মহাভারতের মহাভজঘট ০৪: অস্ত্রপাতি আর যুদ্ধ

মাহবুব লীলেন এর ছবি
লিখেছেন মাহবুব লীলেন (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৯/০২/২০১৫ - ১১:০৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কুরুযুদ্ধের একটা বিশাল অংশ জুইড়া আছে লোহার অস্ত্রপাতি; অথচ মহাভারতের ঘটনার সময় পর্যন্ত দুনিয়াতে লোহাই আবিষ্কার হয় নাই। অবশ্য তামা আবিষ্কার হইছে আরো বহু আগে; খ্রিস্টপূর্ব সাড়ে চাইর হাজার বছরে। ড. অতুল সুর কন তখনকার দিনে বর্তমান বাংলা অঞ্চলে আছিল তামার খনি আর ব্যাপারীরা সেই সব খনিজ দ্রব্য আর সামগ্রী চালান দিত সিন্ধু সভ্যতায়। আর্যগোষ্ঠী সিন্ধুসভ্যতা তছনছ কইরা দিলেও হইলে হইতে পারে তামার যাতায়াত বাংলা থাইকা তখনো কুরুক্ষেত্র অঞ্চলে আছিল। কিন্তু মহাভারতের কোনো অস্ত্রপাতিতে তামার উল্লেখ নাই। মহাভারতে একবার তামার কথা আছে দ্রৌপদীর এক হাঁড়ির বেলায়; যা তারে পুরোহিত ধৌম্য দিছিলেন। ঘটোৎকচের বেলায় কওয়া হইছে সে পরতো কাঁসার বর্ম আর অনুমান করা যায় কর্ণের অভেদ্য বর্মখানও আছিল তামার তৈয়ারি। কারণ দ্রৌপদীর হাঁড়ি আর কর্ণের বর্ম; দুইটার বেলাতেই সূর্যের একটা কইরা কাহিনি যুক্ত আছে। হইলে হইতে পারে মাটির বাসনের যুগে তামার একমাত্র হাঁড়িতে সূর্যের আলো পইড়া ঝিকমিক করত বইলা এর নাম সূর্যদত্ত হাঁড়ি আর পশুর চামড়া-টামড়া দিয়া বর্ম বান্ধনের যুগে কর্ণের তামার বর্মেও রোদ পইড়া ঝকমক করত দেইখা তারে কওয়া হইত সূর্যপ্রদত্ত বর্ম। তামার অস্ত্র না থাকলে পুরা মহাভারতে আর কোনো ধাতুর অস্ত্র থাকবার কথাও না। হিসাব মতে ওই সময়ে সব লড়াই আছিল হাতে গদায় লাঠিতে বর্শায়। এমনকি তিরের বিষয়েও অনেকে সন্দেহ করেন। কিন্তু তির বাদ দিয়া মহাভারত কেমনে কয়?

হড় কিংবা সাঁওতাল জাতিতে তিরের ব্যবহার অন্য বহুত জাতির থাইকা আগে। ড. অতুল সুর পাঞ্চাল রাজ্যের বর্ণনা দিতে গিয়া কন এইটা বর্তমান বীরভূম জেলা আর সাঁওতাল পরগনার কাছাকাছি; এই পাঞ্চাল এলাকাটাই দ্রোণের জন্মস্থান। হইলে হইতে পারে আদিবাসীগো কাছ থিকা শিখে দ্রোণই তির-ধনুক রপ্তানি করছেন হস্তিনাপুরে তার শিষ্যগো মাঝে। পঞ্চমবর্ণের নিষাদেরা তির চালাইতে জানত না দেইখা নিষাদপুত্র একলব্য লুকাইয়া লুকাইয়া দূর থাইকা দ্রোণের তিরাতিরি দেইখা তির-ধনুক চালানো শিখে। অন্য কোথাও তির শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলে নিশ্চয়ই এতটা কষ্ট করত না সে...

মহাভারতে প্রথম জেনারেশনে যত তিরন্দাজ দেখি তারা কোনো না কোনোভাবে দ্রোণের শিষ্য; অর্জুন কর্ণ সাত্যকি জয়দ্রথ অশ্বত্থামা ধৃষ্টদ্যুুম্ন শিখণ্ডী সবাই। কিন্তু এইখানে প্রশ্ন আইসা যায় তাইলে ভীষ্ম কেমনে তির চালান? তিনি তো আর দ্রোণের শিষ্য না। আমার উত্তর হইল ভীষ্ম মানুষ আছিলেন নাকি সেনাপতি পদের নাম আছিল ভীষ্ম সেইটা কেউ খুঁইজা দিতে পারলে কুরুযুদ্ধের সময় তার তিন ডিজিট বয়সী হাতে খালি তির কেন; আমি কামানও ধরাইয়া দিতে পারি। দেবতাগো রাজার পদের নাম যেমন আছিল ইন্দ্র; আমার ধারণা কৌরবগো প্রধান সেনাপতি পদের নামও তেমনি আছিল ভীষ্ম; মানে ভীষণ; মানে জাঁদরেল; মানে জেনারেল; মানে কমান্ডার...

কর্ণ তিরাতিরি লাইগা বিখ্যাত হইলেও সে কিন্তু অন্য ধরনের হাতিয়ার অস্ত্রই বেশি চালায়; বর্শা ভল্ল খড়গ গদা আর ভার্গবাস্ত্র। ভার্গবাস্ত্র মানে ভৃগু বংশজাত পরশুরামের কাছ থিকা পাওয়া অস্ত্র। সোজা বাংলায় কুড়াল। কুড়াল বাদ দিয়া বাকিসব অস্ত্রগুলা ভীমেও চালায়। কর্ণের মল্লযুদ্ধের কাহিনিও পাওয়া যায় জরাসন্ধের লগে...

আমি যদি কই যে তখন তির-ধনুকের প্রচলনই হয় নাই তয় পাব্লিকে আমারে কিলাইব। কারণ তাইলে দুই মহানায়ক কর্ণ আর অর্জুনরে কুরুযুদ্ধের সাইড লাইনে বসাইয়া আঙ্গুল চুষাইতে হইব যুদ্ধের আঠারো দিন। কিন্তু তারপরেও কই; তির-ধনুকের যুদ্ধে অত আজাইরা কথাবার্তা কওয়ার সুযোগ কই? যেমনে তারা গালাগালি দিয়া লড়াই শুরু করে; নিজের লম্বা পরিচয় দেয়; আবার পেন্নাম-টেন্নামও করে; তির-ধনুকের নাগালের বাইরে অত দূর থাইকা অত খাজুইরা আলাপ যেমন সম্ভব না; তেমনি তিরাতিরি হইব কিন্তু একটা পাব্লিকেরও চোখে তির গাঁথব না এইটা কীভাবে সম্ভব? কুরুযুদ্ধে তির খাইয়া কিন্তু কারো চোখ নষ্ট হইবার কোনো কাহিনি নাই; অথচ ধুলাবালি থাইকা বেশি ছুটানো হইছে তির...

কৃষ্ণের চক্রখানের হিসাব মিলাইতে পারি নাই। সুবর্ণচক্রের বাইরেও কৃষ্ণ একবার যেমন রথের চাকা খুইলা ভীষ্মরে দাবড়ানি দেয়; ঠিক একইভাবে তার শিষ্য আর ভাগিনা অভিমন্যুও কিন্তু রথের চাকা নিয়া কৌরবগো দাবড়ায়। এতে কৃষ্ণ ঘরানায় চাকাজাতীয় অস্ত্রে সাবলীলতা বোঝা যায়। কিন্তু সুবর্ণচক্রখান এক্কেবারে চাকতি জাতীয় কিছু হইলে খুব ভালো অস্ত্র হইবার কথা না জুইতমতো ধরার জায়গার অভাবে। চক্রখান কিন্তু সে ছুঁইড়া শত্র“রে আঘাত করে...

আইচ্ছা কৃষ্ণের চক্র কি বুমেরাং-জাতীয় কিছু? যা চক্কর দিয়া মাইরা আবার চক্কর দিয়া ফিরা আসে দেইখা চক্র?

যুদ্ধের ব্লকিং নিয়া বহুত কথা থাকলেও বহুত হিসাব আবার মিলে না। যেই যুগে মহাভারতে কুরুযুদ্ধ ঢোকানো হইছে সেই যুগের মানুষেরা যুদ্ধে তির-ধনুক আর ঘোড়ার নিশ্চিত ব্যবহার করত। কিন্তু ঘোড়া আর তির-ধনুকের ব্লকিং যখন লাঠি গদা আর মল্লযুদ্ধের যুগের মহাভারতে ঢুকাইয়া দেওয়া হইছে তখনই লাগছে ভজঘট। কারণ ঘোড়া আর তির-ধনুকের ব্লকিং করতে গেলে ভীমেরে গদা চালাইবার জায়গা দেওয়া যায় না। আবার গদা আর মল্লযুদ্ধের অনিবার্য অংশ; মা-বাপ তুইলা গালাগালি করা কিংবা গুরুজনরে প্রণাম-টনাম রাখতে গেলে তির-ধনুক আর ঘোড়া বাদ দিতে হয়। তার উপরে আবার ঢুকছে চাইর-ছয় ঘোড়ার ফ্যাশনেবল রথ; যেইটা মোটেই সামনাসামনি যুদ্ধের উপযোগী কোনো বাহন হইতে পারে না; না গতিতে; না আকারে। তো এতে যা হইছে তা হইল সবকিছু মিলা একটা খিচুড়ি পাকাইয়া গেছে; যেইটা কাব্যে পড়তে সুন্দর; সিনেমায় দেখতে সুন্দর কিন্তু যুদ্ধবিদ্যার গ্রামারে কোনোভাবেই বাস্তবসম্মত না...

মহাভারতের মহাভজঘট ০৩: সংখ্যা ও বয়স
মহাভারতের মহাভজঘট ০২: কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন
মহাভারতের মহাভজঘট ০১: ঘটনাকাল


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

সিরিজটারে মিস করুম! তবে কিছু মন্তব্য আছে।

১। কৃষ্ণের চক্র বুমেরাং টাইপের কিছু হইতে পারে; তবে যেইসব বুমেরাং ফেরত আসে, সেইগুলা মূলতঃ ব্যবহার করা হয় খেলার জন্য। যুদ্ধ/শিকারের অস্ত্র হিসাবে যেসব বুমেরাং ব্যবহার করা হয়, টার্গেটে হিট করার পরে সেইগুলা ফেরত আসে না। আর মধ্যযুগে তো ভারতের সৈন্যরা চক্রম নামে এক ধরণের অস্ত্র ব্যবহার করতো বইলে জানতাম। কৃষ্ণের চক্র হয়ত সেইরকমই কিছু ছিল।
http://en.wikipedia.org/wiki/Boomerang
http://en.wikipedia.org/wiki/Chakram

২। রথের ব্যাপারে বললেন যে সামনাসামনি যুদ্ধের জন্য এইটা খুব কাজের জিনিস না। কিন্তু প্রাচীন মেসোপটেমিয়া, ইরান, আর মিশরে তো ঘোড়ায় টানা রথ যুদ্ধের ময়দানে বেশ সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহার করা হইত বইলে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা মত দেন। তবে আপনার কথা ঠিক, শুধু ঘোড়ারে কন্ট্রোল করার চাইতে কিন্তু ঘোড়ায় টানা রথরে কন্ট্রোল করা অনেক কঠিন। পারসিকদের আর্মি ছিল রথ-ভিত্তিক। আলেকজান্ডারের বিরুদ্ধে পারসিকদের পরাজয়ের অন্যতম কারণ ছিল গ্রীক অশ্বারোহী বাহিনীর গতির সঙ্গে পারসিক রথারোহী বাহিনী তাল রাখতে পারে নাই। গ্রীকরা মিশর, ইরাক, ইরান দখল করার পরেই মূলতঃ যুদ্ধে রথের ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়।
http://en.wikipedia.org/wiki/Chariot

৩। কুরুযুদ্ধের যে টাইমলাইন আপনি দিসেন, তাতে এই যুদ্ধ হইসে সম্ভবতঃ খৃষ্টপূর্ব ২৫ থেকে ১৪শ শতকের মধ্যে। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনমতে মেসোপটেমিয়ার হিট্টাইটরা নাকি খৃষ্টপূর্ব ১৭শ শতকে যুদ্ধে প্রথম রথ ব্যবহার করে। যুদ্ধের টাইমলাইনের ব্যাপারে আরেকটা ইম্পরট্যান্ট ফ্যাক্টর হইল ঘোড়া। মেসোপটেমিয়ানরা খৃষ্টপূর্ব ১৮শ শতকে রথ উদ্ভাবন করার আগে যুদ্ধে ঘোড়া ব্যবহারের কোন নিদর্শন পাওয়া যায় না; ইন ফ্যাক্ট, খৃষ্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দের আগে ইউরেশিয়ান স্তেপের বাইরে অন্য কোথাও ঘোড়া পালার হদিস প্রত্নতাত্ত্বিকেরা এখন পর্যন্ত পান নাই। অন্যদিকে খৃষ্টপূর্ব ১৬শ শতকের আগে দক্ষিণ এশিয়ায় ঘোড়া পালার কোন অবিতর্কিত নিদর্শনও পাওয়া যায় নাই। এইসব দিক চিন্তা কইরে মনে হয় কুরুযুদ্ধে যদি সত্যিই ঘোড়ার রথ ব্যবহার হয়ে থাকে, তাইলে এই যুদ্ধ হয়ত খৃষ্টপূর্ব ১৪শ শতকের কাছাকাছি সময়ে হইসিল।
http://en.wikipedia.org/wiki/History_of_the_horse_in_South_Asia

Emran

মাহবুব লীলেন এর ছবি

মহাভারতে কুরুযুদ্ধের পুরা অস্তিত্ব নিয়াই যখন নৃতত্ত্ববিদদের সংশয় আছে তখন মহাভারতের টাইমলাইনের সাথে কুরুযুদ্ধের অস্ত্রপাতির সম্পর্ক নিয়া যুক্তির বিশেষ সুযোগ নাই আমার...

০২
যুদ্ধে রথের ব্যবহার মূলত পরিবহন হিসাবে; কিন্তু কুরুযুদ্ধে দেখানো হয়েছে যুদ্ধযান হিসাবে; সেইখানেই আমার প্রশ্ন

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক ভীষ্মকে নিয়ে আপনার খটকাটা কিন্তু চিত্তাকর্ষক।

দেবদ্যুতি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

হ। ভীষ্ম সত্যিই ভীষণ সংশয় মহাভারতে

মুক্তমন এর ছবি

তীর চালানোর বিদ্যা তো আর দ্রোণের আবিষ্কার না৷তাহলে দ্রোণের কাছে না শিখলে তীর চালানো যাবে না কেন? আর ভীস্ম কোন পদের নাম না,মানুষেরই নাম৷মহারাজ শান্তনুর প্রথম সন্তান দেবব্রতকে ভীস্ম বলা হয় কারণ তাকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় সন্তান বিচিত্রবীর্য কে পরবর্তীতে রাজা করা হলে তিনি তা মেনে নেন এবং আজীবন অবিবাহিত থেকে রাজার অনুগত থাকার সংকল্প করেন৷এ ভীষণ সংকল্পের কারণেই ভীষ্ম নাম হয় তার৷

মাহবুব লীলেন এর ছবি

বলছি তো; কুরুযুদ্ধ পর্যন্ত ভীষ্মরে যদি কেউ যুক্তিসংগতভাবে বাচাইয়া রাখতে পারে তো তার হাতে আমি কামানও ধরাইয়া দিতে পারি...

০২
ভীষ্ম সম্পর্কে আপনার কাহিনটা অবিকলভাবেই সব মহাভারতে লেখা আছে। আমার ব্যাখ্যা হচ্ছে এইটা মূলত পদের নাম; কারণ অত বয়স পর্যন্ত কোনো একক ব্যক্তি বাঁচার কথা না

ময়ুখ কিরীটি এর ছবি

ভাল একটা বিষয়ের ভজঘট তুলে ধরেছেন আজ.......কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ জুড়েই প্রত্যেকের হাতেই নানা অস্ত্রের ব্যবহার দেখা যায় আসলে..... কিছু বিষয়ে জিজ্ঞাসা ছিল---
গঙ্গাপুত্র ভীষ্ম তো পরশুরামের শিষ্য ছিল, তার কাছ থেকেই নিশ্চয় তীরবিদ্যা অর্জন করেছিল সে- সেই অর্থে সেও কিন্তু অস্থির তীরন্দাজ। ভীষ্মের অবিবাহিত থেকে যাবার সেই কঠিন ব্রতের কারণেই তো বাপের কল্যাণে প্রদত্ত তার নামটা হয় 'ভীষ্ম'- কৌরব সেনাপতির পদের নাম হবার কি কোন চান্স আছে?
কৃষ্ণের চক্রটা বৃত্তাকার আকৃতি ও তার বৃত্তাকার গতিপথের জন্যই বোধহয় 'চক্র' বলে পরিচিত......বুমেরাং-এর সাথে সুস্পষ্ট পার্থক্য আছে বটে।
সিঙ্গেল ঘোড়া নিয়ে যে প্রকারের সম্মুখ যুদ্ধ হতো ফ্যাশনেবল ঘোড়াগুলো সেকারণে তো ব্যবহৃত হতো না......দূর থেকে তিরাতিরি আর অস্ত্র নিক্ষেপ করার জন্যই ওসব রথগুলোতে চড়া হত.....এগুলোর উপযোগিতা তাই একটু আলাদা কিন্তু তাই বলে এগুলোর গতি কম এটা মানতে পারলাম না মন খারাপ

একটা অফটপিক প্রশ্ন ছিল লীলেনদা-সর্বদিক ও সর্বাবস্থা বিবেচনায় মহাভারতে সবচেয়ে শক্তিমান যোদ্ধা (শক্তিতে ও বুদ্ধিতে) আপনার কাকে মনে হয়? এমন কেউ তো আছে যে একাই আসলে অনেক বড় যোদ্ধা ছিল এবং তাকে যদি পূর্ণরূপে ও পূর্ণশক্তিতে যুদ্ধ করতে দেয়া হত তাহলে ১৮ দিনের ফলাফলটা অন্যরকম হতো!! সেই ব্যক্তিটা কি স্বয়ং ভীষ্ম না? ব্যাখ্যা করবেন দয়া করে হাসি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

কিছু কিছু কাহিনীতে পরশুরামের তিরের কথা শোনা যায়; তিনি শিবের ধনুক পেয়েছিলেন; সেইটা আমার পরে যায় রামের কাছে...
কিন্তু পরশুরামের যুদ্ধজীবনের কোথাও তিরের ব্যবহার আমি পাই নাই; কুড়াল নিয়াই তিনি যুদ্ধ করছেন
তাই তিরের সাথে পরশুরামের সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহ আছে আমার

০২
ভীষ্মর ব্যক্তি না হয়ে পদ হবার পিছনে যুক্তিটা হলো কুরুযুদ্ধ পর্যন্ত তার অস্বাভাবিক বয়স
০৩
কৃষ্ণের চক্রের বিষযে এইটা আমার কোনো অনুমান না; খালি একটা প্রশ্ন

০৪
মহাভারতে সিঙ্গেল ঘোড়া নিয়ে যুদ্ধে কথা তো মনে পড়ে না; সবইতো রথারোহী

০৫
মহাভারতে বোধহয় শক্তিমান যোদ্ধা ভীম; বুদ্ধিতে কৃষ্ণ আর কৌশলে অর্জুন। শক্তি আর বুদ্ধি দুইটা্ই ভালো থাকার পরেও কৌশলের অভাবে কর্ণ বোধহয় দ্বিতীয় দলে আসে...

০৬
মহাভারতে তো সকলেই নিজের মতো পূর্ণরূপে যুদ্ধ করল; ফলাফল তো সবারই জানা
কুরুযুদ্ধে যে ভীষ্মকে পাই তিনি বেশ ভালো সেনাপাতি; কিন্তু কত বড়ো যোদ্ধা তা নিয়া সংশয় আছে আমার। ভীম অর্জুন কৃষ্ণ তো দিছেই; ভীমের পোলা ঘটোৎকচও তারে ভালোই প্যাদানি দিছে যুদ্ধের মাঠে...

রণদীপম বসু এর ছবি

আসলে মহাভারতের সময়কালেও প্রধান অস্ত্র বলতে খড়্গ বা অসিই। বর্শা জাতীয় অস্ত্রও ছিলো। যুদ্ধে তীর ধনুকের ব্যবহারটা শুরু হয়েছে কেবল মৃগয়ার অতিরিক্ত হিসেবে হয়তো। তাইতো মহাভারতের শান্তিপর্বে শরশয্যায় ভীষ্মকে পাণ্ডবরা প্রশ্ন করেছিলো, অসি না তীরধনুক, কোনটা আসল অস্ত্র ? ভীষ্ম কিছু পৌরাণিক কাহিনী বয়ানের শেষে বোঝালেন যে, ক্ষত্রিয়ের জন্যে তীর-ধনুক ব্যবহার চলতে পারে, তবে অসিই প্রধান ও মহৎ এবং সম্মানীয় অস্ত্র।
বাহন হিসেবে ঘোড়া ও একঘোড়ার রথ অসিচালনায় যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার চলে, যা সমসাময়িক গ্রিক যোদ্ধাদের ক্ষেত্রে ব্যবহার হতো বলে মনে হয়। কিন্তু রথে চড়ে তীর-ধনুকের ব্যবহার সেকালের যুদ্ধে প্রচলিত ছিলো না, এবং তা যুক্তির বিচারেও মানানসই হয় না। মহাভারতের মহত্তম কল্পনার আকর্ষণটা এখানেই হয়তো, যোদ্ধার সাথে রথ ও রথীর কাল্পনিক আয়োজন !

আর ভীষ্ম নিয়ে কিছু বললাম না। তাইলে তো উদ্দেশ্য আদর্শসহ মহাভারতটাই থাকে না ! হা হা হা !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অতিথি লেখক এর ছবি

কিন্তু রথে চড়ে তীর-ধনুকের ব্যবহার সেকালের যুদ্ধে প্রচলিত ছিলো না, এবং তা যুক্তির বিচারেও মানানসই হয় না।

এই বিবরণগুলির ভিত্তিতে মনে হয় এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত করা যায়।
http://en.wikipedia.org/wiki/Chariotry_in_ancient_Egypt
http://en.wikipedia.org/wiki/Battle_of_Kadesh

প্রাচীন গ্রীসে রথের ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল মূলতঃ উৎসব এবং খেলার মধ্যে। গ্রীসের অসমতল, পার্বত্য ভূমি রথচালনার উপযুক্ত ছিল না; একারণে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে গ্রীকরা রথ ব্যবহার করতো না।
http://en.wikipedia.org/wiki/Chariot#Greece

Emran

মাহবুব লীলেন এর ছবি

গ্রিসের সম্মুখ যুদ্ধ কিন্তু সমতলেই হইত। মাঠে

০২
রথ কিন্তু এখনো পাওয়া যায়; ঘোড়ায় টানা। গ্রামের একটা মাঠে একটু চালায়ে দেখেন তো গরুর গাড়ি থাইকা এইটার গতি বেশি হয় কি না

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ঠিক্কথা রণদা। রাজপুত্রদের অস্ত্র শিক্ষার বিবরণেও কিন্তু গদা কুস্তি অসিরই প্রাধান্য বেশি...

আর ভীষ্ম তো 'সেক্রিফাইসিং কারেক্টার' তারে নিয়া আর বেশি কিছু ক্ওয়ার নাই

রণদীপম বসু এর ছবি

এখানে সকল পাঠকের বিবেচনার জন্য একটা প্রস্তাবনা মনে হয়েছে আমার। সেটা হলো, কেউ যদি প্রথম কিংবা নতুন করে গোটা মহাভারতটা পড়তে আগ্রহী থাকেন তাহলে এবার শুদ্ধস্বর প্রকাশনা থেকে মাহবুব লীলেন ভাই'র 'অভাজনের মহাভারত' বইটা আগে একবার পড়ে নিলে মূল মহাভারতের অন্তর্নিহিত রাজনীতি এবং অলৌকিকতার আড়ালে নিহিত লৌকিক সূত্র ও সম্ভাবনা সহ যাবতীয় অভিজ্ঞানগুলো আপনাদের চোখে একেবারে স্পষ্ট ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠবে নিঃসন্দেহে।
আর মূল মহাভারত না-পড়লেও লীলেন ভাই'র বইটি আপনাদেরকে পুরো মহাভারত পাঠের আস্বাদ দেবে। আগেভাগে সংগ্রহ না করলে প্রিন্ট শেষ হয়ে গেলে পরে সত্যিই আফসোস করবেন !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

তানিম এহসান এর ছবি

চলুক

মাহবুব লীলেন এর ছবি

রণদা তো বিশাল বিজ্ঞাপন কইরা ফালাইলেন

Faruk uzzaman এর ছবি

প্রচারেই প্রসার | আজিজ মার্কেটে পাওয়া যাবে তো |

এক লহমা এর ছবি

এইবারেরটা আগে কখনো ভাবি নাই, হাঃ চিন্তিত চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ঠেকায় না পড়লে ভাবে কেডায়?

অতিথি লেখক এর ছবি

‌ভীষ্ম মানুষ আছিলেন নাকি সেনাপতি পদের নাম আছিল ভীষ্ম সেইটা কেউ খুঁইজা দিতে পারলে কুরুযুদ্ধের সময় তার তিন ডিজিট বয়সী হাতে খালি তির কেন; আমি কামানও ধরাইয়া দিতে পারি। দেবতাগো রাজার পদের নাম যেমন আছিল ইন্দ্র; আমার ধারণা কৌরবগো প্রধান সেনাপতি পদের নামও তেমনি আছিল ভীষ্ম; মানে ভীষণ; মানে জাঁদরেল; মানে জেনারেল; মানে কমান্ডার...

দারুণ লিলেনদা। পুরন্দর বা ইন্দ্রর মতো এটাও একটা পদ বা এরকম কিছু হইতে পারে।--- চলুক পড়ছি নিয়মিত।

স্বয়ম

মাহবুব লীলেন এর ছবি

এইখানে আর বেশি কিছু পড়ার নাই; বাকিটা পুস্তকে

অতিথি লেখক এর ছবি

হ, পুস্তকটা কেনার আগ পর্যন্ত আর কি। পুস্তকটা বাইর হওয়ার আগ থিকাই টার্গেটে আছে।

স্বয়ম

অতিথি লেখক এর ছবি

লোহা লক্করের অস্ত্র কই আছে? সবই তো দিব্যাস্ত্র হাসি । অস্ত্রের নামগুলো আমার কাছে অসাধারণ লাগে, যেমন, বায়ব্যাস্ত্র, বৈষ্ণব-অঙ্কুশ অস্ত্র, পাশুপত অস্ত্র,একাঘ্নী বাণ সুদর্শন ইত্যাদি(নাম এদিক সেদিক হলে ক্ষমাপ্রার্থী )। ব্রহ্মাস্ত্র নামেই তো ভয় লাগে।একটা অস্ত্রের কথা কোথায় যেন পড়েছিলাম, জিম্ভৃকাস্ত্র, যা প্রয়োগ করলে শত্রু একটা বিশাল হাই তুলবে! আপনি কিনা এতসব ভয়ংকর ভয়ংকর আগ্নেয়াস্ত্ররাজিকে অতিশয় নিম্নমানের লাঠি-সোটা লেভেলে নামিয়ে দিলেন!

অপিচ,
মহাভারতের কথা অমৃতসমান,
কাশীরামদাশে ভনে, শুনে পুণ্যবান।

আমি যেন স্পষ্ট দেখতে পাই, কোন এক সুদূর অতীতের সায়াহ্ন বেলায় অশীতিপর বৃদ্ধ বাঙ্গালী কবি বর্ধমানের সিঙ্গিগ্রামে বসে গুটি গুটি অক্ষরে উপরের লাইনগুলো লিখছেন। সেই কাব্যের বিস্ময় বাঙ্গালির আজো কাটেনি । কাশি-কবির উত্তরপুরুষের এই অধুনা ''ভারত-পাঁচালী'' সচলে চলতে থাকুক। আমরাও খানিকটা পুণ্য সঞ্চয় করি। হাসি

রাজর্ষি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

হ। আমাদের দিব্য চক্ষুও নাই; তাই দিব্যাস্ত্রও দেখতে পারি না; খালি দেখি লাঠি সোঁটা লোহা লক্কড়

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মাহবুব লীলেন এর ছবি

কলা দেখাইলেন? কারে?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পুস্তক কি আসছে? চিন্তিত

উত্তর "হ্যাঁ" হইলে চাইপা যান, রঙ নাম্বার ইয়ে, মানে...
আর যদি "না" হয়, তাইলে ধরেন আপনারেই খাইছে

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মাহবুব লীলেন এর ছবি

পুস্তক আসছে তো; এক সপ্তা

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

দেঁতো হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

ধর্মীয় ব্যপার, আধ্যাত্মিকতা ও অদৃশ্য শক্তির ব্যপার সম্পূর্ন বাদ দিলে শুধু যুক্তি দিয়ে বিচার বিশ্লেষন করে আপনি যেভাবে মহাভারতকে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন তাতে হয়তো অনেক ভক্তের মনে চরম কষ্ট দিতে পারে কিন্তু তার জন্য তো একটা পুরস্খার আপনি পেতেই পারেন লীনেন দা।তবে আমি বিশ্লেষনাত্মক আলোচনা লিখে কয়েকবার পোষ্ট করার পর ও যখন প্রকাশিত হয় নি তাই এখন তেমন আলোচন কমেন্ট আকারে লিখি না । জানিনা এই কমেন্টও প্রকাশিত হবে কিনা।

-------------
রাধাকান্ত

মাহবুব লীলেন এর ছবি

কেউ যদি খালি আমারটা পড়ে তবে আঘাত পাইতে পারে; তয় কেউ যদি এর লগে আরেকটা মহাভারত পড়ে (ভক্ত মহাভারত) তয় মনে লয় আঘাত পাইব না। আর কেউ যদি কোনো মহাভারতই না পড়ে তবে মারাত্মক আঘাত পাইলেও পাইতে পারে...

০২
আমি তো আপনার কমেন্ট দেখতাছি

অতিথি লেখক এর ছবি

লীনেনদা রে তো এই জন্যই বলি,শুধু এভাবে দেখাইলেই হইবো?(!).আধ্যাত্মিক শক্তি যে ওদের মধ্যে আছিল না সেটাতো প্রমান করা যায় নাই।কাজেই দৈবিক অস্ত্রগুলা নিয়া ওনারা আগাইতেই পারে!আরো কত কি হইতে পারে! আর আফনে যেভাবে মসি নিয়া আগাইতাছেন সেভাবেই চলুক আমরাও আনন্দিত হই।।

--------------
রাধাকান্ত

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আমি তো আধ্যাত্মিক ক্ষমতা বাতিল করতে যাই নাই; আমি খালি গল্পটা বাইর কইরা আনছি আর যাগো কাছে দৈবিক অস্ত্রপাতি আছে তাগো ঠেকানোর ক্ষমতা আমার কেমনে হবে? ইনারা ইনাগো পথে আগান...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।