রক্তের অক্ষরে লেখা নন্দীগ্রাম

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: রবি, ১১/১১/২০০৭ - ৬:৫৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

.

নন্দীগ্রাম আবারো রক্তাক্ত হয়েছে । অন্ততঃ তিনজন গ্রামবাসী নিহত হবার খবর পাওয়া গেছে । এর আগে গত মার্চে পুলিশ ও দলীয় ক্যাডারদের হাতে নিহত হয়েছিলেন কমপক্ষে ১৪ জন যাদের ভেতর নারী,শিশু ও ছিলেন । ধর্ষনের ঘটনা ও ঘটেছিলো ।

সচেতন সকলেরই জানা,শিল্পায়নের জন্য পশ্চিমবংগ রাজ্যসরকার একটি শিল্পগোষ্ঠীকে পুরো এলাকা লিজ দিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলো । চুক্তির শর্তানু্যায়ী গ্রামবাসীকে তাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করতে গেলে সংঘর্ষের সুত্রপাত হয় ।

নিকট অতীতে আমাদের দেশে ও কানসাট এবং ফুলবাড়ীতে এরকম গনবিক্ষোভ ঘটেছে,সরকারী পেটোয়া বাহিনীর আক্রমনে প্রানহানীর ঘটনা ও ঘটেছে ।

পশ্চিমবংগের ঘটনা কিছুটা হলেও বিস্ময় জাগায়এ কারনে যে,সেখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ কিংবা বিএনপি নয় । ক্ষমতাসীন হলো বুদ্ধবাবুর কমিউনিষ্ট পার্টি । পুঁজিসম্প্রসারনের জন্য কৃষককে তার ভূমি থেকে উচ্ছেদ,প্রতিবাদী কৃষককে গুলী করে হত্যা,দলীয় কর্মীদের পুলিশের পেটোয়া ভূমিকা নেয়া- কমিউনিষ্টদের ইমেজের পুরো বিপরীত । বুদ্ধবাবু নিজে একজন কবি,রয়েছে গনমুখী রাজনীতির দীর্ঘ ঐতিহ্য,মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর ও নাকি দু কামরার ঘরেই থাকেন । সেই বুদ্ধবাবু,সেই কমিউনিষ্ট পার্টি পুঁজির পাহারাদার!

পুঁজির আগ্রাসন,দখল ও উচ্ছেদের গল্প নতুন কিছু নয় । এওকি তালে একই লয়ে আরো ভয়ংকর গতিতে চলছে এখন । ভয়ংকর এ কারনে যে, আগ্রাসন প্রতিরোধের যে পরম্পরা ছিলো,বিশ্বব্যাপী সলিডারিটি ছিলো সেটা এখন আর নেই ।
প্রতিরোধের স্বপন যারা বুনতো,তারা ও অনেক ক্ষেত্রে পাহারাদার হয়ে গেছে ।

তবু কানসাট,ফুলবাড়ী,নন্দীগ্রাম,সিংগুরে মানুষ তার অস্তিত্বের প্রয়োজনেই এখনো প্রতিরোধ গড়ে তোলে । এই প্রতিরোধ,এই আত্নদান,এই দাবী আদায়-রাজনৈতিক তত্ব,দর্শন,কথামালার চেয়ে অনেক বেশী বাস্তব ও সৎ ।

নন্দীগ্রামের মানুষের জন্য সশ্রদ্ধ অভিনন্দন ।।


মন্তব্য

বিবাগিনী এর ছবি

‌‌রক্তখেকোগুলোর বিনাশ হয়না কেন?
জয়তু নন্দীগ্রাম।জয়তু বিপ্লব।
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

‌‌::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

বিষয়টি তুলে ধরার জন্যে অশেষ ধন্যবাদ। কয়েক মাস আগে এই ইস্যুটি নিয়ে লিখেছিলাম, আবার যে এই খুনাখুনি শুরু হলো, আপনার লেখাটি পড়ে টের পেলাম। তবে একটা বিষয় নিয়ে একেবারে না বলেই পারছিনা।


কৃষককে তার ভূমি থেকে উচ্ছেদ,প্রতিবাদী কৃষককে গুলী করে হত্যা,দলীয় কর্মীদের পুলিশের পেটোয়া ভূমিকা নেয়া- কমিউনিষ্টদের ইমেজের পুরো বিপরীত

বরং বিংশ শতাব্দীতে কৃষকদের উপর এত অত্যাচার আর কেউ করতে পারেনি, যা সোভিয়েত ও চীনা কমিউনিস্টরা করেছিলো। সবচেয়ে জ্বাজ্বল্যমান দুটি দৃষ্টান্ত, ত্রিশের দশকে স্টালিনের কৃষক নিধনযজ্ঞ, আর পঞ্চাশের দশকে মাও-এর দুর্ভিক্ষ। বলা হয় যে, হিটলার আর স্টালিন মিলে যত মানুষ খুন করেছেন, মাও সে তুং একা তার থেকে বেশী মানুষের মৃত্যুর জন্যে দায়ী ছিলেন। কমিউনিস্টদের নিয়ে সুন্দর কিছু মিথ প্রচলিত আছে, কিন্তু সেগুলোর সত্যতা তৃতীয় বিশ্বে বিশেষ করে খুব ভালভাবে খতিয়ে দেখার প্রবণতা নেই, যদিওবা এই নিয়ে ইতিমধ্যে বিষদ একাডেমিক গবেষণা হয়েছে।

এখন বুদ্ধদেবও খেলায় নেমেছেন। গত বছর রেকর্ড করা এই বিবিসি অনুষ্ঠানে তার চিন্তা-ভাবনার কিছু পরিচয় পাওয়া যায়।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

কমিউনিস্টদের নিয়ে সুন্দর কিছু মিথ প্রচলিত আছে, কিন্তু সেগুলোর সত্যতা তৃতীয় বিশ্বে বিশেষ করে খুব ভালভাবে খতিয়ে দেখার প্রবণতা নেই...

দুর্দান্ত বলেছেন। দেশের বামপন্থী বা তাদের সমর্থকদের সঙ্গে আলাপ করে আমি একটা ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছি, মস্কো-পিকিং প্রসঙ্গে তাদের অধিকাংশেরই এক ধরনের অন্ধ মোহাচ্ছন্নতা আছে। মস্কো-পিকিং-এর যে-কোনও সমালোচনাকে তারা মনে করে পশ্চিমী প্রচার বা ষড়যন্ত্র।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

হাসিব এর ছবি

দেশের বামপন্থী বা তাদের সমর্থকদের সঙ্গে আলাপ করে আমি একটা ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছি, মস্কো-পিকিং প্রসঙ্গে তাদের অধিকাংশেরই এক ধরনের অন্ধ মোহাচ্ছন্নতা আছে।

কোন জেনারেশনের কথা বলছেন ? আপনার কথাটা সত্যি । তবে সোভিয়েত পরবর্তি জেনারেশনের জন্য নয় । আমার দর্শন তাইই বলে ।

বিপ্লব রহমান এর ছবি

বলা হয় যে, হিটলার আর স্টালিন মিলে যত মানুষ খুন করেছেন, মাও সে তুং একা তার থেকে বেশী মানুষের মৃত্যুর জন্যে দায়ী ছিলেন।

সুবিনয়দার বক্তব্যের সঙ্গে বেশ খানিকটা দ্বিমত পোষণ করছি। খুব সংক্ষেপে বলছি:

...স্ট্যালিন ও মাওসেতুং সম্পর্কে বেশীর ভাগ প্রচারণাই কিন্তু একপেশে। যাদের কথা মার্কস অনেক আগেই 'কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহার' বলেছেন, 'ইউরোপ ভুত দেখেছে, কমিউনিজমের ভুত!'

হত্যাযজ্ঞের প্রচারণার এই তালিকায় লেনিন, হো চি মিন, কিম ইল সুং, ফিদেল ক্যাস্ট্রোর নামও কী নেই?

নিজস্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লেখা মার্কিন সাংবাদিক এডগার স্নো'র 'চীনের আকাশে লাল তাঁরা' বইটিতে কিন্তু চীন বিপ্লবের আগে ও পরে কথিত ওই রকম নিধনযজ্ঞের কোনো তথ্য নেই। এমন কী রবীন্দ্রনাথের 'রাশিয়ার চিঠি'তেও নয়।

এরপরেও বলছি, ইতিহাস স্বাক্ষী, চীন বা রাশিয়ায় কোনো শান্তিপূর্ণ বিপ্লব হয়নি। মাওসেতুং এর ভাষায়, ... 'বিপ্লব কোনো ভোজসভা নয়। এটি কোনো সুচিকর্মও নয়। বিপ্লব হচ্ছে উগ্র বল প্রযোগের কাজ, যার দ্বারা এক শ্রেণী আরেক শ্রেণীকে উৎখাৎকরে।'

আর মার্কসবাদের ছাত্র মাত্রই জানেন, বিপ্লব একটি অব্যহত প্রক্রিয়া, যা বার বার চালাতে হয়; একে এগিয়ে নিতে ও বিকশিত করতে হয়।

তো বুদ্ধদেব বাবুরা হচ্ছেন, সেই ধরনের মূলো মার্কা কমিউনিস্ট, যে মূলোর বাইরেটা লাল, কিন্তু ভেতরটা সাদা!


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

দিগন্ত এর ছবি

তো বুদ্ধদেব বাবুরা হচ্ছেন, সেই ধরনের মূলো মার্কা কমিউনিস্ট, যে মূলোর বাইরেটা লাল, কিন্তু ভেতরটা সাদা!
- ভীষণভাবে একমত। আমার সবথেকে রাগ ধরে যখন এরা সমাজতন্ত্রের কথা উচ্চারণ করে। যত্তসব ... ৩০ বছর ক্ষমতায় থেকে পশ্চিমবঙ্গে এখনো ৯০% সাক্ষরতা আনতে পারেনি। সেখানে মাও বা লেনিন-এর রেকর্ড দেখুন।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

কনফুসিয়াস এর ছবি

সুবিনয় মুস্তফীর লিংকগুলো দারুন।
ধন্যবাদ।
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

মাহবুব লীলেন এর ছবি

০১.

আজ পর্যন্ত পৃথিবীর যত ইতিহাস
শ্রেণী সংগ্রামের ইতিহাস

-কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো

০২.

যে যায় লংকায়
সে হয় রাবণ

- বাঙ্গাল প্রবাদ

০৩.

শোষিত শ্রেণী শাসক হলে
পূর্বতন শাসকের আচরণই অনুসরণ করে বেশিরভাগ

- পাওলো ফ্রেইরি

শাসকের সঙ্গে বেণিয়া আর পুরোহিতদের লড়াইয়ের ইতিহাস কি আছে কোথাও?
শাসকের সঙ্গে লড়াই মানুষেরাই করে

হাসিব এর ছবি

শাসক/বেনিয়াদের সাথে পুরোহিতদের লড়াইয়ের ইতিহাস আছে । ইটালিতে ।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

মায়ানমারের ভিক্ষুদের কথাও ভুলে যেয়েন না!

-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

মানুষের বুক দেখি বলে পিঠ নাই তা ভাবা ঠিক না।

শাসকের সঙ্গে বেণিয়া আর পুরোহিতদের লড়াইয়ের ইতিহাস কি আছে কোথাও? শাসকের সঙ্গে লড়াই মানুষেরাই করে

হ্যাঁ ইতিহাসে এরকম নজির বেশুমার। ভারতবর্ষে ইংরেজদের আধিপত্যেল বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ কিন্তু মৌলবিরাই করেছিল। তখনকার মাণদণ্ডে তারাই ছিল স্বাধীনতাকামী। আঠার শতকের দ্বিতীয় ভাগ থেকে টানা ৩০/৪০ বছর তারা সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে গেছে। গোটা ভারত বর্ষ থেকে তাদের জন্য সাহায্য যেত। তার কিছূ মন্দ দিকও ছিল।
এরপর আঠারো শতকের শেষ দিকে পরাজয়ের পর তাদের প্রায় কয়েক হাজার সদস্য স্বাধীনতার লড়াই সংগঠিত করার জন্য আফগানিস্তান হয়ে সেভিযেতে যায়। আফগানে তারা প্রবাসী ভারত সরকারও গঠন করেছিল। তার প্রধান ছিলেন একজন হিন্দু ও একজন মুসলিম। এদের নেতা আব্দুর রব বার্ক জাতীয়তাবাদী থেকে কমিউনিস্ট হন এবং প্রবাসী কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করেন। শ্বেতবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে তাদের অনেকে মারাও যান। একজন তো লেনিনের সঙ্গে দেখা করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন। এরা নিজেদের মৌলবিই বলতেন কিন্তু বলশেভিকদের মিত্র হিসাবে গণ্য করতেন।
এছাড়া তিতুমীর, ময়মনসিং জংয়ের টিপু শাহ তো আছেনই। ল্যাটিন আমেরিকায় লিবারেশন থিওলজি তো পাদ্রিদেরই কাজ। আঠারো শতকের জার্মানিতে টমাস মুন্তেসের নামে এক পাদ্রি কৃষকদের নিয়ে জমিদার বিরোধী যুদ্ধ চালান।
ও হ্যাঁ, আমি মনে করি আজ হামাস ও হিজবুল্লাহ স্বাধীনতাকামী যুদ্ধ শোষক ও সাম্রাজ্যবাদেরই বিরুদ্ধে।
কেউ কমিউনিস্ট ভেক ধরে বলে পার পাবে আর কেউ জোব্বা পরা বলে গাল খাবে সেটাও কি একদেশদর্শিতা নয়? আদর্শ আপনাআপনি কিছু করে না, লড়াই মানুষই করে। কিন্তু সেই মানস কল্পলোকে থাকে না। বাস্তবের মানুষের শ্রেণী-ধর্ম-জাতীয়তা আছে। আর এগুলো আপনাআপনিই খারাপ নয়।

::::::::::::::::::::::::::::::::::::
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

উত্তম!

কমিউনিস্টদের নিয়ে সুন্দর কিছু মিথ প্রচলিত আছে, কিন্তু সেগুলোর সত্যতা তৃতীয় বিশ্বে বিশেষ করে খুব ভালভাবে খতিয়ে দেখার প্রবণতা নেই...

সেইসব মিথগুলোর অনেকগুলোই এখন বাতিল হয়ে গেছে। কেবল টিকে আছে হিটলার, স্ট্যালিন ও মাও জে দং-এর তুলনা। ক'দিন আগে বুশও একই কথা বলেছেন। এ বিষয়ে আমার ঈষত আপত্তি আছে।
১. ভারতে যে নিও লিবারেল কর্পোরেটাইজেশন চলছে, তার বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে মারা পড়ছেন নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুরের কৃষকরা। আবার বিহার, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশে যে লাখ লাখ কৃষক আত্মহত্যা করছেন, তার দায় কার? সেখানে তো স্বঘোষিত কমিউনিস্ট খেতাবধারীরা নাই। অতএব এটা 'কমিউনিস্টদের' একার কৃতিত্ব নয়। বরং ঐসব অঞ্চলে এবং খোদ নন্দিগ্রামেও মাওবাদী নকশালরাই আন্দোলনে জড়িত।
২. এ পশ্চিমবঙ্গেই নকশালবাড়ী আন্দোলন হয়েছিল কৃষকদের মধ্যে জমি বিলিয়ে দেয়ার জন্য। সেটাও কিন্তু কমিউনিস্টরা করেছিল। তাদের চাপেই পশ্চিমবঙ্গে ভূমি সংস্কার হয়। সেটা কি অপরাধ ছিল?
৩.পশ্চিমবঙ্গে ব্রাক্ষ্মণ-মধ্যবিত্ত চালিত বামফ্রন্ট কবে কমিউনিস্ট হলো? তারা নিজেদের বলে সোস্যাল ডেমোক্রেট। বহুদিন থেকে তারা তাদের স্বাভাবিক পরিণতি অনুযায়ী ভারতীয় বৃহত পুঁজিপতি ও দলিত নিপীড়নকারী ভারত রাষ্ট্রকে সেবা করে যাচ্ছেন। পুঁজি ও কৃষক-মেহনতির মধ্যে তারাই বর্ম আকারে দাঁড়িয়ে শ্রেণী সংগ্রামকে স্থগিত করছেন। পুঁজির দারোয়ানদের যা করার কথা তা-ই করছে। হাসান মোরশেদ সেটা বলেছেন।
৪.ক. সুবিনয় মুস্তফী কি জানেন, মাও-য়ের আগের চীনে কী জঘন্য সামন্তবাদ ও ব্রিটিশ-জাপানী শোষণ ছিল? হাগতে গেলেও সেখানে কর দিতে হতো। তার বিরুদ্ধে কৃষক ফৌজের গেরিলা যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ কৃষক মারা গিয়েছিল। তিনি কি তাদেরও মাওয়ের খুন বলে ধরবেন?
খ .মাও-এর দুর্ভিক্ষ বলে তিনি যে লিংটি দিয়েছেন সেটি উইকিপিডিয়ার।
বলা হয় যে, হিটলার আর স্টালিন মিলে যত মানুষ খুন করেছেন, মাও সে তুং একা তার থেকে বেশী মানুষের মৃত্যুর জন্যে দায়ী ছিলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মোট মানুষ মারা গিয়েছিল পাঁচ কোটি। অতএব নিজেই বিচার করুন। এর সঙ্গে স্ট্যালিনের এক কোটি যোগ করলে কী দাঁড়ায় মহাত্মন! আপনার ইউকিপিডয়া বলছে যে ১৯৫৯ থেকে ১৯৬১ পর্যন্ত যেসব মানুষ মারা গিয়েছিল, তার কারণ দুটো : বন্যা, খারাপ আবহাওয়া এবং ভূল পরিকল্পনাজাত খাদ্যাভাব। ১৮ থেকে ঊনিশ শতকে ইউরোপের অর্থণৈতিক বিনির্মাণের সময় এর থেকে বিশি মানুষ উচ্ছেদ ও মৃত্যুবরণ করেছিল। আমরা যদি অর্থনৈতিক রূপান্তরের সময়ে অনবার্য অপচয়ের খাতকে বাতিলও করি, তাহলেও তো বলা যায় না যে, মাও খুন করেছিলেন। মাও-এর নেতৃত্বে যে বিপ্লব চীনা কৃষকরা করেছিল, তার বরাতে চীণ আজকের জায়গায় আসতে পেরেছে। আর ভারত পড়ে আছে বহু পেছনে।
৫. স্ট্যালিনের ‌যৌথ খামার কর্মসূচি অবশ্যই ভুল ছিল। তার নিন্দা ও সমালোচনা হওয়া উচিত। তার বিরোধিতা করতে গিয়েই তো ট্রটস্কিসহ অনেক কমিউনিস্টকে জীবন দিতে হয়েছিল। আবার স্ট্যালিনের নেতৃত্বেই রাশিয়া বৈশ্বিক মঞ্চ থেকে ফ্যাসিবাদকে বিতাড়ন করেছিল।
৬. চিনের দুর্ভিক্ষের কথা প্রচার করেই অর্মত্য সেন নোবেল পান। তিনি বলেন যে, খাদ্য উতপাদনের ঘাটতি না থাকলেও বন্টনের সমস্যা এবং গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকলে দুর্ভিক্ষ হয় না। চীনে সেসময় কয়েক বছর খাদ্য উতপাদন কম হযেছিল, খরা ও বন্যাও হয়েছিল। সেসবকে জনাব সেন গুরুত্ব দেননি। তার তরিকা মেনে প্রশ্ন করা যায়,ইংরেজ শাসনে বাংলা ৭৬-এর মন্বন্তর এবং ১৯৪৬-এর দুর্ভিক্ষে যথাক্রমে কয়েক কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল। সেসময় কিন্তু খাদ্য উতপাদন কম হয়নি। ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের বছরেও সর্বোচ্চ খাজনা আদায় করা হয়েছিল। ঐ মন্বন্তরে মজুদদারি করেই কলকাতার বাবুদের অনেকে এবং লন্ডনের স্যাভোয়ারেরা ধনী হয়েছিল। জয়নুলের দুর্ভিক্ষের ছবিগুলো কোন সময়ের কথা বলে? ভারত এবং ব্রিটেন অর্মত্যের দুই পৃষ্ঠপোষক। অতএব ভাসুরের নাম নিতে মানা।
৬.আজ ল্যাটিন আমেরিকায় যে পরিবর্তন হচ্ছে তা মোটা দাগে নিম্নবর্গের কৃষক-শ্রমিকের বিপ্লব। সেখানেও কিন্তু কমিউনিষ্টরা লড়ছে। নেপালেও তারাই লড়ছে। তবে আনক্রিটিক্যালি কোনো আন্দোলন বা মতবাদকে গ্রহণ করার দিন শেষ। মতবাদের থেকে মানুষের স্বার্থ বড়। রাজনীতির বিচার তার নিরিখেই করতে হবে। কিন্তু একইসঙ্গে দেখতে হবে শোষকের মতবাদ দ্বারা শোষিতের মতবাদের আত্মসাতকরণ প্রবণতা। যেটা মাহবুব লীলেন পাওলো ফ্রেইরির যুতসই উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছেন।
৭. আমরা কথায় কথায় ফুলবাড়ী-কানসাট-শনির আখড়ার জয়গান গাই। কিন্তু কারা সেখানে কাজ করেছিল? কানসাট-এ প্রাক্তন জাসদ নেতা শনির আখড়ায় বাম যুব সংগঠক এবং ফুলবাড়ীতে বাম নেতৃত্বাধীন তেল গ্যাস কমিটি। লেজুড় বামেরা নয়, মাওবাদীরাও নয়_ ফুলবাড়ীতে যারা ছিল তারা স্বতন্ত্র। কিন্তু এর সব ক'টি সম্ভব হয়েছিল কৃষকের অদম্য জেদ ও লড়াকু চেতনায়। কৃষক ফেনোমেনার দিন এখনও শেষ হয়ে যায় নাই।
পরিশেষে সুবিনয় মুস্তফীকে কিঞ্চিত ক্রিটিক্যাল হতে বলি। বামেরা আজ ইজি টার্গেট। কিন্তু আপনার বক্তব্য যেন তাদের মতো ইজি টার্গেট না হয়।

::::::::::::::::::::::::::::::::::::
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

হাসিব এর ছবি

বহুতদিন পরে পুরনো ফারুক ওয়াসিফ । স্যালুট বস ।

দিগন্ত এর ছবি

আমি একমত যে যত দোষ নন্দ ঘোষ মার্কা কমিউনিস্টদের ঘাড়ে দোষ চাপানো উচিত নয়। ঘটনা হল কমিউনিস্ট শাসন মূলত একনায়কতন্ত্রের মত এক-পার্টি-তন্ত্র। এখন এক পার্টি শাসন করলে সর্বদা এরকম জোর করে চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত সহ্য করতে হয় জনসাধারণকে। এর মধ্যে সমাজতন্ত্রের কোনো ভূমিকা নেই।

এবার দ্বিতীয় পয়েন্টে আসি, ভারতে যেসব জায়গায় কমিউনিস্ট ঘাঁটি নেই সেসব জায়গায় এখনও কৃষকেরা জমির মালিকানাই ঠিকমত পায়নি, অথবা অনেক পতিত জমি আছে। তাই জমি নেওয়া অনেক সহজ। যেমন অন্ধ্রের কথাই দেখা যাক। এখানে অনেক পতিত জমি এমনিই আছে, তাতে ইন্ডাস্ট্রি গড়লে কারো কোনো সমস্যাই নেই। এখানে জনঘনত্বও অনেক কম। আর মহারাষ্ট্রে কিভাবে শিল্পের জন্য জমি নেওয়া হয় তা অনেকেরই জানা এখন।

সমস্যা একনায়কতন্ত্র বা রাজনীতির থেকে অনেক গভীরে। আমি অনেক মতবাদ পড়ে ফেলেছি, কিন্তু জমি কিভাবে নেওয়া উচিত তা নিয়ে কোনো সাধারণ সমাধানে পৌঁছতে পারিনি।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সাধক শঙ্কু এর ছবি

নন্দীগ্রামের আলাপে স্ট্যালিন/মাও লইয়া টানাটানি করার কারণ কি? হিস্ট্রি চ্যানেল আর আনন্দবাজার পত্রিকা?

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন বামফ্রন্ট সরকার বিপ্লব কইরা ক্ষমতায় আসে নাই। বিপ্লব ঠেকাইয়া ক্ষমতায় আইছে। ভূমি সংস্কার যতটা তারা করছে সেইটা নকশাল ঠেকাইতে। পুরা ঠেকাইতে পারে নাই। কওয়া যায় ঠেকা দিয়া রাখছে। তাগো লগে কংগ্রসের মূল পার্থক্য হইলো কংগ্রেস আনস্কিলড চোরে ভর্তি। বাকিটা প্রায় একরকমই। সেইখানে জমি দখল নিয়া যেই দন্দ্ব সেইটা কংগ্রেসের আমলে হইলে শ্লোগানের চোটে আন্দামান পর্যন্ত কাইপা উঠতো। এখন বিজেপি/কংগ্রেস সেইখানে তালে আছে নকশালরা একটা মুভমেন্ট তৈরী কইরা আনলে সেইটারে কেমনে ভোটে কাজে লাগান যায়। বুদ্ধবাবুর বুদ্ধি জ্যোতবাবুর থিকা কম। নাইলে ঘটনা মার্চেই শেষ হইতো।

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারি শিল্পে পশ্চিম ইউরোপের সমকক্ষ ছিল ১৯৫০ দশকের শেষ পর্যন্ত। কেমনে? কুলাক খতমের কারণে। একদিকে কার্নিলভের চ্যালারা আরেক দিকে পুরা পুজিবাদী বিশ্ব তখন কুলাকগো মাধ্যমে বলশেভিকদের খতম করার তালে ছিল। যৌথ খামারের আইডিয়াতে ত্রুটি আছে। মাস ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন লইয়াও আইজকার পারস্পেক্টিভে অনেক কথা কওয়া যায়। কিন্তু ১৯২০/৩০ এর দশকের বিচারে আমি তাতে খুব বেশী হিসাবের ভুল দেখি না। পাল্টা উৎপাদনক্ষমতা বানাইতে উৎপাদনের প্রতিবন্ধক শ্রেনীর গলায় পাড়াই দেওয়া লাগে। সোজা কথা আক্রমনকারীর বিরুদ্ধে "গালভরা মানবিক সংগ্রাম" এর বদলে আক্ষরিক অর্থে জিততে গেলে তারে খতম করা ছাড়া আর কি কি পথ আছে একটু খুইলা কইলে ভালো লাগতো।
মাস ইন্ডাস্ট্রয়ালাইজেশন একটা কেন্দ্র থিকা চলছে। সেইটা ব্যুরোক্র্যাটাইজেশনের দিকে গেছে। সেই আমলারাই ১৯৬০এর পরে সোভিয়েত ইউনিয়নে ভারী শিল্পরে আর নবায়ন করতে দেয় নাই। এগুলা পরিস্কার। হিট্লুরে খেদাইতে গিয়া পার্টিতে বিশেষভাবে সামরিক আমলাতন্ত্র শক্তিশালী হইছে। তারা কেন্দ্রিকতা থিকা পকেট ফুলাইছে। সেইটাও ঠিক। কিন্তু এই খান থিকা যদি কেউ কনক্লুশন টানতে চায় যে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্যাপিট্যালজিমের বিরুদ্ধে ফাইট করতে পাল্টা অবকাঠামো নির্মান কোন সমাধান না, সেইখানে দোকান্দারীই ভবিতব্য তখন প্রতিবাদ করাই লাগে। পুঁজি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীরে আক্রমণ করেই। না করলে উদ্বৃত্ত আসবো না। না আসলে হায় হায় কোম্পানি। আক্রমন করলে আক্রান্তের দিক থিকা প্রতিরোধ আসে। যুদ্ধ কইরা আক্রমণকারীর কাছ থিকা মুক্ত করা এলাকায় পাল্টা অবকাঠামো তৈরী করাই জানামতে মনোপলির সাথে ফাইট করার সবচাইতে শক্তিশালী রাস্তা। এই অবকাঠামো হয়তো কখনো কখনো মাইর ধইর কম কইরাও তৈরী করা যায়। কিন্তু সেই "চরকা কাটা শান্তির" বাস্তব উদাহরন খুইজা পাইতে খালি দেরী হইয়া যাইতাছে। সেই জন্য চরকা লাইন থিকা নানান ফর্মের ভবিতব্য থিউরি বাইর হইতাছে।

একটা কথা পরিস্কার হওয়া প্রয়োজন। উৎপাদন আর বিপনন ব্যবস্থা শেষ পর্যন্ত একটা অপরিবর্তনীয় স্ট্রাকচারের অধীন এইটা মিথ্যা কথা। এইটা সবচাইত ভালো জানে যারা এইটা প্রচার করে তারাই। মার্কেটিং পলিসির দিকে ভালো কইরা তাকাইলে দেখবেন প্রতি মুহুর্তে সেইখানে কতখানি পরিবর্তন করা হইতাছে কায়দা কৌশলে। অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত উৎপাদন আর সার্কুলেশন কোন নির্দিষ্ট বিন্দুতে স্থির না। সেইরকম আক্রান্তর প্রতিরোধও সারাক্ষণ কায়দা বদলাইতাছে। দৌড়ের উপর না থাইকা তারো উপায় নাই।

পরবির্তন ঘটে।
পরিবর্তন ঘটানো যায়।
পরিবর্তন ঘটানো হচ্ছে।
পরিবর্তন ঘটানো হবে।

ভবদীয়

সাধক শঙ্কু


গড়ি দালানকোঠা ফেলে দিয়ে শ্মশাণে বৈঠকখানা

হাসান মোরশেদ এর ছবি

যাক,পোষ্টের সার্থকতা হলো দুর্দান্ত কমেন্টগুলো । ধন্যবাদ সুবিনয় মুস্তফী,ফারুক ওয়াসিফ,দিগন্ত ও সাধক ।
সুবিনয় সাহেবকে বিশেষ ধন্যবাদ আলোচনার সুত্রপাতের জন্য । ওয়াসিফ,দিগন্ত ও সাধকের কথার পরে খুব বেশী কিছু বলার নেই । সুবিনয় তার দেয়া লিংক গুলোর সাথে মাওসেতুং এর তিব্বত আগ্রাসন ,ষ্ট্যালিনের সাইবেরিয়া ক্যাম্প নিয়েও বলতে পারতেন । এই বলা নিশ্চয়ই মথ্যে হতোনা ।
আমি আন্তর্জাতিক বৃত্তে না ঢুকে দেশীয় প্রেক্ষাপটে থাকি । সুবিনয় সাহেবকে সবিনয় বলিঃ আমাদের দেশেই টংক,তেভাগা,নানকার আন্দোলনের মতো কৃষক বান্ধব আন্দোলনগুলো কিন্তু কমিউনিষ্টরাই সংগঠিত করেছিলো ।
আপনার দেয়া তথ্যগুলো অস্বীকার করার তো কিছু নেই তবে এর জন্য সমাজতান্ত্রিক সিস্টেমটাকে সরাসরি দায়ি করা যায় কিনা সেটা নিয়ে ভাবার সুযোগ আছে,যেহেতু সমাজতন্ত্রের উলটো সিস্টেমে ও একই উদাহরন রয়েছে ভুঁড়িভুঁড়ি ।
কোন তত্ব কিংবা দর্শনে মাথাবন্ধক না দিয়ে বরং ঘটনা ও তার পারস্পরিক ক্রিয়াকর্মগুলো বিশ্লেষন করতে পারাটাই জরুরী বোধ হয় ।
-----------------------------------------
'প্রিয়তম পাতাগুলো ঝরে যাবে মনে ও রাখবেনা
আমি কে ছিলাম,কি ছিলাম--কেন আমি
সংসারী না হয়ে খুব রাগ করে হয়েছি সন্ন্যাসী
হয়েছি হিরন দাহ,হয়েছি বিজন ব্যথা,হয়েছি আগুন'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

আরশাদ রহমান এর ছবি

নন্দীগ্রামের মানুষের জন্য সশ্রদ্ধ অভিনন্দন। ধন্যবাদ হাসান মোরশেদ।

শ্যাজা এর ছবি

সরকারী খবরে ৩জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে, বেসরকারী খবরে মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি। যদিও এক একজন একেকটা সংখ্যা বলছেন একেকটা চ্যানেল একেক রকম বলছে বলে প্রকৃত সংখ্যা জানা-বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু হতাহত যে অগুন্তি সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন দুজন নারী। গুলি গোলা চলছে, রক্ত বইছে। চলছে এলাকাদখলের হুঙ্কার। বুদ্ধবাবু এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে বিবৃতি দিচ্ছেন, 'ওখানে আমাদের ১৫০০লোক আছে।'
গুলি চালিয়ে আধা-নিকেশ করে পরে আহতদের গাড়িতে করে পাচার করার সময় ধরা পড়েছে তিনটি গাড়ি। গ্রেপ্তার হয়েছে আটজন, আহতদের পাচার করতে গিয়ে।
বিক্ষোভমিছিল থেকে চলছে নির্বিচার ধর-পাকড়, লাঠি। লকআপ ভরে উঠছে বিক্ষোভকারীতে। মমতা তাঁর 'বনধ' অস্ত্র নিয়ে পূর্ণ উদ্যমে মাঠে।।


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

কমিউনিজম নিয়ে বিতর্কে যাওয়া আসলে বোকার কাজ, তারপরেও আহাম্মকের মত কেন যে সেই বিতর্ক শুরু করতে গিয়েছিলাম... তবুও সবাইকে মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ। এবং আপনাদের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আর কিছু কথা বলেই শেষ করবো।

প্রথম যে কথাটা আসে, সেটা হলো অন্যান্য মৌলবাদের মত কমিউনিজমও একটা 'absolutist' মৌলবাদী ব্যবস্থা। কি অর্থে? যেই সিস্টেম দাবী করে যে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর তার জানা আছে, সমস্ত সমস্যার সমাধান সে তৈরী করে দিতে পারে - সেই সিস্টেম নিয়েই সন্দিহান হওয়ার প্রচুর অবকাশ থাকে। বাস্তব কখনো এতো সুন্দর ছকে বাঁধা যায় না। যখন বাস্তবে প্রচলিত ইসলামী শাসন ব্যবস্থার ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দেয়া হয়, তখন ইসলামী মৌলবাদীরা রব তোলেন, এটা তো আসলে প্রকৃত ইসলাম না। রসুলের ইসলামে ফিরে যেতে হবে। বাস্তবে কমিউনিস্ট শাসনের রক্তাক্ত ইতিহাস আর মানুষের উপর জুলুমের লম্বা ফিরিস্তি দেখালেও বামপন্থীরা সেই একই অজুহাত টানেন - আরে ভাই, ঐটা তো আসল কমিউনিজম ছিল না। আরো খাঁটি ভার্শনে যাইতে হবে। তারা এটা দেখেন না যে মানব-ব্যবস্থায় পারফেকশন একটা সোনার হরিণ। কমিউনিস্টদের ধর্মগ্রন্থ মার্ক্স আর লেনিন লিখে গেছেন, এরাই তাদের নবী-রসুল, এবং এই ধর্মেরও প্রচুর অলি-আউলিয়া আছেন - চে অথবা কাস্ত্রো অথবা আংকেল হো - কমিউনিস্ট আইকনোগ্রাফির সবচেয়ে শক্তিশালী আইকন অবশ্যই চে।

ভুল বোঝার কোন অবকাশ রাখতে চাই না। এমনটা ভাবার কারন নেই যে আমি মার্কিন হেজিমোনি বা বেপরোয়া পুঁজিবাদের সাফাই গাইছি। মার্কিনদের ইতিহাসও কম রক্তস্নাত নয়। কিন্তু কমিউনিস্টদের বেলায় আরেকটা জিনিসও কাজ করে। তাদের যে ব্যাপারটা সবচেয়ে বেশী চোখে লাগে, সেটা হচ্ছে promise এবং delivery-র মধ্যে বিরাট ফারাক। মেহনতী মানুষের কথা বলে বলে ক্ষমতায় এসে পরবর্তীতে সেই মানুষের উপরেই যে জুলুম চালানো হয়েছে, সেটা রাশিয়া, চীন আর পূর্ব ইউরোপের ইতিহাসে লেখা হয়ে গিয়েছে। আমাদের ছেলেবেলার সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা বার্লিন ওয়ালের পতন, এবং একেবারে ভেতর থেকে কমিউনিস্ট শাসন ব্যবস্থার ধ্বংস হয়ে যাওয়া। পূর্ব জার্মানি, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, হাঙ্গেরী ইত্যাদি দেশে বাইরে থেকে সৈন্য এসে কমিউনিজম খেদায়নি। বরং দেশের লোক অর্ধ শতাব্দীর অত্যাচারের পরে নির্দ্বিধায় লাথি মেরে কমিউনিস্ট শাসন ব্যবস্থা ঝেড়ে ফেলে দিয়েছে। ওই অঞ্চলে আর ভবিষ্যতে কমিউনিজম ফেরত আসার কোন আশংকা নেই, কারন সেখানকার জনগণ সেই খেলা একবার দেখে এসেছে। ক্ষণে ক্ষণে কিছু রেফারেন্স টানবো - এই জন্যে মাফ করবেন - তবে প্রথম রেফারেন্স দিয়ে শুরু করি - পূর্ব জার্মানির কমিউনিস্ট শাসনামলের জীবনযাত্রা নিয়ে সাম্প্রতিককালের সবচাইতে সাড়া জাগানো চলচ্চিত্র The Lives of Others - সবাইকে এটা দেখার অনুরোধ করি।

বিপ্লব ভাই থেকে শুরু করি - আপনি আমার খুব প্রিয় মানুষ অকপটে স্বীকার করি - নেক্সট টাইম বাড়ি গেলে আপনার জন্যে বেশ কিছু বই আনবো, এখনই লিস্টি করে রেখেছি। হাসি

ওয়াসিফ ভাই,
ভারতে নক্সালবাদী সহ অন্যান্য দেশে কমিউনিস্ট আন্দোলন সমাজ়ে অনাচার থামানোর চেষ্টা করেছে, সেটা অস্বীকার করার কিছু নেই। আমি বলেছি শাসকের ভূমিকায় কমিউনিস্টরা গেলে কি অবস্থা হয়, তার কথা। এই ক্ষেত্রে দিগন্ত সবচেয়ে স্বার্থক কথা বলেছেন - একচ্ছত্র ক্ষমতা কোনদিনই দেশের মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না, এমন কি স্বঘোষিত মেহনতী মানুষের বন্ধু কমিউনিস্টদের একচ্ছত্র শাসনও না। Power corrupts, absolute power corrupts absolutely - এই কথাটা ধ্রুব সত্য। কমিউনিস্ট সহ সব শাসকদের এটা মনে রাখা উচিত। আর নিওলিবারেল কর্পোরেটদের কথা বলেছেন - তারা তো এই দাবী করেনি যে তারা গরীবের বন্ধু - তারা এসেছে কেবল মুনাফা লুটতে। এতে সত্যবাদিতা আছে এক প্রকারের। কিন্তু কমিউনিস্ট শাসকদের প্যাকেজিং আগা-গোড়াই হিপোক্রিসিতে মোড়া।

আপনার ৪ক - মাওয়ের পূর্বে জাপানী ও অন্যান্য ঔপনিবেশিক শাসকের অপকর্মও অস্বীকার করার কিছু নেই - কিন্তু এক জুলুমকে আরেক জুলুম দিয়ে ঠেলে সরিয়ে দিলেও সেটা কিন্তু জুলুমই থেকে যায়। সবার উপরে মানুষই সত্য - 'শ্রেণী শত্রু' লেবেল সাঁটিয়ে দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে ডিহিউম্যানাইজ করে তাদের নিধনের প্রক্রিয়াটা হয়তো একটু সহজতর হয়, কিন্তু তারপরেও সেটা হত্যাযজ্ঞই। শ্রেণী শত্রুর গলা কাটলেও মানুষের রক্তই বেরোয়।

তারপরে মৃতের সংখ্যায় আসি। অতি চমৎকার একটা ওয়েবসাইট পেলাম ঠিক এই বিষয়ে - নানান সোর্স-টোর্স দেওয়া আছে তাতে। সেখানে স্টালিনের আমলে নিহতের সংখ্যা দেওয়া হয়েছে গড়পরতা দুই কোটি - এমন কি Alec Nove-এর মত যারা বামপন্থী লেখক ছিলেন তারাও এক কোটির নীচে যেতে সাহস পাননি। "Although it's too early to be taking sides with absolute certainty, a consensus seems to be forming around a death toll of 20 million. This would adequately account for all documented nastiness without straining credulity." হিটলারের খুনের হিসাব কম সে কম এক কোটি থেকে উপরের দিকে আড়াই কোটি পর্যন্ত যায়। আর মাওয়ের শাসনামলে প্রায় চার কোটি লোক মারা গেছে - এদের সিংহভাগ মারা যায় Great Leap Forward নামের কৃষি বিপ্লব ঘটাতে গিয়ে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে। এই প্রসঙ্গে কৌতুহলী সকলকে Jasper Becker রচিত Hungry Ghosts বইটি পড়তে অনুরোধ করবো। বেকার দুই দশকের অধিক সময় ধরে চীন নিয়ে সাংবাদিকতা করছেন এবং সেখানে থেকেছেন। তার বই পড়ে জানা যায়, কিভাবে দুর্ভিক্ষের চরম পর্যায়ে গ্রামের কোন কোন মানুষ তার নিজের সন্তান ভক্ষণে বাধ্য হয়েছিল, অপরদিকে কৃষি বিপ্লব কি দারুন ভাবে এগোচ্ছে, সেই প্রপাগান্ডা মাও অকাতরে গিলে যাচ্ছিলেন। আর তার কিছুদিন পরে সাংস্কৃতিক বিপ্লব নামের নতুন জুলুমের সময় কমিউনিস্টদের কথা শুনে ছেলেরা নিজ পিতা মাতাকে প্রহার করেছে, ছাত্ররা নিজ শিক্ষককে হত্যা করেছে। লেখিকা Jung Chang-এর বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে লেখা বইগুলো এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। চীনের আজকের যে অবস্থা সেটার কৃতিত্ব মাওয়ের নয়, বরং মাও যাকে ক্ষমতার বলয় থেকে বের করে দিয়েছিলেন, সেই দেং শিয়াওপিং-এর। এই ভদ্রলোকের চিরস্মরণীয় উক্তি - 'বিড়াল কালো কি শাদা আমি পরোয়া করি না, যদি সে বিড়াল ইঁদুর ধরতে জানে'। মাওয়ের মৃত্যুর পর তাই সত্তরের দশকের শেষ থেকে দেং বাজার ব্যবস্থার সম্প্রসারণে নেমে পড়েন

সাধক ভাইয়ের লেখায় অনেক ইতিহাস ছিলো - তবে সবচেয়ে চোখে পড়ার মত তার এই কথাটা -

পাল্টা উৎপাদনক্ষমতা বানাইতে উৎপাদনের প্রতিবন্ধক শ্রেনীর গলায় পাড়াই দেওয়া লাগে। সোজা কথা আক্রমনকারীর বিরুদ্ধে "গালভরা মানবিক সংগ্রাম" এর বদলে আক্ষরিক অর্থে জিততে গেলে তারে খতম করা ছাড়া আর কি কি পথ আছে একটু খুইলা কইলে ভালো লাগতো।

তাইলে খুইলাই কই। মানুষকে প্রতিবন্ধক শ্রেনীর তকমা দিয়ে দিলে সে শুধু আর মানুষ থাকে না, তার জীবননাশ সহজতর হয় - এতটুকু বুঝলাম। এই অজুহাতে যদি আরো সহস্র লক্ষ নিরীহ মানুষেরও প্রাণ চলে যায়, সেটা তো শুধু ইতিহাসের প্রয়োজনে, historical necessity মাত্র। তাই গুলাগ বলেন, নিরীহ মানুষের নিহত হওয়া বলেন, ইউক্রেনের ভয়াল দুর্ভিক্ষের মত ঘটনা সবই মাফ করা যায়।

না, আসলে যায় না। হাত অনেক রক্তে ভেজা, সেই রক্তের পরিমাপ এখনো হচ্ছে। সাইবেরিয়ার গুলাগ-এ গিয়ে যুগের পর যুগ কঠোর নির্বাসনে কাটিয়েছেন সলঝেনিৎসিন-এর মত লেখক, শালামভ-এর মত সত্যবাদী। এরা সোভিয়েত নাগরিকই ছিলেন, কিন্তু সেই আমলের প্রামাণ্য দলিল তারা রেখে গেছেন। লুবিয়াংকায় খুন হন আইজাক বাবেল, বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ছোট গল্পকারদের অন্যতম। এরকম আরো শত শত উদাহরণ আছে - লিদিয়া চুকোভস্কায়া, এভগেনিয়া গিন্সবার্গ এবং আরো আরো অনেকে, সবাই নির্বিচার অত্যাচারের স্বাক্ষ্য দিয়ে গেছেন।

মজার ব্যাপার হচ্ছে এই যে রাশিয়ার বর্তমান নেতা (কেজিবির এককালের বস) পুতিন পর্যন্ত স্তালিনের আমলের হত্যাযজ্ঞের জন্যে অনুশোচনা জানিয়েছেন! কিন্তু দেশীয় কমিউনিস্টদের সেই নিয়ে তেমন বিকার নেই। সবই ঐতিহাসিক অনিবার্যতার চাক্কা! সাম্যবাদের আইডিয়াল প্রশংসনীয় নিঃসন্দেহে, চে-র মত মানুষের গল্পে রোমাঞ্চ পর্যন্ত আছে, কিন্তু তাই বলে ইচ্ছাকৃত অন্ধত্ব? এক সময় হয়তো এসব নিয়ে জানার কোন সুযোগ ছিল না কিন্তু আজকে হাতের নাগালে সব তথ্য - এখন আর এইসব অপরাধ উপেক্ষার কি সুযোগ আছে? কেন এত অজুহাত?

শুরুতে নিয়ত ভালো সবারই থাকে। কিন্তু অপরাধ অপরাধই।

(কটুক্তি করে থাকলে সবার কাছে অগ্রীম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, নিজ গুণে মাফ করবেন। আজকাল যদিও কাক মার্কা ব্যঙ্গাত্মক লেখাও দেখতে হচ্ছে!!! আরেকটা ব্যাপার - প্রতিটি লিংকের নীচে ভুরি ভুরি প্রামাণ্য বইয়ের তালিকা আছে - হাতে পেলে পড়ে দেখতে পারেন। সকলকে ধন্যবাদ।)

-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

গত শতাব্দীর তিরিশের দশকে ইউক্রেনে সুপরিকল্পিতভাবে ঘটানো ভয়াল দুর্ভিক্ষের কথা অনেকেরই জানা নেই। সোভিয়েত ইউনিয়নে বলশেভিক-বিরোধী অঞ্চল হিসেবে খ্যাত ছিলো পশ্চিম ইউক্রেন। এই বিরোধীতাকে সমূলে উৎপাটন করতে সেখানে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ঘটানো হয় দুর্ভিক্ষ। ইউরোপের শস্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত ইউক্রেনে অনাহারে মারা যায় ৪০ লক্ষেরও বেশি লোক। কমিউনিস্ট সরকার অজুহাত দেখায়, আবহাওয়া চাষোপযোগী ছিলো না, ফলে আবাদ হয়নি যথাযথ ইত্যাদি ইত্যাদি।

আসল তথ্য হলো, কমিউনিস্ট সরকার তার যাবতীয় পেটুয়া বাহিনী ব্যবহার করে ওই অঞ্চল থেকে জোর করে প্রায় সমস্ত শস্য ও খাদ্যদ্রব্য নিয়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যান্য অঞ্চলে। কেজিবির আর্কাইভ এখন উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। তাতেই আছে ভুরি-ভুরি প্রমাণ আর ছবি।

বামপন্থা আদর্শ হিসেবে অবশ্যই মহৎ। কিন্তু তার বাস্তব প্রয়োগ কতোটা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে অনেক কমিউনিস্ট শাসকের একনায়কমূলক উৎপীড়ন, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন আর কিউবা-উত্তর কোরিয়ার অর্থনৈতিক দৈন্য।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

সাধক শঙ্কু এর ছবি

একসাথে বেড়াল আর বেড়ালের মুখে ধরা ইদুর হাসাইতে পারা দাদা,

আপনে যত গুলা লিঙ্ক দিলেন তাতে আপনার অনেক পরিশ্রম হইছে। সেই জন্য ধন্যবাদ। পূর্ব ইউরোপের ধ্বস ১৮ বছর আগের ঘটনা। স্টেট মনোপলিতে রাষ্ট্র শোষকের ভুমিকায় গেছে। দুনিয়ার আর দশটা গনঅভ্যুত্থানের মতো সেইখানেও প্রতিরোধের জাগায় শ্রমজীবি মানুষরাই ছিল। শোষন যেই মডেলেই হোক না ক্যান তার প্রধাণ ভিকটিম হইবো প্রান্তিক মানুষরাই। সোভিয়েত ইউনিয়নরে বাঁচানোর কোন খায়েশ আমার ছিল না। তারা যা কর‌ছে তার ফল তাগো দেশের লোকের কাছেই পাইছে। আমার পয়েন্ট ছিল অন্য জাগায়। আপনি যেই তথ্য ভান্ডারটা ঝুলাইছেন তার লগে অন্য আরেকটা রাজনীতি আছে। সেইটা হইল আজকের বাস্তবতারেই শেষ কথা বইলা "ভবিতব্য তত্ত্ব" দাড় করানো। অর্থাৎ শিল্প উৎপাদন অবকাঠামো আর তার কাঁচামালের মালিকানা/নিয়ন্ত্রণে আর কোন পরিবর্তন হবে না। পৃথিবীর অবশিষ্টাংশ বাজার হিসাবেই ব্যবহৃত হইবো। তো বাজার হইয়া নিজেরে উপনিবেশ মনে কইরা মন ছোট করার কিছু নাই , যারা এগুলা বুঝে না বুঝতেও চায় না (মালু/ইন্দু) তারা চোখেমুখে ২৪ ঘন্টা অর্গাজম নিয়া ঘুরে ইত্যাদি। অর্থাৎ পৃথিবীর সম্পদ এবং প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধাবলীর ক্ষেত্রে যারো আগে আসলে আগে পাবেন মিস কর‌ছেন তারা হোপলেস অবস্থা থিকা আসলে মুক্তি পাওনের চিন্তাবাদ দেন। এইটা জিনের লিখন। সামাজিক ডারউইনিজম ইত্যাদি।
ঠিক এই জায়গাটাতেই আমার আপত্তি। সমাজতন্ত্র ছিল পুঁজিবাদী সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে পাল্টা আর্থসামাজিক অবকাঠামো তৈরীর চেষ্টা। সেই চেষ্টা কোন টিকে নাই, সেই বিষয়টা বুঝার চেষ্টা করা, এখন ক করা যায় তার সিদ্ধান্তের দিকে যাওয়া এগুলি লইয়া আলোচনায় আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি নাই।

সমাজতান্ত্রিক ব্লক বিদায় হওনের ১৮ বছর পরে কিন্তু পুঁজিবাদ মোলায়েম হয় নাই। সাম্রাজ্যবাদী সম্প্রসারণের জন্য প্রতিদিনই গণহত্যা চলতাছে। সমাজতন্ত্র ঠেকাইতে বিশ্বব্যাপি স্পন্সর করা ফ্যাসিস্ট চক্রের এখনকার কাজ এই গণহত্যায় অংশ নিয়া , সহায়তা কইরা সাহেবগো ইহকাল উদ্ধার করা। কোন জাগায় তেরিবেরির সম্ভাবনা বা কোন জাগার কোন জিনিস জরুরি ভিত্তিতে দরকার হইলে সেইখান জরুরি অবস্থা/জলপাই শাসন দিয়া কুইক সার্ভিসের ব্যবস্থা করা, এইসব কিছুই কিন্তু চলতাছে। চলতাছে তার বিপরীতে ফাইটও। যেহেতু চলতাছে সেহেতু "কি করিতে হইবে" র দার্শনিক গুরুত্বটাও থাইকা যাইতাছে। অতীতে এই বিষয়ে কি করা হইছে, সেই অভিজ্ঞতার বিশ্লেষনে সমাজতন্ত্র বিনির্মানের সমস্যা গুলা কোথায় ছিল সেইটা জানা ফরজ।

যখনই স্ট্যালিন আমলের লাশের ছবি দিয়া "ভবিতব্য তত্ত্ব" প্রমাণের চেষ্টা হইবো তখনই আমি স্ট্যালিনিস্ট।

হাসান মোরশেদের পোস্টের আলোচনা কোথা থিকা কোথায় গেলগা!


গড়ি দালানকোঠা ফেলে দিয়ে শ্মশাণে বৈঠকখানা

??? এর ছবি

সবাই দারুণ এনগেজ করেছে দেখছি! এমনটা দেখতেই ভাল লাগে।
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!

নীল কথক এর ছবি

"রক্তের অক্ষরে লেখা নন্দীগ্রাম " লিখাটি অসাধারন। যুক্তির সাথে আবেগ মিশে তৈরী করেছে চমৎকার আবেশ। আক্রমন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবুকে, যিনি হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য নায়ক কোন সমালোচনাই তার জন্য যথেষ্ঠ নয়। তবে সমালোচনাই হওয়া উচিত বিচার নিষ্ঠ এবং তথ্য সম্ভৃদ্ধ। হাসান মোরশেদ ঠিক এই কাজটি করেছেন কোন তথ্য বিশ্লেষন ছাড়াই , অপযাপ্ত তথ্যের আলোকে।

মোরশেদ লিখেছেন "সচেতন সকলেরই জানা,শিল্পায়নের জন্য পশ্চিমবংগ রাজ্যসরকার একটি শিল্পগোষ্ঠীকে পুরো এলাকা লিজ দিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলো । চুক্তির শর্তানু্যায়ী গ্রামবাসীকে তাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করতে গেলে সংঘর্ষের সুত্রপাত হয় ।" আমি যদিও খুব সচেতন নই তবুও জানি উদৃতির প্রথম বাক্যটি সত্য। দ্বিতীয়টি নয়।

চলতি বছরের ফেব্রয়ারীতেই , যখন "নন্দীগ্রামে ক্যামিকেল হাব হতে দেব না" এমন আন্দোলন দানা বাঁধে তখুনি মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবু পরিষ্কার জানিয়ে দেন , নন্দীগ্রামে হাব হবে না।

১৭ই মাচ ২০০৭, এই বুদ্ধবাবু তাঁর মুখের কথা সরকারী ভাবে ঘোষনা করেন। জনাব হাসান মোরশেদ এটা আট মাস আগের ঘটনা। আপনি কোলকাতার সংবাদপত্রগুলোর দিকে একটু চোখ তুলে তাকান , দেখতে পাবেন কোথায় ভুল হচ্ছে।

সব বিশ্লেষন করে নিবন্ধ রচনা বা মন্তব্য করা উচিত। পাঠকরা অন্তত এতে ভুল ধারনা পাবেন না।

দিগন্ত এর ছবি

প্রথম ঝামেলাটা হবার পরে বুদ্ধবাবু ঘোষণা করেন যে নন্দীগ্রামে কেমিক্যাল হাব হবে না। এখন যা ঘটছে সবই সেই প্রাথমিক সূত্রপাতের বদলা আর পালটা হামলা। সুতরাং "সংঘর্ষের সুত্রপাত" - এর কারণ হিসাবে "গ্রামবাসীকে তাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ" একদম যুক্তিযুক্ত। এখন যা ঘটছে সবই এই সূত্রপাতের কন্টিনিউয়েশন।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

নীল কথক,
আমার লেখার ঐ অংশ থেকে যদি এরকম মনে হয় যে,আমি বলতে চেয়েছি নন্দীগ্রামের মানুষেরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার জন্য- তাহলে সেটা আমার বুঝানোর ভুল ।

চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবু শিল্পগোষ্ঠীর সাথে । কত বিনিয়োগ করবে তারা,বিনিয়োগ থেকে রাজ্য থেকে কি সুবিধা পাবে, এর জন্য নন্দীগ্রামের কতোটা জায়গা সেই গোষ্ঠীকে ছেড়ে দিতে হবে-এসব নিয়ে দু পক্ষের মধ্যে চুক্তি হয়েছিল নিশ্চয়ই । নন্দীগ্রামের মানুষ সেই চুক্তির একটা পক্ষ নয় অবশ্যই-হয়তো তাদের অগোচরেই তাদের ভবিতব্য নিয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন মহান কমিউনিষ্ট বুদ্ধবাবু!

জানুয়ারীর আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তিনি যে ঘোষনা দিয়েছিলেন যে হাব হবেনা-সেটা ছিলো স্রেফ রাজনৈতিক ঘোষনা,পরিস্থিতি অনুকুলে আনার জন্য । লোক দেখানো ঘোষনা না হলে একই ঘটনার পুন্রাবৃত্তি ঘটবে কেনো আবার?
বেচারা বুদ্ধবাবু । দক্ষিন আমেরিকার কোন কোন রাষ্ট্রে নাকি মাদক ব্যাবসায়ীরা ইচ্ছেমতোন সরকার বদলে ফেলে । দেখা যাক বুদ্ধবাবু কতোটা পাপেট,কতোটা চুক্তিবদ্ধ,কতোটা নতজানু
-----------------------------------------
'প্রিয়তম পাতাগুলো ঝরে যাবে মনে ও রাখবেনা
আমি কে ছিলাম,কি ছিলাম--কেন আমি
সংসারী না হয়ে খুব রাগ করে হয়েছি সন্ন্যাসী
হয়েছি হিরন দাহ,হয়েছি বিজন ব্যথা,হয়েছি আগুন'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আলোচনা জমুক। আগ্রহী পাঠক।

দিগন্ত এর ছবি

যাহোক,যারা পড়েননি তাদের জন্য দুতো লিঙ্ক দিচ্ছি -
কিভাবে ক্যাডার লেলিয়ে দেওয়া হয় মিছিলের বিরুদ্ধে

আর

অপর্ণা সেন,শঙ্খ ঘোষ সহ সব নামকরা শিল্পী প্রতিবাদে নামায় লক-আপে।

আর আপডেট হল - সিটু বনাম মেধা পাটেকর লড়াই চলছে। একনায়কতন্ত্র বজায় আছে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

দু:খিত, উত্তরটা মন্তব্যের খোপে মানাতে পারলাম না। পোস্ট হিসাবেই দিলাম। আশা করি সকলে ক্ষমার্হ চোখে দেখবেন।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

মুজিব মেহদী এর ছবি

এই পোস্টটাকে আগাগোড়া ফলো করলে যেকোনো পাঠকের পক্ষে ঋদ্ধ না হয়ে উপায় নেই, তা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায়। এরকম কেজো বিতর্ক হলে সচলায়তনের মানও ধেই ধেই করে অনেক উঁচুতে উঠে যাবে।

অচল হয়েও সচলায়তনের আশপাশে এজন্যই ঘোরাফেরা করি। ভেবেছিলাম, ব্লগে সময় দেয়া কমিয়ে দেব। কিন্তু এই পোস্টটি ঘাড়ে ধরে এনে বারবার সচলায়তনে ঢুকিয়ে দিচ্চে।

আরো চলুক, আমরা চিড়া-মুড়ি নিয়ে বসে যাই।

ঝরাপাতা এর ছবি

সত্যিই আশ্চর্যজনক। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিরোধীরাই পুজিঁবাদের রক্ষক! ধন্যবাদ মোরশেদ ভাইকে পোস্টের জন্য।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

কারুবাসনা এর ছবি

হুম।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।