অনুবাদ

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: শুক্র, ১৪/০৩/২০০৮ - ১২:৩৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.

সেবা প্রকাশনীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে কখনো দ্বিধা করি না। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি কাজী আনোয়ার হোসেনের উদ্যোগকে। তাঁর নামে প্রকাশিত হলেও শুনেছি কাজগুলো বেশিরভাগই অন্যের করা (সত্যিমিথ্যা যাচাই সম্ভব নয়, তবে বইয়ের ফ্রিকোয়েন্সি তেমনটিই নির্দেশ করে), সেই আড়ালে থাকা লেখকদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানাই সবসময়। শেখ আবদুল হাকিম, নিয়াজ মোরশেদ, জাহিদ হাসান, রকিব হাসান, সেলিম হোসেন টিপু ... এক একটা নাম শৈশবের এবং কৈশোরের সেই অসম্ভব সুন্দর সময়গুলির সাথে মিশে আছে। আপনারা যেখানেই থাকুন, খুব ভালো থাকুন, দীর্ঘায়ু হোন, আমার সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞ অভিবাদন গ্রহণ করুন।

২.

সেবা প্রকাশনী যে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে দিয়েছিলো আমার এবং আমার মতো আরো অনেকের জন্যে, তা হচ্ছে বিশ্ব সাহিত্যের ক্লাসিকগুলোর চমৎকার ঝরঝরে অনুবাদ খুব স্বল্পমূল্যে তুলে দিয়েছিলো আমাদের হাতে। আমি ইংরেজিতে বই পড়তে শুরু করেছি কলেজে উঠে, তার আগে পুরো একটা বই পড়ে বোঝার মতো ইংরেজি জ্ঞান ছিলো না। কিন্তু প্রাইমারি স্কুলে থাকতেই পড়ে শেষ করেছি অনেক ক্লাসিক। সহজ ভাষায়, সহজ ভঙ্গিতে করা সেইসব অনুবাদ আমার মনে রস যুগিয়েছে, আমার কল্পনাকে উসকে দিয়েছে। এখনও মনে করতে পারি, অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট পড়ে কী তীব্র কষ্ট অনুভব করেছিলাম (জাহিদ হাসানকে ধন্যবাদ আবারও), আমি যুদ্ধ কেন, বড় আকারের মারপিটও দেখিনি তখন, কিন্তু পলের বন্ধুরা সবাই যখন এক এক করে মারা যাচ্ছে, আমি বই বন্ধ করে কাঁদছিলাম হু হু করে। এই বইটা যদি আমি কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে পড়তাম, আমি হয়তো দুঃখটা অনুভব করতাম না সেভাবে। পলের বন্ধুরা মরলে আমার সেই বয়সে তখন আর কিছু যেতো আসতো না। আমার বয়স তখন কত, এগারো? ঐ বয়সের একজন কিশোরের কাছে অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টের মতো একটি মহৎ উপন্যাস পৌঁছে দেয়ার জন্যে সেবা প্রকাশনী ধন্যবাদার্হ। খটমটে, আক্ষরিক অনুবাদ হলে আমি হয়তো বিরক্ত হতাম, বইটা শেষ না করেই হয়তো উঠে পড়তাম, হয়তো শেষে গিয়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচতাম, যখন প্রজাপতি দু'টো পলের করোটি ছেড়ে উড়ে চলে যায় অন্য কোথাও, কিন্তু জাহিদ হাসানের অনুবাদটি এতো নরম, এতো হৃদয়গ্রাহী যে তা গভীর ছাপ ফেলেছিলো মনের মধ্যে। পরবর্তী ইংরেজি সংস্করণটি পড়ে অনুভব করেছি, তাঁর কাজটি খুব একটা সহজ ছিলো না।

সেবা প্রকাশনীর সেই সময়ের লেখকরা শক্তিমান অনুবাদক ছিলেন, তাঁরা কিছুটা স্বাধীনভাবে খানিকটা ছাড় দিয়ে অসাধারণ সব অনুবাদকর্ম হাজির করেছেন আমাদের সামনে। ইংরেজির পায়ে পায়ে অবোধ শিশুর মতো ঘোরেফেরেনি তাঁদের অনূদিত লেখাগুলো, কিছুটা স্বতন্ত্র থেকে স্বাদ যোগ করেছে। পরবর্তীতে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে প্রচুর অনুবাদকর্ম পড়েছি, সেই সাবলীল গতি আর ভঙ্গি না পেয়ে হতাশ হয়েছি খুব।

৩.

আমি অনুবাদের কাজ শুরু করি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মাঝামাঝি এসে। কোথাও প্রকাশ করার জন্যে নয়, সময় (দুঃসময়ও বলা যেতে পারে) কাটানোর জন্যেই। মার্ক টোয়েনের কিছু গল্প আর আজিমভের কিছু কল্পবিজ্ঞানগল্প। অনুবাদের কাজটি যে কতটা খাটুনির হতে পারে, তখন তা একেবারে রগেমজ্জায় অনুভব করি। সেবা প্রকাশনীর অনুবাদকবৃন্দের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা বহুগুণিত হয় সেই অনুবাদের কাজগুলো করতে গিয়ে। আজিমভের গল্পগুলির অনুবাদ হয়তো কঠিন নয়, কিন্তু তার স্বাদ বজায় রাখতে গিয়ে হিমসিম খেতে হয়। ইংরেজি আর বাংলা ভাষার "গতি" একরকম নয়, ইংরেজিতে যা পড়ে চমৎকৃত হই, নিজের করা তার বাংলা অনুবাদ পড়ে ইচ্ছা করে নিজের গালে চড় বসাতে।

সব দুঃসময়ই কেটে যায় একসময়, তাই অনুবাদের কাজে আমিও ক্ষান্ত দিই। অনূদিত গল্প পড়া হয়েছে প্রচুর, বেশিরভাগই ইংরেজিতে, সেখানেও অনুবাদকের দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হয়েছি। গার্সিয়া মার্কেজের বেশিরভাগ লেখাই পড়েছি এডিথ গ্রসমানের অনুবাদে, মূল স্প্যানিশ তো চোখে দেখিনি, কিন্তু লেখাগুলো গভীরভাবে স্পর্শ করেছে আমাকে। বাংলায় অনুবাদকর্ম পড়তে গেলে তাই অনুবাদের জড়তা খুব দ্রুত হতাশ করে আমাকে, যদিও নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানি, ঝরঝরে অনুবাদ কী ভীষণ কষ্টসাধ্য একটি কাজ। বাংলায় জি. এইচ. হাবীবের করা শার্লক হোমসের অনুবাদ পড়ে যেমন ভালো লাগেনি, একটা কিছুর অভাব বোধ করেছি।

অনুবাদকের কষ্টগুলো পাঠকের অনুধাবন করা মুশকিল। যিনি অনুবাদ করছেন, তিনি অন্য একটা ভাষায় গল্প বা উপন্যাসটিকে পাঠ করেছেন, সেই অন্য ভাষার ভঙ্গিটি তাঁর কাছে পরিচিত, সেই ভাষার রস তিনি আস্বাদন করছেন অনুবাদের প্রতিটি মূহুর্তে। অথচ তাঁকে হয়তো ভিন্ন ভঙ্গিতে, ভিন্ন ছাঁচে ঢালতে হচ্ছে সে রস, আর সেটি হয়তো প্রায়ই সম্ভব হচ্ছে না। বাংলা বাক্যে ঢুকে পড়ছে অন্য ভাষার ভঙ্গি। এই হংসমধ্যে বকো যথা এড়ানো এক ভীষণ কষ্টসাধ্য কাজ। অনুবাদক হিসেবে যখন আমি চাইছি, পাঠক এ ব্যাপারটি অনুভব করে কিছুটা ছাড় দিয়ে পড়ুন লেখাটি, পাঠক হিসেবে আমি হয়তো একপাশে সরিয়ে দিচ্ছি অন্য কারো করা অনুবাদকর্ম। এ এক বিষম জ্বালা।

আক্ষরিক অনুবাদের কষ্টসাধ্য কাজ এড়িয়ে ভাবানুবাদের সমস্যা অন্য জায়গায়। তাতে মূল লেখার রসটুকু অনেকখানি ফেলে আসতে হয় পথে। যাঁর লেখা আমি অনুবাদ করবো, তাঁর লেখার মণিমুক্তোগুলো ফেলে শুধু ঝিনুকের খোসা পাঠকের সামনে ধরার মতো পরিস্থিতি দাঁড়ায় তখন।

৪.

বহুদিন হয়ে গেলো, সেবা প্রকাশনীর নতুন কোন বই পড়া হয়নি। আশা করছি তাঁরা এখনও তাঁদের মহৎ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। টিফিনের পয়সা জমিয়ে জমিয়ে এখনও কি বাচ্চারা খাওয়া ফেলে, পড়া ফেলে, টিভি ফেলে পড়ছে বইগুলো? এখনও কি বাচ্চারা অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট পড়ে কাঁদে পলের বন্ধু কাৎসিনস্কির মৃত্যুতে, রূদ্ধশ্বাসে সময় গুণতে থাকে আশি দিনে বিশ্বভ্রমণ পড়তে পড়তে, জলদস্যু হবার স্বপ্ন দেখে লং জন সিলভারের বর্ণনা পড়ে? দেশ থেকে বহুদূরে বসে তা-ই কামনা করি, পড়ুয়ায় ছেয়ে যাক আমাদের দেশটা, তাদের ভেতরটা বর্ণিল হয়ে উঠুক বিশ্বসাহিত্যের রঙে।


মন্তব্য

পরিবর্তনশীল এর ছবি

এই বইটা যদি আমি কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে পড়তাম, আমি হয়তো দুঃখটা অনুভব করতাম না সেভাবে।

ইংরেজিতে যা পড়ে চমৎকৃত হই, নিজের করা তার বাংলা অনুবাদ পড়ে ইচ্ছা করে নিজের গালে চড় বসাতে।

একেবারে মনের কথা বলেছেন..
এখনো মনে হয় সেবা তাদের কাজ ভালোই করতেছে। আমার ছোট ভাই-বোনকে দেখে তাই মনে হয়

---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

হুমম।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অয়ন এর ছবি

কাজী আনোয়ার হোসেন নিজে অনুবাদ না করলেও প্রুফ রিডিং নাকি সবসময় তিনি নিজেই করতেন।

অন্দ্রিলা এর ছবি

বিদেশি সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ তৈরি করে দিয়েছিলো দুইজন, সেবা আর রাদুগা প্রকাশনী।

সেবা নিয়ে হিমু ভাই যা বলেছেন তার পরে আর কিছু বলার থাকেনা, কিন্তু রাদুগার এতো বিভিন্ন এবং বিচিত্র ধরনের অনুবাদ পড়ে, ছোটোবেলাতে পৃথিবী অনেক কাছে চলে এসেছিলো। রাশিয়া দেশ, রাশিয়ার মানুষ, এবং রাশিয়ার লেখকদের প্রতি গভীর ভালোবাসা তৈরী করে দিয়েছিলো রাদুগার বইগুলি। বাড়তি পাওয়া ছিলো মোটা মোটা পৃষ্ঠার সুন্দর একটা গন্ধ আর চমৎকার রংচঙে ছবিগুলি।

সেবার বই চিরকালই হাভাতের মতো গিলতাম। স্কুলে থাকতে একটি বড়ো আপু মারা যাওয়ার পরে, উনাদের বাসা থেকে উনার সংগ্রহের সেবার বইয়ের বিশাল ভান্ডার না বলে তুলে এনেছিলাম। প্রত্যেকদিন রাতেই তখন কাঁদতে হতো, কোনো রাতে থ্রী কমরেডস পড়ে, কোনো রাত্রে হাঞ্চব্যাক অফ নটরডেম পড়ে, কোনো রাত্রে অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট পড়ে। অন্য যে কোনো বই শেষ করার জন্য সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারতাম, কিন্তু সেবার এই বইগুলি শেষ না কোনো কখনো রাত্রে ঘুমাতে যাওয়া যেতো না।

তখন একটি বই নিয়ে এসেছিলাম, নিয়াজ মোরশেদের অনুবাদ করা "থার্ড রাইখ"। যখন জার্মান সৈন্যরা ফ্রান্সের ভেতরে ঢুকে পড়লো, তখন দেখি বই শেষ, বাকিটা জানতে হলে দ্বিতীয় খণ্ড চাই। বিস্তর খোঁজ করে জানলাম, সে বই আউট অফ প্রিন্ট।

পুরোনো সেই বইগুলির বেশিরভাগেরই এখন একই অবস্থা, সেবা আর এসব বই প্রিন্ট করেনা, বইমেলাতে পাওয়া যায়না। সেবার কিছু নতুন অনুবাদ কিনেছি সম্প্রতি, কিন্তু এগুলিতে সেই স্বাদ আর নেই। রাদুগার বইগুলিও আর নতুন অবস্থায় পাওয়া যাবেনা। এই পরিবর্তনগুলি ভালো লাগেনা একদম..

অতিথি লেখক এর ছবি

রাদুগার অনুবাদ পড়েছিলাম অনেক, কিন্তু এখ নার দেখি না কোথাও, তুমি কি পাও এখন? কোথায় পাও?

- খেকশিয়াল

দ্রোহী এর ছবি

দেশ থেকে বহুদূরে বসে তা-ই কামনা করি, পড়ুয়ায় ছেয়ে যাক আমাদের দেশটা, তাদের ভেতরটা বর্ণিল হয়ে উঠুক বিশ্বসাহিত্যের রঙে।

সেবা প্রকাশনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই বিশ্বসাহিত্যের এক অপূর্ব ভান্ডার অতি অল্প বয়সেই আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরার জন্য।

কতদিন সেবার বই পড়া হয় না।


কি মাঝি? ডরাইলা?

মাল্যবান এর ছবি

এ ব্যাপারে একমত যে অনুবাদে কাজী আনোয়ার হোসেনের জুড়ি ছিল না। মাসুদ রানার বইগুলো বিদেশী থ্রিলারের অনুবাদ ছিল। সম্ভবতঃ ষাটের দশকের প্রকাশনাগুলোই ছিল সেরা। আমার সবচাইতে ভাল লেগেছিল ছয় রোমাঞ্চ।
৭০ দশকের শেষ দিকে একবার সেবা প্রকাশনীতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল এক বন্ধুর সঙ্গে। বন্ধু অনুবাদ করতেন। সেবার কার্যালয়ে (না কি কারখানা বলবো, বুঝতে পারছি না।) দেখি লম্বাটে একটা টিনের চালা, পাকা দেয়ালের ব্যারাক টাইপ ঘরে দুসারি টেবিল পাতা। সেখানে বেশ কয়েকজন অনুবাদক কাজ করে চলেছেন সামনে খুলে রাখা বিদেশী বই থেকে। মেঝেতে অনেক পুরোনো থ্রিলার বইয়ের স্তূপ। আর ছিল প্রচুর ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, লাইফ ইত্যাদি ম্যাগাজিন। সেবার প্রচ্ছদকার ভদ্রলোক (এ মুহুর্তে নাম মনে পরছে না ) সেখান থেকে ছবি বাছাই করছেন কোন একটি বইয়ের প্রচ্ছদের জন্য।
সেদিন কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গেও দেখা করেছিলাম আমরা। উনি তাঁর অফিসে বসে ওয়াকম্যানের সঙ্গে স্পিকার লাগিয়ে সেতার শুনছিলেন।
তবে শেষ কথা, অনুবাদ সাহিত্যে সেবার তুলনা ছিল না। এখন কী অবস্থা জানিনা।

হিমু এর ছবি

কারো হাতের কাছে থাকলে সেবা প্রকাশনীর লোগোটা দয়া করে স্ক্যান করে দিতে পারেন আমাকে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

তানভীর এর ছবি

আহা সেবার কিশোর ক্লাসিক! কয়েকটা সুটকেসে করে নিয়েও এসেছি।

লোগো পাইলাম ইন্টারনেটে

auto

ফারুক হাসান এর ছবি

হিংসায় গা জ্বলে যাচ্ছে । গরররগর
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আহ্‌, সেবা প্রকাশনী... লুকিয়ে লুকিয়ে থ্রিলার পড়ার সেই সব দিনগুলি!

অতিথি লেখক এর ছবি

ছোটবেলায় কুয়াশা সিরিজ পড়ে খুব মজা পেতাম। কুয়াশা লিখতেন কাজী আনোয়ার হোসেন 'বিদ্যুত মিত্র' ছদ্মনামে। কুয়াশা চরিত্রটাকে তিনি খুব কঠিন ব্যাক্তিত্বের মানুষ হিসেবে এঁকেছিলেন। আবার গভীর রাতে তাকে দিয়ে সরোদ বাজাতেন। এমন কঠিন-কোমল চরিত্রের কুয়াশা ছিল আমাদের কিশোরদের মাঝে দারুন জনপ্রিয়। (এবার হিসাব করুন, এখন আমার বয়স কত?) অবচেতন মনে নিজেরাই কুয়াশা হয়ে উঠতে চাইতাম। যতদূর মনে পড়ে কুয়াশাই কাজী আনোয়ার হোসেনের প্রথম রহস্য সিরিজ।

কাজী আনোয়ার হোসেন অত্যন্ত গুণী একজন মানুষ। গায়ক হিসেবেও সুপরিচিত ছিলেন। তাঁর সেই গান, "বেলা বয়ে যায় মধুমতী গাঁয়, ওরে মন ছুটে চল চেনা ঠিকানায়" তখন, মানে ষাটের দশকে, মানুষের মুখে মুখে ছিল। গানটি সুভাষ দত্তের সুতরাং ছবিতে গাওয়া হয়েছিল।

যোগ্য পিতা কাজী মোতাহার হোসেনের সুযোগ্য সন্তান কাজী আনোয়ার হোসেনকে এই সুযোগে শ্রদ্ধা জানিয়ে রাখি।

(অনেকেই হয়তো জানেন, তবুও বলার লোভ সামলাতে পারছিনা, সেবা প্রকাশনীর নামটা এসেছে সেগুন বাগিচা থেকে, কাজী আনোয়ার হোসেন ওখানেই থাকতেন।)

সচলপ্যান্থার

হিমু এর ছবি

কুয়াশার পুরোটাই সংগ্রহে ছিলো। পাতলা, ছোট্ট বইগুলি। আমি তিন গোয়েন্দা পড়েছি ক্লাস ফাইভে উঠে (প্রথম পাঁচটা ছিলো হাতের কাছে, তিন গোয়েন্দা, কঙ্কাল দ্বীপ, রূপালী মাকড়সা, ছায়াশ্বাপদ আর মমি), আর কুয়াশা সিরিজের ৭৬টাই শেষ করেছি ক্লাস থ্রি শেষ করার আগে। যদিও বেশ কিছু জিনিস মাথার ওপর দিয়ে যেতো। ডি কস্টা, মিঃ সিম্পসন, মহুয়া, শহীদ, কামাল ... আহ, কী একটা সময় ছিলো তখন, কী একটা সময় ছিলো!


হাঁটুপানির জলদস্যু

জাহিদ হোসেন এর ছবি

কুয়াশা সিরিজে ৭৬টা বই ছিল নাকি? আমি তো জানতাম যে ৩৩-৩৪ টার পর আর বেরোয়নি।
সে যাই হোক, কুয়াশা আর পরে মাসুদ রানাই ছিল সে আমলের বাচ্চাদের জন্য একমাত্র পড়বার জিনিস। কুয়াশার শেষের দিককার (ক্রমিক নং৩০-৩৫) বইগুলোর শেষে আবার পাঠকদের প্রশ্নের উত্তরও দিতেন কাজীদা। আমার পাঠানো গোটা কয়েক প্রশ্নও ছাপা হয়েছিল সেখানে।
আমি অবশ্য দস্যু বনহুরও পড়েছি অনেক গুলো। আর দস্যু মোহন সিরিজও ছিল সে সময়।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

রাগিব এর ছবি

সেবা প্রকাশনী সত্তর আর আশির দশকের কিশোর কিশোরীদের কাছে পৌছে দিয়েছিলো সারা বিশ্বের সব ক্লাসিক সাহিত্য। আজ পর্যন্ত মাসুদ রানার ধারে কাছে যেতে পারে, এমন কোনো রোল মডেল আর কেউ বের করতে পারেনি।

মাসুদ রানার বইগুলোর জন্য লেখক প্যানেল রয়েছে। বিদেশী থ্রিলার থেকে অনুবাদ করে রূপান্তরিত করে রানার চরিত্রের সাথে মেলানো - এটাও কম না। লেখক প্যানেল লেখা দেয়ার পরে কাজীদা করতেন সম্পাদনার কাজ।

মাসুদ রানা সিরিজের প্রথম দুইটা বই কাজীদার নিজের লেখা। ওগুলো লিখতে বছর খানেক লাগার পরে কাজীদা সিদ্ধান্ত নেন, রূপান্তর বা adaptation ছাড়া এই সিরিজ চালানো যাবে না।

কিশোর ক্লাসিক সিরিজের মতো চমৎকার অনুবাদ কোথাও পড়িনি। ভারতীয় লেখকদের করা অনুবাদও হাতে এসেছে, কিন্তু প্রচন্ড কাঠখোট্টা। চমৎকার করে অনুবাদ করার ব্যাপারে সেবা প্রকাশনীর এই স্টাইলটাতে আর কেউ সমকক্ষ হতে পারেনি।

সেবার বই হাতে নিয়ে শেষ পড়েছি বছর আটেক আগে। অনলাইনে রাখা পিডিএফ অবশ্য কিছুদিন আগেও পড়লাম ... মাসুদ রানার "বিস্মরণ" বইটা পড়লাম মাস দুয়েক আগে (দেশে ছাপা সংস্করণ আমার হাতে যা এসেছিলো, চরম ক্লাইম্যাক্সের সময়ের জায়গায় তার বেশ কয়েক পাতা গায়েব ছিলো)।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

হিমু এর ছবি

থিরুগণসম্পন্দমুথিউনাইনারপিল্লাই! নামটা ভুলতেই পারলাম না।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

অনুবাদক্ষেত্রে সেবার অনস্বীকার্য অবদানের কথা বললেন অনেকেই। আর তাই আমি বলি অন্য একটি প্রসঙ্গে।

দেশের অনেক প্রকাশক আর সম্পাদকের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে আমার। কিন্তু লেখকদের পারিশ্রমিক পরিশোধের ব্যাপারে সেবা ও কাজী আনোয়ার হোসেনের সততা বাংলাদেশে অতুলনীয়। অধিকাংশ প্রকাশক-সম্পাদক যখন "কীভাবে পারিশ্রমিক না দিয়ে বা কম দিয়ে পারা যায়" নীতিকে জীবনের ধর্ম বলে মেনে নিয়েছেন, তখন সেবা আর রহস্য পত্রিকা কর্তৃপক্ষ লেখকদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে পারিশ্রমিক নিয়ে যাবার অনুরোধ করেন বা মানি-অর্ডার করে পাঠিয়ে দেন।

এখনকার অবস্থা সঠিক বলতে পারবো না। যখন সেবা প্রকাশনী আর রহস্য পত্রিকার সঙ্গে বেশ গভীরভাবে জড়িত ছিলাম, তখন ব্যাপারটা ঠিক এমনই ছিলো।

আরেকটা কথা। সেবা বিষয়ে দেশে এক শ্রেণীর লোকের নাক সিটকানোর কারণটা আমি কখনও বুঝে উঠতে পারিনি।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

অমিত আহমেদ এর ছবি

১) কুয়াশা সিরিজের প্রতিটি বই মৌলিক, কাজী'দার নিজের লেখা।
২) প্রথম দু'টি নয় মাসুদ রানার প্রথম ছয় কি আটটি বই মৌলিক, পরে প্রেসের খরচ ওঠাতে বাধ্য হয়েই কাজী'দাকে ছায়া অবলম্বনের পথে যেতে হয়।
৩) অন্য কারো অনুবাদ কখনো কাজী'দা নিজের নামে ছাপাননি। যে কয়টি অনুবাদে (যার সংখ্যা খুব বেশি নয়) কাজী'দার নাম গেছে সেগুলো তাঁর নিজেরই করা।
৪) বিদ্যুৎ মিত্র ছদ্মনামটি তিনি নেন ননফিকশন লেখার জন্য। প্রিয় বন্ধু আর প্রিয় গায়কের প্রথম আর শেষ নাম মিলিয়ে বানানো। এ নামেও যা প্রকাশিত হয়েছে সব তাঁর নিজের কাজ। ভালো গবেষণা করেই লেখা। "যৌন বিষয়ে সাধারণ জ্ঞান" বইটার মত আর একটাও বাংলা বই নেই।
৫) একমাত্র "মাসুদ রানা" সিরিজটা তিনি নিজে লিখেন না অনেক দিন। প্যানেল আছে। আরেকটা ব্যাপার, মাসুদ রানা কিন্তু অনেক সময়ই এক বিদেশি কাহিনী নির্ভর নয়... দুই-তিনটা বই মিলিয়ে লেখা। তাই অনেক সময়ই আসল কাহিনীর সাথে মাসুদ রানার মিল থাকেনা বললেই চলে।
৬) প্রতিটা মাসুদ রানার প্রতিটা লাইন কাজী'দা নিজে দেখে দিতেন। এখনো দেন কিনা জানিনা।
৭) সেবা প্রকাশনী সম্মানীর ব্যাপারে খুব প্রফেশনাল। আমাস প্রথম সম্মানী আমি পেয়েছি সেবা প্রকাশনী থেকে, ক্লাস সেভেন কি এইটে পড়ি তখন। মানি ওর্ডারে পঁচিশ টাকা। আর কিশোর পত্রিকায় নিয়মিত লেখার সুবাদে মাগনা পেতাম সে পত্রিকা।
৮) আমি সেবা প্রকাশনীর লাইফটাইম ফ্যান

শেখ জলিল এর ছবি

স্বার্থক পোস্ট। বাংলাদেশে অনুবাদের ক্ষেত্রে সেবা প্রকাশনীর অবদান অসামান্য।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

যদিও অনুবাদ নয়, তবু সেবা প্রকাশনীর কথায় মনে এলো ৬৮-৬৯ এর দিকে তাদের প্রকাশ করা রাহাত খানের 'দিলুর গল্প' নামের কিশোর উন্যাসটি। সঙ্গে রনবীর আঁকা ছবি। অসাধারণ।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

চলুক
সহমত ।

অতিথি লেখক এর ছবি

সেবা প্রকাশনীর কাছে কেই বা ঋণী নয়? ক্লাসিক, থ্রিলার, জুর্ল ভার্ন সব গোগ্রাসে গিলতাম, একটা অদ্ভুত জগত ছিল সবকিছু মিলিয়ে । আমার মাসুদ রানা তেমন পড়া হয়নি তবে প্রথমদিকের কিছু পড়েছিলাম ভালই লেগেছিল, ওয়েস্টার্নের মজাটা বুঝি অনেক পরে । এবারের বইমেলায় সেবা প্রকাশ্নীর সামনে দেখলাম অনেক ভীড়, পুরান অনেক গুলো বই খুজলাম , পেলাম না, রিপ্রীন্ট করেনি ওরা আর, রবার্ট লুই স্টিভেন্সন এর কালো তীরটা পড়া হয় নি, কিনে ফেললাম হাসি
- খেকশিয়াল

কনফুসিয়াস এর ছবি

সবাই সব কথা বলে দিয়েছে, নতুন করে কিছু বলার নেই।
এক কথায় বলে দেয়া যায়- এই আমি আজকে যে পড়ুয়া-আমি, অথবা বইয়ের পোকা, তার শতভাগ কৃতিত্বই সেবা প্রকাশনীর।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

তীরন্দাজ এর ছবি

সেবার অনুবাদ সত্যিই অতুলনীয়।

**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

অতিথি লেখক এর ছবি

***উলুম্বুশ**

বাংলাদেশে পাঠক সমাজ গড়ে তোলার পিছনে হুমায়ুন আহমেদ আর সেবা প্রকাশনীর অবদান অনন্য। এখন হুমায়ুন আহমেদের লেখা আর পড়তেই পারিনা। কেমন যেন আগায় না। সেবা প্রকাশনীর বই পড়িনা অনেক দিন। শেষ যেদিন পড়েছিলাম তত ভাল লাগেনি। অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম তিন গোয়েন্দা কেমন আছে। একটা বই তুলে পড়তে নিয়ে দেখলাম নাহ পারছি না। আমিই কি বড় হয়ে গেছি নাকি লেখা অন্যরকম হয়ে গেছে জানিনা।তবে কিশোরবেলার হিরো। আমার মনে হয় প্রায় ৭০% লোকের লাইন একইরকম। কিশোর পত্রিকা দিয়ে শুরু করেছিলাম। তিন গোয়েন্দা, গোয়েন্দা রাজুর কিছু দিয়ে চলে আসলাম কুয়াশা সিরিজ, দস্যু বনহুর। তারপর বয়সের সাথে হাতে নিলাম মাসুদ রানা। তবে আমার এখন যেটার কথা মনে হচ্ছে তা হল হাকলবেরি ফিন, টম সয়্যার এর বই তিনটা, থ্রি মাস্কেটিয়ার্স আরো কত কিছু। আমার কিশোর বেলার সব হিরোরা। ধন্যবাদ হিমু ভাইয়া। অনেকদিন পরে তাদের কথা মনে করিয়ে দিলেন।

রায়হান আবীর এর ছবি

চল চল চল
সেবা প্রকাশনী বস...

সবজান্তা এর ছবি

হিমু ভাই, এমন চমৎকার লেখার জন্য শুরুতেই জাঝা।

তবে সেইসাথে একটা বিপদেও ফেললেন। গতকাল সন্ধ্যাতেই মার্কেজের একটা লেখার অনুবাদ পড়ে ভাবছিলাম বাংলাভাষায় অনুবাদ সাহিত্য নিয়ে কিছু একটা লেখবো সচলে। আপনার এত চমৎকার লেখা পড়ার পর, সেই প্ল্যানকে শোকেসে সাজিয়ে রেখেছি।

সেবা নিয়ে মোটামুটি সবই বলে দিয়েছেন। আমি সাধারণত বইমেলা থেকে কিছু অনুবাদ বই কেনার চেষ্টা করি। তার মধ্যে সেবা সহ অন্য প্রকাশনীও থাকে। এবার কিনেছি যে বইগুলো তার মধ্যে রয়েছে মার্কেজের "ক্রনিকেল অফ আ ডেথ ফোরটোল্ড" । কবীর চৌধুরীর মত খ্যাতনামা এবং স্বনামধন্য ব্যক্তির অনুবাদ দেখে চোখ বুঁজেই কিনে ফেলেছি। কিন্তু সত্যি কথা বলি, বইটি আমার ভালো লাগেনি। হয়ত ভালো না লাগার মূল কারন, আমার জ্ঞান এবং পান্ডিত্যের অভাব, তবু বইটির ব্যপারে আমি হতাশ।


অনুবাদ নিয়ে একটি প্রশ্ন অনেক দিন ধরেই মাথায় ঘুরছে, হয়ত সচলের কেউ তার উত্তর আমাকে দিতে পারবেন।

আমার জানামতে প্রত্যেকটা ভাষার নিজস্ব Syntax থাকে। বাংলার সাথে হয়ত ইংরেজী কিংবা স্প্যানিশ এর Syntax মিলবে না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে যখন স্প্যানিশ থেকে কিছু বাংলাতে অনুবাদ করা হচ্ছে তখন কি স্প্যানিশের সেই Syntax কে অক্ষুণ্ণ রাখাটা অনুবাদের জন্য জরুরী ? এটা কি অনুবাদের পূর্বশর্ত জাতীয় কিছু ?

ক্রনিকেল অফ আ ডেথ ফোরটোল্ড পড়তে যেয়ে আমার মনে হয়েছে, অনুবাদক কবীর চৌধুরী মূল ভাষার Syntax কে ধরে রাখতে চেয়েছেন।এর ফলে চেনা বাংলা ভাষা ধরা দিয়েছে খটমটে রূপে।এক বাক্য তিনবার পড়েও তার অর্থ পরিষ্কার করতে পারিনি। শুধু এটাই নয়, অধিকাংশ অনুবাদের ক্ষেত্রেই আমার মনে হয়, সেগুলো শুধু বাংলা হরফেই লেখা, বাংলা ভাষাতে নয়।

তবে অসাধারণ (!!!!) অনুবাদ পড়েছিলাম স্পেস ওডিসির ( অনুবাদকের নাম এ মূহুর্তে খেয়াল নেই ) । আরেকটু হলেই আমি ভাবতাম যে অনুবাদক অনুবাদ করতে ভুলে গিয়েছেন, মূল ভাষাতেই বই রেখে দিয়েছেন। এ ধরণের সায়েন্স ফিকশন অনুবাদ্গুলি যথেষ্ট ভোগায়।

এবার বইমেলাতে সেবার স্টলের থেকে কিছু বই কিনেছি ( আমার সাথে ছিলেন এমন দুজন কে এখানে মন্ত্যব্যের ঘরেও দেখতে পাচ্ছি )। সেবা আজকাল অনেক পুরানো ক্লাসিকেরই পুর্নমুদ্রন করছে না। হয়ত আর কিছু দিন পর সেগুলো পাওয়াই যাবে না।
-----------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

অমিত আহমেদ এর ছবি

syntax ভুলে ভাবানুবাদ করাটাই উত্তম বলে আমার মনে হয়। পাঠককে ভিন্ন সাহিত্যের মজা দেবাই হোক অনুবাদের মূল লক্ষ্য।

অতিথি লেখক এর ছবি

কামের কাম একখান করসি!

এইবার দ্যাশে গিয়া কাজীদার ডেস্কটপে অভ্র আর বাংলার সাপোর্ট লাগায়ে দিয়া আইসি।

অহন মনে হয় এই লিঙ্কুটা কাজীদারে মেইলে পাঠায়ে দেওন যায়

ফরিদ

infO@boi-mela.com

দিগন্ত এর ছবি

কোলকাতায় মূলত বিদেশী ক্লাসিক বইগুলোর অনুবাদ করে দেব সাহিত্য কুটীর। অনেক বইই পড়েছি তবে সেবা প্রকাশনীর সাথে তুলনায় যাব না, কারণ তাদের বই আমি পড়িনি। এছাড়া আনন্দ সহ আরো অন্যান্য পাব্লিশাররাও একই কাজ করে থাকে যদিও সংখ্যায় নগণ্য।

দেব সাহিত্য কুটীরের বইগুলো এখন ২০-৩০ টাকা করে দাম হবে, খুবই ভাল লাগত পড়তে। আরো ভাল ছিল আমাদের ছোটোবেলায় অন্য যে কোনো বই যেখানে ১০টাকার নিচে পাওয়া যেত না, সেখানে এই বইগুলোর দাম মাত্র ৬টাকা ছিল।

একইভাবে গোয়েন্দা সিরিজের বইগুলো আসত মূলত নীহাররঞ্জন গুপ্ত, হেমেন্দ্রকুমার রায় আর আরো কিছু লেখকের। দেব সাহিত্য কুটীর থেকে বেরোতো প্রহেলিকা সিরিজের বই - এদের লেখা। এগুলো ষাটের দশক। তবে সবার থেকে আলাদা ছিল ব্যোমকেশ।

আরো পরে এল ফেলুদা। যদিও সংখ্যায় অনেক কম (বছরে বড়জোর একটা) বেরোতো তাও তাইই যথেষ্ট ছিল পাঠকের জন্য। সত্তরের দশক থেকে ফেলুদা নিয়ে নেয় ব্যোমকেশের জায়গা। আর সাথে সাথে আনন্দ নিয়ে নেয় দেব সাহিত্য কুটীরের জায়গা।

এখন তো দেখি বাচ্চা ছেলেরা পাণ্ডব গোয়েন্দা পড়ে। এই পাণ্ডব গোয়েন্দা ছোটোবেলায় আমারো খুব প্রিয় ছিল, যতদিন লেখক ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায় পাণ্ডবদের হাওড়ার চত্ত্বরে বাচ্চা ছেলে বানিয়ে রাখলেন। কিন্তু নব্বইএর দশকের শেষের দিকে এই পাণ্ডব গোয়েন্দার ছেলে-মেয়েরা হিন্দি সিনেমার হিরোর জায়গা নিতে থাকল গল্পে। সুতরাং প্রতি গল্পে একটি করে মেয়ের চরিত্র আসতে থাকল যার সাথে পাণ্ডবদের কারো না কারো একটু 'ইয়ে' হত।

এরপর থেকে আর বাংলা বই রহস্য পড়া হয় না। এখন তো মনটাই মরে গেছে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।