতলা হাগতো'। বাঙালী হিসেবে ইয়াহিয়ার পাতলা বা কষা কিছুতে আগ্রহ না থাকলেও গোফা খানের সমস্যাটা বুঝতে চেষ্টা করলাম। কথাবার্তা আরেকটু আগানোর পর বুঝলাম সে ইয়াহিয়ার অতি ব্যক্তিগত চাকর ছিল যাকে সব রকমের নিন্মবর্গীয় কর্ম সম্পাদন করতে হতো। তাই এত বছর পরও সেইসব তিক্ত স্মৃতি নিয়ে বিরক্ত। সম্ভবত কোন বাংলাদেশী পেলে প্রাচীন বিরক্তি সমূহ ঝাড়ার চেষ্টা করে। বাংলাদেশী মাত্রেই ইয়াহিয়া নিন্দায় আনন্দিত হতে পারে ভেবে।

আনন্দিত আমিও হলাম এবং কৌতুহলের দরোজা আরেকটু খুললাম। বাংলাতেই কথা শুরু করলাম এই পর্যায়ে এসে। সে বলছে উর্দুতে, আমি বলছি বাংলাতে। সে এক অসম্ভব ধরণের বঙ্গার্দু আলোচনা চললো ঘন্টাখানেক ধরে। যার অধিকাংশ তার ব্যক্তিগত আলাপ। কিভাবে সরকারী চাকরী ছেড়ে নানান ঘাটের জল খেয়ে সে নিজের ব্যবসা দাঁড় করিয়েছে এবং শেষ বয়সে এসে নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করছে সেই সব হতাশার কথা।

জিজ্ঞেস করলাম কখন থেকে ইয়াহিয়ার ওই সমস্যা শুরু হয়? সে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকলো, সম্ভবত স্মৃতির পুকুরে ডুব দিল এবং বিড়বিড় করে কাউকে গালি দিল। তারপর প্রায় ফিসফিস করে বললো - "একাত্তরের মার্চে তোমাদের শেখ মুজিব যেদিন বড় একটা জনসভায় স্বাধীনতার সংগ্রাম ঘোষণা করলো সেদিন থেকে তার মদ খাওয়া দিগুন হলো এবং ঘনঘন বাথরুমে যাওয়া। সেই নয় মাস জুড়ে যখনি কেউ পূর্ব পাকিস্তানের সংবাদ দেয়, তারপরই দেখি সে বাথরুমে ছুট দিছে। মাঝে মাঝে বিছানাও............হারাম কা শুয়োর, সব তো আমাকেই করতে হতো"

এটুকু বলে গোফা খান চুপ হয়ে গেল। আমিও আর কিছু জিজ্ঞেস করিনি। ফ্লাইটের এনাউন্সমেন্ট আসলে সে তার ব্যাগ নিয়ে আস্তে আস্তে গেটের দিকে চলে গেল। আর আমি ভাবতে বসলাম লোকটা কী আসলেই সত্যি কথা বলেছে, নাকি চাপা মারলো অবসর কাটাতে।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

তারপর প্রায় ফিসফিস করে বললো - "একাত্তরের মার্চে তোমাদের শেখ মুজিব যেদিন বড় একটা জনসভায় স্বাধীনতার সংগ্রাম ঘোষণা করলো সেদিন থেকে তার মদ খাওয়া দিগুন হলো এবং ঘনঘন বাথরুমে যাওয়া। সেই নয় মাস জুড়ে যখনি কেউ পূর্ব পাকিস্তানের সংবাদ দেয়, তারপরই দেখি সে বাথরুমে ছুট দিছে। মাঝে মাঝে বিছানাও............হারাম কা শুয়োর, সব তো আমাকেই করতে হতো"

হা হা হা। এটা যদি সত্যি নাও হয় কিসস্যু আসে যায় না। গোমড়া একটা সকাল কাটানোর পর দিনের প্রথম সশব্দ হাসিটা যে হাসতে পেরেছি তার জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।

---মোখলেস হোসেন

মন মাঝি এর ছবি

লেখাটা অরুচিকর লাগল।

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

রুচি জিনিসটা আপেক্ষিক। এই যেমন আপনার কাছে অরুচিকর লেগেছে, আবার আমার কাছে মনে হয়েছে নির্মল (হা হা ) আনন্দের। কে জানে কে এসেছিলেন সচলের অতিথি হয়ে! যদি তিনি ভারিক্কি কেউ হন যার কথার ওজন রয়েছে? আর এই কাহিনী সত্যি হোক কি নাই হোক, ইয়াহিয়া আমাদের মুরগি, ব্যাটাকে কেউ লেজেই কাটুক কি মুড়োতে, সালুন একটা হলেই হলো। দুনিয়া জোড়া তাবৎ কমেডিয়ানদের রান্নাবান্না বন্ধ হয়ে যাবে যদি সবাই মিলে জিরা কম পড়লো না বেশি পড়লো সেই তত্ত্বতালাশে মেতে উঠি।

---মোখলেস হোসেন।

মন মাঝি এর ছবি

আপনার ভাল লেগেছে, আমার লাগেনি, কাহিনি শেষ। এর মধ্যে এত কথা আসে কোত্থেকে?!!

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

মাথা থেকে; আসাটা কি অন্যায়! অনেক কিছুই আমাদের কারও কারও ভালো লাগে, কারও কারও লাগেনা। কেউ তা নিয়ে কথা বলে, কেউ কেউ বলে না। কারও মনে হয় কাহিনী শেষ, কারও মনে হয় শেষ হয়নি। ধন্যবাদ।

---মোখলেস হোসেন

আয়নামতি এর ছবি

পাকি জানোয়ারগুলো তো অরুচিকরই ছিল তাদের নিয়ে রুচিকর আর কী হবে!
লেখকের নাম নাই কেন? কোনো পাকি বাংলা বলে শুনিনি, গোফা ব্যাটা বাংলা বলছে!

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

মোখলেস ভাইয়ের প্রথম মন্তব্যের সাথে একমত! হো হো হো

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

মনে হল বহুদিন পরে এম আর আখতারের চরমপত্রের দেখা আবার পেলাম!

"ভোমা ভোমা সাইজের মছুয়া সোলজারগুলা বিচ্ছু বাহিনীর গাবুর বাড়ি আর ক্যাচকা মাইরের চোটে প্যান্টের কালার দুইরকম বানাইয়া ফেলছে, সামনের দিকে খাকি আর পিছনের দিকে বাসন্তি!" হেঃ হেঃ হেঃ। সদরে আলা হিয়াহিয়া সাবেও যে একই কাম করতে আছেলে হেইয়া কেডা জানতে! লইজ্জা লাগে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।