দ্য অ্যালকেমিস্ট/ পর্ব-১

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ১৪/০৭/২০২০ - ১০:৪২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অণুকাহিনী ১

যুবকের নাম সান্টিয়াগো। পশুপাল নিয়ে ও যখন পরিত্যক্ত গির্জাটায় পৌঁছল, তখন চরাচরে ঘনিয়ে আসছিল সান্ধ্য আঁধার। গির্জার এদিকটার ছাদ ধ্বসে পড়েছে বহু আগেই। কোনো এক কালে যেখানে সাজঘরটা ছিল, ধ্বসে পড়া ছাদ ফুঁড়ে আজ সেখানে সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল একটা ডুমুর গাছ।

সিদ্ধান্ত নিল রাতটা ও এখানেই কাটাবে। ভাঙ্গা দরজা গলে সবকটা ভেড়া ঢুকে পড়েছে। রাতের বেলা ওগুলো আবার ইতিউতি না ছড়িয়ে পড়ে এই ভেবে ও কতগুলো কড়িবর্গা যোগাড় করে দরজার সামনে আড়াআড়ি পেতে রাখলো। এই অঞ্চলে নেকড়ে নেই। তারপরও, বলা যায়না, একবার যদি একটা ভেড়া পাল ছেড়ে বেরিয়ে যায় তাহলে ওটাকে খুঁজতেই পরেরদিনটা পুরোটা যাবে। জ্যাকেট দিয়ে মেঝে ঝেড়ে সদ্য শেষ করা বইটাকে বালিশ বানিয়ে শুয়ে পড়লো ও। মনে ভাবলো, আরো মোটা বই পড়া শুরু করতে হবে: সেগুলো যেমন অনেক সময় ধরে পড়া যায় তেমন বালিশ হিসেবেও ভালো।

ঘুম যখন ভাঙল, রাত তখনো বাকি। উপরের আধভাঙ্গা ছাদ গলে রাতের মিটিমিটি তারাগুলো দেখা যাচ্ছে। আরো কিছুক্ষন ঘুমোতে চেয়েছিলাম, ভাবলো ও। সপ্তাখানেক আগে যে স্বপ্নটা দেখেছিল, আজ আবার সেটা দেখল। সেবারের মতো এবারও স্বপ্ন শেষ হবার আগেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। উঠে মেষ চরাবার ছড়িটা খুঁজে নিয়ে যে ভেড়াগুলো তখনো ঘুমিয়ে আছে সেগুলোকে ও জাগিয়ে দিতে লাগল। একটা ব্যাপার লক্ষ্য করল সান্টিয়াগো, সে উঠে পড়ার সাথে সাথে তার মেষপালের অনেকটাই নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছে। যাদের নিয়ে সে কাটিয়েছে গত দুই বছর, খাবারের সন্ধানে সাথে নিয়ে পেরিয়ে এসেছে কত বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চল, সেই পশুগুলোকে ওর যাপিত জীবনের সাথে যেন এক অদ্ভুত বেড়াজালে জড়িয়ে রেখেছে কোনো এক রহস্যময় শক্তি।

“এরা আমার চলনবলনের সাথে এতো অভ্যস্ত হয়ে গেছে যে আমার রোজকার কাজ-কারবার এদের জানা,” বিড়বিড় করলো ও। মুহূর্তেই ওর উপলব্ধি হয়, ব্যাপারটাতো উলটোও হতে পারে, হয়ত সে নিজেই ওদের নিত্যকর্মের সাথে খাপ খেয়ে নিয়েছে।

তারপরও কতগুলো ভেড়া অবশ্য ঘুম থেকে উঠতে কিছুটা দেরিই করল। নাম ধরে ডাকতে ডাকতে ছড়িটা দিয়ে ও একে একে ওদের আলতোকরে গুঁতোতে থাকে। ওর ব্যাপক বিশ্বাস, ও যা বলে ভেড়াগুলো তা বোঝে। তাই বই পড়তে পড়তে কখনও কোনো অংশ মনে দাগ কাটলে, সেটা ও ভেড়াগুলোকেও পড়ে শোনা‍য়। আবার কখনো ওদের বলে নিঃসঙ্গ মেষবালকের একাকীত্ব কিংবা সুখানুভুতির কথা। কখনো সখনো চলার পথে ফেলে আসা গ্রামগুলোয় নতুন কিছু দেখলে আপনমনেই হয়তোবা ভেড়াগুলোর সাথে সেসব নিয়ে কথা বলে।

কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে ও কেবল একটা কথাই বলে এসেছে ওদেরঃ সেই মেয়েটির কথা। এক বনিকের কন্যা। আর প্রায় চারদিন বাদে যে গ্রামে পৌঁছানোর কথা, সেই গ্রামেই বাস করে সে বণিক। গত বছর একবার সেখানে গিয়েছিল সান্টিয়াগো। শুষ্কপণ্যের একটা সওদাগরি দোকানের মালিক ঐ বণিক। পাছে ঠকে, সেই চিন্তায় বণিক নাকি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ভেড়ার উল কাটায়।

সেবার এক বন্ধুর কাছে দোকানটার কথা শুনে ভেড়াগুলো নিয়ে সেখানে উল বেচতে গিয়েছিল সান্টিয়াগো।

***

“আমি কিছু উল বিক্রি করতে চাই” বণিককে জানালো ও।

বিকিকিনি চলছে, ব্যস্ত পরিবেশ। মালিক ওকে বলল বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে। কি আর করা, দোকানের সিঁড়িতে বসে ঝোলা থেকে একটা বই বের করল সান্টিয়াগো।

“রাখালরা পড়তেও জানে আমার জানা ছিলনা”, পেছনে এক নারী কণ্ঠ।

এ যেন আন্দালুসিয়ার স্বাতন্ত্র্য মাখা এক মানবী! দীঘল কালোচুল আর অমন কৃষ্ণবর্ণ আঁখিই আবছায়ায় অস্ফুটে মনে করিয়ে দেয় মুরিশ বীরদের কথা।

“আসলে, আমি বই থেকে যতটা শিখি তারচেয়ে বেশি শিখি আমার ভেড়াগুলো থেকে”, বলল সে।

পরের দু-ঘন্টার আলাপচারিতার মেয়েটা জানালো, সে ঐ বনিকের মেয়ে। বলল, ওদের গ্রামীন জীবনের গল্প, প্রতিটা দিন যেন অন্য যেকোনো দিনের মতই; একই রকম। আর যুবক বলল শহর থেকে দূরে- বহু দূরের আন্দালুসিয়ার গ্রাম-গ্রামাঞ্চলের কথা, ওর সফরবিরতির শহর-নগর গুলোর গল্প।

ভেড়াদের সাথে কথা বলে বলে যে জীবন অভ্যস্ত, সে জীবনের একঘেয়েমিতে আজ মেয়েটার সাথে সহসা আলাপের এই বৈচিত্র্য এক অনাবিল ভালোলাগা ছড়িয়ে দিল যুবকের হৃদয়ে।

কথা প্রসঙ্গে মেয়েটা জিজ্ঞেস করল, “কি করে পড়তে শিখলে তুমি?”

“অন্যরা যেভাবে শেখে”, বলল ও। “স্কুলে।”

“জানোই যদি কিভাবে পড়তে হয়, তাহলে সামান্য একটা রাখাল হতে গেলে কেন?”

বিড়বিড়িয়ে দায়সারা কি একটা জবাব দিয়ে প্রশ্নটা এড়িয়ে গেল সান্টিয়াগো। ওর ধারনা, কারনটা বললেও মেয়েটা হয়ত কখনোই অনুধাবন করতে পারবেনা এর যথার্থতা। তারচেয়ে বরঞ্চ ও বলতে থাকে ঘোরাঘুরির কথা, ওর জীবনের যত পরিভ্রমণের গল্প আছে, সেইসব। আর সেই লোমহর্ষক বিবরণে ওই দুটি আয়ত কালো মুরিশ চোখে যেন ভর করে রাজ্যের শিহরন, বিস্ময়।

একসময় সান্টিয়াগোর মনে হচ্ছিল আজকের দিনটা যদি শেষ না হতো, মেয়েটার ব্যস্ত পিতা যদি ওকে তিনদিন অপেক্ষা করিয়ে রাখতো। জীবনের এই অচেনা উপলব্ধিতো আগে কখনই অনুভূত হয়নি: এ যেন একটা জায়গায় চিরকাল কাটিয়ে দেবার এক তীব্র উন্মাদ বাসনা।

নিশুতি রাতের আঁধারের মত গভীর কালো চিকচিকে চুলের এই মেয়ের সঙ্গ পেলে জীবনটা হয়ত আর কখনোই আগের মত থাকতনা।

কিন্তু কি কপাল! বণিক এসে পড়লো, বলল চারটে ভেড়ার উল কাটতে। মূল্য মিটিয়ে দিয়ে ওকে আবার আগামী বছর আসতে বলল।

***

সেইদিন এসেছে; এখন ওই গ্রামে পৌঁছাতে মাত্র চারটি দিন বাকি। একরাশ উত্তেজনার আবেশ আর অস্থিরতায় ছেয়ে আছে ওর মন; মেয়েটা হয়ত এতদিনে ওকে ভুলেই গেছে। এতদিনে কত শত মেষবালকই বা ওপথ দিয়ে এলোগেলো।

“কোনো ব্যাপারনা, আমিওতো কত জায়গার কত মেয়েদের চিনি, তারপরও ওরই জন্যতো শুধু আমার এমন টান,” ভেড়াদের বলল ও।

কিন্তু মনে মনে ও জানে এটা আসলে চিন্তারই বিষয়। ও জানতো, নাবিক কিংবা সওদাগরের মতই দেশ-দেশান্তরে চরে বেড়ানো মেষবালকেরাও তাদের চলতি পথের কোনো না কোনো নগরে কাউকে না কাউকে পেয়েই যায়, যে তাদের ছন্নছাড়া জীবনের বেহিসেবী উচ্ছলতা ভুলিয়ে দিতে পারে।

ভোর হয়ে আসছিল। যুবক ওর ভেড়ার পালটাকে সূর্য বরাবর ধেয়ে দিল। এদেরকে কখনোই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয়না, ভাবলো ও, এজন্যই হয়ত এরা আমার এতো পাশ ঘেসে থাকে।

ভেড়াগুলোর চিন্তা কেবল দানাপানি। যেইনা ও আন্দালুসিয়ার সেরা তৃণভূমিটার খোঁজ পাবে, আর সেই ওরা আহ্লাদে বন্ধুর মত হয়ে উঠবে।
সেটাই; এ বেচারাদের দিনগুলো কেমন একই রকম, মনে হয় সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের মাঝে যেন এক অনন্তকাল। যৌবনে ওদের পড়া হয়নি কোন বই, ও যখন মন্ত্রমুগ্ধের মত দেখে শহরগুলোর জৌলুস বা প্রকৃতির দৃশ্য, ওদের বলে সেইসব গল্প, ওরা বোঝেনা সেটাও। কেবল খাদ্য-পানীয়তেই ওদের তুষ্টি। বিনিময়ে, উজার করে দেয় উল, ওদের সঙ্গ, আর জীবনের কোনো এক পর্যায়ে- একবারই দেবে- ওদের মাংস।

আজ যদি দানবের মত আমি ওদের একে একে মেরেও ফেলতাম, পালের অধিকাংশ ভেড়া জবাই হয়ে যাবার পর হয়ত ওরা ব্যাপারটা টের পেত, ভাবলো সে। আমার ওপর ওরা ভরসা করে, ভাবে রসদ খোরাকের যোগান দেয়ার জন্য আমিতো আছিই, তাই নিজেদের সহজাত প্রবৃত্তির ওপর নির্ভর করতেও ভুলে গেছে আজ।

কী সর্বনেশে কথা, এসব কি ভাবছে ও! নিজের ভাবনায় নিজেই অবাক হলো যুবক। তবে কি ঐ গির্জা আর ওর ছাদ ফুঁড়ে গজিয়ে ওঠা ডুমুর গাছটা ভুতুড়ে! ওগুলোই হয়ত ওকে গতকাল দ্বিতীয়বারের মত স্বপ্নটা দেখিয়েছিল, আর তাই এখন এসব আবোল তাবোল ভাবছে, এতদিনের বিশ্বস্ত সাথীদের উপর এরকম অভিমান হচ্ছে! গতরাতের খাবার পরে থেকে যাওয়া ওয়াইনের কিছুটা খেলো ও। পরনের জ্যাকেটটা ভালো করে গায়ে ঠিকঠাক করে নিলো। জানে, আর ক-ঘন্টা বাদে সূর্য ঠিক মধ্য গগনে আসবে। তখন ভরদুপুরের দাবদাহে ভেড়ার পাল নিয়ে মাঠ পেরোনো মুশকিল হয়ে যাবে।

গীষ্মকালে দিনের এসময়টাতে পুরো স্পেন ঘুমিয়ে থাকে। সন্ধ্যাবধি ভয়াবহ একটা গরম থাকবে, তার ওপর সারাদিন ওকে এই জ্যাকেটটা বয়ে বেড়াতে হবে। বাড়তি বোঝাটা নিয়ে আক্ষেপ করতেই মনে হলো ভোর রাতের এমন ঠান্ডায় এটার কারনেইতো ও এখনো টিকে আছে।

পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য আমাদের তৈরী থাকা দরকার, ভাবে ও। জ্যাকেটের ওজন আর উষ্ণতার জন্য মনে মনে এখন কৃতজ্ঞই হল।

জ্যাকেটটার যেমন একটা ভূমিকা আছে, ওর নিজেরও তেমন একটা লক্ষ্য আছে। ওর জীবনের লক্ষ্য ঘুরে বেড়ানো। গত দুটো বছর ধরে আন্দালুসিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মাঝ দিয়ে চলতে চলতে ওর সব শহর নগর চেনা হয়ে গেছে। এবার যখন দেখা হবে, ভাবছে, মেয়েটাকে বলবে নিতান্ত সাদামাটা এক রাখাল কি করে পড়তে শিখলো, সেই কাহিনী।

ষোলো বছর বয়স পর্যন্ত ধর্মযাজকদের একটা প্রশিক্ষণ বিদ্যালয়ে দীক্ষা নিয়েছিল ও। বাবা-মা চেয়েছিলেন ও যাজক হোক, ওদের সাধারণ একটা খামারি পরিবারের জন্য কত গর্বের হত বিষয়টা। ভেড়াগুলোর মত ওরাও যে শুধু খাদ্য-পানীয়র জন্য দিনমান অক্লান্ত পরিশ্রম করে।
ল্যাটিন, স্প্যানিশ আর ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়তে হয়েছিল ওকে। কিন্তু সেই শিশুকাল থেকেই ওর ইচ্ছে ছিল পৃথিবীটাকে জানার। স্রষ্টাকে জানা আর মানুষের পাপের হিসেব করার চেয়ে ওর কাছে পৃথিবীকে চেনা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ন মনে হয়েছিল।

তাই কোনো এক বিকেলে বাড়ির লোকজনের সাথে দেখা করতে গিয়ে, নিজের অদম্য ইচ্ছের উত্তাপে বুকে সাহস সঞ্চয় করে অতঃপর বাবাকে বলেছিল, যাজক হতে চায়না। ও চায় ~ ভ্রমন করতে।

***

“দিগ্বিদিক থেকে কত মানুষইতো এদিক দিয়ে এলোগেলো, বাছা,” বললেন বাবা। “লোকে কত নিত্যনতুন জিনিসের খোঁজে আসে, কিন্তু যখন যায়, তখন যেমনটা এসেছিল মনে হয় ঠিক তেমনটাই চলে গেল। পর্বতারোহণ করে আমাদের সুরম্য অট্টালিকা দেখে, আর শেষমেশ ভাবে, আমাদের যে দিন গেছে সেটাই বুঝি এখনকার চেয়ে অনেক ভালো ছিল। স্বর্ণকেশীই হোক আর কৃষ্ণবর্ণ, যাই হোক না কেন, ওরা আদতে আমাদেরই মত, একই রকম সবাই, বাছা।”

“কিন্তু আমি যে ওদের শহরের সুরম্য অট্টালিকাগুলো দেখতে চাই, বাবা” বোঝানোর চেষ্টা করল ও।

“আরে...আমাদের এ অঞ্চল দেখার পর ওরা এখানেই সারাজীবন কাটিয়ে দিতে চায়,” বাবা বুঝিয়েই চললেন।

“আচ্ছা, কিন্তু, আমি ওদের অঞ্চল দেখতে চাই, দেখতে চাই ওদের জীবন,” ছেলের উত্তর।

“ওরা ধনী। যারা এখানে আসে, তাদের খরচ করার মত অঢেল টাকা আছে বলেই ওরা ঘোরাঘুরির ব্যয়টা বহন করতে পারে,” বললেন বাবা। “আর আমাদের মধ্যে, শুধু রাখালরাই ঘুরে বেড়ায়।”

“তাহলে আমি রাখাল হবো, বাবা!”

বাবা আর কোনো কথা বলেননি।

পরদিন, ছেলেকে তিনি ছোট একটা থলে ধরিয়ে দিলেন, তাতে তিনটে প্রাচীন স্প্যানিশ স্বর্ণ মুদ্রা।

বললেন, “একদিন এগুলো আমি মাঠে কুড়িয়ে পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম উত্তরাধিকারসূত্রে তোমারই থাকবে। কিন্তু নাও, এগুলো দিয়ে মেষ কিনে নিও। বেরিয়ে পড়ো। তবু একদিন ঠিকই বুঝবে, আমাদের এই ভূমি, গ্রাম-গ্রামাঞ্চলই সবথেকে সেরা, আমাদের মেয়েরাই সবচাইতে সুন্দরী।”

ছেলেকে তিনি আশীর্বাদ করলেন। বাবার চোখের তারায় ও যেন দেখতে পেল তাঁর অব্যক্ত অসম্পন্ন বাসনার এক ব্যাকুলতা- যে বাসনা বাবার বেঁচে থাকার সংগ্রামে ঢাকা পড়ে গেছিল, যুগ যুগ ধরে যে ইচ্ছেটাকে বাবা জীবনের যাঁতাকলে পিষে ফেলেছিলেন, খাওয়া পড়ার যোগাড়-যন্ত্র করতে করতে থিতু হওয়া বাবার জীবনের ওপর পড়েছে এক মস্ত আবরণ- ওই আচ্ছাদনের নিচে কোথায় কবে হারিয়ে গেছে কোন সেই ব্যকুল ইচ্ছে, যেই ইচ্ছেটুকু টিকে ছিলো শুধু তাঁর দুটি চোখেরই তারায় ~ পৃথিবী ভ্রমণ।

(চলবে)


পাওলো কোয়েলো

অনুবাদ- জে এফ নুশান

লেখকের কথা, দ্য অ্যালকেমিস্ট


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আলকেমিস্ট যখন পড়েছি, কেন যেন ভাল লাগে নি।
আপনার অনুবাদ ঝরঝরে লাগছে। চালিয়ে যান। পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, সাক্ষী সত্যানন্দ। একজন অনুবাদকের স্থান থেকে এমন মন্তব্য পাওয়াটা সম্মানের। চালিয়ে যাব।

Disha এর ছবি

কেন জানিনা এর আগেও বাংলা অনুবাদে দ্য অ্যালকেমিস্ট পড়তে গিয়েও শেষ করতে পারিনি। বোধয়, বাংলা ভাষার মাধুর্যটা অনুভব করতে না পারার কারনে আবার হাতে তুলে নিয়েছিলাম ইংলিশ অনুবাদ টা। অনুবাদ এবং ভাবানুবাদ যে এক না এটা হয়তো অনেক অনুবাদক বুঝতে পারলেও ভাষায় ফুটিয়ে তুলতে পারেনি। এরকম একটা অনুবাদের আশায় বসে ছিলাম, পেয়েও গেলাম। ধন্যবাদ।

জে এফ নুশান এর ছবি

দিশা, ধন্যবাদ পড়ার ও মন্তব্যের জন্য। আশাকরি আপনাকে পাঠক হিসেবে ভবিষ্যতেও পাব।

নুশান

একজনা  এর ছবি

ভালোই হচ্ছে। তবে কিছু শব্দের বাংলা করার সময়ে বিশেষ নজর দেয়া দরকার। যেমন গীর্জার সাজঘর নয়, ওটা তোষাখানা- যেখানে টাকা পয়সা রাখা হতো। এর সিগনিফিক‌্যান্সটা বইয়ের শেষে বোঝা যায়।
সচলায়তনেই দুজন এই বই শুরু করেও রেখে দিয়েছিলেন। আশা করি আপনি চালিয়ে যাবেন।

জে এফ নুশান এর ছবি

একজনা, ‌অনুবাদ শেষ করে ফেলেছি, পরিশোধন স্তরে আছি, তাই আশা করি চালিয়ে যাব।

হ্যাঁ শেষের সিগনিফিক‌্যান্সটাই তো হাসি :) !

মূল্যবান জিনিসপত্র রাখার ঘর, গির্জার গানের লোকদের অনুষ্ঠানের জন্য পোশাক পরা আর যাজকদের আনুষ্ঠানিক পোশাক পরিবর্তনের কক্ষ হিসেবে Sacristy জন্য সাজঘর শব্দটি ব্যবহার করেছি, যাতে একেবারে আকাশ-পাতাল ভুল না হয়ে যায়। কারন 'তোষাখানা' শব্দটি মাথায় আসলেও প্রয়োগের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলামনা, আপনার নির্দেশনাটির জন্য অশেষ ধন্যবাদ। তোষাখানাই যথার্থ। আশাকরি ভবিষ্যতের পর্বগুলোতেও আপনাকে পাঠক হিসেবে পাব।

নুশান

এক লহমা এর ছবি

হাততালি অপেক্ষায় ছিলাম। এবার পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
অনুবাদ নিয়েঃ " যুবক ওর ভেড়ার পালটাকে সূর্য বরাবর ধেয়ে দিল। এদেরকে কখনোই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয়না, ভাবলো ও, এজন্যই হয়ত এরা আমার এতো পাশ ঘেসে থাকে।"
এইটা আপনি নিজের গল্প হিসাবে লিখতে হলে যেভাবে লিখতেন, ঠিক সেরকমটা হয়েছে বলে মনে হয় নি। আসলে অনুবাদের ক্ষেত্রে কতটা মূলের অনুসারী থাকব, আর কতটা নিজের ভাষায় নিজের লেখা গল্প লেখার ধরণের অনুসারী হব, সেটা একটা জটীল সিদ্ধান্ত।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, এক লহমা। অবদানমূলক মন্তব্য; কাজের উন্নতিতে স্পৃহা যোগায়!

"আসলে অনুবাদের ক্ষেত্রে কতটা মূলের অনুসারী থাকব, আর কতটা নিজের ভাষায় নিজের লেখা গল্প লেখার ধরণের অনুসারী হব, সেটা একটা জটীল সিদ্ধান্ত।"
- একদম! এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে মাঝে মাঝে মাথা হ্যাং হয়ে বসে থাকি।

নুশান

অতিথি লেখক এর ছবি

খুবই সুন্দর, প্রাঞ্জল। আমি আলকেমিস্টের ইংরেজি এবং বাংলা অনুবাদ সুবর্ণস্রষ্টা পড়েছিলাম। আপনার লেখায় আবার পড়বো। চালিয়ে যান।

উদ্ধৃতি মৈনাক তান

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ার এবং মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। চালিয়ে যাব আশা করি।

হাসি
নুশান

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।