পোশাক শিল্প, রপ্তানি বানিজ্য, আর্থিক প্রণোদনা এবং আমাদের ভরসার ক্ষেত্রটি

নৈষাদ এর ছবি
লিখেছেন নৈষাদ (তারিখ: মঙ্গল, ০৮/০৯/২০০৯ - ১২:৫০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলাদেশে মোট রপ্তানির শতকরা কত ভাগ সামগ্রিক ভাবে পোশাক শিল্প থেকে আসে কেউ বলতে পারবেন কি? আমার মত যাদের মাথার মধ্যে এখনো মধ্য-সত্তরের একটা সংখ্যা ঘোরাফেরা করছে, তাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে (জুলাই – জুন)এর পরিমান ছিল বিরাশি (৮২%) ভাগের সামান্য উপরে। তার মানে দাড়াচ্ছে কী দাঁড়াচ্ছে? একই অর্থবছরে অন্যান্য সব রপ্তানি পণ্য থেকে আয় ছিল শতকরা সতেরো (১৭%)ভাগের কিছুটা বেশি। আরেকটা ভাল খবর দেয়া যেতে পারে, বিশ্বব্যাপি অর্থনৈতিক মন্দার মুখে ছাই দিয়ে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে পূর্বেকার অর্থবছরের তুলনায় রপ্তানি বানিজ্যে আমাদের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১০.৩১%। যদিও লক্ষ্যমাত্রার তুলানায় ৪.৫% কম অর্জিত হয়েছে। দেখতে পারেন http://www.epb.gov.bd/pdf/Monthly%20Summary%20Sheet_July-June_2008-2009_(P1).pdf । তবে দুঃখজনক ভাবে আমাদের দেশজ এবং কৃষিজাত পণ্যের, মানে চা, পাট, চামড়া জাতীয় পণ্যের রপ্তানি কমেছে।

গত তিন শতকে পোশাক শিল্পে যে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সত্তরের দশকে যেখানে পাট বা পাটজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় ছিল ৮০% এর উপরে, সেখানে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে পাট বা পাটজাত পণ্য থেকে রপ্তানির পরিমান ছিল মাত্র ২% কিছু উপরে। রপ্তানি আয় ছাড়াও ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে পোশাক শিল্প সেক্টর। এও অস্বীকার করার উপায় নেই যে এই শিল্পে সব সরকারেরই অবদান ছিল। প্রাথমিক অবস্থা থেকে এই শিল্পে সরকারী বিভিন্ন প্রণোদনা এবং ভুর্তকির ব্যবস্থা সব সরকারই করেছে। এখন পর্য্যন্ত, যাত্রার তিন দশক পরেও সরকার বিভিন্ন প্রণোদনা এবং ভুর্তকির দিয়ে যাচ্ছে।

খুব সংগত কারনেই এই শিল্প সবসময় মিডিয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। তবে পোশাক শিল্প আবার ব্যাপক আলোচনায় চলে এসেছ ইদানিং। পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) এ মাসের ৩ তারিখে সংবাদ সম্মেলন করে ৭ তারিখের মধ্যে সরকারকে তিন হাজার কোটি টাকা আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার দাবি করে, তা না হলে অন্তত ৪০% কারখানশ্রমিকের ঈদের বেতন-বোনাস দেওয়া সম্ভব নয় বলে দাবি করেন। এই দাবি কিছুটা বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। বলা হচ্ছে নিজেদের কারখানার শ্রমিকদের জিম্মি করে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে বিজিএমইএ। আবশ্য এখন বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আব্দুস সালাম মুর্শেদীর বলার ধরন সম্ভবত সঠিক ছিল না, অথবা লোকজন মিস-ইন্টারপ্রেট করছে। এও বলা হচ্ছে আসলে এই সেক্টরকে বাচঁনোর জন্য আর্থিক প্রণোদনা দিতেই হবে। (সরকার পাঁচ হাজার কোটি টাকা আর্থিক প্রণোদনার জন্য বাজেটে রেখেছে।) আজ পোশাক শিল্পের এক নেতাকে এই বিষয়ে ব্যাক্তিগত পর্য্যায়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বেশ ক্ষেপে যান। বার বার মনে করিয়ে দেন এই সেক্টরের উপর আমাদের নির্ভরতার দিকটি।

আমি এই লেখায় তিন হাজার কোটি টাকা আর্থিক প্রণোদনার জন্য যে চাপ সৃষ্টি করা হল তার নীতিগত দিক নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলব না। অথবা ১০% এর বেশি প্রবৃদ্ধি, সরকারের স্বাভাবিক প্রণোদনা এবং ভুর্তকির পরও বিশাল অংকের আর্থিক প্রণোদনা ছাড়া শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়া যাবে না যে সেক্টরের সেই সেক্টর তিন দশক পরে কতটা নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে, সেই বিষয়েও কোন প্রশ্ন করব না। আমার ভয়টা অন্যখানে।

বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮২% এর বেশি আসে সামগ্রিক ভাবে পোশাক শিল্প থেকে। (যদিও এখানে একটা শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। এই শতকরা হিসবটা অন্যান্য দেশজ রপ্তানি পণ্যের সাথে তুলনা করা যায়না, কারন, এই সেক্টরের একটা অংশ আমদানী খাতে চলে যায় ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির মাধ্যমে।)। যতই বিতর্ক করা হোক, মোটা দাগে আমাদের এই শিল্পের তুলনামুলক সুবিধা বা শক্তিটা আসে সস্তা শ্রম থেকে। আমার প্রথম ভয়টা এখানেই, কারন এই সুলভ শ্রমই আবার সবচেয়ে অরক্ষিত। আমরা গত দশক গুলোতে বার বার শ্রমিক অস্থিরতা দেখেছি। বেতন-ভাতা, ষড়যন্ত্র কিংবা অন্য যেকোন ব্যাপারই এর কারন হোক না কেন, এই ‘পণ্যটি’ অতিমাত্রায় অরক্ষিত। এবং এখনও আমরা এর সমাধান দিতে পারিনি, অথবা বিভিন্ন এক্সকিউজ দেখাচ্ছি। দ্বিতীয়ত যখন এমন একটি অরক্ষিত ও নিয়তপরিবর্তনশীল সেক্টর আমাদের রপ্তানি আয়ের ৮২% এর বেশির উৎস হয়ে উঠে, তখন ভয় তো লাগেই।


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এবার মালিকেরা একটু কম লাভ করলেই তো হয়। যে শ্রমিকের রক্ত পানি করা শ্রমে মালিকদের গাড়ির এসি চলে সেই মালিকরা এক মাসের বেতন না নিয়ে (বা বোনাস না নিয়ে) সেই টাকা দিয়েই তো শ্রমিকদের বোনাস দেয়া যায়। বিজিএমইএর আবদারে সরকারের দৃঢ় "না" বলাকে সাধুবাদ জানাই। আবদারের একটা সীমা থাকা প্রয়োজন।
...............................
নিসর্গ

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

কালকে পেপারে দেখলাম মালিকরা দলেবলে ওমরা করতে সৌদি গিয়েছেন সংবাদ সম্মেলন শেষে দেঁতো হাসি
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

নৈষাদ এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। গতকাল রোড-টু-ডেমক্রেসি নামক একটা টকশোতে বিজিএমইএর প্রাক্তন সহ-সভাপতিকে এই কথা বলা হলে (আব্দুর নূর তুষার) তিনি কিন্তু ধর্ম নিয়ে এ ধরনের কথা বলতে না করেছেন।

নৈষাদ এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ প্রকৃতিপ্রেমিক। আপনি কি মনে করেন বিজিএমইএর নেতাদের কাছে সরকারের দৃঢ় "না" টিকে থাকতে পারবে? গতকালই সরকার কিছু টাকা ছাড়ের ব্যাপারে কথা বলেছে।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এই অতি নির্ভরতা তৈরী হয়েছে বলেছেই এইরকম ইতরপনা দাবী করার সাহস পেয়েছে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা।
টেকসই বহুমুখী রপ্তানী আয়ের উৎস গড়ে উঠা অবশ্যই জরুরী।

ভালো লাগলো আপনার পোষ্ট।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নৈষাদ এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। যখন পোশাক শিল্পের অবদান রপ্তানি বানিজ্যের ৭৫% এর মত ছিল, তখনই টেকসই আন্যান্য রপ্তানী আয়ের উৎস খোঁজার আবশ্যকতার উপর আনেক কথা বলা হয়েছিল। গতকালই দেখতে পেলাম আমাদের নির্ভরতা তো কমেইনি বরং বেড়েছে। টেকসই বহুমুখী রপ্তানী আয়ের উৎস গড়ে উঠা খুবই জরুরী হয়ে দেখা দিয়েছে।

কিছু কিছু নতূন সেক্টর আমাকে অবাক করেছে। যেমন এই মন্দআর সম্য়ও বাইসাইকেল শিল্পে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৩১% এর উপরে। অথচ এই সেক্টর নিয়ে খুব একটা কিছু শুনিনাই।

হিমু এর ছবি

আর্থিক প্রণোদনা দিতে হলে জনশক্তি রপ্তানি খাতে দেয়া হোক।

পত্রিকায় পড়লাম, দেশে বিনিয়োগে সাহস পাচ্ছে না ব্যবসায়ীরা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সঙ্কটের কারণে। অলস টাকা ব্যাঙ্কে পড়ে আছে। নিতান্ত টাকার টানাটানি পড়লে কিছুটা সহজ শর্তে ঋণ নিতে পারেন গার্মেন্টস ভাইয়ারা। সরকারের কাছে ভিক্ষা মাগার আগে অন্যান্য সম্মানজনক উপায়গুলি যাচাই করে দেখা কি ভালো না?

গার্মেন্টস খাতে দেশে নেট বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহ সময়ের বিপরীতে দেখার কোনো উপায় আছে?



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। গত বছরের সেপ্টেম্বরের ছুটির দিনের এক বৃষ্টিস্নাত সকালে সিঙ্গাপুর ইন্সটিটিউট অভ ম্যানেজমেন্টে (এসআইএম) অপূর্ব ক্যাম্পাসে গেছলাম এক ভদ্রমহিলার কাছে। এসআইএম সম্বন্ধে যা বলল, তাতে দেশটির কর্ণধারদের দুরদর্শিতায় চমৎকৃত হয়েছিলাম। চার দশক আগে সিঙ্গাপুরের সরকার এসআইএম তৈরী করেছিল তাদের দেশের জনগনকে আগামী দশক গুলোর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য গড়ে তুলতে। তাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য সফল হবার পর এখন এসআইএমকে প্রাইভেট সেক্টারে দিয়ে দিয়েছে, এখন উদ্দেশ্য মুনাফা। সিঙ্গাপুর এত দূর এগিয়ে গেছে তাতে আশ্চর্য্য হবার কিছু নাই। জনশক্তি রপ্তানি খাতে আর্থিক প্রণোদনার সাথে সাথে সরকারের পরিকল্পনাও দরকার। এখনো জনশক্তি রপ্তানি কথা বললে যে দ্যোতনা সৃষ্টি হয়, তা সস্তা এবং আন-স্কিলড জনশক্তির কথাই মনে করিয়ে দেয়, যার হর্তাকর্তারা 'আদম ব্যাপারী'।

গার্মেন্টস খাতে দেশে নেট বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহ সময়ের বিপরীতে দেখার কোনো উপায় আছে কিনা এখনো জানি না। এক নেতার কিছু উদ্ধত কথার প্রেক্ষিতে গতকালই আমি আসলে ইপিবির ওয়েবসাইটে গেছলাম। এই দশকের গোড়ার দিকে, যখন লেখাপড়ার সাথে কিছুটা যোগ ছিল, তখন যতদুর মনে পরে মোট প্রবাহের মধ্যে ৩০-৩১% মত নীট প্রবাহ থাকত। গতকাল সেই ভদ্রলোক বলতে চাইলেন এখন এখন ৬৫-৬৭% নীট। উপাত্ত ছাড়া বিশ্বাস করা কঠিন।

ফিরোজ জামান চৌধুরী এর ছবি

গার্মেন্টস খাতের মালিকেরা যেভাবে শ্রম শোষণ করে, অন্য কোনো খাত তা করে না।

গার্মেন্টস খাতে কোনো আর্থিক প্রণোদোনা নয়। সরকারের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই।

ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১। যদি রফতানী না বলে বলি দেশের সবচে' বড় বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের খাত কোনটা? তাহলে উত্তর হচ্ছে আমাদের আদম ভাইয়েরা। একই সাথে বৈদেশিক মুদ্রা আয়, কর্মসংস্থান, জনসংখ্যার চাপ কমানো ইত্যাদি। এই খাতে আর্থিক প্রণোদনার মাধ্যমে দরিদ্র দক্ষ জনগোষ্ঠীকে বিদেশ গমনের জন্য ঋণ দিলে কী উপকার হত তা সবাই বোঝে।

২। গার্মেন্টস থেকে দেশের নেট আয় কত? ১০০ ডলার রফতানীর বিপরীতে ৩০ ডলারও না। এমনকি এই ৩০ ডলারের একটা বড় অংশ আবার মালিক পক্ষের বিলাসী জীবনযাপনের পেছনে ব্যয় হয় যা সরাসরি বিদেশে চলে যায় বা উচ্চ মূল্যে আমদানীকৃত বিদেশী দ্রব্যের পিছনে ব্যয় হয়। তাহলে জাতীয় অর্থনীতিতে গার্মেন্টসের নেট অবদান কতটুকু দাঁড়ায়? এই সত্য বিজিএমইএ'র কর্তারাতো বটেই দেশের কর্তারাও ভালো বোঝেন। এই দুই পক্ষ সিমবায়োটিক জীবন যাপন করে বলে পরস্পরকে ঘাঁটায় না।

৩। দেশে কিছু বহুল পরিচিত ঋণখেলাপী আছে যাদেরকে ঋণ পরিশোধের জন্য চাপ দিলে কারখানা বন্ধ করে হাজার হাজার কর্মীকে ভাতে মারার হুমকি দেয়। ব্যাস, সরকার তখন তাদের ঋণ পূনঃতফসীলিকরণ করে। বিজিএমইএ-ও একই রাস্তা ধরেছে। বহুল ব্যবহৃত ও পরীক্ষিত।

৪। গার্মেন্টসে ট্যাক্স হলিডে সাত বৎসর, অন্য কোন শিল্পে এটা আছে? খুব কম গার্মেন্টসের আয়ু সাত বৎসর হয়। ছয় বৎসর যেতে না যেতে একই কারখানা নাম-ধাম পালটে নতুন নামে আবারো সাত বৎসর ট্যাক্স হলিডের সুযোগ নেয়। কর বিভাগ এই শুভঙ্করের ফাঁকির হিসাব ভালোভাবেই বোঝে, তবু চুপ করে থাকে। সিমবায়োটিক পার্টনার বলে কথা।

৫। আবাসিক এলাকায় অন্য কোন শিল্পটাকে এভাবে গড়ে উঠতে দেয়া হয়েছে? এভাবে পাড়ায় পাড়ায় গার্মেন্টস আবাসিক এলাকায় বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, চলাচল, সামাজিক পরিবেশ ইত্যাদিতে যে খারাপ প্রভাব ফেলছে তার আর্থিক মূল্য কত?

৬। রপ্তানীমুখী গার্মেন্টস ব্যবসার বয়স ত্রিশ বৎসরের কম নয়। এই তিন দশক ধরে "কোরামিন" দিয়েও যে শিল্পকে টেকাতে আরো আর্থিক প্রণোদনা দেবার দরকার পড়ে সেটা যে টেকসই নয় বোঝাই যায়। লাগসই কিনা তা নিয়েও সন্দেহ হয়।

৭। গার্মেন্টস ব্যবসাতে ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্প গড়ে না ওঠার একটা কারণ বড় অংশ উদ্যোক্তাদের মধ্যে লুটেরা মানসিকতার উপস্থিতি। আরেকটি কারণ হচ্ছে "নতজানু মনন, অপচিত মেরুদণ্ড"। এই কথাটার মানে কী তা কখনো সুযোগ হলে বিস্তারিত বলব। তবে বুদ্ধিমান পাঠক এ'টুকুতেই বোঝার কথা।

৮। গার্মেন্টসে শ্রম আইন, কারখানা আইন ইত্যাদি কতটুকু পালন করা হয়? মোটামুটি গবেষণার বিষয়। তবে বেশিরভাগ আইনই যে মানা হয় না সেকথা সবাই জানেন। এদেরকে শুধু আর্থিক প্রণোদনা নয় আইনগত বিশেষ সুবিধাও দিতে হয়। এক্ষেত্রে সরকার দেশে আইনের শাসন আছে তা কি দাবী করতে পারে? অথবা সংবিধানের সবার সমানাধিকারের ধারা কি রক্ষিত হয়?

৯। এই পর্যন্ত গার্মেন্টসে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় কতজন শ্রমিক প্রান হারিয়েছেন? কতজন পঙ্গু হয়ে গেছেন? কতজন মালিক পক্ষের হাতে খুন হয়েছেন? এর কোন হিসেব নেই, বিচারও নেই। অগ্নি আইন, নির্মাণ আইন কোন কিছুই এদের জন্য প্রযোজ্য নয়।

১০। গার্মেন্টস না থাকলে কি দেশের এই কয়েক লাখ মানুষ বেকার থাকত? অবশ্যই না। এই গরীবগুলোকে চরাতে না পারলে বিজিএমইএ'র সাহেবদের বিলাসী জীবনের উপকরণ কোথা থেকে আসত? তাদেরকে কোন না কোন শিল্পে বা বাণিজ্যেতো যেতেই হত। হয়তো সেটা এতটা অমানবিক হত না। লাখ লাখ নারীকে ঘরের বাইরে আনতে পারার বড় কৃতিত্ব এই শিল্পের না সেটার বড় দাবীদার আধুনিক কাবুলীওয়ালারা।

তারপরও বিজিএমইএ তাদের নিত্য নতুন দাবী-দাওয়া নিয়ে হাজির হবে। আমাদের মিডিয়াগুলো তাদের নিয়ে লাফালাফি করবে। সরকার তাদের জন্য নানা রকম প্রকল্প-প্রণোদনা হাজির করবে। আর ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা সাধারণ জনগন মুখে রক্ত তুলে তাদের খাঁই মিটিয়ে যাবে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মামুন হক এর ছবি

পান্ডবদা'র মন্তব্যে যেন বুকের উপর থেকে একটা পাথর সরে গেল, আমার বক্তব্যটা আপনার সাথে পুরোপুরি মিলে যায়, যদিও এতটা গুছিয়ে বলতে পারতাম বলে ম নে হয় না । গার্মেন্টস শিল্প গরু মেরে জুতা দান করে যাচ্ছে, বছরের পর বছর ধরে, সরকারী ছত্রচ্ছায়ায়, দেশের মানুষের দারিদ্র আর অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে। রফতানী আয়ের নামে উচ্ছিষ্টটুকু পাচ্ছে দেশ, আয়ের বেশির ভাগই চলে যাচ্ছে, থেকে যাচ্ছে বিদেশে।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

পান্ডবদার মন্তব্যের ব্যপারে মামুন ভাইয়ের মন্তব্যে সহমত। হাসি

নৈষাদ এর ছবি

ষষ্ঠ পাণ্ডব ভাই, চমৎকৃত হলাম আপনার বিস্তারিত মন্তব্যে। ধন্যবাদ।
'নতজানু মনন, অপচিত মেরুদণ্ড' - কিছুটা বুঝতে পারছি। তবুও বিস্তারিত আলোচনার অপেক্ষায় থাকলাম। আপনার ১০ নং পয়েন্টটা কিন্তু সদ্য প্রয়াত সাইফুর রহমান সাহেবের সাথে অনেকটা মিলে যায়। তাঁর দু'পক্ষের ব্যাপারেই সমস্যা ছিল।
ধন্যবাদ আরেকবার।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

গার্মেন্টস শিল্পে প্রনোদনা না দিয়ে বরং ধীরে ধীরে যা বাড়তি সুবিধা আছে তাও উঠিয়ে নেয়া উচিত। এর কারন হচ্ছে এটা বর্তমানে দেশের সবচেয়ে দক্ষ রপ্তানিমুখী সেক্টর। সময়ের সাথে এটা যেই দক্ষতা অর্জন করেছে সেটা কাজে লাগিয়ে বিশ্ব বাজারে টিকে থাকাটা অপেক্ষেকৃত সহজ হবে অন্য শিল্পের তুলনায়।

আর শিল্পের ক্ষেত্রে অন্যান্য সম্ভাবনার দিকও এখন খুঁজে বের করা দরকার এবং প্রনোদনা যদি দিতে হয় তবে সেখানেই দেয়া উচিত। সব ঘি কেবল গার্মেন্টস শিল্পে দিতে থাকলে আন্তর্জাতিক বাজারে কোন পরিবর্তন আসলে সেটা সামাল দেবার শক্তি বাংলাদেশের অর্থনীতির থাকবে না। সেক্ষেত্রে সব ডিম এক ঝুঁড়িতে রাখার মত বোকামি না করাই ঠিক হবে।

আর অন্যান্য শিল্পের উন্নতি হতে থাকলে শ্রমিকদের জন্যেও সেটা একটা প্রতিযোগীতার ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে। অর্থাৎ তারা অন্যান্য শিল্পে কাজের সুযোগ পেলে তাতে করে শিল্পগুলো তাদেরকে আরো প্রতি যোগীতা মূলক মজুরি দিতে বাধ্য হবে। আর শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় এটা খুবই দরকার।

নৈষাদ এর ছবি

প্রাকৃতিক সম্পদের উপর অতি নির্ভরতার ফলে সৃষ্ঠ একটি ঋণাত্মক অর্থনৈতিক অবস্থার নাম ডাচ ডিজিজ। ডাচ ডিজিজের কুফলে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর অস্বাভাবিক গুরুত্বের ফলে দেশের অন্যান্য শিল্প ধ্বংস বা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ভয় হয় সরকার এবং নীতি নির্ধারকরা যদি বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহন না করে, অন্যান্য শিল্পের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

অতিথি লেখক এর ছবি

গার্মেন্টস মালিক আজ এফবিসিসিআই এর সভাপতি হয়েছে। এই একটি উদাহরণই যথেষ্ট তাদের আর্থিক অবস্থা পরিমাপের জন্য। এই সেক্টরের একটা অংশ আমদানী খাতে চলে যায় ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির মাধ্যমে। এইগুলো বাদ দিয়ে সঠিক হিসাব কষলে দেখা যাবে গার্মেন্টস নয় বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যোগানদাতা হল প্রবাসীরা। যাদের পিছনে সরকারকে একটা টাকাও ব্যয় করতে হয়না। গার্মেন্টস বাদ দিয়ে সরকার যদি বিদেশী শ্রম বাজারের দিকে বেশী মনোযোগী হয় তাহলে আমাদের অর্থনীতি আরও শক্ত অবস্থানে দাঁড়াতে পারে।

রেনেসাঁ(অতিথি সচল)

আরিফ জেবতিক এর ছবি

গার্মেন্টস মালিক আজ এফবিসিসিআই এর সভাপতি হয়েছে। এই একটি উদাহরণই যথেষ্ট তাদের আর্থিক অবস্থা পরিমাপের জন্য।

এফবিসিসিআই একটা ব্যবসায়িক সংগঠন, সেখানে গার্মেন্টস মালিক সভাপতি হলে আপনার বিষ্ময় দেখে আমি খুব মজা পেলাম।

এফবিসিসিআইতে আপনি ঠিক কোন পেশার মানুষকে সভাপতি হিসেবে চাচ্ছেন ?

দুর্দান্ত এর ছবি

এখানে কি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ব্রিটেন আর আমেরিকার সরকারের কোন দায়িত্ব নেই? অর্থনৈতিক মন্দার আগে আগে শ্রমিকের অধিকার ও শিশুশ্রম এই দুইটি ইস্যু নিয়ে বেশ উচ্চবাচ্য হয়েছে। কিন্তু ইদানিং সেগুলো আর দেখা যায় না। এগুলো যেসব চ্যারিটির মাধ্যমে হত, সেগুলোকেই আর খুজে পাওয়া যাবে না। পশ্চিমাদের নীতোবোধ যে একরকম বিলাসীতা, আর সেটা যে ট্যাঁকের জোড়ের ওপর নির্ভরশীল, এর চাইতে বড় প্রমান আর নেই। এখন চারিদিকে সেল এর জয়জয়কার। উসিলা পাওয়া মাত্র সেল।
আমদানীকারকেরা তাই এখন তুলনামূলক কম দামে ঝঞ্ঝাটবিহীন সরবরাহ চায়। দিনে ২৩ ঘন্টা কাজ করে কে বেতন পেলনা, কার বোনাস হবে, এসব ভাবার অবকাশ তাদের নেই।

কোথায় গেলেন আমাদের টুইসডে পার্টি?

আরিফ জেবতিক এর ছবি

আমাদের দেশে গার্মেন্টস শিল্প এখন ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেয়া উচিত।
আমি নিজে গার্মেন্টস মালিক , তাই এই শিল্পের প্রতি আমার অশ্রদ্ধা নেই ; একটা সময় ছিল যখন আমাদের অর্থনীতির বুনিয়াদকে তৈরী করার জন্য গার্মেন্টস শিল্পের দরকার ছিল, এখন আর তেমন দরকার নেই। আমার প্রপিতামহ কৃষি কাজ করতেন , এখন আমি করি না। কিন্তু এখন যদি বলি প্রপিতামহ সারাবছরে যা রোজগার করতেন আমি একসপ্তাহে তাই রোজগার করি , তাই প্রপিতামহের রোজগারের গুরুত্ব নেই , তাহলে সেটা সঠিক চিন্তা হবে না ।

৭১ পরবর্তী সময়ে বাঙালি শিল্পোদ্যোক্তা হয়েছে, তাই আগের পাটশিল্পকে রক্ষা করা যায় নি, ওগুলোর মালিক আমরা ছিলাম না। গার্মেন্টস শিল্প যতোটানা শিল্প ( আদতে কি শিল্প ?) তার চাইতে বেশি বলা যায় বড় আকারের দর্জি দোকান।
এই দর্জিদোকানগুলোর অবদান আছে আমাদের দেশের অর্থনীতিতে। প্রায় কুড়িলক্ষ লোক এই শিল্পের সাথে জড়িত । আমি এখন বাড্ডায় বসে আছি, আধা কিলোমিটারের মাঝে ১৪টি গার্মেন্টস আছে, ‌১৪ হাজার শ্রমিক ও পরিবারের কর্মসংস্থান সরাসরি জড়িত। ১৪ গার্মেন্টসে বিকেলের নাস্তায় ১৪ হাজার রুটি কলা লাগে , সেটা সাপ্লাই দেয়ার জন্য এখানে ৬টা ছোট বেকারি তৈরী হয়েছে আমার চোখের সামনে। মনিহারী দোকান হয়েছে , মোবাইল ফোনের দোকান হয়েছে , বাসাভাড়ে বেড়েছে, ১৪ ফ্যাক্টরীতে সপ্তাহে ৬০ বার ট্রাক ভাড়া হয় , সেখানে মালামাল তুলে দেয়ার জন্য শ্রমিক লাগে , ২০০৩ সালে আমি যখন গার্মেন্টস চালু করি তখন তার কিছুই ছিল না।

সুতরাং পাড়ায় পাড়ায় গার্মেন্টস আবাসিক এলাকায় বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, চলাচল, সামাজিক পরিবেশ ইত্যাদিতে যে খারাপ প্রভাব ফেলছে তার আর্থিক মূল্য বিচার করার পাশাপাশি অর্থনীতিতে যে ভালো প্রভাব পড়ছে সেটাও বিবেচনায় নিলে দেখা যাবে ভালোর প্রভাবই বেশি।
অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে গার্মেন্টস শিল্পের মালিকরা বিলাসী জীবনযাপন করে বিদেশে টাকা পাঠিয়ে দেয়, এরকম ধারনা পাশাপাশি এটাও স্মরণ রাখা কর্তব্য যে ১৫ কোটী জনসাধারনের জন্য সোয়াবিন তেল আর পেয়াজ আমদানী নির্ভর অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা যেটা খরচ হয় সেটাও দীর্ঘদিন রফতানি আর জনশক্তি সেক্টর থেকেই জোগান হচ্ছে।
এই ধূসর এলাকাগুলোও দেখতে হবে।

আর্থিক প্রনোদনা চাওয়ার তরিকাটি সালাম মুর্শেদী ও তার প্যানেলের আবালীয় চিন্তা সেটা সত্য , তবে আর্থিক প্রনোদনা বা সাহায্য এই বিশ্বমন্দা পরিস্থিতিতে সব দেশই বিভিন্ন সেক্টরে দিচ্ছে।

এই প্রনোদনার সাথে জনশক্তি সেক্টরকে এভাবে সরাসরি জড়িয়ে ফেলা ঠিক হবে না। জনশক্তি সেক্টরে এখন আমাদের দরকার অনেকগুলো আন্তর্জাতিক মানের ট্রেনিং সেন্টার, নির্মান শ্রমিক কিংবা নার্স এসব রফতানি করতে হলে ভালো ট্রেনিং দরকার। গ্রামের কৃষক সন্তান ড্রিল মেশিন চালাতে পারে না বলেই মধ্যপ্রাচ্যে ইট বইতে হয়, ড্রিল মেশিন চালাতে পারলে তার রোজগার অনেক বেশি হতো।

আমাদের এখন আরো অনেক অনেক রফতানি আইটেম খুঁজে বের করা দরকার। সেগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রনোদনা দিতে হবে।
আমি মনে করি গার্মেন্টস বন্ধ করে ফেলার সময় এসেছে আমাদের দেশের , আমাদের এখন মাঝারি শিল্পের দিকে চোখ ফেলা দরকার।

নৈষাদ এর ছবি

আরিফ জেবতিক ভাই, ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। যেহেতু আপনি নিজে একজন পোশাক শিল্পের মালিক, আপনি নিশ্চয়ই এই শিল্পের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ কন্ট্রিবিউশনের ব্যাপারে বেশি জানেন।

আমি মনে করি গার্মেন্টস বন্ধ করে ফেলার সময় এসেছে আমাদের দেশের - এই চরম মন্তব্যটা ক্ষোভের বশে আপনার ব্যঙ্গ্যোক্তি না কোন ধারনার উপর ভিত্তি করে মন থেকে বলছেন, তা আপনার লেখা থেকে বোঝতে পারলাম না। এ আমারই অক্ষমতা।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

না এটা ক্ষোভ বা ব্যঙ্গোক্তি না , বাস্তবতা।
একেকটা দেশ একেক সময় একেকটা বিষয়ের উপর নির্ভর করে। সময় পেরিয়ে গেলে আপগ্রেড করার দরকার আছে।

এখন শ্রমিকের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে, শ্রমিকের বাসায় টিভি আছে, তার একটা মোবাইল ফোন আছে, সে তিনটাকার মিনিপ্যাক শ্যাম্পু ব্যবহার করে, জিনিষপত্রের দাম বেড়েছে; এখন তার পক্ষে আর ৩ হাজার টাকায় শ্রমদান পোষাবে না। আমেরিকার লোকদেরকে শস্তা কাপড় পরানোর জন্য আমার শ্রমিককে আধপেটা খাওয়ানোর কোন দরকার দেখি না। এখন আমাদেরকে যেতে হবে আরেকটু লাভজনক শিল্পে, যেখানে ভ্যালু এড বেশি হয়। সেক্ষেত্রে শ্রমিকরা তখন ভালো অপশন পাবে , দক্ষতার ভিত্তিতে তাদের আয় অনেক বাড়তে পারে। গার্মেন্টসের স্বর্ণযুগ এখন নেই , গার্মেন্টস এখন আরো গরীব দেশে চলে যাবে , এটাই প্রত্যাশিত।

কোন কিছু বন্ধ করে দিয়ে পরবর্তী যুগে পদার্পন করাটা একটা অগ্রগতি, একজায়গায় বসে থাকার কোন মানে নেই।

হিমু এর ছবি

গার্মেন্টস শিল্প যেহেতু রপ্তানিমুখী, কাজেই চট্টগ্রাম বন্দরের কাছাকাছি কোথাও এই শিল্পকে কেন্দ্রীভূত করা হোক। গার্মেন্টসের মালিকেরা রাজধানী শহরের ওপর অকারণে চাপ বাড়াচ্ছেন। গার্মেন্টস পণ্য কারখানা থেকে বন্দর পর্যন্ত ট্র্যান্সপোর্টেশন খাতে গত তিরিশ বছরে যে পরিমাণ খরচা হয়েছে, সেটার হিসাব কি কেউ দিতে পারেন?

সরকার যদি গার্মেন্টস খাতে কোনো প্রণোদনা দেয়, তাহলে যেন গার্মেন্টস ভাইয়াদের বন্দরের কাছাকাছি কোনো স্থানে শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার জন্যে দেয়া হয়। এতে করে অর্থনীতিতেও গতি সঞ্চার হবে, ঢাকা শহরটাও জানে বাঁচবে।

ঢাকা থেকে সকল কারখানা দূর করা হোক। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলটিকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় রূপান্তর করা হোক।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

আরিফ জেবতিক এর ছবি

এই বিষয়টাতে জোরেশোরে আওয়াজ তোলার সময় হয়েছে। আমি বুঝি না আশুলিয়া কিংবা গাজীপুরে গার্মেন্টস নিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করার কী দরকার।

যেখানে কাজ আছে সবাই সেখানে যাবে। চট্টগ্রাম আর মংলা পোর্টের আশেপাশে গার্মেন্টস তৈরীতে প্রনোদনা দেয়া যেতে পারে। ওসব এলাকায় ইকোনমিক জোন করে বিদ্যুৎ গ্যাস এগুলোর যোগান দিয়ে একটা ট্যাক্স বেনিফিট দেয়া যেতে পারে। অথবা সময় বেঁধে দেয়া যেতে পারে যে ৩ বছরের মাথায় যারা শহরের মাঝখান থেকে ফ্যাক্টরী সরাবে না তাদের উপর ডবল ট্যাক্স বসবে।
আমার যদি শখ থাকে যে ঢাকায় বসে বসে গার্মেন্টস বাড়ির পাশে রেখে চালাব , ডবল কিংবা তিনগুন ট্যাক্স দেয়া হবে।

তবে তেজগাও শিল্পাঞ্চলে ভার্সিটি বানানোরও কোন দরকার দেখি না।
ভার্সিটিও রাজধানীর মাঝখানে রাখার কোন প্রয়োজন নেই।
সেগুলোও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে সরিয়ে দেয়া যেতে পারে। সবগুলোকে আবাসিক করে দিতে হবে। ক্যাডেট কলেজগুলো যেভাবে শহর থেকে দূরে রাখা হয়েছে এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও দূরে সরিয়ে দেয়া যেতে পারে।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

গার্মেন্টস শিল্পকে ঢাকার বাইরে বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোরের উপর নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবস্থা করাটা অত্যন্ত দরকারি। এজন্য সরাসরি আর্থিক প্রনোদনার চেয়ে হয়ত অবকাঠামোগত বিনিয়োগের দিকে বেশী মনযোগ দেয়া দরকার বলে মনে করি। তাছাড়া কিছু প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধাদিরও দরকার আছে সেই সব যায়গায়। 'ক্ষুদে শহর' নিয়ে যে লেখাটা দিয়েছিলাম সেটার আলোকেই মনে হচ্ছিল যে ঢাকার বাইরে গার্মেন্টস শিল্পের পাশে এরকম শহর গড়ে তোলা যেতে পারে।

  • এসব ক্ষুদে শহরে বসবাসের খরচ ঢাকার চাইতে অনেক কম হবে আশা করা যায়। সেক্ষেত্রে একই ঢাকায় একজন শ্রমিককে যেই বেতনে দেয়া হবে সেই বেতনে সেসব যায়গায় আরো ভালভাবে জীবন ধারন করা সম্ভব হবে শ্রমিকদের পক্ষে।
  • যেই স্থানে এই সব ক্ষুদে শহর কাম গার্মেন্টস কারখানা গড়ে উঠবে সময়ের সাথে সেখানে অনেক স্থানীয় লোকজন কাজ করতে পারবে। এতে করে স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে গতির সঞ্চার হবে। এটা আমাদের দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত দরকারি একটা পদক্ষেপ হতে পারে।
  • স্বল্পমূল্যের শ্রমিক, সহজ কাচামাল আর উৎপাদিত পন্যের পরিবহনের সুবুধা সত্বেও কেন গার্মেন্টসগুলো এই করিডোরে গড়ে উঠছেনা সেটা গবেষনার বিষয়। আমি কুমিল্লার মিয়াবাজারের কাছে একটা গার্মেন্টস কারখানা দেখেছিলাম। সেখানে কারখানার পাশেই শমিকদের জন্য একটা কলোনির মত আছে। গুচ্ছ আকারে অনেকগুলো টিনের ঘর। গার্মেন্টসের মালিকই বোধহয় ভাড়া দেয়। এলাকার বাইরে থেকে অনেকে এসে এখানে কাজ করে। কারখানার ব্যবস্থাপক, এলাকার লোকজন আর শ্রমিকদের সাথে কথা বলে আমার মনে হয়েছিল এখানে মূল সমস্যা হচ্ছে স্থানীয় ক্ষমতা কাঠামো। সেখানে কারখানার মালিক ছিল একজন স্থানীয় ক্ষমতাশালী ব্যক্তি। একারনে সেখানে ব্যবসা করতে তার অসুবিধা হয়নি। কিন্ত বাইরে থেকে বিনিয়োগকারিরা এসব স্থানে এসে বিনিয়োগে ভরসা পায়া না। সরকারের এই দিকটিতে বেশি মনযোগ দেয়া দরকার।
আমার মতে প্রথমে ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোরে কিছু স্থান নির্বাচন করে 'ক্ষুদে শহর' আর গার্মেন্টসকে সমন্বিত করে বড় আকারে কিছু প্রকল্প হাতে নেয়া উচৎ।

আপনি যেহেতু গার্মেন্টসের ব্যবসার সাথে জড়িত কাজেই ঢাকার বাইরে নিজে থেকে গার্মেন্টস কারখানা কেন বিস্তৃত হচ্ছে না সে বিষয়ে আপনার কি ধারনা? আপনি যদি আপনার কারখানা কে ঢাকার বাইরে রিলোকেট করার কথা ভাবেন সেক্ষেত্রে কি কি বিষয় নিয়ে আপনার উদ্বেগ তৈরি হবে ? বা সরকারের সেক্ষেত্রে আপনাকে কি ধরনের সুবিধা দেয়া দরকার মনে করেন?

নীড় সন্ধানী এর ছবি

প্রণোদনা দেবার আগে বের করতে হবে রশুন জ্বরে ভুগছে কতজন মালিক?

যাদের প্রণোদনা প্রয়োজন, তারা হলেন সেই রপ্তানীকারক, যারা রপ্তানী করেছেন, কিন্তু এখনো ক্রেতার কাছ থেকে বিক্রির টাকা হাতে পাননি।

ভুলে যেন না যাই, শিল্পের রুগ্নতা বাংলাদেশে একটা ভালো ব্যবসা।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

আরিফ জেবতিক এর ছবি

প্রনোদনা শ্রমিক পেতে পারে , মালিককে দেয়ার কোন দরকার দেখি না।
আমি ব্যবসা করে যদি লাভ বেশি করি তখন কি সরকারকে কিছু টাকা গিফট করি নাকি ?

যেসব ফ্যাক্টরী সত্যি সত্যিই বন্ধ হয়ে গেছে তার ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকদের তালিকা করে তাদেরকে সাময়িক সাহায্য করার কথা ভাবা যেতে পারে, কিন্তু শিল্প রুগ্ন হলে এর দায় মালিকের , সরকারের সেটা নিয়ে বেশি ভাবার দরকার নেই।

দুর্দান্ত এর ছবি

যেসব ফ্যাক্টরী সত্যি সত্যিই বন্ধ হয়ে গেছে তার ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকদের তালিকা করে তাদেরকে সাময়িক সাহায্য করার কথা ভাবা যেতে পারে, কিন্তু শিল্প রুগ্ন হলে এর দায় মালিকের , সরকারের সেটা নিয়ে বেশি ভাবার দরকার নেই।

চলুক

হাসিব এর ছবি

তবে দুঃখজনক ভাবে আমাদের দেশজ এবং কৃষিজাত পণ্যের, মানে চা, পাট, চামড়া জাতীয় পণ্যের রপ্তানি কমেছে।

এইটাতে দু:খ পাবার কি আছে বুঝলাম না । আমাদের এই বিশাল জনগোষ্ঠির চাহিদা মেটাতে কৃষি চামড়া এগুলো দিয়ে আর বেশিদুর এগোনো যাবে না । আমাদের উচিত এরকম একটা শিল্প স্থাপনার দিকে যাওয়া যেটা বিপুল জনসংখ্যাকে কাজ দেবে এবং সেটা দেশকে আয়ও এনে দেবে ।

নৈষাদ এর ছবি

কৃষি চামড়া এগুলো দিয়ে আর বেশিদুর এগোনো যাবে না এ ব্যাপারে কিছুটা সহমত আপনার সাথে, কিন্তু এটার জন্য পরিকল্পনার দরকার এবং এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কিছুটা সহমত বলছি একারনে যে জনসংখ্যার পরেই কৃষি আমাদের সম্ভাবনার একটা বড় খাত। আমি যে পরিসংখ্যানের কথা বলছি তা মাত্র এক বছরের, এবং এ জন্যই আমার দুঃখ। ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য।

হিমু এর ছবি

এক গার্মেন্টস ভাইয়া এখন উল্টো কথা বলছেন।

প্রথম আলোর আর্টিকেল থেকে উদ্ধৃত করছি।

তৈরি পোশাক মালিক সমিতির (বিজিএমইএ) আওতাভুক্ত সব পোশাক-শিল্প মালিককে শ্রমিকদের পাওনা বেতন-বোনাস শিগগিরই পরিশোধ করার আহ্বান জানিয়েছে।

বিজিএমইএ শ্রমিকদের বেতনকে প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে সহায়তা দাবির সঙ্গে যুক্ত করার বক্তব্য প্রসঙ্গে বলেছে, অভিব্যক্তি ও ভাষাগত ভুলের কারণে এ বিভ্রান্তি হয়েছে। এ জন্য তারা দুঃখ প্রকাশও করেছে।

সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন গতকাল সোমবার বিকেলে সাংবাদিকদের কাছে সমিতির এ মত তুলে ধরেন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনের সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী মাত্র চার দিনের সময় দিয়ে সরকারের কাছে তিন হাজার কোটি টাকার সহায়তা দাবি করেন। আর তা না পেলে আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগে সমিতিভুক্ত অনেক পোশাক কারখানাই শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দিতে পারবে না বলে বিজিএমইএর নেতারা সে সময় স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন। এই সংবাদ সম্মেলনের পর সরকারসহ সব মহলে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে।
চার দিনের মাথায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এর একটা ব্যাখ্যা দেন সাংবাদিকদের কাছে। গত রোববার রাতেও এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিজিএমইএ একটি ব্যাখ্যা সংবাদমাধ্যমে পাঠিয়েছিল।

শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন গতকাল বলেন, ‘আসলে মন্দায় আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে, মনের সেই কথাটি আমরা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হতাশায় আমাদের অভিব্যক্তি (এক্সপ্রেশন) বদলে গিয়েছিল এবং একই সঙ্গে ভাষাগত (ল্যাঙ্গুয়েজ) কিছু ভুলভ্রান্তি হয়েছে।’ তিনি বলেন, ভুল মানুষের হতেই পারে। মন্দার কারণে অনেকেরই ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত তাঁদের এক জরুরি সাধারণ সভায় মালিকদের পক্ষ থেকেও চাপ ছিল।

মহিউদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরা ফাঁদ (ব্ল্যাকমেইল) তৈরি করতে চাইনি। এ সরকার আমাদের সরকার, জনগণের সরকার। এ সরকারকে বিব্রত করার কোনো অভিপ্রায়ও আমাদের নেই।’

শিল্পমালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সভাপতি বলেন, ‘এখানে কোনো বিভ্রান্তির সুযোগ নেই। বেতন-বোনাসের দায়িত্ব আমাদের। প্রত্যেক উদ্যোক্তাকে আহ্বান জানাব, সবাই যেন সব শ্রমিককে বেতন-বোনাস পরিশোধ করে দেন।’ তিনি জানান, বেতন-বোনাস কারা দিতে পারবে না, সে ব্যাপারে একটা সমীক্ষা করা হচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যে এর প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। বেতন-বোনাস সবাই যাতে দিতে পারে, সে বিষয়েও সমিতি সহায়তা দেবে।"

ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আরও বলেন, গত ৩০ বছরে মালিক-শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এ শিল্প গড়ে উঠেছে। কয়েক মাস ধরে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে প্রবৃদ্ধি কমেছে। তাই এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য তাঁরা সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।