রাষ্ট্র মহাশয় যখন ইশ্বর হয়ে উঠেন...

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: বুধ, ১৬/০৭/২০০৮ - ৭:৩৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

..

বরং ইশ্বর মহাশয়ের জন্য আমার মাঝে মাঝে করুণা হয় । বেচারা তাঁর অতিবশংবদ ফেরেশতাকুলের আপত্তিওজর উপেক্ষা সৃষ্টিশীলতা মেতে মানুষ গড়লেন । সৃষ্টিশীলতার বড় হ্যাপা ।
নিজের সৃষ্টিকে নিজের তাবে রাখতে ইশ্বর মহাশয়কে সদা ব্যতিব্যাস্ত থাকতে হয় । ক্ষনে দেখান স্বর্গের লোভ,ক্ষনে রৌরব নরকের ভয় । আর আদি পাপের গল্প তো আছেই । শেষ পর্যন্ত পৃথিবী শাসন করে কিছু রূপকথা ।
ইশ্বর তার বানানো মানুষের জন্মক্ষনেই তার মাথা ও মগজে ঢুকিয়ে দেন হীনমন্যতা । আদিপাপের গল্প মুখস্ত করান-বুঝলে হে আদমসন্তান তুমি কিন্তু পাপের ফসল, তোমার আদিপিতামাতাকে কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে গুয়ান্তানামো বে- বসুন্ধরায় । অতএব মাথা বেশী উঁচ্য করোনা বাপেরা, সারা জীবন ধরে ইশ্বর নাম জপতে থাকো,তাঁহার করুণা হইলে পাপমুক্তি ঘটিতে ও পারে, জান্নাতুল ফেরদৌস পাইতেও পারো তবে রৌরব নরকের কথা ও বিস্মৃত হইওনা ।

গতবইমেলার একটি যেনতেন উপন্যাসের খসড়া করেছিলাম । বীর প্রসবিনী বাংলাভাষা কতো সাহসী,দুর্দান্ত উচ্চারন প্রকাশিত হয় এই ভাষায় । আমি সামান্য মানুষের অতিসামান্য লেখা সেই তালিকার যোগ্য নয় কোনমতেই । তবু শুভাকাংখী বন্ধুগন,সুহৃদ প্রকাশক শংকা প্রকাশ করেন । আমি তুড়ি মারি--দূর আপনারা বেশী বেশী ভয় পান, হাজার হাজার লেখকের লাখ লাখ বই বের হবে , আমার মতো নামহীন লেখকের বইয়ের খোঁজ করার জন্য বসে আছেন তেনারা ।
এক বন্ধু মেইলে জানান- কি করা যাবে আর কি করা যাবেনা সেটা অস্পষ্ট রেখে দেয়া হয় বলেই তো এই অন্ধকার সময়ে এতো ভয় । অসামান্য ছাড় পেতে পারে, সামান্যকে উপড়ে ফেলা হবে শেকড়শুদ্ধ ।

আমি ঘুম থেকে জেগে উঠে চোখের সামনে উদাহরন দেখি । রাজধানীর বাঘা বাঘা সাংবাদিকদের ডেকে ডেকে দাওয়াত খাওয়ানো হয় আর মফস্বলের আহমেদ নূরকে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেংগে দেয়া হয়, সুশীল সমাজভুক্ত হন নামী শিল্পীগন আর বেচারা আরিফ-কারাগারের অন্ধকারে!

সচলায়তন কিছুই নয় । সচলায়তন জন্ম দেয়ার পিছনে ও বিশাল কোন উদ্দেশ্য ছিলোনা, এখনো নেই । যারা লিখতে ভালোবাসেন নির্ঝঞ্ঝাট, তাদের জন্য লেখার জায়গা করে দেয়া-যারা মত প্রকাশ করতে চান অসংকোচে তাদের মত প্রকাশের সুযোগ করে দেয়া । এই তো । কারো সাথে প্রতিযোগীতায় গিয়ে নাম্বার ওয়ান হয়ে উঠা কিংবা রাষ্ট্রশক্তির প্রতিদ্বন্ধি হয়ে উঠা কোন কিছুই নয় ।

তবু আমাদের রাষ্ট্রমহাশয় ইশ্বর হয়ে উঠেন । তিনি বন্দনার লোভে ভয় ও দেখান লোভ ও দেখান , তিনি শংকায় পতিত করেন, তিনি সংশয়গ্রস্ত করে মেরুদন্ড ভেংগে দিতে ভালোবাসেন ।

কিন্তু মাটির বানানো মানুষের মেরুদন্ড মাঝে মাঝে এতো শক্ত হয়ে উঠে কেমনে , প্রভূ?


মন্তব্য

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

সরকার মহাশয়ের যে নেংটু পরা। একটু হালকা টানাটানি করলেই নাঙ্গা হওয়ার ভয়।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

হাসান মোরশেদ এর ছবি

হ, হীরক রাজা ভগবান
-------------------------------------
বালক জেনেছে কতোটা পথ গেলে ফেরার পথ নেই,
-ছিলো না কোন কালে;

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সৌরভ এর ছবি

ডানা ভেঙে দিলেই পাখি উড়ে যাওয়া ভুলে যাবে?


আহ ঈশ্বর, আমাদের ক্ষোভ কি তোমাকে স্পর্শ করে?


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

হাসান মোরশেদ এর ছবি

পাখীদের কোন কোনটাকে যে ডানা না ভেংগে সোনার খাঁচায় ঢুকিয়ে ফেলে । সোনার খাঁচার অভ্যস্ততায় সে পাখী তখন ডানা ভাংগা সহযোদ্ধার আর্তনাদকে ও অবিশ্বাস করে ।
-------------------------------------
বালক জেনেছে কতোটা পথ গেলে ফেরার পথ নেই,
-ছিলো না কোন কালে;

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

রাষ্ট্রযন্ত্র মাঝে মাঝে ঈশ্বর হয়। তখন তাদের মনে থাকে না গুণের সেই হৃদয়ের মতো অস্ত্রের কথা।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি
নিঘাত তিথি এর ছবি

মাই গড! কি লিংক দিলেন এটা? কি হচ্ছে দেশে?
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

জিফরান খালেদ এর ছবি

আপা এইটা তো অনেক দিন ধরেই হয়ে আসতেসে।

আজকের নতুন কিসু না।

সুবিনয়দাও অবশ্যি অবগত আসেন র‌্যাব এহেন কার্যকলাপ নিয়া।

র‌্যাবের স্টাইলি এইটা।

নিঘাত তিথি এর ছবি

হুম, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির রুবেলকেও এভাবে মারা হয়েছিলো, আরও হয়ত হয়...তারপরও মাথাটা চক্কর দিয়ে গা শিউরে উঠে...এত সহজ? এত সহজে শেষ করে দেয়া যায় একটা প্রাণ? মানুষের প্রাণ?
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

মুজিব মেহদী এর ছবি

গান যদি না গাইতে পারি, ঝাপটে যাব পাখা

................................................................
সবকিছু নষ্টদের অধিকারে গেছে

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- মহাইশ্বর কি তবে রাস্ট্রনামক যন্ত্র চালনার নিমিত্তে যতোসব অপদার্থ-নপুংশক প্রতিনিধিকে পাঠানোর জন্য আমাদের সবুজ দেশটাই বেছে নিলেন!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

জিফরান খালেদ এর ছবি

হাসান ভাই, আপনার ইশ্বর বানানখানির তাতপর্য কি বুঝে নিব?

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এরা ভুল বানানের ঈশ্বর জিফরান
-------------------------------------
বালক জেনেছে কতোটা পথ গেলে ফেরার পথ নেই,
-ছিলো না কোন কালে;

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

কি করা যাবে আর কি করা যাবেনা সেটা অস্পষ্ট রেখে দেয়া হয় বলেই তো এই অন্ধকার সময়ে এতো ভয় ।

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

@সুবিনয় মুস্তফী এবং হাসান মোরশেদ

বাংলাদেশটা কি দার্ফুর হয়ে যাচ্ছে?

____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

দ্রোহী এর ছবি

রাষ্ট্র মহাশয় ভগবাণ
কর সবে তার জয়গান।


কি মাঝি? ডরাইলা?

জাহিদ হোসেন এর ছবি

কেন যেন মনে হচ্ছে যে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে দেশে। আই হোপ দ্যাট আই এ্যাম রং!
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।