শাবিপ্রবি পরিস্থিতিঃ প্রগতিশীলদের পাঁচ পা

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: বুধ, ২৭/১১/২০১৩ - ৩:১১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সিলেটে অবস্থিত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গতকাল সারাদিন থেকেই উত্তাল ভর্তি পদ্ধতি নিয়ে। প্রস্তাবিত সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা বাতিল হয়েছে, ‘সিলেটী’দের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০% কোটা বরাদ্দের দাবী উঠেছে- এসবের প্রেক্ষিতে ডঃ জাফর ইকবাল ও ডঃ ইয়াসমিন হক পদত্যাগ করেছেন। এদিকে তাঁদের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত বাতিল, সমন্বিত পদ্ধতি চালু এবং ‘সিলেটী’ কোঠা প্রস্তাবনার বিরুদ্ধে জোরালো ভাবে সংগঠিত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরা।
প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যানে এই ঘটনাগুলোর সবার জানা হয়ে গেছে, পুনরাবৃত্তি অপ্রয়োজনীয়।
১৯৯৪ সালে ডঃ জাফর ইকবাল ও ডঃ ইয়াসমিন হক শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়ার পর থেকে স্পষ্টতই জামাত শিবির নানা ইস্যুতে তাদের সাথে সরাসরি বিরোধীতা চালিয়ে এসেছে। গত একযুগের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিএনপি ও এখন জামাতের সাথে জাফর ইকবাল বিরোধী জোট। বিএনপি জামাতের প্রবল বিরোধীতা ও হেনস্তা মোকাবেলা করেই জাফর ইকবাল এই বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকে আছেন গত দুইদশক ধরে এবং কখনোই কোন আপোষ না করে। জাফর ইকবাল জানেন তার সাথে বিএনপি জামাতের যে বিরোধীতা সেটা মৌলিক এবং রাজনৈতিক, এই রাজনীতিতে ধর্মকে ও টেনে আনা হয়েছে বারবার তাকে অপদস্ত করার জন্য।

জাফর ইকবাল বিরোধীতায় কী কখনো আঞ্চলিকতা ব্যবহৃত হয়েছে এর আগে? যদি আমার ভুল না হয়- ‘না’। সারা দেশের মতো সিলেটে ও মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী একটি প্রগতিশীল ধারা টিকে আছে এবং জাফর ইকবাল নিজে ও এই ধারার সাথে সম্পৃক্ত। তিনি কেবল বিশ্ববিদ্যালয় গন্ডীতেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেন নি, এর বাইরে সিলেটের যেসকল প্রগতিশীল কার্যক্রম, কর্মসূচী ও উদ্যোগ থাকে সে সবে ও তিনি জোরালো ভাবেই জড়িত থাকেন। গত ফেব্রুয়ারীর গনজাগরন এর সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসূচির পাশাপাশি সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মুল জমায়েতে জাফর ইকবালের সস্ত্রীক ও সবান্ধব উপস্থিতি ছিলো এক বিশাল প্রেরনা।

তাহলে এবার কেনো ধর্মের পাশাপাশি আঞ্চলিকতার আমদানী? এটা ও রাজনীতি। যে রাজনীতি ধর্মকে ব্যবহার করে স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে, সেই রাজনীতি সহজেই আঞ্চলিকতাকে ও ব্যবহার করতে জানে। তাই ‘সচেতন সিলেটবাসী’ নামে যে কয়জনকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনায় দেখা গেছে তারা আঞ্চলিকতার অস্ত্র ব্যবহার করবে- অস্বাভাবিক নয়। এরা সরাসরিই জামাত বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। সিটি মেয়র বিএনপির, আতাউর রহমান পীর – মদন মোহন কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন এবং বিএনপির লোক, লেঃ কর্ণেল ( অবঃ) আলী আহমদ জাতীয় পার্টি হয়ে বিএনপি- ছাত্র জীবনে ছাত্র সংঘ করতেন, ব্রিগেডিয়ার (অবঃ) জুবায়ের সিদ্দিকী- জামাত ঘরানার এবং একটা বেসরকারী স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ ( সেই কলেজের মালিক আবার আওয়ামী লীগের সাংসদ)। এরা আঞ্চলিকতার ধোঁয়া তুলবে এবং জাফর ইকবালকে বহিস্কারের দাবী তুলবে- এতে অবাক হওয়ার কিচ্ছু নেই। জাফর ইকবাল যদি আজ সিলেটে না থেকে চট্টগ্রাম কিংবা খুলনার কোন বিসশ্ববিদ্যালয়ে থাকতেন- একই ধরনের লোক তার বিরুদ্ধে একই অস্ত্র প্রয়োগ করতো। ধর্ম ও আঞ্চলিকতার নোংরা প্রয়োগ এই দেশে সকলেই করে।
কিন্তু অস্বাভাবিক ও আতংকের বিষয় হলো- সিলেটের একটা স্থানীয় পত্রিকার সূত্রে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে সংবাদটি ছড়িয়ে পড়েছে তাহলো- ৫০% সিলেটি কোটা ও জাফর ইকবাল হঠাও কর্মসূচীতে এবার শুধু জামাত বিএনপি একলা নয়, সম্মিলিত যোগাযোগে কমরেড হয়েছে আওয়ামী লীগ, সিপিবি, জাসদ, বাসদ, সংস্কৃতি ও পরিবেশ সংগঠন অথচ জাফর ইকবালের সাথে এদের সখ্যতা প্রকাশ্য।

তাহলে ঘটনাটা কী? সেটা জানতে কাল থেক বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ খবর নিলাম। উল্লেখ্য আওয়ামী লীগ, সিপিবি, জাসদ, বাসদ, সাংস্কৃতি ও পরিবেশন সংগঠনের যাদের নাম প্রকাশিত হয়েছে তাদের প্রায় সকলেই ব্যক্তিগত বন্ধু, ছোটভাই, মুরব্বীজন।

স্থানীয় পত্রিকা ‘সিলেটের ডাক’ এর সংবাদ এ মনে হয় সম্মিলিত পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল,৫০% সিলেটি কোটা ও জাফর ইকবাল হঠাও কর্মসূচীতে এরা জামাত বিএনপির সাথে যৌথ স্মারকলিপি পেশ করেছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনায় বসেছেন। কিন্তু আসল সত্যটা সেরকম নয়।
বেদানন্দ ভট্টাচার্য্য- সভাপতি সিলেট কমিউনিস্ট পার্টি, লোকমান আহমদ- প্রধান নেতা (পদ জানিনা) সিলেট জাসদ, উজ্জ্বল রায় ( সিলেট বাসদ নেতা), মইনুদ্দিন জালাল ( যুব ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা), সমর বিজয় সী, সুজন এর ফারুক মাহমুদ চৌধুরী এরাই মুলতঃ উদ্যোগ নিয়েছিলেন সম্মিলিত ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের দাবীতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে স্মারক লিপি দেয়ার। সেই স্মারক লিপিতে সমর্থন জানিয়ে স্বাক্ষর দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা বদরুদ্দীন কামরান ও আনম শফিকুল হক এবং পরিবেশ আন্দোলনের নেতা আব্দুল করিম কীম। তাদের যুক্তি হচ্ছে বর্তমান রাজনৈতিক সংকট কালে যাতে এটিকে ইস্যু করে জামাত শিবির বিএনপি জনসমর্থন আদায় করে পরিস্থিতি ঘোলা না করতে পারে সে কারনে তারাই আগ বাড়িয়ে এটি বাতিলের দাবী তুলেছেন।
বিএনপি জামাত জোট তো আগে থেকেই এর বিরোধীতায় ছিলো। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গতকাল বিরোধীতাকারী দুইপক্ষকে একই সাথে তাদের সাথে বসার আহ্বান জানালে আওয়ামি-বাম-প্রগতিশীল পক্ষ বিএনপি –জামাতের সাথে বসতে আপত্তি জানান। এই অবস্থায় প্রথমে বিএনপি জামাত বসে বিকেল বেলা, সেই বসাতেই ৫০% সিলেটি কোটা ও জাফর ইকবাল হঠাও এর দাবী উঠে। কিন্তু এখানে প্রশ্ন উঠে, সিলেটের ডাকে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে এই বৈঠকেই বিএনপি জামাতের পাশে বসা সিলেট সদর উপজেলার চেয়ারম্যান, অর্থমন্ত্রীর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতা আশফাক আহমদ- যিনি ফেব্রুয়ারীতে গনজাগরন মঞ্চে ডঃ জাফর ইকবালের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
আশফাক সাহেবের বক্তব্য হচ্ছে- তাকে জানানো হয়নি যে আলাদা আলাদা বসা হচ্ছে। আগের শিডিউল অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে তিনি জামাত বিএনপির নেতাদের দেখতে পান এবং তাদের অনুরোধেই!
সন্ধ্যার পর প্রগতিশীল পক্ষ কর্তৃপক্ষের সাথে দেখা করে তাদের স্মারক লিপি প্রদান করেন যেখানে কোটা বা জাফর ইকবাল সংক্রান্ত কিছু নেই।

এই হলো ঘটনা।
আমার নিজের পর্যবেক্ষন দুটি।
প্রথমতঃ প্রগতিশীল পক্ষে যাদের নাম- তারা সিলেটে জাফর ইকবালের ঘনিষ্ঠজন বলেই পরিচিত। বিশেষ করে নামকরন বিরোধী আন্দোলনে জাফর ইকবালকে সবধরনের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক সমর্থন তারা দিয়েছেন। কিন্তু এবার নয় কেনো?
এর মধ্যে যে পরিবর্তনটি ঘটেছে- প্রথম আলোর সাথে জাফর ইকবালের সম্পর্কের অবনতি। পত্রিকাটির বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি’র শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট এবং সেই প্রেক্ষিতে তার ছাত্রত্ব বাতিলকে কেউ কেউ এই অবনতির মুল কারন বলে দাবী করেন যদি ও জাফর ইকবাল এর সমর্থকরা প্রথম আলোর গনজাগরন বিরোধী অবস্থানকে এই ক্ষেত্রে নির্দেশ করেন।
যা হোক, উল্লেখিত ব্যক্তিবর্গ স্থানীয় পর্যায়ে প্রথম আলোর আস্থাভাজন । প্রথম আলো ঘিরে জাফর ইকবালের সাথে তাদের কোন সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিলো কিনা- আমি নিশ্চিত নই।

দ্বিতীয়তঃ
একটা বিশ্ববিদ্যালয় তার ভর্তি পরীক্ষা কোন পদ্ধতিতে নেবে সেটা একান্তই বিশ্ববিদ্যালয় নামক স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানটির। এতে যদি ছাত্রদের/ ভর্তিচ্ছুকদের কোন আপত্তি থাকে তাহলে প্রতিবাদ আসবে প্রথমতঃ তাদের পক্ষ থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে আছেন আচার্য্য- মাননীয় রাষ্ট্রপতি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ, জাসদ, বাসদ, কমিউনিষ্ট পার্টি, যুব ইউনিয়ন, সুজন , পরিবেশ আন্দোলনের কী কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে নাক গলানোর? সবকিছুতে নিজেদের অংশীদারিত্ব প্রমানের বিশ্রী বাজে অভ্যাস!
নাক যদি গলাতেই হয় তাহলে আরেকটু বিচার বিবেচনা তো করা দরকার। যে দাবী জামাত-বিএনপি তুলছে তার রাজনৈতিক স্বার্থে, সেই দাবী আপনারাই আগ বাড়িয়ে তুলতে গেলেন জামাত বিএনপিকে টেক্কা দিবেন বলে? ফলাফল- লবডংকা!
ব্যক্তিগত আলাপচারীতায় যে প্রশ্নটি করেছি, সেই প্রশ্ন এখানে ও লিখে রাখলাম। যারা একটা ঘটনার কো-সিকোয়েন্স বুঝতে অক্ষম তারা কী করে রাজণীতিবিদ হয়? কাল যে সিলেটী ৫০% কোটা দাবী করা হলো এর প্রেক্ষিতে যদি সিলেটের বাইরের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন সিলেটী ছাত্র হেনস্তা হতেন, সেই খবর সিলেটের আসার পালটা হেনস্তা হতেন নন-সিলেটী কেউ? সিলেটী- নন সিলেটী রায়ট লাগিয়ে অস্থিতিশীলতা তৈরী করতে পারলে বর্তমান রাজনৈতিক সংকট কালে লাভ হতো কার?

এইসব ন্যুনতম কান্ডজ্ঞান, রাজনৈতিক দূরদর্শন যাদের নেই- তাদের হাতে ভিশন-২০২১ এর ভার!
বিএনপি-জামাতের নষ্টামী নিয়ে কিছু লেখার দরকার আছে কী? যারা সাম্প্রদায়িক রাজনীতির চর্চা করে- ধর্ম, আঞ্চলিকতা, লিঙ্গ পরিচয় সবকিছুকেই এরা ব্যবহার করতে জানে- সুচারু রূপে।


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

মন খারাপ

তাহলে কি হাস্নাতহাই লিখিত, প্রথম আলো প্রচারিত নতুন কোন গল্প আসিতেছে?

স্যার যেভাবে সব পত্রিকায় লেখা পাঠিয়ে "প্রচারসঙ্খ্যার শীর্ষে" থাকা পত্রিকাটির কাটতি বাড়ানোর সুযোগ নষ্ট করে চলেছেন, এতে কর্পোরেট পত্রিকাটির সম্পাদক পদধারী এমডি মহোদয় ক্ষুব্ধ বলেই জানি...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আমি কিন্তু কিছু মিন করিনি হাসি

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

মিন করার কথা বলিনি মোরশেদ ভাই... কেবল সম্ভাবনার কথা বলেছি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আমিও তাই জানি, এতে একচেটিয়া ব্যাবসা নষ্ট হয় প্রথমালোর...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

উজানগাঁ এর ছবি

যতদূর জানি স্যার এখন কোনো পত্রিকাকেই আর সরাসরি লেখা দিচ্ছেন না। পত্রিকাওয়ালারা উনার ব্লগ থেকে সম্ভবত এখন লেখা নিয়ে ছাপে।

উজানগাঁ এর ছবি

একটা বিশ্ববিদ্যালয় তার ভর্তি পরীক্ষা কোন পদ্ধতিতে নেবে সেটা একান্তই বিশ্ববিদ্যালয় নামক স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানটির। এতে যদি ছাত্রদের/ ভর্তিচ্ছুকদের কোন আপত্তি থাকে তাহলে প্রতিবাদ আসবে প্রথমতঃ তাদের পক্ষ থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে আছেন আচার্য্য- মাননীয় রাষ্ট্রপতি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ, জাসদ, বাসদ, কমিউনিষ্ট পার্টি, যুব ইউনিয়ন, সুজন , পরিবেশ আন্দোলনের কী কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে নাক গলানোর? সবকিছুতে নিজেদের অংশীদারিত্ব প্রমানের বিশ্রী বাজে অভ্যাস!

সহমত

অতিথি লেখক এর ছবি

একটা বিশ্ববিদ্যালয় তার ভর্তি পরীক্ষা কোন পদ্ধতিতে নেবে সেটা একান্তই বিশ্ববিদ্যালয় নামক স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানটির। এতে যদি ছাত্রদের/ ভর্তিচ্ছুকদের কোন আপত্তি থাকে তাহলে প্রতিবাদ আসবে প্রথমতঃ তাদের পক্ষ থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে আছেন আচার্য্য- মাননীয় রাষ্ট্রপতি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ, জাসদ, বাসদ, কমিউনিষ্ট পার্টি, যুব ইউনিয়ন, সুজন , পরিবেশ আন্দোলনের কী কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে নাক গলানোর? সবকিছুতে নিজেদের অংশীদারিত্ব প্রমানের বিশ্রী বাজে অভ্যাস!

চলুক সহমত

তবে আমার মনে হয় স্যারের হতাশা বেশি কাজ করেছে যখন দেখেছেন তার সহযোদ্ধারা বিএনপি জামাতের সাথে এক হয়েছে। কাছের মানুষগুলোর এমন বদলে যাওয়া মানুষকে অসহায় করে দেয় বলে আমার ধারণা।

তাদের যুক্তি হচ্ছে বর্তমান রাজনৈতিক সংকট কালে যাতে এটিকে ইস্যু করে জামাত শিবির বিএনপি জনসমর্থন আদায় করে পরিস্থিতি ঘোলা না করতে পারে সে কারনে তারাই আগ বাড়িয়ে এটি বাতিলের দাবী তুলেছেন।

এটা খুবি নিম্নমানের একটা মুখস্থ করা যুক্তি। জামাতের বিরোধিতা করতে গিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক আদর্শকে বিকিয়ে দেওয়ার পর এমন বালখিল্য যুক্তি দেখে মহাচুদুর বুদুর রহমানকে গ্রেফতারের পর ১৫জন তথাকথিত বিশিষ্ট সম্পাদকের কথা মনে পড়লো। তারাও মুক্তির জন্যে স্মারকলিপিতে সই করে ঠিক এমন আবাল মার্কা যুক্তি দিয়েছিলেন।

মাসুদ সজীব

হিমু এর ছবি

জাফর ইকবালের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির ঝাল মেটাতে গিয়ে যে প্রগতিশীল বামেরা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ওপর এক হাত নিতে চায়, এদের প্রগতিশীল বলার কোনো অর্থ আছে? ছাগুর কনডম আর আলুপেপারের কনডম হওয়া ছাড়া কি তাদের আর কোনো বিকল্প ছিলো না?

শাবিপ্রবি আর যবিপ্রবিতে ভর্তি হতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের কাছে মাফ চেয়ে বিবৃতি দেওয়া উচিত এই অবিমৃষ‌্যকারীদের। তাদের নামগুলো যেভাবে ছাগুকনডম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, আলুপেপার তাদের ইজ্জত বাঁচাতে পারবে না।

স্পর্শ এর ছবি

"ছাগুকনডম" খেতাবটা সেইরকম হইসে!


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার লিখেছেন। বামপন্থী এবং আওয়ামী নেতাদের ভুমিকায় আমিও খুব ধোয়াশার মধ্যে ছিলাম। আপনি সেটা অনেকখানি পরিষ্কার করে দিলেন। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকুন, খুব।

- এস এম নিয়াজ মাওলা

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

যারা একটা ঘটনার কো-সিকোয়েন্স বুঝতে অক্ষম তারা কী করে রাজণীতিবিদ হয়?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

সিলেট না হয়ে চট্টগ্রাম বা খুলনা হলে আঞ্চলিক ইস্যু এতটা জোরালোভাবে সামনে আসতো কী?

- তাওসিফ

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

১৩ দফা দাবীনামা পেশ করে হেফাজতে ইসলাম আগেই এ দেশের তৌহিদি জনতার ব্যাপক সমর্থন লাভ করেছে। সিপিবি/বাসদ/প্রগতিশীলদের এখন উচিৎ তের দ্বিগুনে ছাব্বিশটি ঈমানি দাবীনামা নিয়ে শাপলা চত্বরে একটা সমাবেশ করা।

অতিথি লেখক এর ছবি

আসল কথা হল টাকা আর বিজনেস। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হলে ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ৩/৪ দিনের কোটি টাকার বিজনেস ধ্বংস হবে। তাই আন্দোলন। আর রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের বিষয়টি সমসময়ই থাকে। জাফর ইকবালকে সরাতে পারলে বিএনপি/জামাত, আওয়ামীলীগ সবারই অনেক লাভ এই মুহূর্তে। পরীক্ষার্থীদের কথা কেঊ চিন্তা করে না। মন খারাপ মন খারাপ

--
কচু পাতা

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি লিখেছেন,

একটা বিশ্ববিদ্যালয় তার ভর্তি পরীক্ষা কোন পদ্ধতিতে নেবে সেটা একান্তই বিশ্ববিদ্যালয় নামক স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানটির। এতে যদি ছাত্রদের/ ভর্তিচ্ছুকদের কোন আপত্তি থাকে তাহলে প্রতিবাদ আসবে প্রথমতঃ তাদের পক্ষ থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে আছেন আচার্য্য- মাননীয় রাষ্ট্রপতি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ, জাসদ, বাসদ, কমিউনিষ্ট পার্টি, যুব ইউনিয়ন, সুজন , পরিবেশ আন্দোলনের কী কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে নাক গলানোর?

জাফর স্যারের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে একটা উক্তি কথা প্রসঙ্গে কোট করছিঃ

জাফর স্যার বললেন, "দেখ, এখন এই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা, আমাদের পদত্যাগ, এসবের চেয়েও বড় বেসিক প্রশ্ন চলে এসেছে। সবাই মিলে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, একটা ইউনিভার্সিটি কি নিজের নিয়ম অনুযায়ী চলবে, নাকি বাইরের মানুষের কথায়?"

স্যারের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ লিঙ্ক হলঃ https://www.facebook.com/our.zafar.sir

আর কিছু বলব না।
--

কচু পাতা

হাসিব এর ছবি

প্রথম আলোর হাইপোথেসিসটা খুব জোরালো না। জাফর ইকবালের সাথে খায়খাতির রেখেই অনেকেই প্রথম আলোতে মুখ দেখানোর সুযোগ পাচ্ছে।

আমার ধারণাটা এরকম,
কয়েকটা কারণে (মানে তাদের কাছে এগুলো কারণ, বাকিদের কাছে এগুলো কারণ না মনে হতে পারে) আছে যেকোন মূল্যে জাফর ইকবালের বিরোধিতা করার।

  • এর মধ্যে বিএনপি জামাত গোষ্ঠি নিয়ে বাক্য খরচের দরকার নেই। আমরা জানি তারা কেন জাফর ইকবালের বিরোধিতা করতে চায়। এদের সাথে বাকি গোষ্ঠিগুলোর যেমন সিপিবি, আওয়ামী লীগ, সুজন ইত্যাদির কোন প্রেম চলছে না। বরঞ্চ এরা একে অপরের সংশ্রব এড়িয়ে চলে।
  • আওয়ামী লীগ ও সিপিবির মধ্যে সিলেট বিভাগে প্রেম চলছে এটা মরে করার কারণ নেই। বাসদ, সুজন ইত্যাদি এরা আওয়ামী লীগের সাথে রাজনৈতিকভাবে একত্রে কর্মসূচী দেবে এরকম অবস্থাও নেই।

এখন প্রশ্ন হলো এতো বিরোধিতা, মতপার্থক্য থাকলেও কোন ইস্যু এতোগুলো পক্ষকে এক কাতারে আনতে পারলো। আমার বাজি এখানে সিলেটি আঞ্চলিকতা। সিলেটিরা 'বঞ্চিত' হবে বা সেজন্য তাদের জন্য কোটা রাখো এই একটা ইস্যু পাওয়া যায় যেটাতে সবাই একাট্টা হতে পারে। এই সিলেটি আঞ্চলিকতার জন্যই যে তারা একট্টা হয়েছে এটা একটা বলতে-শরম-ইস্যু হতে পারে। এই কারণে কাউকে জিজ্ঞেস করে এই কারণটা বের করা যাবে না।

বাংলাদেশে অভাবনীয় ঘটনা প্রায়শ ঘটে। এই ঘটনাটা অভাবনীয় থেকেও অভাবনীয় ঘটনা যেখানে সবগুলো পক্ষ এক কাতারে দাঁড়িয়ে কোন প্রতিক্রিয়াশীল ভূমিকায় নেমেছে। আমার আশংকা অনুযায়ী আঞ্চলিকতা যদি এর পেছনে কারণ হয়ে থাকে তবে এইসব আঞ্চলিকতাবাদের বিরুদ্ধে কথাবার্তা শুরু করার সময় এসেছে। এবং এটা শুধু সিলেট লক্ষ্য করে না বরং গোটা দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা আঞ্চলিকতার বিরুদ্ধে আমাদের নামতে হবে।

স্যাম এর ছবি

শরম-ইস্যু - পছন্দ হইসে হাসি কয়েকদিন আগে মির্জা সাবেরো এরকম কি জানি হয়েছিলো - নতুন শব্দের (কাছে) দাবী জানাই

হাসিব এর ছবি

আঞ্চলিকতা নিয়ে এক ধরণের বোঝাপড়া কাজ করে বাঙ্গালির মধ্যে। এই জিনিসটা অনেকটা ইউরোপে রেসিজমের মতো। সবাই ভান করে এই জিনিস নাই। কিছু এইসব খুবই বাস্তব ঘটনা।

আমি কবে আঞ্চলিকতার বিষ নিয়ে বাংলা অক্ষরে লেখা দেখেছি মনে করতে পারি না। অথচ আমাদের চারপাশে অহরহ এগুলো দেখা যায়। দক্ষিণ পশ্চিমের লোকেরা দক্ষিণ পূর্বের লোকেদের সাথে আত্মীয়তা করতে চায় না (এবং ভাইস ভার্সা)। চিটাগাঙের কোম্পানীতে ওদিককার লোকেদের অগ্রাধিকার। সিলেটিদের রেস্টুরেন্টে কাজ পেতে সিলেটি হতে হবে ইত্যাদি। এই লিস্ট সহজে শেষ করা যাবে না। তবে এই সবই শরমের কথা। মুখে আনতে নাই। লেখায়ও না।

স্যাম এর ছবি

চলুক চলুক

স্যাম এর ছবি

সিপিবির সভাপতি ও জামাতের আইনজীবি বেদানন্দ ও অন্যান্যদের জ্বালাপোড়া এইখানে

হাসিব এর ছবি

সিপিবির সিলেট জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক বেদানন্দ ভট্টাচার্য বলেন

আমাদের মাঝে কোন আঞ্চলিতা নেই কিন্তু ড. জাফর ইকবালই সবসময় আঞ্চলিকতা টেনে আনেন। তার মাধ্যমে সিলেটিদের অবজ্ঞার বিষয়টি গোপন নয়।

"আমি কোন দল করি না, কিন্তু দেখেন ..... " এই ফর্ম্যাট এতো পুরনো হয়ে গেছে ডায়নোসরের ফসিলের আশপাশ ভালো করে খুঁজলেও এই ফর্ম্যাটটা পাওয়া যাবে। ভট্টাচায্যি মশাইকে কেউ গিয়ে বলেন এই কথাটা। নতুন কিছু বলো মমিন, নতুন কিছু বলো!

নৈষাদ এর ছবি

আসলে বলে দিয়েছেন, “

যারা একটা ঘটনার কো-সিকোয়েন্স বুঝতে অক্ষম তারা কী করে রাজণীতিবিদ হয়?”

আর এই বালখিল্যতার জন্য পুরো ব্যাপারটায় নতুন এক ট্যাগ লাগল।

ছোট্ট একটা পয়েন্ট, সম্মানীত লোকজনের পুরো নাম ব্যবহার করা উচিত। ...মদন মোহন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ লেঃ কর্নেল (অবঃ) আতাউর রহমান পীর...। @ হাসিব মাহমুদ, আঞ্চলিকতা আছে, তবে আমি মনে করি বাংলাদেশে এটা তুলনামূলক ভাবে কম। এই ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা কে শুধুমাত্র সফলভাবে ইনস্টিগেট করা হয়েছে।

সাম্য এর ছবি

অফটপিকঃ প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধির বহিষ্কার সংক্রান্ত খবর একটু বিস্তারিতভাবে কোথাও পাওয়া যাবে কি?

--------------------------------
বানান ভুল থাকলে ধরিয়ে দিন!

Syed Tito এর ছবি

"যারা একটা ঘটনার কো-সিকোয়েন্স বুঝতে অক্ষম তারা কী করে রাজণীতিবিদ হয়?”

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।