অনুবাদ প্রসঙ্গেঃ এইবার তবে উলটো পথে চলো-

কনফুসিয়াস এর ছবি
লিখেছেন কনফুসিয়াস (তারিখ: সোম, ২৪/০৮/২০০৯ - ৯:৩০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এখানকার একটা নামকরা দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য পাতা পড়তে গিয়ে সম্ভবত প্রথম মাথায় আসে কথাটা। অথবা তারও আগে, হয়ত ঝুম্পা লাহিড়ি পড়ছিলাম যখন, তখন। অথবা, এখন মনে হচ্ছে আরও খানিক আগে, মার্কেজের গল্পগুলো যখন পড়ছিলাম, সম্ভবত তখনই।

সাহিত্যপাতায় যে গল্পটা পড়ছিলাম, সেটা আবার সে পত্রিকার সাহিত্য আয়োজনে প্রথম পুরষ্কারপ্রাপ্ত। গল্পের শুরুতে আলাদা রঙ ও ফন্টে সে কথা বিশেষভাবে জানান দেয়া, গল্পের মাঝামাঝি আলাদা একটা বাক্সে লেখকের নাতিদীর্ঘ পরিচিতি, এবং গল্পের সাথে মানানসই চমৎকার একটা ছবি। বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়তে শুরু করলাম, একজন লেখকের গল্প। ল্যাপটপে গল্প লিখতে গিয়ে তার কাছে গার্লফ্রেন্ডের ফোন আসে, গল্প না গার্লফ্রেন্ড এই দ্বিধায় কেটে যায় গল্পের বাকি অংশটুকু, সবশেষের লাইনে, দেখা যায় ল্যাপটপ খুলে রেখে লেখক বসে, মোবাইলটা সুইচ্ড অফ।
গল্পটা খারাপ লাগে না, পড়ে নিয়ে ভাবি, গল্পটা মন্দ নয়; কিন্তু তারপরেই ভাবি, গল্পটা আসলে কতটুকু ভাল?

ঝুম্পা লাহিড়ি পড়তে গিয়ে এমন হয়েছিলো। খুব ভাল লেগেছিলো ইন্টারপ্রেটার অব মেলাডিস, এই সহজ সরল বর্ণনা, বিষয় বাছাইয়ের সারল্য, সবই। কিন্তু মাথায় ঘুরছিলো ওয়ালীউল্লাহ বা হাসান আজিজুল হকের গল্পগুলোর ধার। তুলনা টানার প্রশ্নই আসে না, আমি ভাবছিলাম অন্য কিছু। ভাবছিলাম, শুধু ইংরেজিতে লেখা বলেই এই গল্পের লেখকেরা বিনা আয়াসেই কেমন করে পৌঁছে গেলেন আমার মতন একজন ভিনভাষীর কাছে।

কদিন আগে কোয়েটজি-র ডিসগ্রেস পড়ছিলাম, এখনো শেষ করিনি, কিন্তু পড়ার সময় খুব ভাল লাগছিলো, বর্ণনাগুলো কি টানটান, হুট করে গল্পের এমাথা ওমাথা এফোঁড় ওফোঁড় করে চিরে দেয়া কিছু দৃশ্যপট। আমার মনে হচ্ছিলো, আমাদের ইলিয়াসের গল্পের যে চমৎকারিত্ব, সেও কি কিছু কম?
আমার খানিকটা দুঃখবোধ হলো তখন। আমাদের ইলিয়াস, মানিক, মাহমুদুল হক, হাসান আজিজুল, এঁরা কেবল আমাদেরই রয়ে গেলেন, যাবেন, পুরো বিশ্বের পাঠকদের কাছে তাঁদের পৌছানো হবে না কোনদিন। কারণ, এনাদের সাহিত্যকর্ম কেবল বাংলায়ই পাওয়া যায়, ইংরেজি বা আর কোন ভাষায় নয়। অথচ যদি এঁদের লেখা পড়তে পেতো পুরো দুনিয়া,তবে বুঝতো, আমাদের এই সোঁদাগন্ধের বাংলা মাটিতে কতই না রত্ন ছড়িয়ে আছে!

মাইকেল মধুসুদন গোত্রীয় কোন ভাবনা আমার মাথায় চেপে বসেছে ভাবার কোন কারণ নাই। আমি বলছি না, আমাদের লেখকদের ইংরেজিতে লেখার দরকার ছিলো।
কদিন আগে সৈয়দ হক এর একটা লেখায় এরকম কিছু পড়েছিলাম, ফজলে লোহানী কোন এক আলাপচারিতায় তাঁকে বলেছিলেন ইংরেজিতে লিখতে। কারণ, ইংরেজির মাধ্যমেই পুরো পৃথিবির কাছে পৌঁছানো যায়। সৈয়দ হক, স্বভাবতই এ কথা কানে নেননি। আমারও সেই একই কথা। আমাদের লেখকদের ইংরেজিতে কেন লিখতে হবে? কেন তাঁদের লেখাগুলোকেই আমরা দায়িত্ব নিয়ে ইংরেজিতে অনুবাদ করে দিবো না?

অনুবাদ সাহিত্য আমাদের ভাষায় এখন পোক্ত আসন করে নিয়েছে। বিশ্বের নানান ভাষার ক্লাসিক বা শ্রেষ্ঠতম গল্প-উপন্যাসগুলো আমরা অনুবাদের কল্যাণে চট করে বাংলায় পড়ে ফেলতে পারছি। এ কারণে, আমি ব্যক্তিগতভাবে, আমাদের অনুবাদকদের কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমি ভাবছি, অনুবাদের ক্ষেত্রে এবার বোধহয় আমাদের উলটো পথে হাঁটবার সময় হয়ে এসেছে। বিশ্বসাহিত্যের বাংলা অনুবাদই শুধু নয়, এখন থেকে আমাদের বাংলা সাহিত্যর ইংরেজি অনুবাদ প্রকল্প নিয়েও ভাবা উচিৎ।

মার্কেজ পড়া শুরু করার পরে এই ভাবনাটা একটা পাকাপাকি আসন পেল মাথায়। আমি দেখলাম, মার্কেজ কি দারুণ ভাগ্যবান। উনি নিজের ভাষায়ই লিখেন, কিন্তু লিখবা মাত্রই সেসব অনুবাদ হয়ে চলে আসে আমাদের কাছে। রাশানরা একসময় পৃথিবি জুড়ে এই অনুবাদ প্রকল্প ছড়িয়ে দিয়েছিলো, তাদের গল্প-উপন্যাস, রূপকথা, সবকিছুর নানান ভাষার অনুবাদ পাওয়া যেত সবখানে। তাহলে আমরা পারবো না কেন? এরকম উদ্যোগ সরকারী বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নেয়া কি একেবারেই অসম্ভব?

আমি এখনো জানি না, বুঝতে পারি, অনেক বড় একটা প্রকল্প হয়তো এটা, হয়ত অনেক অর্থের প্রয়োজন। তবু আমার স্বপ্ন, কখনো যদি সুযোগ পাই, আমাদের ভাষার শ্রেষ্ঠ কাজগুলিকে অন্ততপক্ষে ইংরেজিতে অনুবাদ করার একটা উদ্যোগ অবশ্যই নেব।
আমার এরকম স্বপ্ন দেখতে ভাল লাগে, কাম্যুর যে আগন্তকের দুঃখে এই সুদূরে বসে আমি ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ি, অথবা মার্কেজের যে কর্নেলের পাশে বসে একটা কখনো-না-আসা চিঠির অপেক্ষা করি, তেমনি করেই হয়ত কোন একদিন সেই জর্মন বা স্পেনের কোন এক জানালায় বসা কোন এক কিশোর ইলিয়াসের হাড্ডি খিজিরের সাথে ঘুরে বেড়াবে ঢাকার গলি-ঘুপচি, অথবা মাহমুদুল হকের আব্দুল খালেকের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে রেখাকে ডেকে বলবে, গিরিবালা, ও গিরিবালা, তোমার এত রাগ কেন গো গিরিবালা?

ছোটবেলায় রচনা বইয়ে পড়েছিলাম, যদি এক কোটি টাকা পাইতাম, তবে সকল গুড় ভাত দিয়া খাইতাম।
আমি আজ ভাবি, এক কোটি টাকা সত্যিই যদি পাইতাম, তবে বাংলা সাহিত্য অনুবাদ করে দুনিয়াময় ছড়িয়ে দিতাম।


মন্তব্য

রেজওয়ান এর ছবি

খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব। তবে এই কাজটি করার জন্যে ইংরেজী বা অন্য যে ভাষায় অনুবাদ করা হবে (ধরুন জার্মান বা স্প্যানিশ) সেটাতে খুবই দক্ষ হওয়া জরুরী। আমাদের তো বাজে অনুবাদ পড়ার অভিজ্ঞতা আছেই।

কিন্তু তাই বলে কি আমরা হাত পা গুটিয়ে বসে থাকব? এমন করলে কেমন হয়? পূর্ব প্রস্তাব অনুযায়ী সচলায়তনে একটি এডিটর্স প্যানেল বসানো যেতে পারে (অনুবাদের ভাষায় দক্ষ)। তাহলে সচলায়তন থেকেই গুটি গুটি পায়ে আমাদের অগ্রযাত্রা শুরু হতে পারে। এবং আমরাও সাহস করতে পারি ছোটখাট অনুবাদ দিয়ে শুরু করতে।

পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

কনফুসিয়াস এর ছবি

খুব ভাল আইডিয়া। এ সংক্রান্ত কিছু সম্পুরক আলোচনা উঠে আসতে পারে, যেমন কপিরাইট, লেখক বা গল্পের তালিকা, ইত্যাদি।

-----------------------------------
আমার ইচ্ছে হলো বাজাতে গীটার, মন আমার, মন আমার, মন আমার-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

মামুন হক এর ছবি

কনফু ভাইয়ের উদ্যোগের সাথে আছি।

সবজান্তা এর ছবি

চলুক

অনুবাদের এই দিকটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকদিন আগে সানন্দার একটা চমৎকার লেখা পড়েছিলাম, বাংলা ভাষায় লিখা সাহিত্যকর্মের অনুবাদের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। সেখান থেকেই জেনেছিলাম, রবীন্দ্রনাথ নিজেই গীতাঞ্জলির অনুবাদ করেছিলেন, নাম দিয়েছিলেন, দ্য সং অফারিংস। আমি নিজেও সেই লেখকের সাথে একমত যে গীতাঞ্জলি নামটির মধ্যে যে অনুভব, দ্যোতনা রয়েছে, দ্য সং অফারিংস নামে তা অনুপস্থিত। প্রাঞ্জল অনুবাদ হলে হয়তো আমাদের অনেক বই-ই আন্তর্জাতিক পুরস্কারের জন্য মনোনীত হতো।

যেকোন অনুবাদই আসলে মূল সাহিত্যরচনার চেয়ে কম অংশে কম সৃজনশীল না। অনুবাদককে লেখার মূলভাবকে আত্মস্থ করতে হয়, তাকে অন্য ভাষায় রূপান্তর করতে হয়, এবং মূল লেখকের স্টাইলকে যথাসম্ভব দৃষ্টিকটু না করে, অবিকৃত রাখতে হয় (অর্থাৎ ইম্প্রোভাইজেশনের একটা সঠিক মাত্রা নির্ধারণ করা)। ইংরেজি থেকে বাংলা করাই আসলে একটি দুরূহ, সময়সাপেক্ষ কাজ। বাংলা থেকে ইংরেজিতে সেই সাথে আরেকটি যোগ্যতা দরকার হয়, ইংরেজি ভাষায় শৈল্পিক পর্যায়ের দক্ষতা রাখা। আমাদের দেশে এই পর্যায়ের জ্ঞান যাদের আছে, তাঁরা এগিয়ে আসলে কাজটা সহজ হতে পারে। ব্লগেও অবশ্য এমন লোক আছেন বেশ কিছু, যারা এই পর্যায়ের সাহিত্যরুচি এবং ইংরেজি দক্ষতা ধারণ করেন।

আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে, প্রকাশ এবং বিপণন সংক্রান্ত। একটি বিদেশি প্রকাশনী কেন বাংলাদেশের ইলিয়াস কিংবা মাহমুদুল হকের বই ছাপতে রাজি হবেন? সম্ভবত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খ্যাতি সম্পন্ন লেখক/ব্যক্তিত্বদের অবদান রাখার দরকার আছে এখানে। আরেকটা অপশন হতে পারে, দেশের প্রকাশকদের বের করা ইংরেজি অনুবাদ বাইরে বিপণনের ব্যবস্থা করা। অবশ্য এই ব্যবস্থার ফিজিবিলিটি নিয়ে আমি সন্দিহান।

পুনশ্চ: কোয়েটেজের "লাইফ এন্ড টাইমস অভ মাইকেল কে" পড়া ধরলাম গতরাত থেকে। পড়েছেন এটা ?


অলমিতি বিস্তারেণ

কনফুসিয়াস এর ছবি

আমিও ভাবছিলাম যে, সরকারী বা আর কোন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা বাদে ব্যক্তিগত বা ছোটখাটো উদ্যোগে এটা সম্ভব কি না। এই নিয়ে মনে হয় আরো আলোচনা হবার দরকার।

( কোয়েটজির এই বইটা পড়িনি এখনও, ডিসগ্রেস শেষ করে বাকিগুলোও খুব দ্রুতই শেষ করে ফেলবো ঠিক করেছি।)

-----------------------------------
আমার ইচ্ছে হলো বাজাতে গীটার, মন আমার, মন আমার, মন আমার-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

হিমু এর ছবি

এ প্রসঙ্গে আগামী বছর নাগাদ একটা পোস্টে তিক্তমধুর অভিজ্ঞতার কথা জানাবো।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

পরিবর্তনশীল এর ছবি

খুব খুব খুবই দরকার।

আমার নিজের একটা স্বপ্ন আছে, একদিন বিভূতিভূষণের "পথের পাঁচালী", "দৃষ্টিপ্রদীপ"- আর তারাশঙ্করের "হাঁসুলী বাঁকের উপকথা" ইংরেজীতে অনুবাদ করবো। হাসি
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

তুলিরেখা এর ছবি

একেবারে একমত। এমন অসাধারণ সব সৃষ্টি আছে বাংলায়, বিশ্বের কাছে পৌঁছানো খুব জরুরী। তবে কিনা খুব ভালো মানের অনুবাদ ছাড়া মূলসৃষ্টির প্রতি সুবিচার হবে না। সোভিয়েত আমলে যেমন ভালোমানের অনুবাদ হোতো রুশ সাহিত্যকে অন্য ভাষায় এনে দিতে, সেইরকম মানের বা আরো ভালো মানের অনুবাদ দরকার।
যেমন ধরুন মাণিক বন্দ্যোর পদ্মানদীর মাঝি, শীর্ষেন্দুর পারাপার, বিভূতিভূষণের দেবযান, সুকুমারের হযবরল,শব্দকল্পদ্রুম, চলচিত্তচঞ্চরি -এসব যথাযথ অনুবাদ কি সোজা কাজ? খুবই কঠিন। এর জন্য খুব ভালো পরিকাঠামোও দরকার।
আমাদের সেরকম কবে হবে বা আদৌ হবে কিনা কেজানে!
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

হিমু এর ছবি

আমি কিন্তু হযবরল-এর একটা দারুণ ইংরেজি অনুবাদ পড়েছিলাম, অনুবাদকের নাম ভুলে গিয়েছি। এক কথায় দুর্দান্ত।

এই অনুবাদযজ্ঞের জন্যে আর্থিক প্রণোদনা অপরিহার্য। অনুবাদের মতো দুরূহ কাজ শখে করা বড় মুশকিল। একজন দু'জনের নিরলস পরিশ্রম হয়তো পথ দেখাবে, কিন্তু সে পথে বাকিদের এগোতে তো হবে!

এক কাজ করা যায়। গত কুড়ি বছরের বাছাই ছোটগল্প নিয়ে অনুবাদের চেষ্টা করা যায়। প্রত্যেক অনুবাদক একটি করে ছোটগল্প অনুবাদ করে সম্পাদনা পর্ষদের কাছে দেবেন, যাঁরা সেটাকে ঘষে মেজে প্রকাশযোগ্য করে তুলবেন। এতে করে একজনের ওপর খুব চাপ পড়বে না, আবার একটি মানসম্পন্ন প্রতিনিধিত্বসূচক বইও প্রকাশ করা সম্ভব হবে। আমি ল্যাটিন আমেরিকান ছোট গল্পকারদের সাথে পরিচিত হয়েছি এমন অনেকগুলি ছোটগল্পের সংকলন পড়ে। এই প্রকল্পটি চাইলে প্রকাশায়তনের কাঠামোর মধ্যে সম্পন্ন করে পরবর্তীতে মুদ্রিত গ্রন্থ আকারেও প্রকাশ করা যায়।

কেউ আগ্রহী হলে এই পোস্টেই সম্পূরক আলোচনা করতে পারেন।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

এটাতে সহমত। এই কাজটা করা যায়। সঙ্গে থাকার ইচ্ছা জানান দিলাম।
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

কনফু'র এমন ইচ্ছা তো অনেক আগের, অন্ততঃ ২০০৮ সালের জুনের আগেরই, যখন আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ছোটগল্প নিয়ে কথা হচ্ছিলো জি-টকে...।

বাংলা একাডেমি সম্ভবত কিছু ক্লাসিক বই অনুবাদ করেছিলো। গত বছর বাংলা একাডেমির পুস্তক বিক্রয় কেন্দ্রে দেখেছি - হাঙর নদী গ্রেনেড, রাইফেল রুটি আওরাত এর মত বইয়ের ইংরেজী সংস্করণ। প্রকাশের সাল ৯৩/৯৪ এর দিকে। অবিক্রিত অবস্থায় তাকে পড়ে আছে অন্ততঃ শতাধিক কপি, গুদামে আরো থাকতে পারে। ভীষণ জীর্ণ, ফাঙ্গাস পড়া বই। ৫০% কমিশনে বিক্রির তালিকায় পড়ে আছে।
বাংলা একাডেমি তার আভিজাত্য ধরে রেখে অন্য কোথাও বইগুলো বিক্রি না করুক, অন্ততঃ বিদেশের লাইব্রেরিতে ফ্রি তো পাঠাতে পারতো?

এখানে যত বইয়ের দোকানে যাই, অন্ততঃ একবার চোখ বুলাই ট্রাভেল সেকশনে। অক্ষর ধরে বি তে যাই। বারমুদা, ব্রাজিল, বাহামাজ, বার্বাডোজ, ভুটান; আরো কতো কতো দেশের বই দেখি। কেবল বাংলাদেশ নেই।

এরপরেও কনফুর মতো আমিও স্বপ্ন দেখি -

কাম্যুর যে আগন্তকের দুঃখে এই সুদূরে বসে আমি ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ি, অথবা মার্কেজের যে কর্নেলের পাশে বসে একটা কখনো-না-আসা চিঠির অপেক্ষা করি, তেমনি করেই হয়ত কোন একদিন সেই জর্মন বা স্পেনের কোন এক জানালায় বসা কোন এক কিশোর ইলিয়াসের হাড্ডি খিজিরের সাথে ঘুরে বেড়াবে ঢাকার গলি-ঘুপচি, অথবা মাহমুদুল হকের আব্দুল খালেকের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে রেখাকে ডেকে বলবে, গিরিবালা, ও গিরিবালা, তোমার এত রাগ কেন গো গিরিবালা?

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

যতদূর মনে পড়ে বাঙলা একাডেমী'র মনে হয় এ ধরনের একটা প্রকল্প ছিল। সে প্রকল্পের এখন কী অবস্থা সেটা জানি না। এ ধরনের উদ্যোগ প্রাতিষ্ঠানিকই হওয়া উচিত। ব্যক্তিপর্যায়ের উদ্যোগে কতটা লাভবান হবে তা বলা মুশকিল! তবে কেউ শুধু করলে কাজ কিছুটা তো হবেই। হিমু ভাই কুড়ি বছরের ছোটগল্পের সংকলন নিয়ে যেটা বলেছেন, সেরকম হতে পারে। তবে যারা গল্প অনুবাদ করবেন, তাদের কর্মযজ্ঞের উপর নির্ভর করবে ভিন্নভাষী পাঠকেরা আমাদের সাহিত্য'র কেমন স্বাদ পাবে।
.......................................................................................................

আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।

হিমু এর ছবি

কনফু লোকটারে ধইরা এখন পিটাইতে ইচ্ছা করতেসে। এত এত কাজ হাতে! নতুন আরেকটা ভূত ঢুকাইলো মাথায়।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

যুধিষ্ঠির এর ছবি

অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কাজ। কনফুসিয়াসকে ধন্যবাদ আলোচনা শুরু করার জন্য। ব্যাপারটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া যায়। প্রকাশায়তনের আসলে অনেক কিছু করার স্কোপ আছে এখানে।

অনেক আগে এরকম একটা প্রসঙ্গে আলাপ হচ্ছিলো একটা আড্ডায়। আমার প্রশ্ন ছিলো, ঢাকা বা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ইংরেজীতে অনার্স-মাস্টার্স-পিএইচডি(?) করেন, তাদের কোর্স প্রজেক্ট হিসেবে বাংলা সাহিত্য অনুবাদের কাজ দেয়া হবে না কেন? উত্তর যেটা শুনেছিলাম সেই সময়ে, যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অনেক শিক্ষক বাংলা সাহিত্য পড়াটাকেই তেমন গুরুত্ব দিতে চান না - অনুবাদ তো অনেক পরের কথা। সত্য মিথ্যা জানি না, বা এখন যুগ পাল্টেছে কি না জানি না। সেইরকম হলে একটা নিয়মিত প্রাতিষ্ঠানিক রূপ থাকতো এরকম একটা কাজের।

হিমুর ছোটগল্প নিয়ে শুরু করার আইডিয়াটা বেশ কাজের হবে।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

এই উদ্যোগের কোনো আপডেট কারো কাছে আছে?

-----------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

রিসালাত বারী(অতিথি) এর ছবি

একবছর পর এসে আমিও আবার আপডেট জানতে চেয়ে গেলাম।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।