প্রান্তিক

মাহবুব লীলেন এর ছবি
লিখেছেন মাহবুব লীলেন (তারিখ: সোম, ৩০/১১/২০০৯ - ২:১৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তিনদিনের হাঁটাপথ পার হয়ে বাবা আর আমি এসে দাঁড়ালাম রাজ্যটিলার বাউন্ডারির সামনে। এখন সামনের বিশাল হাওরটার মাঝখানে রাজ্যটিলা। বাউন্ডারি থেকে হাওরের পানির উপর দিয়ে বৃত্তাকার অনেকগুলো কাঠের ভাসমান পথ চলে গেছে রাজ্যটিলায়। তার বেশিরভাগই ফাঁদ। চিনতে ভুল করলে সারারাত হেঁটে আবার মূল জায়গাতেই ফিরে আসতে হবে। এই পথগুলোর মধ্যে একটামাত্র পথ সরাসরি গিয়ে উঠেছে রাজ্যটিলায়। দুটো পথ গিয়ে মিশেছে রাজ্যটিলায় উঠার একমাত্র পথটাতে। ওই দুটো চিনতে পারলেও রাজ্যটিলায় যাওয়া সম্ভব। আর বাকি সবগুলো পথই পানির উপর দিয়ে রাজ্যটিলাকে বৃত্তাকারে ঘুরে এসে শেষ হয়েছে শুরু বিন্দুর কাছাকাছি। উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম সব দিকেই একই অবস্থা। সবগুলো পথই চোরা পথ। কিন্তু চারদিকে চারটা পথ আছে সরাসরি আর আটটা পথ ভায়া

আমরা দাঁড়িয়েছি উত্তরের বাউন্ডারিতে। একটা পথ দেখে আমার মনে হলো এটাই সরাসরি পথ। আমি দড়াম করে লাফিয়ে উঠতেই বাবা খেঁকিয়ে উঠলো- ওই হালার পুত এদিকে আয়

গালাগলি আমার গায়ে লাগে না। কিন্তু বাবা কেন যেন আমাকে হালরপুত ডাকে বুঝি না। বাবার শালা মাত্র একটাই। আর সেটা আমার দুই বছরে ছোট। আমার থেকে বয়সে ছোট একটা মানুষ আমাকে কেমনে জন্ম দেয়?

এইটা নিয়ে বাবার সাথে অনেক তর্ক হয়েছে। বাবা ঠিকাছে তুই ঠিক; বললেও আবার ঠিকই আমাকে এই ভুল গালিটা দিয়েছে

তার গালি শুনে লাফিয়ে রাস্তা ছেড়ে আবার তার কাছে দাঁড়াতেই সে আঙুল তুলে আমার রাস্তাটা দেখালো- চুদির ভাই লোকজনের ফিরে আসা দেখে বোঝো না এটা যাবার পথ না?
- এরাতো রাজ্যটিলা থেকেও আসাতে পারে
- এই তোমার বুদ্ধি চুদির ভাই। রাজ্যটিলায় গেলে ওদের পায়ে কাদা থাকতো। পথ থেকে নেমে কাদা মাড়িয়ে রাজ্যটিলায় উঠতে হয়। আবার রাজ্যটিলা থেকে কাদা মাড়িয়েই পথে উঠতে হয়। তাছাড়া এই দিন দুপুরে লোকজন রাজ্যটিলা থেকে ফিরবে কেন?

কথায় যুক্তি আছে। রাজ্যটিলায় সবাই যায় সন্ধ্যাবেলার জন্য। একমাত্র সূর্য ডোবার সময়ই রাজার দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যারা ফেরার তারা হয় রাতে না হয় পরের দিন ভোরবেলা ফিরে

আমি এবার সবগুলো পথ ভালো করে খেয়াল করি। একটা পথে কেউ ফিরছে না। একটু এগিয়ে গিয়ে দেখি গতকালের কাদাদামাখা ফিরতি পায়ের কিছু ছাপ। বাবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করি- এটা?
- এইবার ঠিক আছে হালার পুত দুলাভাই

এইটাও আরেকটা ভুল গালি। বাবার কোনো বড়োবোন নাই। আমি তার বোনকে বিয়ে করার কোনো চান্সই নাই। কিন্তু সে আমাকে এই গালিটাও দেয়। অবশ্য এই গালিটা নাকি আমাকে সম্মান করে দেয়। এতে সে আমাকে তার থেকে পদে বড়ো বানায়। এই জন্য এই গালিটা শুনলে আমি আর কিছু বলি না

বাবা হাঁটে কুঁজো হয়ে তিরতির করে। পেছনে ডানে বামে হাত দুইটা দোলাতে দোলাতে মাটির দিকে তাকিয়ে হাঁটে। কতক্ষণ পরপর টাকি মাছের মতো মাথা উঁচু করে হা করে শ্বাস নেয়। তার হাঁটার দোলায় পুরো ভাসমান পথটা দুলতে থাকে। আমার জন্য তাল সামলানো কঠিন
- চুদির ভাই আমাকে তো একটু ধরতেও পারিস। দেখিস না রাস্তায় কোনা রেলিং নাই। বুড়া মানুষ যদি পড়ে যাই তবে হাওরে আমাকে আর খুঁজে পাবি?
- তুমি পড়লে কার বালটা তোমাকে খুঁজতে যাবে?
- খেক খেক খেক। একা একা রাজার কাছে গিয়ে কোনো বালটাও ছিঁড়তে পারবে না তুমি
- তুমি থাকলেই বা আর কোন বাল? টাকা পেলেই তো তুমি আরেকটা বিয়ে করবে না হয় মাগিপাড়ায় দৌড়াবে
- আরে বলদ ওইটা শরীরের তেল মবিল। ইঞ্জিন যত পুরানা হয় তেল মবিল তত বেশি দিতে হয়। আর নতুন ইঞ্জিন চাক্কা ছাড়াও চলে
- এইটা আমাকে ঠকানোর যুক্তি। এই কথা বলে বলে তুমি আমাকে বিয়ে করতে দাও না। সেবার একটা মেয়েকে পটালাম। নয়-ছয় বুঝিয়ে তুমি নিজে বিয়ে করে ফেললে সেইটারে। এইবার যদি টাকা পাই তাইলে কিন্তু আমি বিয়ে করবই করব
- দূর ছাগল। এখন বিয়ে করবি কী? আমি বাইশ বছর হাতের উপর চালিয়েছি। তোর তো বয়সই বাইশ হবে সামনের বছর
- ওইসব বুঝি না। আমি বাথরুমের দেয়ালে আব্বা আব্বা ডাক শুনতে চাই না
- ইসসিরে আমার মর্দাপোলা। মুখ টিপলে এখনো মায়ের দুধের গন্ধ পাওয়া যাবে এর মধ্যে ধন-টাডানির গল্প। চুদির ভাই আমারে ধর

বাবার হিসেবটাই সত্য। পথটা রাজ্যটিলার সরাসরি পথ না হলেও মূল পথে মিশে যাওয়া দুটো পথের একটা। মাজা সোজা করে দূর থেকে মূল পথটা দেখতে পেয়ে বাবা টাকি মাছের মতো একবার শ্বাস নিয়ে আমার দিকে তাকালো। এখন নিশ্চয়ই আরেকটা গালি দেবে। কিন্তু কিছুই বলল না। আমার দিকে তাকিয়ে খেকখেক করে হেসে আবার কুঁজো হয়ে হাঁটতে শুরু করল। এবার আমিও তাকে ধরে ধরে এগোতে লাগলাম- আচ্ছা বাবা। আমি না তোমার নিজের ছেলে?
- কোনো সন্দেহ আছে তোর?
- সন্দেহ থাকবে কেন?
- তাইলে তুমি আমার সাথে এইরকম খাইস্টা কথাবার্তা বলো কেন? নিজের ছেলের সাথে কেউ এরকম বলে?

বাবা আবার মাজা সোজা করে উঠে দাঁড়িয়ে শ্বাস নেয়- হালার পুত। পোলার বয়স বিশ হয়ে গেলে আর বাপ-বেটা বলে কিছু থাকে না; ভাই-ভাই হয়ে যায়। তুই ইচ্ছা করলে এখন আমাকে বড়োভাই ডাকতে পারিস
- তোমাকে ভাই ডাকার কোনো ইচ্ছা আমার নাই। পারলে তোমাকে আমি শালা ডাকতাম
- তোরে তো আমি দুলা ভাই ডাকি। তুই আমাকে শালা ডাকলে তো ঠিকই আছে

লিংক রোড পার হয়ে মূল রাস্তা বেয়ে রাজ্যটিলার নিচে এসে দাঁড়ালাম। এখন কাদা মাড়িয়ে উঠে গেলেই রাজ্যটিলা। কিন্তু এখন যাওয়া যাবে না। রাজা যদি ঘর থেকে বের হয়ে মন্দিরে যান তবেই রাজ্যটিলায় উঠার অনুমতি মিলবে। রাজা কবে বের হন কেউ জানে না। তার ইচ্ছা হলে তিনি বের হন। ইচ্ছা হলে মন্দিরে যান। না হলে লোকজন যারা রাজ্যটিলার নিচের কাদা পর্যন্ত আসতে পারে তারা এখানে অপেক্ষা করে। এখানে কিছু দোকানপাট - একটা হোটেল আর একটা পতিতালয় আছে তাদের অপেক্ষা করার জন্য। যারা আসতে পারে তারা এসব দিয়ে সময় কাটায় আর রাজবাড়ির উপরের বড়ো বড়ো বাতিগুলোর দিকে নজর রাখে। রাজা বের হয়ে মন্দিরের বারান্দায় পা রাখলেই রাজবাড়ির গাছপালার ফাঁক দিয়ে বড়ো বড়ো নীল বাতিগুলো একসাথে জ্বলে উঠে। মন্দিরের পাগলাঘণ্টা বাজতে থাকে আর বুড়া পুরোহিত চিৎকার করতে থাকে লোকজন মন্দিরের সিঁড়িতে গিয়ে হুড়মুড় করে জড়ো হবার আগ পর্যন্ত

জাঙ্গিয়ার ভেতরে কয়েকটা টাকা লুকিয়ে রেখেছিলাম। পেশাব করে আসি বলে একপাশে গিয়ে টাকাটা বের করতেই পেছন থেকে খপ করে বাবা নিয়ে গেলো- আমার কিছু টাকা লাগবে রে বাপ। যদি রাত এখানেই কাটাতে হয় তবে পাড়ায় না ঢুকলে ঠান্ডায় মরেই যাবো
- তোমার তো ধান্দা একটাই। আমার কী হবে?
- তোর আবার কী? দশ বাঘে খেলে এখনও তিন বাঘের ভাগ থাকবে। তোর চিন্তা কী?
- না আমার কোনা চিন্তা নাই। তুমি মাগিপাড়ায় যাবে আর আমি বসে বসে হাত মারবো
- এহ হে হে। অত ক্ষেপিস কেন? হোটেলে থাকলে যে খরচ সেই একই খরচে পাড়ায় দুইটা সার্ভিস। রাতের থাকাটাও হলো। আর শরীরও কিছু তেল মবিল পেলো

কী একটা বলতে গিয়ে আমি থেমে গেলাম ঘণ্টির শব্দ শুনে। ঘাড় ফিরিয়ে দেখি রাজ্যটিলা ভরে আছে নীল লাইটে। বাবা চিৎকার করে উঠলো- বাজানরে রাজা...

বাবাকে ধরে কাদা ভেঙে একেবারে মন্দিরের বারান্দায় উঠে গেলাম এক দৌড়ে। বারান্দায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে রাজা। মাত্র দেড় বছর বয়স। রাজার পেছনে ঘণ্টি পেটাতে পেটাতে হরিবোল হরিবোল করে যাচ্ছে বুড়া পুরোহিত। আর বারান্দার শেষে ঘরের দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাজার বাবা আর মা। এটা কেমন রাজা। রাজার নিচের অংশে কোনো কাপড় নেই। আর রাজার বাবা মা কেউ রাজারাণী না। ওরা কামলা টাইপের মানুষ

বাবা এক লাফে রাজার বামপাশ ঘেঁষে পেছন দিকে বুড়া পুরোহিতের কাছে দাঁড়িয়ে হরিবোল হরিবোল করতে লাগলো। আর আমি রাজার মতো তার ডানপাশে বসে পড়লাম পা ঝুলিয়ে। পেছন থেকে রাজার বাবা মা আমাকে ইশারায় উঠতে বললেও আমি সেদিকে না তাকিযে হরিবোল হরিবোল করতে লাগলাম সমানে

পুরো সিঁড়ি লোকে গিজগিজ। পুরোহিত বাজনা থামিয়ে দিলো। সবাই তাকিয়ে আছে রাজার দিকে। এ রাজা কথা বলতে পারেন না। যা দেবার ইশারাতেই দেন। সবাই রাজার নাক মুখ হাত পা আঙুল এমনকি নুনুর দিকেও তাকিয়ে আছে ইশারা পাওয়ার জন্য

রাজা ডান হাত মুঠো করে আকাশের দিকে তুলে নিজের বুকে একটা ঘুষি মারলো- হুবা হুশ...

- রাম রাম রাম রাম
চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠলো বুড়া পুরোহিত। অভিশাপ অভিশাপ। বিপদ। দক্ষিণ দিক থেকে বিপদ আসবে। রাম রাম রাম

পুরো সিঁড়ি রাম রাম করে কান্না শুরু করে দিলো। রাজা সবার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে উঠে আবার বলল- হুবা হুশ...
- আছে আছে। সমাধান আছে...
আবারও চিৎকার করে উঠলো বুড়া পুরোহিত

বালের রাজা। একটা ন্যাংটা বাচ্চাপোলা আদুলবাদুল করছে এইটার আবার অনুবাদ। কিন্তু ছেলেটা খুবই সুন্দর। লোকজনের চিৎকার চ্যাচামেচি বাদ দিয়ে আমি ওকে দেখতে লাগলাম। ছেলেটাও আমার দিকে তাকিয়ে আরো কয়েকবার হুবা হুশ জাতীয় শব্দ করেছে। হঠাৎ দেখলাম ওর গলায় একটা পোকা বেয়ে বেয়ে উঠছে। আমিও ওর মতো হুবা... হুশ বলে বাম হাত দিয়ে ওর গলা থেকে পোকাটা ঝেড়ে দিলাম। খুব মজা পেলো রাজা। হেসে উঠলো। তারপর সেও আমার গলায় ডান হাতে পোকা ঝাড়ার মতো করে হুবা হুশ বলে একটা ঝাড়ি দিলো

- বলি বলি বলি। নরবলি চাই
পেছন থেকে ঘণ্টি পেটাতে পেটাতে চিৎকার করে উঠলো বুড়া পুরোহিত। দক্ষিণের সেই বিপদ থেকে উদ্ধারের একমাত্র পথ নরবলি

আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই এক লাফে বুড়ো পুরোহিত আমার চুলের মুঠি খপ করে ধরে চিৎকার করতে লাগলো- রাজা নিজে এর গলায় হাত দিয়ে বলির নির্দেশ দিয়েছেন। হরি বোল। হরি হরি হরি... ধরো এরে। একমাত্র একে বলি দিলেই আমরা দক্ষিণের বিপদে আশঙ্কা থেকে মুক্ত... হরি হরি হরি

লোকজন আমাকে শুধু ধরলোই না। হাত পিছমোড়া করে মন্দির থেকে নামিয়ে একটা গাছের গোড়ায় নিয়ে রাখলো। মন্দির থেকে তখনও পুরোহিতের চিৎকার শোনা যাচ্ছে- যাও। ঋষি বল্লিরে খবর দাও। নরবলি হবে... নরবলি হরি হরি হরি

আমি যতই চিৎকার করি লোকজন ততই হরিবোল হরিবোল করে। এর মধ্যে পেছনে হাত দোলাতে দোলাতে বাবা এসে সামনে দাঁড়ায়- চুদির ভাই। চিৎকার করে লাভ নাই বোঝো না?
- বাবা আমাকে বাঁচাও। আমি নরবলি হবো না
- পশুরাও পশুবলি হতে চায় না। সব বলিই মানুষ জোর করে দেয়
- কিন্তু বাবা রাজা বলির কথা বলেনি
- রাজারা কখনও কিছু বলে না। কিন্তু রাজার কথা মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন চুপ থাক
- বাবা আমার জাঙ্গিয়ার ভেতরে আরো পয়সা আছে। সব তোমাকে দিয়ে দেবো
- চুদির ভাই তোরে চুপ থাকতে বললাম না?

মন্দিরে তখন বেজে উঠেছে পুজার ঘণ্টা। বাবা ভিড় ঠেলে বের হয়ে যায়। একটু পরে আবার ফিরে আসে দুইটা ষণ্ডামার্কা লোক নিয়ে- বাঁধেন। এর মুখ বাঁধেন। এর চিৎকারে পুজার ব্যাঘাত হচ্ছে...

লোক দুইটা কাপড় দিয়ে ঠেসে আমার মুখ বেঁধে ফেলে। পূজার ঘন্টা একটু থামে। বাবা সোজা হয়ে হাত নেড়ে চিৎকার করে উঠে- মহান রাজার জয় হোক। পূজারিগণ একটু শুনুন। ঋণ রেখে পূন্যের পূজা করলে পূজা অসম্পূর্ণ থেকে যায়... পূণ্যার্থীগণ একটু শুনুন...

বাবার ডাকে লোকজন জড়ো হয়। বাবা চোখ মোছে- এই তরুণ আমার একমাত্র সন্তান। এই বৃদ্ধ বয়সে আমার একমাত্র অবলম্বন। এই তরুণই মজুর খেটে আমার মুখে অন্ন তুলে দেয়... না পূজারিগণ। আমি আমার সন্তানের জীবন প্রার্থনা করছি না

- হরি বোল হরি হরি হরি
- আমি সহায় সম্বালহীন হয়ে গেলেও আমি মনে করি এ আমার পরম সৌভাগ্য যে আমার সন্তান রাজকীয় মঙ্গলের জন্য উৎসর্গ হতে যাচ্ছে...
- হরিবোল হরি হরি হরি
- কিন্তু পূজারিগণ। এই তরুণ গত বছর অনেক টাকা ধার করেছে তার অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার জন্য। সেই ঋণ এখনও শোধ হয়নি
- মিথ্যে কথা। আমার মা মারা গেছে বিশ বছর আগে

আমি চিৎকার দিয়ে উঠি। কিন্তু শুধু গোঙ গোঙ আওয়াজ ছাড়া কিছুই বের হয় না কাপড়ে বাঁধা মুখ থেকে

বাবা আবারও বলতে থাকে- পূজারিগণ। এই ছেলের উৎসর্গের পরে সেই ঋণের দায় এসে পড়বে আমার এই বৃদ্ধ শরীরে। কিন্তু আপনারই বলেন আমার পক্ষে কি সে ঋণ শোধ করা সম্ভব? যদি সম্ভব না হয় তবে এই তরুণকে মৃত্যুবরণ করতে হবে ঋণ নিয়ে আর রাজার বলিও থেকে যাবে ঋণগ্রস্ত
- না না না। ঋণগ্রস্ত উৎসর্গ গ্রহণীয় নয়

বাবা দাঁড়িয়ে থাকে। লোকজন দৌড়াদৌড়ি করে। একটু পরে পুরোহিত এসে বাবাকে নিয়ে যায়। একটু পরে আবার বাবা ফিরে আসে- ধন্যবাদ পূজারিগণ

আমি আবারও চিৎকার করে উঠি- মিথ্যুক মিথ্যুক মিথ্যুক। আবারও শব্দ বের হয় গোঙ গোঙ গোঙ...

বাবা আমার মুখের কাছে কান এনে কেঁদে উঠে শব্দ করে- পূজারিগণ। আমি সৌভাগ্যবান পিতা। যে তার একমাত্র পুত্রকে কল্যাণ কামনার বলি হতে দেখেছে। কিন্তু পূজারিগণ... এই তরুণের একটি নাবালক সন্তান আছে...
- মিথ্যে কথা। আমি বিয়ে করিনি। এই বুড়া আামকে বিয়ে করতে দেয়নি
বাবা আমার দিকে কান পেতে আবার উঠে দাঁড়ায়- আমার এই তরুণ সন্তান বলছে; বলির জন্য নির্বাচিত হয়ে সে নিজেকে ধন্য মনে করছে। কিন্তু... কিন্তু তার মন পড়ে রয়েছে তার নাবালক সন্তানের ভবিষ্যত চিন্তায়...

বাবা এবার কেঁদে উঠে আমাকে জড়িয়ে- বাবারে। আমার যদি সামর্থ থাকতো; শরীরে বল থাকতো তবে আমি তোর সন্তানের ভার নিতাম। কিন্তু আমি যে বৃদ্ধ...

বাবা কাঁদতেই থাকে আমাকে ধরে। আমি গোঙ গোঙ করি হাত মুখ বাঁধা হয়ে গড়াগড়ি যেতে যেতে। বাবা আবার উঠে দাঁড়ান- পূজারিগণ। সেই নাবালক সন্তানের একটা নিশ্চয়তা হলে আমার পুত্র নিঃশঙ্কচিত্তে গলা পেতে দিতো বলির ছোরায়। কিন্তু দুর্ভাগ্য... পিছুটান নিয়েই তাকে উৎসর্গ হতে হবে রাজার পুজায়...

জনতা আবারও থ মেরে যায়। দায় রেখে পূজা গ্রহণযোগ্য নয়। আবারও কানাকানি। আবারও দৌড়াদৌড়ি। আবারও পুরোহিতের এসে বাবাকে নিয়ে যাওয়া এবং বাবার ফিরে আসা...

লোকজন আমাকে তুলে নিয়ে বেদির উপর শোয়ায়। ঋষি বল্লি এসে গেছে। আমার দিকে তাকিয়ে একবার মোছে তাও দেয়- মহান রাজার জয় হোক। নরবলির সুযোগ জীবনে খুব কমই আসে...

পুরোহিত লতাপাতা ঘটিজল নিয়ে এসে আমার চারপাশ সাজায়। ঋষিবল্লি লাল কাপড়ে প্যাঁচানো ভোজালি বের করে ধার পরীক্ষা করে। বাবা এগিয়ে আসে আমার কাছে- চিন্তা করিস না। যা পাওয়া গেছে তাতে আমার বাকি জীবন ভালোই কেটে যাবে। মানুষ তো ছেলে জন্ম দেয় শেষ বয়সে কামাই খাওয়ার জন্য তাই না? তুই আসোলেই একটা শালার পুত দুলা ভাই। নিজে থেকে রাজার গলায় হাত না দিলে সেও তোর গলায় হাত দিতো না। আর আমারও এই গতি হতো না

আমি গোঙ গোঙ করি। কিন্তু বাবা উঠে দাঁড়ায়- যেখানে পরাজয় ঠেকানো সম্ভব নয় সেখানে তাকে অর্থমূল্যে বিক্রি করাই ভালো। যাই বাপ

টাকার ব্যাগদুটো হাতে নিয়ে কুঁজো হয়ে দুলতে দুলতে বাবা রওয়ানা দেয় হাওরের উপরে ভাসমান সড়ক ধরে। পুরোহিত শুরু করে বলির মন্ত্র। একসাথে বেজে উঠে ঢোল নাকাড়া করতাল আর ঋষি বল্লির ছোরা শান দেবার শনাৎ শনাৎ আওয়াজ...

২০০৯.১১.২৩ সোমবার


মন্তব্য

একজন নীল ভূত এর ছবি

আমি গল্পটা ধরতে পারি নাই।। আমার মাথার অনেক উপর দিয়া গেলো।

নীল ভূত

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

পড়লাম। কেমন জানি ম্যাজিক ম্যাজিক ভাষা!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনার "উকুন বাছা দিন" (২০০৫) পড়ার সময় আপনার এই জাদুবাস্তবতার জগতের সাথে পরিচয় হয়। অতটা না হলেও তার কিছুটা ছাপ পাই "নিম নাখারা" (২০০৭)-তে। অবশ্য "নিম নাখারা" অন্য জিনিষ। এই গল্পটা পড়ার পর আবার সেই "উকুন বাছা দিন"-এর স্বাদ পেলাম।

আপনার শত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও গল্পটাকে সমালোচকের চশমায় দেখতে ইচ্ছে করছেনা। Open punctuation-এ লেখার এই স্টাইল, কাব্যিক ভাষা - এমনটাই ভালো।

যারা Malgudi অথবা Macando-কে চেনেন "রাজ্যটিলা" তাদের কাছে অপরিচিত লাগার কথা না। আফসোস্‌ একটাই, খেরোখাতার মত বিচ্ছিন্ন এই গল্পগুলো এমনই থেকে যাচ্ছে, এগুলো থেকে কাম্য মহাকাব্যিক উপন্যাসটা আর পাওয়া হচ্ছে না। অপচয়, মহাঅপচয়।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

স্যার অনেক দিন থেকে আপনার করা অনেকগুলো মন্তব্যের বিষয় এখন একটু খোলাসা করি

ল্যাটিন জাদুবাস্তবতা জিনিসটা যখন প্রথম পড়ি তখন বেশ চেষ্টা করেছিলাম ওরকম কিছু লিখতে। কিন্তু বেশ চেষ্টা করেও কিছু দাঁড়ায়নি। আর আরো পরে জানলাম জাদুবাস্তবতার মার্কেজ নিজেও জোর করে কিছু করেন না। তিনি তার ঠাকুমার মুখে শোনর উপথার ভাষায় তুলে আনেন গল্প; যেগুলোকে আমরা বলি জাদুবাস্তব...

এবং তখনই আমার চোখ কয়েকটা জিনিসের উপর পড়ে। তার প্রথমটা হলো আমাদের প্রত্যেকের দেখা প্রতিদিনের স্বপ্ন
স্বপ্নগুলো প্রতিটাই মিল আছে মিল নেই; সূত্র আছে সূত্র নেই। যে দেখে সে তার কিছুটা বোঝে কিছুটা না। কিছুটা চেনে কিছুটা অচেনা

স্বপ্নের ভাষা; ঘটনা; পরম্পরা সব যেন নিজের ভাষার ভেতরে ঢুকে যাওয়া অন্য এক ভাষার দ্যোতনা

এ পর্যন্ত জোর করে যত লেখা লিখতে চেয়েছি তার কোনোটাই কিছু হয়নি
বিশেষ করে বিষয়ের দিক থেকে

তাই বহুদিন থেকেই লেখার বিষয়গুলোর একটাকে ঠিক করেছি বাস্তব চরিত্র আর বাস্তব ঘটনা

আর আরেকটা এই স্বপ্ন

মজার বিষয় হলো এই জাদুবাস্তব জাতীয় সবগুলো লেখাই মূলত স্বপ্নের অনুলেখন (নিম নাখারার অন্তর্যান একই গোত্রের)

স্বপ্নকে মনে রাখা ভীষণ কঠিন। তার চেয়ে কঠিন হচ্ছে তার সিকোয়েন্সগুলোকে পরে টেক্সটে অর্গানাইজ করা

কিন্তু আমার মনে হচ্ছে স্রেফ স্বপ্নকে অনুবাদ আর অর্গানাইজ করার স্টাইলটা আয়ত্ব করে ফেলতে পারলে বেশ ভালো কিছু একটা ধারা দাঁড়িয়ে যেতে পারে

কিন্তু এক্ষেত্রে মুশকিল হলো একজনের দেখা স্বপ্ন অন্যের কাছে স্রেফ একটা কাহিনী ছাড়া কিছুই মনে হয় না। কারণ দেখা স্বপ্নকে অন্যের কাছে ভাষায় বর্ণনা করা প্রায় অসম্ভব

আমি চেষ্টা করছি একটা স্বপ্ন দেখার ভাষা খুঁজে বের করতে। যাতে শুনলে অন্যের কাছেও সেটা অন্তত প্রায় স্বপ্ন মনে হতে পারে

০২

এই গল্পের বাবা ছেলে- ভাসমান পথ- রাজবাড়ি- রাজবাড়ির নিচের পতিতালয়- বাচ্চা রাজা- রাজার কাছে টাকা আনতে যাওয়া এবং নরবলি
এই উপাদানগুলো স্বপ্ন থেকে নেয়া

আর বাবা ছেলের ভাষা- সম্পর্ক এবং ঘটনাক্রম আমার নিজের জোড়া দেয়া
আর স্বপ্নে যেহেতু মানুষের কোনো যন্ত্রণা- ঘৃণা- ভালোবাসা- অভিযোগ- এবং অন্যকে বিচারের অনুভূতি থাকে না (অন্তত আমার হিসেবে) সেহেতু এসব গল্পে আমিও শুধুই চরিত্র বর্ণনা করে যাই। কোনো বিশ্লেষণ করি না কোথাও

কে খারাপ কে ভালো। কার ভেতরে কী আছে সেসবের ধারে কাছেও যাই না

০৩

নিজের মতো করে একটা মহাকাব্য লেখার লোভ কার নেই স্যার?
কিন্তু অতই যদি সোজা হতো তাহলে লক্ষ বছরের পৃথিবীতে মহাকাব্যের সংখ্যা কি আর এখনও হাতে গোণা যেত?

আমার ধারণা রিয়েল ঘটনা আর স্বপ্নকে বর্ণনা করার স্টাইলটা আয়ত্ব করে ফেলতে পারলে হয়তো কিছু একটা দাঁড় করিয়ে ফেলতে পারবো

আর তার আগে পর্যন্ত এর সবই ইশকুলের স্লেটে খড়ি ঘষতে ঘষতে নিজের নাম লেখার এক ক্রমাগত চেষ্টা...

মামুন হক এর ছবি

আমার চোখে আপনার স্বপ্নের ভাষায় গল্প লেখার চেষ্টা স্বার্থক প্রিয় গল্পকার। আপনার ব্যাখ্যা পড়ার আগেই পুরো লেখাটিকে আমার স্বপ্নাচ্ছন্ন বলেই মনে হয়েছে। তবে স্বপ্নের সাথে কল্পনার সংশ্রব ঘটাতে গিয়ে গল্পটার এখানে ওখানে একটু আধটু চটে গেছে। তবে কেন জানি আপনার গল্পের সমাপ্তিগুলোতে আমার পেট ভরেনা,এটা ভালো না খারাপ তা জানিনা।

শান্ত [অতিথি] এর ছবি

গল্পের স্টাইল, ভাষা ভালো লেগেছে। কিন্তু বুঝতে পারিনি মূল ব্যাপারটা কি।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

ক্লাসিক । প্রিয় পোস্টে নিয়ে রাখলাম।

হিমু এর ছবি

গল্পটা চমৎকার। আব্রাহামের উপকথায় একটা দারুণ সফল টুইস্ট।

যতিচিহ্নলুপ্তির আবেদনটা আমি ঠিক বুঝতে পারি না।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

নজমুল আলবাব এর ছবি
রণদীপম বসু এর ছবি

কিসের জাদুবাস্তবতা ! পয়লা বিয়ে করার বা বিয়ে-হননের পর স্বপ্ন আর বাস্তবতার মধ্যে এইরকম উল্টা-পাল্টা প্যাঁচ সবারই প্রথম প্রথম লাগে। জাদু কন আর স্বপ্নই কন, বিষ মইজ্যা গেলে আস্তে আস্তে তা ঠিকও হইয়া যায়।

আপনিও চিন্তা কইরেন না গুরুজি ! ঐ যে গোপালভাড়ের কিচ্ছা শুনেন নাই ! পোলারে ভাই ডাকায় বউয়ের ঝাড়ি খাইয়া বেটায় বউরে কইছিলো যে, গরু হারাইলে এইরম সবারই হয় গো মা-জননি !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অতিথি লেখক এর ছবি

গল্পের কিচ্ছু বুঝিনাই। এমনকি মন্ত্যব্যে আপনি কিছু ব্যাখ্যা দেবার পরো।

উদ্ধৃতি

যেখানে পরাজয় ঠেকানো সম্ভব নয় সেখানে তাকে অর্থমূল্যে বিক্রি করাই ভালো। যাই বাপ

হ কিছুই করার নাই এহন,
হালার বাপেতো আগে আরো আইছিলো রাজ্যটিলায়,
জানেনা ইয়ানের ইশারা?

নাকি
নরবলির সুযোগ জীবনে খুব কমই আসে... তাই?

-মজনু

মাহবুব লীলেন এর ছবি

গল্পের কিচ্ছু বুঝিনাই। এমনকি মন্ত্যব্যে আপনি কিছু ব্যাখ্যা দেবার পরো।

যদি একেবারেই বোঝা না যায় তবে সেটা আমার জন্য একটা মেসেজ
তার মানে দাঁড়ায় এই রকম ঘটনাগুলো আমাকে অন্যভাবে সাজাতে হবে

আর লেখকের বক্তব্য (শানেনুজুল) পড়ে লেখা না বোঝাই ভালো
অন্তত আমি নিজের পড়ার ক্ষেত্রে এই নীতি অনুসরণ করি
আমি মনে করি লেখক যদি লেখার পর আমাকে ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝাতে হয় তবে সেই ব্যাখ্যা লেখার মধ্যেই দিয়ে দিলো না কেন?

আর যেহেতু দেয়নি সেহেতু লেখার ব্যাখ্যার দিকে তাকানোর দরকার আমার নেই

আমি ব্যাখ্যার মতোন বিষয়টা ষষ্ঠ পাণ্ডবের জন্য দিয়েছিলাম
তার দীর্ঘদিনের কিছু অবজারভেশনের প্রেক্ষিতে (লেখার ব্যাখ্যা নয়; যে জিনিসটা আমি প্রাকটিস করছি কিংবা করতে চাচ্ছি)

০২

টাকার গন্ধ নাকি নরবলির লোভ?
যেটা আপনার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় সেটাই আপানি ধরে নিতে পারেন

অতিথি লেখক এর ছবি

উদ্ধৃতি

যদি একেবারেই বোঝা না যায় তবে সেটা আমার জন্য একটা মেসেজ
তার মানে দাঁড়ায় এই রকম ঘটনাগুলো আমাকে অন্যভাবে সাজাতে হবে

ভনিতা করছিনা, আসলেই এরকম টুইষ্ট ভালো করে বুঝতে যে পরিমান ইলম দরকার তা আমার নাই।

আপনার লেখার যেকোনো পরিবর্তন আমাদের জন্য খারাপ হতে পারে।
কারণ আপনার এই ষ্টাইলের লেখাই আমাকে পাগল করেছে।

আপনি শুধু স্বপ্নের একটা আলাদা ভাষা আনতে হবে আমাদের জন্য, যা আপনি ষষ্ঠ পাণ্ডবকে বলেছেন।

০২
গল্পে কিন্তু বাবার চরিত্র আমার কাছে ইতিবাচকই মনে হয়েছে।

-মজনু

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ধন্যবাদ মজনু

আমার লেখালেখির শুরুতে আমি গোঁয়ারের মতো একাই নিজের লেখা বারবার কাঁটাছেঁড়া করতাম
এবং যেচে কেউ কিছু বলতে এলেও ঝাড়ি দিয়ে সরিয়ে দিতাম (আঁতেল হবার তীব্র আকাঙ্ক্ষায়)

তারপর আঁতেল হবার ইচ্ছা বাদ দিয়ে যখন লেখক হতে চাইলাম তখন গাদা গাদা পাণ্ডুলিপির একশো দেড়শো সেট করে লোকজনকে ধরিয়ে দিতাম কমেন্টের জন্য

কমেন্ট আসতো একটা কি দুটো
(কার অতো আজাইরা সময় আছে?)

কিন্তু সেই একটা দুটো কমেন্ট সংকলন করেও আমি দেখলাম আমার আঁতলামি যুগের লেখা থেকে এগুলোর ম্যাচুরিটি অনেক ভালো

এবং এর পর গত দুই বছর ধরে আমি যখন পরিচিত হলাম সচলের সাথে (একই সাথে ব্লগের সাথে)
এডিটিংয়ের ধরনটাই পাল্টে গেলো আমার

আবিষ্কার করলাম নিজে একটা লেখা চূড়ান্ত করে ফেলার পরেও যে গ্যাপগুলো থেকে যায় সেগুলো অনেক আগেই ধরা পড়ে যায় কমেন্টে
খুব দ্রুত একেকটা লেখা অনেক বেশি ফাঁক ফোকড় মেরে ফেলতে পারে কমেন্টগুলোর দিকে চোখ রাখলে

এখন যে কোনো লেখার ক্ষেত্রে এই ধারাটাই ফলো করি আমি

০২

আমার যে কোনো লেখায় যে কোনো ধরনের সমালোচনা এবং যে কোনো মন্তব্যের পথ ১০০% উন্মুক্ত

কয়েকটা ভালো লেখা আমার টার্গেট

০৩


আপনি শুধু স্বপ্নের একটা আলাদা ভাষা আনতে হবে আমাদের জন্য, যা আপনি ষষ্ঠ পাণ্ডবকে বলেছেন।

সেই চেষ্টাটাই করছি
কিন্তু কুলিয়ে উঠতে পারছি না
কোনো সাজেশন থাকলে দেন

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখনির ঢঙ্গে মুগ্ধ... তবে অবাস্তব কিছু মনে হয়নি...ধনতান্ত্রিক মগের মুল্লুকে ঋষি বল্লির শানিত ছোরা সবার ঘাড়েই ঝুলছে...
ধন্যবাদ আপনাকে

বুনোহাঁস

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দূর্দান্ত... স্যালুট বস...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি কি গর্দভ শ্রেণীর মধ্যে পড়ি নাকি ?
লেখা এবং মন্তব্য যা যা লেখা হইছে তারপর নিজেরে গর্দভ গর্দভ লাগতেছে। ভাইয়ারা কেউ কি দয়া করে আমাকে একটু ক্লু দিবেন ? আমি কিচ্ছু বুঝি নাই। মন খারাপ

নীল ভূত।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

পাঠক গর্দভ হয় না
পাঠকেরা সব সময়ই বিচারক আর মানদণ্ড

আপনার এই মন্তব্যের অর্থ আমার কাছে: গল্পটাকে অন্যরকম করে ভাবার একটা নির্দেশনা

দেখি কদ্দুর কী করতে পারি

যুধিষ্ঠির এর ছবি

চমৎকার লাগলো আপনার হাবিজাবি ব্লগরব্লগর।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- গল্পটা বেশ উপভোগ্য লেগেছে, কিন্তু ভেতরে ঢুকতে গিয়েও বারবার হোঁচট খাচ্ছিলাম বাপ-ছেলের কথোপথকনে ব্যবহৃত ভাষার কারণে। আমার কেনো জানি মনে হচ্ছিলো ভাষাটা ঠিক ঐ রকম পরিবেশের সাথে যায় নি। আরেকটু প্রাকৃত হলে বোধহয় গল্পটায় একেবারেই বুঁদ হয়ে যেতে পারতাম।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

মাহবুব লীলেন এর ছবি

বিষয়টা আমিও খেয়াল করছিলাম
কিন্তু প্রাকৃত ভাষাটা আমার ঠিকমতো আয়ত্বে নেই স্যার
এটা একটা বড়ো সমস্যা

আমার আঞ্চলিক ভাষাটা সম্পূর্ণ আলাদা উপভাষাগোত্রের (সিলেটি) বাংলার সাথে ওটার বেশি ব্যবহার খুব কঠিন

আর চর্চা করে শেখা এই তথাকথিত প্রমিত বাংলা

এই দুটোর বাইরে নিজে থেকে বানিয়ে কোনো চরিত্রের মুখে ভাষা দেবার মতো দখল অন্য কোনো উপভাষাতে নেই আমার
(সামনা সামনি কোনো চরিত্র দেখলে মোটামুটি চালিয়ে দিতে পারি)

এই সমস্যাটা কাটানোর চেষ্টা করছি
দেখি কদ্দুর কী হয়

দময়ন্তী এর ছবি

ফাটাফাটি৷ শেষ লাইনটা তো -- কোন কথা হবে না৷

লেজেন্ডস অফ খাসাক'এ বিজয়ন একেবারে কেরালার গাঁয়ের চলতি উপকথাগুলোকে তুলে বসিয়ে দিয়েছিলেন সেই ১৯৬৯ সালে৷ তখনও সেটাকে "জাদুবাস্তবতা' নামে ডাকা শুরু হয় নি৷ ঐ বইটা আজও এখনও প্রচন্ড ব্যস্ততম দিনেও পড়লেই মনে হয় কোত্থাও কোন চাপ নেই, কেউ যেন মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলছে 'ঘুমো এবারে'৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

দময়ন্তী এর ছবি

ওরে বাবা ৩ বার এসেছে কেন? ওঁয়া ওঁয়া
দুইখান মুছে দেবেন প্লীজ
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

নিবিড় এর ছবি

চমৎকার


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।