হাওয়াই মিঠাই ৪

কনফুসিয়াস এর ছবি
লিখেছেন কনফুসিয়াস (তারিখ: সোম, ১৭/০৩/২০০৮ - ৯:১২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাসার মেইলবক্সে নিয়মমাফিক একবার করে উঁকি দিই, প্রতিদিন, সাধারণত বিকেলে, কখনো রাত করে বাড়ি ফিরেও।

ইমেইল-এসএমএস-ফোনের এই ঝটপটে দুনিয়ায় কারো হাতের লেখা চিঠির প্রত্যাশা করি না অবশ্য, সে যুগ অনেক কাল আগেই নেই হয়ে গেছে। চিঠি পাবার অসামান্য আনন্দের দিন পার করে এসেছি। এখন মেইলবক্স খুলে পাই জাগতিক সকল সমস্যার আমলনামা, কখনও নতুন সমস্যায় জড়িয়ে পড়বার লাস্যময় আহবানও। ব্যাংকের কাগজ-নেটবিল-ফোনবিল-ক্রেডিটকার্ড, পাশের রাস্তায় কোন একটা বাড়ির আদরের বিড়াল হারিয়ে গেছে- এই সব নানানরকম ভেজাল।

তার মধ্যেই, গত পরশু- হাত বাড়িয়ে দেখি এয়ার-মেইলে আসা ডাক। দেশ থেকে? আগ্রহ নিয়ে খামটা হাতে তুলে নিই, না, সিংগাপুরের টিকিট লাগানো।

তখুনি মনে পড়লো, ফেইসবুকের মেসেজে কদিন আগেই আমার ঠিকানা দিয়েছিলাম ফারুক হাসান-কে। সিংগাপুর থেকে একুশে উপলক্ষে একটা প্রকাশনা বের করেছেন তাঁরা- অবিনাশী গান- নাম দিয়ে। সেখানে আমার একটা দুর্বল গদ্য তাঁরা ছাপিয়েছেন, তারই সৌজন্য সংখ্যা বয়ে নিয়ে এসেছে এই খাম। পোস্ট করা হয়েছে জানতাম, কিন্তু এত তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবো হাতে, এরকমটা ভাবি নি। অপ্রত্যাশিতই বলা চলে, অনেক ধন্যবাদ তাই।

প্রকাশনাটা হাতে নিয়ে মন ভালো হয়ে গেলো।
কলেজে আমাদের প্রতি টার্মে একটা করে বাংলা আর ইংরেজী সাময়িকী বের হতো। বাংলাটার নাম ছিলো 'তরংগ', ছোটখাটো আকৃতির, সম্ভবত দুই বা তিন ফর্মার হতো সেটা। 'অবিনাশী গান'-এর আকৃতি আমাকে তরংগের কথাই মনে করিয়ে দিলো।
এক রঙা প্রচ্ছদ, ভালো মানের সাদা কাগজে একদম ঝকঝকে ছাপা। খুব আকর্ষনী, এমনটা নয়, কিন্তু বেশ একটা 'ভাব' আছে বলতেই হবে।

লেখাগুলোও সমৃদ্ধ। বাসমতী উপাখ্যান নামে বিলোরা চৌধুরীর কবিতাটা খুব ভাল লেগে গেলো। স্মরণিকা নাম দিয়ে আলাদা একটা অংশে স্মরণ করা হয়েছে তাজউদ্দীন আহমেদ, শামসুর রাহমান এবং একুশের প্রথম কবিতার কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরীকে। এই উদ্যোগটা অভিনন্দনযোগ্য।

গোটা চার সচলের লেখাও ছাপা হয়েছে ওখানে, ঘুরে ফিরে তাঁদের লেখার প্রতি চোখ চলে যাচ্ছিলো বার বার, চেনা জানা নামগুলোর প্রতি ভালোবাসা বেড়ে যাওয়ার মুশকিল টের পাচ্ছি দিন দিন।

মুহম্মদ জুবায়েরের 'একুশ, দুর থেকে'- খুব ভাল লাগলো। পেছন ফিরে এই দুরে তাকানো- একই সাথে দেশ থেকে, আবার অনেক দুর পেছনে ফেলে আসা সময়ের দিকে বেশ আদুরে একটা পরশ বুলিয়ে যাওয়া।
ইশতিয়াক রউফের- প্রবাসের কথোপকথন সিরিজের দুর্দান্ত ভক্ত আমি। একুশ নিয়ে কথোপকথন পড়ে আবারও ভালো লাগলো।

আর সদ্য-প্রয়াত সেলিম আল দীন-কে নিয়ে লেখা ফারুক হাসানের 'নাটকের কবি'- অল্প জায়গায় অনেক বড় একটা মানুষকে ধরে রাখবার প্রয়াস।

প্রবাসে থেকে এরকম একটি সংকলন প্রকাশের পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ দেখে আমি বেশ মুগ্ধ হই। পাতা উলটে যাই, আর নিজের মনেই বার বার বলি, এই সব ভালো লাগে...।
*

বেশ সুন্দর একটা নাটক দেখলাম আজ। মুহম্মদ জাফর ইকবালের - গ্রামের নামটি খঞ্জনা। একুশ উপলক্ষ্যেই লেখা। একজন সাধারণ বাংগালী মা, তাঁর এই ডিজ্যুস যুগের সন্তানদের কাছে যিনি খুব 'উইয়ার্ড' একটা মানুষ; দেশ, ভাষা আর গর্ভধারিণী- এই তিন মায়ের প্রতি ভালবাসা নিয়ে যিনি দিনাতিপাত করেন। সুবর্ণা মুস্তাফা, কি অসাধারণ পরিমিতিবোধ, যেখানে যেমনটা দরকার, চোখ মুখে ঠিক প্রয়োজনীয় অভিব্যক্তি, একটুও কম কিংবা বেশি নয়- এখনো কেমন করে যে পারেন!

আবহ সংগীতে ছিলেন ইবরার টিপু। ভদ্রলোককে কোন কষ্টই করতে হয় নি বলতে গেলে। রবি-সাম্রাজ্যের অফুরান সম্পদ থেকে তুলে এনে এনে শুধু জায়গামতন বসিয়ে দিয়েছেন।

পাশাপাশি বসে আমরা দু'জন নাটক দেখি। নাটকের গল্পে ডুবে যাই, সেই সাথে রবীন্দ্রনাথের সুরে, সব মিলিয়ে কেমন যে চোখ জ্বালা করে ওঠে, পরস্পরের কাছ থেকে চোখ লুকাই শুধু আমরা।

পরবাসী খাঁচায় আটকে থাকা এই ছটফটে মনটাকে যে কোনখানে লুকাই...।


মন্তব্য

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

"গ্রামের নামটি খঞ্জনা" দেখেছি কয়েকদিন আগে। আমার মতো পাথর-হৃদয় মানুষের চোখও ছলছল করে উঠেছিল নাটকের একেবারে শেষে এসে।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

ফারুক হাসান এর ছবি

auto
'অবিনাশী গান'- প্রচ্ছদ (এঁকেছেন মিজানুর রশিদ)

ফারুক হাসান এর ছবি

এইরে, ছবিটা এমন আসছে কেন! মন খারাপ
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

প্রচ্ছদটা দারুন!

পরিবর্তনশীল এর ছবি

পরবাসী খাঁচায় আটকে থাকা এই ছটফটে মনটাকে যে কোনখানে লুকাই...।

একটি ছেলে- রাতের ঘুমটা ফেলে
করছে স্মৃতি রোমন্থন।
বুকের মাঝে তার হাহাকার
আর চাপা ক্রন্দন।
কতদিন দেখিনা তোমায়
কতদিন দেখিনা...
আমার বাংলাদেশ।
আমাদের সবার বাংলাদেশ...
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

স্বপ্নাহত এর ছবি

পরস্পরের কাছ থেকে চোখ লুকাই শুধু আমরা।

কারো কথা ভেবে চোখের জল লুকিয়ে রাখতে হয় পাশে এমন কেউ একজন আছে- এটা ভেবেই তো সারা জীবনে কখনো ঠোঁটের হাসি মুছে যেতে দেওয়া উচিত না। হাসি

পরবাসী খাঁচায় আটকে থাকা এই ছটফটে মনটাকে যে কোনখানে লুকাই...।

এই অনুভূতিটাকে এর চে সুন্দর করে কিভাবে বলা যায় অনেক ভেবেও বের করতে পারলাম না মন খারাপ

=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
LoVe is like heaven but it hurts like HeLL

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

কনফুসিয়াস এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- নাটকটি এড়িয়ে যাচ্ছি বেশ কিছুদিন ধরে। দেখতে সাহস পাই না!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

অমিত আহমেদ এর ছবি

সুন্দর লেখা।

নাটক দেখা হয় না। এভাবে কেউ কোনো নাটকের কথা বললেই কেবল সেটা দেখতে ইচ্ছে করে।

"অবিনাশী গান" হাতে পাই কিভাবে?

কনফুসিয়াস এর ছবি

অমিত,
অবিনাশী গানের সফট-কপি ফারুক হাসানের কাছে থাকতে পারে। আমি নিশ্চিত নই।
নাটকটা দেখে ফেলুন, চমৎকার।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

ফারুক হাসান এর ছবি

আমার খুব ইচ্ছে ছিল (এখনও আছে) অবিনাশী গান সচলায়তনে তুলে দেই। কিন্তু জটিলতা থাকতে পারে বিধায় দেইনি।
দেখা যাক কি করা যায়।
আর কনফুসিয়াস, আপনার অনুভুতি জানতে পেরে খুব ভালো লেগেছে। সবার কাছেই যদি এমন করে পৌছানো যেত প্রকাশনাটি!
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।

অমিত আহমেদ এর ছবি

যদি সমস্যা না থাকে তবে আমাকে ইমেইল করে দিতে পারেন। aumit.ahmed@জিমেইল.com

বিপ্লব রহমান এর ছবি

আমাকেও দেবেন প্লিজ।...


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে ও ফারুক হাসানকে। আমিও অবাক হয়েছি এত দ্রুত 'অবিনাশী গান' হাতে পেয়ে। খুব ভাল লেগেছে এই প্রয়াস।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

এই লেখায় দেখি আমারও নাম আছে। তবু লজ্জা-শরমের মাথা খাইয়া কই, ভাল্লাগলো খুব।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

রায়হান আবীর এর ছবি

রবীন্দ্রনাথ না থাকলে কি যে হইতো...লেখাটা ভালো লেগেছে...
---------------------------------
এসো খেলি নতুন এক খেলা
দু'দলের হেরে যাবার প্রতিযোগিতা...

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

প্রচ্ছদ আর অনুভূতিটা ভালো লাগলো। প্রচ্ছদটা একটু লোভও জাগালো। নাটকটা দেখেছি। সত্যি খুব সুন্দর।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।