একটি রাজনৈতিক উৎপাতের অবসান

নীড় সন্ধানী এর ছবি
লিখেছেন নীড় সন্ধানী (তারিখ: রবি, ১৪/০৭/২০১৯ - ১০:১০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.
এসএসসি পাশ করে কলেজে ভর্তি হতে গিয়েছিলাম ১৯৮৪ সালে। সরকারী সিটি কলেজ চট্টগ্রাম। সরকার বিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্র হিসেবে পুলিশের খাতায় এই কলেজের খুব বদনাম তখন। বদনাম হবার কারণ এখানে এসে কখনো আন্দোলন দমন করার সুযোগ পেতো না পুলিশ। ঢিল পাটকেল খেয়ে ভাগতে হতো। জাতীয় ছাত্রলীগের শক্ত ঘাঁটি ছিল। তখনো রাজনীতি বুঝি না। কিন্তু এরশাদ কী জিনিস তা ক্লাস টেনে উঠেই বুঝে গিয়েছিলাম যখন ছাত্রদের মিছিলে ট্রাক তুলে দেয়া হয়েছিল ঢাকায়। বাসা থেকে বেরুবার আগে মাকে বলে এসেছি আজকে ভর্তি শুধু। ক্লাস নেই। টাকাটা জমা করেই চলে আসবো এগারোটার মধ্যে।

কলেজে গিয়ে ভর্তির টাকা দেবার কাউন্টারে লাইন ধরলাম। সেদিন শেষদিন ছিল। অল্প কয়েকজন বাকী ছিল বলে ভিড় নেই বেশী। বিশ ত্রিশ জনের মতো আমরা। একজন একজন শেষ হচ্ছে। আমার পালা আসার আগেই বাইরে শুনি মিছিলের শব্দ। এই কলেজে মিছিল মিটিং নিয়মিত বিষয়, তাই গা করলাম না। মিছিল চলে গেল শ্লোগান দিতে দিতে। মিছিলের শব্দ ক্ষীণ হয়ে যাবার পর আমার ভর্তির কাজও শেষ। সাথে যে কয়েক বন্ধু ছিল, তাদের কাজ শেষ হতে আমরা দোতলা থেকে নীচে নামার জন্য করিডোরের দিকে গিয়েছি অমনি বাইরে বাঁশির শব্দ, হৈ হুল্লোড়। একটা ছোটাছুটি পড়ে গেল সমস্ত কলেজে। ধর ধর পালাও পালাও টাইপ অবস্থা।

শোনা গেল কলেজে পুলিশ ঢুকেছে। আমরা যে সিড়িতে নামবো সেদিকে ভারী বুটের শব্দ। আমরা পিছু হটে করিডোরে চলে এলাম। তখনো ভয় পাচ্ছি না। পুলিশ আমাদের তো কিছু করবে না। আমরা কিছু করিনি। আমরা কজন নিরীহ বালক মাত্র। তখনো গোঁফ ওঠেনি ঠিকমত। কিন্তু পুলিশ উপরে উঠেই হুংকার দিল। পালাবার চেষ্টা করলে গুলি করা হবে। রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের অপরাধে গ্রেফতার করা হলো তোমাদের। আমরা হতবাক। বেতন দিতে এসে রাষ্ট্রবিরোধী হয়ে পড়লাম? কোনটা রাষ্ট্রবিরোধী কাজ আমাদের মাথায় এলো না। কিন্তু ততদিনে জেনে গেছি এটা এরশাদের রাজত্ব এখানে যে কোন কিছুই সম্ভব। কলেজের প্রিন্সিপ্যাল বেরিয়ে এলেন। আমরা তাঁকে অনুরোধ করলাম, পুলিশকে বুঝিয়ে বলতে আমরা নিরপরাধ। ভর্তি হতে এসেছি মাত্র। অন্য কিছু করি নাই এখানে। কিন্তু এরশাদের বন্য সামরিক আইনের কাছে প্রিন্সিপ্যালও অসহায়। গুনে গুনে ৩৫জন হলো মোট। সবাই গ্রেফতার। ওয়াকিটকিতে উপরের কোন স্যারের কাছে জানাচ্ছে পুলিশ অফিসার। সিটি কলেজের ভেতর থেকে ৩৫জন দেশদ্রোহী, সন্ত্রাসী রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেফতার করেছি। এক্ষুণি নিয়ে আসছি থানায়।

কলেজের ভেতর ছোট্ট একটা প্রিজনভ্যান। আগে কখনো দেখিনি এমন গাড়ি। জানালা দরজাবিহিন একটা মিনিট্রাকের আকৃতির গাড়ি। ভেতরে বড়জোর পনের বিশজনের জায়গা হবে। সেখানে পয়ত্রিশজনকে ঠেসে ঢুকিয়ে দেয়া হলো। কে কার গায়ের উপর পড়ে চ্যাপটা হচ্ছে তার কোন হিসেব নেই। ভেতরে তন্দুরীর গরম, অন্ধকার। আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে বুঝতে পারছি না। একবার শুনলাম ডবলমুরিং যাচ্ছে। আবার শুনলাম অন্য থানা। যাত্রা যেন ফুরোচ্ছে না। কতদূর গিয়ে গাড়িটা আবার ফিরে আসছে মনে হলো। চলতে চলতে এক সময় থামলো। দরোজা খুলতে দেখলাম একতলা পুরোনো একটা দালান। কোতোয়ালী থানা। সিটি কলেজ থেকে মাত্র আধমাইল। কিন্তু এত অল্প জায়গা আসতে এতটা পথ কেন ঘুরলো বুঝতে পারলাম না।

থানার ভেতরে নিয়ে সবাইকে গারদের ভেতর ঢুকানো হলো। জঘন্য একটা জায়গা। জীবনে প্রথম থানা জিনিসটা দেখলাম। থানার ভেতরে কয়েদী রাখার জায়গাটি নরকতূল্য। ঘরের এক কোনে বাথরুমের জন্য কেবল কয়েকখানা ইট দিয়ে চিহ্নিত করা একটা জায়গা। বিকট গন্ধ আসছে। মাথার সমান উঁচুতে একটা ছোট জানালা। সেদিকে একটা টিলামতন জায়গা। সেখান থেকে অল্প আলো আসছে। গরমে দমবন্ধ অবস্থা।

প্রথমে চিন্তা আসলো বাসায় একটা খবর দেয়া দরকার। কিন্তু সে কথা বলতে গেলেই থানার পুলিশ সদস্যরা হুংকার দিয়ে থামিয়ে দেয়। মাঝে মাঝে অকথ্য গালি ছুটে আসছিল। কয়েকটা ছেলে একটু বেয়াড়া ছিল, ভেতর থেকেই পুলিশকে ঠোলা বলে পাল্টা গালি দিচ্ছিল। আমার সাইজের কয়েকটা নিরীহ ছেলে কাঁদতে শুরু করেছে। সে কান্না আমাকেও টলিয়ে দিয়েছে। জীবনে কখনো কলোনীর বাইরে যাইনি। কলেজে পড়তে এসে কী বিপদে পড়ে গেলাম। ডিউটিরত পুলিশরা হুমকি দিচ্ছে কালকেই কোর্টে চালান করে দেবে। তারপর সামরিক আইনের সাজা। কমপক্ষে নাকি তিন মাস। আরো বেশীও হতে পারে। এটা শুনে শোকের ছায়া পড়ে গেল হাজতখানা জুড়ে।

তবে আমাদের মধ্যে কেউ একজন দয়ালু এক পুলিশ কনেস্টেবলকে ম্যানেজ করে ফেললো। সে টাকার বিনিময়ে আমাদের খবর টেলিফোন মারফত পৌছাতে পারে পরিবারের কাছে। সবার বাসায় টেলিফোন নেই। তবু যার যার আত্মীয় স্বজনের ফোন আছে তারা পকেটের দশ বিশ টাকা যা আছে তাই দিয়ে দিল পুলিশটাকে। ওসির অগোচরে অনেকটা চুরি করে খবর পৌঁছানো।

আমিও দশ টাকা খরচ করে খবর পৌঁছালাম আমার এক আত্মীয়ের নাম্বারে। কিন্তু তারপর শোনা গেল আরেক মুশকিলের কথা। আমাদের ছাড়ানোর জন্য থানায় কেউ আসলে তাকেও নাকি আটক করা হবে। মগের মুল্লুক নাকি। এখনকার বাস্তবতায় ব্যাপারটা বোঝানো মুশকিল হবে। কিন্তু সেই সময়ে এরশাদ সারাদেশে এমন আতংক ছড়িয়েছিল যে সামান্য ব্যাপারেও যাকে তাকে ধরে নিয়ে যেতো রাস্তা থেকে। মাঝে মাঝে এমন হয়েছে পুলিশের গাড়ি রাস্তায় দাঁড়ানো। পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে কোন তরুণ, দুম করে টেনে তুলে ফেললো কোন কথাবার্তা ছাড়া। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল যে প্যান্ট পরা তরুণ দেখলেই আটক হবার সম্ভাবনা ছিল। ভয়ানক এক পুলিশী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশ।

সেদিন আমাদের ছাড়া পাওয়ার কোন সম্ভাবনাই ছিল না। যদি না আমাদের মধ্যে গ্রেফতারকৃত এক বিশিষ্ট বন্ধু না থাকতো। সেই বন্ধুর বাবা ছিল উর্ধতন সামরিক কর্মকর্তা। খবর পেয়ে যখন তিনি থানায় উপস্থিত হলেন তখন বিকেল হয়ে গেছে। ওই বন্ধু বাবাকে বোঝালো সমস্ত ব্যাপারটা। তিনি আরো উপরে ফোনটোন করে ডিসি এসপি সবাইকে হাজির করলেন। তারা বৈঠক করলো। সবাই বুঝলো নিরীহ ছেলেপেলেকে ধরে আনা হয়েছে। কিন্তু এভাবে ছেড়ে দিলে থানা পুলিশের ইজ্জত থাকে না। এত হম্বিতম্বির মূল্য থাকে না। তাই পুলিশ কায়দা করে দুই ভাগে বিভক্ত করলো বন্দীদের। ডিসি এসপিরা সভা করে সিদ্ধান্ত নিল এক ভাগ আজ রাতে মুক্তি পাবে। অন্য ভাগ সামরিক বিধি মোতাবেক সাজা পাবে। লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে একজন একজন করে বাছাই করা হলো কে কোন দলে পড়বে। নেহাত কপালগুনে আমি মুক্তির ভাগে পড়েছিলাম। আমার কয়েক বন্ধুকে কয়েক মাস জেল খেটে বেরুতে হয়েছিল। সেই প্রথম আমার এরশাদকে চেনা হয়েছিল। এরপর এরশাদকে আরো বহুবার চিনেছি নানান রূপে।

২.
আমাদেরকে সেবার মুক্তি দেয়া হলেও মুচলেকা নেয়া হয়েছিল। আমাদের নাম ঠিকানা সব থানার খাতায় তুলে বলা হয়েছিল যদি কখনো সিটি কলেজে গণ্ডগোল বাঁধে, তোমাদেরকে আবারো ধরে নিয়ে আসা হবে। পুলিশকে না জানিয়ে তোমরা শহর ত্যাগ করতে পারবা না। বাসায় এসে এই খবর বলার পর পরিবার আতংকিত হয়ে আমাকে সুদূর একটি গ্রামে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল কিছুদিনের জন্য। অন্য বন্ধুরাও সরে পড়েছিল শহর থেকে।

কয়েক বছর পর একবার ঘোষণা হলো এরশাদ চট্টগ্রামে আসছে। এখানকার একজন পীরের সাথে সাক্ষাত করবে এবং তার আস্তানায় একটা মসজিদে নামাজ পড়বে। তখন এরশাদ প্রায়ই নানান মসজিদ স্বপ্নে দেখতো বিষুদবার, শুক্রবার সেই মসজিদে নামাজ পড়তে চলে যেতো। যদিও স্বপ্নে দেখার এক সপ্তাহ আগ থেকে সিকিউরিটির কাজ শুরু হয়ে যেতো। কাকতালীয়ভাবে সেদিন আমার এক চাচা আমাকে ধরে নিয়ে গেল ওই মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য, চাচা ওই পীরের ভক্ত। গিয়ে দেখলাম মসজিদের মাঠে নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মুরীদদের প্রচণ্ড ভিড় মাঠে। এরশাদ তখনো এসে পৌঁছায়নি। গরমে বসে থাকতে পারছি না। অস্থির লাগছিল খুব। হঠাৎ শোনা গেল এরশাদ এসে পৌঁছেছে। সবাই উৎসুক হয়ে তাকাচ্ছে কোনটা এরশাদ। আমি দূর থেকে দেখলাম পাজামা পাঞ্জাবী পরা লাল চেহারার এরশাদকে। জনতার ভিড় ঠেলে এগিয়ে আসছে। পীরের মুরিদের ভিড় এত বেশী যে সে প্রেসিডেন্ট হয়েও ঠিক জায়গা পাচ্ছে না। তার সাঙ্গাপাঙ্গরা ঠেলে ঠেলে এগোচ্ছে। কপালগুনে কিংবা দোষে এরশাদ ভিড় ঠেলে এগোতে এগোতে ঠিক আমার পাশে চলে এলো। হুজুরের মেলায় কোন সিকিউরিটির বালাই নাই। এমনটা কখনো ভাবিনি ব্যাটাকে এত কাছ থেকে পাবো। পাশ দিয়ে যাবার সময় আমি এরশাদের কোমরে কনুই মেরে দিলাম। এরশাদ হয়তো ভাবলো ভিড়ের ধাক্কা, অথবা সময় কম বলে কুছ পরোয়া না করে এগিয়ে গেল পীর সাহেবের দিকে। তার চোখ তখন পীরের পাশের চেয়ারে। ওটায় বসার পর পীরের সাথে মোলাকাত করলে এই মুরীদেরা সব তারে ভোট দেবে। আমার সঙ্গী চাচা ফিসফিস করে বললো, কি রে এরশাদরে গুতা মেরে দিলি? আমি চাচাকে বললাম, এরশাদই তো আমার কনুইরে গুতা দিল। মনে মনে বললাম, যাক হারামজাদারে জীবনে একটা গুতো হলেও দিতে পারছি। সেই আমার এরশাদ ছোঁয়া।

৩.
প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে মোহাম্মদ রফিক লিখেছিলেন 'সব শালা কবি হবে'। এই কবিতা লেখার অপরাধে মোহাম্মদ রফিককে সাভার ক্যাণ্টনমেন্টে ডেকে হুমকি ধমকি দেয়া হয়েছিল। এরশাদ কবি হতে চাইতো। কবিদের রীতিমত বেচাকেনা করতো। কবিতা উৎসব করে বাংলাদেশের কবিকূলকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছিল। সুযোগ সুবিধা পেয়ে এরশাদের দলে ভিড়েছিল সৈয়দ আলী আহসান, আল-মাহমুদের মতো প্রথম সারির কবিরা। এরশাদের পক্ষে যোগ দেয়া সেই দালাল কবিরা আর কখনোই মানুষের সুনজরে আসেনি। কিন্তু সংবাদপত্রকে সেভাবে কব্জা করতে পারেনি। সেই সময় অধিকাংশ পত্রিকাই এরশাদের উপর বিরক্ত ছিল। কিন্তু সেটা প্রকাশ করা বিপদজনক ছিল। সংবাদপত্রের প্রতি এরশাদের আচরণ কেমন ছিল তার একটা উদাহরণ দেয়া যাক।

এই মুহুর্তে মনে পড়লো এরশাদের একটি সংবাদ কাটিং এর কথা। এই কাটিং মানে আক্ষরিক 'কাটিং'। এরশাদের যদি কোন সংবাদপত্রের অংশবিশেষ পছন্দ না হতো, সেটা সোজা কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলে দিয়ে বাজারে আনতে হতো। সম্ভবত ৮৮-৮৯ সালের কথা। সাপ্তাহিক 'খবরের কাগজ' পত্রিকাটি হাতে আসার পর দেখলাম প্রচ্ছদে চারকোনা একটা ফুটো। হকারের কাছে জানতে চাইলে সে বললো এভাবেই আসছে ঢাকা থেকে। পরদিন খোঁজ নিয়ে জানলাম প্রচ্ছদের উপর একটা কবিতার চারটি লাইন ছাপা হয়েছিল যা এরশাদের পছন্দ হয়নি। তাই পত্রিকাটি বাজারে ছাড়ার আগে প্রচ্ছদের তিন ইঞ্চি বাই চার ইঞ্চি অংশ কেটে রেখে দেয়া হয়েছিল। কবিতাংশটি ছিল জীবনানন্দ দাশের-

"অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ,
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা;
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই - প্রীতি নেই - করুণার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।"

বলাবাহুল্য, সেই থেকে জীবনানন্দ দাশ আমার আরো প্রিয় কবি হয়ে উঠেছিলেন।

৪.
এরশাদ ছিল বাংলাদেশের রাজনীতিতে জ্বলজ্যান্ত একটা উৎপাতের নাম। আমাদের দুর্ভাগ্য যে এই চামার কোন শাস্তি পাওয়ার বদলে দাবার মূল্যবান গুটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে বহুবছর ধরে। প্রতিটা নির্বাচন এলে এরশাদের তামাশাগুলো দেখতাম আর ভাবতাম, এই শকুনটা এবারও আছে। প্রতি ঘন্টায় নতুন নাটকের জন্ম দেবে এইবারও। দীর্ঘ জীবন বেঁচে থাকতে থাকতে এরশাদ আমাকে ক্লান্ত করেছে। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষকে ক্লান্ত বিরক্ত করে তারপর মরেছে এরশাদ।


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

এমন আরো স্মৃতিচারণ মন্তব্যের পাতায় যোগ হওয়া দরকার।

ধন্যবাদ।

ওডিন এর ছবি

নব্বই সালের নভেম্বর। তারিখ খেয়াল নাই৷ ধানমন্ডি বয়েজ এ ফোর এ পড়ি। তীব্র গণ আন্দোলন তীব্রতর হচ্ছে। এই সবের মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষা একরকম জোর করে নেয়া হচ্ছে। একদিন পরীক্ষার মাঝেই স্কুলের সামনে পুলিসের গুলি আর টিয়ার শেল শুরু হলো। সাতাশ নাম্বার মানিক মিয়া এভিনিউ পুরো রণক্ষেত্র৷ সারেরা সবাই আমাদের বেঞ্চের নিচে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। বড় ক্লাশের সাহসী পোলাপান এর মধ্যেই হারেরেরে করে বাইরের বারান্দায় মারামারি দেখতে চলে গেছে। একটু পরে স্কুলের মধ্যে টিয়ার গ্যাসের কয়েকটা শেল এসে পড়লো। তখন তারাও দৌড়ে ভেতরে। সার ম্যাডামদের চিল্লাচিল্লি আরও বেশি। পুলাপান যাদের বাপ মা স্কুলে বসে ছিলো তাদের সাথে আমরাও বিকেল পর্যন্ত স্কুলে আটকা পড়ে থাকলাম। বিকেলের শেষে বাবা এসে কেমনে জানি আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলেন৷ বাসায় যে অবস্থা হয়ে গেছিলো, ফেরার পর মোটামুটিভাবে বীরের স্বাগতম পেলাম।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

এই ঘটনা নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে হবার সম্ভাবনা। ওই সময়ে সারা দেশ অচল হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। আমার এখনো মনে আছে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের পরদিন থেকে হাওয়া উল্টো দিকে বইতে শুরু করেছিল।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অবনীল এর ছবি

নব্বই-এর স্মৃতি। কি একটা জিনিসের খোজে গিয়েছিলাম চট্টগ্রাম নিউমার্কেটের কাছে তামাকুমুন্ডি লেনে। জনাকীর্ণ রাজপথ। শয়ে শয়ে মানুষ কিন্তু কারো মুখে কোন শব্দ নেই। ধনুকে ভরা তীরের মত টান টান এক চাপা উত্তেজনা। হঠাৎ কোথা থেকে যেন ব্ল্যাঙ্ক ফায়ারের শব্দ। দ্রুত হাটা শুরু করলো সবাই। দ্রুত হাটা একটু বাদেই পরিনত হলো দৌড়ে। সেই দৌড়ে সামিল হলাম আমিও। জুবিলী রোড ধরে কিছুদূর দ্রুত এগিয়ে ভাগ্যের জোরে এক খালি রিক্সা পেয়ে প্রস্থান ।

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

নীড় সন্ধানী এর ছবি

ওই সময়ে তামাকুমডি লেন এলাকা তো আগুন হয়ে থাকতো। তামাকুমডির মাথায় দারুল ফজল মার্কেটে ছিল আওয়ামী লীগের অফিস। সেখান থেকে নিউমার্কেট পুরাটাই জনতার দখলে। পুলিশ ওখানে কোনকালে সুবিধা করতে পারতো না। সারাক্ষণ ধর ধর অবস্থা চলতো ওদিকে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অদিতি কবির খেয়া  এর ছবি

১) ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বাসায় থাকি তখন। সকাল থেকে মুহুর্মুহু স্লোগান শুনছি- মজিদ খানের শিক্ষানীতি মানি না, মানব না! ছাদে উঠে দেখি শামসুন্নাহার হল আর টিএসসির মাঝখানের রাস্তায় কিছু দেখা যায় না কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায়। আম্মা অফিস থেকে চলে এল। খবর পেলাম ৫ জন মারা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ভবনের কাঁচ নাকি অবশিষ্ট নেই! বড়খালার ছেলে রাহুল ভাইয়া বের হল মজা দেখার জন্য, তাকে খুঁজতে গেল সুমন ভাইয়া। রাহুল ভাইয়া ফিরে এলেও সুমন ভাইয়ার দেখা নেই। কি দুশ্চিন্তা সবার। সুমন ভাইয়া অবশ্য শেষ বিকালে ফিরে এসেছিল।

২) আজকের আওয়ামী এমপি আসাদুজ্জামান নূর একবার এরশাদের কাছে গেছিল, সাথে আরও কে কে যেন। মিজান নামে একজন উদীয়মান অভিনেতা ছিল, সে ছিল নাগরিকের সদস্য। এই যাওয়া নিয়ে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় সে মিটিংয়ে জানায় যে, নূর তাদের অনেক পুরোনো সদস্য তাই তাকে বের করে দেয়া যাবে না। বের করে দেয়া হল মিজানকে। তো মিজান তো গেছিল নূরদেরই সাথে, কিন্তু বলির পাঁঠা সেই হল। সাধে বলে- মূর্খরাই কামানের খাদ্য হয়, সেনাপতি থাকে ঠাণ্ডাঘরে।

৩) ১৯৮২-র ঢাবি ব্যাচ ছিল সবচাইতে ভুক্তভোগী। এরশাদ ছাত্রদের আন্দোলনের সাথে টিঁকতে না পেরে ১৯৮৩ সালে জোর করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি দেয়। সেসময় পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে ঢাবি বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে এই ব্যাচের অসম্ভব সমস্যা হয়েছিল উচ্চ শিক্ষা ও চাকরী জীবনে, এই বিশাল সেশন জটের কারণে। ১৯৯০-এ যখন আন্দোলন তীব্র, এরশাদ বিশ্ববিদ্যালয় যখন খুশি তখন বন্ধ করে দেবার এক অধ্যাদেশ জারী করে। ক্ষমতায় থেকে যাবার সেইটাও একটা ছল। শিক্ষক ও ছাত্ররা সেই আদেশকে নস্যাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা রাখে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান শাহাবুদ্দিন আহমেদ (আমার অসম্ভব শ্রদ্ধার মানুষ) এসে প্রথমেই সেই অধ্যাদেশ বাতিল করেন।

৪) ১৯৮৫ সালের হাঁ/না ভোট। স্বাধীন বাংলাদেশে ভোট চুরি কি জিনিষ সেই তখন আমরা প্রত্যাক্ষ করি। আমার ১৬ ও ১৪ বছরের অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই ভাই রায়েরবাজার হাইস্কুলে বন্ধুদের সাথে গিয়ে ভোট দিয়ে আসে। সমস্ত রাস্তা জুড়ে পড়ে থাকতে দেখেছি ভোটের ব্যালট।

৫) এরশাদ সৌদি আরবের সাথে বেশ অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। সে জন্য একবার আদেশ করা হয় বিমানবন্দর থেকে কাওরান বাজার পর্যন্ত সমস্ত রাস্তার পাশে যাদের বাড়ি আছে, তারা যেন মিনারের মত একটা ডিজাইন করেন তাদের দেয়ালে। সমস্ত দৈনিকের প্রথম পাতায় সেই দেয়ালের মাপ, নকশার মাপ, রঙ সবকিছুর বলে দেয়া হয়!

৬) এরশাদের শখ ছিল কবি হবে, সেজন্য রাষ্ট্রের পয়সায় কবিতা উৎসব করে। সে উৎসবে ভারত থেকে এসেছিল সুভাষ মুখোপাধ্যায়। বাংলাদেশ থেকে কয়েকজন তরুণ কবিকে মানা করেছিল আসতে, কিন্তু কবি গ্রাহ্য করেনি।

৭) ১৯৮২-১৯৮৩ সালে এরশাদ সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা ছিল আবদুল মাল মুহিত। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রস্তাবিত পতাকা প্রথম উত্তোলন করেছিল আ স ম আব্দুর রব। জাসদের এই নেতা পরে এরশাদের প্রহসনের সংসদে গৃহপালিত বিরোধী দলের নেতা হন।

৮) টিএসসি’তে পুলিশ নাট্যকর্মীদের আক্রমণ করে ১৯৮৮ সালের দিকে। মঞ্চনাটক কর্মীদের উপরে এরশাদের অনেক ক্রোধ ছিল। মহারাজার গুণকেত্তন, ক্ষ্যাপা পাগলার প্যাচাল, ঈঙ্গিতসহ মঞ্চ ও পথ নাটকে এরশাদশাহীকে বারবার চাবুক পেটা করা হয়। এরশাদের নামের সাথে লেজে হোমো অভিধাটিও কিন্তু শহীদ মিনারে মঞ্চস্থ একটা পথনাটক থেকে এসেছে।

৯) রওশন এরশাদ ‘মা’ হবার পরে ‘নিপুণ’ পত্রিকায় (পত্রিকার শুরুতে লেখা থাকত- একটি আনন্দপত্র প্রকাশনা। আনন্দপত্রের মালিক মোস্তফা জব্বার। ১৯৮৭ সালে আনন্দপত্র প্রকাশনার অনুষ্ঠানে এরশাদের তথ্যমন্ত্রী আনোয়ার জাহিদ ওরফে ঝাড়ুদার) একটা প্রতিবেদন ছাপা হয়, সেখানে লেখা ছিল ভাস্কর শামীম সিকদার রওশনকে ‘ভাবী’ বলে সম্বোধন করছে।

১০) ১৯৮৬ সালে এরশাদের একটা প্রহসনের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নেয় সবাইকে হতবাক করে। অংশ নেবার যুক্তি হিসেবে শেখ হাসিনা বলে- এরশাদ যেন ফাঁকা মাঠে গোল দিতে না পারে, তাই নির্বাচন করছি।

আরও অনেক অনেক কথা বলা যায়। বাংলাদেশে পলিটিকাল প্রস্টিটিউট অনেক আছে, কিন্তু পলিটিকাল বাস্টার্ড একজনই- এরশাদ।

হিমু এর ছবি

এই মজিদ খান লোকটা কে কেন কীভাবে? সে এখন কই?

অদিতি কবির খেয়া  এর ছবি

এরশাদের শিক্ষামন্ত্রী ছিল ডঃ মজিদ খান ১৯৮২-১৯৮৩ সালে। এখন কোথায় জানিনা।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

মূল্যবান সংযোজনটির জন্য অনেক ধন্যবাদ খেয়াদি। আমাদের জেলিফিশ মেমোরি থেকে অনেক কথা মুছে গিয়েছিল, সেগুলো অনেকের মনে পড়তে পারে এই পয়েন্টগুলো পড়ে। প্রকাশ্যে এরশাদ বিরোধীতা করে গোপনে তার কাছ থেকে সুবিধা নেয়া সুশীলদের তালিকা করতে গেলে ঠগ বাছতে গা উজাড় হবে।

আমার কয়েকজন ফেসবুকাত্মীয়কে আজকে বাধ্য হয়ে ব্লক করতে হলো স্থায়ীভাবে, তারা এরশাদের ইসলাম প্রেমের জন্য কান্নাকাটি করতেছিল। সম্ভব হইলে তাদেরকে বিদিশার 'শত্রুর সাথে বসবাস' পুস্তকটা উপহার দিতাম, যেখানে অনেক ঘটনার সাক্ষী আছে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

হিমু এর ছবি

এরশাদের অকাল্টমৃত্যু (চিন্তা করে দেখলাম, অকালমৃত্যু মানে লাগসই সময়ের আগে মৃত্যু বোঝায়; কিন্তু লাগসই সময় বহু আগে পার করে মরলে সেটাকে আর কীই বা বলা যায়?) উপলক্ষ্যে ফেসবুকে বেশ কিছু লোককে দেখলাম শোককে শক্তিতে পরিণত করে একে ওকে ধমকাতে। ব্যাটম্যানের কথাটা একটু ঘুরিয়ে বললেও খাটে,

You either die a villain, or you live long enough to see yourself become the adored stand-up comedian.

হিমু এর ছবি

আরেকটু ভালো বিকল্প খুঁজে পেলাম ফেসবুকে:

অতিথি লেখক এর ছবি

৮) 'লেজে হোমো' অভিধাটি দেবার কৃতিত্ব রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। তাঁরা '৮৩/'৮৪ সালের দিকে একটি নাটক মঞ্চস্থ করেছিলেন যেখানে 'টিভি'র উপস্থাপিকা' অনুষ্ঠান ঘোষণায় বলেছিলেন, "এখন জাতির উদ্দেশ্য ভাষণ দেবেন লে জে হো মো এরশাদ"।

অতিথি লেখক এর ছবি

এই লেখাটা শুরু করার জন্য ধন্যবাদ বস্‌! আমিও লিখবো। আলাদা ভাবে লিখবো। সময় নিয়ে লিখবো। এরশাদের প্রকৃত ইতিহাস লেখা গেলে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ-আমলা-কবি-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবি-বিপ্লবী-শিল্পী-মহান ব্যক্তিত্ব অনেকেরই পাছার কাপড় থাকবে না। এরশাদের উচিত ছিল এদের নামধামকীর্তি লিখে যাওয়া। গত ২৯ বছর ধরে যারা দুধকলা দিয়ে এরশাদকে পুষে গেছে ইতিহাস একদিন তাদের বিচার করবে। আর আমাদের আফসোস এরশাদ অলমোস্ট বিনা বিচারে হাসপাতালের বেডে শুয়ে মরার সৌভাগ্য পেলো।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আমি তো স্বল্প পরিসরে হালকা স্মৃতিচারণ করলাম একটু। কিন্তু এরশাদকে নিয়ে সিরিয়াস তথ্য পূর্ণ লেখা আসা দরকার সচলায়তনে। এই প্রজন্মের অনেকে জানে না, সে কী জিনিস ছিল। আপনার পোস্টের অপেক্ষায় থাকলাম।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

তাসনীম এর ছবি

এরশাদের আমলে আমি তিনবার পুলিশের হাতে ধরা পড়তে গিয়েও বেঁচে গেছি। প্রথম বার খেলে ফিরছিলাম, ক্লাস নাইনে বা টেনে পড়ি। পায়ে ধুলা লেগে ছিল। ওইদিন হরতাল চলছিল। নতুন বাংলা ছাত্রসমাজের মাস্তানরা ধরল, হরতালের পিকেটার হিসাবে। পায়ের ধূলা আর ঘর্মাক্ত চেহারা প্রমান। মাস্তান আর পুলিশ মোটামুটি একই সাথে কাজ করছিল। স্থানীয় কিছু মুরুব্বী চিনতেন, তারাই ছাড়িয়ে আনলেন। থানায় যেতে হয় নাই।

১৯৮৭ সালের নভেম্বর মাসের ৭/৮ তারিখে ধানমন্ডি থানাতে যেতে হয়েছিল। ঢাকা কলেজের আইডি কার্ড হারিয়েছিল - জিডি করতে হবে। সচিবালয় অবরোধের জাস্ট আগে আগে, দুই বা তিন দিন পরে ১০ ই নভেম্বর নূর হোসেন শহীদ হলেন। ধানমন্ডি থানার ওসি কুখ্যাত আখলাক, যে কিনা তিন দিন পরে শেখ হাসিনাকে এরেস্ট করে। থানাতে গিয়ে বুঝলাম ভুল হয়েছে, সাথে আরও দুই বন্ধু ছিল। আন্দোলনের আগে টেন্সড কন্ডিশন - কাজ দেখানোর জন্য র‍্যান্ডমলি লোকজন ধরছে। এক চামচা টাইপের লোক আমাদেরকে লক আপে ঢুকানোর কথা বলল। এমনই তোঘলকি দেশ। সেইবারও ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল।

এর কিছুদিন পরে ফার্মগেটে হঠাৎ করে ছাত্রজনতার উপর পুলিশ হামলা করে। আন্দোলনের রেশ চলছিল। আমরা দুই বন্ধু ধাওয়া খেয়ে দৌড় দিয়ে একটা বাসাতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। বাসার পেছনের এক চিলতে একটা বাগানে। হঠাৎ সেখানেও পুলিশ হাজির। আমি আর আমার বন্ধু পাঁচিল টপকে পেছনের গলিতে - শেষ মুহূর্তে দেখছিলাম পুলিশ বেধড়ক পেটানো শুরু করছে ওইখানে আশ্রয় নেওয়া মানুষজনদের। এদের প্রায় কারো সাথেই আন্দোলনের সম্পর্ক নেই। ওইদিন ধরা পড়তে পারতাম, এই গলি, সেই গলি, আরেকটা চেনা বাসাতে দেওয়া টপকে ঢুকে ভেতরে আশ্রয় নিয়েছিলাম।

এরশাদের পতন হয় যেই আন্দোলনে, ৯০ এর নভেম্বরের শেষ থেকে ডিসেম্বরের ৪ পর্যন্ত - সেটা আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। আমি তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। সাধারণ ছাত্র ছাত্রী, জনতা একদম স্মতস্ফুর্ত আন্দোলন করেছে। আমার মনে আছে বুয়েটে সকালে সাড়ে আটটার দিকে একটা মিছিল বের হল - মিছিলটা ক্যাম্পাসে ঘুরছে আর বড় হচ্ছে - আর শ্লোগান ক্রুদ্ধ হচ্ছে। অভি নিরু গ্রুপ কয়েকদিন ধরেই ক্যাম্পাস দখলের চেষ্টা চালায়ে যাচ্ছিল, বড়সড় কিছু হতে পারে আমরা জানতাম।

আমি সাহসী কেউ না, মিছিলটা বুয়েট থেকে জগন্নাথ হলের গেট দিয়ে বের হল (গেটটা পরে বন্ধ করে দেয় বুয়েট) - আমি এই পর্যন্ত মিছিলে ছিলাম। ওটা বের হয়ে একটু দূর যেতেই প্রচণ্ড গুলির শব্দ শোনা গেল। মিছিলে অভি নিরু গ্রুপ হামলা করেছিল। রাজু নামে একজন ছাত্রদল কর্মী আহত হওয়ার সংবাদ পেলাম।

এর কিছুক্ষণ পরেই ডক্টর মিলন শহীদ হন, আরেকটু দূরে টিএসসি থেকে শাহবাগ যাওয়ার রাস্তাতে। আমরা তখনও ক্যাম্পাসে আটকা পড়ে আছি। তখন আন্দোলন আর ক্যাম্পাসে সীমাবদ্ধ নেই। সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছে। গুলির শব্দ আসছে ক্যাম্পাসের দিক থেকে - তাই আমি আর এক বন্ধু ঘুর পথে বের হলাম। সর্বত্রই মানুষের প্রতিবাদ। এলিফেন্ট রোড, হাতিরপুল সব পায়ে হেঁটে পার হলাম। আমাদের তেজগাঁওতে ছাত্র জনতার সাথে পুলিশের সংঘর্ষ চলছে। তখন একটা মানুষও মনে হয় নাই রাস্তাতে যে পুলিশের দিকে ঢিল ছুঁড়ে মারে নি। এরশাদের পতন তখন সময়ে ব্যাপার। নভেম্বরের ২৭ থেকে ডিসেম্বরের ৪ তারিখ পর্যন্ত এমন অবস্থা ছিল। রাতে বিবিসি থেকে খবর পেতাম। সন্ধ্যের পরে সব নিঃস্তব্ধ হলে দূরে গুলির শব্দ শোনা যেত।

এরশাদের আমল ছিল সত্যিকার অর্থেই এক পুলিশ স্টেট। যে কেউ যে কোন সময়ে বিপদে পড়তে পারতো। অনেকে পড়েছেও। আমার দুই চারজন বন্ধু বাসা থেকে বের হয়ে হেঁটে যাওয়ার সময়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

অতিথি লেখক এর ছবি

বুয়েটের লাঠি মিছিলটা হয়েছিল ২৭শে নভেম্বর। '৮৫ ব্যাচের মেকানিক্যালের (সোহরাওয়ার্দী হল) রাজু ভাইয়ের ডান হাতে গুলি লেগেছিল। রাজু ভাইয়ের জীবনটা তছনছ হয়ে গিয়েছিল। পরে '৮৯ ব্যাচের সাথে পাশ করেন।

১৯৯১-৯২ সালে গোলাম ফারুক অভি ছাত্রদলের কিছু নেতার সহযোগিতায় সদলবলে সোহরাওয়ার্দী হল আর নজরুল ইসলাম হলে দীর্ঘদিন বাস করেছে। সানাউল হক নীরু জাতীয়তাবাদী দলে সরাসরি ঢুকতে না পারলেও তাদের গুডবুকে ছিল। নীরুর ভাই মাহবুবুল হক বাবলু বোমা বানাতে গিয়ে সহযোগীসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে নিহত হয়েছিল।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আপনার অভিজ্ঞতা পড়ে আরেকটা কথা মনে পড়ে গেল। নব্বই ডিসেম্বরের ৪ তারিখ এরশাদের পতন নাটকের লাইভ অংশীদার ছিল মওদুদ আহমদ। মজার ওই দৃশ্যটা এখনো আমার চোখে ভাসছে। মওদুদ আহমেদ তখন এরশাদের ভাইস প্রেসিডেন্ট। ৪ ডিসেম্বর মাঝরাতের আগে হঠাৎ করে বিটিভিতে তার মুখ দেখা গেল। চেহারা ঘামছে। চোখে মুখে মার খাওয়া উদ্বিগ্নতা। এরশাদ নিজে হাজির হবার আগে ভাইসকে পাঠাইছিল। দেশ ও জাতির উদ্দেশ্যে তিনি কিছু বলবেন। অসময়ে দেয়া মওদুদের ভাষণের কথাগুলো আজকের দিনে বিনোদনের খোরাক হতে পারতো। কিন্তু আফসোস ওগুলো কেউ সংরক্ষণ করে নাই। বাংলাদেশের জাতীয় বর্ণচোরা মওদুদের জীবনের অভিজ্ঞতা এরশাদের চেয়েও বৈচিত্রময় লাগে আমার কাছে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

ইয়ামেন এর ছবি

প্রজন্মের মনে নেই, জানা নেই ১৯৯০ সালে কতটা সংগ্রাম করে, কতটা আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই 'lovable crazy grandpa' এরশাদকে গদি থেকে হটানো হয়েছিল। আমি অবশ্য ভুলতে পারি না। এখনও যেন চোখ থেকে কাঁদানে গ্যাসের ঝাঝটা পুরোপুরি যায়নি। এখনও চোখ বন্ধ করলে সেই রাত চোখের সামনে ভাসে, বাবা-মার সাথে মোহাম্মদপুর টাউনহলে গিয়েছিলাম কাঁচাবাজার করতে, হঠাৎ চারিদিকে গুলির শব্দ বাবা-মায়ের হাত ধরে প্রানের ভয়ে দৌড় মারা, কোন এক অচেনা বাসার গেট খোলা পেয়ে সেখানে ঢুকে পড়ে পরের দুই ঘন্টা লুকিয়ে থাকা। নাহ, একাত্তরের সাথে কোন তুলনা হয় না। কিন্তু একজন নয় বছরের বাচ্চার জন্য সে স্মৃতি ভয়ংকর ছিল বৈকি।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...

নীড় সন্ধানী এর ছবি

তখনকার সময়ে বাচ্চাকাচ্চা কেউ প্যাঁদানির হাত থেকে রক্ষা পেতো না।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের সময় আমি কিশোর। লাগাতার কারফিউয়ে স্কুল বন্ধ। এক বিকেলে আমার কয়েক মাসের ক্ষুদে খালাতো ভাইটিকে নিয়ে পাড়ার রাস্তার সামনে এগিয়ে গিয়েছি। হঠাৎ হৈ চৈ আর লোকেরা দৌড়ে পালাতে লাগলো। শোনা গেলো পুলিশ আসছে ধরতে। আমি শিশু ভাইটিকে নিয়ে দৌড়ে ঘরে ফিরছিলাম। ভয় হচ্ছিলো হোঁচট খেয়ে পড়ে না যাই। পরে জানা গেলো কে না কে পুলিশকে ঢিল ছুঁড়েছে তাই তারা এই দৌড়ানি দিয়েছে। সে সময় পুলিশ ছিলো পুরোই সরকার পালিত সন্ত্রাসী। প্রথম সিভিল এলাক কাঁদুনে গ্যাসও মনে হয় সেবারই ছাড়া হয়।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

সিভিল এলাকায় কাঁদুনে গ্যাস না শুধু গুলিগালাজও চলতো। কলোনীর বাসার জানালায় দাঁড়িয়ে থেকে পুলিশের গুলি খেয়েছে এমন নজিরও আছে আমাদের ওখানে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

এরশাদের শুভ আগমনের সময়টায় বগুড়ায় ছিলাম। টিভিতে প্রাথমিক প্রপাগান্ডা ও বাগাড়ম্বর দেখে একটু আশান্বিত যে হই নি তা বলা যাবে না। জিয়ার স্বৈরশাসনের পর ছাত্তারের স্বল্পকালীন অরাজক শাসনকাল, তার অবসান ঘটিয়ে মুখভরা মধু আর গালভরা আশার বাণী নিয়ে এরশাদের আগমন। পূর্বসূরী জিয়ার মতই আশা জাগানিয়া যে প্রতিস্রুতি তিনি দিয়েছিলেন তা হলো- শীঘ্রই সাধারন নির্বাচন দিয়ে তিনি ব্যারাকে ফির যাবেন, খুশী না হয়ে পারা যায়? টিভিতে একটি ক্লিপ বারংবার দেখানো হচ্ছিল, যাতে দেখা যায় ফসলের ক্ষেতে এক কিষাণ প্রচন্ড পরিশ্রম করে ঘর্মাক্ত কলেবর, কৃষাণ বধু সানকিতে করে তার জন্য ভাত নিয়ে এসেছে। কিষাণের পড়নে শতচ্ছিন্ন লুঙ্গি, সেই লুঙ্গি ঠিকঠাক করে পড়তে গিয়ে নিজের স্ত্রীর সামনেই যেন সে কুন্ঠায় একেবারে লীন হয়ে যাচ্ছে। শেষে দর্শকদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন- আর কতকাল এই অবিচার?

যেহেতু এরশাদ এসেই সামরিক শাসন জারি করেছিল, তাই অনতিবিলম্বে রাস্তায় উর্দিধারীদের আনাগোনা ছিল লক্ষনীয়। আর এই সময়গুলোয় হাঁটুবুদ্ধি জন্তুগুলোর একটা প্রচেষ্টা থাকে ডান্ডা মেরে দুদিনের মধ্যে সবকিছু ঠিক করে দেয়ার। তাদের অন্যতম মনোযোগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় পুরুষ মানুষের মাথার চুল আর মেয়ে মানুষের উন্মুক্ত উদর। আমাদের পাশের বাসায় থাকতো এক বেয়াড়া ধরনের ছোকরা, যার নানারকম অসহনীয় আচরণ ও কীর্তিকলাপের জন্য পাড়ার সবার জ্বালাতনের শেষ ছিল না, তার মাথায় ছিল উদ্ভট ধরনের লম্বা চুল। বেচারা তার প্রেমিকাকে নিয়ে রিকসায় কোথাও যাচ্ছিল, শাড়ী পরিহিতা প্রেমিকার উদরদেশ ছিল উন্মুক্ত। প্রথমে ছোকরার পশ্চাতদেশে পর্যাপ্ত পরিমান লাঠৌষধী প্রয়োগ, অতঃপর তার অতি সাধের চুলের মুঠি ধরে তার মাঝে এমনভাবে কাঁচি চালনা যে, সে চুল নিয়ে আর প্রকাশ্যে চলাফেরা করা অসম্ভব। আর প্রেমিকার উদরদেশে লেপন করে দেয়া হল গাঢ় কাল আলকাতরার প্রলেপ। আমাদের পাড়ায় খুশীর একটা বন্যা বয়ে গেল।

দুদিন পর স্বাধীনতা দিবস, সেনানিবাসে বিশেষ কুচকাওয়াজের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। নিস্তরঙ্গ বাঙ্গালী জীবনে এ এক দর্শনীয় অনুষ্ঠান বটে। আমাদের উল্লেখিত সেই ছোকরা ইতিমধ্যে বাধ্য হয়ে তার চুল ন্যাড়া করে ফেলেছে। ন্যাড়া মাথা নিয়ে সেও গিয়েছে কুচকাওয়াজ স্থলে। প্রহরী জওয়ানদের দিকে চেয়ে মাঝে মাঝেই সে শ্লেষ এবং বিদ্বেষমিশ্রিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করছিল। জওয়ানেরা তাকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো মাথা ন্যাড়া কেন? এটা আবার কিসের ফ্যাসান? ছোকরা মনে মনে বিশেষ রুষ্ঠ ছিল এবং স্বভাবগতভাবে দুর্বিনিত বিধায় তার কথা প্রহরীদের কাছে মোটেই সন্তোষজনক মনে হয় নি। সুতরাং লাঠৌষধীর পুনঃ প্রয়োগ। মহল্লার ঘরে ঘরে পুনর্বার আনন্দের বন্যা বয়ে গেল।

মহল্লাবাসীর সেই আনন্দ অবশ্য খুব দীর্ঘস্থায়ী হয় নাই। পরবর্তীতে সেই ছোকরা নতুন বাংলা ছাত্র সমাজের একজন স্থানীয় কেউকেটা হয়ে সাধারন মানুষের অশেষ দুর্ভোগের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

টিভিতে প্রাথমিক প্রপাগান্ডা ও বাগাড়ম্বর দেখে একটু আশান্বিত যে হই নি তা বলা যাবে না।

গণতান্ত্রিক সরকারকে বিনা ওজরে বন্দুকের মুখে হটিয়ে আসা সেনাশাসককে আমরা স্কুল পড়ুুয়া বালকেরাই ঠিকভাবে মেনে নিতে পারিনি। আপনারা কিভাবে আশান্বিত হয়েছিলেন ঠিক বুঝি না। যারা এমন প্রচারণায় বিশ্বাস করে তারা সাধারণত আইয়ুব খানের সামরিক শাসন নিয়ে মুগ্ধ থাকা প্রজন্ম। আমার বিশ্বাস আপনি সে দলের কেউ নন।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

আপনার বিশ্বাস সঠিক,আমি আইয়ুব খানের শাসনে মুগ্ধ থাকা প্রজন্মে জন্ম নেয়া মানুষ হলেও নিজে তাতে মুগ্ধ প্রজন্ম নই। তবে পঁচাত্তর পরবর্তী জিয়ার শাসন এবং তার উপজাত সাত্তার রেজিমের শাসনকেও সত্যিকারের গনতান্ত্রিক শাসনকাল বলে মনে করি নাই। কারা তেমনটা মনে করতেন, সেটাও ভালভাবেই লক্ষ করেছি। আপনার জ্ঞাতার্থে জানাই, আমি শুধু একা নই, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের অনেক মানুষের কাছেই সাত্তার রেজিম ছিল এক ভয়াবহ দুর্যোগের কাল। এরশাদরে সামরিক শাসনের আগমনে খুশী হই নি, আশান্বিত হয়েছিলাম গনতান্ত্রিক নির্বাচনের ব্যাপারে তার অংগীকারের কারনে। পরিতাপের বিষয় স্কুলের বালক হয়েও এরশাদের শঠতার ব্যাপারটা আপনি বুঝে ফেললেও কিছুটা পরিনত বয়স্ক আমার সেটা অনুধাবণ করতে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল।

এক লহমা এর ছবি

লেখা আর মন্তব্য মিলিয়ে ঐতিহাসিক দলিল। হাততালি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

নজমুল আলবাব এর ছবি

চমৎকার। ফেসবুকের হায়হায়ময় সময়ে এটি একটি দলিল হয়ে থাকবে এটি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।