যানজট নিয়ে দুইআনা

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: মঙ্গল, ১৬/০৬/২০১৫ - ১:২৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঢাকার রাস্তা যেহেতু সময়ের সাথে বাড়ছে না, কিংবা বাড়লেও খুব সামান্য বাড়ছে, তাই প্রতিটি নতুন গাড়ি ঢাকার যানজটকে আরেকটু বাড়ানোর খানিকটা দায় মাথায় নিয়ে পথে নামছে।

সরকার চাইলে দুটো ছোটো উদ্যোগ নিয়ে এই যানজট কমানোয় খানিকটা অবদান রাখতে পারে।

প্রথমত, সরকার তার কর্মীদের (কর্মকতা ও কর্মচারী) পরিবহন ব্যবস্থাকে অন্যভাবে সাজাতে পারে। সরকারি পরিবহন পুলে গাড়ি যোগ করে অপচয় না বাড়িয়ে বিআরটিসিকে সরকার নতুন বাস কিনে দিতে পারে। সকালে ও সন্ধ্যায় এই নতুন বাসগুলো কেবল সরকারি কর্মী বহন করবে। সরকারি কর্মীদের মাঝে সচিত্র পরিবহন পাস সরবরাহ করা হবে, এবং তারা সেই পাস দেখিয়ে বিআরটিসির এই নতুন বাসগুলোতে চড়ে সকালে ও সন্ধ্যায় কেবল সরকারি কর্মীবাহী ট্রিপগুলোতে বিনামূল্যে শহরে চলাফেরা করতে পারবেন।

দিনের বাকিটা সময় এই নতুন বাসগুলো সাধারণ যাত্রী বহন করবে।

এতে করে যা হবে, সরকারি কর্মী পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত যানের ব্যবহারাঙ্ক (প্রতি যাত্রায় প্রতি ঘণ্টায় প্রতি বর্গমিটার রাস্তায় পরিবাহিত যাত্রী সংখ্যা) অনেকগুণে বাড়বে। সরকারি গাড়ি পরিবহন পুলে যোগ হয়ে অপচয় বাড়াবে না। একটি বাস যদি ৬০ জন যাত্রী বহন করে, তাহলে রাস্তা থেকে বিকল্প অনেকগুলো সরকারী মাইক্রোবাস ও সেডান উঠে গিয়ে অন্যের জন্য জায়গা করে দেবে। যাত্রী পিছু রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় কমে আসবে বিপুলভাবে, চালক বাবদ সরকারের ব্যয়ও হবে কম, সেইসাথে সরকারি গাড়ির অপব্যবহারও কমে আসবে অনেক।

দ্বিতীয় উদ্যোগটি হবে এমন, ঢাকা শহরে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি পারতপক্ষে কোনো অনার্ন্তজাতিক অনুষ্ঠানে সশরীরের অংশগ্রহণ করবেন না। কোনো কিছুর উদ্বোধন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বা পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানগুলোতে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি নিজ কার্যালয় বা বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিঙের মাধ্যমে অংশ নেবেন। সেখানে তাঁদের বক্তৃতা এবং প্রশ্নোত্তর পর্ব (যদি থাকে) ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হবে। প্রকাণ্ড স্ক্রিনে তাঁদের বক্তব্য অনুষ্ঠানমঞ্চে দেখানো হবে। তাঁদের পক্ষ থেকে তাঁদের মনোনীত কোনো কর্মকর্তা কৃতীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন।

এর কারণ হচ্ছে, অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যখন ঢাকা শহরে চলাচল করেন, তাঁদের যাত্রাপথ জুড়ে সব রাস্তা বন্ধ রাখা হয়। লক্ষ লক্ষ লোক এই নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘানি টানতে বাধ্য হন। যদি দশ লক্ষ লোকও যে কোনো সময় রাস্তায় যানজটে আটকে থাকে, আর ভিভিআইপিদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে তাদের একটি ঘণ্টাও যদি নষ্ট হয়, তাহলে এক কর্মঘণ্টার মূল্য একশো টাকা ধরে নিলে, এ ধরনের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির উপস্থিতির মূল্য হিসেবে ঢাকা শহরের পথযাত্রীরা দশ কোটি টাকা নিজেদের পকেট থেকে ব্যয় করছেন। অনান্তর্জাতিক অনুষ্ঠানগুলো কি আদপেই এতো মূল্যবান?

এ দুটি উদ্যোগ নিলে ঢাকায় পথযাত্রীদের জীবন আরেকটু সহজ হবে। একই সাথে সরকার নিজে প্রথম উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করতে পারলে অন্যান্য বেসরকারি "গাড়ি-ভারি" প্রতিষ্ঠানকেও একই ধরনের উদ্যোগ নিতে রাজি করানোর কাজ শুরু করতে পারে।


মন্তব্য

সাফি এর ছবি

আরো দুআনা দেই।

১। সাইকেলকে নিরাপদ করা। ডেডিকেটেড লেন জাতীয় কিছু করা।
২। সাইকেল বা হেটে অফিস করলে মাসিক প্রণোদনার ব্যাবস্থা করা।
৩। অফিসে শাওয়ার এবং লকারের ব্যাবস্থা করা।
৪। প্রথম দিকে উতসাহ বাঁড়াতে সাইকেলে করে অফিস চলি জাতীয় ইভেন্ট করা।

Amit এর ছবি

সাইকেলওয়ালারা চলে আসছে ।

তিথীডোর এর ছবি

সাইকেল খুবই ভাল পন্থা। কিন্তু যানজটে ভিড়ের ফাঁকে নারী সাইকেল আরোহীর গায়ে হাত দেবার চেষ্টা করা, বাস থেকে কুটো বা থুথু ছুঁড়ে ফেলার তিক্ত অভিজ্ঞতা শুনেছি।
সাইকেলের জন্য আলাদা লেন মাস্ট এবং সঙ্গে নিরাপদ ওয়াশরুম।

ঢাকা শহরে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি পারতপক্ষে কোনো অনার্ন্তজাতিক অনুষ্ঠানে সশরীরের অংশগ্রহণ করবেন না। কোনো কিছুর উদ্বোধন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বা পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানগুলোতে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি নিজ কার্যালয় বা বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিঙের মাধ্যমে অংশ নেবেন।

এইটে খাসা বুদ্ধি! চলুক

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সাফির উত্তরেঃ

১। এই শহরে সাইকেলের জন্য আলাদা লেন করার মতো জায়গা নেই। এই শহরের রাস্তাগুলো দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা করে আগে গাড়ি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা দরকার।
২। অমন ব্যবস্থা করলে স্যারেরা তিন/চার ঘন্টা দেরিতে অফিসে এসে বলবেন, 'হাইট্যা আইলাম। অহনে বোনাস দ্যান'।
৩। আগে অফিসে ব্যবহার উপযোগী টয়লেট থাকা দরকার। শাওয়ার, লকার না হলেও চলবে।
৪। এমনসব ইভেন্ট প্রতিনিয়ত হচ্ছে। এইসব ইভেন্টের কোন ফলোআপ নেই। এতে কারো অভ্যাস পালটে গেছে অমন খবরও নেই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মরুদ্যান এর ছবি

মনের কথা টা বলে দিলেন পাণ্ডবদা।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বড় বাস ব্যবহারের ধারণা

এই ধারণাটি চমৎকার ও কার্যকর। অফিস আওয়ারে ছোট গাড়ি চলাচলে রেসট্রিকশন অনেক দেশে আছে। ছোট গাড়ির সিরিয়াল নাম্বারের ক্রমানুসারে ঐ তারিখে ঐ সিরিয়ালের ছোট গাড়ি বের করার ব্যাপারে রেসট্রিকশনও অনেক দেশে আছে। বস্তুত বড় বাসের সংখ্যা বাড়িয়ে, তাদের জন্য আলাদা লেন করে দিলে অনেক যানজট কমে যাবে।

তবে স্যারদেরকে ছোট গাড়ির বদলে বড় বাসে চড়ানো যাবে বলে আমি মনে করি না। আমাদের স্যারেরা কোন মনোভাব ধারণ করেন তার দুটো উদাহরণ দেই।

১। একটা নদী পারাপারের জায়গা। সেখানে ফেরির সংখ্যা কম হওয়ায় পরপর দুটো ফেরির মধ্যকার সময়ের পার্থক্য দেড় থেকে দুই ঘন্টা। ঘাটে এসে দেখি ফেরি আছে। সেটা প্রায় খালি, সেখানে একটা মাত্র এসইউভি। আমাদের ছোট সেডান ফেরিতে ওঠা মাত্র ফেরির কর্মীরা আমাদের ড্রাইভারকে বকাঝকা করে আমাদেরকে ফেরি থেকে নামিয়ে দিলেন। এমন কেন করা হলো সেটা জানতে চাইলে বলা হলো এক পুলিশ স্যারের গাড়ি উঠেছে, তাই ফেরিতে আর কারো গাড়ি তোলা যাবে না। আমরা প্রজাতন্ত্রের প্রজাকূল কয়েকটি বাস, প্রাইভেট কার, পিকআপ দেড়-দুই ঘন্টার জন্য আটকে গেলাম।

২। আরো এক ফেরির গল্প। এখানে স্যারের সংখ্যা এক নয়, দুই। একজন পুলিশের স্যার, আরেকজন প্রশাসনের স্যার। তাদের একজন আরেকজনকে ঠেলার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু ফেরির কর্মীরা তো আর অর্ডার অভ প্রিসিডেন্স পড়েননি তাই তাঁরা দুই স্যারের গাড়ি তো বটেই সাথে কিছু প্রজাকূলের গাড়ি, বাস ইত্যাদিও তুলে নিয়েছে। আমরা কতিপয় প্রজা ফেরির কেবিনে ঢোকা মাত্র সেখানকার কর্মীরা বললেন,
- আপনারা তাড়াতাড়ি কেবিন ফি পরিশোধ করে খাবার অর্ডার দিয়ে ফেলুন।
- কেন?
- তাহলে আপনাদেরকে আর বের করে দিতে পারবে না।
আমরা কেবিন ফি দিয়ে চা-কেক নিয়ে বসে গেলাম। করিৎকর্মা পুলিশ স্যার ফেরির ক্যাপ্টেনের কেবিন দখল করে বসলেন। প্রশাসন স্যার এসে দেখেন সাধারণ কেবিনে প্রজাকূল বসে আছে। তারা ফি দিয়ে খাবার নিয়ে বসে থাকায় তাদেরকে আর গলাধাক্কা দেয়া গেলো না। ক্যাপ্টেনের কেবিন আগেই দখল হয়ে গেছে। তখন তিনি অর্ডার অভ প্রিসিডেন্সের দোহাই দিলেন। ফেরির কর্মীদের উত্তর,
- আমাদের কাছে পুলিশ স্যার আর প্রশাসন স্যার দুই-ই সমান।
নিরুপায় প্রশাসন স্যার আমাদের মতো প্রজাকূলের সাথে কয়েক ঘন্টা কাটাতে বাধ্য হলেন।

স্যারদের জন্য বড় বাস দিলে একটা ৫৬ সিটের বাসে একজন স্যার উঠবেন, আর বাকি ৫৫টা সিট খালি রাখতে হবে। এতে কি যানজট কমবে?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

একটা বোনাস গল্প

ব্লেফাসকুর প্রেসিডেন্ট লিলিপুট সফরে গেছেন। সোমবার সকাল বেলা দুই দেশের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টারে করে রাজধানীর কোথাও যাচ্ছেন। ব্লেফাসকুর প্রেসিডেন্ট নিচে তাকিয়ে দেখেন পিঁপড়ার মতো ছোট গাড়ির সারিতে রাস্তায় কঠিন যানজট। তিনি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

- ইয়োর এক্সেলেন্সি, এসব কী?
- ইয়োর এক্সেলেন্সি, আজ সোমবার সকাল। এখন অফিস টাইম। তাই রাস্তায় অফিসগামীদের ভীড়ে যানজট তৈরি হয়েছে।
- ইয়োর এক্সেলেন্সি, এতগুলো ছোট ছোট গাড়ি বের না করে কিছু বড় বাস দিলেই তো হতো! তাহলে তিনটা ছোট গাড়ির স্পেসে একটা বড় বাস অনেক বেশি যাত্রী নিতে পারতো।
- ইয়োর এক্সেলেন্সি, অমন কথা বলবেন না। এই ছোট গাড়ির নির্মাতা আর আমদানীকারকরা গত নির্বাচনে আমার ব্যয় নির্বাহ করেছে। এখন তাদের যদি ব্যবসা করার সুযোগ না দেই তাহলে সেটা কি ঠিক হবে?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হিমু এর ছবি

বাসের নিয়ম চালু হলে হয়তো শুরুতে কিছু বড় স্যার এই ধরনের টাল্টিবাল্টি করার চেষ্টা করবেন। পরে মিডিয়ার দৌড়ানি খেয়ে লাইনে চলে আসবেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

২ নম্বর গপ্পটা মানে ঘটনাটা কিন্তু দা-রু-ণ। কী করে সম্ভব হলো এটা অ্যাঁ

দেবদ্যুতি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

প্রজাকূলের একটা দলে কতিপয় সিনিয়র সিটিজেন ছিলেন। তাঁদের কথা ভেবেই হয়তো ফেরির কর্মীরা এমনটা করেছিলেন। অথবা দুই স্যারের দ্বিমুখী আক্রমণে বিরক্ত হয়ে তাঁরা এমনটা করেছিলেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মরুদ্যান এর ছবি

হো হো হো

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

তানিম এহসান এর ছবি

রাষ্ট্র যন্ত্রে ব্রিটিশ প্রেতাত্মা জুড়ে বসে আছে, ব্রিটিশ চালচলন একেবারে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শেখানো হয়। বিপিএটিসি’তে যে প্রশিক্ষণের ভেতর দিয়ে যেতে হয় সেখানে পরিবর্তন আনা না গেলে প্রশাসন চিরকাল এইভাবে থেকে যাবে। এতো বেশি ভিআইপি, ভিভিআইপি এই দেশে বাস করে, তাদের উত্তাপ টের পাওয়া যায়- দিন শেষে জনগণের ট্যাক্সের টাকা।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ভিডিও কনফারেন্সিং

বস্তুত চাইলেই বেশিরভাগ মিটিং ভিডিও কনফারেন্সিং-এ করা সম্ভব। তাছাড়া এটাসেটা উদ্বোধন, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, কার্যক্রম শুরু ঘোষণা, সংবর্ধনা জাতীয় অনুষ্ঠানগুলোতে সকল মন্ত্রী ও এমপিদের যোগ দান থেকে বিরত থাকার বিধান থাকলে ভালো হয়। তাতে প্রচুর রিসোর্স অহেতুক ব্যয়ের হাত থেকে বাঁচা যাবে। সাক্ষাতকারের ক্ষেত্রে সাক্ষাতপ্রার্থী মন্ত্রীদের নিজ নিজ দপ্তরে গিয়ে দেখা করার বিধান থাকলে ভালো হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নাশতারান এর ছবি

যানজট
ভালো আইডিয়া। প্রয়োগ করা অসম্ভবপ্রায়। কারণ আমাদের প্রচলিত মনমানসিকতা। পাণ্ডবদা প্রায় সবটাই বলে দিয়েছেন। সরকারি বেসরকারি সব ধরনের অফিসের একটা সাধারণ অন্তর্কোন্দোলের বিষয় হলো গাড়ি। গাড়ি থাকা বা না থাকা, গাড়ির দখল পাওয়া ইত্যাদি এখানে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। সরকারি কর্মীদের হুট করে গাড়ি থেকে বাসে তুলে দেওয়া তাই আপাতত একটা কষ্টকল্পনা। প্রথমে আমাদের মানসিকতায় পরিবর্তন প্রয়োজন। এরপরে এই আইডিয়ার প্রয়োগ সম্ভব।

ভিডিও কনফারেন্সিং
শুধু অনান্তর্জাতিক অনুষ্ঠান নয়, সরকারি বেসরকারি অধিকাংশ দাপ্তরিক মিটিং এবং কাজকর্মও ঘরে বসে, ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে করে শরীর ও রাজপথের উপর চাপ কমানো সম্ভব। "ডিজিটাল" বাংলাদেশে সর্বস্তরে সুলভে উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা দিয়ে যার যার বাড়ি, গ্রাম, শহর থেকে পড়ালেখা আর কাজ করার সুযোগ করে দিয়ে অনেক অর্থ ও শ্রম সাশ্রয় করা যেতে পারে।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সরকারি গাড়ি ব্যবহারের একটা বড় অংশ করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার পরিবার-পরিজন। গাড়ি ব্যবহারবিধি অনুযায়ী এটা বৈধ কিনা জানি না। কেউ কি কনফার্ম করতে পারেন?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হুমম...

সরকারী যানবাহন (ব্যাবহার নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা- ১৯৮৬

২। (সি) সরকারী যানবাহন অর্থ সরকার বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সংস্থানকৃত বা উহাদের মালিকানাধীন যানবাহন।

২। (ডি) গণকর্মচারী অর্থ প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কোনও ব্যাক্তি। সরকার কর্তৃক বা কোনও আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত যেকোনো স্থানীয় কর্তৃপক্ষের, বিধিবদ্ধ কর্পোরেশনের, বিশ্ববিদ্যালয়ের, কর্তৃপক্ষের বা সংস্থার চেয়ারম্যান, পরিচালক, ট্রাস্টি মেম্বার, কমিশনার, শিক্ষক, অফিসার বা অন্যান্য কর্মচারীও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে। তবে প্রতিরক্ষাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনও সদস্য বা নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে না।

৩। বিধি-৪ এর বিধান সাপেক্ষে কোনও গণকর্মচারী কোনও সরকারী যানবাহন ব্যাবহার করিতে পারিবেন না, যদি না-

(এ) তিনি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে সরকারী বা ব্যাক্তিগত কাজে যানবাহন ব্যবহারের জন্য রিকুইজশন স্লিপ গ্রহণ করেন; এবং

(বি) ব্যাক্তিগত প্রয়োজনে ব্যাবহারের ক্ষেত্রে যানবাহনের সামনের বাম্পারে 'অন পেমেন্ট' লিখিত বোর্ড ব্যবহার করেন।

চাকরির বিধানাবলী/ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া, পঞ্চাশতম সংস্করণ (ফেব্রুয়ারি, ২০১৩) থেকে টুকেছি।

সম্পূরক প্রশ্নঃ কয়জন বাম্পারে 'অন পেমেন্ট' লেখা গাড়ি দেখেছেন? হাত তোলেন। হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পুনশ্চঃ উপরোক্ত বিধিমালায় "পরিবারের সদস্য" সম্পর্কে কিছু বলা নেই।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

তানিম এহসান এর ছবি

নিয়ম নাই বলেই কিছু বলা নাই। সরকারী গাড়ীর ড্রাইভার সাহেব-সুবোদের বাজার সদাই করা কাজটাও করেন বলে শুনেছি। যেটা দেখেছি সেটা হচ্ছে কিছু মানুষ আছেন যারা এইসব সুবিধা নেন না, তাদের আবার নিজ নিজ পরিবারে এই নিয়ে খুব কথা শুনতে হয়, আড়ালে কলিগ’রাও গাল-মন্দ করে --- একজনের কারণে সিস্টেমে সমস্যা হয়।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হ্যাঁ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নিহন আহসান  এর ছবি

অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লেখা কিন্তু গিনিপিগ সাইজ( সময়ের দাবির তুলনায়)।
হিমু ভাই এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত লেখা চাই (বড় পরিসরে)
অন্য সচলরা ও এই বিষয়টা তে নজর দিলে ভালো হয়।
চলুক

কল্পনা আক্তার এর ছবি

পুরোটাই নিঃসন্দেহে ভালো আইডিয়া তবে, মানসিকতার পরিবর্তন না করে গাড়ির পরিবর্তন পান্ডব’দা যা বললেন তাই হয়তো বাস্তবে হবে ”৫৬ সিটের বাসে শুধু একজনই যাবে”। যানজটের আরেকটি কারণ হচ্ছে রাস্তার দু’পাশ দখল করে মাছ-মুরগী থেকে শুরু করে ভবন বানানোর সামগ্রী রাখা ও ডাষ্টবিন এর জন্য ব্যবহার করা। এই সমস্যা শুধু প্রশাসন চাইলেই সমাধান করা যায় এর জন্য বোধ করি কোন নতুন নীতির সংযোজন দরকার নেই।

দ্রুত গতির ইন্টারনেট আমার অফিসের কাজ-কর্ম অনেক সহজ করে দিয়েছে, যাতায়াত, ফোন-মোবাইল বিল থেকে শুরু করে অনেক ধরণের খরচ কমিয়ে এনেছে। এখন আর মিটিং করার জন্য সপ্তাহে দু’বার কারোই যানজটের মহাসমুদ্র পাড়ি দিয়ে হেড অফিসে আসতে হয়না, সব কিছুই হয় ভিডিও কনফারেন্স, চ্যাট ও ইমেইল এর মাধ্যমে।

সরকারি সকল কর্মকান্ডকে যত বেশী সম্ভব ডিজিটাল করা এখন সময়ের দাবী।


........................................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এই সমস্যা শুধু প্রশাসন চাইলেই সমাধান করা যায় এর জন্য বোধ করি কোন নতুন নীতির সংযোজন দরকার নেই।

- প্রবলভাবে সহমত। কিছু দিন পরে বিদ্যমান আইন ও ব্যবস্থার মধ্যে থেকে যানজট নিরসনের উপায় নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তানিম এহসান এর ছবি

এই সমস্যা শুধু প্রশাসন চাইলেই সমাধান করা যায় এর জন্য বোধ করি কোন নতুন নীতির সংযোজন দরকার নেই।

চলুক

বিদ্যমান নিয়মের ভেতর থেকেই সেটা করা সম্ভব।

অতিথি লেখক এর ছবি

সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য বাস চালু করার পাশাপাশি নামকরা স্কুলগুলোয় স্কুলবাস চালু করা দরকার। তাহলে শহরের নামীদামী স্কুলগুলো শুরু আর শেষ হবার সময় আশেপাশে যে ভয়াবহ জ্যাম হয় তা অনেকটা এড়ানো যেত।
ঢাকায় পাবলিক ট্রান্সপোর্টের অবস্থা এখন করুণ। ভালো মানের পাবলিক বাস সার্ভিস নেই, আর পাবলিক বাসের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প। ভদ্রভাবে কোথায় যাওয়ার জন্য সিএনজি বা ট্যাক্সি খুঁজে পেতে অনেক কাঠখড় পুড়াতে হয়। তাই আর্থিকভাবে সচ্ছল মধ্যবিত্ত পরিবারের অন্যতম চাহিদা হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি নিজস্ব যানবাহনের। এটা একদিকে আমাদের সামগ্রিক আর্থিক সামর্থ্য বেড়ে যাবার একটা নিদর্শন, অন্যদিকে যানজট বেড়ে যাবার কারণ।

সজীব

হিমু এর ছবি

কেবল পাবলিক বাসের জন্য সিএনজির দাম কম রেখে বাকি সব গাড়ির জন্য সিএনজির দাম অক্টেনের কাছাকাছি নিয়ে গেলেই কাজ হবে।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

উঁহু, তাতে গণপ্রাপ্য ভর্তুকি গুটিকয়ের গ্যারাজে (বা কালোবাজারে) ঢুকে পড়বার আশংকা থাকে। এক জাতীয় জিনিষের দু'রকম দর রাখার পক্ষপাতী নই।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

হিমু এর ছবি

সিএনজি বাস থেকে গাড়িতে নেওয়ার প্রসেসটা মনে হয় না এতো সোজা। স্টেশন থেকে গ্যাস ভরা হয় কমপ্রেসর দিয়ে। বাসের ট্যাঙ্ক থেকে গ্যাস নিয়ে গাড়িতে ভরতে গেলে যে সেটাপ লাগবে (জায়গাসহ), সেটা বাণিজ্যিকভাবে অনুকূল হবে না।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হিমু ভাই,
ব্যাপারটা গ্যাস-স্টেশন>বাস>কনভার্টার>প্রাইভেটকার এত জটিল না তো, ডাইরেক্ট শর্ট সার্কিটের আশংকা। নিচে পাণ্ডবদা' আরও পরিস্কার করে বলেছেন।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সাক্ষী সত্যানন্দের আশঙ্কা সত্য। কোন বিশেষ সেটআপ ছাড়াই কাজটা হবে। বিশেষ ব্যক্তি/গোষ্ঠীর বা বিশেষ স্টিকারওয়ালা ছোট গাড়ি যখন গ্যাস স্টেশনে ঢুকবে তখন সেটা পাবলিক বাস হিসেবে এন্ট্রি হবে। একটু বাড়তি খরচ হবে আর কি!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

স্কুলবাস কালচারটা আমাদের দেশে গড়ে ওঠেনি। এটা থাকলে বহু লোকের অনেক পেরেশানি কমে যেত।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

স্কুলবাস কালচার একেবারেই কি নেই? বছর দুই আগে ধুমধাম করে বিয়ারটিসি'র স্কুলবাস প্রকল্পের বর্তমান আপডেট কি? বন্ধ হয়ে গেছে?

পুনশ্চঃ গাড়িচড়া সাহেবদের পাশাপাশি সাহেবজাদাদেরও কার থেকে নামিয়ে স্কুলবাসে চড়ানো দুস্কর হবে।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

প্রথম উদ্যোগ নিয়ে আমি আশাবাদী নই। এই স্পর্শকাতর (কিংবা অনুভূতিকাতর) স্টেইকহোল্ডারদের ঘাঁটানো'র রিস্ক কেউ নেবে কিনা নিশ্চিত নই। স্টেইকহোল্ডাররাও খুব সহজে অভ্যাস ত্যাগ করবেন বলে মনে হয় না।

দ্বিতীয় উদ্যোগ নিয়ে বরং আমি প্রথম উদ্যোগের চেয়ে বেশি আশাবাদী। এখানে মূল স্টেইকহোল্ডারের সংখ্যা তুলনামূলক কম। মাথা থেকে শুরু করতে পারলে বাকিরা এমনিতেই লাইনে চলে আসবে। প্রয়োজনে এর সুবিধা নিয়ে প্রচারণা চালানো যায়। আর, একদম মাথার মাথায় ঢোকানো গেলে দ্রুত কাজ হবে বলেই মনে হয়।

মন্তব্যের দু-আনায় আরও পুরাতন দু' পয়সা যোগ করে যাই-
কারও কি মনে আছে- বছর পাঁচেক আগে ব্যাক্তিগত গাড়ি ও গণপরিবহনের জন্য রাস্তায় আলাদা লেন করে দেয়া হয়েছিল? ওটা সপ্তাহ দুয়েক চলেছিল। ঐ দুসপ্তাহ আমার মতন গণপরিবহনের (জনসংখ্যার প্রায় ৯৯% যার ব্যাবহারকারী) যাত্রীরা প্রায় ঈদের ছুটির মতন গতিতে ঢাকার এমাথা-ওমাথা করেছি। ব্যাক্তিগত গাড়ি চড়া (যারা জনসংখ্যার প্রায় ১% কিংবা আরও কম) লাল টুকটুক দাদাবাবুদের অনেকেই এই ন্যায্যতা মেনে নিতে পারেননি। উনারা সমতা চেয়েছেন। এবং অচিরেই আগের যেই কে সেই। এর পরে তৎকালীন পরিকল্পনা মন্ত্রক কিছু আইডিয়া দিয়েছিল। জোড়-বেজোড় নাম্বারের গাড়ির জন্য পৃথক দিন কিংবা প্রাইভেটকারে ভাড়ায় যাত্রী বহন কিংবা নির্দিষ্ট সময়ে (পিক আওয়ারে) গাড়ি বন্ধ ইত্যাদি ইত্যাদি। এই সব আইডিয়ার বিরুদ্ধে আনিসুল হক (উপ-সম্পাদক, প্রথম আলো) এক বিশাল প্রবন্ধ ফাঁদলেন। এর মূলকথা ছিলঃ "তাঁর গাড়িতে তিনি যাত্রী তুলতে রাজি নন। ... গাড়ি কিনেছেন তাড়াতাড়ি যাবার জন্য। ... অন্যরা আটকে থাকল কিনা সেটা দেখার দায়িত্ব তাঁর নয়... ইত্যাদি ইত্যাদি"। তারপর পরিকল্পনা মন্ত্রক দু-চারদিন পরে চুপ মেরে গেল। শেষ।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

হিমু এর ছবি

ভাড়ায় যাত্রী বহনের বুদ্ধিটা ভালো না, উল্টোপাল্টা লোক যাত্রী সেজে উঠে গিয়ানজাম করতে পারে। তবে গণপরিবহন আর ব্যক্তিগত গাড়ির লেন আলাদা করা গেলে ভালো হয়।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হিমু ভাই,

ভাড়ায় যাত্রীবহনের সম্ভাব্য দূর্ভোগ সম্পর্কে আমিও একমত। ঝাপসা স্মৃতিতে যে কটা পয়েন্ট মাথায় এসেছিল লিখেছি। ঐ সময়ে রাষ্ট্রীয় কাঠামো থেকে "আইডিয়া" ব্যাপারটাই ভাল লেগেছিল। এর সাথে নিশ্চয় আরও সংযোজন-বিয়োজন-পরিমার্জন হত। কিন্তু হতচ্ছাড়া পুটুনের কলামে পুরো প্রক্রিয়াটাই বন্ধ হয়ে যাওয়াটা তখনও সহ্য হয়নি, এখনও হয়না।

অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, বাংলাদেশের বুরোক্রেসিতে এখনও এমন কিছু মানুষ আছেন যারা আইডিয়া পছন্দ করেন, খুঁজে বার করেন, খুঁজে পেলে যথাসাধ্য প্রোমোট করেন। কিন্তু এদের খুঁজে পাওয়াই দুঃসাধ্য কাজ। তার অপর গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে আছেন আমিষুল গং।

সংবাদপত্র নামে প্রকাশিত টয়লেট টিস্যু যখন সমাজের সমস্যা চিহ্নিত না করে "আমার গাড়ি নিয়া আমি বাইরামু, অন্যের খবর লওনের টাইম নাই" বলে চেচায়, তখন অক্ষম ক্রোধে নিজের চিন্তাভাবনাই কিছুটা ওলট-পালট হয়ে যায় বোধহয়।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

হিমু এর ছবি

আশা করি পুটুন্দার ফালতু কলামগুলিকে পাত্তা না দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার মতো বুরোক্র্যাট বাংলাদেশ সামনে পাবে। রাজনীতিক আর পাবলিক যদি একজোট হয়ে ঠ্যালাধাক্কা দেয়, তাহলে বুরোক্র্যাটদেরও সামনে আগাতে হবে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

দ্বিতীয় উদ্যোগের ক্ষেত্রে মূল স্টেইকহোল্ডারের সংখ্যা কম নয়। একজন জনপ্রতিনিধি যখন কোন সভা-সেমিনার-আলোচনায় যান তখন সেখানে তার সাথে প্রচুর পরিমাণে দলীয় লোকজন ও অন্যান্য তদবীরবাজরা যায়। প্রচুর কাজের সিদ্ধান্ত, টাকাপয়সার লেনদেন এসব সভা-সেমিনার-আলোচনার বাইরে করিডোরে, লাউঞ্জে, বাগানে, সামনে ফুটপাথে, পাশের রেস্টুরেন্ট হয়ে যায়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হ্যাঁ, সত্য। তবু এই জায়গাটায় টপ>ডাউন এপ্রোচ প্রযোজ্য এবং এখন পর্যন্ত প্রচন্ডভাবে কেন্দ্রীভূত। এই ব্যাপারটা খুব স্বাস্থ্যকর না। তবে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই সিস্টেমে কোনও কাজ দ্রুততর হবে। আলোচ্য অন্য সিস্টেমের সাথে তুলনার্থে বলেছি।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

হে হে হে হাসি

হিমু এর ছবি

আরে এটা কে রে? জলদি পোস্ট দেন বড় ভাই।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

আমি দেখতে আসছিলাম যে আমার সদস্যপদ এখনও আছে না কি সচল থেকে আমাকে বের করে দেওয়া হইছে দেঁতো হাসি

বের করে দিলে একটু হই হল্লা করতাম আর কি । হই হল্লার মজা আলাদা!

হিমু এর ছবি

বের করে দেওয়ার আগেই একটা পোস্ট লিখে ফেলেন।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনি নানাবিধ পোস্টে মন্তব্য রেখে বিদেয় নিচ্ছেন, এটা তো মেনে নেওয়া যাবে না। পোস্ট দেন জলদি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ভালো আইডিয়া।
মাননীয়রা গাড়িতেই চড়ুক, কিন্তু আমাদের মতো অমাননীয়রা বাসে অস্বচ্ছন্দ্য না। শুধু বাসের সার্ভিসটা ভালো দরকার। বিআরটিসি বর্তমানে বেশ ভালো সার্ভিস দিচ্ছে। কিন্তু বাসের সংখ্যা দ্বিগুন করা দরকার। দ্বিতল বাস ভালো, এতে কম জায়গায় বেশি লোক আঁটে।

বাসগুলোর যত্রতত্র যাত্রী উঠানো নামানো বন্ধ করতে পারলেও জ্যাম কিছুটা কমবে। আর লোকজনকে একটু ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে শেখানো।

স্কুলের বাচ্চারা যেহেতু বিভিন্ন এলাকা থেকে আসে। সেক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক স্কুলগুলোর কমন বাস সার্ভিস থাকতে পারে। ধরা যাক ধানমন্ডির স্কুলগুলো মিলে ঢাকার বিভিন্ন রুটে নির্দিষ্ট সংখ্যক বাস ছাড়লো। তাহলে ধানমন্ডিতে প্রতিদিন এতোগুলো গাড়ি ঢুকবে না।

ফোন, ভিডিও কনফারেন্সিং ইত্যাদির ব্যবহার বাড়ালে অনেক কাজই সহজ হয়ে যাবে। কিন্তু কাগজের বই আর ইবুকের মতোই আমাদের এখনো 'সামনাসামনি কথা' না হলে মিটিং জমে না। অভ্যস্থতা একটা ব্যাপার।

সাইকেল বাড়ছে, এটা খুব ভালো দিক। বাইক স্কুটি ইত্যাদিও বাড়ছে। এগুলোর ব্যবহার আরো বাড়াতে সরকারের সহযোগিতা দরকার। বাইক/স্কুটি কেনায় সহজ শর্তে ঋণ দিতে পারে ব্যাংকগুলো।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সাইকেল, মোটর সাইকেল, স্কুটি বাড়া মোটেও ভালো ব্যাপার নয়। এগুলো নিরুৎসাহিত করা উচিত। এই কথা কেন বললাম সেটা নিয়ে আগামীতে পোস্ট দেবার আশা রাখি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

এই কথাডাই আমিও কইবার চাইছিলাম। পোস্টান, আলোচনা হোক। পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

হিমু এর ছবি

আর আশা না রেখে পোস্ট দিয়ে দেন বস।

অতিথি লেখক এর ছবি

ঢাকার রাস্তায় সরকারী গাড়ি এর সং্খ্যা কত বা মোট ট্রাফিকের কত শতাংশ এ ব্যাপারে কি কোন গবেষণা আছে? এই প্রশ্নের উত্তর জানা গেলে আপনার প্রথম প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা যুতসই হত।

পরবর্তী প্রস্তাবের সাথে সহমত জানাচ্ছি।

মাজহার

হিমু এর ছবি

শতাংশ হিসাব করলে বেশ ছোটো একটা সংখ্যা আসবে। কিন্তু ছোটো গাড়িকে নিরুৎসাহিত করে বড় গণপরিবহন চালু করার কাজটা তো সরকারকে ঘরের ভেতর থেকেই শুরু করতে হবে।

আয়নামতি এর ছবি

প্রস্তাবগুলো ভালো। গাড়িওয়ালা শ্যারেদের মানসিকতা না বদলালে বড়বাসের প্রস্তাব বাস্তবায়ন সম্ভব না।
দ্বিতীয় প্রস্তাবটা বাস্তবায়ন করা বেশি সহজ কিন্তু!

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার মনে হয়, বাংলাদেশে যানজট বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারন হচ্ছে ব্যক্তিগত গাড়িগুলো। দেখা যাচ্ছে, বিশাল একটা গাড়িতে লোক মাত্র একজন। এই গাড়িগুলোর কারনে রাস্তাঘাট আটকে যায়। এদের কারনে বিপাকে পড়ে সাধারণ মানুষ। এজন্যই, হরতালে যখন প্রাইভেট কার বের হয়না রাস্তায়, তখন যানজট থাকেনা বললেই চলে।

বললেই তো আর প্রাইভেট কারগুলোকে নিষিদ্ধ করা যাবেনা, সেটা সম্ভবও না। আমার পরামর্শ হচ্ছে, প্রাইভেট গাড়ির জন্য আলাদা রাস্তা তৈরী করা। যে রাস্তায় শুধু প্রাইভেট গাড়িই চলবে, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট চলবেনা। আবার যেখানে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট চলবে সেখানে প্রাইভেট কার চলবেনা।

কিন্তু, এরকম কিছু করা কী সম্ভব?

অতিথি লেখক এর ছবি

আইডিয়াগুলো বেশ চমৎকার। তবে যানজটের তীব্রতা হ্রাস করার আইডিয়াটাতে ধরে নেয়া হচ্ছে, গাড়িচালকেরা ট্রাফিক আইন এবং সঙ্কেত যথাযথভাবে মেনে চলবে। পরিসংখ্যানের সাহায্য ছাড়াই বলি, আইন মেনে না চললে কেবল গাড়ির সংখ্যা হ্রাস সাগর থেকে এক বালতি পানি সরানোর মতই হবে। আর স্যারেদের গাড়ির ড্রাইভাররা "বড় স্যার" হতে সময় নেবে না।

ভিডিও কনফারেন্সিং এর আইডিয়াটা বেশ কাজের হবে, এবং বাস্তবায়নটাও কঠিন হবে না। সরকারপ্রধান নিজে এবং তার মন্ত্রীবর্গকে এই ব্যাপারে উৎসাহ দিতে পারেন (এই বাক্যটা বলে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম নগরপিতার কাজটা কি?)।

হুঁকোমুখো হ্যাংলা

হিমু এর ছবি

নগরপিতা শব্দটা মেয়রের ভুল বঙ্গানুবাদ। মেয়রের সঠিক বাংলা হচ্ছে নগরপাল।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ হিমু ভাই হাসি

হুঁকোমুখো হ্যাংলা

মাসুদ সজীব এর ছবি

হিমু ভাই, আমার মনে হয় ঢাকার যানজনের অন্যতম কারণ যেখানে সেখানে সংযোগ সেতু এবং বাসগুলোর যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়া। যেমন ধরেণ শ্যামলী থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত পথটাতে সংযোগ সেতু আছে অসংখ্য, ফলে একবার এটা বন্ধ তো আরেকবার এটা বন্ধ এভাবে করে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রন করে বলেই এই রাস্তায় সারাটা দিন জ্যাম থাকে। ঠিক বনানী-কাকলীর আধা কিলোমিটারের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় ৪-৫টা সংযোগ সড়ক যাত্রীদের নাভিশ্বাস করে তুলে। এভাবে ঢাকার প্রতিটি মূল সড়কের সাথে এত বেশী সংযোগ সড়ক করা হয়েছে যে জ্যাম লেগেই থাকে। মূল রাস্তার সাথে সংযোগ সেতুর ব্যবহার না কমাতে পারলে ঢাকার জানজট সহজে কমবে বলে মনে হয় না (যেমন এক কিলোমিটারের মাঝে দিনের বেলায় গুরুত্বপূর্ণ একটাই সংযোগ সড়ক ব্যবহার হব)। সংযোগ সড়ক গুলো যারা ব্যবহার করে তারা মূলত নিজস্ব গাড়ি নিয়ে চলাফেরা করে, এক কিলোমিটার বেশি গেলে তা সমস্যা কি?

যত্রতত্র গাড়ি দাঁড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। অফিসার থেকে ঝাড়ুদার সবাইকে বাসে চড়াতে পারলেই জানজট কিছুটা সহনীয় হবে।

আর দ্বিতীয় প্রস্তাব চলুক চলুক

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

পঞ্চক এর ছবি

কিন্তু ঢাকা শহরে তো এখন অনেক ফ্লাইওভারও হচ্ছে। অন্যান্য জায়গার খবর জানা নেই, তবে এখনও শান্তিনগর আর মগবাজারে দুটো ফ্লাইওভার নির্মাণাধীন (অথবা দুটো একসাথে জুড়ে দেয়াও হতে পারে)। আগে ঢাকা'কে বলা হতো 'মসজিদের শহর', অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে কিছুদিন পর বলা হতে পারে 'ফ্লাইওভারের শহর'। এই ফ্লাইওভারগুলো জানজট নিরসনে কেমন ভূমিকা রাখতে পারে?

শামীম এর ছবি

ইয়ে... আপনার উল্লেখ করা ঐ দুইটা আসলে একটা ফ্লাইওভারেরই অংশ বটে (এলজিইডি ফ্লাইওভার)

ইউটিউব এনিমেশন ভিডিও

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

শামীম এর ছবি

ভিডিও কনফারেন্সে A+

ফুটপাথ থেকে বাজার নামানো অসম্ভব। কারণ ঢাকায় এই ফুটপাথ থেকে পুলিশের ইনকাম দিনে আড়াই কোটি যা টপ-টু-বটম ডিস্ট্রিবিউট হয় (তথ্যসূত্র গোপনীয়)। এই বিষয়টাই একটা বিরাট পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে।

সরকারী বড়বাবুরা আর স্কুল ট্রিপে এই ধরণের জিনিষপাতি ব্যবহারের সুযোগ বাড়লে ভাল হত মনে হয়:
Toyota i-road

কিংবা: ecomobile

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

নাশতারান এর ছবি

টয়োটা আইরোড ভীষণ মনে ধরল। ঢাকার জন্য আদর্শ বাহন এটা।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

শাব্দিক এর ছবি

ঢাকার পুরো গণপরিবাহন ব্যবস্থা একটা নির্দিষ্ট ব্যবস্থার আওতায় আনা উচিত। অর্থাৎ টেম্পু, মিনিবাস, দুরন্ত, রাজধানী, তরঙ্গ, ওয়ান লাইন করতে গিয়ে কোন লাইন ঠিকঠিকানা নাই। কিছু এলাকায় গণপরিবাহন পর্যাপ্ত আছে, কোন এলাকায় নাই, কখনো কোন রুটে ব্যক্তিগত মালিকানায় সার্ভিস নতুন তৈরী হচ্ছে, দুইদিন পরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এবং ফিটনেস ছাড়া বাসগুলি (বিশেষত মিনিবাসগুলি, যার এক কাঁধ বাঁকা করেই বহুদিন ধরে শহরে নির্দ্বিধায় ঘুরে বেড়াচ্ছে) অবশ্যই বন্ধ করা প্রয়োজন। যতদূর জানি, সরকারী ভাবে প্রায়শই এই উদ্যোগ নেয়া হয়, কিন্তু বাসমালিকগণ পর্যাপ্ত (অ)ব্যবস্থা নিয়ে যথাযথ সময়ে এই উদ্যোগ বন্ধ করতে সক্ষম হয়।

কোন প্রাইভেট সংস্থাকে পুরো ব্যবস্থাটা লিজ দেয়া যেতে পারে সরকারি ভাবে। সেক্ষেত্রে যে ব্যবস্থাগুলি নেয়া যায়ঃ

১। প্রতিটি এলাকায় একটা মাত্র সার্ভিস চালু থাকবে, যা নিশ্চিত করবে ঢাকা শহরের বেশিরভাগ পয়েন্টে পর্যাপ্ত পরিমানে বাস চলাচলের বন্দবস্ত আছে।
২। সময় অনুযায়ি অফিস টাইম বা পিক আওয়ারে চাপ যেসব এলাকায় বেশি থাকে সেসব এলাকায় বেশি সংখ্যক বাস চলবে।
৩। সর্বসাধারণের জন্য টিকেট বা মাসিক কার্ডের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
৪। ছাত্র বা সরকারী কর্মচারীদের জন্য আলাদা কার্ড থাকতে পারে যা কি না অর্ধেক ভাড়ায় যাতায়াত সুবিধা দিবে।
৫। অন্যান্য টেম্পু, দুরন্ত বিভিন্ন সাইজের যানবাহনগুলি যদি প্রচলিত রাখতে হয় সেক্ষেত্রে একই সংস্থার আওতায় ছোট রুটে চালানো যেতে পারে।
৬। এতে করে ড্রাইভারের লাইসেন্স সংক্রান্ত দুর্নীতি বন্ধ হওয়া সম্ভব।
৭। ফিটনেসবিহীন বাসগুলি চলাচল বন্ধ করা যাবে।
৮। সর্বপরি যাতে দুর্ঘটনা এড়ানো সহজ হতে পারে।

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

রাস্তা থেকে গনতন্ত্র তুলে দিতে হবে। গাড়িওয়ালা, দোকানঅলা, পথচারী, জনগণ সবাইকে তিনটা জিনিস মানতে বাধ্য করতে হবে

১। তুমি এই পথে চলবা/চলবা না
২। তুমি এই খানে থামবা/থামবা না
৩। তুমি কোন চলাচল পথে মালামাল রাখবা না

-বাস চালুর সুপারিশ ঠিক আছে
-ভিডিও কনফারেন্স ঠিক আছে

সব ধরণের যানবাহনকে একই সময়ে চলতে দেয়া যাবে না। শুনেছি কোন কোন দেশে টাইম স্লট ভাগ করা থাকে কোন গাড়ি কখন রাস্তায় নামতে পারবে।

ভিভিআইপি বা ভিআইপিদের চলাচলের জন্য স্পেশাল প্রিভিলেজটা চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে। তাহলে যানজট কমাবার আইনকানুনগুলো পথে নামতে পারবে। নইলে আইন কেতাবেই থেকে যাবে, রাস্তায় যানজট চলতেই থাকবে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

রাজীব রহমান এর ছবি

শুধু ঢাকার যানজট নিয়ে একটু বলি...
১.
আরবান প্ল্যানিঙের কার্যকর কোন চেষ্টা ঢাকাতে করা হয়েছে বলে শুনিনি। ধানমন্ডি এলাকা ডিভলপমেন্টের সময় ধরা হয়েছিল এর বাড়িগুলো হবে দোতলা। আর প্রতিটা বাড়িই হবে বেশ খানিকটা জায়গা ছেড়ে দিয়ে। একসময় সেই নিয়োম পাল্টে ফেলে ছয় তলা করার অনুমোদন দেয়া হয়। এখন তো 'ফার' এর কথা বলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ১৩ বা ১৪ তলা করার অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। তো ধানমন্ডির ফ্ল্যাটের সংখা বাড়ছে । কিন্তু এতগুলো এ্যাপার্টমেন্টের প্রেশার নেয়ার মত প্রশস্ত করে এই এলাকার রাস্তা তো তৈরী করা হয়নি। তার উপর ধানমন্ডিতে যে স্কুলগুলো গড়ে উঠেছে তার উপরও চাপ বাড়ছে। একটা আবাসিক এলাকা খুব দ্রুতই একটা মিক্সড-ইউজ এরিয়াতে পরিণত হয়েছে।
গুলশান আর বনানী এলাকার গ্রোথ রেট এখন খুব হাই। সব বিল্ডিংই হয় দশতলা নয়তো ১৪ তলা হওয়ার দৌড়ে আছে। মেইন এ্যাভেনিউয়ের গুলোর চোখ আরো উপরে। সাথে বাড়ছে শোরুম , অফিস আর হোটেল-রেস্তোরা। রাস্তার পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
ডিওএইচ গুলোও ঐদিকেই যাওয়ার তালে আছে। মানে আবাসিক এলাকা বাণিজ্যিক এলাকাতে রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে।

২.

মেইন বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট মতিঝিলের দিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না অনেক দিন। সেখানকার খুব অল্প বিল্ডিঙেই পার্কিয়ের ব্যবস্থা আছে। রাস্তার বেশিরভাগটা তাই পার্কিঙের কাজেই লাগে। যাতায়াতের জন্য কখনো কখনো দুই লেনও আর অবশিষ্ট থাকে না। মতিঝিলে একটা বাস ডিপো থাকা খুব দরকারি ছিল। অথবা সাইদাবাদ বা কমলাপুরকে কাজে লাগানো যেতো। যেটার কোনটাই করা হয়না বা হয়নি।

বিজনেস ডিস্ট্রিক্টের সাথে আবাসিক এলাকাগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে ভাবা হয়নি। বাস অথবা মেট্রো হতে পারে সেটা। কিন্তু সেটা নিয়ে গোছানো পরিকল্পনা নেই। নেই বাসের জন্য পরিকল্পিত র‍্যুট প্লান।

৩.
মোটামুটি মানের কোন বাসসার্ভিস ঢাকাতে নেই। কিছু সিটিং সার্ভিস যদিও এখনো টিকে আছে । কিন্তু সেগুলোতে উঠতে গেলে সবাইকেই একরকম যুদ্ধ করতে হয়। বাসগুলো কোন সময় মেনে চলে বলে মনে হয়না। বাসের ওঠার বা নামার জন্য কোন জায়গা নির্দিষ্টি করা নেই।

৪.
নিউমার্কেট, বসুন্ধরা সিটি বা যমুনা ফিউচার পার্কের মত শপিংসেন্টারগুলোতে পর্যাপ্ত পার্কিং সুবিধা নেই। এই বিপনী বিতানগুলোর সাথের রাস্তা দরকার অনুযায়ী প্রশস্ত নয়। আমাদের নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের জানাশোনা আর দেখভালের দীনতা এরজন্য দায়ী। বর্তমানের বিল্ডিং বিধি পরিবর্তনের কোন পরিকল্পনা এদের আছে কিনা জানি না। বর্তমান বিধি অনুযায়ী ৬০ ফুট প্রশস্ত রাস্তাতে ১৪ তলা বিল্ডিং বানিয়ে ফেলা যায়। কিন্তু ৬০ ফুটের রাস্তা ১৪ তলা বিল্ডিংকে যে সার্ভিস দিতে পারছে না সেটা আমারা দেখছি।

৫.
স্কুল, কলেজগুলোর অবস্থান যানজটের অন্যতম কারণ ঢাকাতে। স্কুল কলেজগুলোর অতিরিক্ত শিক্ষার্থীও একটা কারণ। সেই সাথে আমাদের মানসিকতা। বেশির ভাগসময়ই শিক্ষার্থীদেরকে স্কুল কলেজে দিয়ে আসেন অভিভাববকেরা। দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে কয়েক হাজার মানুষ (অথবা গাড়ী) ধারণের মত অবস্থা এই সব স্কুল কলেজের সামনের রাস্তাতে নেই বললেই চলে। স্কুলবাসের ব্যাপারে আমাদের খুব একটা ভাবনা নেই। ইদানিং স্কলাসটিকা বা বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল টাইপের কিছু স্কুল ট্যান্সর্পোটেশনের ব্যবস্থা করছে। তবে তা যে সবাই ব্যবহার করছে তা মনে হয় না।

৬.
মোহম্মদপুরের মত জায়গাগুলোতে বড় বাস ঘোরানো খুব কঠিন। কিন্তু এখানকার বাস সার্ভিসগুলো বড় বাসেই ভরা। ঠিক কতটা প্রশস্ত রাস্তা এবং মোড়ের জন্য ঠিক কতটা লম্বা গাড়ি অনুমোদন দেয়া যায় তা নিয়ে ভাবা দরকার।

৭.
ঢাকার যাতায়াত ব্যাবস্থা নিয়ে একটা প্লানের চেষ্টা সরকার করেছিল কয়েক বছর আগে। সম্ভবত ২০১১/১২ তে। তখন ঢাকার মোট জনসংখ্যার ৫% মানুষ ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করত। গ্রোথরেট বলে ২০২০ এ গিয়ে সেটা হবে ৮%। এই ৫% গাড়ির জন্যই ঢাকাতে যে পরিমাণ যানজট দেখা যাচ্ছে তা কমানোর চেষ্টাও সরকার করছে। প্রচুর পরিমাণে ফ্লাই ওভার তৈরীর চেষ্টা করে। যে ফ্লাই ওভার তৈরীর টাকাটা আসছে ১০০ ভাগ লোকের পকেট থেকেই। মেট্রোর জন্য যে ভাড়ার কথা বলা হচ্ছে তা ৮০% মানুষের আয়ের সাথে যুক্তিযুক্ত বলে আমার মনে হয়নি। অথবা ঢাকার মানুষের আয়ের ব্যাপারে আমার ধারণার (হয়তো এনবিআর এরও) সাথে যোগযোগ মন্ত্রনালয় একমত নয়।

৮.
বাজে ট্রাফিক পরিকল্পনা আর খাবাপ ব্যবস্থাপনাও দায়ী এর জন্য। ইউটার্নের পরিমাণ খুবই কম। ইদানিং বাড়ানোর খানিকটা চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। শ্যামলীতে এটা এখন বেশ কার্যকর বলা যায়। কিন্তু অনেক জায়গাতেই ইউটার্ন করার মত প্রশস্ত নয় রাস্তাগুলো। ফলে নোডগুলোতেই আটকে থাকছে বেশিরভাগ গাড়ী। লেইন পরিবর্তন আর ফিটনেসহীন গাড়ীর ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশের ভুমিকা নেই বললেই চলে।

৯.
আমাদের চালকেরা নিয়োম জানেন এবং মানেন খুবই কম। মোটর সাইকেল চাকলেরা রাস্তার দুইদিক দিয়েই যাতায়াতে অভ্যস্ত। আর সরকারী বড় কর্মচারীরা। তাদের গাড়ী বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রং-সাইড দিয়ে যাতায়াত করে। ব্যক্তিগত গাড়ির সাইজ নিয়েও আমার আপত্তি আছে। ঢাকাতে মিনি কারের ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ এত কম কেন সেটা আমি ঠিক বুঝি না।

১০.
রিকশা আর লেগুনা ঢাকার মাস-ট্রান্সপোর্টে যে কি ভূমিকা রাখে তার নিয়ে গ্রহনযোগ্য কোন পরিসংখ্যান চোখে পড়েনি। হয়তো এরা তাই কখনো পরিকল্পনাতে থাকে না। সাইকেলের জনপ্রিয়তা বড়ছে। কিন্তু বিল্ডিঙের পরিমাণ বাড়া আর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ার জন্য রাস্তার তাপমাত্রা বাড়ছে খুব দ্রুত। সাইকেল চালানোর জন্য এই গরম অসহনীয় হয়ে গেছে এই বছরই। গতবছরের তুলনায় এইবছর রাস্তাতে সাইকেলের পরিমাণ বেশ কম বলেই মনে হচ্ছে আমার কাছে।

হিমু এর ছবি

চলুক

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

চমৎকার মন্তব্য রাজীব রহমান! আমার মনে হয় পয়েন্টগুলো আরেকটু ইলাবোরেট করে, সমাধানের ব্যাপারে কিছু পরিকল্পনা/পরামর্শের কথা বলে এটাকে একটা পোস্ট হিসেবে দিতে পারেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তানিম এহসান এর ছবি

মন্তব্য খুবই পছন্দ হয়েছে।

তানিম এহসান এর ছবি

প্রচণ্ডভাবে সহমত পোস্টের সাথে।

ফুটপাথ থেকে বাজার কিংবা দোকান উচ্ছেদ মনে হয় কোনদিন সম্ভব হবে না, বিরাট বাণিজ্য এটাকে ঘিরে। ঢাকা শহরে যানজট ঘিরে-ও বিরাট বাণিজ্য, জ্যাম লেগে থাকা একটা বড় রাস্তায় যারা বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে তাদের ঘিরে-ও বিরাট বাণিজ্য- এইসব সিণ্ডিকেসন মনে হয় না এত সহজে ভেঙে ফেলা যাবে।

আর একটা বড় সমস্যা পার্কিং। একটা প্রস্তাব আছে। ঢাকা শহরে এখন যে হারে মার্কেট, শপিং মল আর রেস্টুরেন্ট তৈরি হচ্ছে তার বেশিরভাগের-ই যথেষ্ট পার্কিং স্পেস থাকে না। বাণিজ্যিক-ভিত্তিতে রাজউক কিংবা সিটি কর্পোরেশন কিন্তু শুধুমাত্র পার্কিং এর জন্য চিন্তা করতে পারে। একটা নির্দিষ্ট এলাকায় (ধরে নেই গুলশান ১), একটা ১০ তলা বিল্ডিং শুধুমাত্র গাড়ী পার্কিং এর জন্য ব্যবহার করা যদি যায় তাহলে কেমন হয়? রাস্তায় কোন গাড়ী রাখা যাবে না।

কিছুদিন আগে সিএনজি’তে বসে আছি, সিএনজি চালক ভাই এর সাথে এইসব নিয়েই কথা হচ্ছিলো, তাঁর পরামর্শ দুইটা ছিল খুব-ই সোজা-- একটা পরিবারে একটার বেশি গাড়ী রাখা বন্ধ করে দিলেই যানজট বহুলাংশে কমে যাবে। আমরা প্রাকৃতিক গ্যাস দিয়ে গাড়ী চালাই, সব গাড়ী ডিজেল/পেট্রোল/অকটেনে চালানো বাধ্যতামূলক করে দিলেও মানুষের ভেতর যে-কোন কাজে গাড়ী ব্যবহার কমে যাবে। বলা বাহুল্য, তাঁর মূল ফোকাসটাই ছিল গাড়ীতে। আবার বেশিরভাগ গাড়ী/সিএনজি চালক ঢাকা শহরে যানজটের মূল কারণ হিসেবে রিকশা’কে দায়ী করেন; ইদানীং ভেতরের দিকের রাস্তাগুলোতে ইজিবাইক নামে একটা নতুন উপদ্রব যোগ হয়েছে।

আমাদের শহরে এক্সিট-এন্ট্রি কম। ধরা যাক প্রতিদিন কুড়িল-বাড্ডা-রামপুরা-মৌচাক-মালিবাগ সড়কের কথা --- ঢোকা এবং বের হওয়ার সুযোগ খুবই কম, একটা বড় রাস্তা কিন্তু যে-কোন সংযোগ সড়ক দিয়ে কোন এলাকার ভেতরে যেতে কিংবা বের হতে হওয়ার রাস্তা কম, পথ-ও সংকীর্ণ। পাশাপাশি, যে-কোন বাড়ীর সামনে নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা রেখে বাড়ী বানানোর কথা, সেটা মানা হয় খুবই কম।

বহুদিন ধরে বহু মানুষ যেটা বলে আসছে: বিকেন্দ্রিকরণ- পৃথিবীর সমস্ত সুযোগ-সুবিধা আর সুখ যদি শুধুমাত্র ঢাকা-চট্টগ্রামেই থাকে তাহলে মানুষ সেখানে যাবেই। ঢাকা আর কিছুদিন পর বসবাসের যোগ্য থাকবে না, কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে গেলাম, সেখানেও শুরু হয়েছে। গ্রামে চাষযোগ্য জমি আর নিজের থাকার একটা ঘর আছে পুকুরসহ-- এমন বেশ কিছু মানুষ’কে দেখেছি ঢাকায় এসে রিকশা কিংবা সিএনজি চালাতে, কেন এসেছে তার নির্দিষ্ট কোন ব্যাখ্যা নেই, নিজের কাছেও স্পষ্ট নয় তবুও ঢাকা আসে কিন্তু ‘মন থাকে গ্রামে’।

চাইলে সব করা সম্ভব, আমরা আগে-ওে দেখেছি, সরকার যদি চায় তাহলে সে সব করতে পারে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।