চীন - অসাধারণ সব উন্নয়ন

শামীম এর ছবি
লিখেছেন শামীম (তারিখ: শনি, ২১/০১/২০১২ - ৭:২৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ছোটবেলায় পৃথিবীর সপ্তাশ্চার্য চীনের প্রাচীরের বিশালত্বের কথা জেনে অবাক হতাম। জ্ঞানার্জনের জন্য চীনে যাও - এমন কথাও ধর্মীয় কোন উৎস (হাদীস) থেকে শুনেছিলাম। তারপর সস্তা মেড ইন চায়নার জয় জয়কার, বিশ্ব অর্থনীতিতে চীনের প্রভাব, এ্যাথলেটিকসে চীনের দক্ষতা ইত্যাদি দেখে দেখে চীনের ব্যাপারে খবরাখবরে অবাক বা কৌতূহলী হওয়া ছেড়ে দিয়েছিলাম। এই সব হলে কি হবে, চীন বা জাপান তেমন কোন উন্নত মৌলিক গবেষণা হয়না; কিংবা, ওরা শুধু আমেরিকা ইউরোপের টেকনোলজি কপি করে নিয়ে সস্তায় পণ্য বানায়; চীনের জিনিষ মানেই ফালতু - এমন একটা ইমেজও মনের মধ্যে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ইদানিং চীনের একের পর এক রেকর্ড গড়া সব টেকনোলজির খবর দেখে চীনের জ্ঞানচর্চার উল্লম্ফন সম্পর্কে পুরাতন একটা সমীহ আবারই জেগে উঠছে। অসাধারণ বড় বড় জিনিষপত্র বানানোর বাতিক কোন শারীরিক দুর্বলতার কারণে সৃষ্ট মর্মবেদনা থেকে উৎপন্ন কি না সেটা নিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও চীনের আকার, জনসংখ্যা এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতার বিচারে এ ধরনের উন্নয়ন অস্বাভাবিক নয় বলেই মনে হয়।

দীর্ঘতম, উচ্চতম বা দ্রুততম বিষয়গুলো প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল, টেকনোলজির উন্নয়নের সাথে সাথে কেউ না কেউ এর চেয়ে বড় বা দ্রুততর কিছু বানিয়ে ফেলবে - তাই এর ভিত্তিতে কেউ সেরা, কেউ ভূয়া - এমন কোন ধারণা মনের মধ্যে রাখা উচিত নয় বলেই মনে হয়। তবে, শুধুমাত্র পরীক্ষার জন্য কিছু বানানো, আর একটা কিছু বানিয়ে সেটাকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য আছে। দ্রুততম যানবাহন শুধু বানালেই হয় না, বাণিজ্যিক ভাবে এগুলো চালাতে হলে এ্যাত দ্রুত অথচ নিরাপদে চলার মত পথ তৈরী ও রক্ষণাবেক্ষণ করাটা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। আবার একই ভাবে বৃহত্তম যানবাহন নিরাপদে চলার উপযোগী পথ, পথের বাঁকে গাড়ি ঘোরানোর জন্য জায়গা (টার্নিং রেডিয়াস) - এগুলোর আয়োজন করে সেই গাড়িকে পথে বাণিজ্যিক ভাবে নামানোটা একটা বড় সফলতা বলে মনে হয়। এই লেখাটার মূল ফোকাস চীনের উন্নয়ন করা অদ্ভুদ এক সিটি বাস; তবে সেই প্রসঙ্গের আগে চীনের অন্য কিছু সক্ষমতা - যা চীনের ব্যাপারে আমার কৌতুহল বৃদ্ধি করেছিলো, সেগুলো সংক্ষেপে জানাতে চাই।

বিশ্বের দীর্ঘতম বাস: .... এই দুই এক দিন আগের খবর, প্রথম চোখে পড়ে বিডিনিউজ২৪ এর টেকনোলজি পাতায়। চীন বিশ্বের দীর্ঘতম বাস বানিয়েছে, এবং এটা অচিরেই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ওদের কিছু শহরের রাস্তায় চলবে। এক বাসে ৩০০ যাত্রী বসে যেতে পারবে - যাত্রী সংখ্যার এই বিশালত্বটাই অবাক করার মত।

রেলগাড়ি: যুক্তরাজ্যের টেলিগ্রাফ পত্রিকার একটা রিপোর্ট অনুযায়ী (২০১১-মে-১১) চীনে বিশ্বের দ্রুততম বাণিজ্যিক রেলগাড়ি চলে। এটা ছাড়াও বর্তমানে বিশ্বে বাণিজ্যিকভাবে চলা দ্রুততম ম্যাগলেভ ট্রেন সার্ভিসও চীনে (সর্বোচ্চ ৪৩১কিমি/ঘন্টা, গড়ে ২৬৬ কিমি/ঘন্টা)।

কোন এক সময়ে শুনেছিলাম চীন এমন ট্রেনের উন্নয়ন করছে যেগুলোকে দীর্ঘ যাত্রাপথের মধ্যবর্তী কোন স্টেশনে যাত্রী উঠানামা করানোর জন্য থামতে হবে না, ফলে যাত্রার সময় লাগবে অনেক কম। এতে কোন একটা স্টেশন অতিক্রম করার কিছু আগে ঐ স্টেশনে নামতে ইচ্ছুক যাত্রীগণ ট্রেনের ছাদে একটা বিশেষ বগিতে জড়ো হবে। ঐ বগিটা মূল ট্রেনের ছাদের উপরে থেকেই ধীরে ধীরে ট্রেনের পেছনের দিকে যেতে থাকবে, অর্থাৎ ভূমির সাপেক্ষে এর গতিবেগ কমতে শুরু করবে এবং ট্রেনের ছাদ বরাবর স্টেশনের লাইনে চলে গিয়ে ধীরে ধীরে মন্দনের ফলে থেমে যাবে। একই ভাবে মূল ট্রেন ঐ স্টেশনের নিচের লাইন দিয়ে অতিক্রমের কিছুক্ষণ আগেই একই রকম আরেকটা বগি ঐ ট্রেনে গমনেচ্ছু যাত্রীদেরকে নিয়ে স্টেশন ত্যাগ করে গতিবেগ বাড়াতে থাকবে এবং মূল ট্রেনের গিয়ে ছাদে গিয়ে যুক্ত হবে। এটার ধারণার ইউটিউব ভিডিওটি দেখলে ব্যাপারটা সহজে বুঝা যাবে।

এই উপায়ে বেইজিং থেকে গুয়াংঝুর মাঝের ৩০টি স্টেশনে গড়ে ৫ মিনিট করে প্রায় আড়াই ঘন্টা সময় বাঁচানো যাবে। ট্রেনটি স্টেশনগুলোতে না থেমে একটু কম গতিতে অতিক্রম করবে।

বিশ্বের দীর্ঘতম সেতু: কিছুদিন আগে চীনে বিশ্বের দীর্ঘতম সড়ক সেতু উদ্বোধন করা হল। যদিও কিছু জায়গায় এটাকে দীর্ঘতম সেতু বলে স্বীকার করেনি, কারণ ৪২ কিলোমিটারের মধ্যে বেশ কিছু অংশ পানির উপর দিয়ে না গিয়ে ভূমির উপর দিয়ে গিয়েছে এবং এতে বাঁকের কারণে দৈর্ঘ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে যে ব্যাপারটি অবাক করেছে সেটা হল এটার খরচ। চীনের সরকারী মুখপাত্র পত্রিকার খবরে মাত্র ২.৩ বিলিয়ন ডলার। আমাদের ৬ কিলোমিটারের পদ্মা সেতুর খরচ কত বিলিয়ন ডলার?

এবার আসি মূল টপিকে:
গত বছর মে মাসে চীনের বেইজিং হাইটেক এক্সপোতে শেংঝেং হাসি ফিউচার পার্কিং ইকুইপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড চীনের যানজট এবং বায়ুদূষণ কমানোর জন্য এক ধরনের রেলগাড়ি মার্কা বাসের প্রকল্পের কথা প্রকাশ করে। এই বাস রাস্তার দুই পাশের রেইলের উপর চাকা রেখে চলবে, তবে রনপা লাগানো মানুষের মত এর যাত্রীবাহি অংশ ভূমি থেকে অনেক উপরে থাকবে, ফলে এর তলা দিয়ে ২ মিটারের কম উচ্চতা বিশিষ্ট ছোট গাড়িগুলো বাধাহীন ভাবে চলাচল করতে পারবে।


রনপা বাস: এর তলা দিয়ে ছোট গাড়ি যেতে পারবে


রনপা বাস স্টপেজ: সাথে সুপার ক্যাপাসিটর চার্জার

এই গাড়ি চালাতে বিদ্যূৎ কিংবা সৌরবিদ্যূৎ ব্যবহার করা হবে। ২০ ফুট চওড়া আর ১৩ ফুট উচ্চতার এই বাসে ১২০০ থেকে ১৪০০ যাত্রী বসতে পারবে। রাস্তার পাশের উঁচু প্লাটফর্ম থেকে বাসের পাশের দরজা দিয়ে কিংবা রাস্তার উপরের ফুট ওভার ব্রীজের মত জায়গা থেকে বাসের ছাদ দিয়ে এই গাড়িতে যাত্রী উঠানামা করবে (দুইটা অপশনই থাকবে)। যাত্রী উঠা-নামানোর জন্য থামানো/পার্কিং থাকুক কিংবা চলন্ত থাকুক, এর তলা দিয়ে সবসময়ই গাড়ি চলতে পারবে। তাই এটা রাস্তা ধরে চললেও রাস্তার জায়গা দখল করে না এবং এর ফলে এটার কারণে রাস্তায় যানজট লাগবে না। যাত্রী পরিবহন করা সত্বেও রাস্তা দখল না করার জন্য এটা বরং রাস্তা থেকে কিছু সংখ্যক বাস কমিয়ে যানজট কমিয়ে দেবে। আর ট্রামের মত বিদ্যূৎ চালিত হওয়ায় এটা মোট কার্বন নিঃসরণও কমিয়ে দেবে (গাড়িপ্রতি ৮৬০টন/বছর)। নিচের ইংরেজি ডাবিংকৃত ভিডিওটাতে এর কর্মপদ্ধতি ব্যাখ্যা করছেন একজন এক্সপার্ট।

ওনাদের দাবী অনুযায়ী এই ধরনের সিস্টেম বানানো সাবওয়ের চেয়ে অনেক দ্রুত এবং কম খরচে করা সম্ভব (১ বছর বনাম ৩ বছর)। আর বাসের ছাদের বিরাট স্কাইলাইটগুলো এর যাত্রীদের মনকে প্রফুল্ল রাখবে বলেও মনে করছেন তারা।

রনপা বাস সরাসরি বিদ্যূৎ ব্যবহার করে চলবে। এই বিদ্যূতের যোগান দুই উপায়ে হতে পারে। একটি পদ্ধতিতে রাস্তার পাশে কিছুদুর পর পর চার্জিং পোস্ট থাকবে। এর থেকে একটা অংশ বাসের ছাদের চার্জিং রেইলকে স্পর্শ করে থাকবে। চার্জ করার পোস্টগুলো এমন দূরত্বে থাকবে যে, বিরাট বাসটি একটা চার্জ পোস্ট থেকে বের হওয়ার মুহুর্তে পরের চার্জ পোস্টের স্পর্শ পেয়ে যাবে। এটাকে রিলে চার্জিং বলে। অন্য পদ্ধতিতে ছাদের উপরে সুপার ক্যাপাসিটর থাকবে: প্রতিটা স্টপেজে এ দ্বারা খুব দ্রুতগতিতে বাসে থাকা ব্যাটারী চার্জ হয়ে যাবে। একটা স্টপেজে নেয়া চার্জ দিয়ে বাসটা পরের স্টপেজ পর্যন্ত যেতে পারবে, সেখানে আবার চার্জিং হবে। আর স্টপেজের ছাদের সোলার সেল থেকেও এই বিদ্যূৎ যোগাড় করা সম্ভব। এই পদ্ধতিতে বাস থেকে কোনরকম ক্ষতিকারক গ্যাস নির্গত হবে না।

এছাড়া এই বাসের মধ্যে কয়েক রকম সেন্সর থাকবে। এর তলা দিয়ে চলন্ত কোন গাড়ি এর পাশে বাসের ফ্রেমের/চাকার বেশি কাছে চলে আসলে এটা অ্যালার্ম দিয়ে সেই গাড়িগুলোকে সতর্ক করবে। এর স্ক্যানার এর পেছন থেকে আসা গাড়িগুলোকে স্ক্যান করে এর তলা দিয়ে যাওয়ার মত উচ্চতা না হলে সেগুলোকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার জন্য সংকেত দিবে। এছাড়া এটা মোড় ঘোরার আগেই এর নিচে থাকা গাড়িগুলোকে আলোর সংকেত দিয়ে জানাবে যে আমি সামনে মোড় ঘুরতে যাচ্ছি। বিআরটি পদ্ধতিতে বাসগুলো কোন মোড় পার হওয়ার সময় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সবুজ বাতি পায়। এই বাসেও সেই ধরনের ট্রাফিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বাস কোন মোড়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এটার জন্য সবুজ সংকেত আর অন্য পথগুলোতে লালবাতি দেখাবে। এর তলে থাকা গাড়িগুলো মোড় পার হতে চাইলে এর সাথে চলে যেতে পারে, নাহলে ওদের লাল বাতি মেনে দাঁড়িয়ে যেতে হবে।

দুই লেন রাস্তার প্রশস্থতার সাথে মিলিয়ে এই বাসগুলো ৬ মিটার প্রশস্থ হবে, আর ওভার পাস ইত্যাদির তলা দিয়ে বাধাহীন ভাবে যাওয়ার জন্য এর উচ্চতা হবে ৪ থেকে ৪.৫ মিটার। কখনও বিরাট দূর্ঘটনা ঘটলে যাত্রীদের বের হওয়ার জন্য এর পাশের দেয়ালগুলো ইমার্জেন্সি দরজা হিসেবে নিচের কব্জায় ভর করে স্লাইডারের মত স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যাবে - অনেকটা বিমানের ইমার্জেন্সিতে যেভাবে নামতে হয় সেভাবে।

গত বছরের শেষেই এই বাস তৈরী শুরু হওয়ার কথা। কে জানে আজ থেকে ৫০ বছর পরে যানজট জর্জরিত বিরাট নগরগুলোতে এটাই হয়তো টেকসই গণপরিবহন হিসেবে গৃহিত হবে। তবে, এই ধরনের বৈপ্লবিক আইডিয়াগুলোকে অনেক অপপ্রচার ও বাঁধা পার হতে হবে কারণ এ ধারণাগুলো বিস্তার লাভ করলে ক্ষতি হবে প্রতিষ্ঠিত কার ইন্ডাস্ট্রির।

তথ্যসূত্রসমূহ:
http://www.imageclix.com/img-miscellaneous-13-longest-traffic-jam-208.htm

রনপা বাস:
http://www.smartplanet.com/blog/thinking-tech/chinas-car-straddling-bus-8212-and-its-creativity-in-clean-tech/4934
http://i56.tinypic.com/1z3t5yu.jpg
http://www.archdaily.com/wp-content/uploads/2010/08/1282309604-bus-528x275.jpg
http://youtu.be/Hv8_W2PA0rQ

লম্বা বাস:
http://www.smartplanet.com/blog/thinking-tech/worlds-largest-bus-seats-300-passengers/9942
http://tech-us.bdnews24.com/details.php?shownewsid=3370

লম্বা সেতু:
http://en.wikipedia.org/wiki/List_of_longest_bridges_in_the_world
http://www.popsci.com/technology/article/2011-07/china-opens-worlds-longest-sea-bridge-toppling-american-record-holder
http://www.nola.com/traffic/index.ssf/2011/06/causeway_refuses_to_relinquish.html

ম্যাগলেভ:
http://en.wikipedia.org/wiki/Maglev

দ্রুততম রেলগাড়ি:
http://en.wikipedia.org/wiki/High-speed_rail
http://www.telegraph.co.uk/news/worldnews/asia/china/8506370/Fastest-trains-in-the-world.html
http://www.smartplanet.com/blog/thinking-tech/chinas-new-bullet-train-is-worlds-fastest-smashes-record/9656?tag=content;siu-container

স্টেশনে না থেমেই যাত্রী উঠানামার কৌশল:
http://www.youtube.com/watch?v=p9Ig19gYP9o


মন্তব্য

তারেক অণু এর ছবি

ভালো লাগলো তথ্যগুলো জেনে।
চীন নিয়ে মূল সমস্যা হল তারা কিছুদিন আগে পর্যন্তও পরিবেশ নিয়ে একেবারেই মাথা ঘামাতো না। সেই যে মাওয়ের বাণী- প্রতি ইঞ্চি জমি মানুষের কাজে লাগাতে হবে।
ইদানীং শুনছি এর পরিবর্তন ঘটছে খুব অল্প হারে হলেও, দেখা যাক।

শামীম এর ছবি

শহরের বায়ু দূষণ কমানো এই বাসের একটা বড় বৈশিষ্ট বলে হাইলাইট করা হয়েছে। সকলেই ঠেকে শেখে।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

দিগন্ত এর ছবি

থ্রি গর্জেস ড্যাম না দূষণ?


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

হিমু এর ছবি

রণপা বাসের আইডিয়াটা দারুণ!

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

আপনার দেওয়া তথ্যগুলো জেনে ভাল লাগল । রণ পা দেওয়া বাসের আইডিয়া টা দারুণ আর যদি ট্রেনের আইডিয়াটার সাপেক্ষে তুলনা করি, মনে হয় খুব একটা খরচাসাপেক্ষও হবে না ।

বিভিন্ন দেশের এইসকল নতুন নতুন আইডিয়া বিষয়ক আরও লেখার অপেক্ষায় থাকব ।

রু (অতিথি) এর ছবি

রণপা বাস আসলেই দারুণ!

আশফাক আহমেদ এর ছবি

রণপা বাস দেখে মজা লাগলো

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

সত্যপীর এর ছবি

চলুক চলুক

..................................................................
#Banshibir.

নাশতারান এর ছবি

দুর্দান্ত!

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

দ্যা রিডার এর ছবি

রণপা বাস আসলেই দারুন !!!

দিগন্ত এর ছবি

এর মধ্যে আমি দুটো দেখেছি। ম্যাগলেভ ট্রেন আর ব্রিজ। দুটোই দারুন, কিন্তু উভয়েরই বাণিজ্যিক সাফল্য নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে। ম্যাগলেভ ট্রেনে সাধারণ মানুষ চড়তে পারে না, কারণ টিকিটের দাম। শাংহাই শহর থেকে এয়ারপোর্ট অবধি ট্রেনের ভাড়া ছিল ২০০৭ সালে ৭০-১০০ ইয়ুয়ান, অর্থাৎ ১৫-২০ ডলার। এত খরচা করে মাইক্রোসফটের কর্মীরাও চড়ার সাহস পেত না। লোকে চড়ত না দেখে, পরের বছর অবশ্য দাম কিছুটা কমানো হয়েছিল। তবে এটার পুরোটাই প্রায় জার্মানদের বানানো।

ব্রিজটা সত্যিই অসাধারণ। তবে সেই একই সমস্যা, আশি ইউয়ান টোল দিয়ে কেউ ব্রিজ দিয়ে যেত না। খরচাটার ব্যাখ্যা আমি দিতে পারি। ভারতেও মুম্বাই ব্রিজের খরচা ৩০০ মিলিয়ন ডলার মাত্র, যেটা পদ্মা সেতুর সমতুল্য। পদ্মা সেতুতে রেলওয়ে লাইন থাকবে তবে মুম্বাই বা শাংহাইয়ের ব্রিজ এর চেয়ে অনেক চওড়া। তফাৎটা হল ব্রিজের মূল উপাদান স্টিল বাংলাদেশ পুরোটাই আমদানী করবে, যেখানে ভারত বা চিন দেশের লোহা আর কয়লা ব্যবহার করে বানিয়ে ফেলবে। বিদেশ থেকে আমদানী করা স্টিলের দাম তো বেশী হবেই। চিনের ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণও সমস্যা নয়, কারণ চিনে সরকার সব জমির মালিক - চাইলেই যে কোনো জমি অধিগ্রহণ করতে পারে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

শামীম এর ছবি

ম্যাগলেভ জার্মানীর তৈরী - এই ব্যাপারটা জানতাম। বাণিজ্যিক ভাবে চলে সেটা জানতাম, তবে খরচ তুলতে পারছে কি না সেটা জানতাম না।

আমাদের ৪.৮ কিলো লম্বা যমুনা (বঙ্গবন্ধু) সেতুতে যখন বাসের টোল ৮০০ টাকা, তখন ফেরীতে খরচ ৭০০ ছিল। আবার চীনের সেই ব্রীজ দিয়ে না গিয়ে ভূমির উপরের রাস্তা দিয়েও সম্ভবত অন্য প্রান্তে যাওয়া যায় (টোকিও বে ব্রীজেও তাই), এতে সময় বেশি লাগে (যমুনা বা পদ্মা সেতুতে সেই সুযোগ নাই; বিকল্প হল ফেরী)। তবে একটা সেতু আগামী অন্তত ৫০ বছরের চাহিদা হিসাব করে বানানো হয়। হয়তো আজ থেকে ১০ বছর পরেই ঐখানে এমন প্রবৃদ্ধি হবে যে রাস্তার ট্রাফিক বেড়ে যাবে, ফলে বিকল্প রাস্তার দরকার হবে, নতুবা প্রবৃদ্ধি মুখ থুবড়ে পড়বে।

পদ্মা সেতু বা যমুনা সেতুতে বাইরের ফান্ড ব্যবহৃত হয়েছে/হবে। এখন বাইরের অনেক দাতা সাহায্য হিসেবে যা দেয় সেটা নামে সাহায্য হলেও আসলে সফট লোন, অর্থাৎ ১-৩% এর মত সুদ, তবে রহস্য অন্যখানে: ১০০ টাকা সাহায্য (তথা ঋণ) দিলে সেই প্রসেসিং ফী হিসেবেই ২২ টাকা কেটে রাখে; আবার বোনাস হিসেবে শর্ত থাকে যে ওদের কনসালটেন্ট নিয়োগ দিতে হবে, মালপত্র ওদের নির্ধারিত জায়গা থেকেই কিনতে হবে ইত্যাদি। ওদের কনসালটেন্টের বেতন, বিলাসের ব্যবস্থাতে খরচ হয় আরো প্রায় ৫০ টাকা। বাকী টাকায় সরাসরি কাজ হয় (তাও মাল কেনার সময় চয়েস থাকে না)। এভাবে দেখা যায় আদতে ১‌০০ টাকার বিপরীতে ১০২ টাকা শোধ করতে হবে এমন সহজ সাহায্য মনে হলেও আমাদেরকে আসলে ৩০ টাকার জন্য ১০২ টাকা শোধ করতে হচ্ছে। ফলে যত বেশি টাকা গছানো যায় ততই লাভ - লালসুতা বের হবে আমাদের জনগণের।

আমার মনে হয় স্টিল ব্রীজ নির্ধারণ করা হয়েছে অনেককিছু বিবেচনা করেই - খরচও তার মধ্যে একটা বড় ফ্যাক্টর। স্ট্রাকচারে স্টিল ব্যবহৃত হলে সার্বিক বিবেচনায় খরচ কমারই কথা (কারণ, ডেড লোড কম + স্প্যান বেশি)। অনেকগুলো বিকল্প টেকনিক্যাল প্রস্তাব থেকে ভালটা নির্বাচন করাটাই রেওয়াজ।

আর, আমার ধারণা শুধু বাংলাদেশ নয়, চীনের মত অন্য দেশগুলোতেও জমির মালিক সেই দেশের সরকার।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

দিগন্ত এর ছবি

বাংলাদেশে সব জমির মালিক সরকার? ব্যক্তিমালিকানায় জমি থাকে না?


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

শামীম এর ছবি

আমার বাসার সমস্ত আসবাবপত্রের মালিক আমি, কিন্তু একেকটা একেকজন ব্যবহার করে। আমি চাইলেই সেগুলো ফেরত বা অন্য ব্যবহারের জন্য নিয়ে নেয়ার অধিকার সংরক্ষণ করি --- ব্যাপারটা অনেকটা সেরকম। আমাদের জমি পড়েছে ফ্লাড ফ্লো জোনে - তাই সেখানে কোন রকম অবকাঠামো নির্মান করতে পারবো না; বোঝেন কতবড় মালিক আমরা -- নিজের জমিতে কিছু করতে পারবো না --- কারণ এটা সেই আসবাবপত্রের মতই আমাকে ব্যবহার করতে দেয়া হয়েছে, আসল মালিক রাষ্ট্র।

সব জমি রাষ্ট্রের। তাই কোন জমি ব্যবহার করার সীমাবদ্ধতা রাষ্ট্র নির্ধারণ করে দেয় -- ধরুন এয়ারপোর্টের ল্যান্ডিং স্ট্রিপের পাশে উচ্চ ভবন হতে পারবে না কিংবা সিভিল এভিয়েশনের অনুমতি নেয়া লাগবে। উপযুক্ত কোন কারণে জমি অধিগ্রহণ করলে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়। আর যেই জমিতে কেউ থাকে না দলিল করেনি (দলিলও আসলে ৯৯ বছরের লিজ), সেগুলোকে খাস জমি বলে --- সেগুলো অধিগ্রহণ করতে জটিলতা কম। ব্যক্তিই যদি জমির মালিক হত, তাহলে রাষ্ট্র চাইলেই সেটা অধিগ্রহণ করতে পারতো না -- বড়জোর অনুরোধ করতে পারতো।

পানির উপর দিয়ে সেতু করলে সেই জমি সাধারণত অধিগ্রহণে ঝামেলা হয় না, কারণ নদী বা উপসাগরের জমি খাস জমি - কোন নাগরিক সেটা দলিল করে লিজ নেয়নি। কিন্তু সংযোগকারী রাস্তা বানানোর সময় অন্যকে ব্যবহার করতে দেয়া (অর্থাৎ তথাকথিত মালিকানা ওয়ালা) জমি অধিগ্রহণ করার দরকার হতে পারে; জমির লোকজনকে পুণর্বাসন করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব (যেমন, আমার পোষ্যদের দেখভাল করা আমার দায়িত্ব) .... .... ইত্যাদি।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

তানভীর এর ছবি

রাষ্ট্র আসলে মালিক নয়। তবে রাষ্ট্র প্রয়োজন মনে করলে নাগরিকের কোনো অনুমতি ছাড়াই ক্ষতিপূরণ দিয়ে ব্যক্তিমালিকানা রহিত করতে পারে। রাষ্ট্রের এ ক্ষমতাকে বলে পাওয়ার অফ এমিনেন্ট ডোমেইন

শামীম এর ছবি

যে নামেই ডাকা হউক, ঘটনা তো একই মনে হয়। ব্যক্তির জমিতে ব্যক্তি রাষ্ট্রপ্রদত্ত স্বাধীনতার বাইরে কিছু করতে পারবে না - তাও এই সীমিত ব্যবহারের ক্ষমতা সবসময় জমি ক্রয়ের আগে থেকে জানা থাকে না তথাকথিত মালিকের। এই মালিকানা থাকা আর না থাকাতে কী পার্থক্য? -- এয়ারপোর্ট করার আগে তো পাশের জমির মালিককে জিজ্ঞেস করেনা; কিন্তু এয়ারপোর্ট করার পর উচ্চতা (ব্যবহার) নির্দিষ্ট করে দেয়। একই কথা DAP ডিটেইলড এরিয়া প্লান বা অন্য কোন প্রজেক্টের ক্ষেত্রেই সত্য। জমি অধিগ্রহণ করলে ক্ষতিপূরণ পায়, কিন্তু ব্যবহার সীমিত করে দিলে এমন কোন ব্যবস্থা নাই। আবার মৃত ওয়ারিশহীন ব্যক্তি কিংবা দেশ ত্যাগী ব্যক্তির সম্পত্তি রাষ্ট্রের কোষাগারে জমা হয়।

বলতে গেলে রাষ্ট্র যা খুশি তাই করতে পারে - জমি অধিগ্রহণ করতে পারে, জমির ব্যবহার সীমিত করে দিতে পারে। কাজেই প্রায়োগিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রই মালিক - আইনের প্যাঁচানো ভাষায় যা‌ই লেখা থাকুক না কেন। যা হোক পোস্টের প্রসঙ্গের অনেক বাইরে চলে গিয়েছি মনে হয়।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

উচ্ছলা এর ছবি

তথ্যগুলো বিস্তারিত জেনে অনেক মজা পেলাম। ধন্যবাদ, শামীম।

উচ্ছলা এর ছবি

এক মন্তব্য দুবার এসেছে।

কৌস্তুভ এর ছবি

ব্রিজ বাস এই খবরগুলো আগেই শুনেছি, তবে পোস্টে মন্তব্যে যে আলোচনাগুলো এসেছে তা ইন্টারেস্টিং। হাসি

নীলকান্ত এর ছবি

রণপা বাস সম্পর্কে আগে একটু পড়েছিলাম, এক রিপোর্ট বানাতে গিয়ে। ক্লাসেও হালকা পড়া হয়েছিল।

চলুক


অলস সময়

সুলতান এর ছবি

ধন্যবাদ শামীম ভাই।

ভালো লাগলো লেখাটা, বিশেষ করে লেখার বিষয়বস্তু।

ইফতি এর ছবি

অসাধারণ লেখা।ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনি বলেছেন সবাই ঠেকে শিখে, কই না তো আমরা তো তা করিনা। আচ্ছা এসব দেখে ঢাকার অবস্থা ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস পরল, আর চট্টগ্রামেও ভিড় বাড়ার আগেই যা করার করতে হবে।

সাফি এর ছবি

কিছু কিছু দেখেছিলাম আগে, ভাইরাল হওয়া ভিডিওর বদৌলতে, বিস্তারিত জানলাম লেখা থেকে

তৌফিক জোয়ার্দার এর ছবি

আমাদের মোটা মাথা আর পায়াভারী নীতি নির্ধারকরা এসব দেখে কিছু আইডিয়া নিলে বেশ হতো। পোস্ট ভাল লাগল।

পিকাসো এর ছবি

চীন অনেক এগিয়ে।আমাদের দেশ কবে যে বিজ্ঞান কে গুরুত্ত দিবে???

Joy Imran এর ছবি

ভালো লাগলো চীন সম্পকে জেনে।।।।।।।।।।।।।।।।।।।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।