অসম্ভব: অনলাইনে লেনদেন

শামীম এর ছবি
লিখেছেন শামীম (তারিখ: মঙ্গল, ২৯/০১/২০০৮ - ১:০৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঘটনা-১
শামীমের একটা বই দরকার। দেশে ঐ বই পাওয়া যায় না। কিনতে হলে অনলাইনই ভরসা। কিন্তু হায় অনলাইনে কোন বিল দেয়া যায় না। বসে বসে আঙ্গুল চোষ, বই পড়ার দরকার নাই।

ঘটনা-২
নাদিয়ার একটা ঔষধ দরকার যেটা আমেরিকান একটা কম্পানি তৈরী করে। বাংলাদেশের কোন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড দিয়েই অনলাইনে কেনাকাটা করা যায় না। ভাগ্যক্রমে ওর অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী খালা সেই সময় ঢাকাতে। উনি ওনার ক্রেডিট কার্ড দিয়ে অর্ডার দিতে রাজি হলেন... বিনিময়ে সমস্ত খরচটাই ওনাকে টাকা বা ডলারে দিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু..... ঐ ওয়েবসাইটের অর্ডার ফর্মে ঠিকানা লেখার জায়গায় ড্রপ-ডাউন বক্সে বাংলাদেশ দেয়ার কোনই উপায় নাই। ভারতের নাম দেয়া যায় অবশ্য!

ঘটনা-৩
বাপ্পী টুকটাক প্রোগ্রামিং করে। অনলাইনে কিছু কাজ করে তাঁর কিছু ডলার রোজগার হয়েছে। পে-পালে (Paypal) একটা একাউন্ট খুলে সেই টাকা ওখানে পেমেন্ট করা হয়েছে। কিন্তু বাপ্পী ঐ টাকা/ডলার কোনদিনই পাবে না। কারণ বাংলাদেশের কোন ব্যাংকে ওটার সাপোর্ট নাই।

ঘটনা-৪
রাজু, বাপ্পীর মতই বেশ ডলার উপার্জন করেছে অনলাইনের কাজ করে। কয়েকশ ডলার সহ ওর পে-পাল একাউন্ট ব্লক হয়ে গেল গ্রহণযোগ্য ক্রেডিট কার্ড নম্বর না দেয়াতে। পরবর্তীতে রাজু অবশ্য অন্য একটা একাউন্ট খুলে ওটাতে প্রবাসী বড়ভাইয়ের ক্রেডিটকার্ড নম্বর দিয়ে রেখেছে। তবে কোন টাকাই সে দেশে আনতে পারে না... তাই ঐ ডলার দিয়ে বিভিন্ন জিনিষ/সফটওয়্যার কেনে।

ঘটনা-৫
নাসিম xoom নামক একটা সাইট পেয়েছে। যেটা দিয়ে বাংলাদেশে টাকা পাঠানো যায়। ঢাকার কয়েকটা ব্যাংকের কয়েকটা বিশেষ শাখা থেকে টাকা পাঠানো যায়। টাকা পাঠানোর ৩ঘন্টার মধ্যেই সেটা তোলা যায়। কিন্তু কে জানি বললো সেটা নাকি আইনসঙ্গত নয়।

প্রজন্ম ফোরামে কিছু আলোচনা/আফসোস দেখতে পারেন।

দেশের সরকার নাকি ভারতের মত অনলাইনে আয় করার জন্য ইন্টারনেট ... ইত্যাদি বিস্তার করছে/করবে। উপরের ৫টি ঘটনা দেখে তো সেরকম মনে হওয়ার কোন কারণ দেখি না।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

হুম অনলাইনে কেনাকাটার ব্যপারে সরকারের দৃষ্টিপাত প্রয়োজন। অবশ্য আমি আমার অনেক প্রবাসী আত্মীয়ের কাছে শুনেছি, অনেকেই অনলাইন কেনাকাটা পছন্দ করেন না। কারণ হয়তো ক্রেডিট কার্ড সহ অনেক ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হয়। তারপরও মাঝে মাঝে বাটে পড়লে কতকিছুই তো করতে হয়।

রায়হান আবীর

রেজওয়ান এর ছবি

এই পোস্টটি খুবই সময়োপযোগী পোস্ট। এই প্রশ্নগুলো আমাদের তোলা দরকার। একটি দেশ এভাবে পিছিয়ে থাকতে পারেনা। এমনকি শুধু দেশে বলবৎ ক্রেডিট কার্ড দিয়েও অনলাইনে কেনাকাটা সম্ভব নয়। দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাতে না যায় এর জন্যে বাংলাদেশ ব্যান্কের গাদাগাদা আইন যোগুলো মোটেই প্রাকটিকাল নয়। কখনো বিদেশে ব্যন্কের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর চেষ্টা করে দেখেছেন (টিউশন ফি বা সাবস্ক্রিপশন)? বাংলাদেশ ব্যন্কের পারমিশন ইত্যাদি মেলা হেপা। অথচ সবকিছু ইলেক্ট্রনিকালি মনিটর ও কন্ট্রোল করলে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। কবে যে আমরা এগুবো কে জানে?

আর অনলাইনে কেনাকাটা মানেই নিরাপত্তাহীনতা এমন নয়।
আমি জার্মানীর ব্যাপারটি জানি, এখানে শুধু ক্রেডিট কার্ড নয় ব্যান্কের প্রায় সমস্ত লেনদেনই অনলাইনে হয়। এখানে ব্যন্ক একাউন্ট খোলার সময় জিজ্ঞেস করলাম আমার চেকবই কই। তারা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। বলল চেক বই দিয়ে কি করবে? এদেশে চেকের চল উঠে গেছে। সবাই একাউন্ট ট্রান্সফার করে। অনলাইনে বা এটিএম থেকে করলে চার্জ নেই। ব্যান্ক থেকে করলে ৫ ইউরো পর্যন্ত লেনদেন ভেদে চার্জ হতে পারে।

পে-পাল অথবা ক্রেডিট কার্ড ব্যান্ক একাউন্টের সাথে লিন্কড। আপনাআপনি ডেবিট বা ক্রেডিট হবে। এবং কঠোর আইন এবং উচ্চতর সিকিউরিটির জন্যে আমরা ফ্রডের ব্যাপার শুনিনি-তবে এটি নেই এমন নয়। অনলাইন ট্রান্জাকশনের জন্যে গাদাগাদা ইন্সট্রাকশন দেয়া হয় সেফটির জন্যে।

পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

ইফতেখার নূর এর ছবি

সব কেনাকাটাই তো ইলেক্ট্রনিক্যালি করছি.. কবে যে আমরা এগুবো...আমাদের নেতা নেত্রীদের হিসাবে কিন্তু আমরা উন্নতির চরমে। প্রবাসে এসে দেখছি আমাদের কিভাবে ভুলিয়ে রাখা হয় দেশে। হয় বাংলাদেশ সাপোর্ট নাই নয়ত বাংলা সাপোর্ট নাই, তারপরও আমাদের আমাদের আত্নতৃপ্তির শেষ নাই।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আপনিতো অনেক দূরে চলে গেলেন
বাংলাদেশে সাবমেরিন অপটিকেল ফাইবার স্থাপনের বিরোধীতা করেছিলেন তখনকার তথ্যমন্ত্রী নাজমুল হুদা
তার যুক্তি ছিল এতে আমাদের দেশের তথ্য পাচার হয়ে যাবে

সে যক্তির ঘানি আমরা এখনও টানছি স্লো ইন্টারনেটের ভেতর দিয়ে
যেখানে একটা ইমেইল করতে লাগে আধা ঘন্টা

শামীম এর ছবি

রায়হান আবীর, রেজওয়ান, ইফতেখার নুর এবং মাহবুব লীলেন ...
আপনাদের সুচিন্তিত মন্তব্যগুলোর জন্য ধন্যবাদ।

দেশের বাইরে থাকতে ক্রেডিট কার্ড করেছিলামই শুধু অনলাইন লেনদেনের জন্য। জার্নাল সাবস্ক্রিপশন, কনফারেন্স রেজিস্ট্রেশন পেমেন্ট, অনলাইনে প্লেনের টিকিট ক্রয় ইত্যাদি কাজগুলো অতি সহজে হয়ে যেত। এছাড়াও কিছু কেনাকাটা তো করতামই (ঘটনা-২)।

আর, গত সেপ্টেম্বরে দেশে আসার পর এই মাসে শুধু খোঁজ আর খোঁজ.... HSBC ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড .. বাদ রাখিনি কোনটাই। ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড আছে (ফিক্সড ডিপোজিটের সাপেক্ষে) কিন্তু অনলাইন ট্রানজাকশন সাপোর্ট নাই -- শুধু দোকানে কেনাকাটা করা যায়। মন খারাপ

এ বিষয়ে পদক্ষেপ জরুরী। আর তার আগে দরকার সচেতনতা ও জনমত।

বৈদেশিক মূদ্রা পাচার রোধের জন্য সব বস্তাপচা আইন... যাদের পাচার করার তাদেরকে তো ঠেকাতে পারে নাই। এখন ঐ মূদ্রা দেশে ফেরৎ আনার জন্য হা-হুতাশ করছে। ভুক্তভোগী হয় অন্যরা।

এই জগদ্দল পাথর সরে গেলে অনলাইনে আয়-রোজগারের পথটা সহজ হবে।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

দ্রোহী এর ছবি

ছি ছি.. এসব খারাপ কাজ.....দেশের সব তথ্য বিদেশে পাচার হয়ে যাবে।


কি মাঝি? ডরাইলা?

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

কী বলবো আর, বলেন? দুঃখের দিন শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছি আর সবার মত আমিও। দেশ যে কবে প্রযুক্তিতে স্বনির্ভর হবে!

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

খুব দরকারি প্রসঙ্গ নিয়ে চমৎকার একটি লেখা। মুশকিল হলো, আমাদের দেশের দণ্ডমুণ্ডের কর্তারা এসব নিয়ে মাথা ঘামান বলে মনে হয় না। সময় কোথায়? আরো দুঃখের কথা এই যে আপনার এই লেখাটি তাদের কারো চোখে পড়বে বা পড়লেও কিছু হবে এমন আশাও নেই।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

শামীম এর ছবি

@দ্রোহীঃ
... হুন্ডি ব্যবসায়ীরা পথে বসবে ...

@ ইশতিয়াক রউফঃ
বসে থাকলে চলবে না। যার যা আছে তাই নিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। সচলায়তনে দিলাম সেজন্যই। মিডিয়া ভালো ভূমিকা রাখতে পারে সচেতনতা বাড়াতে। কোন টক শো আর এসব নিয়ে বলে না ....
... আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে ...

@ অরূপঃ
বুঝতে পারছি মেজাজের অবস্থা ...

@ মুহম্মদ জুবায়েরঃ
হতাশ হতে চাই না। যেখানেই চান্স পাব ... এই বক্তব্য ঝেড়ে দেব। আমার এক ফুফা আছেন ব্যাংকার। লতায় পাতায় আরো কিছু ব্যাংকার আত্মীয় পাওয়া যাবে হয়ত। এছাড়া পরিচিত/অর্ধপরিচিতের মধ্যে পত্রিকার রিপোর্টারও পেয়ে যেতে পারি .... পত্রিকায় এর উপরে ফীচার বের হলে কিছুটা টনক নড়বে বলেই বিশ্বাস। আপাতত এই পোস্টটি ঐ পথে যাওয়ার একটা পদক্ষেপ হয়ে থাকুক।

আজকের শিশু আগামীতে দেশের চালিকাশক্তি। এখন তো আমাদেরকেই সেই শক্তি হয়ে উঠতে হবে ... ... কারো আশায় বসে থাকলে চলবে না।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

অয়ন এর ছবি

জ্ঞানী ব্যক্তিরা সব বাংলাদেশ ব্যাংকে বইসা আইন বানাইতাছে

শামীম এর ছবি

বাংলাদেশ থেকে অনলাইন লেনদেনের সাপোর্ট সহ ক্রেডিট কার্ড করা যায়। কিছুক্ষণ আগে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেলস থেকে একজন ভদ্রলোক এসেছিলেন উনি জানিয়ে গেলেন।

- তবে এজন্য বিদেশ ভ্রমন করে আসার একমাসের মধ্যে আবেদন করতে হয়। প্রসেসিং-এ সময় লাগে। কাজেই ঘুরে এসেই আবেদন করা ভাল। এমনকি ভারত ভ্রমন করে আসলেও করা যায়!

- প্রথমে কমপক্ষে ৫লক্ষ টাকা দিয়ে একাউন্ট (RFCT একাউন্ট) খুলতে হয়। পরে সেই টাকা আবার তুলে আনা যায়।

বিস্তারিত জানতে ভদ্রলোকের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন (কিরণ)
সিনিয়র এক্সিকিউটিভ, সেলস
০১৭১৯-৬৬২০২৫, ০১৯১২-৬৮২৬৪১

নিজ দ্বায়িত্বে করুন। কোনরূপ লেনদেনের জন্য আমি দায়বদ্ধ না।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ
নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

খেয়ালি.সুর এর ছবি

বর্তমানে এখন কি করম অবস্থা? কেউ কি জানাতে পারবেন।
আমি রিসেন্টলি এ সম্পর্কে জানলাম এবং ইন্টরেস্টেড-ও বটে। এখন কি কোনো ব্যবস্থা আছে নেটে আয় করা টাকা দেশ থেকেই তোলা যাবে বা দেশেই ব্যবহার করা যাবে?
আচ্ছা, পে-পাল-এ যে ক্রেডিট কার্ড# দেয়া হয়, তা দিয়ে তারা কোনো মিসইউজ করে না তো? আমার বা অন্যজনের, যার-ই হোক কাউকে #টা দিতেই ভয় লাগে। (যদিও এখনো কোনো ক্রেডিট কার্ডের ব্যবস্থা করতে পারিনি, তাও জিগাইলাম আর কি!!!!!)

ফাহিম হাসান এর ছবি

এই পোস্টটাকে ঠেলা মারা দরকার

shafi.m এর ছবি

চলুক ব্যপারটা নিয়ে আমিও চিন্তা করেছি। তবে বিদেশ ভ্রমন করে এসে ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে একাউন্ট খোলা, মাগো!

শাফি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।