কয়েকটা দুর্দান্ত সিনেমা, কিছু আহা উহু!

নীড় সন্ধানী এর ছবি
লিখেছেন নীড় সন্ধানী (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৫/০৬/২০০৯ - ৩:৩৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অনেক বছর নিয়মিত ছবি দেখা হয় নি। সেদিন বেশ কয়েকটি ছবি দেখে ফেললাম। অসম্ভব ভাল কিছু ছবি। শুধু আহা উহু বর্ননা করে পোষাবে না এই ছবিগুলো। তবু সময়ের অভাবে তাই করে যেতে হলো।

ইরানী ছবিই বেশী ছিল তালিকায়। অনেক বছর প্রথম ইরানী ছবি দেখেও বুঝিনি ওরা এই লাইনে এতদুর এগিয়েছে। এতটা মনোযোগ দেইনি আগে। কিন্তু আব্বাস কিয়ারোস্তামির তিনটা ছবি দেখে আমি ইরানের চলচ্চিত্রকে নতুন করে আবিষ্কার করলাম। তারপর মজিদ মজিদীর আরো কয়েকটা দেখে মাথা খারাপ হবার যোগাড়। এইসব জীবনমুখী ছবির কাছে কোথায় হলিউড, কোথায় বলিউড?

ইচ্ছে করছিল বড় পর্দায় এসব ছবি দেখি। একটা প্রজেক্টর যোগাড় করতে পারনি। তাই বড় পর্দায় ছবি দেখতে না পারার আফসোস নিয়েই থাকতে হলো।

এরপর আফ্রিকার কয়েকটা দেখলাম, ল্যাটিন আমেরিকারও কয়টি। নেশার মধ্যে ছিলাম ছবিগুলো পর পর দেখার পর। ছবিগুলো নিয়ে বিস্তারিত লিখতে পারলে ভালো লাগতো। কিন্তু এখন হাতে সময় কম বলে ছবি প্রেমিকদের জন্য এক লাইনের একটা করে স্ন্যাপশট দেয়া হলো। যারা এখনো ছবিগুলো দেখেননি দেখে নিতে পারেনঃ

Baran - Majid Majidi,
আফগান শরনার্থী তরুনীর ভিন্নরকম সংগ্রাম ও অপরিণত রোমাঞ্চের গল্প। অসাধারন গল্প।

Children of Heaven - Majid Majidi
এক জোড়া জুতো হারানো নিয়ে দরিদ্র দুই ভাইবোনের ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ। মর্মান্তিক মায়ার ছবি।

The Color of Paradise- Majid Majidi,
এক অন্ধ বালকের অদেখা স্বর্গের গল্প। আমাদের প্রতিদিনের বেঁচে থাকার সৌন্দর্যটা কী অসাধারন তুলে এনেছে।

Taste of Cherry- Abbas Kiarostami
জীবন মৃত্যু নিয়ে একজন মানুষের অদ্ভুত আচরন ভাবনার দার্শনিক গল্প।

The Wind Will Carry Us- Abbas Kiarostami
মৃত্যু পথযাত্রী এক কুর্দী বয়োবৃদ্ধার সৎকারের উপর জীবন্ত ডকুমেন্টারি করতে দুই সাংবাদিকের ব্যর্থ প্রচেষ্টার রম্য উপস্থাপনা।

Close-Up - Abbas Kiarostami
সিনেমা বানানোর নামে জালিয়াতির অভিযোগে এক ভবঘুরের বিচার নিয়ে মজার গল্প।

City of God - Fernando Meirelles and Kátia Lund
ব্রাজিলের এই ছবিটা তৈরী হয়েছে ব্রাজিলের বস্তি থেকে শিশুদের কিভাবে মাফিয়া চক্রের সাথে জড়িয়ে ফেলা হয়। স্ল্যামডগ মিলিওনিয়ারে এই ছবির একটু ছায়াপাত আছে।

Midaq Alley - Jorge Fons
নগীব মাহফুজ সেই বিখ্যাত উপন্যাস নিয়ে মেক্সিকোর ইতিহাসের সর্বকালের সেরা এই ছবিটা তৈরী করা হয়েছে। ছবিটা আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে জীবন্ত একটা গল্প। সালমা হায়েকের অসাধারন অভিনয় যারা দেখেননি তাদের এই ছবি দেখা ফরজ। আমি এই ছবি দেখে সালমা হায়েকের পুরা পাংখা।

আরো অনেক বাকী রয়ে গেল। পরে দেব সময় করে। আপাততঃ এটুকুই আহা এটুকুই উহু!


মন্তব্য

সিরাত এর ছবি

'সিটি অফ গড' আমার সেরা পাঁচ ছবির একটা।

ইরানিয়ান ছবিগুলির বেশিরভাগই সংগ্রহে আছে। দেখতে হবে!

নীড় সন্ধানী এর ছবি

‍‌মিডাক এলি যোগাড় করে দেখেন। মিশরীয় উপন্যাসকে মেক্সিকান প্লটে কী অসাধারন দক্ষতার সাথে সেট করা হয়েছে, অবিশ্বাস্য! দেশকালোত্তীর্ন কিছু উপন্যাস, ছবি আছে না, এটা তারই অন্যতম একটা উদাহরন।

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

এর মাঝে ৫টা দেখেছি... আমি আহা উহুও করতে পারিনা... আমার আশেপাশের কেউ এগুলো দেখেনি... মন খারাপ

--------------------------------------------------
একটি কথার দ্বিধাথরথর চূড়ে ভর করেছিল সাতটি অমরাবতী...

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

‍‌এখানে নিশ্চিন্তে আহা উহু করেন। সমঝদার পাবেন। নিশ্চয়ই জেনে গেছেন এটাই আহা উহু করার উপযুক্ত জায়গা হাসি

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

আমিও সালমা হায়েকের পুরা পাঙ্খা।

হিমু এর ছবি

দ্য কালার অব প্যারাডাইজটা অসাধারণ।

আচ্ছা, কোন সহৃদয় ব্যক্তি কি ছবিগুলি নেটে তুলে দিতে পারেন না? আমি ইরানি সিনেমা খুব কম দেখেছি। কোথায় ক্যাম্নে তুলতে হবে জানতে চাইলে কুবুদ্ধি দিতে পারি।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

যুধিষ্ঠির এর ছবি

দ্যান দেখি কুবুদ্ধি। কখনো করিনি - চেষ্টা করে দেখি। আমার কাছে এগুলো আছে: Baran, Children of Heaven, The Color of Paradise, The Wind Will Carry Us, City of God, Midaq Alley.

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি "Children of Heaven" এবং "City of God" এই দুইটা ছবি দেখেছি। প্রথমটা দেখতে দেখতে আমি অনেকবার কেঁদেছিলাম। অসাধারণ একটা ছবি।
----------------
শিকড়ের টান

পরিবর্তনশীল এর ছবি

আমাকে প্রিয় সিনেমার নাম বলতে বললে- তারকোভস্কির 'নস্টালজিয়া' - সত্যজিতের 'জলসাঘর' এর পরেই 'দ্য উইন্ড উইল ক্যারি আস' এর নাম বলব। হাসি

মেক্সিকান ছবিটা দেখা হয়নি- কিন্তু কই পাই? মন খারাপ
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

শিক্ষানবিস এর ছবি

শেষের মেক্সিকানটা ছাড়া সবগুলোই দেখেছি। আব্বাস কিয়ারোস্তামি আমার প্রিয় ডিরেক্টরদের একজন। তার এই তিনটা সিনেমাই দেখেছি। কোনটার চেয়ে কোনটা কম না। কিয়ারোস্তামি চলচ্চিত্রে নতুন ভাষা তৈরী করেছেন, নতুন যুগের সূচনা ঘটিয়েছেন। আমার বিশ্বাস আজ থেকে ৫০ বছর পর পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী চলচ্চিত্রকার হবেন কিয়ারোস্তামি। যদিও তখন তিনি বেঁচে থাকবেন না। কিন্তু তার পথ অনুসরণ করে অনেক অনেক পরিচালকের জন্ম হবে।
কিয়ারোস্তামির একটা সাক্ষাৎকার পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। এখান থেকে চাইলে পড়তে পারেন:
http://brightlightsfilm.com/55/kiarostamitv.htm

সিরাত এর ছবি

ইরান যে সংস্কৃতিগতভাবে কত সমৃদ্ধ একটা দেশ!

আরিফ খান এর ছবি

"The Wind Will Carry Us" দেখে আমার মৃত্যু নিয়ে একটু অন্যরকম ভাবনা এসেছিল।কারো মৃত্যুর জন্য অন্য কারও নির্দোষ অপেক্ষা থাকতে পারে (শত্রুতা বা উত্তরাধিকারের লোভ নির্দোষ নয় ধরে) এটা আগে এভাবে মাথায় আসেনি।মনে হল একটা মানুষের (অর্থ বা আনন্দ বা যেকোন সুবিধা) উৎপাদন ক্ষমতা শেষ হলে পৃথিবী তার মৃত্যু কামনা করে,এটাই স্বাভাবিক।কোথাও মুখে,কোথাও সচেতন মনে,কোথাও অবচেতনে।

আশরাফ মাহমুদ এর ছবি

Children of Heaven, The Color of Paradise আর Close-Up দেখেছি। অসাধারণ লেগেছিল প্রথম দু'টি। অন্যগুলো দেখার আগ্রহ জন্মাল, ধন্যবাদ আপনাকে।

----------------------------------------
শুধু শরীরে জেগে থাকে শরীরঘর
মধ্যবর্তী চরকায় খেয়ালী রোদের হাড়

যুধিষ্ঠির এর ছবি

ভালো ছবি, সবগুলোই।

City Of God এ ভায়োলেন্স, এক্সপ্লয়টেশন বা দারিদ্রের তীব্রতাগুলো অনেক বেশি ভয়ংকর। স্ল্যামডগ মিলিওনিয়ারের ক্ষেত্রে নির্মাতার মূল মনযোগটা বোধহয় এসবদিকে ছিলো না।

সালমা হায়েককে আমি শরীর সর্বস্ব অভিনেত্রী মনে করে এসেছি সবসময়। তবে Midaq Alley আর Frida দেখে সে ধারণা পাল্টেছে।

অমি এর ছবি

আমি Children of Heaven মুভিটা দেখেছি...আমার দেখা সেরা মুভি...কিসের হলিউড, বলিউড? এর(Children of Heaven) কাছে কোন খাওয়া নাই ওইগুলার। তারা কোত্থেকে কাহিনীগুলো পায়? কাহিনীগুলা একদম হৃদয় ছুয়ে যায়...আমি ইরানি মুভির পাগলা ভক্ত...নাম গুলা দিয়া খুবি উপকার হইছে...সবগুলান দেখুম ই দেখুম...
থ্যাঙ্কু থ্যাঙ্কু থ্যাঙ্কু সন্ধানি ভাই...থ্যাঙ্কু

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

মিডাক এলি ছাড়া বাকী সবগুলোই দেখা। মিডাকটাও দেখবো দেখবো করে সময় বের করতে পারছি না। ভালো কথা মনে করাইছেন... এইটা দেখে ফেলতে হবে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

দ্রোহী এর ছবি

খোমেনীর আগের ইরান আর পরের ইরানে কতো ফারাক!!!!!!!!!!!!!!!

শিক্ষানবিস এর ছবি

দ্রোহী ভাই,
ইসলামী বিপ্লবের সাথে ইরানী সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কিন্তু কোন সম্পর্ক নেই। ইরানে কবিতা বিপ্লব হয়েছে ১৯৩০-৪০ এর দশকে, তখন থেকেই চলছে। আর সিনেমা বিপ্লবও ১৯৬০ এর দশকে শুরু হয়েছে। ইসলামী বিপ্লবের কারণে প্রকৃতপক্ষে ইরানের বিশাল সাংস্কৃতিক ক্ষতি হয়েছে। কারণ সংস্কৃতিমনা অনেকেই তখন দেশ ছেড়ে চলে গেছে। কিয়ারোস্তামির মত কয়েকজনই কেবল রয়ে গেছে।
আর কিয়ারোস্তামির সিনেমাও কিন্তু ইরানে banned. গত ১৫ বছরে কিয়ারোস্তামির কোন সিনেমা ইরানে দেখানো হয়নি। বৈদেশিক রিলিজ আর ফিল্ম ফেস্টিভালই তার ভরসা।

দ্রোহী এর ছবি

আমি সেইটাই কইলাম। ১৯৭৯ এর আগের ইরান আর পরের ইরানে কত ফারাক! শিল্প-সংষ্কৃতির চরম উৎকর্ষ থেকে কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে আজকের ইরান।

তানবীরা এর ছবি

পছন্দের পোষ্টে এ্যাড করে রাখলাম, সামারে দেখবই আশাকরছি
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।